শনিবার

নষ্টালজিহ্বা : মলয় রায়চৌধুরী

নষ্টালজিহ্বা
হাঁ, তো রউয়াকে কা খবর বা অজিতবাবু ? সব ঠিকঠাক চলত রহল নু ? অপনা কে কা কহিঁ, উমর হো গইল, মনওয়া মেঁ কুছো জমত নহিঁ, একদম চিনি লইকিকে চুচি নিয়র দিখত নাহিঁ, সমঝলুঁ না ? তব আপ কহল রহলুঁ কি য়াদ করকে কুছো লিখল যায়, কোচিস করল যায়, দেখৌ ।

এখন সত্তর পার  বলেছে অজিত রায় লিখুন দিকিনি একখানা  গৎ
কামিনা টাইপ আপনার যৌবনের লীলেখেলা যা-যা মনে আসে ঝেড়ে দিন !
আররে অজিত ভায়া যৌবন কবে যে এসে কুঁচকিতে দুলাৎথি মেরেছিল
গোঁফের পাতলা রেখা গজানোর আগেপিছে নাকি যেদিন বন্ধুরা বলেছিল
আবে সালে মুঠ নহিঁ মারেগা তো পতা হ্যায় কিতনা গনদা ইককঠা হোগা
তেরা চমগাদড় মেঁ, তু সালে কাটুয়া হ্যায় তো নহিঁ কি খুললা সাফ-সুফ  
হোতা রহে ? নাকি সেই দিন যেদিন ছাত্ররা মিলে নেহেরুকে পচধরা ডিম
ছুঁড়ে মারবার ফলে পুলিশ চালিয়েছিল গুলি, দীনানাথ পাণ্ডে মারা গেল--
মুঠ মারা শিখলুম ক্লাস টেনে সেটা কি যৌবন নাকি রুবিকন লাইনের
শেষ বা ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণ উনিশশো বাহান্ন বছরে ব্রাহ্ম ইশকুলে   
 
         এই দশটা লাইন লেখার পর আর কিছুই লেখার নেই । শৈশব নিয়ে লিখে ফেলেছি ‘ছোটোলোকের ছোটোবেলা’ বইতে, তার পরের পর্ব লিখেছি ‘ছোটোলোকের যুববেলা’ বইতে আর শেষ পর্ব লিখেছি ‘ছোটোলোকের জীবন’ নামের দীর্ঘ আত্মঘটনায় ।
         অজিতবাবু, আপ কবসে মুঠ মারনা শুরু কিয়ে ? বিছৌনা গন্দা করনে কে বাদ, কি পহিলে ?
         মামলার ঝকমারি নিয়ে লিখেছি ‘হাংরি কিংবদন্তী’’ আর ‘প্রতিভাস’ থেকে প্রকাশিত, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘হাংরি সাহিত্য আন্দোলন’ বইতে ।
         কবে প্রথম এক কিশোরীকে তার পান্তাভাত-খাওয়া ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলুম, তার চুলের নারকেল তেলের গন্ধ, তার পুটপুটিয়া বোতাম খুলে বুকের পরাগে হাত দিয়েছিলুম, কুঁড়িতে মুখ দিয়েছিলুম, লাবিয়া ম্যাজোরায় তর্জনী রেখে ফোরপ্লে করে অরগ্যাজম এনেছিলুম, সবই তো লিখে ফেলেছি । হ্যাঁ, তারিখ-ফারিখ মনে নেই বটে। তবে, আঙুলটা মুখে পুরে স্বাদ নিয়েছিলুম, সেকথা এতাবৎ চেপে গেছি ।         
         তো রায়বাবু, অব কা বাকি রহল, বোলুঁ ? সব লিখ দেলি এন্নে-ওন্নে ।          
         অজিতবাবু বলার পর থেকে সেটাই ভাবছি বেশ কিছুকাল যাবত । কী বলা হয়নি !
         ও, হ্যাঁ, যাকে প্রথম চুমু খেয়ে তার প্রথম ফোরপ্লে করে অরগ্যাজম এনেছিলুম, সে পরে বলেছিল যে ওই আঙুলের কারণে তার মাসিক গোলমাল হয়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ রোগ ধরেছিল, আর সেইজন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হতো, গাইনাক দেখাতে হয়, ভাগ্যিস বরব্যাটা গাইনাককে জিগ্যেস করেনি ।
         মুখে আঙুল পুরে যে স্বাদ পেয়েছিলুম সেই স্বাদ আবার ফিরে এসেছিল, এক বাঘিনীর দেহঘাঁটার সূত্রে । পাহাড়ি হিন্দু গ্রামবাসীরা বাঘের মাংস খায়, সেই প্রথমবার দেখলুম । সেই ঘটনাটা নিয়ে অজিতের “শহর” পত্রিকায় একটা গল্প লিখেছিলুম, “দুধসন্দর্ভ” নামে, সেপ্টেম্বর ২০০৩ সালে, যাকে বলে ‘সত্য ঘটনা অবলম্বনে, আমার “অপ্রকাশিত ছোটগল্প” বইতে আছে, শাশ্বত সিকদার প্রকাশ করেছিল । সেই গল্পতে, যেহেতু তাকে গল্পের শেষ প্যাঁচ  দেবার ছিল, তাই আরেকটু তথ্য চেপে গিয়েছিলুম, যা পরে লিখেছি “বাঘিনীর জন্য প্রেমের কবিতা”য়, আর পরের দিন একজন পাহাড়ি বাঘের মাংস রেঁধে এনেছিল, আমাদের জন্য, আমি এক টুকরো খেয়েছিলুম, ছিবড়ে টাইপ, ঘোড়ার মাংসের মতন অনেকটা, কিন্তু লোকে যে বলে বেড়ায় বাঘের মাংসে দুর্গন্ধ থাকে, রান্নাকরা মাংসে তা পাইনি । গন্ধ পেয়েছি কাঙারুর সসেজে, ছেলে এনে দিয়েছিল অসট্রেলিয়া থেকে । তার চেয়ে ইউরোপে বাছুরের আর গোলাপি শুয়োরের মাংসের যে মিটবল বিক্রি হয়, স্পঞ্জের মতন, মুখে দিলেই গলে যায় । এবার বাঘিনী প্রেমিকাকে নিয়ে যে কবিতাটা লিখেছিলুম :-

বাঁশে চার-থাবা বাঁধা বাঘিনীর ঘুষঘুষে বুকে
উপুড় শুয়ে পড়ি পূর্ণিমার শিশির-ভেজা রাতে
আমার উলঙ্গ ঘ্যামা স্খলিত সত্তা মুড়ে
বাঘিনীর মাইয়ের বোঁটা মুখে কান্না পেয়ে গেল
দুধহীন চুষি আর বেঁহেড ফোঁপাতে থাকি
ক্রমে লিঙ্গ জেগে ওঠে কান্না বন্ধ হয়
বাঘিনীর যোনিতে মুখ রেখে বলি, ভালোবাসি তোকে
অবন্তিকা, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি

          হ্যাঁ, বাঘিনীর যোনিতে আঙুল দিয়েছিলুম, আর সেই আঙুল মুখে পুরেছিলুম । আর স্বাদ ? হুবহু আমার কিশোরী প্রেমিকার যোনিরসের মতন, তার নাম বলা যাবে না, বুড়ি হয়ে এখনও শিক্ষকতা করে যাচ্ছে। তাকে নিয়ে অনুপম মুখোপাধ্যায়ের বাক-এ একটা কবিতা লিখেছি । সব প্রাণীর যোনির স্বাদ কেন নোনতা, অনেকটা বিকেলে নামানো তাড়ির মতন ।
        অজিতবাবু, আপ কভি উংলি ডালকে রস চকখে হ্যাঁয় কি নহিঁ ? কহিয়ে ? মজা আয়া থা না ? কইসন নমকিন নমকিন, আঁয় ?
        তাড়ির কথায় মনে পড়ল, আমার জিগরি দোস্ত, এখন অক্কা পেয়ে নির্ঘাৎ পারগেটোরিওতে, এরিক পেজ, বলতো তাড়ি হলো ঈশ্বরের বীর্য, দ্যাখো, তাড়ি কেবল লিঙ্গের মতন গাছেই হয়, তালগাছে, মানে তাড়লিঙ্গ, খেজুর গাছে, কিন্তু নারকেল গাছে হয় না, কেননা নারকেল গাছ নিজের ইচ্ছে মতন বেঁকেও উঠে যেতে পারে । বাঙালিরা পাকা তালের আঁটি মাটিতে পুঁতে ফোঁপল খায়, কিন্তু মালায়ালিরা ওই আঁটিকে পচিয়ে দেশি মদ বানায়, আহা, এক ভাঁড় চুমুক দিলেই বোদলেয়ারের জাঁ দুভালের কোলে গিয়ে তুমি আছড়ে পড়বে, শুনতে পাবে ফরাসি ভাষায় তার কালচেত্বক খিলখিল ।
        তবে সবচেয়ে কড়ক তাড়ি খেয়েছিলুম আরেক ধরণের তাড়লিঙ্গ গাছের, তার নাম সালফি, গাছগুলো দেখতে প্রায় খেজুর গাছের মতন, কিন্তু পাতা সরু-সরু । আমার আর আমার সহকারি অফিসার উমা মহেশ্বর রাও-এর গাইড বলেছিল, এই মদে এতো নেশা হয় যে লোকে হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় ।
         জায়গাটা দান্তেওড়ার অবুঝমাড় জঙ্গল, সেখানে পরিষ্কার জল সহজে পাওয়া যায় না, তার বদলে সালফি খেয়ে লোকে চালায়, নয়তো পাহাড়ি চিলতে নদীর বর্ষাকালের জল । আমরা বোতলে জল ভরে নিয়ে গিয়েছিলুম । এই বোতলে জল নিয়ে যাবার আরও খানিক ঘটনা আছে, পরে মনে পড়লে, বলব ।
         অবুঝমাড় এখন মাওওয়াদিদের ইলাকা-এ-লাল । সেখানে আরেকটা বস্তুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, যাকে বন দপতরের অফিসার বলেছিল রেড ভেলভেট মাইট বা ট্রমবিডাইডা পোকা, লাল টকটকে, অবুঝমাড়ের গোঁড়-মাড়িয়ারা বলে বিয়ার বহোতি, শুকিয়ে খায় তারা, শহরের বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে । পুরুষ আর নারী, দুইই পোকাগুলো খায় ইনডিয়ান ভায়াগ্রা হিসেবে। পোকাগুলো পিষে অবুঝমাড়িয়ারা তেল বানায়, বাতে মালিশ করার জন্য, নারায়ণপুর শহরে নিয়ে গিয়ে বিক্রিও করে । একটু সালফি খেয়েছিলুম ফেরবার দিন, জলের বোতলে ভরে এনেছিলুম, গেস্টহাউসে খেয়েছিলুম কেয়ারটেকারের রাঁধা মুর্গির মাংস দিয়ে । আর বিয়ার বহোতি পোকা এনে অফিসে বিলি করেছিলুম । অবুঝমাড়ের অভিজ্ঞতা আমি আমার “ঔরস” উপন্যাসে ঢুকিয়েছি, এখনও প্রকাশক পাইনি বই করে বের করার ।
        এখন আর আমি বাংলামদ, তাড়ি, ফেনি, ফলচোলাই করা দেশি মদ খেতে পারি না, লিভারে ঝিংকে ওঠে । সবচেয়ে ভালো লাগে আবসাঁথ, যা র‌্যাঁবো-ভেরলেন-বোদলেয়ার খেতেন, নিট খেতে হয়, সবুজ রঙের, মৌরি থেকে তৈরি, জল বা সোডা মেশানো যায় না, মেশালেই তাড়ির মতন সাদাটে হয়ে যায়, মজা কিরকিরা করে দেয় । আর খাই সিঙ্গল মল্ট । এগুলোও ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে, জামাই যখন বিদেশ থেকে আসে তখন ডিউটি ফ্রি থেকে কিনে আনে । মদ আমি একা খেতে ভালোবাসি । এমনিতেই আমি একা থাকতে ভালোবাসি ।
        অজিতবাবু, আপকো কৌন মাল অচ্ছা লগত হ্যায়, ঠররা কি বিলয়তি ? ঠররা না ? হম জানত রহি, হেঃ হেঃ ।
        একটু আগে যে কথা হচ্ছিল, মরা বাঘিনীর,  রিগর মরটিস হয়ে যাবার ফলে লিঙ্গ প্রবেশ করানো যায়নি, তবে ছড়ে গিয়েছিল, তার আগে আমার কখনও ছড়েনি, লুব্রিক্যাণ্ট ব্যবহার করতুম বলে । ট্যুরে তো আর সঙ্গে লুব্রিক্যাণ্ট নিয়ে ঘোরা যায় না, তাও আবার হিমালয়ের তরাই অঞ্চলে । ছড়ে যাবার কথায় বিনয় মজুমদারের এই কবিতাটা মনে পড়ে গেল, অসাধারণ কবিতা :-

যাক তবে জ্বলে যাক, জলস্তম্ভ, ছেঁড়া ঘা, হৃদয় ।
সব শান্তি দূরে যাক, সব তৃপ্তি, সব ভুলে যাই ।
শুধু তার যন্ত্রণায় ডুবে থাক হৃদয় শরীর ।
তার তরণির মতো দীর্ঘ চোখে ছিল সাগরের
গভীর আহ্বান, ছায়া, মেঘ, ঝঞ্ঝা, আকাশ বাতাস ।

কাঁটার আঘাতদায়ী কুসুমের স্মৃতির মতন
দীর্ঘস্হায়ী তার চিন্তা -- প্রথম মিলনকালে ছড়া
ত্বকের জ্বালার মতো গোপন, মধুর এ-বেদনা ।
যাক সব জ্বলে যাক, জলস্তম্ভ, ছেঁড়া ঘা, হৃদয় ।

         বিনয় মজুমদার হাংরি আন্দোলনে প্রথম দিকে ছিলেন, তারপর শক্তি-সন্দীপনের সাহিত্যিক রাজনীতিতে বিরক্ত হয়ে আন্দোলন ত্যাগ করেন । ১৯৯৯ সালে বিনয় এক সাক্ষাৎকারে মারুফ হোসেনকে যা বলেছিলেন, তা পড়ে মনে হলো যে ওনাকে হাংরি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ঘোষণা করা উচিত ছিল । উনি সরাসরি যদি আমাকে বলতেন তাহলে আমি বুলেটিনে ওনার নামই “ফাউণ্ডার” হিসাবে ছেপে দিতুম, তাহলে সুনীল-শক্তি-সন্দীপনের কলকাঠি পোয়াতে হতো না । শৈলেশ্বর ঘোষ আর সুভাষ ঘোষ রাজসাক্ষীও হয়তো হতো না । শঙ্খ ঘোষও হামবড়াই করে “শব্দ আর সত্য” নামের গুরুঘণ্টাল লিখতেন না ।
         ইনকা নাম সুনে হ্যাঁয় অজিতবাবু ? ই সনকা ঘোস ? আররে কা বতাই ।
         “শব্দ আর সত্য” শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন ১৯৭১ সালে, মাইন্ড ইট রজনীকান্ত, ১৯৭১ সালে, প্রবন্ধটা শুরু করেছেন এই ভাবে, “কবিতালেখার অপরাধে এই শহরের কয়েকজন যুবককে যে একদিন হাজতবাস করতে হয়েছিল, এটা আজ ইতিহাসের বিষয়।” উনি এই লাইনটা লেখার আগে পঁয়ত্রিশ মাস যাবত আদালতে আমার মামলা চলেছিল, ব্যাঙ্কশাল কোর্টের জজ জেলজরিমানার আদেশ দিয়েছিলেন । সেসব পুরো চেপে গেছেন উনি, কেন জানি না । আমি সাহিত্য অকাদেমির অনুবাদের পুরস্কারে লাথি মেরে ফেরত দিয়েছি, তাও ২০১৪ সালে উনি জানতেন না ; প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করে কপি চেয়েছিলেন, বিশ্বাস হচ্ছিল না বলে । প্রবন্ধে উনি লিখেছেন, “মলয় রায়চৌধুরীর যে উত্তেজনা বা আগ্রহ ফুটে উঠেছিল তার কোনো সঙ্গত কারণ দেখতে পাই না।”
          সমঝেঁ কি নহিঁ অজিতবাবু ? ই হ্যাঁয় কলকতিয়া বনাইল-খোখোয়া ।
          বুঝলে অজিত, আমি সেই সময়ে আদলতে চক্কর কাটছি, পকেটে পয়সা নেই, কলকাতায় মাথা গোঁজার জায়গা নেই, উকিলের চেম্বারে বসে থাকছি, হাইকোর্টের উকিল খুঁজে বেড়াচ্ছি, আর উনি আরামে নিজের ঘরে বসে দিব্বি হেঁকে ডেকে কিল মেরে  উপদেশ ঝেড়ে দিলেন ।
         যে অধ্যাপক নিজের জীবনে কখনও রাস্তায়, মাঠে বা নদীর ধারে বসে হাগেননি, তাঁর পক্ষে জীবন আর সমাজকে বোঝা কঠিন ।
         হ্যায় কি নহিঁ অজিতবাবু ? অব আপ কহিয়েগা কি নহিঁ হ্যায় তো লোগ হগতে হ্যাঁয় কহাঁ সে !
         “ফিরে এসো, চাকা” বইটার জন্য বিনয়ের  খ্যাতি কলকাতার হিন্দি সাহিত্যিকদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছিল । জ্ঞানোদয় পত্রিকার সম্পাদক বিনয়কে নায়ক করে সেই সময়ে একটা বই লিখেছিলেন, “কলেজ স্ট্রিট কা নয়া মসীহা” নামে । শরদ দেওড়ার চাকরি ছিল খবরের কাগজ পড়ার । বালিগঞ্জের মারোয়াড়ি কলোনিতে গিয়ে জৈন পরিবার, বিরলা পরিবার, খেতান পরিবারের বুড়িদের খবরের কাগজের হেডলাইনগুলো পড়ে শোনানো । তারপর ফিরে এসে বড়োবাজারে ওর দাদার গদ্দির ব্যবসা চালানো, প্রধানত ফাটকাবাজির ব্যবসা। আমি শরদ দেওড়ার বড়োবাজারের মেঝেয় পাতা মোটা গদিতে শুয়ে অনেক রাত কাটিয়েছি, মামলার সময়ে, তবে সকালে উঠে হাগবার সমস্যা হতো, কেননা কলকাতার বাইরে থেকে যে মারোয়াড়িরা ব্যবসার কাজে আসতো তারাও অনেকে ওই গদিতে শুয়ে রাত কাতাতো ।
         বিনয় মজুমদার আন্দোলন ছাড়ার সময়ে শক্তি-সন্দীপনের বিরুদ্ধে একটা বুলেটিন ছাপিয়ে ছিলেন আর বিলি করতে দিয়েছিলেন আমাদের । মজার বুলেটিন :-
১) শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অনিপুণ নপুংসকরূপ আশা করি এ-যাবৎ পাঠক-পাঠিকা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পাননি ; সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করে অবস্হাকে বেশ মজাদার করেছেন ; পদলেহী কুক্কুরের নিয়োগকারিনী চালচুলোহীন এক নারীর আত্মার নির্দেশনা অনুসারে উক্ত কবি নিজেকে মহিলা মনে করে কবিতা লেখেন ; আর কথপোকথনকালে দেখি মহিলার  অভিনয় করায় শ্রীমানটির কোনো ভাবলেশ উপস্হিত হয় না ; অথচ ক্রমে-ক্রমে আমার দাসীত্ব নিয়ে সেই বেয়াদপ আত্মাটিকে শায়েস্তা করেছি আর অঙ্কশাস্ত্রে শ্রীমতি এখন মতামত জ্ঞাপনের মতন স্হুলতা দেখাবার বিপদের ঝুঁকি নিতে সক্ষম হবে কি -- কবিটির জন্ম কি কুকুর আর গাধার সঙ্গমজাত ফল ?
২ ) স্হাপত্যবিদ্যায় ফেল মেরে-মেরে এক ছাগলের বীর্যজাত নির্মল মৈত্রেয় জীবিকায় হাস্যকর ভিক্ষাবৃত্তি ঝুলে আছে ; তবে ভয় নেই, যতক্ষণ তার কচি পায়ু আছে, দালালী রয়েছে ।
৩) সন্দীপন, হে শ্রীমান, দাস-অনুদাস শব্দটি শুনেছিলাম কবে যে ঠিক মনে নেই । তবে এটা নিশ্চিতই কবুল করতে হবে আজ -- দাসী-অনুদাস বলে কোনো শব্দ এ-যাবৎ আমি তো শুনিনি । ফলে যথাযথরূপে তোমার অবস্হা প্রকাশের ভাষার স্বচ্ছতা, বৎস, ভবিষ্যতে ভেবে দেখা যাবে ।
৪ ) দল পাকাবার আগে, পরেও তাদের, রেকটাম বীট করে দিয়েছি বলেই, এইসব কেঁচোবৃন্দ বীটনিক নাম নিয়েছিল ।
                                                                                   ১০. ৬. ১৯৬৪
                                                                               রচয়িতা ও প্রকাশক
                                                                                  বিনয় মজুমদার
                                                                         ৬৯, মির্জাপুর স্ট্রিট, কলকাতা - ৯
         এর পরেই বিনয় মজুমদারের স্কিৎসোফ্রেনিয়ার আক্রমণ হয় । হঠাৎই । কফিহাউসে ঢুকলেন, মাথায় ঝাঁকড়া অগোছালো চুল, দেখলেই টের পাওয়া যায় যে স্নান করা ছেড়ে দিয়েছেন, গায়ে দুর্গন্ধ,  মুখভর্তি দাড়ি, জামাকাপড় বেশ নোংরা, আঙুলের নখ কাটেননি বেশ কিছুকাল, নখের ভেতর নোংরা, রেগে আছেন উপস্হিত সবায়ের ওপর, গালাগাল দিচ্ছেন, টেবিলে-টেবিলে থুতু ছেটাচ্ছেন । একদিন একটা লাঠি এনে এক বেয়ারার মাথায় আঘাত করলেন । বেয়ারারা ধরে নিয়ে গেল থানায় । কুড়ি দিন জেলহাজতে থাকার পর ছাড়া পেলেন। ছাড়া পাবার কিছুকাল পর বিনা পাসপোর্ট ভিসায় সীমান্ত পেরিয়ে চলে গেলেন পূর্ব পাকিস্তানে নিজেদের ফেলে-আসা গ্রামে ।
         জানতে হ্যাঁয় অজিতবাবু, ই বিনয় হ্যাঁয় না, ই চারবার জেল যা চুকে হ্যাঁয় ।
         হম জানতে হ্যাঁয়, অজিতবাবু, আপকো একবার মাফিয়া লোগন পিট-পিটকে কচুম্বর বনা দিহিস রহলা !
         বিনয়কে গোবরা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলো । সে খবর আবার কফিহাউসে রসিয়ে-রসিয়ে বেওড়া-কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত, যাঁকে আমরা বলতুম, কবিতায় আর মাতলামিতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ডুপলিকেট, এইভাবে টেবিলে-টেবিলে বলে বেড়ালেন, “তোমরা শালারা একেবারেই অপদার্থ । কলকাতায় কী সব ঘটছে কিছুরই খবর রাখো না । বিনয়দা এ-যাত্রা বেঁচে গেলেন । গোবরা মানসিক হাসপাতালে আছেন । স্নানটা অন্তত করছেন নিয়মিত । খাওয়া-দাওয়াও মন্দ করছেন না । বেশির ভাগ একা-একাই থাকেন, আর কী সব নাকি বিড়বিড় করে বলে চলেন অনবরত ।”
         মনে পড়ে গেল, “পরিচয়” পত্রিকায় রিভিউ করার জন্য আমার প্রথম উপন্যাস “ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস” দিয়েছিলুম অমিতাভ দাশগুপ্তকে । উনি বললেন চলো চা খাওয়া যাক । নিয়ে গেলাম দপতরের পাশের প্রায়-ফাঁকা চায়ের ঠেকে । উনি হাতে নিয়ে বললেন, “দেবেশ রায়ের কাছে বইটার কথা শুনেছি” । উনি বইটার প্রকাশক ইত্যাদি দেখতে লাগলেন, বললেন, হ্যাঁ, আমি নিজেই রিভিউ করব । আমি চলে এলাম । মিনিট কুড়ি পরে সন্দেহ হওয়ায়, ফিরে গিয়ে দেখি, বইটা বসার জায়গায় ফেলে দিয়ে চলে গেছেন । একেবারে শক্তি চট্টোপাধ্যায় বসানো ।
        গৌতম সেনগুপ্ত, এখন শুনেছি পাবলিকেশান খুলেছে, নাকতলায় থাকতে সুরজিৎ সেনের সঙ্গে আসতো আমার ফ্ল্যাটে আড্ডা মারতে আর সলিলার হাতের রান্না খেতে । কড়াইশুঁটির সঙ্গে রশুন-তেজপাতা-লবঙ্গ-এলাচ পেষা তরকারি ওর ভালো লাগা্য়, নিজের বউয়ের জন্য নিয়ে গিয়েছিল ডিবে করে । গৌতম সেনগুপ্ত বলেছিল, দেবেশ রায় “ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস” রিভিউ করবেন বলেছেন । কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক, দেবেশ রায় করেননি। গৌতমও তারপর আর আসতো না, সুরজিৎ কেবল একা আসতো । ওরা দুজনে আমার একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিল, “হাওয়া৪৯” পত্রিকার এপ্রিল ২০০১ সংখ্যার জন্য ।
         বিনয় মজুমদার পরে “বাল্মীকির কবিতা” লিখলেন, যা হাংরি আন্দোলনের বুলেটিনে প্রকাশিত হলে দারুণ ব্যাপার ঘটত, কলকাতাকে একদম কমরিয়া হিলেলা চুতড়ওয়া ডোলেলা করে দেয়া যেতো । আপশোষ হয় যে আমি কেন এরকম লিখে উঠতে পারিনি । একটা কবিতা দিচ্ছি :

চাঁদের গুহার দিকে নির্ণিমেষে চেয়ে থাকি, মেঝের উপরে
দাঁড়িয়ে রয়েছে চাঁদ, প্রকাশ্য দিনের বেলা, স্পষ্ট দেখা যায়
চাঁদের গুহার দিকে, নির্নিমেষে চেয়ে থাকি, ঘাসগুলো ছোট করে ছাঁটা ।
ঘাসের ভিতর দিয়ে দেখা যায় গুহার উপরকার ভাঁজ ।
গুহার লুকোনো মুখ থেকে শুরু  হয়ে সেই ভাঁজটি এসেছে
বাহিরে পেটের দিকে । চাঁদ হেঁটে এসে যেই বিছানার উপরে দাঁড়াল
অমনি চাঁদকে বলি, ‘তেল লাগাবে না আজ’, শুনে চাঁদ বলে,
‘মাখব নিশ্চয়, তবে একটু অপেক্ষা কর’, বলে সে অয়েলক্লথ নিয়ে
পেতে দিল বিছানায়, বালিশের কিছু নীচে, তারপর হেঁটে এসে চলে গেল
নিকটে তাকের দিকে, একটি বোতল থেকে বাম হাতে তেল নিয়ে এল
এসে তেল-মাখা হাতে ভুট্টাটি চেপে ধরে ।
যখন ধরল তার আগেই ভুট্টাটি খাড়া হয়ে গিয়েছিল ।
চাঁদ আমি দুজনেই মেঝেতে দাঁড়ানো মুখোমুখি
এক হাতে ঘসে-ঘসে ভুট্টার ওপরে চাঁদ তেল মেখে দিল ।

         কৃত্তিবাসের কবিদের যেতে দেখেছি, অবিনাশ কবিরাজ লেনে, পার্বতী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, কেননা হাংরি মামলার সময়ে ( ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ ) আমার উকিলের চেম্বার ছিল গলিটার ঠিক উল্টো দিকে, আর কারা কারা ঢুকছে তা উকিলের জানলা দিয়ে স্পষ্ট দেখা যেতো । বিনয় এই পাড়াকে বলেছেন বৃন্দাবন, যার কাছে যেতেন তার নাম রাধা । বিনয়কে যেতে আমি দেখিনি ; উনি বেশ পরে যেতেন বলে মনে হয় । শক্তি চট্টোপাধ্যায়কেও কখনও দেখিনি কৃত্তিবাসের দলে ।
        কবিতাটায় তেল মাখার প্রসঙ্গটা বুঝতে পারলুম না । যাঁকে তিনি বলছেন বৃন্দাবন, সে পাড়ায় তো গুহায় এতোবার যাওয়া-আসা হয় যে তাকে অবারিতই বলা যায় । এতোই অবারিত যে হাংরি আন্দোলনকারীরা যখন বৃন্দাবনে যেতো তখন পারাপারি করে কাজ ফুরিয়ে ফেলতে বিশেষ সময় লাগতো না ; সময় যা লাগতো তা হলো ফস্টিনষ্টি করার, আর সকলেই কাজের চেয়ে ফস্টিনষ্টি করাতেই বেশি আগ্রহ দেখাতো । বেবি, মীরা, দীপ্তির ঘরে । একবার তো সুভাষ ঘোষ মীরার ঘরে ঢুকেই তিন মিনিটে বেরিয়ে এসেছিল । “বাঘের বাচ্চা” পত্রিকায় প্রকাশিত চিঠি থেকে জানা যায়, বাসুদেব দাশগুপ্ত বেবি নামের চলনসই তরুণীর বাবু হয়ে বছরের পর বছর কাটিয়েছে, অবসর নেবার পরও, দুপুরে বৃন্দাবন থেকে চলে আসতো দাদার বাঁশদ্রোণীর বাড়ি, এতোই মাতাল যে সোফায় চিৎপটাঙ, খোঁয়ারি কাটলে ফিরে যেতো অশোকনগরে ; অনেকসময়ে অবনী ধরকে সঙ্গে নিয়ে বৃন্দাবনে যেতো, দুপুর বেলা । চিঠিগুলো থেকে জানা যায় শৈলেশ্বর ঘোষ যেতো মীরার কাছে, ফর্সা থলথলে ড্যাবড্যাবে চোখ যুবতী, সম্ভবত স্ত্রী মারা যাবার পর বাসুদেব দাশগুপ্তের অনুসরণকারী হয়ে গিয়েছিল ।
         বৃন্দাবনের গোপীদের ব্যাপারে এক্সপার্ট ছিল করুণানিধান মুখোপাধ্যায় । ওর কোনো বাছবিচার ছিল না। হিপিনির গালে পটাক করে চুমু খেতে পারতো প্রথম পরিচয়েই । এক হিপিনির সঙ্গে বাঁশ-খড়ের কুটির তৈরি করে গঙ্গার ওপারে বালিয়াড়িতে অ্যাডাম-ইভের মতন উলঙ্গ সংসার পেতেছিল কিছুকাল, ওর স্ত্রীকে মাঝে-মধ্যে হিপিনির দেয়া ডলার দিয়ে আসতো । নেপালে একজন আমেরিকান-আফ্রিকানকে ফাঁসিয়ে তার সঙ্গেও শোবার বন্দোবস্ত করে ফেলেছিল । কাঠমাণ্ডুতে মাঙনায় চরস ফোঁকার জন্য মন্দিরে সন্ধ্যায় বুড়োদের যে জমায়েত হয়, তাতে গিয়ে বসে পড়ত আর কয়েকটান দিয়ে নিতো, ওর দেখাদেখি আমরাও ক্রমশ লজ্জা-কুন্ঠা বিসর্জন দিতে শিখে গিয়েছিলুম । গর্দা বা গুঁড়ো গাঁজা ( পাকিস্তান থেকে নিয়ে আসতো হিপিরা ), চরস আর আফিমের গুলি পাকিয়ে পাইপে বা ছিলিমে ভরে ফোঁকা আবিষ্কার করেছিল করুণা, সুপারস্ট্রং নেশার জন্য মস্তানা গোলি ।
জীবনকে সাবভার্ট করার মাস্টার ছিল বলতে হবে ।
         অজিতবাবু, আপ বৃন্দাবনমে তিরথ করনে কে লিয়ে গয়েঁ থে কি নহিঁ ?
         চাকরিতে যোগ দিয়ে জুটেছিল ব্যাংকনোট পোড়াবার কাজ, পচা-গলা নোটের পাহাড় পুড়িয়ে নষ্ট করার কাজ, এখন অবশ্য সেই প্রথা উঠে গিয়ে শ্রেডিং করে নষ্ট করা হয়, পাল্প থেকে পিচবোর্ড ইত্যাদি তৈরি হয় । ওই চাকরি থেকে আমি প্রথম সুযোগেই পালাই, যোগ দিই গ্রামীণ উন্নয়ন আধিকারিকের কাজে । সেই কাজে যে হাগবার কতো অসুবিধা তার অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি । সেসময়ে বিহার উত্তরপ্রদেশ রাজস্হান হরিয়ানা পাঞ্জাব মধ্যপ্রদেশের গ্রামে ধনীদের বাড়িতেও পায়খানা নামের ব্যাপার ছিল না । সকালে উঠে মাঠে যাও । প্রথম দিকে, ওই যে লজ্জা-কুন্ঠা, কাজ করতো ; পরে অভ্যাস হয়ে গেল । ট্যুরের জন্য আমি একটা এনামেলের মাগ কিনে নিয়েছিলুম, তখনও প্লাসটিকের মাগ বেরোয়নি । আর নিতুম জলের বোতল। তবুও পেট খারাপ হতো । পেট খারাপের জন্য সঙ্গে ওষুধ রাখতুম, তা সত্বেও পাতলা পায়খানা থেকে নিষ্কৃতি পেতুম না। তার ওপর যান বাহনের সে কী অসুবিধা, ওফ, নদীর ধার দিয়ে হাঁটছি তো হাঁটছিই, হাতে ব্যথা ধরে গেলে মাথার ওপর ভারি ব্রিফকেস চাপিয়ে । উটের পিঠে, হাতির পিঠে, ঘোড়ার পিঠে চেপেও যেতে হয়েছে । রাজস্হানের একটা গ্রামের মোড়ল একবার পাল্কির ব্যবস্হা করেছিল, স্যাঁতসেতে গন্ধ, বসেই আমি আর আমার সহকারী আধিকারিক টের পাচ্ছিলুম যে বহুকাল ব্যবহার হয়নি । সামন্তবাদী জীবনযাপন বলতে ওইটুকুই অভিজ্ঞতা ।
         হাগাহাগির কথা বলতে গিয়ে আরও দুটো ঘটনা মনে পড়ে গেল ।
         হনিমুন করতে যাচ্ছিলুম শিমলা, তখন সেখানে তুষারপাত আরম্ভ হয়েছিল বলে । যাচ্ছি শুনে অফিসের সহকর্মী সুশীলকুমার বললো ও-ও যাবে বউকে নিয়ে । যাবার পথে ওর গ্রাম রোপড়ে দুদিন হল্ট । ওর গ্রামে গিয়ে জানা গেল যে ওদের বাড়িতে পায়খানা নেই । নববধু সলিলা কী করবে ! বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে ভোররাতে ওকেও যেতে হলো আখের খেতের আড়ালে । আমার কোনো সমস্যা ছিল না, গেলুম মাঠে হাগতে সুশীলের সঙ্গে। কলেজে এন সি সিতে যখন ছিলুম, তখন ক্যাম্পে দল বেঁধে গোল হয়ে বসে হাগতুম আর গল্প করতুম, পাদের প্রতিযোগীতা করতুম ।
         আরেকটা ঘটনা হল নাকতলার ফ্ল্যাটে থাকার সময়ে । গ্যারেজটা ভাড়া নিয়ে ফিয়াট গাড়ি রাখতুম । একদিন গাড়ি বের করতে গিয়ে দেখি পুরো গ্যারেজে গোড়ালি পর্যন্ত গু ভাসছে, গাড়ির চাকা গুয়ে । বিলডিঙের পেছনে গিয়ে জানতে পারলুম ফ্ল্যাটগুলোর পায়খানার পাইপ বন্ধ হয়ে গেছে, একতলার ভাড়াটেদের কচি মেয়েগুলোর ফেলা স্যানিটারি ন্যাপকিনে । বাঁশদ্রোণীর কাছে যে কাজের লোকরা ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে বসে থাকে, তাদের বলতে, বলল, ওসব কাজ ওরা করে না । করপোরেশানের দপতরে খোঁজ নিতে, তারা বলল যে নদর্মা আর রাস্তা পরিষ্কার করার কর্মীরা করপোরেশানে নয়, পার্টি অফিসে থাকে । পার্টি অফিসে গেলুম, সাফাইকর্মীরা বলল, বাড়ির ভেতরকার ডিউটি ওদের নয় ।
        অগত্যা দুটো লম্বা ক্লিনার কিনলুম, রাবার লাগানো, পাইপ কিনলুম বেশ অনেকটা । সলিলা শায়া ব্লাউজ পরে আর আমি গামছা পরে গ্যারেজ থেকে গু ঠেলে-ঠেলে নর্দমায় নিয়ে গেলুম, ওপর থেকে পাইপ ঝুলিয়ে জল এনে আমি আর সলিলা ঝেঁটিয়ে-ঝেঁটিয়ে পরিষ্কার করলুম ।
       সবচেয়ে প্রথম যা করলুম তা হলো গাড়িটা বেচে দেয়া । প্রথম যে কিনতে এসেছিল, তাকেই বেচে দিলুম ।
       কিছুদিন পরে ফ্ল্যাটটাও বেচে দিলুম, জাস্ট পাঁচ লাখ টাকায় । খাবার জলের প্রচণ্ড অসুবিধা হচ্ছিল । কোনো ভারি তিন তলায় জল আনতে রাজি ছিল না । মিনারাল ওয়াটারের কুড়ি কেজি কনটেইনার কয়েকদিন তুলে আর পারলো না দোকানদার ছেলেটা । জল ভরতে দেড় লিটারের বোতলে রাস্তার টিউকল থেকে জল ভরতে হতো, থলেতে করে তিন তলায় তুলতে হতো । কয়েকদিন তুলেই হালত খাস্তা ।
      ফ্ল্যাটটা যখন বেচলুম, দাদাকে বলেছিলুম, ওপরতলাটা আমাকে ভাড়া দাও । বউদি বললেম, না, তা হবে না, তোমরা কোথাও একতলা ভাড়া করে থাকগে যাও ।
      দাদা বললেন, তোরা থাকলে পরে প্রবলেম হবে ।
      আসলে দাদার ছেলেরা পাটনার বাড়ি থেকে আমার-সলিলার আর আমার ছেলে-মেয়ের যাবতীয় আসবাবপত্র, বইসংগ্রহ, স্কুলের পুরস্কার, গ্যাজেট, ফোটো ইত্যাদি বেচে দিয়েছিল বা ফেলে দিয়েছিল । বাসন-কোসন আর ফার্নিচার ফ্রিজ ইত্যাদি বাঁশদ্রোণীর বাড়িতে নিয়ে চলে এসেছিল । দাদা হয়তো ভাবলেন যে আমরা ওপরতলায় ভাড়া নিয়ে আর উঠতে চাইব না ।
      ব্যাস চলে এলুম মুম্বাই ।
      সমঝেঁ না অজিতবাবু ? অব বুঢঢা-বুঢঢিকা হালত অ্যায়সা হো গয়া হ্যায় কি য্যাদা দুর চলতে হ্যাঁয় তো হাঁফনে লগতে হ্যাঁয় । মেহরারু কা হালত অওর খরাব, হড্ডিকে জোড়-জোড় মেঁ দর্দ, ডাক্টার কা কহনা হ্যায় কি দাওয়াই খাতে রহিয়ে অওর অ্যায়সা হি জিন্দগি চলাতে রহিয়ে ।

     



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন