যখন সুভাষ ঘোষের সঙ্গে মরুভূমিতে উটের দুধ খেতুম
আমি তখন অফিসের কাজে তিন মাসের জন্যে কলকাতায়, থাকি ডালহাউসি স্কোয়ারে অফিসের গেস্ট হাউসে, খাওয়া-থাকা অফিসেরই, ট্র্যাভেলিং অ্যালাউন্স যা পাই তা দিয়ে হাংরি বুলেটিন বের করার কোনো অসুবিধা নেই । শক্তি চট্টোপাধ্যায়, যাঁর নাম ১৯৬১-১৯৬২ সালে ‘লিডার’ হিসাবে বুলেটিনে ছাপা হয়েছে, তিনি থাকেন উল্টোডাঙার বস্তিতে, চান না যে ওনার বাসায় কেউ যাক ।
তখন থেকেই আমাদের মরুভূমি পর্যটন আর সুভাষের উটের দুধ খাবার অভিজ্ঞতা ।
ওহ সে কতো মরুভূমি ঘুরেছি আমরা দুজনে, গেঁজিয়েছি উটের পচে যাওয়া দুধের গ্যাঁজলার মতন ।
সাহারা মরুভূমিতে, আলজেরিয়া চাদ, মিশর এরিট্রিয়া, মালি, মরিট্যানিয়া, মরোক্কো, নিজের, সুদান, টিউনিশিয়া । হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেছে সুভাষ, বলেছে, “আমি বাড়ি যাবো।”
কতো বেবুন হুপহুপিয়ে চলে গেছে পাশ কাটিয়ে, শুঁড় উঁচিয়ে হাতির সাঙ্গো-পাঙ্গো । চশমাচোখে জংলি কালোগাধা ।
তারপর আরব মরুভূমিতে, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, ওমান, কাতার, সউদি আরব । হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেছে সুভাষ, বলেছে, “আমি বাড়ি যাবো।”
কতো নীলগুবরে, আরমাডিলো, কালোপা বেড়াল, বোয়া সাপ, লুকিয়ে পড়েছে, সুযোগ পেলে বেরোবার ইচ্ছায় ।
তারপর গোবি মরুভূমিতে, চিন আর মোঙ্গোলিয়ায় । হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত সুভাষ বলেছে, “আমি বাড়ি যাবো।”
কতো বাদামি ঘোঁতঘোতে ভাল্লুক বুদ্ধিজীবি, বাস্টার্ড পাখি, কারাকাল বেড়াল থপথপিয়ে চলে গেছে কলেজস্ট্রিট দিয়ে ।
তারপর, কালাহারি মরুভূমিতে অ্যাঙ্গোলা, বোৎসওয়ানা, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা । হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত সুভাষ বলেছে, “আমি বাড়ি যাবো।”
কতো তেঁতুলে বিছে, দৌড়বীর চিতা, কৌগার সিংহ, নাল ফেলতে-ফেলতে আড়চোখে দেখে এগিয়েছে।
তারপর পাতাগোনিয়া মরুভূমিতে, আরজেনটিনা আর চিলে । হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত সুভাষ বলেছে, “আমি বাড়ি যাবো।”
কতো সজারু কাঁটা উঁচিয়ে পালিয়েছে সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ কফিহাউসে ।
তারপর ভিক্টোরিয়া মরুভূমিতে অস্ট্রেলিয়ায় । হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত সুভাষ বলেছে, “আমি বাড়ি যাবো।”
কতো কালচে কাঙ্গারু পেটে ছুটকো কবি লুকিয়ে দু’পায়ে লাফিয়ে উধাও হয়ে গেছে ।
তারপর সিরিয়া মরুভূমিতে ইরাক জর্ডন সিরিয়ায় । হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত সুভাষ বলেছে, “আমি বাড়ি যাবো।”
কতো বাজপাখি, শেয়াল, হায়না আমাদের দেখেই ঝোপঝাড়ের আড়াল নিয়েছে ।
তারপর গ্রেট বেসিন মরুভূমিতে আমেরিকায় । হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত সুভাষ বলেছে, আমি বাড়ি যাবো।”
কতো র্যাটল সাপে ঝুমঝুমি বাজিয়ে খেলতে ডেকেছে ।
তারপর চিহুয়াহুয়া মরুভূমিতে, মেক্সিকোয় । হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত সুভাষ বলেছে, “আমি বাড়ি যাবো ।”
কতো র্যাকুন, কচ্ছপ, শকুন পোঁ-পাঁ পালিয়েছে কাঁধে ঝোলা ঝুলিয়ে ।
তারপর কারাকুম মরুভূমিতে, তুর্কমেনিস্তানে । হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত সুভাষ বলেছে, “আমি বাড়ি যাবো।”
তারপর থার মরুভূমিতে, ভারত আর পাকিস্তানে । হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত সুভাষ বলেছে, “আমি বাড়ি যাবো।”
কতো উট আর হাতি আর দিশি গাধা সেলাম ঠুকেছে ।
বললুম, এটা তো রাজস্হান, এখানের উটের দুধ বেশ মিষ্টি । শুনে সুভাষ থনে মুখ দিয়ে চুষে-চুষে দুধ খেয়ে চাঙ্গা হল, তারপর বলল, “আমি বাড়ি যাবো।”
গণ্ডারেরা ফলো করেছে আর সুভাষের ভয় করেছে । আমি বলেছি, ভয়ের কি আছে, ও তো বাসুদেব দাশগুপ্তের বন্ধু, “উপদ্রুত” পত্রিকার সম্পাদক, ও কি আর পুলিশের খোচর হতে পারে ।
সুভাষ ঘোষ বলেছে, “আমি বাড়ি যাবো।”
কোথায় বাড়ি ? জানতে চাইলে, সুভাষ বলল “ভাড়া করা বাসা, টালায় ।”
দুই
গেলুম টালা ব্রিজের তলায় পাশের রাস্তায় সুভাষের ভাড়া-করা বাসায়, বলল, আরেকজনের সঙ্গে থাকে, তার নাম শৈলেশ্বর ঘোষ, সে উটের দুধ খায়নি কখনও, দুজনেই উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় এসেছে, পড়াশুনা আর চাকরি-বাকরির ধান্দায় ।
“এষণা” নামে একটা চটি পত্রিকা দিল সুভাষ, সম্পাদক সতীন্দ্র ভৌমিক, তাতে শৈলেশ্বের ঘোষের “তিন বিধবা গর্ভ করে শুয়ে আছি পূণ্য বিছানায়” পড়ে বললুম, এটা ইংরেজিতে অনুবাদ করব ।
সুভাষ বলল, কালকে ও কফিহাউসে আসবে তোমায় লেখা দিতে, তখন পরিচয় হবে ।
পরের দিন শৈলেশ্বর ঘোষের কাছ থেকে লেখা নিলুম । আমার অনুবাদ করা কবিতা আর যে কবিতা শৈলেশ্বর দিল, এই দুটিই কেবল হাংরি বুলেটিনে প্রকাশিত হয়েছিল । তাছাড়া আমাকে গালমন্দ করে যে চিঠি শৈলেশ্বর লিখেছিল, মুচলেকা জানাজানি হবার পর, তা ছাপিয়ে দিয়েছিলুম নিরানব্বুই নম্বর হাংরি বুলেটিনে।
দুজনেই বলল, ওই হারাধন ধাড়াকে আন্দোলন থেকে বের করে দাও।
বললুম, ওনার নাম দেবী রায় ।
দুজনেই বলল, ও আবার লিখতে জানে নাকি, যতো সব অশিক্ষিতদের যোগাড় করেছ ।
বললুম এটা তো ইউরোপের মতন আন্দোলন নয়, কারোর বাপের সম্পত্তি নয়, যেমনটা আঁদ্রে ব্রেতঁ পরাবাস্তববাদের ক্ষেত্রে করেছিলেন, ত্রিস্তঁ জারাকে কুচোনো কাগজের কবিতা লেখার জন্য বের করে দিয়েছিলেন, প্রদর্শনীর আগের দিন ব্রায়ন জিসিনের ছবি দেয়াল থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন । আমি অমন দাদাগিরির পক্ষে নই, হাংরি আন্দোলনকে কৃত্তিবাসের মতন করে তোলা উচিত হবে না, যে সম্পাদক বাড়ি বদলালে পত্রিকার সদর দপতর চলে যায় সেই বাড়িতে।
বললুম, হাংরি আন্দোলনের কোনো হেড কোয়ার্টার, হাইকমাণ্ড, পলিট ব্যুরো নেই।
ওদের পছন্দ হল না । সুভাষ বলল, এ আবার কিরকম আন্দোলন ?
শৈলেশ্বর বলল, ওকে কেন সম্পাদক করা হয়েছে, ওর বাড়ির ঠিকানা দেয়া হয়েছে, শুনেছি ওটা একটা বস্তিবাড়ি, ওর কবিতা সম্পূর্ণ ব্যানাল ।
বুঝলুম, আগেই খবর নেয়া হয়ে গেছে দেবী রায় সম্পর্কে ।
নিজেকে নিঃশব্দে বলতে শুনলুম, এরা কেমনতর স্বার্থপর যুবক, দেবী রায় এদের ডেকে এনেছে আন্দোলনে, আর তাকেই বের করে দিতে চাইছে, আমার সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের দিনেই ! দেবী রায়ের সাহায্যেই তো কলকাতায় ছড়িয়ে দিতে পেরেছি আন্দোলনকে ।
এটা ঠিক যে আমার কিছু কাজকে শক্তি চট্টোপাধ্যায় আর দেবী রায় অনুমোদন করেননি, যেমন মন্ত্রি-আমলা-সাংবাদিকদের “মুখোশ খুলে ফেলুন” ছাপানো দানব-জানোয়ার-জোকারের মুখোশ পাঠানো, জুতোর বাক্স রিভিউ করতে দেয়া, শাদা ফুলস্কেপ কাগজকে ছোটোগল্প হিসেবে জমা দেয়া, বিয়ের কার্ডে “ফাক দি বাস্টার্ডস অফ গাঙশালিক স্কুল অফ পোয়েট্রি” ছাপিয়ে বুদ্ধিজীবিদের ডাকে পাঠানো । বাসুদেব দাশগুপ্তকে পুলিশের খোচর পবিত্র বল্লভ এই ব্যাপারে হুশিয়ারি দিয়ে দিয়ে দিয়েছিল বলে বাসুদেব দাশগুপ্ত প্রায় খুঁতখুঁত করতো ।
বললুম, এই আন্দোলনে যে কেউ যে-ঠিকানা থেকে ইচ্ছে নিজের লেখা প্রকাশ করতে পারে, হাংরি জেনারেশনের বুলেটিনগুলো কোনো পত্রিকা নয়, বিক্রি করা হবে না, স্রেফ বিলি করা হবে ।
কথা বলে বুঝলুম, দুজনেরই টাকাকড়ির টানাটানি, নিজের টাকায় বুলেটিন ছাপাতে পারবে না । রিফিউজি ফ্যামিলি, এখনও পশ্চিমবাংলায় রিরুটিং হয়নি । মনে হল সাহিত্য ওদের কাছে পশ্চিমবাংলায় রিরুটিঙের প্রধান উর্বর জমি ।
আন্দোলন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বুঝলুম, ইংরেজি কবিতার সঙ্গে অ-বিদ্যায়তনিক পরিচয় নেই, জিওফ্রে চসার পড়েনি । বিদ্যায়তনিক গ্রন্হের বাইরে তেমন পড়াশুনা করেনা । ফিলজফি অব হিসট্রির কথা শোনেনি, অসওয়াল্ড স্পেংলারের ‘ডিক্লাইন অব দি ওয়েস্ট’ পড়েনি । ওরা চা-বিস্কুট আনালো, মাটিতে মাদুরে বসা ছাড়া অন্য উপায় নেই, কেননা কোনো আসবাবপত্র নেই ।
আমি বোঝাবার চেষ্টা করলুম যে ‘হাংরি’ শব্দটা আমি পেয়েছি জিওফ্রে চসারের বাক্য ‘ইন দি সাওয়ার হাংরি টাইম’ থেকে, স্নাতক কোর্সে চসার ছিল । আর অসওয়াল্ড স্পেংলার বলেছেন যে একটি সংস্কৃতির ইতিহাস কেবল একটি সরলরেখা বরাবর যায় না, তা একযোগে বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হয়, তা হল জৈবপ্রক্রিয়া, আর তাই, ওই সমাজের নানা অংশের কার কোনদিকে বদল ঘটবে তা আগাম বলা যায় না । যখন কেবল নিজের সৃজনক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, তখন সংস্কৃতটি নিজেকে বিকশিত ও সমৃদ্ধ করতে থাকে, তার নিত্যনতুন স্ফূরণ আর প্রসারণ ঘটতে থাকে । কিন্তু ওই সংস্কৃতির অবসান সেই সময়ে আরম্ভ হয়, যখন তার নিজের সৃজনক্ষমতা ফুরিয়ে গিয়ে তা বাইরে থেকে যা পায় তাই আত্মসাৎ করতে থাকে, খেতে থাকে, তার ক্ষুধা তৃপ্তিহীন। দেশভাগের পর আর ফলে, পশ্চিমবাংলা এই ভয়ংকর অবসানের মুখে পড়েছে, এবং উনিশ শতকের পর্যায়ের বাঙালির আবির্ভাব আর সম্ভব নয় । স্বদেশী আন্দোলনের সময়ে জাতীয়তাবাদী নেতারা যে সুখী, সমৃদ্ধ, উদার, কুসংস্কারমুক্ত, উন্নত ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তা টকে পচতে শুরু করেছে আমাদের উত্তরঔপনিবেশিক কালখণ্ডে ।
আমি বোঝাবার চেষ্টা করলুম যে ইউরোপীয় সাহিত্য আন্দোলনের ‘সময়তাড়িত চিন্তাতন্ত্র’ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হাংরি আন্দোলনের ‘পরিসরলব্ধ চিন্তাতন্ত্র’ । অনেকে মিলে আন্দোলন করার উদ্দেশ্য হল সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানার আধিপত্যকে গুরুত্ব না দিয়ে কৌমপরিসরকে গুরুত্ব দেয়া । ইউরোপীয় সাহিত্য আন্দোলনগুলো খতিয়ে যাচাই করলে দেখা যায় যে ব্যক্তিক তত্ত্বসৌধ নির্মাণের প্রয়াস করা হয়েছে, সেখানে ব্যক্তিপ্রজ্ঞার দামামায় সমাজের যেন কোনও গুরুত্ব নেই, তার কারণ ইউরোপ মনে করেছে সময় ব্যাপারটা একরৈখিক । হাংরি আন্দোলনে লেখাকে আলোকিত করা হবে, লেখককে নয় ।
ওদের মুখ দেখে মনে হয়েছিল, পশ্চিমবাংলায় যে রাজনৈতিক গণ্ডোগোল চলছিল সেসময়ে, সোভিয়েত রাষ্ট্রের কাঠামোটাই রিফিউজি যুবকদের কাছে আদর্শ ছিল, যদিও যে হিন্দু বাঙালি কমিউনিস্ট নেতারা পূর্ববঙ্গে থাকতেন তাঁরা দেশভাগ হবার আগেই পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে এসেছিলেন, আন্দামান দীপপূঞ্জকে বঙ্গভূখণ্ড হতে দেননি ।
তারপর ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে গেল, নকশাল আন্দোলন হল, নকশালরাও নানা টুকরোয় ভেঙে গেল, সব শেষে সোভিয়েট ব্যবস্হাও ভেঙে পড়ল, পূর্ব ইউরোপে প্রাক্তন কমিউনিস্ট দেশগুলোয় ধর্মের আর জাতীয়তার লড়াইতে অজস্র মানুষ মারা গেল, কিন্তু সুভাষের চিন্তায় ও লেখায় তার কোনো ছাপ পড়ল না, যেমন পড়েছিল বাসুদেব দাশগুপ্ত আর সুবিমল বসাকের ফিকশানে ।
তিন
শক্তি চট্টোপাধ্যায় হাংরি আন্দোলন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন, মূলত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চাপে এবং সংবাদপত্রের চাকরির শর্ত পূরণ করার জন্য । শৈলেশ্বর ঘোষ যে চারিদিকে লিখে বেড়িয়েছেন যে তাঁর ‘তিন বিধবা’ কবিতার জন্য শক্তি হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেছিলেন, তা ডাহা মিথ্যা । শৈলেশ্বরের ‘তিন বিধবা’ “এষণা” পত্রিকায় বহু আগে বেরিয়েছিল, ১৯৬৩ এপ্রিলে শৈলেশ্বর হাংরি আন্দোলনে যোগ দেবার আগে ।
মুখোশ, কার্ড, শাদা-কাগজ, জুতোর বাক্স ইত্যাদি কাজগুলোয় আমার সঙ্গে সুবিমল বসাকও থাকত । আমাকে কফিহাউসে না পেয়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায় দলবল নিয়ে কফিহাউসের সামনে সুবিমল বসাককে মারধর করার জন্য ঘিরে ধরেছিলেন, পেটানোর জন্যে কফিহাউসের সিঁড়ির তলায় পান-সিগারেটের দোকানে লোহার রড লুকিয়ে রেখেছিলেন । সুবিমল বসাকের চেহারা তখন ছিল কুস্তিগিরের, তার হিন্দি-বাংলা মেশানো গালমন্দের হুংকারে শক্তি চট্টোপাধ্যায় দলবল নিয়ে পালান । আর সমর্থন করার বদলে পালায় বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুভাষ ঘোষ, শৈলেশ্বর ঘোষ ও সুবো আচার্য ।
সুভাষের সঙ্গে আমার ভালোই বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, কিংবা হয়তো আমার কাছে যে বিদেশী বইপত্র আসতো বা আমি কিনতুম, সেগুলো পড়ার জন্য দেখনবন্ধুত্ব বজায় রেখেছিল । যদি উত্তরপাড়ার খণ্ডহরে থাকতুম, তাহলে সুভাষ ওর অফিস থেকে চলে আসতো দক্ষিণেশ্বরে, আমরা রেস্তরাঁয় চা-টা খেয়ে বিদেশের নতুন লেখালিখি নিয়ে গ্যাঁজাতুম, তখনও সুভাষ ঘোষ চন্দননগরে গিয়ে সিপিএমের রক্তচন্দনের তেলক কপালে পরেনি।
হাংরি আন্দোলন মামলায় আমাকে চার্জশিট দেবার পর বন্ধুত্বে চিড় ধরা আরম্ভ হল, কেননা চার্জশিটের সঙ্গে পুলিশ আমার বিরুদ্ধে কাঠগড়ায় যে সাক্ষীদের তুলবে তাতে দেখলুম রাজসাক্ষী হিসেবে সুভাষ ঘোষ আর শৈলেশ্বর ঘোষের নাম । ওদের দেয়া মুচলেকার কপিও পুলিশ দিল সেদিন, মামলা থেকে ওদের রেহাই দিয়ে । আশ্চর্য যে যেদিন ওরা গ্রেপ্তার হয়েছিল, মানে ২রা সেপ্টেম্বর ১৯৬৪, সেইদিনই হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে সংস্রব অস্বীকার করে মুচলেকা দিয়েছিল, অথচ তা বলেনি আমাকে, চেপে রেখেছিল, আমাকে ৩রা মে ১৯৬৫ চার্জশিট দেবার দিন পর্যন্ত ।
সুভাষ ঘোষের মুচলেকা:-
“আমার নাম সুভাষচন্দ্র ঘোষ। গত এক বৎসর যাবত আমি কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসে যাতায়াত করছি। সেখানে আমার সঙ্গে একদিন হাংরি আন্দোলনের উদ্ভাবক মলয় রায়চৌধুরীর পরিচয় হয় । সে আমার কাছ থেকে একটা লেখা চায় । হাংরি জেনারেশন বুলেটিনের খবর আমি জানি বটে কিন্তু হাংরি আন্দোলনের যে ঠিক কী উদ্দেশ্য তা আমি জানি না । আমি তাকে আমার একটা লেখা দিই যা দেবী রায় সম্পাদিত হাংরি জেনারেশন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । আমি তা আমার রুমমেট শৈলেশ্বর ঘোষের কাছ থেকে পাই । সে হাংরি বুলেটিনের একটা প্যাকেট পেয়েছিল। আমি এই ধরণের আন্দোলনের সঙ্গে কখনো নিজেকে জড়াতে চাইনি, যা আমার মতে খারাপ । আমি ভাবতে পারি না যে এরকম একটা পত্রিকায়, আমার আর্টিকেল ‘হাঁসেদের প্রতি’ প্রকাশিত হবে । আমি হাংরি আন্দোলনের আদর্শে বিশ্বাস করি না, এর এই লেখাটা প্রকাশিত হবার পর আমি ওদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছি ।”
শৈলেশ্বর সেদিন থেকে সেই যে উধাও হল, কফিহাউসে আসাও বন্ধ করে দিলো, দেখা হয়েছিল যেদিন রাজসাক্ষী হিসেবে আমার বিরুদ্ধে কাঠগড়ায় উঠলো, তারপর থেকে শৈলেশ্বর আর ওর শিষ্যরা অবিরাম আমাকে আক্রমণ করে মিথ্যা প্রচার করে গেছে, রাজসাক্ষী হয়েছে বলে শত্রুতাকে হাতিয়ার করে তুলেছে । প্রদীপ চৌধুরী আর সুবো আচার্যও ওদের রাজসাক্ষী হওয়া নিয়ে কখনও মুখ খোলেনি, সুবো আচার্য বরং গডম্যানসুলভ অভিনয় করে আমার আর আমার লেখা সম্পর্কে কটূ মন্তব্য করে গেছে ।
বাসুদেব দাশগুপ্ত ১৯৭৫ সালের পর আর লিখতে পারছিল না, কিন্তু শিবনারায়ণ রায়ের ‘জিজ্ঞাসা’ পত্রিকায় ১৯৮৫ সালে হাংরি আন্দোলন নিয়ে আমার প্রবন্ধ প্রকাশিত হতেই ওর কলম আমার বিরুদ্ধে সচল হয়ে উঠল, বাসুদেবের লেখালিখিও আরেকবার আরম্ভ হল, আত্মখননের ফিকশান লেখা শুরু করল, যা সুভাষ ঘোষ করেনি কখনও, সম্ভবত সিপিএমের চোখ রাঙানির ভয়ে, আর যা সুবিমল বসাক, পিছড়াবর্গের হবার কারণে প্রথম থেকেই করে গেছে।
ওরা দুজন, সুভাষ আর শৈলেশ্বর, ছিল রাজসাক্ষী । আমাকে আশ্চর্য করে তালিকায় দেখলুম পুলিশের পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, আর বাসুদেব দাশগুপ্তর বন্ধু ‘উপদ্রুত’ পত্রিকার সম্পাদক পবিত্র বল্লভ । ‘নতুন কৃত্তিবাস’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন যে সন্দীপন, শক্তি এবং উৎপলকেও মুচলেকা দিতে হয়েছিল, কিন্তু ওনাদের মুচলেকার কপি পুলিশ আমাকে দেয়নি । ‘বাইশে শ্রাবণ’ ফিল্মে সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় এই পবিত্র বল্লভকেই খোচর হিসেবে দেখিয়েছেন, যে কিনা লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তখনই আইওয়া পোয়েট্রি ওয়র্কশপ থেকে ফিরেছিলেন । উনি একটি চিঠিতে অ্যালেন গিন্সবার্গকে লিখেছিলেন সবসুদ্ধ ছাব্বিশজনকে পুলিশ জেরা করেছে । আমরা ছাড়া বাকি ছাব্বিশজনের মধ্যে কারা ছিলেন তা আর জানা গেল না ।
চার
সুভাষ বুঝতে পেরেছিল যে আমাদের সম্পর্কে ভাঙন ধরেছে, স্বীকার না করলেও আমাকে সঙ্গ দিতে চাইত, বাসুদেব-প্রদীপ-সুবো-শৈলেশ্বরের মতন পাশ থেকে বেমালুম গায়েব হয়ে যায়নি । মামলায় কয়েকজন গ্রেপতার হতেই প্রদীপ চৌধুরী চলে গিয়েছিল ত্রিপুরায় সুবো আচার্যকে সঙ্গে নিয়ে । ত্রিপুরায় প্রদীপকে কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করতে গেলে সুবো আরও ইনটিরিয়রে এক কবির বাড়িতে গিয়ে লুকোয় । ফিরে এসে ও অনুকুল ঠাকুরের শিষ্য হয়ে যায় ।
খালাসিটোলার পাশেই গাঁজা-চরসের সরকারি দোকান ছিল, সেখান থেকে পুরিয়া কিনে ফুঁকতে-ফুঁকতে সুভাষ আর আমি, আমরা দুজনে, চলে যেতুম কফিহাউস, আশির দশকে আমেরিকার চাপে মাদক বেআইনি হবার ফলে দোকানটা বন্ধ হয়ে গেছে, অথচ এখন আমেরিকায় বিভিন্ন রাজ্যে মারিহুয়ানার দোকান খোলা আরম্ভ হয়েছে ।
কফিহাউস থেকে খালাসিটোলা । অনেক সময়ে অলিমপিয়া, যা এখন অলিপাব । সুভাষের পছব্দ ছিল সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউতে ‘অ্যাম্বার’ নামে একটা নিরিবিলি বার । গ্যাঁজাবার পর সুভাষ চলে যেতো ওর আস্তানায়, আমি হয় সুবিমল বসাকের জ্যাঠার স্যাকরার দোকানে, নয়তো পিসেমশায়ের বাড়ি আহিরিটোলায়, নয়তো হিন্দি জ্ঞানোদয় পত্রিকার সম্পাদক শরদ দেওড়ার ব্যাবসার গদিতে, যেখানে বাইরের ব্যাবসাদাররাও রাতে শুতে আসত । সুভাষকে আমি কখনও প্যান্ট-শার্ট পরতে দেখিনি, সব সময় শাদা পাঞ্জাবি আর শার্ট, গেরুয়া পাঞ্জাবিও নয়, যা তখন আঁতেলরা পরে কফিহাউসে আসতো ।
আমি বাসুদেব দাশগুপ্ত আর সুভাষ ঘোষ দুজনেরই ফোটো নিয়ে কোলাঝ তৈরি করেছিলুম । সুভাষ বলেছিল, “তুমি পারশিয়ালিটি করছ, বাসুদেবের কোলাঝটা আমার হবার কথা ছিল, আমি কপালে বিকৃত শিশুর লিঙ্গ নিয়ে জন্মেছি।” বাসুদেবের কোলাঝটা বাসুদেব যত্ন করে রেখেছিল, সুভাষ ওর কোলাঝটা কি করল জানি না । দুটো কোলাঝের ব্লক পাটনাতেই করিয়েছিলুম ; কলকাতা পুলিশ যখন পাটনায় আমাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল তখন ব্লকের দপতরে ঢুঁ মেরেছিল । ‘আর্তনাদ’ নামে যে পত্রিকা সুভাষরা প্রকাশ করেছিল তার ব্লকও আমার তৈরি করা ।
মামলার সময় কলকাতায় যেখানেই রাতে থাকতুম, সব জায়গাতেই আমার সমস্যা ছিল সকালে হাগবার আর স্নান করার । সুবিমলের জ্যাঠার স্যাকরার দোকানে রাতে শুলে চলে যেতুম শেয়ালদায় টয়লেটে কিংবা দাঁড়িয়ে-থাকা দূরপাল্লার ট্রেনে, স্নান করা ব্যাপারটা পনেরো দিনে একদিনে ঠেকেছিল, কলগুলো এতো নিচু যে তার তলায় হামাগুড়ি দিয়ে স্নান করতে হতো । সুভাষ কখনও বলেনি যে ওর আস্তানায় গিয়ে রাত কাটাই । সুবিমল ওর বেলঘরিয়ার বাড়ি তৈরি করেছে তার চল্লিশ বছর পর ।
সুভাষ ঘোষ ‘ক্ষুধার্ত প্রতিরোধ’ নামে একটা পত্রিকা প্রকাশের তোড়জোড় আরম্ভ করলে, আমার লেখা চায়নি, আর সেই সঙ্গে অন্য সবাইকে বাদ দেবারও কারবার আরম্ভ করে দিয়েছিল । ব্যাপারটা অদ্ভুত, কেননা একদিকে মানবতার জয়গানের ঢাক পেটাচ্ছে, আরেকদিকে বাদ দিয়ে দিচ্ছে বন্ধুদের । নিম্নবর্গের লেখকদের আধুনিকতাবাদীরা বাদ দেবার রেওয়াজ আরম্ভ করেছিলেন বলেই আমি খুঁজেপেতে হারাধন ধাড়াকে আন্দোলনে এনেছিলুম, নয়তো আমি আর দাদা যে পরিকল্পনা করেছিলুম, ১৯৬০ সালেই আন্দোলন আরম্ভ করে দিতুম । হাংরি আন্দোলনের সবাইকে যাতে একসঙ্গে একটা পত্রিকায় আনা যায়, তাই আমি ‘জেব্রা’ নামে একটা পত্রিকা প্রকাশ করার তোড়জোড় করছিলুম, কিন্তু পারস্পরিক অবনিবনার দরুণ দুটো সংখ্যা বের করে বন্ধ করে দিতে হয়।
সুভাষ ২২ মে ১৯৬৫ চিঠিতে দেবী রায় সম্পর্কে লিখেছে :
“হ্যাঁ, যা বলছিলাম —ক্ষু.প্র.তে হারাধনের বইয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে বলে ওর লেখা জেব্রাতেও
ছাপা হবে — এরকম কথা আছে নাকি ? কই তোমার সঙ্গে দেখা হল যখন এরকম বললে না তো—
এই তোমার দোষ — আমি তখন হারাধনের লেখা গুণগত যোগ্যতা না থাকায় ছাপতে বারণ
করেছিলাম তোমাকে — গুণও বড়ো কথা নয় — আসল কথা দেবী রায়ের ক্লিক + এক্সপ্লয়টেশন +
নোংরামি ।
আসলে ওর লেখা ক্ষু প্র-তে ছাপা হচ্ছে না যখন জানল তখন মরিয়া আর কি— আর তো…হেঁ হেঁ।
তুমি তখন জিগ্যেস করলেও আমি পরিষ্কার করতাম সব — ফলে তুমি জেব্রা থেকে ওর লেখা
withdraw করে নাও । ওর নাকি সব বিদেশি নাঙরা ১০০০-১০০০ পৃষ্ঠার প্রশংসা পাঠিয়েছে —
ওই নিয়ে থাকুক ও — OK. ভালোবাসা নিও । সুভাষ ।
দেবী রায়ের ওপর সুভাষ-শৈলেশ্বরের ক্রোধের কারণ হল, ওদের দুজনের জেরার সময়ে লালবাজারে দেবী রায় উপস্হিত ছিল । আমাকে যখন চার্জশিট দেওয়া হল, তখন দেবী রায়ও ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল, সকলেই জেনে গিয়েছিল যে দেবী রায় মুচলেকা দেয়নি, অথচ ওকে পুলিশ ইচ্ছে করলেই রাজসাক্ষী হবার জন্যে চাপ দিতে পারতো ।
দেবীর ১৭ মে’র এই চিঠিটা থেকে স্পষ্ট যে লালবাজারে কী ঘটেছিল :
শোনো মলয়, কে আমার সঙ্গে কীরকম ব্যবহার করেছিল, আমি ভুলিনি । লালবাজারে টেবিল ঠুকে
অনিল ব্যানার্জি বলেছে হেড কোয়ার্টার কোথায় — হোঃ হোঃ, শৈলেশ্বর বলেছিল, “আজ্ঞে পাটনায়” ।
তোমার খবর কী ? আমার ওলড ফুল নামটা ব্যবহার করেছ — যা অতীতের তা যেতে দাও ।
খালসিটোলায় সুভাষের কলার চেপে ধরতে বলে ওঠে, “প্রণবদা, দেখুন না, এঁরা কী করছেন আমাকে,
একটা পান খাওয়ান না । হাঃ হাঃ, আরে সবই জানি । নিজেদের কবিতার স্বপক্ষে একটা প্রবন্ধ লিখেছি।
দেবী রায় ।
ত্রিদিব মিত্র আর ওর বন্ধুনি আলো মিত্রকেও বাদ দেবার ষড়যন্ত্র চলছিল, শেষ পর্যন্ত ওদের দুজনকে তো বটেই, সুবিমল বসাক, শম্ভু রক্ষিত, তপন দাশ, অজিতকুমার ভৌমিক, করুণানিধান মুখোপাধ্যায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় আর অনিল করঞ্জাইকেও আমার সঙ্গে বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছিল । বাদ দেবার ষড়যন্ত্রের কারণে দেবী আর সুবিমল ছাড়া সকলেই লেখালিখি ছেড়ে দিলে, ত্রিদিব আর আলো ‘উন্মার্গ’ আর The Waste Paper সম্পাদনা করতো, তাও বন্ধ হয়ে গেল, শম্ভু রক্ষিত ‘ব্লুজ’ পত্রিকা বন্ধ করে দিলো । ত্রিদিবের ১৭ জুলাইয়ের চিঠি থেকে আঁচ পাওয়া যাবে ; সুবো আচার্য বিষ্ণুপুর থেকে কলকাতায় এসে থাকতো ত্রিদিবের বাড়ি, কিন্তু আজ পর্যন্ত কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেনি :
ডিয়ার মলয়, পোস্টকার্ড পেয়েছ সম্ভবত । শুক্রবার পাঞ্জাব মেলে চাপছি । সুবিমলের সঙ্গে গতকাল
হাওড়া স্টেশানে দেখা, সন্ধ্যাবেলা । ট্রেন ধরতে না পারায় সোমবার রাত্তিরে সিদ্ধি চলেছিল ।
সুভাষ ইদানিং নতুন সাকরেদ যোগাড় করেছে, কফিহাউস থেকে বা কফিহাউসে এনে । গদ্য ও কবিতার
উপর, হাংরিদের, অমিতাভ দাশগুপ্ত ও মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের দুটো প্রবন্ধ ক্ষু.প্র.তে থাকছে। সে ব্যাপারে
উভয় ঘোষবাবু ও দাশগুপ্তবাবু, দাশগুপ্ত ও চাটুজ্জেবাবুর বাড়িতে ঘনঘন যাতায়াত, পাঞ্চিং, লিঞ্চিং
ইত্যাদি ব্যাপারে বড়োই ব্যস্ত । সুভাষ প্রচার করত, ১৯৬০ সালে তুমি নাকি সুবোকে তুলে এনেছো !
AVANT GARDE আদ্যন্ত পড়েও খুঁজে পেলাম না । তাছাড়া এইচ জি প্রথম বেরোয় ১৯৬১-এর শেষে
আর সুবোর লেখা গোলমাল HG-তে ১৯৬৩ সালে, তখন আমার বাসায় থাকত ।
সুভাষ ক্ষু.প্র.র জন্য এক পৃষ্ঠার লেখা চেয়েছিল । এবং আমিও ‘উন্মার্গের জন্য সুভাষের । কিন্তু
সুভাষবাবু এত ব্যস্ত কিংবা……ত্রিদিব
হাংরি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মুচলেকা দেয়া নিয়ে ‘জিজ্ঞাসা’ পত্রিকার কার্তিক-পৌষ ১৩৯১ সংখ্যায় তাঁর সম্পাদকীয়তে শিবনারায়ণ রায়, যিনি সন্তোষকুমার ঘোষ এবং আবু সয়ীদ আইয়ুব-এর ভূমিকার কথা জানতেন না, লিখেছিলেন :
“যেটি আমার কাছে সবচাইতে গ্লানিকর মনে হয়েছে সেটি পুলিশের মূঢ়, অতিনৈতিক জুলুমবাজি নয়,
সেটি হল প্রথম ধাক্কাতেই বিদ্রোহী লেখকদের হার মানা । মকদ্দমা শেষ পর্যন্ত হয়েছিল মলয়ের
বিরুদ্ধে ; তাঁর বেশির ভাগ সাহিত্যিক সহকর্মীই হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক পুলিশের
কাছে অস্বীকার করেন । শহিদ হওয়া শিল্পীদের দায়িত্ব নয় ; কিন্তু আত্মমর্যাদাবোধ এবং বিপন্ন বন্ধুর
প্রতি আনুগত্য না-থাকলে কোনও আন্দোলনই শক্তি অর্জন করতে পারে না । শিল্পকৃতির জন্য
আন্দোলন জরুরি নয় ; শিল্পী ও ভাবুকদের মধ্যে অনেকেই নির্জনে বসে সাধনা করবার পক্ষপাতী ।
কিন্তু কোনও আন্দোলন — শিল্পসাহিত্যের ক্ষেত্রে হোক, আর জীবনের অন্য বিন্যাসেই হোক —
প্রভাব ফেলতে পারে না, যদি না সেই আন্দোলনে যাঁরা অ২শভাক তাঁরা সৎ, নীতিনিষ্ঠ, এবং পরস্পরের
কাছে নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হন । যেমন উৎসবে ব্যাসনে তেমনি দুর্ভিক্ষে, রাষ্ট্রবিপ্লবে, রাজদ্বারে এবং
শ্মশানে যে পাশে থাকে সেই তো বন্ধু “।
পাঁচ
সুভাষ ঘোষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ব্যাংকশাল কোর্টে সাজা ঘোষণার পরও আমি বজায় রাখার চেষ্টা করে গেছি, বহু বই পড়িয়েছি, যেমন লেনি ব্রুসের ‘হাউ টু টক ডার্টি অ্যাণ্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপল’, উলিয়াম বারোজের ‘নেকেড লাঞ্চ’, অ্যালেন গিন্সবার্গের ‘হাউল’ আর ‘ক্যাডিশ’, ‘আঁতোয়াঁ আর্তো অ্যানথোলজি’, মাকি দি সাদের ‘ফিলোজফি ইন দি বেডরুম’, ফ্রাঁসোয়া র্যাবেলের ‘গার্গাতুয়াঁ অ্যান্ড পাঁতাগ্রুয়েল’, জঁ জেনের ‘আওয়ার লেডি অফ দি ফ্লাওয়ার্স’, অঁরি শারিয়েরের ‘পাপিলঁ’, মিগেল সেরভানতেসের ‘ডন কিয়োতে’, আর অগুনতি পত্রপত্রিকা যেগুলো ইউরোপ-আমেরিকা থেকে পেতুম । বাসুদেব দাশগুপ্তকেও পড়িয়েছি বইগুলো । ২৮ ডিসেম্বর ১৯৬৫ ব্যাংকশাল কোর্টে আমার এক মাসের জেল অনাদায়ে দুশো টাকা জরিমানার সাজা হয়েছিল । সম্পর্ক যে ভালো রাখার চেষ্টা করেছিলুম, ‘জেব্রা’ প্রকাশ করার চেষ্টা করছিলুম, তা সুভাষ ঘোষের ২২ নভেম্বর ১৯৬৬ এই চিঠি থেকে স্পষ্ট :
প্রিয় মলয়
প্লিজ তুমি আমার ওই লেখাটা প্রেসে দিও না, তাহলে মারা পড়ে যাব মাইরি । আমি দেড় ফরমার লেখা
পরশু নাগাদ পাঠিয়ে দিচ্ছি — ‘যুদ্ধে আমার তৃতীয় ফ্রন্ট’ — এটা যদি না ছাপো, একদম বসে যাব শালা,
তুমি তো বলেছিলে ডিসেম্বরে প্রেসে দেবে — দরকার হলে তোমার সম্পাদকের জমিতেও জায়গা দিও
ভাই।
আমার দুটো ফোটো পাঠাব, ছাপিয়ে দিও প্লিজ । বড়ো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছি । শালা তোমার রেজিমেন্ট দুর্বল
হলে দরকার মতো রাইফেল ধরবে কে — এলে তোমায় পেট ভরে ভদকা খাওয়াব মাইরি — আমি
কিছু দিন অসুস্হ — ডাক্তার বলেছে মদ্যপানজনিত পেটখারাপ অথবা গ্যাসট্রাইটিস । চিঠি পেয়ে সঙ্গে
সঙ্গে লিখো প্লিজ ।
সুভাষ
তাহলে কী এমন হল যে সুভাষ ঘোষও ক্রমশ এড়িয়ে যেতে লাগল ? বাসুদেব দাশগুপ্ত সংখ্যা ‘বাঘের বাচ্চা’ ( জানুয়ারি ২০১৬ ) পত্রিকায় সুভাষের স্ত্রী কণক ঘোষের দেয়া সাক্ষাৎকারে এর হদিশ মেলে । কণক ঘোষ বলেছেন, “পাঁচজন উদ্বাস্তু যুবক দ্বিতীয় পর্যায়ের হাংরি জেনারেশন সাহিত্য আন্দোলন শুরু করেছিল।” এনারা সেই পাঁচজন উদ্বাস্তু যুবক : সুভাষ ঘোষ, শৈলেশ্বর ঘোষ, বাসুদেব দাশগুপ্ত, প্রদীপ চৌধুরী এবং সুবো আচার্য । অর্থাৎ অন্যন্যদের বাদ দেবার জন্য যে মানদণ্ডে সুভাষ নিজেকে সোপর্দ করে ফেলল, তাহল “উদ্বাস্তু হওয়া ভালো, গরিব হওয়া ভালো, সর্বহারা হওয়া ভালো, ইংরেজি না শেখা ভালো, কমপিউটার না শেখা ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি।” এই মানদণ্ডে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুভাষ ঘোষ ।
সেই সময় থেকে সিপিএমের লুমপেনরা পশ্চিমবঙ্গকে ক্রমশ টেনে নামিয়ে অরাজকতার প্রসার ঘটিয়ে যাচ্ছিল, মার্কসবাদের প্রয়োগের জায়গায় দেখা দিয়েছেল মারোয়াড়ি দোহন-পোষণ, সুভাষ কেন তখন আত্মসমীক্ষা আর আত্মখনন করল না ? বাসুদেব দাশগুপ্ত নিজের লেখা বন্ধ করে সেসময়ে অবজার্ভ করে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের সমাজকে আর মার্কসবাদের প্রায়োগিক দৌরাত্ম্যকে, যা পরে ফুটে উঠবে বাসুদেবের অসাধারণ লেখাগুলোয়। ‘দন্দশূক’ পত্রিকায় বাসুদেব দাশগুপ্তের সঙ্গে মার্কসবাদ নিয়ে তর্কাতর্কি করার সময়েও সুভাষের মগজের চোখ বন্ধ ছিল ।
লেখকের যে একাকীত্ব প্রয়োজন, তার জন্য সময় কি সুভাষের থাকতো ? কলকাতায় গিয়ে চাটুকারদের সঙ্গে আড্ডা, খালাসিটোলায় মদ খাওয়া, চন্দননগরে ফিরে পার্টিবাজি । কখন থাকতো সময়, একলা বসে ভাবার?
সুভাষের চরিত্রে আর আচরণে মধ্যবিত্ত মূল্যবোধকে বজায় রাখার স্পেস ছিল, সেটা দেখেছি সোনাগাছিতে । ডেভিড গারসিয়া নামে একজন হিপি বাঙালি মেয়ের সঙ্গে প্রেম করতে চাইছিল বলে ওকে নিয়ে আমি, সুভাষ, বাসুদেব, সুবিমল, শৈলেশ্বর গিয়েছিলুম সোনাগাছিতে বেবি নামে এক যুবতীর ঘরে । সকলে বেবিকে টেপাটিপি করলেও, বাসুদেব চুমু খেলেও, সুভাষ মেয়েটির গায়ে হাত দেয়নি । পরে একদিন দুপুরে আরেকজন পৃথুলা-ফর্সা যুবতীর কাছে গেলে সে সকলের সঙ্গে এক-এক করে সেক্স করতে রাজি হয়ে যায় । সুভাষ ঘরে ঢুকেই বেরিয়ে এসে বলেছিল, “শালা দাঁড়ালোই না।” আমার মনে হয় সুভাষ সম্ভবত সেক্স করতে চায়নি, মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ ওকে বাধা দিয়েছিল ।
‘আমার চাবি’ লেখার পর সুভাষ শুধু অন্যের গোলমেলে ব্যাপারের খেয়াল রাখল, নিজের নয় । হয়তো এর জন্যে সুভাষকে ঘিরে থাকা তরুণ লেখক-চাটুকারদের অবদান আছে, যখন কিনা বাসুদেব দাশগুপ্ত চাটুকারদের অ্যাভয়েড করে বরং সোনাগাছিতে বেবি-দীপ্তি-মীরার সঙ্গে সময় কাটানোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে। বাসুদেবের ফিকশান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, অথচ সুভাষের লেখা নিয়ে কেন হচ্ছে না, তাও ভেবে দেখা দরকার মনে করেনি সুভাষ । এখানে তিন অংশে লেখা সুভাষের একটা লেখা তুলে দিচ্ছি, পড়লেই বোঝা যায় যে এটা বাসুদেব দাশগুপ্ত বা সুবিমল বসাকের মতন আত্মসমীক্ষা-আত্মখনন নয়, বরং ‘অন্যেরা কী করছে’ তা নিয়ে লেখকের হিংসুটে উদ্গার । আমার মনে হয় এই রচনা বাসুদেব দাশগুপ্ত বা সুবিমল বসাক লিখলে নিজেকেই জলাতঙ্ক আক্রান্ত মনে করতো :
১)এক ভীতুর গল্প
অনেকেই আমাকে ভীতু বলে—
আমি কখনও মেনেও নিই—
কামরোগ আমার ভয়
নামরোগ আমার ভয়
‘আমি’ রোগ ভয় আমার — ক্ষমতা রোগ
কামে অবশ রোগী এড়িয়ে যাই —
নামে অবশ রোগী এড়িয়ে যাই—
আমিতে বশীভূত রোগী এড়িয়ে যাই–
বোসে বোসে রোগসুখ
উপভোগ করবো — সে উপায় নাই —
আমার ফ্রেঞ্চ লিভ নাই–
ক্যাজুয়াল লিভ নাই
২) সিনথেটিক বীরের গল্প
অনেকেই আমাকে ভীতু বলে—
আমি কখনো মেনেও নিই—
বীর আর মহাবীর সেই কবে ঢুকে গ্যাছে বীরগাথায়—
নায়ক/মহানায়ক সেই কবে ঢুকে গেছে মহাকাব্যে —
মাঘ নিশীথে এই
বীর আর মহাবীর বীরগাথায়
ঘুম যায় — নাক ডাকে
মাঘ নিশীথে
নায়ক মহানায়ক মহাকাব্যে
নাক ডাকে — ঘুম যায়
আজ বীরের আদলে
যে চোস্ত বীর — সিনথেটিক বীর আমাকে
ভীতু বলে — আমি বলি তাকে
পেন্নাম জনাব !
আদপ জনাব !!
নায়কের আদলে যেসব
সিনথেটিক চোস্ত নায়ক আমাকে
ভীতু বলে — আমি বলি তাকে
আদপ জনাব !
পেন্নাম জনাব !!
সিনথেটিক বীরগণ
ক্যাকটাস শুঁকতে-শুঁকতে — শুঁকতে শুঁকতে
কিচেনগার্ডেনে ঢুকে যায়
আমি গ্যাঁটের পয়সা গুণতে-গুণতে — গুণতে গুণতে
মাতালের টোলায় — খালাসিটোলায়
ঢুকে যাই
৩ ) জলাতঙ্ক
কতকত রকমের আতঙ্ক
প্লেগ আতঙ্ক—
দাঁতাল আতঙ্ক—
স্টোনম্যান আতঙ্ক—
জলাতঙ্ক—
জলাতঙ্ক হলে কুকুরের লালা ঝরে — জিব থেকে, জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কুকুরের জিব থেকে ঝরে লালা—
অবিরল লালা ঝরে —
লালা ঝরে — লালা ঝরে —
ঝরে লালা—
লালা ঝরা একটা উপসর্গ — সিমটম — উপসর্গ ওই দেখা দিলে বুঝতে হয় ওই কুকুরের জলাতঙ্ক হয়েছে — জলাতঙ্কে কুকুর পাগল ক্ষ্যাপা ঘেয়ো হয় — ঘেয়ো কুকুর ওই অন্য কুকুরকে কামড়ে দিলেও সে-ও হয় পাগল ঘেয়ো ক্ষ্যাপা — জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত সে — তার জিব থেকে তখন লালা ঝরে —
লালা ঝরে — লালা ঝরে — লালা ঝরে —
লালা ঝরা একটা সিমটম—
জলাতঙ্কের
কোনোকোনো মানুষের জিব থেকেও ঝরে লালা — অবিরল/অনর্গল জিব থেকে ঝরে — ওই ঝরিত লালা ফলো করে কোনো লোক বলতেই পারে মানুষটার জলাতঙ্ক হয়েছে — যদি জলাতঙ্ক না হয় তাহলে বলে লোক — ওই জিব থেকে লালা ঝরা উপসর্গ ধরে মানুষটার অন্য রোগের কথা—
বলে
মানুষটার কামরোগ হয়েছে—
নামরোগ হয়েছে—
আমি রোগ হয়েছে—
নামরোগ — কামরোগ — আমি রোগ মানুষের
কুকুরের নয়
কুকুরের শুধু ঝরা লালা থেকে চিহ্ণিত জলাতঙ্ক রোগ —
মানুষের নামরোগ কামরোগ জলাতঙ্ক রোগ —
মজা এই জলাতঙ্ক কুকুর থেকে অন্য কুকুর নিজেকে আলাদা
করতে পারে না — মানুষ পারে —
জলাতঙ্ক রোগী থেকে মানুষ নিজেকে আলাদা করতে পারে — চাইলে
ঘেয়ো রোগী কামরোগী নামরোগী আমি রোগী থেকে মানুষ নিজেকে আলাদা করতে পারে অথবা পারে না–
কলকাতায় আসার পর ১৯৯৬ সালে আমি সুভাষের চন্দননগরের বাড়িতে গিয়েছিলুম । দেখলুম মিছিলে সিপিএমের স্লোগান দিয়ে ভিড়ের সঙ্গে হাঁটছে, দোরে সিপিএমের ঝাণ্ডা উড়ছে, বারান্দায় গোছা-গোছা সিপিএমের ঝাণ্ডা আর গণশক্তি । যাতে লোকে সদর দিয়ে ঢুকেই দেখতে পায় তাই দেয়ালে জ্যোতি বসুর ফোটো ঝোলানো । প্রতিষ্ঠানবিরোধীর অভাবনীয় ভোলবদল, সরকারের বিরুদ্ধে ছাড়া তাহলে আর কার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে সুভাষ !
আমার “ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস” উপন্যাস যোগাড় করে পড়ে থাকবে, তার সূত্র ধরে সৈয়দ মুস্তফা সিরাজকে আক্রমণ করে বসল, কেননা সিরাজ একটা চিঠিতে আমাকে লিখেছিলেন যে উপন্যাসটা পোস্টমডার্ন ; চিঠিটা “হাওয়া৪৯” পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল ।
সুবিমল বসাকের ফিকশান “ছাতামাথা” যখন প্রকাশিত হয়েছিল, তখনও তার বিরুদ্ধেও নানা কথা বলা আরম্ভ করেছিল সুভাষ, অথচ কলেজ স্ট্রিটের মেস ছাড়ার পর সুবিমলের আস্তানায় ছিল অতিথি হয়ে । বাসুদেবের গদ্যের হরাইজন্টাল সপ্লিটিং আর সুবিমল বসাকের ভার্টিকাল সপ্লিটিং ধরতে পারেনি সুভাষ, ওকে এতো বইপত্র পড়ানো সত্বেও । আমি ওর চন্দননগরের বাড়িতে গেলেও সুভাষ কিন্তু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়নি, ফোন করেনি বা আমার নাকতলার ফ্ল্যাটে আসেনি ।
চন্দননগরে যাবার পর সুভাষকে সিপিএমের স্হানীয় কর্তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে হতো বলে মনে করি, হয়তো মোহোল্লা কমিটির সদস্যও ছিল । পার্টি অফিসে গিয়ে সময় নষ্ট করতে হতো, যাদের সদস্যরা প্রায় সকলেই যে সাহিত্য-জ্ঞানহীন তা প্রকট হয়ে পড়ছিল দলটার কাজকারবারে ।
তৃণমূল আসার পর চন্দননগরের লুমপেনরা নিশ্চয়ই নতুন দলে চলে গেছে । ভয়াবহ পরিবেশে সুভাষ কী করত জানি না । হয়তো যে একাকীত্বের একান্তই প্রয়োজন ছিল তা সুভাষ পেতো।
উটের গ্রীবার মতো কোনো এক নিস্তব্ধতা এসে গ্রাস করে ফেলেছিল সুভাষ ঘোষকে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন