সোমবার

অজিত রায় : হাংরি আন্দোলন নিয়ে আরেক কিস্তি

সাহিত্যের আখড়ায় গোষ্ঠীতন্ত্র নয়াল কিছু নয়। সাহিত্য নিয়ে আড্ডা, হুজুগ আর বাওয়াল যুগে যুগে। সেই কোন ১৯০৫ থেকে পয়লা বিশ্বযুদ্ধের শেষ অব্দি লন্ডনের ব্লুমসবেরি মহল্লার এক থুত্থুড়ে কোঠায় ফি বেস্পতি সাঁঝে জমা হতেন সস্বামী ভার্জিনিয়া উলফ, রজার ফ্রাই, ক্লাইভ বেল, জন মেনার্ড কিন্স, ই এম ফর্স্টার, লিটন স্ট্র্যাচি, ডানকান গ্রান্ট প্রমুখ বুদ্ধিজীবীরা। ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে ঐ আড্ডাবাজরা 'ব্লুমসবেরি গ্রূপ' নামে বিখ্যাত। মোটামুটি ঐ ধাঁচেরই ছিল বাংলার বিনয় সরকার, সুনীতি চাটুজ্জে, সতীশচন্দ্র মুখুজ্জেদের 'ডন সোসাইটি'; এবং কিছু পরে প্রেমেন্দ্র-অচিন্ত্য-মানিক-প্রমুখের 'কল্লোল গোষ্ঠী'। যদিও জাতে ও চরিত্রে কিঞ্চিৎ আলাদা, কিন্তু তিনটিই ছিল নিছক আড্ডা-বিশেষ। সাহিত্যের আড্ডা। যা পরবর্তী কালে সাহিত্যের কিছু খাস সামিয়ানায় ঠেক পেতে কলকাতার কফি হাউসে আরও-অঙ্ক-কষে হতো, এবং যা এখন আরো-অন্যভাবে, অন্যত্রও হয়। বুকফেয়ার, নন্দনচত্ত্বরে, ইভন ফেসবুকে এবং ব্লগে। কিন্তু সাহিত্য তথা শিল্পে সেরম বাওয়াল ওরফে মুভমেন্ট যদি কিছু হয়ে থাকে, আমাদের রামায়ণ-মহাভারত-চৈতন্যের লীলাখেলা-সমূহ বাদ দিয়ে, তাহলে তার বিসমিল্লা ধরতে হয় ১৮৩০-এর ফরাসি বোহেমিয়ানদের হুল্লোড় থেকেই। তথাকথিত প্রতিষ্ঠান-বিরোধী আন্দোলনের ঐ ছিল সাড়াজাগানো পয়লা ভেঁপু। এবং পরবর্তী কালে সারা পৃথিবী জুড়ে সেই বিগউল ফোঁকা অব্যাহত থাকে। ফলে, মার্কিন ইন্টেলেকচুয়ালদের মাথায় হঠাৎ 'Angry' ঠাপ্পাটা দেখে তেমন হাসি নির্গত করার কারণ ছিল না বিশুদ্ধবাদীদের। কারণ ঐ মার্কিন অ্যাংরিরা এতখানিই বাগী আর রাগী ছিল যে নিজেদেরকে 'ইন্টেলেকচুয়াল' বলতেও ওরা রীঢ়া বোধ করত। ওরা নিজেদের জাহির করত 'Anti-Intellectual' বলে। আসলে, জ্যাক কেরুয়াক, লরেন্স ফেরলিংগোটি, অ্যালেন গিন্সবার্গ, গেগরি করসো, ই ই কামিংস, কেনেথ রেকথ, হেনরি মিলার প্রভৃতি আমেরিকান কবি-লেখকদের, তথাকথিত সামাজিক ধ্যানধারণার প্রতি প্ৰচণ্ড রকমের অনীহা ও আক্রোশ থেকে গড়ে ওঠা ঐ গোষ্ঠী নিজেদের জাহির করত 'বিট' বলে। বিট মানে হেরো, পরাস্ত, হতাশ, গাণ্ডু আর এইরকম আরও কিছু। 'অ্যাংরি' কথাটা তো খচমচ করত চল্লিশের দশকের জ্যাজ বাজিয়েদের ঠেকে। তাছাড়া, মোটামুটি ঐ সময়েই ইংল্যান্ডের একদল তিক্ত-বিরক্ত-রাগী লেখক সেখানকার গঙ্গাজলী সাহিত্যকে লাথিয়ে রাতারাতি দাগি হয়েছিলেন 'Angry Young Men' নামে। অ্যাংরিরা ছিলেন জন ওয়েন, জন ব্রেন, কিংসলি অ্যামিশ প্রমুখ। অ্যাংরি আর বিটরা একসময় একটা জয়েন্ট অ্যান্থলজিও বের করে। যে-কারণে ঐ দুই বাওয়াল-পার্টিকে অভিন্ন ভেবে কিছু মানুষ চরম ভুল করেছিল। কিন্তু, ভুল তো ভুলই। আসলে হয়েছিল কি, কেরুয়াকের সুহৃদ হারবার্ট হাংকি তখন কুচেল দুনিয়ায় গহন চলাফেরায় মগ্ন এবং তাঁকে ছিঁচকে চোর, মাস্তান আর মাতাল-গাঁজাখোর বলে চেনানোর জন্যে 'বিট' খিস্তিটা চালু ছিল। এবং, খুব অবান্তর হবে না যদি ধরা হয় কেরুয়াক উক্ত লিংক থেকেই শব্দটা গেঁড়িয়েছিলেন।
এই বিটদের সঙ্গে বাঙালি যুবাদের হাংরি হাঙ্গামাকে গুলিয়ে ফেলার বেওকুফি বা ধাউড়বাজি ঠিক হবে না। আবার 'হাংরি'র স্রোত-সূত্র যে 'ক্ষুধার্ত' বা 'কাঙাল' ---- এটা ঠিক না। কেননা, প্রতিষ্ঠান বিরোধীরা কখনই মার্কামারা হতে রাজি নয়, তারা হামেহাল শেষধাপের জন্য ত্বরায়। আর, ধাপগুলো হলো অবিরাম নিচের দিকে, ঘাস আর মাটির দিকে। 'মার্কা' ব্যাপারটা মৌলবাদের লক্ষণ। প্রতিষ্ঠানের কারকিত। যেমন আমাদের পৌরাণিক নামগুলো। সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী, জল, বায়ু, শিব, কৃষ্ণ, রাম, সীতা প্রত্যেকেরই হাজারটা করে নাম। পাড়ার মাস্তান থেকে শুরু করে লোকসভার মেম্বার, এঁদের অনেকগুলো করে নাম। যত গুণের ঘাট, তত নামের বাড়। তাছাড়া, এটাও ফ্যাক্ট, যে, ব্যক্তিকে অভিধায়িত করার জন্য যেসব শব্দকলাপ আমাদের চারপাশে ডাঁই করা আছে, এখনও, সবই সেই ব্রিটিশ মাস্টারবেশিয়ানদের নিচুড়ে-যাওয়া বইপত্র, ডিক্সনারি আর আধুনিকতাবাদী বুকনি-বীর্য থেকে হাসিল। আসলে কিন্তু, শেষ বিশ্বযুদ্ধোত্তর দুনিয়ার যে হালচাল, রাজনীতিক-আর্থিক অবস্থা, তাতে সেরকম মর্ডানিস্ট স্পেশেলাইজড ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার সারবীজ সব পচে-হেজে গেছে। এখন আধুনিকতা ব্যাপারটাই একখানি ধ্রুপদী জোচ্চোর ও ধাপ্পাবাজ।

যাই হোক। বলবার কথা এই, হাঙ্গামার শরিকরাও যেভাবে দাবি করেছেন, ---- হাংরি, আর-পাঁচটা সাহিত্য আন্দোলনের মতোই, পূর্বাপর স্বমেহিত ছিল, তাতে কোনো বাহ্যিক ক্যাটালিটিকের কলকাঠি ছিল না। যে-কারণে এই হাঙ্গামার আবির্ভাব-কালটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। পঞ্চাশের শেষে, বিশেষত ষাটের দশকের শুরুশুরুতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় একই ধাঁচে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ব্যাপক অনাস্থা আর বিক্ষোভ দেখা দেয়। তাদের নিজ-নিজ রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র, সমাজ, চালু ধর্মীয় নীতিকানুন, আর্থিক বন্দোবস্তি আর কালচারাল বাতাবরন তামাম-কিছু ঐ নাগর-যুবাদের কাছে চরম অসহনীয়, সুতরাং পরম ত্যাজ্য ও বর্জনীয় ঠাহর হতে থাকে। প্যারিস, বার্লিন, প্রাগ্ব থেকে বার্কলি, জাকার্তা, কলম্বিয়া, পিকিং ----- বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা প্রবল বাগী ও তোড়ফোড়-প্রবণ হয়ে ওঠে। লিহাজা, বিক্ষোভের ঐ চোনা সাহিত্যের জলকেও লোনা করে ফেলবে, এ তো অতি লাজিম কথা।

বিশেষত, দেশভাগটা বাঙালির সত্যিকারের পাইন মেরে দিয়েছিল। ঐ প্রেক্ষাপটে, যখন নিত্যনতুন মৃত্যুপদ ও ভীতিপদ বাঙালির বত্রিশ ইঞ্চি পোস্তবাটা-বুক ক্ষণে ক্ষণে ভেবড়ে দিচ্ছে, মুহুর্মুহু মূক করে দিচ্ছে আস্ত-একটা বাতেল্লাবাজ জাতিকে, চেতনা সন্ত্রস্ত ও দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে, নালা থেকে ভাত কুড়িয়ে খাচ্ছে অনাহারী নেড়ি ও মানুষের ছা, ------ আমরা তখনও অবিশ্বাস্য নজরে দেখতে পাই হাজার বছরের ঝরঝরে মূল্যবোধগুলো বাঙালির জীবনে নতুন ধারণার পথ দেখাবে বলে, তখনও, রক্তচক্ষু মেলে দাঁড়িয়ে! নতুন শক্তি জীবনকে পথ দেখাতে চায়, তখনও। ঐ রক্তচক্ষুগুলো কাদের?? কোটি কোটি মূক ও মূঢ়ের বেদনাকে মূর্ত ধ্বনিতে তবদিল করতে উঠে আসে অই, কারা??? আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাঙলা মায়ের আনাচ-কানাচ থেকে, অন্ধগলি আর ঘুঁজিপথ থেকে বেরিয়ে আসছে অশিক্ষিত নিরক্ষর অর্ধ-নিরক্ষর ভাঙা-ভাষা ভাঙা-বানানের একগুচ্ছ অন্ত্যজ, অপর, সাব-অলটার্ন, ডায়াসপোরিক ছোটলোক। নপুংসক বুর্জোয়া শ্যাল-কুত্তায় নুচে খাবে বাংলা সাহিত্যকে, তার আগেই টিনের সুটকেশ, ভাঙা মগ, ছেঁড়া পাজামা, নোংরা গেঞ্জি ও বিষ্ঠা-লাঞ্ছিত মুর্দাফরাসের কেরবালা হা-রেরে তরিবতে ধেয়ে এলো বাংলা সংস্কৃতির মূল বিতর্দির দিকে। গোড়ার দিকে এদের পিওর লাথখোর বলে মনে হবে, এদের ভাষা গেঁয়ো আর এদের কথাবার্তা অশ্লীল স্ল্যাং-মাফিক মনে হবে, ---- সেটা একরকম রফা। মৃতের চিতায় অগ্নি-অস্তিত্বের ঐ ছিল পূর্বাভাস।

হাংরি জেনারেশন আন্দোলন ছিল, নাকি হুজুগ? হাংরি আন্দোলনের স্রষ্টা কে? ----- এই দুটি বিতর্ক এত এত দফা এত এত এত ভাবে দলিত মর্দিত ধর্ষিত হয়েছে যে তাকে এখন কেঁদেই বাঁচতে দেওয়া উচিত। বিশেষত দ্বিতীয় প্রশ্নটি। জঙ্গল মে মোর নাচা, কিসনে দেখা? প্রত্যেকে বলে আমি, আমি, আমি। অক্ষরের গোলামি থুয়ে অক্ষরের মালিক হওয়ার সাধ, প্রত্যেকের। তাঁরা মেতে উঠেছেন অন্ধকারে, অহংকারে, ব্যক্তিগত আরোপে, আমিত্বের বহ্বাস্ফোটে। আমি, আমি, আমি। আয়ে গওয়া হরামিয়ন সব, একে মারে যান আফত-মা হ্যায়। ----- বিতর্কটি এখন যেন এই বলছে, কঁকিয়ে, ----- এবং খাবি খেয়ে মরছে।

১৯৬২। 'সম্প্রতি' পত্রিকার থার্ড সংকলনে বিনয় মজুমদারের 'ফিরে এসো চাকা'র সমীক্ষা বেরুল 'হাংরি জেনারেশন সংক্রান্ত প্রস্তাব' শিরোনামে। লেখক : শক্তি চট্টোপাধ্যায়। অনেকের ধারণা, বাসু-সুভাষ-শৈলরাও খেয়েছিলেন, যে, এই লেখা থেকেই হাংরি জেনারেশন নামের সূত্রপাত। ধারণাটা কিছু বাতাসও পেয়েছিল ১৯৬৪-৬৫ সালে হাংরি মামলায় 'this literary movement was started by me' বলে শক্তির স্টেটমেন্ট জমা পড়ায়। হাংরি গোষ্ঠীর এককালীন গড়িমসি সদস্য সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ও নাকি ঐ মর্মে বয়ান রুজু করেছিলেন। কিন্তু শক্তির এ লেখা তো বেরিয়েছিল বাষট্টি সনে; অথচ, ১৯৬১ সনের নভেম্বর-ডিসেম্বরেই ছেপে গিয়েছিল 'হাংরি জেনারেশন' নামে ১/৮ ডবলক্রাউন সাইজের ইস্তেহারটি, তাতে বার্জাস টাইপে পরিষ্কার ছাপা হয়েছিল : স্রষ্টা মলয় রায়চোধুরী, নেতা শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদক দেবী রায়।

আসলে, পরে জানা যায়, হাংরি জেনারেশন ছিল এমনই এক চ্যাংমাছ, কারো একার মুঠোয় বেশিক্ষণ ধরা থাকেনি। হাঙ্গামার ধূসর সূচনালগ্নের আরেক শরিক, বিলেত-রিটার্ন কলেজ-প্রভাষক উৎপলকুমার বসু পরবর্তীতে (১৯৯৪) জানালেন : "হাংরি জেনারেশন সেভাবে কোন সংগঠিত আন্দোলন ছিল না। যার খুশী, যেখান থেকে পারে হাংরি জেনারেশন নাম দিয়ে বুলেটিন বের করে বাজারে ছেড়ে দিত। এই আন্দোলন ছিল অনিয়ন্ত্রিত। কতকগুলো ফতোয়া মলয় সমীর শক্তি লিখেছিল। এগুলোর নিচে অনেকের নাম বসিয়ে দেয়া হ'ত। বহু ক্ষেত্রেই যাদের নাম দেওয়া হচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসাও করা হঁ'ত না। ..... হাংরিদের সেভাবে কোন কাগজও ছিল না। হয়ত ত্রিপুরা থেকে একটা কাগজ বেরল, নাম দিয়ে দিল ---- হাংরি জেনারেশন বুলেটিন নম্বর ১২। হয়ত তার ১০ বা ১১ বেরোয়নি।"

আসলে, ১৯৬২-৬৩ সনে পশ্চিম বাংলার সাহিত্যে এই বাওয়ালমুখী পালাবদলের তীব্র চাগাড়ে দুটি প্রধান উপ-কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল কলকাতা শহরের বুকে। একটি কেন্দ্রের মধ্যমণি ছিলেন বাসুদেব দাশগুপ্ত, শৈলেশ্বর ঘোষ, সুভাষ ঘোষ, প্রদীপ চৌধুরী এবং সুবো আচার্য। অপর কেন্দ্রে ছিলেন মলয় রায়চোধুরী, সমীর রায়চোধুরী, দেবী রায় এবং সুবিমল বসাক। উভয় কেন্দ্রের সদস্যরাই, কমবেশি, তথাকথিত ছোটলোক, গরিব আর অশিক্ষিত ফ্যামিলি থেকে আগত। এবং প্রত্যেকের বয়স ছিল বিশ-পঁচিশের কোঠায়। যে-বয়সে যত আলো পড়ে, তত ভয় কমে। উপকেন্দ্র যেহেতু দুটি, সুতরাং দু-রকমের হাংরি বাওয়াল শুরু হয়েছিল। একটা, শৈল-বাসু-সুভাষদের বস্তি-কলকাতার 'ছোটলোকি' বাওয়াল; এখানে যে-দলের নাম দেওয়া যাক হাংরি -- 'এ' গ্রূপ। অন্যটা মলয়-সুবিমলদের ডায়াসপোরিক বাওয়াল, অর্থাৎ 'বি'-গ্রূপ। দ্বিতীয় গ্রূপের সর্বময় কর্তা ছিলেন পাটনার ছোটলোক আর কুচেল অধ্যুষিত দরিয়াপুর মহল্লার নামচিন ষ্টুডিওঅলা রঞ্জুবাবুর ছোটছেলে বিশ বছরের ফনকু ওরফে ফনা, অথবা ইমলিতলার মুল্লু খান ওরফে মলয় রায়চোধুরী, সেটা জোরও ধরেছিল মলয়ের জোরদার ইস্তেহারি ভাষার চটকে, অপেক্ষাকৃত বেশি; আর, তাঁদের সে-টিমও ছিল বেশ ভারি। বহু পুরনো জ্ঞানপাপী সে-দলে ভিড়েছিল। 'এ' গ্রূপ এই 'বি' গ্রূপের নাম দিয়েছিল 'চুলকে দেওয়া হাংরি জেনারেশন'। প্রথম গ্রূপটি মলয়কে 'মফসসলের অজ্ঞাত গাড়োল' বলেও চালাতে চেয়েছিল ব্যক্তিগত আক্রোশবশত। তাঁরা, প্রত্যেকে ছিলেন, কেউ কেউ ছদ্মভাবে, মলয়ের বিরোধীপক্ষ। বিশেষত আশির দশকে পুনরুত্থিত মলয়ের নিজেকে হাংরি আন্দোলনের স্রষ্টা বলে চালানো, কিছু-কিছু ক্ষেত্রে তাঁর ইতিহাস-বিকৃতি এবং মাত্রাতিরিক্ত আত্মপ্রচারে দাগা পেয়েই প্রথম গ্রূপটির গোসা ধরতামাশি পেয়েছিল এবং তাঁরা পাগলের মতো ক্ষেপে উঠেছিলেন। সুতরাং প্রথম দলটির ঐ পাঁচ শরিক যাঁরা আন্দোলন-চলাকালীন, ষাটের দশকে যা নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাননি, আশি ও তৎ-পরবর্তী পিরিয়ডে মলয়ের মতই, নিজেদেরকে 'হাংরি আন্দোলনের স্রষ্টা' হিশেবে প্রচার করা শুরু করে দেন। দায়িত্ব না নিয়ে একটু হাস্যচ্ছলে বলি, হাংরি লেখকদের মধ্যে কেউ আধুনিকতাবাদীদের মতো 'ডক্টরেট' ছিলেন না, ----- সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, মনোবিজ্ঞান কোন কিছুতেই একজনও 'উলেমা' ছিলেন না বলে এহেন পারস্পরিক কাদাহোলি। আমি কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কুম্ভলস চাই না, অতএব কোন্দলটি এড়িয়ে যাচ্ছি।

এ-কথা ঠিক যে হাংরি কোন ইজম ছিল না। ছিল একটা স্টাইল বা আইডিয়া। আরও বলতে পারি, একটা ঘটনা, বাংলাভাষায় সেভাবে যা আগে কখনো ঘটেনি। বাংলা সাহিত্যের তথাকথিত মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন অনাদৃত এক উপদ্রুত এলাকা থেকে বিশাল এক ঢেউ, উঠে এসে, আছড়ে পড়েছিল এজি-গোয়িং সাহিত্যের ল্যাসলেসে মসৃণ চত্ত্বরে। সমাজের একেবারে নিচুতলার ভাষা ও ভাবনাকে সাহিত্যের কাছাকাছি নিয়ে আসার, পক্ষান্তরে বাংলা সাহিত্যের লিরিকফুলের বাগানকে তছনছ করে নতুন প্রতিমান প্রতিষ্ঠার তাগিদে হাংরি ছিল প্রথম আর তখনো-অব্দি একলোতা বৈপ্লবিক সমীহা।

Comments
Dayamay Mahanty
1


Ajit Roy replied · 3 Replies
Tanumay Goswami
Tanumay Goswami বাংলা ভাষার উন্নতি ও বিকাশে ডায়াসপোরিক লেখকদের গুরুত্ব অপরিসীম l বিশেষত গদ্য সাহিত্যে বাংলার শরীরে বঙ্গেতর শব্দের প্রয়োগ, এক বহুমাত্রিক ও সুদূরপ্রসারী ঘটনা l এইভাবে প্রান্ত থেকে কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার জ্যামিতিক প্রবণতা l
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
সুকল্প দত্ত
সুকল্প দত্ত কবি ফাল্গুনী রায়,ত্রিদিব মিত্র,আলো মিত্র,আর এই আন্দোলনের বেনারস বা কাঠমান্ডু কিসসায় অনিল করঞ্জাই ও করুণানিধান মুখোপাধ্যায়ের নামোল্লেখটা প্রয়োজন ছিল।
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
Papiya Mandal
Papiya Mandal আজও...
ভালো থাকুন.....
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
Basab Ray
Basab Ray দায়িত্ব না নিয়ে একটু হাস্যচ্ছলে বলি, হাংরি লেখকদের মধ্যে কেউ আধুনিকতাবাদীদের মতো 'ডক্টরেট' ছিলেন না, ----- সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, মনোবিজ্ঞান কোন কিছুতেই একজনও 'উলেমা' ছিলেন না ... ঠিকই, কিন্তু এঁরা সকলেই প্রচুর পড়াশোনা করতেন, মলয়-সমীর সবচেয়ে বেশি পড়েছেন। শৈলেশ্বর কাছাকাছি থাকবেন। অরুণেশ একটু পেছনে।
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
Tanumay Goswami
Tanumay Goswami এক্ষেত্রে আমি সমীর রায়চৌধুরী সম্পাদিত "হাওয়া 49" পত্রিকার 'পোস্ট কলোনিয়ালিজম্ : উত্তর ঔপনিবেশিকতা'-- শীর্ষক সংখ্যাটি পড়তে বলবো l তাহলে সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী-- প্রমুখদের চিন্তা-ভাবনা-দর্শনের সাথে সম্যক মোলাকাত্ হয়ে যাবে l
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w · Edited
Dipayan Pathak
Dipayan Pathak তেষ্টা আরোও বেড়ে গেলো
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
Tanushree Pal
Tanushree Pal Tritio & sesh kisti dekhe monta kharap hoye galo....lekha porey prottasa r o bere galo ....valo thakben.
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
Pulak Kumar Bera
Pulak Kumar Bera বাপরে হাংরি পড়তে গিয়ে দেখছি টেংরি খুলে যাবার যোগাড়! দারুণ লেখা।
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
Tanumay Goswami
Tanumay Goswami যাঁরা অস্বীকার করেন প্রথাগত ও মৃত চিন্তাভাবনাকে, যাঁরা পশ্চাতের বহমান ও জীবন্ত ধারাগুলোকেই স্বীকার করেন, পচে হেজে যাওয়া গুলোকে নয়, তাঁদের প্রতিষ্ঠা পেতে একটু দেরি হয় । কিন্তু তাতে কিছু এসে যায় না, তাঁদের পথ চলা থামেনা । রবীন্দ্র পরবর্তী কাব্য কোলাহলের See more
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 3w · Edited
Ajit Roy
Ajit Roy মূল ব্যাপারটা হচ্ছে, এসব কে লিখবে? সমাজের উপরিভাগের মাখন-খাওয়া লেখকরা লিখলে আকাদেমি, জ্ঞানপীঠ। নিচুতলার লেখক লিখলে ঘন্টা। নো প্রবলেম। ওরা স্বীকৃতি দেবার কে? এদেরকে যাঁরা ভালোবাসেন এবং গণপুরস্কারে ভূষিত করেন, তাঁরাই 'মহাকাল'।
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
দেবাশিস মুখোপাধ্যায় চন্দ্রগ্রহণ পত্রিকা একটি ভালো সংখ্যা করেছে সম্প্রতি হাংরি নিয়ে
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
Manasi Kabiraj
Manasi Kabiraj great , great n great
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
Pradip Chakraborty
Pradip Chakraborty অজিতদা কি বিপুল পড়াশোনা করে বিশ্ব সাহিত্যের angry ইতিহাসের বিশ্লেষণের পর হাংরি জেনারেশন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং অনেক অজানা তথ্যের সংযোজন।বিশেষত একটা ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আজ প্রায় বিষ্মৃত নাম শ্রদ্ধেয় মলয় রায়চৌধুরীকে হাংরি জেনারেশনের আলোচনার See more
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
Pradip Chakraborty
Pradip Chakraborty অজিতদা হাংরি জেনারেশনের ওপর এই তিনটে কিস্তি যদি আমি অনন্যায় প্রকাশিত হয় অনেকের পাছা হলুদ হয়ে যাবে এবং একটা ঐতিহাসিক দলিল হোয়ে থাকবে।
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w · Edited
কৌস্তভীয় গঙ্গোপাধ্যায়
কৌস্তভীয় গঙ্গোপাধ্যায় যত পড়ি না , এই হাংরি , বিট , এংগ্রিদের নিয়ে ... এদের কার্যকলাপ নিয়ে .... বিশ্বাস করুন Ajit দা , Tanumay দা , Somnath দা, কান্না পেয়ে যায় ....
তাও তো শিল্প , সাহিত্য নিয়ে সেই অল্পটুকু সময় হলেও , উত্তাল হয়েছে সব ! লাথালাথি , বাওয়ালবাজি হয়েছে !!
See more
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
সুমন পাটারী
সুমন পাটারী সেভ করে রাখলাম।
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
Sushanta Rava
Sushanta Rava really helpful topic...thank you
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 50w
Shyamali Sengupta
Shyamali Sengupta আমরা অনেকেই thirsty crow
কিস্তি শেষ বলে কোন কথা হয় না
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 49w
Upananda Dhabal
Upananda Dhabal অনবদ্য পোস্ট
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 3w
Jayeeta Bhattacharya
Jayeeta Bhattacharya পড়িয়াছি তনুময় স্যর।কাছে আছে।
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 3w
Manik Chandra Das
Manik Chandra Das মলয় দা'র লেখা , সমীর দা'র লেখা পড়েছি।আপনার লেখাটিও পড়লাম।ভীষণ ভালো লেখা।
Manage
LikeShow More Reactions
· Reply · 3w

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন