রবিবার

হাংরি আন্দোলন-এর অশ্লীলতা বিষয়ক ইশতাহার

 


হাংরি আন্দোলন-এর অশ্লীলতা বিষয়ক ইশতাহার

[ ১৯৬৫ সালে ফালিকাগজের বুলেটিনে প্রকাশিত ]

আমি অশ্লীলতা সমর্থন করি ।

আমি ততদিন ওব্দি অশ্লীলতা সমর্থন করব, যতদিন ওইসব দুর্বৃত্ত অভিজাতরা তাদের পৈতৃক উৎকর্ষের নকল উৎসবের দাবি করতে থাকবে ।

আসলে অশ্লীলতা বলে কিছু নেই । 

অশ্লীলতা একটা নকল ধারণা, বানানো, উদ্ভাবিত,

তৈরি-করা,

নির্মিত

একদল অশিক্ষিত শ্রেণি-সচেতন ষড়যন্ত্রীর দ্বারা ; প্রতিষ্ঠানের অভিজাত শকুন দ্বারা, নিচুতলার থ্যাঁতলানো মানুষদের টাকাপুঁজ খেয়ে যারা গরম থাকে ; সেইসব মালকড়ি-মালিক জানোয়ারদের দ্বারা, যারা ঠাণ্ডা মাথায় এই নিচুতলার গরম হল্কার ওপরে একচোট মুরুব্বিগিরি করে ।

তাদের শ্রেণিগত সংস্কৃতি বাঁচাতে,

টাকাকড়ির সভ্যতাকে চালু রাখতে,

ঘৃণাভুতের পায়ে সৌরসংসারকে আছড়ে ফেলতে ।

সমাজের মালিকরা একটা নকল নুলো ভাষা তৈরি করে, নিচু শ্রেণির শব্দাবলীকে অস্বীকার করতে চায় যাতে বিভেদ রেখাটা পরিষ্কার থাকে ।


শব্দ আসলে শব্দ আসলে শব্দ আসলে শব্দ আর আমি অভিব্যক্তির কোনোরকম শ্রেণিবিভাগ হতে দেবো না । শুধুমাত্র এই অজুহাতে যে কোনো শব্দ, অভিব্যক্তি, গালাগালি, বাক্য বা উক্তি এক বিশেষ শ্রেণি/গোষ্ঠী/জাত/এলাকা/সম্প্রদায় কর্তৃক ব্যবহৃত, আমি কাউকে তা অস্বীকার, পরিত্যাগ, অগ্রাহ্য, প্রত্যাখ্যান করতে দেবো না ।

একটা শব্দ হলো ফাঁকা আধার যা ভরাট হবার জন্যে অপেক্ষমান ।

সেই সমাজ, যেখানে দুটো ভিন্ন আর্থিক শ্রেণির জন্যে দুরকম শব্দাবলী, তা অসুস্হ আর বিষাক্ত।

অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেবো কেননা ভাষার মধ্যেকার শ্রেণিবিভাগ আমি নষ্ট ও ধ্বংস করে দেবো ।

তুমি যদি একজন অ্যাকাডেমিক মূর্খ হও এবং আমার কথায় তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না, তাহলে কলকাতার একজন রক্তপায়ী বাবুকে ধানবাদে নিয়ে গিয়ে সবচেয়ে পরিষ্কার খনিশ্রমিকের মাদুরে শুইয়ে দাও। সে তাকে মনে করবে অশ্লীল, ইতর, অসহ্য, এবং সমাজবিরোধী । সেই লোকটাকেই বম্বে বা প্যারিসে নিয়ে গিয়ে কোনো কেউকেটা রাজকুমার বা আলিখান বা বড়োসায়েবের পাশে শুইয়ে দাও ; সে তার শিরদাঁড়ার পায়ুবৃন্ত পর্যন্ত আহ্লাদে ডগমগ করে উঠবে :

ঘৃণা

অভিজাত মগজবাক্যে তরল ভ্যামপায়ার গড়ে তোলে কেননা ইশ্বরগোবর এই সফেদ কলারদের সর্বদা ভয়, এই বুঝি মানব সভ্যতাকে লোটবার তাদের অধিকার ও সুবিধা শেষ হয়ে গেল ।

অশ্লীলতা অভিজাতদের সংস্কার যারা নিচুতলার উন্নত সংস্কৃতির কৃষ্টি-আক্রমণকে ভয় পায় ।


আসলে অশ্লীলতা হচ্ছে বুর্জোয়াদের বাড়িতে বানানো আত্মাপেষাই মেশিন ।

ঠিক যেমন তারা বানিয়েছে যুদ্ধ

গণহত্যা

বাধ্যতামূলক সৈন্যভর্তি

পুলিশের অত্যাচার কুঠরি

এবং আণবিক বোমা

নিজেদের লোকেদের ক্ষমতায় রাখতে

পৃথিবীর সমস্ত স্বর্ণপায়খানাকে তাদের পেটে ভরে নিতে

তাদের বিরোধীদের নিশ্চিহ্ণ করতে

মধ্যবিত্তের থুতুতে একদল সফেদকলার সৈন্য ডুবিয়ে রাখতে ।

আমি এদের চাই না

এই পোকাদের

আমি চাই পিটুইটারি আত্মাসুদ্দু মানুষ ।

একজন বুর্জোয়া সবসময় একজন ফ্যাসিস্ট বা একজন

কম্যুনিস্ট বা একজন প্রতিক্রিয়াশীল

কিন্তু কখনও মানুষ নয় ।


অভিজাতের কাছে নিচুতলার ভাষা অশ্লীল । অভিজাতের কাছে তার নিজের ভাষা মানে শিল্প।

বুর্জোয়ারা মনে করে নিচুতলার ভাষা ব্যবহার করলে মানুষ এবং সমাজ ‘কলুষিত ও বিকৃত’ হয়, কেন না তারা ভালো করেই জানে যে, এই ধরণের বুজরুকি ছাড়া তাদের সমাজ-সংস্কৃতি বেশিদিন টিকবে না।

এই ষড়যন্ত্র এক্কেবারে কাণ্ডজ্ঞানহীন ।

সমগ্র সমাজের সাধারণ ভাষায় কথা বলা এবং লেখা যদি কলুষিত ও বিকৃত করা হয়,

তাহলে আমি মানুষকে কলুষিত ও বিকৃত করে প্রকৃতিস্হ করব ।

মানুষের তাবৎ শব্দাবলী যতক্ষণ না গ্রহণযোগ্য হয়, আমি অশ্লীলতা সমর্থন করব । আমি চাই কবিতাকে জীবনে ফিরিয়ে দেয়া হোক ।

আমি ইচ্ছে করে তেমন লেখা লিখবো, যাকে বুর্জোয়ারা অশ্লীল মনে করে, কেন না আমি তাদের হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে বাধ্য করব তাদের ওই নকল উৎকর্ষের বিভেদ ভেঙে ফেলতে । আর এর জন্যে কলকাতার কম্যুনিস্ট বুর্জোয়া, প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া এবং ফ্যাসিস্ট বুর্জোয়া আমার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে আমায় তাদের জেলখানায় ঢুকিয়ে দিলেও কিছু এসে যায় না ।

মানুষ ও মানুষের মধ্যে পার্থিব দখলিসত্তের ভিত্তিতে কোনো তফাত করতে দেবো না ।

পৈতৃক রুপোর চামচে করে সমাজের একটা অংশ কিছু শব্দকে খায় বলে, আমি তাদের উন্নত মনে করি না ।


যে সমাজে পার্থিব দখলিসত্তের ভিত্তিতে মানুষে-মানুষে তফাত, সেখানে যৌনতা পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত।

সেক্স পুঁজিরুপে ব্যবহৃত ।

বুর্জোয়া-অত্যাচারিত সমাজ একটা বেবুশ্যেঘর,

কিন্তু কেন যৌনতা পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত ?

কেননা পৃথিবীতে যৌনতাই একমাত্র ব্যাপার যাতে ক্ষুদ্রতা নেই

সংস্কৃতির

ঐতিহ্যের

ধর্মের, জাতির

ঐশ্বর্যের

দেশের, প্রথার, সংস্কারের এবং আইনের ।

অবচেতনার টুঁটি চেপে ধরার জন্যেই যৌনতাকে পুঁজি করা হয় ।

যৌনমাংসের তেল-তেল গন্ধ ছাড়া  এই সমাজে কোনো বিজ্ঞাপন সফল নয় এবং কোও কাজই টকটকে যোনির ফাঁদ না পেতে করিয়ে নেয়া সম্ভব নয় । প্রতিটি পদক্ষেপে অবশ্যম্ভাবী যৌনজাল কেননা এই সমাজ-ব্যবস্হা ক্রেতা-বিক্রেতার তৈরি ।

মানুষ এবং/অথবা মানুষী এই সংস্কৃতিতে হয়ে ওঠে প্রতীক বা বস্তু, অর্থাৎ জীবন বদলে যায় ‘জিনিস’-জড়পদার্থে ।

যৌনজীবন যদি হয়ে ওঠে সহজ সরল স্বাভাবিক, তাহলে এই সিঁড়ি-বিভাজিত সংস্কৃতি ধ্বসে পড়বে, আর ওই সুবিধা-লোটার-দল তাদের ফাঁপা অন্তর্জগতের মুখোমুখি হয়ে পড়বে ।

তাই জন্যে যৌনতার র‌্যাশনিং

তাইজন্যে ধীরেসুস্হে যৌনবিষের ফেনা

তাইজন্যে পরিপূর্ণ যৌন-উপলব্ধি বারণ

তাইজন্যে যৌনতাকে স্বাভাবিক করতে দেয়া হবে না,

তাই জন্যে পুঁজি ছাড়া অন্য কোনো রকমভাবে যৌনতাকে প্রয়োগ করতে দেয়া হয় না : কবিতায় তো কখনই নয় : কেননা কবিতার সঙ্গে কিছুই প্রতিযোগিতা করতে পারে না ।

শৈশব থেকেই সমাজের প্রতিটি ও তাবৎ মস্তিষ্ককে ভুল শিক্ষায় ভ্রষ্ট করা হয়, এবং এই নষ্টামিকে বলা হয় নৈতিকতা । শাসনকারী বুর্জোয়া সম্্রদায় জানে যে যতদিন এই অসুখকে নীতিজ্ঞান বলে চালানো যায়, আর যে কোনোভাবে মধ্যবিত্তের ভেতরে এটা ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাদের কর্তৃত্ব বহাল থাকবে ।


উচ্চবিত্ত টাকা-খুনিরা সাহিত্যে যৌনতার অন্য প্রয়োগ অশ্লীল ঘোষণা করবে, কেন না আইনগত ও সামাজিক উপায়ে তারা জঘন্য হিংস্রতায় নিজের শত্রুদের নিশ্চিহ্ণ করবে যাতে যৌনতাকে পুঁজি ছাড়া অন্য উপায়ে ব্যবহার করা না হয় ।

বুর্জোয়ারা যাকে অশ্লীল বলে, আমি ইচ্ছে করে তাইই লিখবো, যাতে যৌনতাকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপারটা ধ্বংস ও ছারখার করে দিতে পারি ।

যৌনতা মানবিক ;

মেধাশক্তিই অনাক্রম্য ; যা অনাক্রম্য তা নীতিজ্ঞান ।

আমি যৌনতাকে ‘জিনিস’ হিসেবে প্রয়োগ করতে দেবো না । সেনসর পদ্ধতি সেই ভয় থেকে জন্মায় যাকে নীৎশে বলেছেন ‘যূথের নীতিজ্ঞান’ ।

বুর্জোয়াদের দাবি যে, কোনো বই বা কবিতা পড়ে মানুষ ও সমাজ ‘কলুষিত এবং বিকৃত’ হয়ে উঠবে কারণ তাতে যৌনতাকে স্বাভাবিকতা দেয়া হয়েছে । 


আমি, মলয় রায়চৌধুরী, জন্ম ১১ কার্তিক

আমি অশ্লীলতা সমর্থন করি,

আমি জানি, কলকাতার বুর্জোয়া দুর্বৃত্তরা 

আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছকে ফেলেছে,

আমার তাতে কিছু যায় আসে না ।

এই সভ্যতার পতন কেউ থামাতে পারবে না

আমি ভবিষ্যৎবাণী করছি ।

আমার যেমন ইচ্ছে আমি সেরকমভাবে লিখবো, এবং সমগ্র বাঙালি মানবসমাজের শব্দভাঁড়ারে নিজেকে চুবিয়ে দেবো।

আমার সমস্ত শরীর যা ভাবে, আমি সেটাই ভাববো

আর যারা জানতে চায় তাদের জানাবো

কিংবা কাউকে

যে এই কথাগুলো জানার জন্যে জন্মাবে ।

আমি কবিতাকে জীবনে ফিরিয়ে দিতে চাই ।

জীবনে যা-কিছু আছে তার সমস্তই থাকবে কবিতার অস্ত্রাগারে ।

শুক্রবার

শম্ভু রক্ষিত-এর কবিতা : 'আমার জ্বর, আমার অসুখ'

 

শম্ভু রক্ষিত-এর কবিতা : আমার জ্বর, আমার অসুখ

কেবল স্বপ্নের সেই পেরাম্বুলেটার এবং শিশুর মুখটা মনে আছে । আর কোনো স্বপ্নের কথা মনেই পড়ে না অথচ সেদিন শুধু উষ্ণ রোদে উলঙ্গ শরীরটা ছড়িয়ে দিয়ে নীল মাছিটা দেখতে দেখতে বেলা বাড়ছিল, বেলা কাটছিল ।

************************

আমি সর্বক্ষণ ঘোলাডাঙায় গিয়ে ঘর নেবার কথা ভাবি এখন সিনেমা দেখে আমার বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গিয়েছে । অথবা বাড়ি ফেরার সময় । এখন আমার বুকটা ধুক-ধুক করছে কেন কে জানে।

************************

মরা কুকুর গরু বাছুরের জন্য মিউনিসিপালিটির ঠেলা গাড়ি আছে । আমি কেন মরা মানুষের কথা ভাবতে পারি না ? আমি কেন মিউনিসিপালিটির ঠেলাগাড়ির কথা ভাবতে পারি না ?

*************************

দুহাতে কপাল চাপড়ানোর সময় শেষ হয়ে গেছে । এখন আমার কেবল ভাবনা।

কেবল ভাবনা ! অথচ আমার স্বপ্ন কিচ্ছু নয় -- শুধু বাউণ্ডুলেনা । এখন আমার আঙুলের ফাঁকে কেন সিগারেট জ্বলছে না ? এখন আমি কেন ঢোল-ডগরে কেন ঘা দিচ্ছি না ? কেন ?

**************************

করবী ফুলেরও কিছু শ্রম হয় । এখন আমার ইস্ত্রি করা পোষাক । আমার ক্রোধ কেবল ভদ্রতার অন্ধকার । এখন আমার উথ্থান নেই । এখন আমি শুয়ে আছি । বারোটা-তেরোটা বেজেই চলেছে । এখন আমি চা-মেশানো ভদ্রতার কথা কেন ভাবতে পারি না ? আমার সময়ের ওল্টানো দূরবীনে গম্বুজ মিনার কেন দেখতে পারি না ? কেন ?

***************************

কেবল রেড রোড, রেসকোর্স, ইডেন গার্ডেন, রাজভবন, মিছিল, কেবল রেড রোড, রেসকোর্স, ইডেন গার্ডেন, রাজভবন, হাড় ; কেবল দূরের, সব দূরের দূরের দূরের ।

[ ষাটের দশকে হাংরি আন্দোলনের পত্রিকা “জেব্রা”-র দ্বিতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত]

বৃহস্পতিবার

তপন দাশ-এর কবিতা "বাংলাদেশ"

 

তপন দাশ : বাংলাদেশ

( এই কবিতাটি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হবার আগে লেখা )

বার্লিনের দেয়ালের এধারে-ওধারে

দুই জার্মানের হঠাৎ দেখা হয়ে গেল ।

ডিনার টেবিলে বসে নিরুদ্বিগ্ন ছুরি দিয়ে চিরছি মুরগির পেট

সামনের দিকটা তোমার, পেছনটা আমার

তোমার সিলেট আমার মুর্শিদাবাদ, কেমন ?

ধান কাটা হয়ে গেলে পর সুজলা সুফলা বাংলাদেশ তৈরি করছি

দুর্গাপুর চিত্তরঞ্জন এবং কামারহাটি

সামনের দিকটা তোমার, পেছনটা আমার

ভাগবাঁটোয়ারা করে নেয়া যাক ।

কফিহাউস সাপ্লাই দিচ্ছে মনীষী

কমিউনিস্ট পার্টি ভোটের বাজে বিপ্লব করছে

তোমার সিলেট, আমার মুর্শিদাবাদ, কেমন ?

ভোটের রেজাল্ট শুনে বাংলাদেশে কাঁচকলার দাম বেড়ে যায়

যে কোনো সময়েই ভয়ানক কিছু ঘটে যেতে পারে

এবং ঘটে না বাংলাদেশে

‘৪৭ সালে আমি খুনোখুনি করিনি

‘৪৭ সালে আমি শান্তি শান্তি করিনি

‘৪৭ সালে আমি জন্মাইনি

‘৬৭ সালে আমি মুরগির পেট চিরছি

নিয়ন আলো আর মার্কাসস্কোয়ার একই বাংলাদেশে

ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড নরমুণ্ডের পাশের ফুটপাতে

সুস্হির জাবর কাটে মহিলারা সংগ্রামী বাংলাদেশে

আমার শরীরে বইছে তিন হাজার অস্ট্রোলয়েডের রক্ত

আমার শরীরে বইছে হাজার নেগ্রিটোর রক্ত

আমার শরীরে বইছে ন’হাজার এ্যালপাইনের রক্ত

আমার শরীরে বইছে বাঙালি বাবা-মা’র ভেতো রক্ত

মানুষ হবার জন্যে নিজেকে বন্দী করেছি আদর্শের জেলে

ভারতবর্ষের অন্য সবাই আমার চরণাশ্রিত হোক -- এটাই চাই

ওয়াশিংটনের সেলুনে কাটাতে যাচ্ছি যৌনকেশ

বাংলাদেশে চালান দিচ্ছি কনট্র্যাসেপ্টিভস

বাঙালী হয়েছি বলে বাঙালী তৈরী করছি আণ্ডারপ্যান্ট ছুঁড়ে ফেলে 

বাংলাদেশকে মেড়োরা দখল করুক চাই না বলে

আসামে বাঙালী বিতাড়ন দেখে কোঁকাচ্ছি

রাত্তিরে ভয় পাই আমার ওপর ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে বোমার চূড়ান্ত শেল

পাশবালিশ জড়িয়ে অধঃপতন থেকে রক্ষা পাই

প্রেসিডেন্সি কলেজে ক্লাস করছি বাঙালী হবার জন্যে

মুরারি দু’আনার বাদাম কিনে জাতকুল মিলিয়ে স্বর্গীয় বিদ্রোহী প্রেম চালাচ্ছে

মুরগির পেট চিরছি বাঙালী কায়দায়

হিন্দি প্রতিরোধ আন্দোলন করার আগে পেয়ার-মোহব্বতে লাইন দিচ্ছি

অনুপমার জন্যে রাত্তিরে হাঁপাতে থাকি

বাংলাদেশের বয়স কতো হোল

মুরগির পেট চিরছি উনিশশো সাতষট্টি সালে

বাংলাদেশ কবে মারা যাবে কবে পোড়ানো হবে বাংলাদেশকে

সামনেটা তোমার, আচ্ছা, পেছনটা আমার

তোমার বেরুবাড়ি আমার…

কবে খতম হবে বাংলাদেশ ।।

[ ষাটের দশকে হাংরি আন্দোলনের পত্রিকা “জেব্রা”-র দ্বিতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত ]

বুধবার

মলয় রায়চৌধুরীর কাব্যনাট্য "ভরসন্ধ্যা"

 

মলয় রায়চৌধুরীর কাব্যনাট্য                                

 কাব্যনাট্য : ভরসন্ধ্যা                           

[ একটি কদমগাছ ছেয়ে আছে ফুলে ;

গাছটির চারিপাশে উবু হয়ে বসে

উনত্রিশজন বুড়োবুড়ি আর জনা

ছয় যুবক-যুবতী । সকলেই তারা

ওপরে তাকিয়ে আছে কদমগাছের

পানে ; বোঝা যায় তারা অপেক্ষা করছে

গাছটির অন্ধকার থেকে একজন

অতিমানুষের আগমন । লোকগুলো

এসেছে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ-আশায়

কদম গাছটি নাকি সেই গল্পতরু

যার গন্ধে লুকিয়ে আছেন অবতার–

নেমে আসবেন মর্ত্যে নেতৃত্ব দেবেন ।

লোকগুলোদের দেশে নেতা নেই বলে

কদম গাছের কাছে ভিক্ষা চাইছেন

যাতে একজন অতি-আধুনিক কেউ

মানুষের মঙ্গলের জন্যে আবির্ভূত

হন । অথচ গাছটি নিরুত্তর আজো । ]


বুড়োবুড়ি ( কোরাস ) ।।

কবে থেকে বসে আছি হাপিত্তেশ করে

কদমের গাছ ওগো দাওনা পাঠিয়ে

কোনো লোক, যাকে কাঁধে তুলে আমাদের

মসনদে বসাবো সকলের ভালোর

জন্য। উচিত মানুষ নেই কবে থেকে ।

অন্য জগৎ চাইছি, ভিন্ন ইতিহাস ।

বদল মানে কি স্রেফ নাচের আঙ্গিক ?

পাড়াতুতো নেতা-নেতি দেশটাকে ছিঁড়ে

সোনাদানা রাখছে বিদেশে নিয়ে গিয়ে ;

নয়তো নিজেরা নিজেদের ছিঁড়েফেড়ে

নাচন-কোদন করে জুয়া খেলছেন ।

কারো মুখ যেন লাল বাঁদরের পাছা

আবার কারোর ঘাড়ে শুয়োরের মাথা

কেউ ঝোলে ডালে ল্যাজ ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে

অনেকের জন্ম তো গুয়েরই আঁতুড়ে

পথই নজরে আসছে না আমাদের

কীভাবে পাল্টাবো এই বেজন্মাগুলোকে

যেনাদের কথা থেকে মানেরা লোপাট !


যুবকেরা ( কোরাস ) ।।

খুবই খারাপ যাচ্ছে দিনকাল ; শান্তি

নেই, কোনো দিশা-নির্দেশটুকুও নেই

লেগে আছে খুনোখুনি ধর্ষণ ডাকাতি

রাহাজানি বোমাবাজি কিশোরী পাচার

আর এই সবেতেই যারা দায়ি তারা

দখল করেছে মসনদ কোষাগার

আমাদের সার্কাসে আছে চক্রী ভাঁড়েরা,

বড়ই অভাব এক সৎ মানুষের ।

ভয়ে কেউ স্বপ্ন দেখতেও চাইছে না

সব ডানা রয়ে গেছে ডিমের ভেতরে

বাধ্য হয়ে বাছাই করতে হচ্ছে ভাঁড় ;

উপায় না খুঁজে পেয়ে জঙ্গলে ঢুকেছে

রেগে গিয়ে অনেকেই ধরেছে বন্দুক ।

বানচোতে বানচোতে ভরে গেছে দেশ ।


যুবতীরা ( কোরাস ) ।।

আমরা আরও গন্দা গাল দিতে চাই ;

মনে হয় মাসিকের কানি গুঁজে দিই

ধরে ধরে ওগুলোর মুখের ভেতরে ।

তাই চাই একজন বিশুদ্ধ মানুষ ।

এই সব লুচ্চা-লাফাঙ্গায় ছেয়ে থাকা

বৈভবী বাছাই থেকে মুক্ত হতে চাই ।


কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।

রয়েছে আমার স্টকে পাঁচ মহাজন

একে একে গুণাগুণ শোনো ওনাদের

তারপর ভেবেচিন্তে নির্ণয় নেবার

পালা তোমাদের ; নিয়ে যেও যাকে চাও ।

অনেকেই সৎ নয় কেউ কেউ চোর

সকলেই কচু নয় কেউ কেউ ওল

অনেকেই স্নব নয় কেউ কেউ খুনি

সকলেই সাপ নয় কেউ কেউ ব্যাঙ

অনেকেই বোকা নয় কেউ কেউ ছুঁচো

সমস্যা হল যে তারা সবাই মানুষ ।

[ হাততালি বাজালেন কদমের গাছ ।

খচ্চর খুরের ধ্বনি শোনা যায়, কেউ

আসছে মিউলে চেপে এইদিক পানে ।

ভিড়ের ভেতরে এসে ঘোড়া থেকে নেমে

তাকায় সবার দিকে ; বেঁটে-ঘোড়া বাঁধে

কদম গাছেতে । লোকটির খালি গায়ে

চামড়ার শায়া, হাতে বর্শা পিঠে তীর

একটা শুয়োর মরা কাঁধের ওপর ;

তার আগমনে দুর্গন্ধ ছড়ায় এত

সকলেই বাধ্য হয় নাক চাপা দিতে ।

লোকটি নিজের পরিচয় নিজে দেয় ;

একই পোশাকে ঢোকে সাঙ্গপাঙ্গদল । ]


আত্তিলা ।।

আমি হুন আৎতিলা, দেবতার হাতে

গড়া, শান্তি-শৃঙ্খলার ভয়াল মানুষ

দেখছ আমাকে ? বহু দেশ জয় করে

সেখানের লোকেদের কবজায় আনা

কঠিন ছিল না । ছুটিয়েছি সেনাদের

তাদের ওপর দিয়ে থেঁতলে গুঁড়িয়ে

জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে । মেয়েদের

তুলে এনে বিলিয়েছি সেনাদের মাঝে ।

রা কাড়েনি কেউ । ইতিহাস দেখে নাও ।

যে যেমন আছে তেমন থাকায় রপ্ত

হয়েছে সবাই রোম থেকে দানিয়ুব

থেকে বালটিক সমুদ্রের নোনাঢেউ–

আসেনিকো আমার মতন বারোয়ারি ।

সোনাদানা কিছুই আমরা নিয়ে গিয়ে

রাখিনি বিদেশি ব্যাঙ্কে অথবা বাড়িতে ;

বাড়ি-ফাড়ি নেই আমাদের, যেথা ইচ্ছা

সেখানেই ডেরা বাঁধি, আর সে-জায়গা

হয়ে ওঠে আমাদের থাকার স্বদেশ ।

নিষ্ঠুর হিংস্রতা ছাড়া আনন্দ ঘটে না:

হৃদয়ী নায়কমাত্রে ঘোর ইডিয়ট

কেননা পাবলিক হল নির্মিত প্রাণী ।


সাঙ্গপাঙ্গদল ।।

আত্তিলা মাস্তান জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ

পাবলিক মানেই তো ভেড়াদের পাল

জন্মসিদ্ধ অধিকার কান্নাকাটি করা ।


আত্তিলার খচ্চর ( নারীকন্ঠে ) ।।

চলুন সম্রাট এটা হাঘরের গ্রাম

ঘাসও তো দেখতে পাচ্ছি না কোনোখানে

উঁহু, পুং ঘোড়াদের দেশ এটা নয়

এখানে বুকনিই পায় বক্তাকে খুঁজে

বর্তমান এলে লোকে অতীতকে খায়

স্মৃতির জোচ্চুরি নিয়ে সমাজটা চলে

ভাবছে ম্যাজিক হবে হাপিত্তেশ করে ।


কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।

সত্য বলছে আত্তিলা, কিন্তু মনে রেখো

উনি আর ওনার লোকেরা কাঁচা মাংস

খেতে ভালোবাসে । স্নান করবার প্রথা

এমনকী গরমেও ছোঁচাবার প্রথা

ওনার রাজত্বে নেই । জলের অভাব

আছে তোমাদের দেশে ; তার সমাধান

এতে হবে । খাবার সুরাহা হবে । বিয়ে

দিতে হবেনাকো মেয়েদের । পোশাকের

খরচ বাঁচবে । জনসংখ্যা কমে যাবে ।

এনার শিরায় বয় কংসের পুঁজ ।


আত্তিলা ।।

পারছ বুঝতে তো আমার খচ্চরও

তোমাদের চেয়ে কত জ্ঞানী ও বিদ্বান !


বুড়োরা ( কোরাস ) ।।

উঁহু চলবে না ; অমন জোকারচাঁদ

আছে আমাদের ভূঁয়ে প্রদেশে-প্রদেশে ;

তাদের সামনে খোকা তুমি চুনোপুঁটি ।

তারাও ধর্ষণ রাহাজানি লুটপাট

করতে ওস্তাদ বলে আমরা বিরক্ত ;

তাছাড়া সবাই ওরা সংবিধান মেনে

তাবৎ জোকারি করে দিব্বি পার পায়

রাসকেলে ঘুষখোরে ডান-বাম নেই

ঘাপলার অন্ত নেই, কোটি-কোটি টাকা

নামিদামিদের পেনটিং সোনাদানা

সুইজারল্যাণ্ডে ভল্টে লুকিয়ে রেখেছে ।

ফুসলিয়ে মেয়েদের বাজারে চালান করে ।

তুমি চাপো ঘোড়ার ওপরে । তারা চাপে

দেঁতো হেসে সরকারি মোটরগাড়িতে

এই যা তফাত, তাছাড়া সবই এক

প্রতিদ্বন্দ্বী খচ্চরে-গুণ্ডায় দেশ ছয়লাপ ।


আত্তিলা ।।

ওরা সব আমারই দত্তক সন্তান ;

আনন্দ পেলাম শুনে করে খাচ্ছে ওরা ।

যাই, আরো গণতন্ত্রে আছে আমন্ত্রণ ।

[ ঘোড়ার পিঠেতে চেপে উধাও হলেন

মাতিতে থুতুর দলা ফেলে আৎতিলা ।

সাঙ্গপাঙ্গদল তাঁর পেছন-পেছন

তামাকের পিচ কদমের গাছে ফেলে ।

হাততালি বাজালেন কদমের গাছ ;

বেজে ওঠে পাঙ্ক রক শীৎকারসহ ।

আবির্ভূত হল রোমের সম্রাট বুড়ো

ক্যালিগুলা নাচতে-নাচতে শিস দিয়ে

সঙ্গে তাঁর বুকখোলা যুবতীর দল

আর দুটি চেনে-বাঁধা কালো জাগুয়ার । ]


ক্যালিগুলা ।।

কী বলছিল আত্তিলা ব্যাটা নরাধম ?

আমার রাজত্বে গিয়ে জেনে নিতে পারো

সেখানে আমার মূর্তি হারকিউলিস

অ্যাপোলো মার্কুরি রূপে পুজো করে লোকে ।

সবাইকে চোখ বুজে দেখি, এমনকী

আমার ঘোড়াকে রাজদূত মর্যাদায়

প্রোমোট করেছি । ভাইবোন ভেদাভেদ

নেই বলে নিজের বোনের সঙ্গে শুতে

কোনো বাধা নেই । অজাচার অনাচার

আইনসঙ্গত কেননা যে আইনই

আমি । টুসকি বাজালে গলা কাটা যায়,

জেলে দিই আমার কার্টুন যদি আঁকে ।

তা এমন শান্তিস্বস্তি  কেউ পারবে না

দিতে তোমাদের । আমি মহা-ধুরন্ধর ।

পাবলিক ব্যাপারটা স্রেফ জুয়াচুরি ।


জাগুয়ারজোড়া ( পুরুষকন্ঠে ) ।।

পাবলিক ব্যাপারটা স্রেফ পাঁয়তাড়া ;

জীবের জগত মুছে ফেলবার ট্রিক

অপরাধহীন কোনো রাজনীতি নেই

আবিষ্কার করতে শেখাও মহাভয়

বাঁচবে কী করে প্রাণী কুবলে না খেলে !

কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।


সত্য বলছেন উনি কিন্তু মনে রেখো

ক্যালিগুলা মগজবিহীন কালজয়ী ;

ওনার রাজত্বে যদি অশান্তির খোঁজ

করো, তা তোমরা পাবেনাকো । একেবারে

যাকে বলে শ্মশানের শান্তি সারাক্ষণ

অলিখিত সংবিধান ওনার জিভেতে

যে জিভ চোবানো থাকে যোনিতে মাদকে ;

অন্যের বউকে এনে ধর্ষণ করার

বিশ্ব রেকর্ড রয়েছে এই শাসকের ;

ওর হাঁ-এ বক্রাসুরী বাঁকা দাঁত আছে ।


ক্যালিগুলা ।।

কারেক্ট বলেছে কদমের গাছ । আমি

যা বলি তা সংবিধান । তাই সমস্যাই

নেই কোনো আমার রাজত্বে । যোনি-লিঙ্গে

বসিয়েছি সারভিস ট্যাক্স । ইতিহাস

লেখকরা ওব্দি জানে না আমার গল্প

এত রকমের চর দরবারে আছে ;

দলের কাজের লোক তারা ফি-প্রহর

কেননা আমিই দল আমি সংবিধান

বানাই যখন ইচ্ছা কিংবা পালটাই ;

তোমাদের মতো জাতিপ্রথা-মার্কা নয় ।

মিডিয়া আমার থুতু চেটে মজা পায়

ভয়ে নাগরিকগুলো টুঁশব্দ করে না ।

এই তো দেখতে পাচ্ছ কত যুবতীরা

আমার নেশায় থাকে পুরো দিলখুশ ।

পাবলিক জিনিসটা চরসের ধোঁয়া ।

জাগুয়ারজোড়া ( নারীকন্ঠে ) ।।

আমরা এদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান

এদের নিয়তি হল হাপিত্তেশে মরা ।


কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।

সঙ্গে নিয়ে যেতে পারো তোমরা ওনাকে

অন্য কোনো প্রতিযোগী নেতা থাকবে না

ছিঁচকে চামচা-নেতা দেবে দে-চম্পট ।

কনেদের জন্যে বর খুঁজতে হবে না ।


বুড়িরা ( কোরাস ) ।।

না মা, অমন নেতার কোনো প্রয়োজন

নেই । আমরা অতিষ্ঠ তেএঁটে পাগলে,

মা-বোনের সঙ্গে শোয় এইসব নেতা

পেয়ে । খুনি ধর্ষক ডাকাত দাঙ্গাবাজ

ওরাই তো মসনদে বসে কলকাঠি

নাড়ে, দু-চারটে প্রদেশে । পাথর-মূর্তি

নিজের ও চোদ্দপুরুষের মোড়ে-পার্কে

পাঁচতলা বাড়ির সমান কাটাউট

বসিয়ে তারাও অন্ন ধ্বংস করে যাচ্ছে ;

শ্বশুর ধর্ষণ করে ছেলের বউকে

পুলিশ ধর্ষণ করে লকাপে ঢুকিয়ে

যার ফলে হারামি বিয়োয় ফি-বছর ।

সেসব হারামি একজন আরেকের

পোঁদে বাঁশ কোরে, কুকুর-কুরি ঢঙে

ঘেউ-ঘেউ চিৎকারে সমাবেশ করে

কখনো রাস্তার মোড়ে গেটে ময়দানে ।

আমরা তো শান্তি চাই, দুইবেলা পেট

ভরে খেয়ে-পরে আরাম শৃঙ্খলা চাই ।


ক্যালিগুলা ।।

ওরা সব আমারই জারজ সন্তান ;

আনন্দ পেলাম শুনে করে খাচ্ছে ওরা ।

চলি, আরো গণতম্ত্রে বহু কাজ আছে ।

[ নাচতে-নাচতে শিস দিয়ে হাফ-ল্যাংটো

মেয়েদের কোমর জড়িয়ে অন্তর্ধান

করলেন ক্যালিগুলা । কদমের গাছ

হাততালি দিলেন এবার জোরে-জোরে ।

গলায় খুলির মালা পরে কয়েকটা

হাড়গিলে মানুষকে হাতকড়া বেঁধে

প্রবেশ করল পলপট, জলপাই

রঙের পোশাকে । সামরিক বাজনার

জগঝম্প হইচই ওঠে চারিদিকে । ]


পলপট ।।

দেখলুম ক্যালিগুলা উন্মাদ কাঁহিকা

গেল ওইদিকে কোনো মাগির ধান্দায় ;

তা তোমরা খুঁজছ এমন একজন

যে কিনা শৃঙ্খলা শান্তি সুখ এনে দেবে ।

আমি জোকার-সন্তান । সমাজের তলা

থেকে উঠে গরিব ভাগাও অন্দোলন

করে শহরের সবকটা মানুষকে

লাগিয়েছি ধান চাষে । গ্রাম-শহরের

পালটা-পালটি হয়ে গেছে, যেকারণে

কারোর মনেই কোনো ঈর্ষা-দ্বেষ নেই ;

প্রতিটি শহর দ্যাখো হয়ে গেছে গ্রাম,

ধানশীষে মধু হয় গোরু দ্যায় ডিম

গোবরের পোকা খেয়ে সোনা হাগে লোকে

সকলেই ভাই-ভাই নয়তো যে-যার

নিজের কবর খুঁড়ে মাটির তলায়

রাতেও সবাই খাটে বলে পাবলিক

বাড়বার কোনো সুযোগ-সুলুক নেই

মিছিল-মিটিঙ করা নিষিদ্ধ করেছি

কেরানিরা দিন-রাত চাষ করে মাঠে

খবরের পত্রিকা ছাপতে দিইনাকো

সুতরাং কোনো গুলতানি উঠবে না ।

আমার রাজত্বে পাবলিক বলে কিছু নেই ;

মাটিই মানুষ তাই মানুষও মাটি ।

জমির মালিক জমি নিজে, বুঝলে হে

পরিবার ব্যাপারটা লোপাট করেছি

কেননা আমিই সকলের পরিবার ।


কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।

হ্যাঁ, ইনি ইস্কুলে বারবার ফেল-করা

মহাসাম্যবাদী । প্রজারা এনাকে বলে

এক নম্বরের দাদা । কারোর তুলনা

এঁর সঙ্গে করা চলবে না ; তা সে ইদি

চেঙ্গিজ পিনোশে যে-ই হোন । করলেই

ধড়টা লোপাট । অতএব পল পট

যদি তোমাদের নেতা হন, পড়াশোনা

করতে হবে না বলে বাবা-মা-সন্তান

সবাই চাষের কাজে খেতচাষি হবে ;

শিল্পের ধান্দায় দেশ হবে না বিনষ্ট

অসাম্য লোপাট হবে সর্বত্র সমাজে ।

মাত্র তিনটি বছরে উনি কুড়ি লক্ষ

পাবলিক কমিয়ে ছিলেন । তোমাদের

দেশ জনসংখ্যা বৃদ্ধি থেকে মুক্ত হবে

জমির স্বামীত্ব নিয়ে গোল বাধবে না ।

প্রতিবাদ করার হবে না দরকার ।


যুবকেরা ( কোরাস ) ।।

আরে ওরকম ফেলমারা গানডুতে

আমাদের রাজনীতি পচে একাকার ।

এদেশেও জনগণ বলে কিছু নেই ।

কর্তারা যখন যাকে ইচ্ছে তুলে নিয়ে

বেমালুম মাটিতে মেশাতে এক্সপার্ট ।

জঙ্গল দখল কোরে আদিবাসীদের

তাড়িয়ে মাটির তলা থেকে খেয়ে নিচ্ছে

সোনাদানা লোহাতামা ম্যাংগানিজ ধাতু ।

ভিখারিরা ধনী হল রাজনীতি করে

কেরানিরা পার্টিবাজি করে জমিদার ।


পলপট ।।

ওরা সব আমারই বেজন্মা সন্তান

আনন্দ পেলুম শুনে করে খাচ্ছে ওরা ।

টাটা বাই, অন্য কোনো গণতন্ত্রে যাই ।

[ পলপট কয়েদিরা বিদায় নিলেন ।

কদমের গাছ পুনরায় হাততালি

দিতে, ট্যাপডান্সে কুচকাওয়াজ কোরে

মুঠোর সেলামসহ ঢোকে হিটলার

সঙ্গের দেহরক্ষীরা নাচতেই থাকে

ট্যাপডান্স । কদমের গাছ হাততালি

দিলে বন্ধ হয় সবায়ের নাচানাচি । ]


হিটলার ।।

দেখলুম, কেটে পড়ল অনার্যগুলো

আরে ওরা আমার চুলের যুগ্যি নয়

নেতা হতে হলে চাই বিশুদ্ধ মা-বাবা ;

এমন দানব যার কথা আত্মহারা

করে দেবে সবাইকে খোকা থেকে বুড়ো

সমাজ চলবে শুধু নেতার কথায় ;

যত বেশি মতামত ততো গণ্ডোগোল

তাকিয়ে দেখলে টের পাবে, অশান্তির

প্রধান কারণ চারিদিকে, স্বাধীনতা

পেয়ে কাজকর্ম করতে চায় না কেউ ।

দেশকে টাইট দিতে হবে সারাক্ষণ

যাতে কেউ একটুও একান্ত নিজের

সময় না পায় । জনগণ ব্যাপারটা

চটকে মিশিয়ে দিলে ব্যাস কেল্লা ফতে ।

ভিন্নমত দেখলেই পোড়াও বিষাক্ত

গ্যাসে, তাদের নিশ্চিহ্ণ করো একেবারে ।

আমার টোটকা হল লেবেনস্রাউম,

জবরদখল করে ঝাণ্ডা পুঁতে দাও ।


যুবতীরা ( কোরাস ) ।।

আরে দাদু, অমন ভেড়ুয়া মাসতান

রয়েছে প্রতিটি রাজনীতিকের স্টকে

যাদের কাজই হল সকাল-বিকাল

একে-তাকে পোঁদে বাঁশ করে টাকা তোলা ;

অন্য মত শুনতে পেলেই পুঁতে দেবে

জলজ্যান্ত মাটির একশো হাত নিচে ।

আপনারি ঢঙে সেলাম ঠুকতে হয়

পাড়ার সিনডিকেট মাথারা এলেই ;

দেয়ালের পোস্টারের কথাও ফতোয়া ।

পোঁদেতে পার্টির ছাপ পেলেই সে নেতা ।

লেবেনস্রাউম ছাড়া কিছুই বোঝে না

আমাদের পার্টিবাজ জোকার বংশজ ।

দেয়াল দখল শুধু নয়, বউ-মেয়ে

বাড়িও দখল হচ্ছে দিনের আলোয় ।


কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।

আরেকবার ভেবে দ্যাখো, এনার মতন

দিগ্বিজয়ী দানব আসেনি কখনও ;

ইনি হ্যামেলিনের সেই বাঁশিওয়ালা

মানুষকে ইঁদুরে পালটে দিতে ওঁর

জুড়ি জন্মায়নি এখনও কোনো দেশে ।

অসন্তোষ থেকে উনি পৌঁছোন পোগ্রোমে ।

শত্রু মার্কা দিয়ে করেন নিকেশ উনি ;

ফলে নিমেষেই সারা দেশ শত্রুহীন

তারপর শ্বাসরোধী শান্তির ফোয়ারা ।


বুড়োরা ( কোরাস ) ।।

আরে নানা । সবকটা দলেই তো আছে

এই টাইপের অতিবজ্জাত জোকার

যারা জবরদখল করে দেশটাকে

উইপোকা হয়ে কুরে শেষ করে দিল ;

জনগণ ভয়ে মুখ খুলতে চায় না ।

কখন যে কোন লোক ইঁদুরে পালটে

যাবে, কারো জানা নেই । তাইতো চাইছি

আসুক এমন কোনো বিশুদ্ধ মানুষ

যার গায়ে গুয়ের কসমেটিক নেই—

মসনদটাকে সে ময়লা করবে না ।


হিটলার ।।

কারেক্ট বলেছে গাছ কদমের । যদি

ইঁদুরে পালটে যাও তাহলে সহজে

দেশে হবে মহামৌলবাদী জমপেশ

অন্যদের ঘৃণা করে কাটবে সময় ;

নিজেদের দুঃখ কষ্ট ভাবতে হবে না ।

যে তোমার মতাদর্শে নেই তাকে মারো

মৃত্যুর নেশায় থাকো মশগুল হয়ে

আত্মাহুতি দিয়ে সব ধ্বংস করে দাও ।


কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।

ওঁর মন্ত্রে তোমরা সবাই এককাট্টা

হয়ে, ভুলে যাবে যাবতীয় দুঃখ কষ্ট

একে আরেকের দিকে নজর ঘুরিয়ে

আড়চোখে চরগিরি করতে পারবে ;

সময় আপনা থেকে হু-হু কেটে যাবে

মৌলবাদ বড়ই মধুর সেঁকো বিষ

যত মজে থাকা যায় তত তার মজা ।


যুবকেরা ( কোরাস ) ।।

মৌলবাদীদের হাতে ধাতানি-প্যাঁদানি

খেয়ে আমরা রক্তাক্ত বোবা আধমরা–

চাই না একলষেঁড়ে ওরকম জ্ঞান ।

ওই রাজনীতি করিয়েতে ছেয়ে গেছে

যারা শুধু চায় তাদের কথাই মানো

এমনকী শিশুদের দুধে তা মেশাও ।

চলবে না আত্মঘাতী বিশ্ববীক্ষা বিষ ;

পৃথিবীর কুষ্ঠরোগ ওই লোকগুলো

মৌলবাদীদের চেয়ে ক্ষতিকর নেই ।


হিটলার ।।

ওরা সব আমারই ঔরসে জন্মেছে

আনন্দ পেলুম শুনে করে খাচ্ছে ওরা ।

ওরাই গেস্টাপো হয়ে আসে বারবার ।

[ বডিগার্ড নিয়ে হিটলার ট্যাপডান্স

করতে-করতে চলে যায় । হাততালি

দেন কদমের গাছ । শিকারি ব্রিচেসে

কোমরে টাইট বেল্ট দু-হাতে চাবুক

মাথায় কোঁকড়াচুল দোহারা মহিলা

প্রবেশ করেন ; চাবুক পটকে তিনি

দাঁড়ান পা ফাঁক করে । কদমের গাছ

এইভাবে মেয়েটির পরিচয় দেয় । ]


কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।

ইনি হান্টারওয়ালি ; হিন্দি সিনেমার

বিখ্যাত নায়িকা । যেখানে বজ্জাত পান

দেশের ভিলেনদের একা সামলান ;

দু-হাতে রিভলভার চালাতে-চালাতে

শত্রুহীন করে দেন গ্রাম ও শহর–

ফুল পাখি নদী চাঁদ ওঁর গান গায় ।

তোমাদের আর পরবর্তী প্রজন্মকে

হান্টার চালিয়ে উনি রক্ষা করবেন ।

সিনেমা-নায়িকা বলে উনি তো অমর

পোঁদেতে চাবুক মেরে ঠান্ডা করবেন

বেয়াড়াগুলোকে, যারা টাকা গেঁড়িয়েছে,

রেখেছে বিদেশে কোনো গোপন লকারে ;

মাটি থেকে ধাতু তুলে পাচার করছে

ছাপছে নকল টাকা চালাচ্ছে ধর্ষণ ;

একা হাতে সামলান হান্টারওয়ালি ।


বুড়িরা ( কোরাস ) ।।

আরে ! সেই মাদারি মামণি বাতেলানি !

হা কপাল, শেষে এই ফিলমি নায়িকা !

জীবনকে সিনেমায় আটক করার

শিল্প-শিল্প খেলা খেলে বুদ্ধিজীবিগণ–

নিজেরা তো বোকা সেজেছেন , আমাদেরো

বুঝিয়েছিলেন, সমাজ পালটে যাবে

কবিতা সিনেমা গল্প আঁকাআঁকি দিয়ে

নাচের নাটক গেয়ে বাজনা বাজিয়ে

দেশের দশের আয় বেড়ে শতগুণ !

সবই ফালতু প্রমাণিত হয়ে গেছে ।

আমরা বাস্তব চাই প্রকৃত বাস্তব ।

ধোঁয়াটে সুন্দরী দিয়ে কাজ চলবে না ।


হান্টারওয়ালি ।।

বাস্তব জগতে বাস করো বলে ভোগো

তোমরা সবাই । বিভ্রমনিবাসী হও

সারাক্ষণ কুয়াশায় বুঁদ হতে শেখো

মনে-মনে নিজেদের সুখি ভেবে নাও–

টানো নয়তো কোকেন চরস গঞ্জিকা ল

স্বপনে মিলতে পারে উদ্ধারের নেতা ।

যাক আমি চললাম, শুটিঙ রয়েছে ।


কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।

আমার স্টকের সব মহাজন শেষ ।

গাছে আর কতই বা অবতার ফলে !

[ দেখা যায় মোষের ওপরে চেপে

নীলদেহ যমরাজ আসরে এলেন

সঙ্গে হালখাতা হাতে চিত্রগুপ্ত-বুড়ো ;

আগে-পিছে দুইজন বাঁটকুল চাষি । ]


চিত্রগুপ্ত ।।

এঁদের কারোর তো হয়নি ডিউ ডেট !

এত ভিড়ভাড় কেন ? কিসের জটলা ?

প্রবলেম যে কী তা-ই তো টের পাচ্ছি না ।

সকলেই দিব্বি সুস্হ তবু মনমরা !

তা মনখারাপ থাকলেই ডিউ ডেট

দিই না কখনো । মন ভালো করবার

যে যার তোমাদের নিজেদের দায়িত্ব ।


কদমগাছ ( পুরুষকন্ঠে কোরাস ) ।।

এনাদের দেশে কোনো সৎ নেতা নেই

চাইছেন কাউকে পাঠিয়ে দিই আমি

অন্ধকার গন্ধ থেকে চাগিয়ে উঠুক

সৎ ও সুজন দেশ-রক্ষাকারী লোক


যমরাজের মোষ ( শিশুকন্ঠে )

তোমরা যা চাইছ তা বাতুলে বোকামি ।

সমাজ বদল করে গুবরে পোকারা–

নেতারা গোবর ভেবে ঠেলে নিয়ে যাও

গড়িয়ে-গড়িয়ে সেই তাল বড়ো হলে

আপনা থেকেই পাবে মহা-জননেতা

ইতিহাসে চিরকাল এমনই ঘটে

গোবর খসলে তার রূপ ধরা পড়ে

ঠিক যেরকম দেখা গেল এতক্ষণ

ওরা মহাজন হয়ে মসনদে ছিল

হেগেমুতে স্বদেশকে নষ্ট করে গেছে ।


কদমগাছ ( নারীকন্ঠে কোরাস ) ।।

অতএব ফিরা যাও যে যার মুলুকে

যেমন চলছে সব তেমন চলুক

তোমাদের মুরোদের বড়ই অভাব

ক্রোধ ছাড়া আস্ফালন গোসাপের বিষ ।

তবে, বার্তাহীন ক্রোধে বদল আসে না–

সুখ শান্তি পেতে হলে বিপদকে ডাকো

সাহস তো মানুষের বাঁচার আঙ্গিক

মসনদ কোনোকালে নিজেই পড়ে না ।


চিত্রগুপ্ত ।।

ফিরে যাও তারপর উঠেপড়ে লাগো ।

কোনো নেতা বদল ঘটাতে আসবে না ;

নিজেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে মসনদ ভাঙো ।

প্রিপন করতে পারি কয়েকটা ডেট

বড়োজোর । বাকি সব কাজ তোমাদের ।

[ সমবেত বুড়োবুড়ি যুবক-যুবতি

সবাই দাঁড়িয়ে উঠে চিৎকার করে

তারা সব নানাদিকে ছুটে চলে যায় । ]


————++++————–