বুধবার

হাংরি আন্দোলনের কবি প্রদীপ চৌধুরীর কবিতা



নাগরিক উপকথা
প্রদীপ চৌধুরী

শহরের ব্যস্ত স্কোয়ারে এখন ভীড় করেছে
আমাদের প্রিয় লোকজন, কে একজন
দুই হাত উপরে তুলে মুঠো মুঠো আগুন
কার মুখের উপর ছুঁড়ে দিচ্ছে
আর তার ১ ফুট দূরে কামানের গোলার মতো
চোখ বড় করে আরেকজন, সরাসরি
সিনেমা পোস্টারের দিকে তাকিয়ে আছে ।
এসো, আমরা সেখানে গিয়ে দাঁড়াই !

একজন যুবক আমার কাছে হঠাৎ চেয়ে নেয়
দেশলাই ! সিগ্রেট না জ্বেলে
সে হঠাৎ ছুটে যায়, কিছু দূরে
বিশাল বাড়ির সামনে; পকেট থেকে
বোতল বের করে যুবক সারা গায়ে
ছড়িয়ে দেয় পেট্রোল
মাত্র একটি কাঠি প্রস্তুত শ্রেণীর মত,
দপ্‌ করে জ্বলে ওঠে চোখ,
চারদিকে বাঁধভাঙা পাখির সঙ্গীত—
স্বাধীনতা, এসো তার পুড়ে যাওয়া দেখি !

মিথ্যা নিয়মের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত থাবা
কাউকে রেহাই দেয় না, তাই তো বালিকা
কেবল একবার হারিয়ে যাওয়া অপরাধে
আর ফিরে যেতে পারেনি মনিহারি-
মেলা থেকে আলের ধারের ঘরে,
মই লাগিয়ে একদিন আব্রুহীন রাস্তা থেকে তাকে
উঠিয়ে দেয়া হয় গম্বুজনগরে;
সেখান থেকে রোজ সন্ধ্যায় চুঁইয়ে পড়ে
বীর্য ও আতরের গন্ধ— এসো,
নতমুখে কাঁপতে কাঁপতে আমরা
অপেক্ষা করি, কাঁদি ।

এই ধারাবাহিকতা একদিন খোলসের মতো
সকলের শরীর থেকে খসে পড়বে
যেদিন লালাভেজা জড়িয়ে থাকা
শরীর থেকে তুমি ছাড়িয়ে নেবে নিজেকে
আর আমাদের সম্মিলিত উত্তাপ
ছিঁড়ে কুটি কুটি টাইফুন মেঘের মতো
নিজেকে আছড়ে দেবে ১ জন কবির কাছে
তুমিই কবিতা, তুমি কাছে এসো !

পূর্ব গোলার্ধের সবাইর সঙ্গে আমরাও
দেখব একদিন অস্তগামী সূর্য
গলিত সোনার মতো শরীর বিছিয়ে দিয়েছে
শহরের আর গ্রামের
গ্রামের আর শহরের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে
আর তখুনি পিঠভর্তি চুল এলিয়ে
গম্বুজ থেকে রাস্তায় নেমে এসেছে
আমাদের বোন;
তার মুখে গর্বিত ও অর্থপূর্ণ হাসি ।


প্রদীপ চৌধুরী

আর অন্ধকার নেই
ধূসর আকাশ জামা-পাজামার মতো
আমার স্বাভাবিক ব্যবহারের মধ্যে চলে এসেছে ।
দিন রাত্রি আমার কাছে সমান দরকারী, আমি
যখন কাজের পর ঘুমিয়ে পড়ি—সে কি ঘুম !—
আর আবরণহীন শরীরে আবরণহীন স্বপ্নে
জড়িয়ে যাই
এই ভূখণ্ডের নরনারীর প্রতিরোধহীন চিৎকার ও
ছুটোছুটি আমাকে স্পর্শ করে না
অথচ অলিখিত দূরত্বে তখনো কেউ
ভীড়ে একা হেঁটে যাচ্ছে
...একটি যুবতী কিছুতেই বাথরুম থেকে বেরোতে পারছে না
...একজন আততায়ী তার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে
অবাক হতে পারছে না
...দাবী আদায়ের বহু পরেও একজন কর্মচারী
মিছিল থেকে বেরুতে পারছে না
...আমার বান্ধবীটি কিছুতেই বলতে পারছে না
ক্ষুধা আগুনের মতো সর্বত্রগামী—
জামা-পাজামার ও আকাশের মতো সহজ ও অফুরন্ত ।


দূর প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছে জয়িতা
প্রদীপ চৌধুরী

১.
(রীতিমতো) দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত গ্রহে
দাঁড়িয়ে আছি আমরা । পরস্পরের শরীর
দেখা যায় না এখান থেকে । শব্দহীন
ঠোঁটে আটকে থাকে মরুবাতাস ।
বুক-ঠেলে-বেরিয়ে-আসা মানুষের ভাষা
মানুষের বুকে ফেরে না । অভ্যস্ত প্রজনন
প্রক্রিয়ার ছায়া কাঁধের মাংসে হাত রাখে ।
জীবনের দ্বিতীয় ভাগে রহস্যময় স্বপ্ন ।
সাময়িক বিভ্রান্তি । নারীর শরীরে
কল্পনাএ একপাটি দাঁত— একি !...

প্রতিটি মানুষী-সম্পর্কে এই স্বাভাবিক চক্রান্ত ।
শরীরে মিউকাস বাড়ে ।
ইথার ফসফরাস-আলোকিত হয়ে ওঠে ।

আবিষ্ট চলাচল রেস্তোরাঁ থেকে থেকে রাস্তায়,
রাস্তা থেকে রান্নাঘরে, ফটকের কাছেই
কসাইখানায় ।
শিহরণ দম বন্ধ করে আমার, এবং ভয়,
আরো কাছাকাছি হতে সাহায্য করে ।

২.
দূর প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছে জয়িতা; সেখানে আমার
ফেলে আসা জ্যাকেট এবং জিঘাংসা তীব্র আছাড়ে
জাগিয়ে দেবে তাকে । ডিসেম্বরের মাঝরাতে
বিছানায় যাবার আগে সে আর আততায়ীর ভয়ে চমকে উঠবে না,
অথবা গেরিলা-কবির ক্ষতস্থানে হাত রেখে
আচমকা আলাদা হয়ে যাবে না । আমি নিশ্চিত
স্তূপীকৃত বরফ গলাবার জরুরী তাগিদে
জয়িতা আমাকে সম্পূর্ণ নেংটো হতে প্ররোচিত করবে ।


রূপান্তর
প্রদীপ চৌধুরী

কাল রহস্যময় দূরত্বে আমার সামনে বসেছিল নারী
তার ধবধবে শরীর থেকে ঝরে পড়ছিল শিশিরের জল
আমি তার চোখের দিকে তাকাতেই রূপান্তর শুরু হয়
অতিরিক্ত রক্তচাপে তার শরীর রামধনুর মতো বেঁকে যায়
একটু পরে সে সোজা হয়ে বসে
সে স্পৃষ্ঠ সবিতার মতো লাল হতে থাকে
তার বুকের রূপালী গন্ধক বিকিরিত হতে থাকে
সারা ঘরে সৌর বিকিরণ
সে আমার চোখ থেকে চোখ সরায় না ফলে
যাবতীয় সৌর রশ্মিগুলি আমার শরীরে ঢোকে
গ্রহের মতো বিশাল বুক ওঠা নামা করতে থাকে
সেখানে মাংস আছে কিন্তু তা পচে না
আকার আছে সীমারেখা নেই
ফার্নেস থেকে ছিটকে পড়া এক স্ফুলিঙ্গ
তার ঠোঁটে লেগে আছে মৃত্যুভেদী হাসি
আমি বুঝতে পারছি তার ভালোবাসার উত্তাপ
স্ফুটনাঙ্ক ছাড়িয়ে গেছে
সাদা ছাইয়ের মতো আমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছি
আমি কাল নারীর ভালোবাসা জেনেছিলাম ।


গ্রহণ
প্রদীপ চৌধুরী

দলে দলে ছাদের ওপর উঠে আসছে মেয়েরা
অভিশপ্ত ২৪ ঘণ্টার আর মাত্র কয়েক সেকেণ্ড
শেষরাতের সংশয় ভরা আলো-অন্ধকারে
কেউ কারো মুখ দেখতে পাচ্ছে না শরীর
মনে হচ্ছে স্বপ্নে দেখা জীবনের যৌনপরমানু
মেঘের মতো ঘন হচ্ছে পারস্পরিক চুম্বনের টানে
শহরের বাড়িঘরগুলি একসঙ্গে
চলে যাচ্ছে হিমালয় পাহাড়ের কাছে আরো দূর
আকাশের হাতছানি মেয়েরা জেনেছে
ওদের শরীরের রেখা থেকে উপচে পড়া লালা
ও হলুদ কুসুম ভালোবাসার শেষ স্ফুলিঙ্গ স্পর্শে
একটি ওমলেটের মতো সুস্বাদু হয়ে উঠছে

রোমশ বিছানা ছড়ে দলে দলে মেয়েরা উঠে আসছে
অভিশপ্ত তিন ঘণ্টার আর মাত্র কিছুক্ষণ বাকী
অন্ধকারে কক্ষচ্যুত তারাগুলি ঢুকে পড়েছে
ওদের শরীরে শিরার ভেতর আরেকটি
অতিবেগুনী পৃথিবী স্পষ্ট হচ্ছে
পিতা ও সন্তানের মধ্যে আর কোন ব্যবধান নেই
গর্ভাধারের কাছে সৃষ্টির কোন ঋণ নেই
অপেক্ষমাণ এসবের আনন্দসঙ্গীতে
আতরের মতো চেতনায় ঢুকে পড়ছে মেয়েরা
সমষ্টিগত শরীর মেগনোলিয়ার মতো স্ফীত হচ্ছে—

সন্ধিতে সুগন্ধ নিয়ে মেয়েরা ছাদের উপর উঠে আসছে
গ্রহণ শেষ হতে আর মাত্র কয়েক সেকেণ্ড বাকি
কিছু পরে রোমশ বিছানাগুলি শতাব্দীর গিরিখাত হবে
পুরুষের সীসা নির্মিত কোমরগুলি স্তব্ধ বালিয়াড়ি
কিছু পরে বাসি কাপড়গুলিকে মেয়েরা এক এক করে
ছুঁড়ে দেবে গলির খরস্রোতা নদীতে
আকাশের আলো সরাসরি স্পর্শ করবে ওদের লুকানো ক্যাকটাস
মেয়েরা ডানা মেলে কবিদের আত্মায় ভেসে বেড়াবে


আততায়ী ও ডালিয়া
প্রদীপ চৌধুরী

লেখার টেবিলের বিপরীত দিকে আততায়ী
আমার মুখের দিকে মুখ তুলে বসে আছে ।
আমি তার নির্বাচিত লোক ।
ঘরের কোণে লুকানো অন্ধকার; সে আমাকে
কিছুই বলে না । অভিপ্রেত গলায় সে
আমার অসুবিধা, বিরক্তিকর ধারাবিবরণী
জানতে চায় ।
সামান্য অস্বস্তিতে কেবল একবার শরীর নড়ে—
তা কি অসুবিধা ?
না । আমরা যে যার সিগারেট
হাত থেকে ঠোঁটে তুলে নিই । ১ সেকেন্ড
চোখে চোখ থামে ।
আমার কাছাকাছি বিনিময়ের অপেক্ষায় সতীর্থ ।

‘বিদায়, ছোট্ট ডালিয়া ।’ আমি ধারাবাহিকতা
খুঁজে পেতে চাই । জঙ্ঘার সামান্য দূরে
ঝাঁক ঝাঁক পাখি—
কোন ধারাবাহিকতা নেই । জয়িতা,
আমার আঘাতে পুনর্মিলনের প্রতিশ্রুতি নেই ।
মাথায় যন্ত্রণা হয়, দুজনেই বাইরে আসি ।
মাথার উপরে আকাশ তেমনি রহস্যময় ।
তেমনি বিছানা ছেড়ে যেতে হয় একা বাথরুমে ।
বুকে ঘৃণা ভালবাসার চেয়ে কিছু বেশি ক্রিয়াশীল ।
দারিদ্র্য জায়গা বদল না করলে একদিন
চুম্বনের আনন্দ ও অপরাধ
কলগেট ফেনার সঙ্গে চৌমাথার টেপে... তাই হয় ।
এরপর দুর্গন্ধযুক্ত মুখ আর বিজ্ঞাপিত
দাঁতগুলি নিয়ে আমরা অপেক্ষা করব
কখন ঝলসানো মাংসের চাঁদ, অন্য
গ্রহ থেকে ছিটকে আসা এক টুকরো
প্রোটিন-সমৃদ্ধ ঊরু একেবারে থাবার
সামনে ধুপ করে পড়ে থাকবে ।

আমরা মৃতদেহে অভ্যস্ত তাই চোলাইমদের
মতো জীবনকে উত্তেজক পুঁজে, দেশীমালে
পরিণত করি । আর ভালবাসা জাগার আগে
যারা রাইফেল ও যৌনাঙ্গ হাতে তুলে নেয়,
একদিন মাঝরাতে
আততায়ীর অসম্পূর্ণতা নিয়ে তারাই দরজায়
করাঘাত করে । বলে, শুভরাত্রি, আমরা এসে গেছি !
ঐ তো উপবিষ্ট আততায়ী— নুয়ে পড়া
চেনা পথচারী ।

‘বিদায় ছোট্ট ডালিয়া’— যথাযথ বিনিময়ের
অভাবে আমার অসমাপ্ত স্বপ্নগুলির জন্যে
সামনেই অপেক্ষা করছে আততায়ী । আমার
উন্মোচন না হওয়া অব্দি একই ভঙ্গীতে
মুখোমুখি বসে থাকবে সারারাত । পরবর্তী
ভোরে আমাকে একই অবস্থায় ফেলে রেখে
রাসায়নিক পোষাকে বেরিয়ে যাবে । জয়িতা,
বলাৎকার দীর্ঘজীবী হোক !

আকম্পিত রাত্রিতে আমি সারাক্ষণ দেশলাই
আলোতে যার চোখে চোখ রেখে ১ সেকেণ্ড
থেমে গিয়েছিলাম, এরপর প্রতি রাতেই সে
আমার টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ায়; আমাকে দেখে ।
একদিন একটি বালকও দিগন্তরেখার আলো দেখেছিল
সেই বালক একদিন আলের পথ ধরে
ধানখেতের রহস্য ছাড়িয়ে আরো দূরে
মৃতদেহ ও আগুনের
খোঁজে বেরিয়ে পড়ে । আর মাঝরাতে আমার
ঘরে ফিরে আসে আততায়ী । একা ।


স্বামী-স্ত্রী এবং অন্যান্য-১
প্রদীপ চৌধুরী

তোমার শরীরে যে অতুলনীয় গর্ত
আমি দেখেছি ( এক জায়গায় অন্তত )
এবং আমার সন্ত্রাসবাদী বিবেক
( তুমি তা কি সম্পূর্ণ দেখেছো ? ) — এরপর
মানুষ হিসেবে আমরা আর কোন্‌ নতুন সর্বনাশে ভয় পাবো ?
ঐ গর্ত আছে জেনেও
সারাজীবন তোমার দিকে তাকাবো
স্বাভাবিকভাবে; তুমিও
জলের ওপর ঘুরপাক খেয়ে
ফিরে আসবে আমার অবয়বহীন
ক্ষুধার্ত শরীরের কাছে;
মানুষের কোষের অধঃপতনের স্বাদ
আমরা জেনেছি—
সমগ্র শরীরে এই অধঃপতন
বারবার না ঘটিয়ে আমাদের উপায় নেই
অবশিষ্ট প্রজন্মও এই মরণশীলতার মধ্যে চলে যাবে ।


স্বামী-স্ত্রী এবং অন্যান্য-২
প্রদীপ চৌধুরী

এই অভিপ্রেত নির্বাসন কেন মেনে নেয়া হয়েছে কে জানে ?
শীততাপ অনিয়ন্ত্রিত কারাগার—
কেন দাবার চাল ফেলে রেখে পরস্পর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি
জীবন্ত পাথরের মত অনিবার্য !
মনে পড়ে— ১নং ভ্রূণ হত্যার পর ভয়ে কয়েক রাত ঘুমুতে পারিনি
২য় বারও সেই ভয় কাটানো যায়নি
৩য় বারের আগেই আমরা জেনে নিয়েছিলাম “উঠিয়ে-নেয়া-পদ্ধতি”

সারা জীবনই কি এইভাবে চূড়ান্ত
সময়ে উঠিয়ে নিতে হবে ?
হয়ত তা-ই; এবং যথা সময়ে আমাদের
ছেলেকেও এই পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে হবে ।


স্ত্রীলোক
প্রদীপ চৌধুরী

নিওন ভর্তি ঘরে লুটোপুটি খাচ্ছে রাত্রি । লেখার
টেবিলে স্তূপীকৃত সরঞ্জাম । সামনে
পেছনে শেল্‌ফ গাদাগাদি বই, রেকর্ডার
ও ঢেকে রাখা জল ।
আমার মাথা স্থির ও পরনে পরিষ্কার লিনেন ।

আমি নিজেকে যুক্ত করতে পারছি না ।
দরকারী ও অদরকারী সন কাজের কথা—
সেই রাত্রিতে আমার ‘জাগরণ’ তাৎপর্য
হারিয়ে ফেলে । দেয়ালের একটু উপরে,
যেখানে আমার ছায়া, বিস্তৃত হয়ে পড়েছের
খোলাখুলি পাহাড়
আর দিগন্তরেখার কাছে আমি দাঁড়িয়ে আছি, একা ।

মাঝরাতে প্রিয় স্ত্রীলোক আমার ঘরে ঢুকে পড়ে ।
তার চোখ অপলক । দেখি তার ফর্সা শরীরে
অন্ধকার ভর করেছে— বছরের জমাট বিস্মৃতি
তাকে দেয়ালের ওপাশে নিয়ে যায় ।

সে আমাকে দেখতে পাচ্ছে । আমি
তার নিশি-পাওয়া গলা শুনতে পাচ্ছি না
হায়েনার মতো কানের দুল জ্বলজ্বল করছে । কার ?
৫ গজ দূরত্ব পেরিয়ে সে আমার কাছে আসতে পারছে না ।
আমার সহানুভূতি । বিশ্বাসঘাতকতা তাকে
প্ররোচিত করছে । মাসিক জলোচ্ছ্বাসের মতো
রাত্রির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে তার শরীরের অন্ধকার ।
একদিন মাঝরাতে আমার প্রিয় স্ত্রীলোক
আমাকে ছেড়ে এলডোরাডো দেশে পাড়ি দেয়

আরো বহুরাত আমি ঐ দেয়াল সরাতে পারবো না ।
আর আমার মনে পড়বে ঐ অন্ধকার শরীরে
একে একে ফুটে ওঠা নক্ষত্রগুলিকে—
তারা কিভাবে ফুটে উঠেছিল
আর কিভাবে ঝরে পড়েছিল অভিকর্ষের টানে ।


অধিগ্রহণ
প্রদীপ চৌধুরী

সুরভিত ঊরুতে হাত রেখে দেখি তেমনই
প্রদাহ আছে, কিন্তু সেই পাখিগুলি
ভুল ব্যবহারের ফলে উড়ে গেছে, চোখে পড়ে,
কালো কালো ক্ষত; তাদের ঝলসানো
পালকগুলি সারামুখে লেগে আছে ।
অভ্যস্ত আঙুল জানে এ কার অধিগ্রহণ ।

আমার অপভ্রমণের শেষ পাতা কটি
নিজেরাই উড়ে গেছে; আবছায়া রাস্তায়
অভিযাত্রী, সতীর্থ ও রোমশ উষ্ণতা—
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত; নির্দিষ্ট নিয়মে
চণ্ডাল গঙ্গার কাছে এসে যায়, বলে ‘যাবে নাকি !’

গলুইয়ের ভেতর বসে আমরা যে যার
ঊরুতে হাত রাখি, আমাদের কামনার
আগুনে পোড়ে পাখির শরীর—
গোল ইস্পাতের মতো চকচকে থালায়
ঝলসানো টুকরোগুলি জড়ো করি—,

একটি রহস্যময় জেটি শুয়ে সব কিছু দেখে ।

যুদ্ধ
প্রদীপ চৌধুরী

একটি মৃত গ্রহ থেকে যুদ্ধের সংকেত
ভেসে আসছে এখানে
এখানে এক ডিভিসন সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চল
নৈঃশব্দ্য বেতার থেকে শোনা যায় নারীর ফিস্‌ফিস্‌

ওদের কোমর থেকে খসে পড়েছে লাইফ্-বেল্ট
এক শতাব্দীর ভুল যুদ্ধের শেষে ওদের
রাইফেলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে
বুনো পাখির ঝাঁক

ওদের দণ্ডাজ্ঞাই ওদের স্বাধীনতা
ওদের গ্রেনেডগুলি বিস্ফোরিত হয়েছে—
এখন ইউকেলিপটাসের গন্ধে পুনরায়
জেগে ওঠে মহামারীগ্রস্ত এলাকা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন