শুক্রবার

প্রদীপ চৌধুরী : মুক্ত কবিতার খসড়া

মুক্ত কবিতার খসড়া
প্রদীপ চৌধুরী

কবিতায় বাস্তবতার সীমারেখা এভাবেই বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে । আমার চেনাজানা পৃথিবী আমারই হাতে বারবার নিহত হয়েছে । আর একবছর, এক মাস, এক সপ্তাহ, একদিন আগেও যেসব স্বপ্ন-বৃত্তান্ত চূড়ান্ত সত্য মনে হয়েছে কত স্বাভাবিকভাবে আমি এ মুহূর্তে সেসব থেকে দূরে সরে এসেছি । হারিয়ে যাওয়া গানের কলির মতো আমি এমন সব অলৌকিক অতীতে চলে এসেছি, যেখানে যুদ্ধ শান্তি বহুজাতিক ষড়যন্ত্র অতিশয় বর্ণহীন, তাই বাজে;
“সে বেঁচে আছে কিন্তু কোনোদিনই আমি তার কাছে যেতে পারব না”— এ অসম্পূর্ণতা, এ যোগাযোগ-সূত্র-ভরা টান থেকেই আমার লেখা, আমার অবশিষ্ট বেঁচে থাকা— স্বভাবতই
এখন মধ্যরাত । কাল ভোরে সামনের হ্রদের দিকে তাকিয়ে দেবতারা দেখবে জলের প্রতি ভাঁজে আমার টুকরো টুকরো কবিতাগুলি ভেসে বেড়াচ্ছে...
মনে হওয়া স্বাভাবিক তিরিশ বছর আমাকে
এক ভ্রান্ত নক্ষত্র চালিত করেছে;
ভ্রান্ত নয় উদ্‌ভ্রান্ত ।

কোথায় সেই দ্বীপ যেখানে সৈন্য নেই, শোষণ নেই ?
ওই কুমারী দ্বীপ ছিনিয়ে নিয়েছে প্রমত্ত বালক
ভালবাসা বিনিময়ের এই পথ আমার
দরজা থেকে
সদর স্ট্রিটের ঐ বিখ্যাত বারান্দা অব্দি
তেমনি অবিকৃত; সকালের
লুটোপুটি আলোতে তেমনি শরীরে
আবদ্ধ ভালবাসা
পথপাশে ছড়ানো রয়েছে

আমি শব্দের মধ্যে পুরোপুরি মিশে গিয়ে
চেতনাপ্রধান সম্প্রদায় থেকে
একেবারে আলাদা হয়ে পড়েছি
আমার বিনিময়ের পথগুলি এখন
ফুর্তি গান ও দামামায় ফেটে
বেরিয়ে যাচ্ছে
শব্দের প্রাধান্য মেনে নিয়ে আমি
জন্তুর মতো এ নিশি যাপন করছি
আর সারিবদ্ধ চেতনাশিকারীর দল
এ শহরকে এক জাগ্রত জঙ্গলের
দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।

হায় বিনিময়যোগ্য ভালবাসা
হায় কবিতা
দুই বিপরীত মেরুতে তোমাদের অবস্থান

আমার এই অসমাপ্ত প্রচ্ছায়াকে
পূর্ণতায় নিয়ে যেতে খোলাবুক নদী
অপেক্ষা করছে

মাথার উপরে আরেক ভাসমান নদী
আমি ছেঁড়া কাগজের টুকরোগুলি হাতে নিয়ে
বিমূঢ় নির্বাক হয়ে বসে আছি

১৯৯১ সালের মানুষ আমার প্রিয় বিষয় নয়
মিডিয়া প্রক্রিয়ার কাছে নতজানু মানুষ
এ তোমার বড়ো দুঃসময়

ভাবা হয়েছিল আমাদের সৃষ্টির আলোতে
এই উপগ্রহটিকে আলোকিত করা হবে । আমাদের
অতিশয়োক্তির আগুনে আমরা একে পুড়ে ফেলেছি ।
এই প্রজ্জ্বলিত আগুনের উপর দাঁড়িয়ে আছে কবিতা ।

ঘরের সব উপকরণগুলি নিওন আলোতে
চকচক করছে
ঘুমন্ত মানুষগুলি স্বপ্নের মধ্যে বিড়বিড় করছে
আমার বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সীমারেখা
ফিটফাট পৃথিবীতে হারিয়ে গেছে ।

পুরোপুরি কীটদষ্ট হবার পর আমি বুঝতে পারছি
এই শূন্যতা, এই তবে ভালবাসা ছিল !

কে জানত একেই বলে লুণ্ঠন ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন