রবিবার

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : মলয় রায়চৌধুরীর রাজনৈতিক কবিতা

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : মলয় রায়চৌধুরীর রাজনৈতিক কবিতা মলয় দা, মলয় রায়চৌধুরী এক অদ্ভূত মানুষ। ৮২ বয়সেও ২৮ বছরের তরুণ কবিদের মতো তারুণ্য লালন করেন। আমি তাঁর এক সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তার জবাবে আরো তা টের পেয়েছি। তাঁর সাথে আমার দেখা হয়। বাংলাদেশে কবিদের দৌঁড় কলিকাতা পর্যন্ত। আমার মতো সাধারণ কবির পক্ষে কি স্বর্গীয় দিল্লি যাওয়া তো কল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমার কবিতায় মলয় দা ঢুকে গেছেন, আবার মলয় দা আমাকে নিয়েও কবিতা লিখেছেন, ফেইসবুক লাইভে আমার কবিতা পাঠ করেছেন। কি সব অদ্ভূত কাণ্ডই না করেন মলয় দা। গুণ দা'র মতো তাঁর পাগলামির শেষ নাই। শাশুড়িকে নিয়ে প্রেমের কবিতা লিখেন। প্রেমিকাকে বলনে- ‘মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো’। আমি বলেছিলাম, মাথা নাকি নুনু? তিনি যে জবাব দিয়েছিলেন, তাতেও টাশকি খেয়েছি। ‘১৯৬০-এর দশকের হাংরি আন্দোলন হাংরিয়ালিজম— তথা বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার জনক ১৯৬০-এর দশক থেকেই ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসে তিনি বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। গতানুগতিক চিন্তাধারা সচেতনভাবে বর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে উত্তর আধুনিকতাবাদ চর্চা এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতার জন্যে রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় গ্রেফতার ও কারাবরণ করেন। সম্প্রতি তাঁর একটি কবিতা পড়ে থ মেরে যাই। সাম্প্রদায়িকতা, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা এবং দেশ বিভাগ নিয়ে অনেক কবিতা লেখা হয়েছে। কিন্তু মলয় রায়চৌধুরীর এই কবিতার অসাধারণ মর্মান্তিক এবং ভায়াবহ চিত্রকল্প চমকে দেয়! ফাঁসিতে ঝুলন্ত লাশ ঝুলতে ঝুলতে এক বার পাকিস্তান আবার হিন্দুস্থানের দিকে ঝুলছে!! কবিতার শিরোনাম “কে একজন ঝুলছে !” --------------------------------------- মেজদা বলল, “চল চল দেখে আসি, টিনের কারখানায় ঝুলে-ঝুলে পাক খাচ্ছে কেউ”। দৌড়োলুম, ম্যাজিক দেখবো ভেবে--- ক্যানেস্তারা কেটে টিনগুলো কাঠের হাতুড়ি পিটে সোজা করে। অতো উঁচুতে কেমন করে চড়েছিল ধুতি-শার্ট পরা রোগাটে লোকটা? চশমা রয়েছে চোখে! ভালো করে দেখে বললুম, “মেজদা ইনি তো আমাদের ক্লাসের অরবিন্দর বাবা ; ওরা দেশভাগে পালিয়ে এসেছিল ফরিদপুর থেকে, সেখানে ইশকুলে পড়াতেন, কিন্তু সার্টিফিকেট-টিকেট ফেলে জ্বলন্ত ঘর-দালান ছেড়ে চলে এসেছেন বলে কোথাও পাননি কাজ, শেষে এই টিনের শব্দ প্রতিদিন বলেছে ওনাকে, কী লজ্জা, কী লজ্জা, ছিছি…” কিন্তু অতোটা ওপরে উঠলেন কেমন করে! টিনবাঁধার দড়ি খুলে গলায় ফাঁস বেঁধে ঝুলছেন এখন, পাকও খাচ্ছেন, একবার বাঁদিকে হি...ন..দু...স...তা...ন...আরেকবার ডানদিকে...পা...কি...স...তা...ন হি…...ন…..দু…..স…..তা…..ন…..পা…..কি…..স…..তা…..ন ……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………… সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল Saifullah Mahmud Dulal কবি, সাংবাদিক, নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আলহাজ্ব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সারা শহীদুল্লাহ (বি.এ.) সংসারে ৩০ মে ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের জন্মভিটা শেরপুর জেলায়। তার স্ত্রী অপি মাহমুদ; দুই কন্যা অনাদি নিমগ্ন ও অর্জিতা মাধুর্যকে নিয়ে সপরিবারে কানাডায় বসবাস করছেন। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ছাত্রাবস্থায় দৈনিক ইত্তেফাকের মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতার জীবন শুরু। পরে দেশের বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৮০ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান। ১৯৯৬-এ তদানন্তিন সরকার তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দিলে প্রবাসী জীবন বেছে নেন। প্রবাসী বাঙালিদের জন্য নিউজ এজেন্সি ‘স্বরব্যঞ্জন’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রবাস থেকে প্রকাশিত (যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক প্রবাসী, সাপ্তাহিক আমার পক্ষে, মাসিক পরিচয়, সাহিত্য পত্রিকা আকার-ইকার, মাসিক অভিমত; কানাডার থেকে সাপ্তাহিক প্রবাস বাংলা, সাপ্তাহিক ঢাকা পোস্ট, পাক্ষিক দেশ দিগন্ত, মাসিক বাংলাদেশ, সাহিত্য পত্রিকা বাংলা জর্নাল; জাপানের মাসিক মানচিত্র, মাসিক আড্ডা টোকিও, বিবেক বার্তা; অস্ট্রেলিয়ার সাপ্তাহিক স্বদেশ বার্তা প্রভৃতি) পত্রিকার সাথে যুক্ত। টরেন্টো থেকে প্রকাশিত অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক বাংলা রিপোর্টারে প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের কানাডার বিশেষ প্রতিনিধি। টরন্টো থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা মেইল এবং সিবিএবন২৪'এর উপদেষ্ঠা সম্পাদক। এছাড়াও কানাডার একটি প্রডাকশন হাউজে কর্মরত! তার দু'টি প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে। যথাক্রমে- স্বরব্যঞ্জন এবং পাঠশালা। তিনি অনুস্বর, ছোটকাগজ, প্রচ্ছদ, সূচিপত্র এবং উপদেষ্টা সম্পাদক: বৈঠা। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন, একুশে টিভি, চ্যানেল আইসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। বিটিভির শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘দৃষ্টি ও সৃষ্টি’র উপস্থাপক। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত নাটকসমূহ সাযযাদ আমিনের কথা (প্রচারঃ ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯); জাকির, সাদিকের জীবন ও সাহিত্য (১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯); বৃক্ষ বন্দনা (১২ ডিসেম্বর ১৯৯৯); মুহম্মদ আলির চিঠি ( ১২ এপ্রিল ২০০০); ভালোবাসি ভালোবাসি (ফেব্রিয়ারি ২০০১); ওডারল্যান্ড (২ জুন ২০০১); বনসাই (ফেব্রুয়ারি ২০০৭); বৈশাখী (এপ্রিল ২০০৯); জাদুকর (১৭ আগষ্ট ২০১৩); শাখা ও শেকড়। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদান রাখার জন্য তিনি দেশ-বিদেশ থেকে বেশ কিছু পুরষ্কার পেয়েছেন। তিনি সূচিপত্র সাহিত্যপত্রের জন্য তিনবার মুক্তধারা একুশে পুরস্কার ১৯৮৭, ১৯৮৮ এবং ১৯৯২; শিল্প সাহিত্যে শেখ মুজিব গ্রন্থের জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পুরস্কার ১৯৯৭, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পদক ১৯৯৬; জাপান থেকে বিবেক সাহিত্য পুরষ্কার ২০০৫, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাব্যশ্রী খেতাব ১৯৭৭ এবং মাইকেল মধুসূদন পদক ২০০৫ সালে। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক ২০১৩ সালে এবং আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৮। আন্তর্জাতিক রূপসী বাংলা পুরস্কার ২০১৮, পূর্ব মেদনীপুর, পশ্চিম বঙ্গ। সাহিত্য দিগন্ত সন্মাণনা ২০১৯, ঢাকা। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এর প্রকাশিত বইয়ে সংখ্যা প্রায় ৬০টি। বই কবিতা : তৃষ্ণার্ত জলপরী, ফেব্রুয়ারি ১৯৮২, রুণা প্রকাশনী। তবু কেউ কারো নই (নাসিমা সুলতানের সাথে যৌথ), এপ্রিল ১৯৮৫, ছোটকাগজ। অপেক্ষায় আছি প্রতীক্ষায় থেকো, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ এবং ১৯৮৯, অনিন্দ্য। শহরের শেষ বাড়ি, জানুয়ারি ১৯৯১, ব্রাদার্স লাইব্রেরি। ঘাতকেরহাতে সংবিধান, ফেব্রুয়ারি ১৯৯০, মুক্তধারা। একি কাণ্ড পাতা নেই, ১৯৯৫, বিশাখা প্রকাশনী। দ্রবীভূত গদ্যপদ্য, ১৯৯৯ এবং ২০০১, স্বরব্যঞ্জন। ঐক্যের বিপক্ষে একা, ফেবুয়ারি ২০০০, ম্যাগনাম ওপাস। মুক্তিযুদ্ধের পঙক্তিমালা, ২০০১, কলম্বিয়া প্রকাশনী। এলোমেলো মেঘেরমন, ফেব্রুয়ারি ২০০০, অনন্যা প্রকাশনী। নির্জনে কেনো এতো কোলাহল, ২০০০, অনন্যা প্রকাশনী। পরের জায়গা পরের জমি, ২০০৪, উৎস প্রকাশন। নিদ্রার ভেতর জেগে থাকা, ২০০৪, সাংস্কৃতিক খবর, কলকাতা। ঘৃণিত গৌরব, ২০০৫, জাগৃতি প্রকাশন। কবিতাসমগ্র,ফেব্রুয়ারি ২০০৬, অনন্যা প্রকাশন। নীড়ে নিরুদ্দেশে, ২০০৮, স্বরব্যঞ্জন। সাতে নেই, পাঁচে আছি, ফেব্রুয়ারি ২০১২। প্রেম বিরহের কবিতা, (শহীদ কাদরী, নির্মলেন্দু গুণ, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সাথে এক বক্সে), ১৯৯৬ শিখা প্রকাশনী। রবি ঠাকুরের প্রাইভেসি, ২০১৫, নওরোজকিতাবিস্তান। পাখিদের গ্রামে আজ একটি গাছে সাথে সাক্ষাৎ করার কথা, জানুয়ারি ২০১৭, কবিতাপাক্ষিক, কলকাতা। ফেরোমনের গন্দে নেশাগ্রস্থ প্রজাপতি, জানিয়ারি ২০১৭, আবিষ্কার প্রকাশনী, কলকাতা। তোমার বাড়ি কত দূর, অন্যপ্রকাশ, ২০১৭। প্রেমের আগে বিরহে পড়েছি, পাঞ্জেরি, ২০১৮। সঙ্গমের ভঙ্গিগুলো, বেহুলা বাংলা, ২০১৯। তিন মিনিটের কবিতা, ২০২০, স্বরব্যঞ্জন। আমার সঙ্গে শেখ মুজিবের দেখা হবে আজ, ২০২০ অন্যপ্রকাশ। অন্যান্য বই : সাহিত্যের শুভ্র কাফনে শেখ মুজিব, ১৯৯৩ অনিন্দ প্রকাশ। শিল্প সাহিত্যে শেখ মুজিব, ১৯৯৬ এবং ১৯৯৬, শিখা প্রকাশনী। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ : মুজিব হত্যা মামলা, শিখা প্রকাশনী ২০০০, শিখা প্রকাশনী এবং আহমদ পাবলিশিং হাউস ২০২০। বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন, ২০০২, পাঠশালা। কানাডায় যাবেন কেনো যাবেন, ফেব্রুয়ারি,২০১২, প্রকাশনী। কানাডার কাশিমপুরে খুনি নূর চৌধুরী, ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, চন্দ্রদ্বীপ প্রকাশনী এবং ২০১৮ অনিন্দ্য প্রকাশন। কানাডার হাডির খরব নাড়ীর খবর, ফেব্রিয়ারি ২০১৭, সময় প্রকাশন। হারিয়ে যেতে নেই মানা (ভ্রমণকাহিনি) অনন্যা প্রকাশনী, ২০১৭। নাটকের বই : আজ আমাদের ছুটি, মার্চ ১৯৯৭, ২০১৭ শিশু একাডেমী। ওডারল্যান্ড, ২০০২, কলম্বিয়া প্রকাশনী। জাদুকরের উদ্দেশ্যে যাত্রা, ফেব্রুয়ারি ২০০১, আদিত্য অনিক প্রকাশনী। গল্পের বই : তুমি, ১৯৮৭, বিউটি বুক হাউজ। যাদুকর, ২০১৬, কথা প্রকাশ। কয়ড়া গ্রামে বুনো হাতি, ফেব্রিয়ারি ২০১৭, পাঠশালা। ভূতের পাসওয়ার্ড, ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বাংলাপ্রকাশ। রেসকোর্সের অশ্বারোহী ২০২০, অনন্যা। উপন্যাস : বীর বিচ্ছু, ফেব্রুয়ারি ২০১৪, বংলাপ্রকাশ। যুদ্ধশিশুর জীবনযুদ্ধ, ২০১৭, বাংলাপ্রকাশ। গাছখুন, ২০১৯, পাঞ্জেরি পাবলিকেশন। স্মৃতিকথা : কাছের মানুষ দূরের মানুষ, ২০১৬, বাংলাপ্রকাশ। দূরের মানুষ কাছের মানুষ, ২০১৯, চৈতণ্য। ছড়ার বই : একাত্তরের দত্যি, ১৯৮৯, মুক্তধারা। কবি ঠাকুর রবি ঠাকুর, পাঠশালা ২০০৫। টাকডুমা ডুম ডুম, ২০০৫। পড়ার বই ছড়ার বই, ২০১০, ভাষাচিত্র। এক যে ছিলো শেখ মুজিব, ২০২০ পাঠাশালা। সম্পাদনা বই : মুক্তিযুদ্ধ : নির্বাচিত কবিতা, ১৯৮৭ নওরোজ কিতাবিস্থান। মুক্তিযুদ্ধ : নির্বাচিত ছড়া, ১৯৯০ পল্লব পাবলিশার্স। Poems of Liberation World ॥ Tren by Kabir Choowdhury, ২০০২, অন্যপ্রকাশ। বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা, স্বরব্যঞ্জন ২০০৫। মুক্তিযুদ্ধ :নির্বাচিত কবিতা (বাংলাদেশ, ভারত এবং ভিবিন্ন ভাষায়), জাগৃতি ২০০৫। কথাশিল্পীদের কবিতা, স্বরব্যঞ্জন ২০০৫। বঙ্গবন্ধুঃ ১০০ কবির ১০০ কবিরা, স্বরব্যঞ্জন ২০১৯। বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ১০০ ছড়া, পাঠশালা ২০২০। বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত নির্বাচিত গল্প, স্বরব্যঞ্জন ২০২০। অন্যান্য বই : কবিতা সমগ্র ১ অনন্যা ২০০৯। বঙ্গবন্ধু সমগ্রঃ, স্বরব্যঞ্জন, ২০২০। শিশু কিশোর সমগ্র, ২০২০।

অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : মলয় রায়চৌধুরীর উপন্যাস 'অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা'

অনেকান্ত কথকতা মলয় রায়চৌধুরীর ৪৬ পাতার নভেলা- অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা । উপন্যাসের চারটি কথক। লেখক মলয় রায়চৌধুরী, বারানসীর নকশালপন্থী পেইন্টার্স দলের এক সদস্য চিত্রকর নির্মল এর পিতা, সরকারী চাকুরে ও অতলান্ত প্রেম-বিলাসী শিশির ও বেনারসে মন্দির-ব্যবসা-সফল সাহসিনী কেকা। শুরুতে লেখক কথকতাটা নিজেই করেন, কাহিনীর চরিত্রগুলি ও সূত্র ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। এরপর বাকী তিন কথক তিনটি ভিন্ন সময়ে এই আখ্যান লিখে যাবেন। তিনজনই ডায়েরী লেখক। বলা ভালো একটিই ডায়েরী । মানে একই খাতা। আর তার কাগজে তিনটি ভিন্ন সময়ে তিন কথক আঁচড় কেটে রাখেন। তাই নিয়েই এগোয় আখ্যান। ডায়েরীটির প্রাথমিক এবং আসল মালিকানা বারানসীর নকশালপন্থী পেইন্টার্স দলের সদস্য নির্মল এর পিতার। এঁর কথকতাটি মূলত প্রাবন্ধিক ধাঁচার দিনলিপি । রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ইতিহাসের র‍্যান্ডম নোট্স্‌। ডায়েরীটি হাতবদল হয় কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্র শিশির মারফৎ। মানে শিশির ডায়েরীটি হাতসাফাই করে। নির্মলের বাবার নোট্স্‌ের খাঁজে খাঁজে ফাঁকা পাতা । সেই ফাঁকা স্পেইস- আর তা ভরে ওঠে শিশিরের বারানসী বসবাসের প্রায়-প্রাত্যহিক দিনলিপিতে । যা মুখ্যত দুই নারী- ভাইকিং বংশজাতা আমেরিকান তরুণী ম্যাডেলিন ও কেকা নাম্নী অন্ত্য-ত্রিশের বাঙ্গালিনীর সাথে তার শৃঙ্গার ও সঙ্গমের এরোটিক কলমদিহি। এই ডায়েরী-পাতায় মলয়ের কথকরা পাঠকের সাথে কথা বলে চলেন। মনোলগের ঢং তাতে। সেই কথা তাদের নিজেদের সাথেও। নির্মলের বাবার চরিত্রটি গড়ে তোলেন না লেখক। তিনি নেহাতই ইতিহাসের কথক। এর বেশী তার সম্পর্কে কোন তথ্য লেখক আমাদের দেননা। যাত্রা-ফর্মের বিবেকের মত এই কথকের সংযোজনে এক ব্রেশটীয় বিচ্ছিন্নতা তাই আমদানী সম্ভব হয়েছে। শৃঙ্গার, রতিক্রিয়ায় ভরপুর পাল্প-ফিকশনের ধাঁচায় যে ‘কজালিটির’ খেলা চলতে থাকতে পারত, তাকে প্রথমেই ভাঙ্গার কাজটি করছে এই বিচ্ছিন্নতার উপপাদ্য। যাকে পরে আরও ভাঙছে উপন্যাসটির উদ্দেশ্যমূলক ‘এরোটিকা’ । যা নির্মাণের উদ্দেশ্য- ‘মধ্যবিত্তের নীতিমুলে’ শৈল্পিক লাথ। কামসূত্রের দেশে, পোস্ট-কলোনিয়াল গো-মল আর গোমূতের ছানবিন, আর কলোনি-পুর্ব মোজা পরা ভিক্টোরীয় সমাজ-পুলিশীর লিগাসিকে মলয় প্রশ্ন করেছেন ষাটের দশক থেকেই।হাংরিদের এটি মুখ্য এজেন্ডাও বটে । কিন্তু বাংলাবাজারে সেক্সকে ট্যাবু-মুক্ত করতে লেখালিখিতে সেক্সিস্টও আখরও কেটে রেখেছেন। দুর্দান্ত প্রাবন্ধিক মলয়ের গদ্য-পদ্যের এটিই সর্বাপেক্ষা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়। এই উপন্যাসেও তা চোখে পড়েছে, তবে তা ছাপিয়ে ওঠার মত শান্‌-দার অধুনান্তিক মেহ্‌ফিলটিও তিনি রচনা করে দিয়েছেন। এবং উপন্যাসের ধাঁচাটি ক্রমে বিশ্ব-স্থানিক, বহু-কথক, এক্সটিক লোকেল, এরোটিকা ও তার বিনির্মান এসবের আন্তর্জাল থেকে বহুস্বরিক হয়ে উঠল। বাংলা সাহিত্যে এইভাবে বহুস্বরিক হয়ে ওঠার বা তার অবসর নির্মান করার ক্র্যাফটটি তেমন জনপ্রিয় নয়। “আমার কোন স্থির কেন্দ্র ছিলনা।” স্থির কেন্দ্র, ঘুর্ননের আপাত স্থির বিন্দু- যাকে জন অ্যাশবেরী ‘আ হিম টু পসিবিলিটি’ বলে থাকেন, তা এই নভেলাতে ঘেপ্‌টে আছে জটিল এক কেমোফ্ল্যাজে। তিনটি ভিন্ন ডেমোগ্রাফির তিন কথককে উপস্থিত করে যে আখ্যানের বুনন তার স্থির কেন্দ্র দুটিঃ এক- পোস্ট কোলোনিয়াল ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষিত। ভারতবর্ষ, তরুণতর মেধাবী বাঙ্গালীর রাজনৈতিক সচেতনতা আর তার উত্তাল অভিমুখ; দুইঃ গ্লোবাল কানেকশন- আমেরিকার হিপ্সটার আন্দোলনের তরঙ্গ। সেই তরঙ্গ মুহুর্মুহু আছড়ে পড়ছিল, ষাট থেকে সত্তরের প্রথম ভাগে- নেপাল থেকে বারানসী। গুরু থেকে গাঞ্জা। বেলাগম সেক্স। তুলকালাম মাদক। অব্যর্থ শূন্যের ভেতর অনিশ্চিত জীবনের মানে খোঁজা। ভারত তখন হয়ে উঠেছে ঘরছাড়া হিপিদের হতাশ-নিরঞ্জন অভয়াক্ষেত্র- ইহমুক্তি খুঁজতে আসা শয়ে শয়ে মার্কিনি তরুন-তরুণী বারানসীর গলিতে গলিতে। এই বেনারসকেই বেছে নিয়েছেন মলয় তার নভেলার স্থানিক পট হিসেবে। কলকাতা থেকে বিকেন্দ্রীকরণ । আবার কলকাতা ও প্রবাস, বাংলা সাহিত্যের কেন্দ্র ও প্রান্তিক, এই দুই বাইনারি ছাপিয়ে তা মলয়ের আত্মজৈবনিক প্রয়াসও। ষাটের দশক। সত্তরের প্রথম ভাগ। সারা আমেরিকা উদ্বেল, অসংযত । যৌন-মুক্তি, ভালবাসায় বিভোল ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পোর্টল্যান্ড, কলোরাডো থেকে নিউ ইয়র্ক। মাথায় ফুল লাগানো তরুণীরা, যুদ্ধবাজ মার্কিনি নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন। ভিয়েতনামের নামে প্রতিবাদে উচাটন হচ্ছে বার্কলি থেকে প্রগতিশীল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। মানবিক হত্যার কাছে আস্থা হারিয়ে ভালবাসা খুঁজতে জড় হয়েছেন হেইট অ্যাশবেরিতে। ‘ভালবাসার একটি গ্রীষ্ম’ তাদের আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলেছে, তারা ঘর ছাড়তে শিখেছেন বহর্বিশ্বের ডাকে ।যেমন বীটরা। আমেরিকা জুড়ে তখন তেমনই চূড়ান্ত চলছে বীট আন্দোলন। বীটরা এসে যাবেন, কারণ- মলয় ও হাংরিদের বিট-কানেকশন ও মিথ পর্যায়ের। মলয় আমাকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন- হাংরিরা নয়, বরং বীটরাই অনেকভাবে হাংরিদের প্রভাবে প্রভাবিত ছিলেন। আমি ডেনমার্কে বিট সাহিত্য সেমিনারে সেই সাক্ষাৎকার দেখাই। সন্ধ্যের পানশালায় মারিহুয়ানা ফুঁকতে ফুঁকতে নস্টালজিক হয়ে যেতে বসা অ্যালবয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সরেনসন আমাকে রামকৃষ্ণের মত হাতের ভঙ্গিমা করে বল্লেন- কে কার থেকে কি নিল, তাতে কিবা এসে যায়। ভারতে যাওয়ার আগেই বীটরা স্বমহিমায়। আমি তাকে বুঝিয়ে বলি- মলয় সম্ভবত বলতে চান যে ভারত থেকে ফিরে গিন্সবার্গ যেসব রচনা লিখছিলেন- কথ্য ভাষা সাহিত্যের আদলে, তাতে হাংরিদের প্রভাব আছে। তবে হাংরিদের ওপরও বিট-প্রভাবের আস্তরণ ছিল বা মলয়ের ওপর, তার একটি বড় লক্ষণ- তার হিপিবেলা, কারণ পুরো হিপি আন্দোলনের ওপরই বিটদের চূড়ান্ত প্রভাব ছিল। মলয় নিজেই তার মেময়ারকে ‘হিপিবেলা’ নাম দিয়েছেন। আর তা রাজনীতি হোক বা বীট বা বীটহীন হিপি- ঝড়টা আসলেই বহির্বিশ্বের।এরোটিকা লিখতে বসে, এই বহর্বিশ্বের ঝড়কে উপেক্ষা মলয়ের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কারণ তা ফলিত হচ্ছে সমানুপাতিক ভাবে । একদিকে মাও এর রাজনীতি, অন্যদিকে হিপি সংস্কৃতি। ভারতে উত্তর উপনিবেশকালে, চীনের চেয়ারম্যানের নামে প্রলেতারিয়েত সমাজ গঠনের শপথ থেকে, মার্কিনি দাদাগিরিতে হতাশ, দেহ, নেশা, মুক্তি, ভালবাসার খোঁজে উত্তাল একাংশ মার্কিন সমাজের হাউই-বাতাস, উভয়ই মলয়কে পুষ্টি দিচ্ছে। সানফ্রানসিস্‌কো রেনেসান্স, ষাটের বৈপ্লবিক হিপি চরাচর ও ভালবাসার গ্রীষ্ম, বীটদের সাইকেডেলিক আন্দোলন, হিপিদের ভারত-অনুসন্ধান পর্ব ছাড়া এ উপন্যাসের প্রেক্ষিতই গড়ে উঠতনা। এসব জড়িবুটি পেরিয়ে মলয়ের কাছে চ্যালেঞ্জ হল- তার এই কেন্দ্র থেকে সরে এসে তাকে লিখতে হবে এরোটিকা, মধ্যবিত্ত বাঙ্গালির ভিক্টোরিয় নৈতিক পাছার ফুটো দেখিয়ে- অ্যাস্‌হোল ঘোমটা-যৌনতার নিধন করা। আর শেষমেশ সেটি একটি প্রেমের আখ্যানই হবে- নয়তবা সিডাকশন, নিও-শৃঙ্গার-শাস্ত্র। আর ধুমাধার সেই দুয়েন্দেতে- অব্যর্থ ভাবে সফল এই পলিফনি। ভিন্ন ভিন্ন ডেমোগ্রাফির কোলাজ-কথন। “Depart from the tune” – বিযুক্ত কর পড়ছিলাম অ্যান লডেরবাক্‌। দেখছি তিনি বলেন- “Depart from the tune” – বিযুক্ত কর, ফর্মকে ভেঙ্গে যে ফর্ম, তার মধ্যে বিশ্বকে খোঁজো’। আবার বীটরা আসিয়া যাইতেছেন। বারোজে যেমন দেখি ন্যারেটিভ, ফ্যান্টাসি, স্বপ্ন, হ্যালুসিনেশন খেলা করে। এই উপন্যাসেও মারিহুয়ানা, কেমিক্যাল ড্রাগস ছাড়াও ‘নেকেড লাঞ্চ’ এর মতই উপন্যাসের নামকরণে ফুড-মেটাফর এনেছেন মলয়। এঁটোকাঁটা আর ব্রাহ্মসাহিত্যের মত ‘অরূপে’র ক্লাসিক সহাবস্থান, ভারতীয় যৌথ মনোনীতিতে গুরু আর চণ্ডালের অমসৃণ মিলনের মত। পৌষ্টিক ক্ষুধা, মাংস, রুটি, সুরা এবং শৃঙ্গার ও কাম-ক্ষুধার কেমোফ্ল্যাজ- মেঝেয় নামিয়া দুইজনে, আদিম মানব মানবীর ন্যায় পোশাকহীন, রুটি-মদ্য-মাংস খাইলাম । লঙ্কা দেয় নাই বলিয়া, মাংস, যদিও নরম, ছিঁড়িয়া-ছিঁড়িয়া খাইল ম্যাডেলিন , ছাড়া কাপড় টানিয়া হাত-মুখ পুঁছিল । ওই একই পরিত্যক্ত পোশাকে আমিও হাত-মুখ পুঁছিলাম । বীটদের মত সাইকেডিলিক ফ্যান্টাসি ও নেশার অদেখা জগতও এসে পড়ছে- যদিও তেমন জোরালো নয় : – “গাঁজার ধোঁয়ায় মগজে কত যে খেলা তৈরি হয় ! আমি তাহলে অক্ষয়-অব্যয় অপ্সরা, মধুবালা আর মাধুরী দীক্ষিতের মতন সমুদ্র মন্হন থেকে উঠেছি , তপস্যা নষ্ট করতে এক্সপার্ট । ” —- কেকা উবাচ আর শিশিরের জবানীতে, “শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন আঙ্গিক এবং চরস, আফিম, মারিহুয়ানা, এল এস ডি ক্যাপসুল এবং অটুলস ফ্যাগের পরিচয় করাইয়াছে ম্যাডি । মাদকগুলি আমাকে মধ্যবিত্তের নীতিবোধের ভ্রান্তি হইতে মুক্তি দিতে সাহায্য করিয়াছে । ম্যাডিই প্রস্তাব দিয়াছিল, সজ্ঞানে তো বহুবার হইল ; মাদকের অপার্থিব জগতে প্রবেশ করিয়া অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা উচিত আমার । বালকসুলভ যৌনতার সীমা অতিক্রম করা সম্ভব হইবে তদ্বারা । সে কি আলো বিচ্ছুরণ ! নিঃশব্দ ফুলকির বৃষ্টিফোঁটা রূপান্তরিত হইয়াছে নানা প্রকার ফুলে । ম্যাডিকে কখনও মনে হইয়াছে পালক, কখনও মাখন, কখনও অশরীরী অট্টালিকা, যাহার ভিতর প্রবেশ করিয়া পথ হারাইয়া সাঁতার কাটিতেছি ।” সারা উপন্যাসে এটুকুই মাত্র সাইকিডেলিক আয়োজন। আর তার বিবরণও নেহাতই নগণ্য। সেই দিক থেকে এটি মুখ্যভাবে সাইকুডেলিক ন্যারেটিভের চরিত্র ও গঠন বজায় রাখছেনা। যদিও মাদক ও ড্রাগস ও তার সেবন প্রথম দৃশ্য থেকেই প্রায় পুরো বারানসী বৃত্তান্তে ছড়িয়ে আছে। হাংরীরা বারবারই জানিয়েছেন যে তারা কেমিক্যাল ড্রাগস এর নেশায় ছিলেননা, বীটদের মত। তাই বীট বা অন্যান্য সাইকিডেলিক রচনার সাথে এ উপন্যাসের মিল খুঁজতে যাওয়া বৃথা। বর্ননা যেটুকু আছে তা গড় সাইকিডেলিক মোটিফ বা সিম্বলের সাথে বিশেষ মেলেনা। আলো ও ফুলের মোটিফটি ছাড়া। সেদিক থেকে পাঠককে নিয়ে এসেও মাদকের অপার্থিব স্তরে ভ্রমণ করাতে মলয় নিতান্তই কাঞ্জুশি করেছেন বলব। ফিরে আসি ফর্মের আলোচনায়- তিনজন কথকের ডেমোগ্রাফি ভিন্ন। তাই বাক্যান্যাসের ব্যাপারে লেখক যত্নবান হয়েছেন। বাখতিন তার The Dialogic Imagination এ একথা উল্লেখ করেছেন যে – ‘পৃথ্বীটা পলিগ্লট অর্থাৎ বহুভাষক, হয়ে গেছে। আর উপন্যাস খুব সক্রিয়ভাবেই এই পলিগ্লট বিশ্ব নির্মান করতে সক্ষম’। ভাষার ভিন্নতা বা বহু ভাষা বলতে এখানে আমি ‘স্বর’ বোঝাতে চাইছি। তা মূলত ডেমোগ্রাফির ভিন্নতার কারণে। এবং একই ঘটনার বা প্রেক্ষিতের দুটি পৃথক উপস্থাপনার কারণে। কিউবিজমের ধাঁচায়- দুটি বয়ান- একটি শিশিরের অপরটি কেকার। উত্তম বচনে লেখা এই দিনলিপি আখ্যানে কেকা ও শিশির একটিই ন্যারেটিভের দুইটি পার্সপেক্টিভ দেওয়ার কাজ করে বা পরস্পরকে কমপ্লিমেন্ট করে। এখানে যেমন শিশিরের বয়ানে পাচ্ছি- “প্রাতঃকালের নয়টা-দশটা হইবে । লাল তাঁতের শাড়ি-ব্লাউজ পরিহিত, সম্পূর্ণ সিক্ত, চুল হইতেও জল ঝরিতেছে, এক ভারতীয় রমণী ঘরে প্রবেশ করিয়াই খিল তুলিয়া দিল । গঙ্গায় ডুব দিয়া ভিজিয়া গিয়াছি , শুকাইতে হইবে, বলিয়া এক-এক করিয়া সবকিছু পরিত্যাগ করিল, এবং আমার তোয়ালে লইয়া গা-মাথা পুঁছিতে লাগিল ।…এতই বিস্ময়াহত হইলাম যে, উঠিয়া, স্হিতি বোধগম্য হইতে সময় লাগিল । আত্মস্হ হইলে কন্ঠ হইতে নির্গত হইল, কেকা বোউদি, করিতেছেন কী, করিতেছেন কী ! কেকা বলিল, বউদি শব্দটি বাদ দাও, এবং এগুলি ছাদে শুকাইয়া দিয়া আইস, তারপর বলিতেছি । শুকাইতে দিয়া ঘরে ফিরিয়া দেখিলাম , অতুলের স্ত্রী বিছানায় শুইয়া সিগারেট ফুঁকিতেছে । নারীর বহু পোশাক ঘরে মজুত । অথচ সে নগ্ন, কোনো লজ্জা-সংকোচ নাই । বুঝিতে পারিলাম আমার কন্ঠ শুকাইয়া গিয়াছে, মুখ দিয়া কথা ফুটিতে সময় লাগিবে ।” এই একই ঘটনা আবার লিপিবদ্ধ হতে দেখি কেকার জবানীতে, এক পুরুষত্বহীন স্বামী, আরেক লম্পট প্রেমিকের যৌন প্রত্যাখ্যানে অনশনক্লিষ্ট, যৌবনময়ী সে বেঁচে নিতে চায় জীবন- “প্রথম দিনের ব্যাপারটা লিখতে গিয়ে শিশির কিছুটা বাদ দিয়ে ফেলেছে , বোধহয় উত্তেজনার বশে কিংবা নেশার ঘোরে লিখেছে বলে । আমার মনে হয়, ও হুহু করে লিখে গেছে, তারপর আর পড়ে দেখেনি । তার ওপর মাস্টারি-মার্কা বাংলা ।ও যখন ঘরে ঢুকে খাটের পাশে এসে দাঁড়ালো, মুখচোখ দেখে বুঝলুম ভীষণ অপ্রস্তুত, কী করবে কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না । একেবারে অস্হিরপঞ্চক । ওকে স্বাভাবিক করে তুলতে আমি সিগারেটের ধোঁয়ায় পর-পর দুটো রিং ওর দিকে উড়িয়ে বললুম, এই নাও বরমাল্য, তোমায় স্বয়ম্বর-সভায় বরণ করে নিচ্ছি ।শিশির কিছুটা স্বাভাবিক হল , কিন্তু জিগ্যেস করে বসল, তুমি আর গান গাও না ? এরকম গাড়লপুরুষ যে হতে পারে জানতুম না । সামনে শুয়ে রয়েছে এক নগ্ন মহিলা , সেদিকে নজর দেবে, প্রশংসা করবে, তা নয়, গান ! তবে বুঝে নিতে অসুবিধা হল না যে বঙড়শিতে মাছ আটকে পড়েছে, এখন যদি আমি মুখ থেকে বঁড়শি খুলে নিই তবেই ছাড়া পাবে, নয়তো আটকে নিয়ে খেলাবো, খেলাতে থাকবো । পুরুষরা ভাবে যে তারাই বুঝি ছিপ ফেলে গিঁথে তুলতে পারে।” এরপরই ডায়েরী মালিকের ক্লাসিক-জবানীতে প্রায় গোদারীয় জাম্পকাট। কেকার জবানী থেকে পাঠক এসে পড়ছে নির্মলের বাবার দিনলিপির পাতায়। তার বচনে- “উৎপাদন ব্যাপারটা হয়ে উঠেছে সতত পরিবর্তনরত । আন্তর্জাতিক শ্রমবিভাজনের কারণে, প্রাযুক্তিক দ্রুতির কারণে, শ্রমের তুলনায় পুঁজি থেকে সর্বাধিক লাভের কারণে, এবং অবশ্যই ভোগ্যবস্তুর বিশ্বায়নের কারণে । আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের আদলটাই প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়ে চলেছে । বহুজাতিক সংস্হা ও তার মালিকদের স্বদেশ বলে কিছু থাকছে না । আবির্ভাব হয়েছে বিশ্বব্যাপী মাফিয়া-ভাতৃত্বের । বাজারের কতৃত্ব হয়ে চলেছে বিকেন্দ্রিত । অথচ বহুজাতিকগুলোর কর্মকাণ্ড কেবলমাত্র পুঁজি, মাল এবং উৎপাদনের আনাগোনায় সীমাবদ্ধ নয় । তারা বিশ্বের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাম্প্রদায়িক, সাংস্কৃতিক নকশাগুলোর হেরফেরকারীও বটে । ব্যক্তিমালিকের পক্ষে আর ঊৎপাদনের বিশাল কারবার চালানো সম্ভব নয় বলে, সমাজ-সম্প্রদায়-রাষ্ট্রের হাতে উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সীমিত । নিয়ন্ত্রণ, নিয়ম, নীতি এক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়ায় টলমলে । সেহেতু সংস্কৃতির সনাতন ভৌগলিক বাঁধন আলগা হয়ে যায় । সংস্কৃতি হয়ে যায় ভাসা-ভাসা । সংস্কৃতি হয়ে গেছে ধাবমান ও যাযাবর । ক্লাব, সমিতি, গোষ্ঠী, যারা সংস্কৃতির ধারক-বাহক বলে নিজেদের মনে করে, আসলে তারা উত্তরদার্শনিকতার প্রতিভূ। উৎপাদনের আন্তঃরাষ্ট্রিকতা একযোগে হয়ে উঠেছে অভূতপূর্ব বিশ্ব একতার সুত্র, আবার পুঁজিবাদের ইতিহাসে অচিন্ত্যনীয় ভঙ্গুরতার উৎস। পুঁজিবাদের এখনকার জায়মান গল্পটি আর ইউরোপীয় ইতিহাসের প্রসারিত গল্প নয় । এই গল্পের আর কেন্দ্র থাকছে না । অর্থনৈতক ভঙ্গুরতার শক্তিবিকিরণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসেছে সাংস্কৃতিক ভঙ্গুরতা বা বহুসাংস্কৃতিকতা । এর ফলে ঘটছে সাংস্কৃতিক দেশান্তরণ, সীমানাগুলোর ( ভাষা, দেশ, জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠী, লিঙ্গ ইত্যাদি ) অপলকাভাব, পার্থক্য ও অসাম্যের তৃণমূল পর্যন্ত প্রসার, সমাজের ভেতরে-বাইরে ওই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সমরূপী হবার চাপ, স্হানিক ও বিশ্বের পরস্পরের মধ্যে অনুপ্রবেশ । এগুলো উত্তরদার্শনিকতার লক্ষণ ।” ক্লাসিক প্রবন্ধের কেত্‌দার, চোস্ত্‌, আর্থ-সামাজিক বিশ্লেষণ। প্রাবন্ধিক মলয় যিনি উপন্যাসের কলমে নির্মলের বাবা, এই বচনের কথক। এতে এসে গাড়ি জুতছেন কেকা । “একে তো কামুক ভোঁদাটা বিটকেল বাংলায় নিজের কাশীবাসের স্মৃতি লিখেছে, তাও আবার এমন ইজগুড়ি-বিজগুড়ি হাতের লেখায় যে তরতর করে পড়া যায় না ; তার ওপর মাঝে-মধ্যে ঢোকানো নির্মলের বাবার জ্ঞানবাক্যি ! হাতসাফাই যখন করলি, তখন ফাঁকা দেখে একটা খাতা নিতিস । নয়তো ছিঁড়ে ফেলে দিতিস নির্মলের বাবার লেখা জ্ঞানবাক্যির পাতাগুলো । ওনার দুয়েকটা পাতা পড়লুম । কী যা মাথামুন্ডু কিছুই তো বুঝলুম না । শিশির যেমন বাংলায় মাস্টারি ফলিয়ে কাব্যি করেছে, উনি তেমনি নিজেই নিজেকে জ্ঞান দিয়েছেন ।” লেখকের সূত্র অনুযায়ী ইনিই ডায়েরী মালিক। এই মূল অথরের ডায়েরিতে ঢুঁসো মেরে ঢুকে পড়ছে শিশির। কিন্তু পাতা ছিঁড়ে নিচ্ছেনা। প্রাথমিক অথরকে মারছেনা। রেখে দিচ্ছে ফাঁকা, সাদা পাতা ইতস্তত। কোন পরিকল্পনা ছাড়া। সেখানে জমে উঠবে কেকা’র ‘আত্মনং বিদ্ধি’- তার নিজস্ব বাক্যশৈলীতে, যা জীবন-তরতরে- প্রচলিত অভিজ্ঞান মতে- চটুল ও অ-ক্লাসিক। স্বেদ,ঘাম ও হমজায়েদী। এভাবেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে- কোলাজ-কথন। “ফাঁকে-ফাঁকে যেখানটায় লেখা হয়নি, শিশির আর নির্মলের বাবা যে পাতাগুলো ছেড়ে দিয়েছে; হয়ত আমার জন্যেই । সেখানে আমার কথাগুলো ঢোকাবো ।” মলয়ের পরীক্ষা-নিরিক্ষায় বাংলা সাহিত্যে এই বহু কথকের, একে অপরকে নির্মান-বিনির্মানের অধুনান্তিক ফর্মটি সাফল্যের সাথে থেকে গেল। দেহ,মন, অপর ‘আমি শিশিরের প্রেমিকা নই । শিশির আমার প্রেমিক ছিল না । তাহলে আমরা পরস্পরের কী ? আমি শিশিরের দেহটাকে ভালোবেসেছি । শিশির আমার দেহটাকে ভালোবেসেছে । সত্যি কথা বলতে কি, আমরা দুজনে যে-যার নিজেকে ভালবেসেছি । অথচ আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা নই । এরকম কাণ্ড তো সিনেমাতেও সম্ভব নয় । দেখাতেই পারবে না । আমি সত্যিই অপ্সরা, ঝড় দিয়ে গড়া অপ্সরা । আর শিশির হল বরফের মতন ঠান্ডা অন্ধকার দিয়ে গড়া বিশ্বামিত্র ।’ ওপরের জবানীটি কেকার। কাহিনীতে বারানসীর দুইটি মুখ্য নারী চরিত্র- ম্যাডেলিন ও কেকা। কিন্তু মলয়কাপল-ফর্মেশন ঘটাচ্ছেননা। এদের মধ্যে প্রেম বা বিবাহ সম্পর্ক হয়না। দেহ ও মনকে ব্যবচ্ছেদ করে, দেহ ও মনের এই কামরা-ভাগ, প্রেমিক ও যৌন সঙ্গীর আলাদায়ন, এই নবীনতা, পোস্ট-আধুনিক অগ্রসরতা, বাংলা কেন তামাম সাউথ এশিয়ায় যথেষ্ট কষ্ট-মুমকিন, ভুলে যাবেননা উপন্যাসের ঘটনা ঘটছে ষাটের শেষ গোড়ায়, সত্তরে। আবারো কথা হোল – মলয়, শিশিরের চরিত্রকে, কামরাজ-কাম-সাধু (কেকার উক্তিতে, বিশ্বামিত্র) গোছের এক সমসত্ব শিশির ভেজা রস-মণ্ড তৈরি করতে চেয়েছেন। শিশির নামক এই কথক চরিত্রটির হাতে জাদু আছে। সে জানে কামকলার ছলা। সে নারী শরীরের প্রতিটি আহ্লাদ-বিন্দুকে জাগিয়ে তুলতে পারে। আগাগোড়া দুটি নারী চরিত্রের সাথেই তার সঙ্গমের যে কামশস্ত্র মূলক রচনা, তাতে কামের, শৃঙ্গারের কলা পারদর্শিতায় পুরুষের ভূমিকাই মুখ্য। ম্যাডেলীন ও কেকা উভয়ই শিশিরের কামকলায় তৃপ্ত হয়। কিন্তু তাদের যৌনমুক্তির বা অরগ্যাজম বা উদ্দীপনের সুতোটি শিশিরের হাতে বাঁধা থাকে। মানে দাঁড়াচ্ছে- শিশির বা তার মত কোন পুরুষই পারে নারী শরীরকে বাজিয়ে তুলতে, (প্রসঙ্গতঃ নারীর সমসাময়িক যৌনচেতনা একথা স্বীকার করবেনা, এনিয়ে বিস্তরআলোচনার অবকাশ আছে, এই আলোচনায় তার বিস্তৃতি ঘটালাম না ) যেমন জিমি হেনড্রিক্সঃ “ওঃ, জিমি হেনড্রিক্স ! ইনডিয়ায় আসিয়া এই প্রথম একজন ভারতীয়ের কন্ঠে জিমি হেনড্রিক্সের নাম শুনিলাম । গিটার তাঁহার হাতে যৌনতায় উত্তেজিত রমণীদিগের ন্যায় হইয়া উঠে ; যেনবা গিটারের অরগ্যাজম ঘটে ! শরীরে আনন্দের ঢেউ তুলিয়া ম্যাডেলিন কহিল। তদ্ব্যাতীত, অরগ্যাজম শব্দটি শুনিয়া প্রীত হইলাম । ইতোপূর্বে কোনো নারীর কন্ঠে এই শব্দটি শুনি নাই; বস্তুত, ভাষার ভিতরে যে আরাম প্রদানের ক্ষমতা হাছে তাহা মাঝে-মধ্যে অন্যের কন্ঠস্বর নিঃসৃত শব্দে অনেকসময়ে ফুটিয়া উঠে ।” (বিদেশিনী নারী চরিত্র ম্যাডেলিন ) মানে যৌনতায় উত্তেজিত হতে গেলে জিমিকে বা জিমির মত কাউকে বাজাতে হয়। লেখক নারীর চাহিদায় সচেতন হওয়ার চেষ্টা করছেন, কেকাকে কথক হিসেবে খাড়া করে আখ্যান বুনেছেন। নারী শরীরকে পরম মমতায় যত্ন করতে চেয়েছেন। কিন্তু নারীর যৌনতাকে পুরুষের কেন্দ্র থেকে চালনা করার ইচ্ছাও বার বার প্রকাশ করেছেন । এমনকি তা যখন নারী চরিত্রটির জবানীতেও বসানো হচ্ছে। উপন্যাসে নারীর যৌনতৃপ্তির পক্ষে সহমর্মীতা আছে। তবে দুটি নারীর ক্ষত্রেই সে প্যাসিভ গ্রহীতা। সবটুকু চালনা করে শিশির। আর অনাকাঙ্ক্ষিত হোল- “তুমি নায়কের ভূমিকা পালন করিবে , খলনায়ক হহিতে পারিলে আরও ভালো, তাহারা অমিতবিক্রমে রেপ করিতে পারে ।তাহারা অমিতবিক্রমে রেপ করিতে পারে। ” অথবা, সিক্ত তোয়ালেতে কান্তা সুগন্ধী ছিটাইয়া ভালোভাবে পুঁছিলাম ম্যাডেলিনের দেহ । চোখ বুজিয়া শীতল স্পর্শের আরাম লইতে-লইতে বলিল, ব্রেকফাস্ট করিয়া, একটি অটুলস ফ্যাগ ফুঁকিয়া পরস্পরকে চতুষ্পদের মত রেপ করিবার লড়াই করিব, কী বল ? রেপের ধারণায় মলয় রায়চৌধুরী এতো মশগুল কেন তা আমার বোঝাতীত। ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ থেকেই এর ধারাবাহিকতা মলয় রেখে চলছেন। শৃঙ্গার, যৌনতার সাথে রেপের কি সম্বন্ধ একথা তার মত বিদগ্ধ মানুষ কেবলই গুলিয়ে গেলেন বলে আশ্চর্য হতে হয়। দুঃখিতও। রেপ একটি জঘন্য ঘোরতর ক্রাইম। রেপ থেকে চূড়ান্ত শারীরিক জখম এমনকি মৃত্যু হয়। রেপের মূল রয়েছে পানিশমেন্টের মারমুখী, খুনী, ক্ষতি-ইচ্ছা। অ্যাগ্রেসিভ-সেক্স বা ডমিনেটেড হওয়ার ফ্যান্টাসিকে ‘রেপ’ না বলে অন্য শব্দের কোন প্রতিস্থাপন তিনি খুঁজে পেলেননা না পেতে চাইলেননা, সেটি খোলসা করার জন্য মলয় রায়চৌধুরীকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম। পুরুষ লেখক, কথক হিসবে তিনি নারী চরিত্রের সংলাপেও তা হাজির করছেন। নারী সত্যিই কি চান- কোন নারী দুর্মর, বাধাহীন অরগ্যাজম্‌ পেতে চাইলে রেপড্‌ হতে চাইবেন কেন? হ্যাঁ, পরিসংখ্যান পাওয়া যায়- নারীরা সাবমিসিভ হতে চেয়ে বা পুরুষকে শরীরের বল প্রয়োগ করতে নির্দেশ দিয়ে শৃঙ্গার করতে চাইছেন। তাকে ‘রেপ-ফ্যান্টাসি’ বলার এক অদ্ভুত কিমাশ্চর্জম চলও লক্ষ্য করা যায়। যারা এটা করেন তারা কিছুতেই বুঝে উঠতে চান না – রেপটা কোন ফ্যান্টাসি নয়- সেটা ক্রাইম! মৃগাঙ্ক গাঙ্গুলিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একবার বলেছিলাম- শুভা নিয়ে দুয়েক কথা বলতে পারি, আমার বিশ্লেষণ । আমি শুভা হলে মলয়দা কে এক হাত নিতাম অথবা শুভার হয়ে। একই জিনিশ লক্ষ্য করেছি সাম্প্রতিক অবন্তিকার ক্ষেত্রেও। মেল-গেজিও বলেও না। পুরোপুরি, এক ধরণের পাওয়ার-প্লে আছে। মলয়দাকে যেটুকু জানি, কথা বলেছি, মলয়দার মত লিবেরাল মানুষ এটা কেন এনেছিলেন, আনেন, জানতে ইচ্ছে হয়। যেমন সম্প্রতি ”অবন্তিকার শতনাম’ কবিতাটি। “ওষ্ঠের নাম আফ্রিকান সাফারি, পাছা দুটির নাম- গোলাপসুন্দরী…” এ জিনিশ এর আগে নিম্ন- উচ্চ-মধ্য কোন মেধার বাঙ্গালী কবির পক্ষেই লেখা সম্ভব হয়নি। মলয় চূড়ান্ত প্রেমিক, অবন্তিকাকে দুর্বার প্রেম ও অভিবাদন জানাচ্ছেন। কিন্তু কথা হইল পাছা তো অবন্তিকার । স্তন ও তার । সে কি এইরূপ নাম পাইয়া খুশী হইয়াছে? সে কি নাম রাখার প্রস্তাবে সম্মত হইয়াছে? এই কথা মলয় রায়চৌধুরী আমাদের কখনওই জানান না। ফলে ‘Sex is Shameful’- এই ধারনাকে ভাঙলেও কিন্তু মেয়েদের যৌনমুক্তি বা স্বাধীনতার যে ক্ষেত্র তাতে পুরোপুরি কাজে আসছেনা হাংরিদের কলম। এনিয়ে অন্য পরিসরে বলাই ভালো। উপন্যাসে ফিরি। এই উপন্যাসে অবশ্য মলয়কে স্বীকারোক্তিতে যেতে দেখি। শিশির যে চরিত্র, যার সাথে মলয় রায়চৌধুরীর হিপিবেলার উপাদান অনুযায়ী আত্মজৈবনিক মিল আছে ধারনা করছি, তার জবানীতেই এই আত্ম-উন্মোচনঃ – “রাজগীরের কুণ্ডের চারিধারে খালি গায়ে বসেছিল, আর আমরা, কলেজিয়ানরা, দুচোখ মেলে দেখছিলুম, যতক্ষণ ওরা স্নান করেছে ততক্ষণ “মেল-গেজ” দিয়ে গিলেছি ।” যৌথ ডায়েরি- স্পেস, মেটাফর, মুক্তাঞ্চল প্রকাণ্ড শিবলিঙ্গ। তার নীচে কেকার আখড়া। মন্দির খুলে বসে কেকার আয় দুরন্ত। চিহ্নের পোস্টাপিস এই পোস্ট উত্তর-আধুনিকতাকালে তামাদি হইয়া গেছে । কিন্তু তামাদি হয়ে গেলেও চলচ্চিত্রের মানুষ এই কলমচীর সিগ্নিফায়ার ও সিগ্নিফায়েডের সংগম মাথায় চলে ফেরে। আর কেবলই মানের জন্ম হইতে থাকে । শিবলিঙ্গ, মন্দিরের মেটাফরও এখানে আরেকটি ইস্যু-ভিত্তিক স্তর আমদানী করছে- ধর্ম ও তার ভণ্ডামির গার্বেজ । কেকা বৌদির শিবের লিঙ্গ প্রতিস্থার মেটাফর, যা প্রজনন কাল্টের প্রতীক, যোনী ও লিঙ্গের সঙ্গমের প্রকাশ্য সনাতনী ইন্সটলেশন ( যা বারানসী না হলেও একিভাবে বার্তাবহ হত, কিন্তু বারানসী শিবস্থান, লিঙ্গ পূজার মহাপীঠ, তাই মেটাফরের খেলা এখানে জমে ওঠে অব্যর্থ ) তাকে ঘিরে জমে উঠছে ব্যবসা। ধর্মের। যে ধর্মে যৌনতা ছিলাটান ট্যাবু। সেখানেই ট্যাবু ভাঙ্গার আখ্যানে শান দিয়ে যাচ্ছে গঙ্গার ধারে গড়ে ওঠা প্রাচীন চলমান সভ্যতা। সত্তরের বারানসীতে মলয় তাই এখানেই নিও-কামশাস্ত্র লিখতে পারেন উত্তাল বারুদ্গন্ধে। দেহ, যা ঘিরে মৌতাত পায় যৌন-উৎসব। দেহধারী স্বপ্নময় চোখ- যা চেয়েছিল সমাজবদল, সেই দেহকেই ধ্বংস হতে হচ্ছে, খুন হয়ে যাচ্ছে তরুণ সমাজ। স্বপ্নময় সত্তরের বিপ্লব আয়োজন। আয়োজক সেই দেহ গুলিকে নিঃশেষ করা হচ্ছে। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হচ্ছে নকশাল উল্লাসের, ফেক এনকাউন্টারে। দেহ, দেহজ আনন্দ, মৃত্যুর ভেতর দেহ বর্জন এই দেহদর্শন বার বার মীনের মত পাক খাচ্ছে ন্যারেটিভে। মলয় একে নাটকীয় করছেন। সম্পর্কের এক জ্যামিতিক বিন্যাস ঘনিয়ে তুলছেন। তার মধ্যে দুটি নারী শরীরের সাথে তার শৃঙ্গার-লীলাকে মহিমান্বিত করে মলয় এরোটিকা নির্মান করেছেন। সেখানে যৌন মিলনের মধ্যে একের ফেলে যাওয়া অন্তর্বাস, অপরের কাম-জাগানিয়া প্রসাধনে সাহায্য করছে। আদার ও আত্ম’র বাইনারিকে গুলিয়ে দিতে গ্লোব্যাল-লোক্যাল, শ্বেত ও বাদামীর, উচ্চবিত্ত ও নিম্নের ইন্টারসেকশনালিটির উঠোনটি প্রশস্ত হচ্ছে। উপন্যাসে যৌথ ডায়েরিটিই এক জাদু-স্পেস। এবং সেটিই এখানে হয়ে ওঠে সিক্রেট-গার্ডেন। গোপন উদ্যান। অন্তত এরোটিকার পার্টটি যেখানে লেখা হচ্ছে। চিলেকোঠার ছাদ। যার গা দিয়ে গঙ্গা বহতা । ভারতীয় যৌথ-মনস্তত্বে সে পাপমোচী। কলুষনাশী। কাদাখানার সফেদ্‌দারী তার কর্ম। এই ‘লোকেলে’ মলয় খেলে দিয়েছেন পাল্টা ছক- উত্তর উপনিবেশে, বজরাঙ্গ-দল-পুর্ব্ব উত্তর প্রদেশে। তার সফেদ্দারী এখানে এক জোরালো লাথ- যেখানে গঙ্গা, তার বহতা বায়ু উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভিক্টোরীয় শুচিবায়ুতা। আর তিনি শুখরিয়া আদা করছেন- ট্যাবু ভাঙ্গানিয়া মাদকের। ‘শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন আঙ্গিক এবং চরস, আফিম, মারিহুয়ানা, এল এস ডি ক্যাপসুল এবং অটুলস ফ্যাগের পরিচয় করাইয়াছে ম্যাডি । মাদকগুলি আমাকে মধ্যবিত্তের নীতিবোধের ভ্রান্তি হইতে মুক্তি দিতে সাহায্য করিয়াছে ।’ একিভাবে বহুস্বর ও কথকের বিষয়ে লেখক মলয় উদার। এবং বায়াসহীনও। অন্যস্বর গুলিকে স্পেস করে দেন তিনি একই ন্যারেটিভে কথা বলার। ভিন্ন পার্সপেক্টিভ রাখার। তাতে কেকা চরিত্রটি নায়ক শিশিরকে খাটো করতে চাইলেও লেখক মলয় কেকাকে এই সুযোগ দেন। বোঝা যায় যে এ লেখকের এক আত্মবিশ্লেষন, কারণ মলয় রায়চৌধুরীর আত্মজৈবনিক উপাদান খেয়াল করলে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়- শিশির মলয়ের অল্টার ইগো। কিন্তু এরোটিকা লিখতে বসেছে শিশির। সত্তরের দশকের নিও-কামশাস্ত্র। শৃঙ্গার মালা। মাঝে ধ্যানস্থ হাইফেনের মত নির্মলের পিতার কাল-কথনের মহাকাল বাণী- এই হল কাঠামো। তার ভেতর অতি সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত নারীর আত্মনং বিধি- ‘জীবনকে তোল্লাই দিবার কোনো প্রয়োজন নাই , যেমন-যেমন পাও তেমন তেমন নিতে থাকো ‘ ( কেকা উবাচ)। অথবা বিত্তশীল দেশের অস্থির সমাজের জীবনদর্শন- ” যাহা ইচ্ছা করি, যে দেশে ইচ্ছা যাই, যাহাকে ভালো লাগে তাহার সহিত শুই, খাইতে ভালোবাসি বলিয়া প্রতিটি দেশের খাদ্য খাই ” ( ম্যাডেলিন উবাচ)। চূড়ান্ত আধুনিক ভাঙ্গা ফর্ম-চিহ্ন ও ভদ্রাসন ভেঙ্গে ফেলবার মেটাফরে বারানসী তাই চরম নির্বাচন। লেখক এখানে লোক্যাল-গ্লোব্যাল, প্রেম-প্রেমহীন শৃঙ্গার আত্ম ও অপর মারহাব্বা খেলে দিয়েছেন। তা সত্য এরোটিকার নির্মানের চেষ্টায়ও। দেহ এরোটিক ‘আদার’কে খোঁজে। ইন্টিমেসি সেই ”আদার” কে তার অবস্থানকে গলিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। কথকেরা রতিক্রিয়ায় অন্যের দেহগুলিকে যত্ন করতে শেখেন। একই সাথে চলে নারীর দেহের ভিস্যুয়াল কনসাম্পশন, স্কোপোফিলিয়া, । কেকার জবানীতে এই ভ্যয়ার-কে অতিক্রম করার সুযোগ ছিল। কিন্তু লেখক পুরুষ- তার ভয়ারিজম এখানে কেকার নারী-গেজকে ছাড়িয়ে যায়। এরোটিক ট্র্যাডিশনে সাধারণত এ খেলা সমানেই চলতে থাকে। তার পাশাপাশি ভাষাতত্বের লুডো-বোর্ডে সাপ-লুডোর মত স্ল্যাং ও ধ্রুপদী নামা ওঠা করছে। ছড়িয়ে পড়ছে। ডায়রি লেখক- ধ্যানস্থ, শিশির এর ভাষা ধ্রুপদী সাধু, কেকার- লোকজ ফিচেল। কিন্তু তার চটুলতা ম্যানিকিওর্ড ফ্ল্যাট-বাড়ি বা বহুতলের বাজার-উপন্যাস মার্কা চরিত্রের মত ভুসো-চটকা নয়। বহুদিন আগে তার প্রেমিক লর্ড আলফ্রেড বোসি ডগ্‌লাসকে লেখা অস্কার ওয়াইল্ডের অমূল্য কিছু চিঠি-চাপাটি পড়েছিলাম। ঝিম লাগানো সুন্দর সেসব প্রেমালাপ। বারানসীর সাব্‌-আর্বান, অনাধুনিক শহুরে প্রেক্ষাপটে এই উপন্যাসটিও ঝিম লাগানো সুন্দর। রহস্যময়ী প্রাচীন নগরী। তাতে ঘটে চলে বিষাদ আর মিলনের আনন্দ বিলাপ, ফ্যান্টাসি, গেইম। বোমা ও পিস্তলের মাঝে কয়েক মানবিক মুহুর্ত। চলন্ত, জাগ্রত এক উৎসব। যৌনতার উৎসব। তার আয়োজন আছে। সামান্যই। কিন্তু আন্তরিক। ম্যাডেলিন এর নিঃস্পৃহ বিষাদ, ট্রান্সন্যাশানাল দৃষ্টিপথ, শঙ্খ লেগে যাওয়া পাকে পাক। আর কেকার স্বেদ মাখা, সস্তা দামের লিপস্টিক ওষ্ঠ, অধর, সস্তার অগুরু ও কান্তা। নিম্ন মধ্যবিত্তের ছাপা আঁচল। অদম্য বাঁচার ইচ্ছা, বেঁচে নেওয়া। শরীরকে আবিষ্কারের আনন্দ, আর টাবুর পাছায় গরম কশাঘাত। বাঙ্গলা সাহিত্যে এই অ্যাডাল্টারির বন্দনায় মনে পড়ল অ্যাডাম বেইগলি’র ‘আপডাইক’ কেও। টাইম ম্যাগাজিন কাভার স্টোরি করে বলেছিল- ‘He is also credited with making suburban sex sexy’। বাঙ্গালীর ধর-তক্তা ফুল-ফুল সেক্স-কাব্যকে সত্যিই পরিণত সেক্সি করে ফেলা উপন্যাসটির চলন তরতরে, ঘোরলাগা। মায়াময়। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এটি মলয় রায়চৌধুরীরও প্রিয় উপন্যাস। যদিও এ বিষয়ে তার মতামত আমার জানা হয়নি। সত্তর একটা হাওয়া। হাওয়াটা উপন্যাসে বইছে- হাওয়ায় বারুদ গন্ধ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দ্রোহ, সমাজ পাল্টানোর তীব্র জেদ আর শরীরী ট্যাবু ভাঙ্গার ঘোরলাগা, অনুপম মাদকতা। এর মধ্যে উপন্যাসে শৃঙ্গার, এরোটিকের প্রাণটিই সর্বাপেক্ষা অরূপ, মায়াময়। জীবনকে বেঁচে নেয়া। যেমনি অরূপ এই সুসফল ফলন্ত জীবন, তেমনই অরূপ তার এঁটোকাঁটাও। “জীবনটা যে মাংসের উৎসব তা কেন মেনে নেয় না লোকে । আমার শরীরের রক্তমাংসে আমি উৎসব ঘটাব তো তাতে কার কী করার আছে ! বেঁচে থাকা ব্যাপারটা হল এই উৎসবকে সারা জীবন ধরে পালন করে যাওয়া । অবিরাম, অবিরাম, অবিরাম । মনের শান্তি এছাড়া কেমন করেই বা পাবো, কেউ বোঝাক আমাকে । জীবন তো একবারই । তাহলে নিজের জন্যে বাঁচব না কেন ? পল থেকে পল, সবসময় নতুন ; শিশির দেখিয়ে গিয়েছিল সেই পথটা, যে পথটা আমি জানতেই পারিনি শিশিরকে পাবার আগে । ভালবাসা ভালবাসা ভালবাসা ভালবাসা । উন্মাদিনীরা ছাড়া ভালোবাসার কথা আর কেউ বলতে পারে না । নিজেকে ভালবাস, হ্যাঁ, নিজেকে নিজেকে, আর অমন ভালবাসার জন্যে যা ইচ্ছা হয় করো ; ভালবাসার জন্যে বেপরোয়া হতে হবে ।” —- কেকা উবাচ খাজুরাহোর দেশে, বাৎস্যায়নকে পুঁথি লেখার জন্য আন্দোলন করতে হয়েছিলো কিনা জানা যাচ্ছেনা। তবে তার সহস্রাধিক বছর পরে এই দেশে চুমু আন্দোলন করার প্রয়োজন হয়েছে । নেতা বলিয়াছেন- উহা ইম্পোর্টেড !! সব মিলিয়ে গোদারের ‘জে. এল. জি বাই জে. এল. জি‘র কথা মনে পড়ল- “First there was Greek civilization. Then there was the Renaissance. Now we are entering the age of the Ass.” অতএব এই কেকা-উবাচ- “জীবনকে তোল্লাই দিবার কোনো প্রয়োজন নাই, যেমন-যেমন পাও তেমন তেমন নিতে থাকো” — ইহা এক জীবনমুখী সহজিয়া দর্শনের উল্লাস। সারা উপন্যাসে তারই আয়োজন। ইতিহাস, দর্শন, মনোবিশ্লেষণ, ক্র্যাফট ও কৌশলের নিরিখে এটি, হতে পারে, মলয় রায়চৌধুরীর শ্রেষ্ঠ ফিকশন কাজ। আপনি থাকছেন স্যার। _____________________________________

শনিবার

স্নেহা গুহ : আই লাভ ইউ মলয় রায়চৌধুরী

"আমি আজও আমার প্রথম বইটা লেখার চেষ্টায় বাংলা ভাষাকে আক্রমণ করে চলেছি । ইমলিতলায় ছিলুম বামুনবাড়ির মহাদলিত কিশোর।দেখি খুল্লমখুল্লা লেখার চেষ্টা করে কতোটা কি তুলে আনতে পারি। উপন্যাস লিখতে বসে ঘটনা খুঁড়ে তোলার ব্যাগড়া হয় না জীবনেকচ্ছা লিখতে বসে কেচ্ছা-সদিচ্ছা-অনিচ্ছা মিশ ধরে খেয়ে যেতে পারে তার কারণ আমি তো আর বুদ্ধিজীবি নই জানি যে মানুষ ঈশ্বর গণতন্ত্র আর বিজ্ঞান হেরে ভুত।" এরকম অত্যাচারীত কথাবার্তা বলার হিম্মত দেখানো ছুতারের আজ ৮১তে পা,তাঁকে নিয়ে অসম্ভব রকমের রিসার্চ,অণুপ্রেরণা,হ্যানো-ত্যানো প্রচুর হয়েছে,হবেউ …আফটারঅল ৬০এর আগুনে দশকে বাংলা কবিতার খোলনলচে জুতোর বাস্কে ভরে পার্সেল করতে পেরেছিলেন যে তিনিই…হাংরি আন্দোলনের উদগাতা…কনট্রোভার্সিয়াল,লার্জার দ্যান লাইফ ক্যারেক্টার হয়ে স্বমহিমায় বিরাজ করছেন তিনি এখনো…অনবরত প্রতিআক্রমণ হয়েছে,তিনি সরে এসেছেন বারবার তার লেখার স্টাইল পাল্টে--দুর্দান্ত ক্রাফ্টসম্যান তিনি… সম্ভবত আমি বাংলায় আভাঁ গার্দ নিয়ে পরিচিত হয়েছি প্রথম তাঁর লেখা পড়েই,একটি পত্রিকার লেখাটা(উৎসর্গীকৃত জর্জ গর্ডন বাইরন,ষষ্ঠ ব্যারন বায়রন) "কে বলতো তুমি? দেখি আবার ডাক দেও! আমরা তার কাছে নাগিয়া খালি হাসিতাম। মজার বিষয় হইল আম্মুর ফোনে প্রথম দিকটায় কনফিউজ যাইতো,কার সাথে কথা বলতেছে সে।আরো অনেক ফোনালাপে আমরা দুজনেই অংশগ্রহণ করছি কিন্তু অপর‌ প্রান্তের লোকগুলা বুঝতোনা।" এইধরনের বিষয়হীনতা লেখার মধ্যে ভাসতে ভাসতে জাম্পকাট করে সোশ্যাল ডিলেমা বিশেষায়িত একটা পরম্পরা তার নতুন লেখাগুলোয়… (কিছু পরে ওই সেম লেখাতে পাওয়া যাচ্ছে) "সেও শরীরে যতদিন তার রস ফেলে আমাকে নিংড়েছে, ততদিন আমাকে তার নিচে চেপে নিষ্পেষণ করেছে, তারপর নতুন কচি ফুল পেতে চলে গেছে…তাতে কিন্তু কারুর একটাও কোঁকড়ানো বাল ছেঁড়া যায় নি। আর আমার একটা বড় মাই (আপনাদের ভাষায়) দেখে আপনাদের প্যান্ট ফেটে যাচ্ছে। আজ আমার সাজানো সাজঘরে কালো আঁধারবিদাগ।" কি বিলকুল সুন্দর জিহ্বায় উচ্চারিত পরপর দৃশ্যগুলো,ইনসাইড,আউটসাইড ডজ করে ওভারল্যাপিং…হ্যাঁ হাংরি শুরুর দিকে লেখায় এবং তারোপর এসোব লেখা তাঁর ছিল না,তাই আমাকে ভাবায় আরো কিভাবে তিনি নিজের চরিত্রের অণ্বেষণ করে গ্যাছেন,কোনোরকম ডিপ্লোম্যাসির ধার না ধারা অবয়ব ফুটফুটে ইস্ট্রোজেন।আমি এই লেখাটা কমপ্লিটলি অ্যাবসেন্স অব মাইন্ডে টুকছি,বন্ধুর দেওয়া কয়েকটা কবিতার দুর্বিসহ ইলাস্ট্রেশন যন্ত্রণার খোশগল্পে সীমাহীন মলয়ালম,আহা কি খাসা,ঠাঁসা ঠাঁসা… তাঁর কবিতা একেবারেই নয় যা তিনি তার আমেজের ৮০ভাগ হয়তো তার উপন্যাসেই আছে,সরজমিনে তদন্তের খাশনবিশি,তবুও মলয় রায়চৌধুরী বাংলা কবিতার প্যারাসিটামল,আর তাঁর গদ্য-প্রবন্ধ অনবরত ইস্তেহার,এসোব আমার একটা বিকট থিসিস লেখার আগে ওনার সাথে চাকনার কাজ করুক,সিঙ্গেল মল্ট ইজ দ্য ক্লোজেস্ট থিঙ্গ টু হিজ হার্ট,খাবেন তাহলে,লাভ ইউ মলয় রায়চৌধুরী। "জুরাসিক যুগের শেষ দিকে এক শ্বাসরুদ্ধকর এক্সপায়ারি ডেট যতটা অবিশ্রান্ত হ্যাংলামি আদুরে প্রথমোক্ত ঘরাণার ঘরের বউরা দুপুরে আমার ভেতর, যেন চিরবিরহী ম্যাড়ম্যাড়ে ওই তেলে দ্রবীভূত সোনা দিয়া বান্ধানো পদযুগলে বাঃ , অনবদ্য ইত্যাদি ইত্যাদি এতটাই বেপরোয়া পুদুচেরির খুদে মুরগি হুহুহু হিহিহি হাহাহা হোহোহো, তিনটি মাত্রাই রুদ্ধ র‍্যাম্পাট কেলিয়েছে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পিরথিবি ছাইড়া চইলা যামু উউউউম্মাহহহ" বাংলা কবিতার ভাববাদী চেতনার ডাইরেক্টনেস থেকে এক্কেবারে ঘুরপথে অ্যান্টি-এস্টাবলিষ্ড কঠিন বিমূর্ততার হ্যান্ডবিল প্রকৃতভাবে উজ্জল,অমলিন আকাঙ্ক্ষা হয়ে বেজে যাচ্ছেন হরবখত… [ধন্যবাদ আমার চেনা-পরিচিতদের যারা আমায় পরিচিত করিয়েছেন হাংরি মলয়ের দৌড়ের রাশ চিনতে এবং এই লেখা একটা হোমাজ টু মাই প্রিডেসিসর,লাজোয়াব চুড়মুড়।]

বৃহস্পতিবার

Hungryalist Poetry of Chaos & Death : Prof Howard McCord, Washington State University

Prof Howard McCord Poetry of Chaos and Death Every attitude has its poetry, and a small, neat nation may, in one age, present a singularly unified attitude and its poetry to the world, as did England in the last sixteenth century. But such a tidy clarity is impossible for India. No country in the world offer greater extremes or variety in the total experiences which shape poets. Every social ordering from the most primitive to the most sophisticated, may be found; every major religion and most of the minor ones are practiced: the world views and value structures of India are nearly endless and expressed in 723 languages. The only area in the world that offers even remotely an equivalent complexity and confusion is the whole of Africa. Two things give the country what unity it has: the first is false generalization---that there is an Indian temperament, discernable both in the North and the South, composed of egoism, agility of mind, quickness to violence, a penchant for vaporous theories and an honest material avarice; the second is a terrible truth---that nowhere else is there such an omnipresent doom, of the implacable approach of absolute disaster and collapse. India produces many kinds of poetry; I am familiar only with that in English, and it falls roughly into three categories. The first is simply bad: the sentimental outpourings of the young or heartsick; formal and bombastic occasional verse; a gauche and florid romanticism: grotesque prayers and pious exhortations, and such like, all of which suffer from banality, false emotion, and technical incompetence. The second is compromised and serious, often well-written poems which sometimes move me but most often seem too dependent on the poetic traditions of England a generation or more ago, and the bland and inoffensive taste of the upper middle class. These works exist in the limbo of the lukewarm, and represent a timid art that dares neither to hate nor love too much. Like our own academic verse, these poems reflect calm intelligence, tamed passion and the polite despairs of gentlemen born into a world they never made. The poems are cultured, introspective, sensitive, and are most true to the plight of the Indian estranged from his own culture by his mastery of English, but whose situation is tolerable, and who would not admit that poetry is a criminal occupation. These are sincere and harmless poems, and aside from a little local colour, could have been written in Leeds or Philadelphia. The denatured cosmopolitanism that infects the poetry of the West prevails in India as well, and few of the poems carry any sense of place, or the sound of a man speaking, or the rasping smell of cow-dung fires. The academic poets of India have yet to grasp the vernacular and all that implies. The poetic vision of the Hungry Generation erupted in Bengal five years ago, and has rapidly spread to such cities like New Delhi, Bombay and Allahabad. This kind of poetry is dangerous and revolutionary, cleanses by violence and destruction, unsettles and confounds the reader. This is the poetry of the disaffected, the alienated, the outraged, the dying. It is a poetry which alarms and disgusts the bourgeois, for it describes their own sickened state more clearly than they wish to hear, and exposes the hypocrisy of their decency. One reaction of good citizens has been to accuse the poets of hysteria and obscenity. The long and painful persecution of Malay Roychoudhury, ending in his conviction on 28th December 1965 on charges of obscenity, indicates the virulence and depth of the fear which these poets have uncovered. The energy of the poets is hysterical: the imagery of the poem is obscene. It is meant to be. But I take obscenity to be a just and natural reaction to a vile existence.. Obscenity is the desperate music of poets who dare speak out against the rape of mind and soul that marks our demented and vicious civilization. Obscenity is the last attempt by honest men to speak their agony to those who torture them. Obscenity is a moral weapon with which to attack the degrading and filthy use of power that characterizes our age, and assert contempt for the managers of our lives. These poets say what poets and prophets have said for a hundred years---that our civilization is desperately sick, that our consciousness is polluted, our values murderous. They are outraged at the cruel and deliberate waste of beauty and intelligence that world culture represents, and sickened by the perversions of life our societies demand. Their poems record the ugly, numbing truth that most men delight in these horrors, lust after their own destruction, and fear life insanely. The poets are nihilists. They are pessimists. And most will die before their time. But each of them has a vision of what man ought to be, and should be, and their poetry stems from the sad knowledge of what he is. I value their work most because it is an honest response to the reality of life in India. And India endures now what will come to us all before long. Pound said that poets were antennae of the race, and they are---but they are also gotten on Cassandra, and will not be believed until too late, when the vacuous mouthings that pass as earthly wisdom are known by all to be empty, dreadful lies and the hideous future we have let to be prepared for us arrives. We will not be saved. This is the obscenity their poetry must celebrate. Malay Roychoudhury, a young Bengali poet, has been a central figure in the Hungry Generation’s attack on the Indian cultural establishment since the Movement began in the early sixties. The Indian press believes to this day that the group’s origins can be traced to the 1962 Indian visit of Allen Ginsberg, Peter Orlovsky, and Gary & Jeanne Snyder. But however stimulating the visit of these American poets, however inspired by such writers as Artaud, Genet, Michaux, Burroughs, Miller, and Celine, I believe the Movement is autochthonous and stems from the profound dislocations of Indian life. There was little notice of the Movement in the United States until 1963 when City Lights Journal carried news of the group; In 1964 the Hungrealist Manifestoes appeared in KULCHUR#15, and EL CORNO EMPLUMADO and EVERGREEN REVIEW printed letters telling of the Movement’s legal difficulties. For in the autumn of 1964, as many learned from a November issue of TIME, six poets of the Hungry Generation, Malay Roychoudhury, Saileswar Ghosh, Subhas Ghose and Pradip Choudhuri, had been arrested and charged with conspiring to produce and distribute an obscene book in violation of Section 292 of the Indian Penal Code. The book was an anthology of their writings, and STARK ELECTRIC JESUS was Malay Roychoudhury’s contribution. At their arrest, all were suspended from their jobs, and when I saw them in June 1965, they had been out of work nearly ten months. Later that summer charges were dropped against five, but the prosecution of Malay Roychoudhury continued. On 28 December 1965 he was found guilty by a Calcutta court and sentenced to a fine of 200 rupees or one month’s imprisonment. The poem was banned. He has not been reinstated in his job, and life, as he writes, “has become hard and difficult…I am more or less living on alms”. In spite of prosecution and harassment, the Hungry Generation has continued to produce and publish poetry and prose. Acid, destructive, morbid, hallucinatory, nihilistic, outrageous, obscene, mad, shrill---these characterize the terrifying and cleansing visions that the Hungrealists insist Indian literature must endure. With few exceptions, contemporary Indian literature is school master’s stuff: pallid, otiose, and dull. It is timid and moralistic, and when it is not politely realistic, it is romantic and aimlessly and endlessly philosophical. Bhabani Bhattacharya and Ruth Prawer Jhabvala are among the exceptions, the one possessing a dank tartness like that of Albert Cossery, the other the lucid wit of Jane Austin. But only the Hungry Generation, excluded from the academies and the literary aristocracy, can the fullness of urgency and despair be seen, for they more than any other group have realized that there is very possibly no hope for India, that what lies ahead is chaos and collapse. They are not revolutionaries, only mourners. Revolution is pointless when betrayal has been so deep. All that remain is to protest, scream, love everything to foolishness---especially India---then nod wisely and callously at death. (Courtesy: Tribal Press, Washington DC. 1965)

The Hungryalist Controversy : Prof S. Mudgal

 The Hungryalist Controversy by Prof S. Mudgal

No other literary event has consistently remained as controversial in Bengali literature during this century as the Hungryalist movement since its eruption in 1961. This literary movement was launched by Malay Roychoudhury, Subimal Basak, Debi Ray, Saileswar Ghose, Basudeb Dasgupta, Tridib Mitra, Subhas Ghose, Falguni Ray and Arunesh Ghose who were in their early twenties at that time. They had coined Hungryalism from the word ‘Hungry’ used by Geofrey Chaucer in his poetic line In The Sowre Hungry Tyme. The central theme of the movement was Oswald Spengler’s idea of History, that an ailing culture feeds on cultural elements brought from outside. These writers felt that Bengali culture had reached its zenith and was now living on alien food.

The majority of Bengalies having almost an instinctive inclination for Marxist ideology during the post-independence era, Oswald Spengler’s prophecy of doom and disaster was the first salvo of controversy which made the Hungryalists unacceptable to leftist media and professors for almost two decades. It was the individual genius of such authors as novelist Subimal Basak and poet Malay Roychoudhury that the barriers were broken. Subsequent researchers such as Dr Uttam Das of Calcutta University, Prof Nandalal Sharma of Chittagong University and Prof Howard McCord of Washington State University, however, had explained that the social commitment in the Hungryalist writers over the years alleviated the fear of political leftists. The contribution of Prof Sankha Ghosh of Jadavpur University can not also be ignored who had made utmost efforts to sponsor and praise the Hungryalist poet Saileswar Ghosh. It is the undercurrent of nationalist feeling that has kept them in good stead and cut through shallow political controversies. Nevertheless, very often their nationalism itself has led to controversy as the Hungryalists have been criticizing politicians of all hue.

All of these poets and writers had a lower income-group background and the milieu contributed a special suburban nuance in their writings. The established Bengali critics, overtly and covertly being elitist in the 1960s, detested this milieu, and the Hungryalists became controversial. Even their habits, dress sense, choice of words, friends circle became controversial issues. However, over the years as these writers and poets became financially in a better position, things changed, and the tenor of such criticism gradually faded out. One of the Hungryalists, viz., Debi Roy, became Secretary of Indian Writers Association.

Another element of controversy has been the way of their expression which probably did not suit the sophisticated Bengali intelligentsia. Initially they used to publish handbills which carried their writings, and these used to be distributed in Calcutta College Street Coffee House, colleges and newspaper offices. The papers on which these were printed were intentionally very cheap and coloured to hurt elite sensibilities. Poetry recitals were held by them in country-liquor shops, temples, brothels, street junctions and graveyards as a matter of protest to exorbitant charges of regular halls. Some of the authorities of these halls did not allow them to book the auditorium on the ground that they were vulgar. It may seem strange now that in the Calcutta Book Fair of 1988, Subimal Basak’s Anthology of Superstitions was sold out on the first day, and the publisher of Malay Roychoudhury’s collection of poems Medhar Batanukul Ghungur was virtually mobbed by college students. It could not be an overstatement that some of the Hungryalists have become legends.

The main controversy obviously relates to their writings. Subimal Basak’s Chhatha Matha is a novel written in the dialect of East Bengali tongawallas which captures the very essence of the street life of a decaying generation, of people who have lost their origin, of disaster and beyond. The language is difficult as it is not spoken by all. The raging controversy is whether such a work can be called a piece of Art. The amusing part of this controversy is that the book, when read out to the common man of East Bengali origin, is understandable to him because it is his language which the upper class people have taken care to forget.

Malay Roychoudhury is not only a controversial Hungryalist but probably is the most controversial poet among the Bengalies today. He was even arrested and sentenced for one of his poems by a lower court, although the High Court rescinded that order in 1966. But his poems remain at a distance from the general run of Bengali poets. As his publisher’s write-up says, if poetry can be deadly then he is the deadliest of Bengali poets; the designs of his poems are sinister, the images are violent and vicious. His poems are a bizarre world of flashing knife, midnight knocks, slaughtered rainbows and battered rivers, as if the poet is an antisocial character. In his poem Alo (Light) Malay has depicted the use of light in a torture chamber where light is not enlightening but is negative.

Basudeb Dasgupta in his collection of short stories Randhanshala had a remarkable idea of transplanting revolution. The hero of the story stirs the water in a glass with his finger, and cuts off the ripple of water with a blade for fixing it on the head of his friend to make the hair curly. This has been objected to by many critics as simplification of idealism. In his latest novel Mrityuguha, Basudeb has raked up the controversy again in which the hero washes utensils, and sings the ‘International’ with his pupils where he is a teacher.

The controversies do not end here. The Hungryalists insist that they are unable to forget their past. If you invite them for a dinner, they may belch and fart openly, sit cross-legged on the sofa,, make slurping-chomping sound while eating, laugh loudly, use incorrect English, talk in Hindi or Bengali, use shabby dresses and shoes, humiliate the bourgeois, get drunk, etc. A Hungryalist will try to prove that he is hundred percent Indian. Some of the major Hungryalists have even refused invitations to foreign universities or poetry readings. This might be one of the reasons why they are not invited by Doordarshan (Govt TV Channel), although Subimal Basak had been invited to attend seminars organized by Bharat Bavan of Bhopal. Malay Roychoudhury has given at least five interviews during the last couple of years.

The various controversies have actually strengthened the position of the Hungryalists authors, inasmuch as they have revealed the tenacity of independent thinking against all odds, which incidentally is in short supply among the present day Indian intellectuals who are always at the beck and call of the Establishment. Through these controversies the Hungryalist authors have proved their Indianness as well as their sincerity, that they are the only avant garde in Bengali culture today, that they are the voice of conscience, that they are the hope for the future. Controversy is essential for any living society. By being controversial the Hungryalists have consistently tried to capture and retain the centre-stage of Bengali culture, since various vested interests have been trying to dislodge them from that place during the last thirty years. But the Hungryalists are here to stay, and ignoring them will be a crime towards Art and literature.

(Courtesy: U.S.Bahri, Editor, Language News, Shahadra, Delhi. 1988)


লোভের ফাঁদ পেতে প্রতিষ্ঠান যে আপনাকে টুপি পরিয়ে দিয়েছে তা আপনি নিজেই জানতে পারেননি


 

বুধবার

অনুপম মুখোপাধ্যায় : মলয় রায়চৌধুরীকে নিয়ে ১টি পুনরাধুনিক কাজ

অনুপম মুখোপাধ্যায় : মলয় রায়চৌধুরীকে নিয়ে ১টি পুনরাধুনিক কাজ এই মুহূর্তে, অর্থাৎ ২০১৯-এর পশ্চিমবঙ্গে এই যে উত্তপ্ত মে মাস চলছে, লোকসভা নির্বাচনের দামামাকে দূরাগত ঢক্কানিনাদ মনে হচ্ছে, যেন আমরা যে ট্রাইবের অন্তর্গত তার বিরাট পরবটি এসে পড়েছে, ঠিক এখনই, এই ভূতের নাচের মধ্যে, অশীতিপর মলয় রায়চৌধুরীকে আমার ভারতের একমাত্র বাংলাভাষী আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক বলে মনে হয়। আজ তিনিই একমাত্র জীবিত আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক ভারতীয় বাংলা ভাষায়। এটা আবেগ থেকে বলছি না। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকেও বলছি না। এটা ঘটনা। ষাটের দশক থেকে আজ অবধি মলয় রায়চৌধুরীর সারাজীবনের সাহিত্যিক কাজকর্ম দেখলেই সেটা বোঝা যাবে। এই মুহূর্তেও তিনি প্রচুর লিখছেন, কিন্তু, মৃত্যুচেতনার সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করছেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে তাঁর সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে এই বয়সে এসে একরকম অনিশ্চিত হতাশাও হয়ত তাঁকে ঘিরেছে। কিছুদিন আগে আমাকে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে লিখেছেন- ‘আমাকে নিয়ে তো কেউ লেখে না! কী হল এত লিখে?’ এই জিজ্ঞাসার ন্যায্য হতাশা হয়ত শেষ জীবনে সবারই প্রাপ্য থাকে। যদি খুব ভুল না করে থাকি, রবীন্দ্রনাথও তাঁর শেষ জীবনে এই বোধটা থেকে মুক্তি পাননি। এটা বাংলাদেশ। এখানে বড় গাছগুলোকে আগাছারা আড়াল করতে পারে, কী করে পারে সেটা একটা দীর্ঘ প্রবন্ধের বিষয় হতে পারে, এখানে অপ্রাসঙ্গিক। তাছাড়া এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি পচে যাওয়া মাখনের মতো। তার বিশ্লেষণ হয়, কিন্তু ব্যাখ্যা হয় না। মলয় রায়চৌধুরীও সেই ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করে অসফল। তাই, যেটা তাঁর সফলতা, শেষ অবধি সেটা তাঁর কবি আর গল্পকার সত্বার জয়। প্রাবন্ধিক মলয়ের নয়। মলয় রায়চৌধুরী সেই ধুরন্ধর সাহিত্যিক যিনি জানেন সারা পৃথিবীতে কী লেখা হয়েছে, কী লেখা হচ্ছে, এবং সেই অনুসারেই তিনি জানেন আর কী লেখা যেতে পারে। কোন লেখা তাঁর অপেক্ষায় আছে, লিখতে বাকি আছে, এই মোক্ষম সচেতনতা ব্রিটিশ ভারতে বাঙালি সাহিত্যিকদের অনেকের মধ্যে ছিল। স্বাভাবিকভাবেই ছিল, কারণ তখন কলকাতা ছিল পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর, উপমহাদেশের রাজধানী, সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শহর, রামমোহন-বিদ্যাসাগর-ডিরোজিও-মাইকেল-বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দের শহর, তখন সারা ভারতের মধ্যে কোনো চিন্তা প্রথম জাগ্রত হত বাঙালির ধূসর পদার্থে। আজ যা পরিস্থিতি, মলয় রায়চৌধুরীর মতো একজন লেখকের লেখা বোঝার লোক খুব কমে গেছে। তিনি জনসাধারণের জন্য লেখেন না, এটাই যদি সাধারণ চিন্তা হয়, সেটা আমি মেনে নিতে পারি না। মলয়ের কবিতার মধ্যে ‘পিপল’স পোয়েট’ হয়ে ওঠার শক্তি এখনকার যে কোনো কবির চেয়ে বেশি। মানুষ যে তাঁর কবিতা পড়ল না, তার একমাত্র কারণ তাঁর কবিতাকে মানুষের কাছে যেতে দেওয়া হল না। তাঁর উপন্যাস বেস্ট সেলার লিস্টে পাকাপাকিভাবেই থাকত, যদি তিনি প্রতিষ্ঠানের কাছে মাথা বিকোতেন, অথবা, প্রতিষ্ঠান তাঁর জন্য নিজের দিশা বদলাত, যদি তার আদৌ কোনো দিশা থেকে থাকে। আজ সেই লংকা নেই, কারণ অন্যরূপে রাবণ থাকলেও তার দশ মাথা নেই, অথচ যেদিকে তাকাবেন দেখবেন রাবণ টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে, এই হয়ত মলয় রায়চৌধুরীর ব্যাখ্যাকৃত পোস্টমডার্ন পরিসর। যদিও, আমার মতে, যেমন আমি আমার পুনরাধুনিক বিষয়ক গ্রন্থে দেখিয়েছি, এই পরিসর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই কলকাতায় এসে পড়েছিল। মলয় রায়চৌধুরী এবং সমীর রায়চৌধুরী সেটাকে শনাক্ত করেন নব্বইয়ের দশকে, কিন্তু এমনভাবে করেন যেন সেটা সেই মুহূর্তেই প্রকটিত হল। জীবনানন্দ দাশ বা সমর সেনই যে তিরিশের দশকেই বাংলা কবিতার পোস্টমডার্ন এনে ফেলেছিলেন, মোটেই ৯০ দশকীয় কোনো পত্রিকার কাজ সেটা নয়, এটা কেন বলে ওঠেননি, আমার কৌতূহল আছে। ষাটের দশকে মলয়েরই নেতৃত্বাধীন হাংরি আন্দোলন কি প্রথম পোস্টমডার্ন সাহিত্য আন্দোলন নয় বাংলা ভাষার? অবিশ্যি পোস্টমডার্নে কোনো নেতা তো থাকতে পারে না। তাতে আর অসুবিধা কোথায়? ওই আন্দোলনের অন্তর্ভুক্তজনেদের মধ্যে অধিকাংশই তো মলয় রায়চৌধুরীকে তাঁদের নেতা আজ আর মানেন না, তাঁকে হেয় করেন, তাঁদের কার কারও সন্তানরাও মলয়ের প্রতি বিদ্বিষ্ট, এমনকি এমন অনেকেই আছেন যাঁরা মলয়কে হাংরি আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বাদ দিয়ে স্বস্তি পেতে চান। শ্রীকৃষ্ণকে বাদ দিয়েই কুরুক্ষেত্র হয়ে যাবে, সেই চেষ্টাটাও ভেরি মাচ পোস্টমডার্ন, তাই নয় কি? হাংরি আন্দোলনের শত্রুরাই আজ ঠিক করে দিচ্ছে হাংরি আন্দোলনের ইতিহাস, এ এক প্যারাডক্স। আবার এটাও ঠিক, মলয় এগুলো নিয়ে না ভাবলেই পারেন। হাংরি আন্দোলন নিয়ে তিনি এই ২০১৯-এও বেশ অবসেসড্‌। ৫০ বছর আগে ফেলে আসা আন্দোলনটিকে তিনি আজও ভুলতে পারেননি। নিজেই ব্লগ বানিয়ে তার আর্কাইভ করেন। আজও হাংরি নিয়ে গদ্যের পর গদ্য লেখেন। এই অবসেসন তাঁর সাম্প্রতিক সাহিত্যকর্মে কিছুটা হলেও ছায়া ফেলে থাকবে, এমন আশঙ্কা মাঝেমধ্যে আমার মাথায় এসেছে। আত্মবিস্মৃত বাঙালিকে তিনি কি কিছুটা পটাতে চাননি এই একটা ব্যাপারে? এই একটাই ব্যাপারে? দিল্লিতে ভারতের রাজধানী চলে যাওয়ার পরে, দেশভাগের দ্বারা বাঙালিকে ২ টুকরো করে দেওয়ার পরে, কংগ্রেস-নকশাল-সিপিএম-মাওবাদ-তৃণমূল-বিজেপি বিন্দুগুলিকে স্পর্শ করে করে আজ বাঙালি ভারতের একটি প্রান্তিক রাজ্যের অবহেলিত ফতুর জনসাধারণে পুনরায় রূপান্তরিত হয়েছে, পলিটিক্স সাহিত্য আর সংস্কৃতির দিক থেকে বাঙালি আজ অধঃপতিত হয়েই চলেছে, যেমন অবস্থায় সে প্রাক্‌-ব্রিটিশ যুগে ছিল, কোনো মোগল সম্রাটের তখন বাংলাদেশে পা রাখার প্রয়োজনই হত না, আজ পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রীয় মূল্য ৪২টা লোকসভা আসনেই চুকিয়ে ফেলা যাচ্ছে। তার ফলেই সিনেমা বা সাহিত্যের চেয়ে পলিটিক্স আজ অনেক বেশি অন্তঃসারশূন্য ও দক্ষিনী সিনেমার চেয়েও এন্টারটেইনিং। মন খারাপ হলে মুখর নেতা বা মুখরা নেত্রীর স্ট্যান্ড আপ কমেডি ভিডিও দেখে নেওয়া যাচ্ছে ইউটিউবে গিয়ে, এবং হা হা হো হো করে নেওয়া যাচ্ছে। মলয় রায়চৌধুরী এটাকেই পোস্টমডার্ন পরিসর বলবেন, যথার্থই বলবেন, কিন্তু এই পরিসর তাঁকেও যথেষ্ট হেনস্থা করছে, কারণ, তাঁকে এখানে অনেকেই বুঝতে পারছে না, না বুঝে রিঅ্যাক্ট করছে, বুঝেও চুপ করে থাকছে, তাঁরই ব্যাখ্যা করা পরিসরে তিনি স্বয়ং কি যথেষ্ট বেমানান নন? সেটা না হলে তিনি বড় নন। মলয় রায়চৌধুরীর স্বাভাবিক বিরোধাভাসটা এই যে, তিনি নিজেকে ছোটলোক ইত্যাদি দাবি করেও, বাঙালির সামগ্রিক হড়কে যাওয়ার কবন্ধ শরিক হননি, বিশেষ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক খুড়োর কলে নিজেকে জুড়ে ফেলেননি, বরং নিজেকে সারা পৃথিবীর সাপেক্ষে জায়মান লেখক করে তুলতে পেরেছেন। তাঁর উপন্যাস এবং কবিতা এবং প্রবন্ধকে প্রাদেশিক চেতনার বাইরে দাঁড়িয়ে পড়া যায়। এটা এই মুহূর্তে জীবিত দ্বিতীয় কোনো বাঙালি সাহিত্যিক সম্পর্কে আমি বলতে পারছি না। এটা আমার অজ্ঞতাপ্রসূত হলেও, দৃঢ় ধারণা, এবং কোনো প্রশংসাবাক্য নয়। একজন লেখকের জীবনে প্রায়ই এটা ঘটে যে, তিনি নিজের জন্য একটি লাগসই ভাবমূর্তি বেছে নিলেন, কিন্তু নিজেকে সেই মাপে ঢালতেই পারলেন না। মলয় রায়চৌধুরীর ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। তিনি নিজেকে বিহারের ইমলিতলা থেকে উঠে আসা ছোটলোক হিসাবে পেশ করতে চাইলেন, কিন্তু হাড়ে হাড়ে বোঝা গেল এই লেখকটি সাবর্ণ রায়চৌধুরীর বংশপরিচয়েই অধিক মানানসই, কারণ, মলয়ের মধ্যে যে আভিজাত্য আছে, যে আত্মসচেতন উদাসীনতা আছে, তা গত ১০০ বছরের বাংলা সাহিত্যে যথেষ্ট দুর্লভ, তাঁর মধ্যে অস্তিত্বের উৎকণ্ঠা থাকলেও বাংলা বাজারের ইতরতা নেই, প্রান্তিকতা যদি কিছু থেকে থাকে, সেটা স্বরচিত। তাঁর আচরণের মানবিক স্তরটিতে আছে এক আশ্চর্য খেঁকুরেপনা, অমরত্বের অদ্ভুত উদাসীন বাসনা আর দুর্দান্ত সেন্স অফ হিউমারের মিশ্রণ, যেটা তিক্ত যোদ্ধাকে মানায়, ব্যর্থ প্রেমিককে মানায়, প্রতিষ্ঠার ভিখারী বা প্রতিষ্ঠানের দালালদের কিন্তু মানায় না। মলয় নিছক ছোটলোক নন। তিনি একজন অভিজাত ছোটলোক। ছোটলোক অভিজাত নন। বলা বাহুল্য এখানে আমি জাতপাতের কথা বললাম না। মলয় রায়চৌধুরী যে শঙ্খ ঘোষ, দেবেশ রায় বা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়দের চেয়ে ঢের বড় মাপের সাহিত্যিক এটাও মুক্তকন্ঠেই বলতে চাই। কারণ এঁদের মতো তিনি বিগত শতাব্দীর কবিলেখক নন। তিনি একবিংশ শতাব্দির সঙ্গে তুমুলভাবে যাচ্ছেন। হ্যাঁ, তাঁর উপন্যাস থেকে বাংলা সিরিয়াল হবে না। সিনেমাও হওয়া মুশকিল। তাঁর কবিতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে উদাত্ত আবৃত্তি করা চলবে না। মলয় মেজর সাহিত্যিকের ধারণাকে অস্বীকার করেন, সেটা তাঁর কিছুটা গড়ে তোলা এবং কিছুটা আমদানিকৃত তত্ববিশ্বের ব্যাপার। আমি মলয় রায়চৌধুরীর তত্বকে মলয়ের কবিতা আর উপন্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা খুব জরুরি মনে করি না। আমি মেজর সাহিত্যিকের ধারনায় কঠিনভাবে বিশ্বাস করি, এবং, মলয় রায়চৌধুরীকে একজন যথার্থ মেজর সাহিত্যিক বলে মনে করি। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। একবার সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বলেছিলাম কবি হিসেবে শঙ্খ ঘোষের জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল না, বাঙালি কাউকে দিতেই হলে ওটা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে দেওয়া যেত। আমার এই উক্তিতে ভীমরুলের চাকে ঢিল পড়ে যায়, এবং অনেকের দ্বারা আক্রান্ত হই। তাঁদের মধ্যে একজন বদমেজাজি সম্পাদক বলেছিলেন আমি মলয় রায়চৌধুরীর নাম কেন করলাম না জ্ঞানপীঠের যোগ্য প্রাপক হিসেবে। সম্ভবত এই উক্তি যিনি করেছিলেন আমাকে তিনি মলয় রায়চৌধুরীর নিকটস্থ গুণমুগ্ধ একজন ঠাউরেছিলেন এবং ভেবেছিলেন মলয়ের নাম না করাটা আমার অবস্থানের ভণ্ডামি ধরিয়ে দেবে। মজার ব্যাপার হল, সেদিন দেখলাম মলয় রায়চৌধুরী ওই ব্যক্তির ওই উক্তিকে নিজের ব্লগে সযত্নে জায়গা দিয়েছেন, অর্থাৎ গুরুত্ব দিয়েছেন, যদিও নিজে কোনো মন্তব্য করেননি। আজ এই লেখায় স্পষ্ট বলতে চাইব, মলয়কে আমি এই মুহূর্তের বাংলাভাষায় একমাত্র আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক মনে করলেও শুধু জ্ঞানপীঠ কেন অন্য যে কোনো ভারতীয় পুরস্কারের প্রাপক হিসাবেই মলয়ের নাম কল্পনা করতে পারি না। পুরস্কার সর্বদাই উপর থেকে আসে, এবং হাত পেতে সেটা নিতে হয়। সেই পুরস্কারই নেওয়া চলে যেটার উচ্চতা লেখকের চেয়ে বেশি, এবং সেটায় তাঁর কোনো গ্লানি নেই। রবীন্দ্রনাথকে নোবেল প্রাইজে মানায়, রবীন্দ্র পুরস্কার তাঁর নেওয়া চলে কি? জ্ঞানপীঠও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মানাত, তিনি পেয়েওছিলেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মানাত না। মলয় রায়চৌধুরীকে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার দেওয়ার অর্থ তাঁর স্তরকে মাঝারিয়ানায় নামিয়ে এনে তাঁর জায়মানতাকে খতম করে দেওয়া। মলয়ের মতো সাহিত্যিকরা পুরস্কৃত হতে জন্মান না। পুরস্কার তাঁদের মৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দ্যায়। যে কোনো সাহিত্যিকেরই বারোটা বাজায় একটা প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার, কিন্তু তাতে সামগ্রিক বাংলা সাহিত্যের খুব একটা ক্ষতি হয় না। মলয় রায়চৌধুরীকে পুরস্কৃত করলে, কোনো সাহিত্যসভায় ধরে নিয়ে গিয়ে ফিতে কাটালে, কোমর নুইয়ে প্রদীপ জ্বালালে মলয়ের ব্যক্তিগত ক্ষতি কী হবে সে তো বললামই, বাংলা সাহিত্যের অনেক কিছুই ঘেঁটে ঘ হয়ে যাবে, সেই বিচ্ছিরি জট আর খোলা যাবে না। প্রতাপশালী কোনো প্রতিষ্ঠানের দেওয়া মুকুট পরলেই যে ওঁর মাথাটি হাতছাড়া হয়ে যাবে, মলয় সেটা নিজে খুব ভাল জানেন। যে কোনো মুকুটই আসলে একটি সাব্লিমেটেড টুপি। উনি যদি কাউকে মাথা কেটে পাঠান, সেটা প্রেমের উপহার হবে, লোভের নয়। সম্প্রতি ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসে উনি লিখেছেন- ‘প্রতিষ্ঠান কখন আপনাকে টুপি পরিয়ে দেবে আপনি বুঝতেই পারবেন না।’ সম্ভবত এই উক্তি উনি শৈলেশ্বর ঘোষের প্রসঙ্গে করে থাকবেন, এটা আমার অনুমান, কারণ মাথায় শীতের টুপি পরে প্রয়াত শৈলেশ্বর ঘোষ কোনো একটা সাহিত্যমেলা উদ্বোধন করছেন, এমন একটা ছবি সেই সময়ে ফেসবুকে ভেসে উঠেছিল। মলয় এভাবেই খোলাখুলি কথা বলতে পারেন এই বৃদ্ধ বয়সেও, এমনকি, নিজের তথাকথিত রাইভ্যালদের নিয়ে খিল্লি করতেও উনি কোনো দ্বিধা দেখান না। আমার মনে হয়, এটা শিক্ষণীয়। সোনার হরিণের প্রতি এই বেপরোয়া সাহিত্যিকের কোনো লোভ নেই, কারণ তিনি জানেন সোনার হরিণ হয় না, সেটার পিছনে অবশ্যই কোনো মায়াবী ফাঁদ লুকিয়ে থাকে, অনেক বড় কিছু কেড়ে নেওয়ার জন্য। বঙ্কিম পুরস্কার, আকাদেমি পুরস্কার পেয়ে মলয়ের আখের কিছুই গোছানো হবে না। যেটার প্রতি ওঁর আসল লোভ, সেই ইতিহাস তাহলে ভড়কে যাবে। মলয় তাই নিজেকে ইতিহাসে রাখার দায়টা নিজেই নিয়েছেন, এবং ঝাঁপিয়ে পড়েছেন পত্রিকাগুলোর পাশাপাশি ইন্টারনেটকে সম্পূর্ণ ব্যবহার করে নিতে। ইন্টারনেটকে মলয় রায়চৌধুরী যেভাবে ব্যবহার করেছেন, তা শিক্ষণীয়। এটা তাঁর কাছে বাঙালির শেখার আছে। একটা কথা মলয়ের বিরোধিরা প্রায়ই বলে থাকেন, যে মলয় খুব আত্মপ্রচার করেন। নিজের ব্লগ, নিজের উইকিপিডিয়া, নিজের সমস্ত লেখার সংরক্ষণের ব্যাপারে উনি সর্বদা যত্নশীল। নিজের লেখা নিজেই গিয়ে লোককে পড়তে বলেন। নিজের লেখার লিংক কেউ না চাইলেও তার ফেসবুক টাইমলাইনে গিয়ে পোস্ট করে আসেন। বলা বাহুল্য, একজন কিংবদন্তি সাহিত্যিকের কাছে বাঙালি এই আচরণ আশা করে না, এটা বাঙালির অভ্যাস আর প্রত্যাশার বাইরের ব্যাপার। আমি আগেই বলেছি মলয় রায়চৌধুরী অমরত্বের বাসনা রাখেন, ইতিহাসে থাকতে চান নিজের মর্জি অনুসারী ইমেজে। সেটাকে লোভ বললেও কি খুব খারাপ হয়? আমার মতে, মলয়ের অতীতচারিতা অর্থাৎ হাংরি-অবসেসন যদি বাদ দিই, একজন সাহিত্যিকের অমরত্বের বাসনা, যশের আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত, সে বঙ্কিম যাই বলে থাকুন, সাহিত্যক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সফলতার লোভ খুবই প্রয়োজনীয় একটা ব্যাপার। লেখক কোনো সন্ন্যাসী তো নন! কাম ছাড়া যেমন পরিবার হয় না, ক্রোধ ছাড়া যুদ্ধ হয় না, সঠিক লোভ ছাড়া একজন শিল্পীর অগ্রগতি হয় না। ‘অগ্রগতি’ শব্দটাও মলয় রায়চৌধুরীর তত্ববিশ্বে বেমানান। কিন্তু আমার প্রিয়। পরিমিত ও সুনির্বাচিত লোভের দিকে একজন স্রষ্টা এগোবেন, এটা আমি সমর্থন করি। সেই লোভ বাঘের, তাজা রক্ত আর গরম মাংস নিজের সামর্থে লাভ করার, সেই লোভ হায়নার নয় যে যে কোনো একটা মৃতদেহ হলেই চলে যাবে। কেন একজন লেখক তাঁর লেখা একজন পাঠকের সামনে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেবেন না? কেন একজন পাঠককে শিকার করবেন না তিনি! বাঘ যেভাবে তার হরিণকে ধরে, একজন লেখকেরও কাজ তাঁর পাঠককে ধরা, দাঁত এবং নখের সার্বিক প্রয়োগ করে। সভ্যতা ভব্যতা প্রোটোকল এসব ছাপোষা আর ক্রীতদাসদের মানায়, কবিকে নয়। এবং মলয় জানেন, তিনি হাংরি আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ হলেও, তাঁর উপরে অজস্র লেখালেখি হলেও, গবেষণা হলেও, তাঁকে নিয়ে কাজ করে পিএইচডি নিয়ে কেউ কেউ ঘুরে বেড়ালেও, তিনিই স্বাধীন পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র জেলখাটা কবি হলেও, সাধারণ বাঙালি তাঁর নামই আজ অবধি জানে না। তারাই মলয়ের নাম জানে যারা স্বয়ং লেখালেখি করে, অথবা বাংলা সাহিত্যের হার্ডকোর পাঠক। আজ থেকে প্রায় বছর পনের আগে আমি প্রথম মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে আলাপিত হই একজন বিখ্যাত সাহিত্যিককে বিশেষ দরকারে ফোন করতে গিয়ে রং নাম্বার ডায়াল করে ফেলায়। মলয় বুঝতে পেরেছিলেন আমি কাকে ফোন করতে গিয়ে তাঁকে ফোন করেছি। কিন্তু আমি লজ্জিত হলেও, তিনি রাগ করেননি। বরং সাগ্রহে আমার মতো একজন আনকোরা ছোকরাকে জানিয়েছিলেন তাঁর নাম মলয় রায়চৌধুরী, এবং ‘তিনিও’ লেখালেখি করে থাকেন। আমার মনে হয়েছিল নিজের এই পরিচয় তাঁকে দিতে হয়, নিজের পরিচয় নিজেই দিতে তিনি অভ্যস্ত, কারণ তাঁর সঙ্গে জনসাধারণের পরিচয় করে দেওয়ার এজেন্সি তাঁর কাছ থেকে কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান নেয়নি, তিনিও দেননি। এটা শিক্ষণীয়। আমি তাঁর কাছে এটা শিখেছি। আমি যে আজ নিজের ঢাক বাজাতে কোনো দ্বিধা করি না, কারণ আমিই প্রথম নই, আমার আগে মলয় আছেন। পোস্টমডার্ন মলয় নন। বাঘ মলয়।

সোমবার

Hungryalist Movement - The Anti-Establishment Pioneers : Dr indrajit Bhattacharya

Anti-Establishment Pioneers The Hungry Generation Movement in Bangla literature and painting, also known as Hungryalism, Hungrealism, Hungry Andolon, Sarvagrasa, Khutkatar, Khsudharta, Bhukhi Peedhi, which shook post-colonial Bangla culture with an intensity comparable to the impact of pre-colonial Young Bengal social movement, was the brain-child of Malay Roychoudhury who, after his post-graduation, was working on an essay on ‘the philosophy of history’, when he came across the book The Decline of the West written by Oswald Spengler. Though Malay did not accept the Spenglerian philosophy, he was impressed with the argument that history should not be construed in a linear progression, but flowering of a number of cultural inclinations, each with a characteristic spiritual tone, or conception of the space within which they act. This was a decisive break with the Hegelian concept of history as a process governed by reason. For 22 year old Malay, who had already conceived of a programme to launch a movement in Bangla literature and painting, Spengler cast a spell in view of the post-colonial and post-partition nightmare that had overtaken Bangla culture, especially when compared to the time and space of 19th century Bangla renaissance. Oswald Spengler’s metaphor was biological. That is, cultures go through a self-contained process of growing, reaching a crescendo, and withering away. This decay may be withstood if the culture feeds on alien diet. A culture is self-creative during ascendancy, but once the rot sets in, the culture, instead of creating from within, starts engulfing and assimilating contributions from outside. Its demand for outside elements becomes insatiable during descend. This process was termed as hunger by Malay when he came across Geoffrey Chaucer’s stunning line ‘In The Sowre Hungry Tyme’. In 1959-1960, post-partition Bangla polity was definitely on the downslide of sour time of putrefaction. Today, when we look at West Bengal, the Hungryalist premonition appears prophetic. 2. Socio-cultural sarvagrasa, or devouring as a concept, that Malay was trying to put into a contemporary mould, had Indian puranic connotations inasmuch as lord Shiva became sarvagrasi when he drank the poison that up-welled in the aftermath of churning of the seas (samudra manthana) by gods and demons in order to protect the universe. Initially Malay had decided to use the term ‘Sarvagrasi Prajanma’ or the ‘Devouring Generation’. He felt, quite rightly, that such a term would not be authentically acceptable, and may even carry wrong signals. He opted for the words ‘Hungry Generation’. The word Hunger or ‘Khaoa’ in Bengali is used as a signifier for various activities. For example, one may eat the breeze for a stroll, eat a somersault for a loss, eat money for bribe, eat happiness for a contended life, eat cannabis for incorrect message, eat broomstick for dismissal, eat the head for spoiling, eat fear to get terrorized, and many such images are commonplace with the word ‘Hungry’ in Bangla. Later, when a large number of writers, poets and painters joined the movement, ‘Hungry’ was open to interpretation in a manner that a particular participant preferred. This open-endedness would have been difficult with the words ‘Devouring Generation’. Nevertheless, the appellation had later been banalised by some participants, especially by those who were trying to re-root in India after partition; they glorified poverty in the name of ‘Hungry’ movement. In the ‘Overviews’ which Malay wrote for Postmodern Bangla Poetry (2001) and Postmodern Bangla Short Stories (2002) both edited by his elder brother Samir (one of the founder member of the movement), he has elaborated upon the cultural, aesthetic, socio-political, literary-historical factors which forced the movement to burst upon the Bangla space in November 1961. I would prefer to draw on his arguments that, like in any other language, Bangla literary modernism had its own contradiction between radical disruption of form and traditionalism of content and ideology, as were exemplified in pre-Hungryalist literatre, inasmuch as Parichay(1931), Kallol (1932) etc periodicals were managed, written, defined and canonized within Kolkatacentric middle class values, and identified themselves with the occidental canons and discourses, whereas Krittibas (1953) and Notun Reeti (1958) adopted a mode of counter-identification by staying within the governing structure of above ideas, with a mix of Soviet discourse in case of some authors. They combined aesthetic self-consciousness and formalist experimentation. The Hungryalists wanted to go beyond the structure of oppositions and sanctioned negations of the discourse through de-identification. Krittibas and Notun Reeti poets and writers had ultimately degenerated into traffickers of immoral discourse which completely destroyed the achievements of 19th century reformers. The Hungryalist movement aspired to locate itself in an essentially adversarial relation to aesthetic realism. 3. Malay discussed his ideas with his friend Debi Ray, elder brother Samir, and Samir’s friend Shakti Chattopadhyay, and all of them agrred to launch the movement by publishing a weekly bulletin to be funded by Malay, and if required, by Samir. Shakti was requested to take up leadership, a decision later regretted by both Samir and Malay as a socio- aesthetic blunder, a decision for which they were criticized by participants who had subsequently joined the movement. Debi Ray, whose real name is Haradhon Dhara, was to be editor, and his Howrah slum-residence to be used for correspondence. Haradhon Dhara belonged to subaltern caste, and the decision was intentional, as prior to him subaltern authors were not given any space at all. However, there were printing problems at the outset as the printing presses at Patna, a Hindi speaking town, did not have sufficient Bangla typefaces. The only press which could have had printed them, refused to entertain. Malay was thus forced to draft the text of the first bulletin in English. The first one-page bulletin, as follows, appeared in November 1961:- ----------------------------------------------------------------------------------------------------------- WEEKLY MANIFESTO OF THE HUNGRY GENERATION Editor: Debi Ray Leader: Shakti Chatterjee Creator: Malay Roychoudhury Poetry is no more a civilizing maneuver, a replanting of the bamboozled gardens; it is a holocaust, a violent and somnambulistic jazzing of the hymning five, a sowing of the tempestual Hunger. Poetry is an activity of the narcissistic spirit. Naturally, we have discarded the blankety-blank school of modern poetry, the darling of the press, where poetry does not resurrect itself in an orgasmic flow, but words come out bubbling in an artificial muddle. In the prosed- rhyme of those born-old half-literates, you must fail to find that scream of desperation of a thing wanting to be man, the man wanting to be spirit. Poetry of the younger generation too has died in the dressing room, as most of the younger prosed -rhyme writers, afraid of the Satanism, the vomitous horror, the self-elected crucifixion of the artist that makes a man a poet, fled away to hide in the hairs. Poetry from Achintya to Ananda and from Alokeranjan to Indraneel, has been cryptic, short-hand, cautiously glamorous, flattered by own sensitivity like a public school prodigy. Saturated with self-consciousness, poems have begun to appear from the tomb of logic or the bier of unsexed rhetoric. Published by Haradhon Dhara from 269 Netaji Subhas Road, Howrah, West Bengal, India The bulletin, which appears quite innocent today, had taken Kolkata by storm, as Debi Ray had arranged to get it distributed in one single day at the intellectual joints, offices of periodicals and college campuses. There was no cultural precedence to this kind of literary behavior for people to relate to. The move had attacked all strata of the Establishment and annoyed anyone who mattered. However, Shakti felt disturbed because of references to the four poets named in the last paragraph. The bulletin was, therefore, reprinted in December 1961 wherein the last paragraph was changed, and an additional paragraph added, as under:- “Poetry around us these days has been cryptic, shorthand, cautiously glamorous, flattered by own sensitivity like a public-school prodigy. Saturated with self-consciousness, poems have begun to appear from the tomb of logic or the bier of unsexed rhetoric. Poetry is not the caging of belches within form. It should convey the brutal sound of the breaking values and startling tremors of the rebellious soul of the artist himself, with words stripped of their usual meaning and used contrapuntally. It must invent a new language which would incorporate everything at once, speak to all the senses in one. Poetry should be able to follow music in the power it posses of evoking a state of mind, and to present images not as wrappers but as ravishograms.” The revised bulletin was again reprinted in 1962. In November 1963 it was printed for a third time under the heading ‘The Hungryalist Manifesto on Poetry’, and names of 25 participants printed on the flip-side. Meanwhile several other manifestoes and bulletins were published and distributed freely, which caused the number of participants to cross 40 in January 1964. Samir had brought in his friends Sandipan Chattopadhyay, Utpalkumar Basu and Binoy Majumdar; Malay had brought in his friends Subimal Basak, Sambhu Rakshit, Tapan Das, Anil Karanjai and Karuna Nidhan Mukhopadhyay; Subimal Basak had brought in his friends Tridib Mitra, Alo Mitra and Falguni Ray; Shakti had brought in Arupratan Basu, Pradip Choudhuri and Basudeb Dasgupta; Debi Ray had brought in Subo Acharya, Subhas Ghosh, Satindra Bhowmik, Haranath Ghose, Nihar Guha, Saileswar Ghosh, Amritatanay Gupta, Ramananda Chattopadhyay, Sunil Mitra, Shankar Sen, Bhanu Chattopadhyay, Ashok Chattopadhyay, Jogesh Panda and Manohar Das. Anil and Karuna, who were painters, brought in painters Subir Chatterjee, Bibhuti Chakrabarty, Arun Datta and Bibhas Das into the fold of the movement. Hungry Generation had become a socio-cultural force to reckon with. 4. In view of such a large and unwieldy gathering, and frequent one-page publications, certain events took place which never had happened earlier. Rajkamal Choudhry carried the movement into the domain of Hindi literature; Ameeq Hanfee into Urdu; ‘Pank Ghentey Pataley’ group in Assam; poet Parijat into Nepali literature; and a group in the then East Pakistan comprising of Rafeeq Azad, Abdullah Abu Sayeed, Abdul Mannan Sayad, Asad Choudhury, Shahidur Rahaman, Mustafa Anwar, Faruque Siddiqui, Mahadeb Saha, Shahnur Khan Kaji Rab carried the dynamics to Bangladeshi literature. The movement gathered a decentering quality, inasmuch as each participant was free to publish a bulletin, which Shakti, Utpal, Binoy, Anil-Karuna and Rajkamal had done, though funded either by Malay or Samir. The handbill-type bulletins were also aesthetically anti-occidental, since they could not be preserved for an immortal space in history. More than 100 bulletins were published in the movement’s life-span between 1961 and 1965, out of which only a dozen or so are traceable. Excepting for Debi Ray, Tridib and Alo Mitra, who were stationed at Howrah, across Kolkata, most of the participants came from outside the metropolis. They belonged to the periphery. Subimal, like Malay, came from Patna; Samir was Chaibasa-based; The Ghosh brothers, Subhas and Saileswar, were from Balurghat; Shakti was from Jaynagar-Majilpur; all the painters were from Varanasi; Pradip Choudhuri, originally from Tripura, was based at Shantiniketan; Subo Acharya was at Bishnupur and Ramananda Chattopadhyay at Bankura. The Hungryalist movement thus developed spatial qualities instead of time-centric features of earlier post-Tagore literary generations. Hungryalism emerged as a post-colonial counter-discourse. In the first bulletin itself the movement gave a battle cry against ‘modern poetry’, as well as against the ‘tyranny of logic’. Till then the concept of modern and logical progression of the text was considered the ultimate in literary canons. From 1961 onward as the movement gathered momentum and participants, by 1963 it was on the verge of activating extrication from occidental canons and discourse, which was articulated in a trilingual (Bengali-Hindi-English) cylostyled bulletin by Subimal Basak and Rajkamal Choudhary, as under:- PREVAILING CANONS 1. Establishment 2. Tyranny 3. Insiders 4. Elite high-brow culture 5. Satisfied 6. Cohesive 7. Showy 8. Sex as known 9. Socialite 10. Lovers 11. Ecstasy 12. Unmoved 13. Hatred as camouflage 14. Art films 15. Art 16. Sugam sangeet( Tagore songs) 17. Dream 18. Tutored language 19. Redeemed 20. Framed 21. Conformist 22. Indifferent 23. Mainstream 24. Curiosity 25. Endocrine 26. Conclusions inevitable 27. Ceremony 28. Throne 29. Entertainer 30. Self-projecting 31. How am I 32. Symmetrical 33. Accountants of prosody 34. Revising poems 35. Fantasy’s game HUNGRYALIST CANONS Anti-Establishment Protester Outsiders Commoners’ culture Unsatisfied Brittle Raw-bone Sex as Unknown Sociable Mourners Agony Turbulent Real hatred All films Life Any song Nightmare Gut language Unredeemed Contestetory Dissident Struck ethically Watershed Anxiousness Adrenalin No end to unfolding Celebration Abdication Thought provoker Self-effacing How are you Tattered and decanonised Extravagance Continuous revision of life Imagination’s flight 5. At the peak of the movement, Binoy Majumdar developed schizoid problems. Shakti was pressurized by literary guardians to leave the movement and issue anti-Hungryalist statements. Sandipan Chattopadhyay was lured by a mass circulation periodical with an assurance to publish his novel provided he leave the movement. Sunil Gangopadhyay, in his editorial in Krittibas, castigated the movement. As a result several fence-sitters were caught in an intellectual bind. These writers ultimately devoted themselves to prolific commercial writing. By the middle of 1964 only Utpal, Samir, Malay, Debi, Subimal, Subhas, Saileshwar, Pradip, Karuna, Anil, Tridib, Alo, Falguni, Subo and Ramananda remained in the movement. The departure of fence sitters proved to be a positive factor. The process hastened the collapse of aesthetic realism, leading to gradual deconstruction and dissolution of high and subaltern cultural distinctions. Hungryalist texts developed subversive and multi-vocal semiotic and semantic features. The mono-centric correctness as demanded by the then ruling academicians were being constantly attacked by the participants. In case of prose writers such as Samir, Falguni, Subhas and Subimal, as well as in the dramas written by Malay, textual reality developed as complexities of heteroglossia. The academic standards had started dwindling in West Bengal one and half decade after the departure of the Empire, mainly because of the incessant post-partition influx which corroded the Bangla intellectual and social fabric. There were no multi-disciplinary critics comparable to the 19th century stalwarts. The critics themselves were colonial constructs. They were oblivious of the fact that all knowledge is partial, embodied knowledge, produced by particular groups, communities, sects, governments, media, universities, schools, families, localities and persons, for particular purposes, within particular contexts. Their claim to speak on behalf of all Bengalies, restricted plurality and tolerance. In order to denigrate the Hungryalist movement, the print-media based critics started comparing the Hungryalist movement with Angry Young Men of England and Beat Generation of USA, assuming that texts could be independent of the motherland of the writer. This was compounded by the fact that Allen Ginsberg, who came to India in 1962, had met some Hungryalists at Kolkata, Patna, Varanasi and Chaibasa in 1963. It was Ginsberg whose poetry and religious life was changed completely because of the Hungryalists. Ginsberg could never again write in the form and technique of Howl and Kaddish; his post-India poems developed features of Bangla poetry. 6. It had become clear by the end of 1963 that three participants, viz. Malay, Debi and Subimal had become key figures of the movement who had picked up certain anti-establishment modules from stories about the activities of ‘Young Bengal’, Vidyasagar and Gandhi. They were being called the Hungry troika and cartoons on them started appearing in dailies such as Basumati, The Statesman and Jugantar. Tabloids and glossy magazines such as Desh, Chatushparna, Darpan, Amrita, Now, Janata, Link, Anandabazar, Blitz, Naranari, Jalsa etc attempted to sensationalize news about the Hungryalists. The daily Jugantar wrote its main editorial, twice, for them. The daily Searchlight of Patna issued a special supplement on the movement. In other Indian languages periodicals that covered their activities were Dharmayug, Gyanodaya, Dinaman, Saptahik Hindustan, Nayee Dhara, Yugprabhat, Vatayan, Anima, Ingit, Jansatta, Lahar, Asso, Adhikaran, Bharatmail etc. One evening Subimal was encircled and threatened in front of the College Street Coffee House (Albert Hall) by a literary group comprising of Bimal Raychoudhuri, Shankar Chattopadhyay, Pranabkumar Mukhopadhyay, Parbati Mukhopadhyay, Dipak majumdar, Sharat Kumar Mukhopadhyay, Belal Choudhuri, Bijon Ray, Rupendra Basu, Dhiresh Bagchi, Samir Sengupta, Tarapada Ray, Shanti Kumar Ghosh and Shakti Chattopadhyay. Sunil Gangopadhyay, who was in USA on a USAID funded trip, wrote a bizarre letter to Malay, a letter which has since gained special significance in Bangla literary history. Meanwhile, the under-noted political manifesto created a great turmoil in the Bangla administration:- Hungry Generation Bulletin No. 15 The Political Manifesto of Hungryalist Movement To depoliticize the soul of each solitary individual. To let every individual realize that existence is pre-political. To let it be noted historically that politics invites the man of the third quality, aesthetically the most lowest substratum of society, at its service. To make it clear that the conceptions of Elite and that of the Politician differ absolutely after the death of Gandhi. To declare the belief that all intellectual fakeries called political theory are essentially the founts of fatal and seductive lies erupting out of abominable irresponsibility. To demarcate the actual position of a politician in a modern society, somewhere between the dead body of a harlot and a donkey’s tail. To never respect a politician, to whatever species or organism he may belong to. To never escape from politics, and at the same time, neither let politics escape from the terror of our aesthetic being. To remodel the basis upon which political creeds are founded. __________________________________________________________________ Today, when we look at Indian politics we are stunned by this prophetic discourse delivered more than 40 years ago. The Hungryalists further confounded the situation by the slogan PLEASE REMOVE YOUR MASK printed on paper-masks of jokers, demons, animals, ghosts, Hindu gods/goddesses etc. and mailed to chief and other ministers, chief and other secretaries, district magistrates, police big bosses, commercial authors, newspaper editors, sundry politicians, that is, anyone who mattered. This action was a piece of sheer genius which has become a part of literary folklore. Another action comparable to actions of 19th century ‘Young Bengal’ was distribution of turmeric-smeared Hindu wedding cards complete with symbols of butterfly and palanquin wherein the ruling school of poetry was vehemently attacked, and the intellectuals indirectly called headless. 7. Manifestoes appeared regularly on short story, drama, religion, criticism, painting, discourse, obscenity, style, diction etc during the peak of 1963-64. Alongside, magazines edited by Hungryalists started appearing quite frequently. Malay edited Zebra; Tapan Das edited Pratibimba; Subimal edited Pratidwandi; Debi edited Chinho; Tridib & Alo edited Unmarga and Waste Paper; Shambhu edited Blues; Pradip edited Swakal/Phooo. The poems and fictions printed therein drew the attention of print-media writers who charged the authors to be swathed in sexual hunger. Literary and news-magazines whose hegemony was threatened, continued their tirade against the Hungryalists almost everyday. Written and verbal complaints against the Hungryalists to the Chief Minister and Calcutta Police Commissioner continued pouring in. There were various allegations, including, conspiracy against the Establishment, corrupting the youth, defamation, violation of Press Act, obscenity, disruption of public decency etc. In the beginning of 1964 Kolkata was agog with rumours of an imminent action against Malay, Debi and Subimal, a scenario that even the Dadaists and Surrealists could not have contemplated. A Deputy Commissioner of Police who later became famous for Naxalite encounters was, incidentally, maternal uncle of a Krittibas group poet. Things obviously moved quite fast. Sunil Gangopadhyay had just arrived back from USA. On September 2nd, 1964 arrest warrants were issued against eleven Hungryalists on charges of conspiracy against the Establishment (Section 120 of Indian Penal Code) and obscenity in literature (Section 292 of Indian Penal Code). Samir, Malay, Subhas, Saileshwar, Debi and Pradip were arrested. Pradip was rusticated from Visva Bharati; Utpal was dismissed from his professor’s job; Malay and Samir were suspended from service; Debi and Subimal were transferred out of Kolkata by their employers. Samir and Malay had to present themselves before a specifically constituted ‘Investigating Board’ which interrogated them for several hours to find out whether they were really involved in any conspiracy. This phase of the Hungryalist movement is the murkiest period in the history of Bangla literature. Shakti and Sandipan, who had moved out of the movement about a year back, volunteered and recorded testimonies against Malay Shakti on 18 February 1965 and Sandipan on 15 March 1965); Subo, Basudeb and Ramananda fled from Kolkata; Subhas and Saileshwar signed good-conduct bonds (on 2nd September 1964) indicating that they had nothing to do with the Hungry Generation movement, and that they will not associate with the movement in future. However, 40 years later when Hungry Generation movement became a legendary proposition, obviously a salable one, these two brothers were the first to claim that they were the genuine Hungryalists! In view of the weak character of majority of the Hungryalists, who testified against Malay in Court, the movement withered away in May 1965. It was in May 1965 that Malay was charge- sheeted by Establishment police and all others were set free. (Case No. GR 579 of 1965, in the court of Presidency Magistrate, 9th court, Calcutta). During the short span of 1961-65 the movement had created an indelible impact on Bangla literature. In an interview to Dhurjati Chanda, Malay had stated that Hungryalism was the first and the last iconoclastic venture in Bangla literature which in retrospect now appears to be a socio-political aesthetic triumph, that artistic freedom in which life was put at stake and the rules of which required brazen acts of impudence to be legitimized by manifestoes. In another interview he gave to Anadiranjan Biswas, Malay had said that the Hungryalist defiant ventures were attempts to wrest the power of definition, distinction and evaluation from those who claimed themselves to be authorities of literary discourse. The writers of West Bengal and Bangladesh who were called 50’s poet were writing pale and stale poems till 1959; they changed completely only after the implosion of the Hungryalist movement. It is a different story that Malay had to go through a 35 month long ordeal of arrest, conviction by lower court ( on 28 December 1965) and ultimately exoneration by High Court of Calcutta. However, the movement did create a world wide stir that had brought Bangla literature in to international limelight again. Both English and Spanish versions of TIME magazine wrote about the movement. Periodicals in Europe, USA, Latin America, Australia and Asia such as City Lights Journal, SanFrancisco Earthquake, Eco, El Corno Emplumado, Kulchur, Klactoveedsedsteen, Burning Water, Intrpid, Salted Feathers, Evergreen Review, Panaroma, Trace, El Rehelite, Imago, Work, Iconolatre, Whe’re, Ramparts, Los Angeles Free Press, My Own Mag, Vincent etc either printed, reprinted or brought out special issues. In Hindi, Sharad Deora wrote a novel titled College Street Ka Naya Masiha based on the Hungryalists; Phanishwarnath Renu wrote Ram Pathak Key Diary Sey; Dharmaveer Bharati and S.H.Vatsayan Ajneya wrote quite frequently about them in the periodicals they edited; Ashok Shahane, Dilip Chitre and Arun Kolatkar hailed them in Marathi; Umashankar Joshi introduced them to Gujarati readers; Ameeq Hanfee translated and introduced them to Urdu readers. The Bengali intelligentsia had not bargained for this unexpected international exposure. Reputed academicians of the time viz. Sukumar Sen, Asitkumar Bandyopadhyay, Haraprasad Mitra, Bhabatosh Datta, Ujjwalkumar Majumdar, Kshetra Gupta, Saroj Bandyopadhyay, Shashi Bhushan Dasgupta, Sukumari Bhattacharya, Debiprasad Bhattacharya, Bhudeb Choudhury, Tarapada Mukhopadhyay, Chinmohan Sehanabis and others preferred to ignore the movement. Some academicians even persuaded academicians of other languages to ignore the Hungryalist impact. Nevertheless, intellectuals from other countries, such as Octavio Paz and Ernesto Cardenal sought the Hungryalists when they visited India. That the Hungryalist movement had shattered the colonial canons and had encircled the centre by a new epistemic periphery, became clear with emergence of powerful post-Hungryalist writers and poets such as Subimal Mishra, Arunesh Ghosh, Prasun Bandyopadhyay, Pradip Das Sharma, Atindriya Pathak, Kamal Chakraborty, Barin Ghoshal, Saswata Sikdar, Anuradha Mahapatra, Ajit Ray, Aloke Biswas, Pranab Pal, Sankarnath Chakraborty, Arun Basu, Sridhar Mukhopadhyay, Dipankar Datta, Debdas Acharya, Biswajit Sen, Achin Dasgupta, Bikash Sarkar, Abani Dhar, Nabarun Bhattacharya, Samiran Ghosh, Nitya Malakar, Manab Chakraborty, Aloke Goswami, Moulinath Biswas, Madhumay Pal, Koushik Chakraborty and a host of other writers. Any literary defiance, Hungryalism being the most potent in post-colonial Bangla literature, embodies the provocation of a literary code into a socio-cultural and political code. The ultra-leftist naxalite political explosion in Bangla polity occurred obviously immediately after the Hungryalist canonical implosion in literature and painting. 8. Some of today’s critics have opined that the main reason for aesthetic percolation of the spirit of the movement, and its power to withstand the steamroller of Establishment juggernaut, may be found in the range of experience and variety of erudition of the participants who refused to hang around vernacular newspaper offices or the joints of political masters as has been the case with most of the pre-Hungryalist writers, especially of Krittibas and Notun Reeti brands. Those wre also the contributory factors to Hungryalist texts which could gather propensities of hybridity, syncreticity, rhizomatism, heterogeneity, optativeness, disjunctiveness, immanence, irony, logical cracks etc; Hungryalist painting imbued de-layering, de-proportioning, multi-scaling, de-perspectivisation, de-structuring, fragmentariness and such other poly-hued mélanges. Poet Falguni Ray and painter Anil Karanjai have become underground cult figures after their death. Two manifestoes of the Hungryalist movement which are quoted by critics either to argue for and against their texts are as under:- THE OBJECT OF HUNGRYALISM (HUNGREALISME) 1. To never imitate the reality of Aristotle, but to take the un-enameled whoring reality by surprise under the genital of Art. 2. To let speechlessness burst into speech without breaking the silence. 3. To let loose a creative furor, in order to undo the done-for world and start afresh from chaos. 4. To exploit every matrix of senses except that of a writer. 5. To disclose the belief that world and existence are justified only as an aesthetic phenomenon. 6. To accept all doubts and despairs rather than to be content to live with the sense made by others. 7. To lash out against the values of the bi-legged career-making animals. 8. To abjure all meretricious blandishments for the sake of absolute sincerity. 9. To stop writing and painting beyond the point of self-realization. MANIFESTO OF THE HUNGRY GENERATION The merciless exposure of the self in its entirety. To present in all nakedness all aspects of the self and things before it. To catch a glimpse of the exploded self at a particular moment. To challenge every value with a view to accepting or rejecting the same. To consider everything at the start to be nothing but ‘thing’ with a view to testing whether it is living or lifeless. Not to take reality as it is but to examine it in all its aspects. To seek to find out a mode of communication, by abolishing the accepted modes of prose and poetry which would instantly establish communication between the poet and his reader. To use the same words in poetry as are used in ordinary conversation. To reveal the sound of the word, used in ordinary conversation, more sharply in the poem. To break loose the traditional association of words and to coin unconventional and here-to-fore unaccepted combination of words. To reject traditional forms of poetry, and allow poetry to take its original forms. To admit without qualification that poetry is the ultimate religion of man. To transmit dynamically the message of the restless existence and the sense of disgust in a razor-sharp language. Personal ultimatum. _____________________________________________________________________________ ______________________________________________________________________________ The reasons why these two manifestoes are referred to by critics while analyzing the movement in the perspective of preceding literary thinkers are that the arguments put forth were completely different from what Buddhadeva Basu, Dipti Tripathi, Abu Sayeed Ayub, Debiprasad Chattopadhyay, Al Mahmood, Shamsur Rahaman, Binoy Ghosh, Nirendranath Chakraborty, Shakha Ghosh etc had been articulating till then. The Hungryalists not only drew upon words, experiences, epithets, incidents, diction hitherto considered taboo by ‘bhadralok’ gentry, but they virtually dismantled the single dimension metropolitan domination of Bangla literature. They introduced grammatically prohibited ‘guruchandali’ in poetry and prose, that is, mixing of words used by Brahmins and Untouchables. The Hungryalists were disgusted and impatient with the slothful, sluggish pace of change. When the famous ‘troika’ submitted a shoe-box for book review to the newspaper with largest circulation, an action that would have definitely been appreciated by Ramtanu Lahiri, Radhanath Sikdar and Pyarichand Mitra, the anti-Establishment luminaries of 19th century, the Hungryalists were waging war against canonical hegemony, and bombarding modernist boundaries. The Hungryalist authors and painters nativised Bangla discourse. The above two manifestoes aspired to regain the pre-colonial philosophy of atman wherein culture and nature are not considered to be separate spheres. The two manifestoes refused to view culture as the product of traumatic self-extrication from nature. The pre-Hungryalist writers and painters reflexively depended upon the idea of culture as the formation of subjectivity out of the primitive unconsciousness of matter. The Hungryalists, on the contrary, were thrilled with an awareness of value immanent in the relations between the natural and the human as had been exemplified in the fictions Chhatamatha by Subimal Basak, Amar Chabi by Subhas Ghosh, Kather Phul by Falguni Ray, Randhanshala by Basudeb Dasgupta, prose pieces in Malay Roychoudhury’s Bhenno Galpo, and the poems Poper Samadhi by Utpalkumar Basu, Janoar and Aamar Vietnam by Samir Roychoudhury, Choushatti Bhuter Kheya by Pradip Choudhuri and Jakham by Malay Roychoudhury. All of these works are considered exceptional today. After the movement withered away with the commencement of Malay’s trial, when Subhas, Saileswar, Sandipan and Shakti became police witness and testified against Malay in court, the writers and poets branched out of their own. Like most of the post-partition families, Subhas, Basudeb and Saileshwar joined the governmental leftists, participating in anti-people activities; Subo Acharya became devotedly religious and a disciple of god-man Anukul Thakur of Deoghar; Anil and Karuna joined the naxalite movement; Tridib and Alo gave up writing; Utpal departed for London; Pradip shifted his craft from Bengali to French; Falguni resorted to excessive drug abuse and died; Debi joined the Radical Humanists; Malay and Samir preferred to keep silent for more than a decade. During the post-naxal period, 10-12 years after Malay’s trial, some literary aspirants in North Bengal and Tripura suddenly started calling themselves Hungryalists, though they were unaware of the manifestoes of the Hungry Generation movement and, obviously, major Hungryalist works were unavailable to them. They simply tried to be different from the commercial mainstream. From among them, names that crop up from time to time, are Arunesh Ghosh, Nitya Malakar, Jibotosh Das, Aloke goswami, Rasaraj Nath, Selim Mallik, Satwik Nandi, Arun Banik, Shankhapallab Aditya, Raja Sarkar, Bikash Sarkar, Samiran Ghosh, Prabir Seal, Subrata Paul, Arun Basu and Pranab Debnath. With the re-emergence of Malay and Samir in the late 80s things have completely changed. A new generation of critics, academicians and readers has emerged for whom the Hungryalists are legends. Samir gave this observation a proper premise with his periodical Haowa 49. Malay, one may like to say, returned with a vengeance, and his novels, drama, poetry, essays, interviews, drew respectful attention of the earlier generation also who had once denigrated the Hungryalists. With the range of Hungryalist corpus, command over Bangla language, and the depth of knowledge and variety of experience of these authors, whose avant garde discourse and discursive practices had once created literary and social avalanche, they have made history. Researchers are doing their M.Phil. and Ph.D. on them. Several periodicals have published special issues on individual Hungryalist writers and painters. (Courtesy: Prof Niraj Bakshi, Editor, Black Rainbow, Indore. 2003)
Statement of Saileshwar Ghosh against Hungry Generation movement. My name is Saileshwar Ghosh, son of Biseswar Ghosh> One Debi Ray alias Haradhon Dhara asked me to contribute in poems in Hungry Generation magazine in the last part of September 1963 in Coffee House, College Street. After that I came to know most of the Hungry Generation contributors as well as other writers also. I personally know Sandipan Chattopadhyay, Shyamal Gangopadhyay, Sunil Gangopadhyay, Rabindra Dutta, Basudeb Dasgupta, Pradip Choudhuri and Utpalkumar Basu> The April last oneday I met Malay Roychoudhury in the Coffee House, and he requested me to give him some of my poems. From him I came to know that Hungry Generation is going to be published. A month ago I got a packet containing the copies of the same. I know malay Roychoudhury who is the creator of Hungry Generation. I contributed twice in poems in Hungry Generation. Malay had sent me some leaflets and 2-3 magazines but I got no instructions what to do with these papers. Usually these papers were kept in my room. Excepting this I know nothing of Hungry Generation. To write in obscene language is not my motto. I am a school teacher of Bhupendra Smriti Vidyalaya at Bhadrakali, Hooghly from 1962 on a monthly salary of Rs 210/-. After the publication of the recent issue of Hungry Generation, which was published without my knowledge and consent, I have cut off all relations from the said organisation. In future neither I shall keep relation nor I shall contribute in the Hungry Generation. I shall not write anything obscene and that is my literary intention. The booklet in question was published by Pradip Choudhuri Signed by Saileshwar Ghosh at Lalbazar DD Headquarters on 2nd September 1964. [ Because of Saileshwar Ghosh and Subhash Ghosh's testimony against Malay Roychoudhury at Bankshall Court, Kolkata, Malay was sentenced one month's imprisonment for his poem STARK ELECTRIC JESUS ]