তরুণ সান্যাল: হাংরি মকদ্দমায় সাক্ষ্য, ষাটের দশক
পেশকার: নাম বলুন ।তরুণ : তরুণ কুমার সান্যাল ।
পেশকার: বলুন, যা বলব সত্য বলব, সত্য বই মিথ্যা বলব না, কিছু গোপন করব না ।
তরুণ: যা বলব সত্য বলব, সত্য বই মিথ্যা বলব না, কিছু গোপন করব না ।
সত্যেন বন্দ্যোপাধ্যায় (আসামী পক্ষের উকিল): তরুণবাবু, আপনি তো অধ্যাপনা করেন?
তরুণ: আমি স্কটিশচার্চ কলেজে ইকনমিক্সের অধ্যাপক । এছাড়া আমি সুরেন্দ্রনাথ কলেজে রাত্রি বিভাগে পার্টটাইম লেকচারার হিসাবে ইকনমিক্স ও সট্যাটিসটিক্স পড়াই । আমার লেখা অনেক টেক্সটবুক আছে । আমি কবিতা ও প্রবন্ধ লিখি এবং সেগুলি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।
সত্যেন: আপনি এই কবিতাটা পড়ুন । এটা মেটেরিয়াল একজিবিট ওয়ান, ইয়োর অনার ।
তরুণ: জোরে-জোরে পড়ব কি?
বিচারক অমল মিত্র: না, মনে-মনে পড়ুন । কবিতাটা কি আগে পড়েছেন?
তরুণ: সমস্তটা না পড়লে ঠিক বলতে পারব না ।
সত্যেন: পড়লেন?
তরুণ: হ্যাঁ, মনে পড়েছে , আগে পড়েছিলাম । এই ইস্যুটা আমি প্রথম দেখি আমৃত কার্যালয়ে ।
সত্যেন: পড়ে শারীরিক ও মানসিক কোনও বৈলক্ষণ ঘটছে কি?
তরুণ: না । আমি তো আপনাদের সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছি ।
সত্যেন: পড়বার পর কোনও সাইকো-সোম্যাটিক পরিবর্তন অনুভব করছেন কি?
তরুণ: সামান্যতম নয়।
সত্যেন: কবিতাটি কি আপনার অশ্লীল মনে হল?
তরুণ: অশ্লীল বলতে আপনি কি মনে করেন?
সত্যেন: বাংলা ভাষায় অশ্লীল বলে একটা শব্দ আছে? এখন সেই শব্দটার যে অর্থ আপনি বোঝেন । আপনার সেই মতামত অনুযায়ী কবিতাটি অশ্লীল কি না ?
তরুণ: আমার মতে কবিতাটিকে কোনো মতেই অশ্লীল বলা যেতে পারে না ।
সত্যেন: দ্যাটস অল ইয়োর অনার ।
সরকারি উকিল: আচ্ছা মিস্টার সান্যাল, এই যে আপনি জিগ্যেস করছিলেন অশ্লীলতা বলতে কি বোঝায়, তা এক্ষেত্রে অশ্লীলতা বলতে আপনি নিজে কি মনে করেন?
তরুণ: আমার মতে অশ্লীলতা দুই ধরণের । প্রথম, যা ব্যক্তিক । এবং দ্বিতীয়, যা সমষ্টিগত বা সামাজিক । অশ্লীলতা ব্যক্তিবিশেষকে প্রভাবান্বিত করতে পারে, আবার এমন অশ্লীলতা আছে যা সমাজের ক্ষতি করতে পারে । যা কিছু চৈতন্যের অপনয়ন ঘটায়, তাকেই আমি মূলত অশ্লীল বলে মনে করব । যদি ব্যক্তি চৈতন্যের অপনয়ন ঘটে…..
বিচারক অমল মিত্র: ওয়েল প্রফেসর ইউ বেটার স্পিক ইন ইংলিশ । দিস বেঙ্গলি সিমস টু বি টু হার্ড ফর দি কোর্ট ।
তরুণ: থ্যাংক ইউ মি লর্দ । আমি আরও সহজ বাংলায় বলার চেষ্টা করছি ।
বিচারক অমল মিত্র: ইংরেজিতেই বলুন, তাতে আমাদের সুবিধে হবে ।
তরুণ: টু মি অবসিন মিনস সামথিং হুইচ কজেজ মেন্টাল ডিপ্র্যাভিটি টু অ্যান ইনডিভিজুয়াল । হোয়েন সামথিং বিকামস দি কজ অব ডিপ্রেভিং দি সোসাইটি আই উড কনসিডার দ্যাট টু বি অবসিন ।
বিচারক অমল মিত্র: হোয়াট ডু ইউ মিন বাই সোসাইটি ইনদিস প্রিটেকস্ট ? ডু ইউ মিন এ গ্রুপ অব পার্সনস ?
তরুণ: ইয়েস একজ্যাক্টলি মি লর্ড।
বিচারক অমল মিত্র: ইফ ইউ ফাইন্ড এনি অব ইয়োর পিউপিলস ইন দি কলেজ রিডিং এ পোয়েম অব দিস সর্ট হোয়াট উড ইউ ডু?
তরুণ: আই ওন্ট মাইন্ড ।
বিচারক অমল মিত্র: হোয়াট উড বি দি এফেক্ট অব দিস পোয়েম অন এ ম্যান ওন দি স্ট্রিট?
তরুণ: আই ডোন্ট ফাইন্ড এনি ডিফারেন্স ।
বিচারক অমল মিত্র: ডু ইউ মিন টু সে দিস পোয়েম উড হ্যাভ দি সেম এফেক্ট অন এ ম্যান অন দি স্ট্রিট এন্ড এ স্টুডেন্ট অব থ্রি ইয়ার্স ডিগ্রি কোর্স?
তরুণ: ইয়েস আই থিংক সো । হি উড হ্যাভ দি প্লেজার অব রিডিং এ পিস অব আর্ট ।
সরকারী উকিল: আপনি নিজেও কি এরকম কবিতা লেখেন?
তরুণ: নিশ্চই না । এক্সকিউজ মি, এই পয়েন্টটা আমি একটু পরিষ্কারভাবে বলতে চাই ।
সরকারী উকিল: ডাজন্ট ম্যাটার । ওতেই হবে। আপনি কি এরকম কবিতা আরও পড়েছেন?
তরুণ: আমেরিকায় একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন, যিনি এইভাবে কবিতা লিখতেন । তাঁর নাম হুইটম্যান ।
সরকারী উকিল: আমরা বিদেশের কথা জানতে চাই না । আপনি হাংরি জেনারেশানে কখনও কনট্রিবিউট করেছেন?
তরুণ: না ।
সরকারী উকিল: তাহলে সাবস্ক্রাইব করেছেন?
তরুণ: কখনই না ।
সরকারী উকিল: দ্যাটস অল ।
(হাওয়া ৪৯ পত্রিকার বৈশাখ ২০০১ সংখ্যা থেকে পুনঃপ্রকাশিত )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন