শুক্রবার
হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
বৃহস্পতিবার
ভেজাল হাংরি সংকলন সম্পর্কে বাসব রায়
লেবেলসমূহ:
সমীর রায়চৌধুরী,
হাংরি আন্দোলন,
Hungry Generation.,
Malay Roychoudhury,
Samir Roychoudhury
বুধবার
হাংরি আন্দোলনের কবি প্রদীপ চৌধুরীর কবিতা
নাগরিক উপকথা
প্রদীপ চৌধুরী
শহরের ব্যস্ত স্কোয়ারে এখন ভীড় করেছে
আমাদের প্রিয় লোকজন, কে একজন
দুই হাত উপরে তুলে মুঠো মুঠো আগুন
কার মুখের উপর ছুঁড়ে দিচ্ছে
আর তার ১ ফুট দূরে কামানের গোলার মতো
চোখ বড় করে আরেকজন, সরাসরি
সিনেমা পোস্টারের দিকে তাকিয়ে আছে ।
এসো, আমরা সেখানে গিয়ে দাঁড়াই !
একজন যুবক আমার কাছে হঠাৎ চেয়ে নেয়
দেশলাই ! সিগ্রেট না জ্বেলে
সে হঠাৎ ছুটে যায়, কিছু দূরে
বিশাল বাড়ির সামনে; পকেট থেকে
বোতল বের করে যুবক সারা গায়ে
ছড়িয়ে দেয় পেট্রোল
মাত্র একটি কাঠি প্রস্তুত শ্রেণীর মত,
দপ্ করে জ্বলে ওঠে চোখ,
চারদিকে বাঁধভাঙা পাখির সঙ্গীত—
স্বাধীনতা, এসো তার পুড়ে যাওয়া দেখি !
মিথ্যা নিয়মের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত থাবা
কাউকে রেহাই দেয় না, তাই তো বালিকা
কেবল একবার হারিয়ে যাওয়া অপরাধে
আর ফিরে যেতে পারেনি মনিহারি-
মেলা থেকে আলের ধারের ঘরে,
মই লাগিয়ে একদিন আব্রুহীন রাস্তা থেকে তাকে
উঠিয়ে দেয়া হয় গম্বুজনগরে;
সেখান থেকে রোজ সন্ধ্যায় চুঁইয়ে পড়ে
বীর্য ও আতরের গন্ধ— এসো,
নতমুখে কাঁপতে কাঁপতে আমরা
অপেক্ষা করি, কাঁদি ।
এই ধারাবাহিকতা একদিন খোলসের মতো
সকলের শরীর থেকে খসে পড়বে
যেদিন লালাভেজা জড়িয়ে থাকা
শরীর থেকে তুমি ছাড়িয়ে নেবে নিজেকে
আর আমাদের সম্মিলিত উত্তাপ
ছিঁড়ে কুটি কুটি টাইফুন মেঘের মতো
নিজেকে আছড়ে দেবে ১ জন কবির কাছে
তুমিই কবিতা, তুমি কাছে এসো !
পূর্ব গোলার্ধের সবাইর সঙ্গে আমরাও
দেখব একদিন অস্তগামী সূর্য
গলিত সোনার মতো শরীর বিছিয়ে দিয়েছে
শহরের আর গ্রামের
গ্রামের আর শহরের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে
আর তখুনি পিঠভর্তি চুল এলিয়ে
গম্বুজ থেকে রাস্তায় নেমে এসেছে
আমাদের বোন;
তার মুখে গর্বিত ও অর্থপূর্ণ হাসি ।
প্রদীপ চৌধুরী
আর অন্ধকার নেই;
ধূসর আকাশ জামা-পাজামার মতো
আমার স্বাভাবিক ব্যবহারের মধ্যে চলে এসেছে ।
দিন রাত্রি আমার কাছে সমান দরকারী, আমি
যখন কাজের পর ঘুমিয়ে পড়ি—সে কি ঘুম !—
আর আবরণহীন শরীরে আবরণহীন স্বপ্নে
জড়িয়ে যাই
এই ভূখণ্ডের নরনারীর প্রতিরোধহীন চিৎকার ও
ছুটোছুটি আমাকে স্পর্শ করে না
অথচ অলিখিত দূরত্বে তখনো কেউ
ভীড়ে একা হেঁটে যাচ্ছে
...একটি যুবতী কিছুতেই বাথরুম থেকে বেরোতে পারছে না
...একজন আততায়ী তার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে
অবাক হতে পারছে না
...দাবী আদায়ের বহু পরেও একজন কর্মচারী
মিছিল থেকে বেরুতে পারছে না
...আমার বান্ধবীটি কিছুতেই বলতে পারছে না
ক্ষুধা আগুনের মতো সর্বত্রগামী—
জামা-পাজামার ও আকাশের মতো সহজ ও অফুরন্ত ।
দূর প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছে জয়িতা
প্রদীপ চৌধুরী
১.
(রীতিমতো) দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত গ্রহে
দাঁড়িয়ে আছি আমরা । পরস্পরের শরীর
দেখা যায় না এখান থেকে । শব্দহীন
ঠোঁটে আটকে থাকে মরুবাতাস ।
বুক-ঠেলে-বেরিয়ে-আসা মানুষের ভাষা
মানুষের বুকে ফেরে না । অভ্যস্ত প্রজনন
প্রক্রিয়ার ছায়া কাঁধের মাংসে হাত রাখে ।
জীবনের দ্বিতীয় ভাগে রহস্যময় স্বপ্ন ।
সাময়িক বিভ্রান্তি । নারীর শরীরে
কল্পনাএ একপাটি দাঁত— একি !...
প্রতিটি মানুষী-সম্পর্কে এই স্বাভাবিক চক্রান্ত ।
শরীরে মিউকাস বাড়ে ।
ইথার ফসফরাস-আলোকিত হয়ে ওঠে ।
আবিষ্ট চলাচল রেস্তোরাঁ থেকে থেকে রাস্তায়,
রাস্তা থেকে রান্নাঘরে, ফটকের কাছেই
কসাইখানায় ।
শিহরণ দম বন্ধ করে আমার, এবং ভয়,
আরো কাছাকাছি হতে সাহায্য করে ।
২.
দূর প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছে জয়িতা; সেখানে আমার
ফেলে আসা জ্যাকেট এবং জিঘাংসা তীব্র আছাড়ে
জাগিয়ে দেবে তাকে । ডিসেম্বরের মাঝরাতে
বিছানায় যাবার আগে সে আর আততায়ীর ভয়ে চমকে উঠবে না,
অথবা গেরিলা-কবির ক্ষতস্থানে হাত রেখে
আচমকা আলাদা হয়ে যাবে না । আমি নিশ্চিত
স্তূপীকৃত বরফ গলাবার জরুরী তাগিদে
জয়িতা আমাকে সম্পূর্ণ নেংটো হতে প্ররোচিত করবে ।
রূপান্তর
প্রদীপ চৌধুরী
কাল রহস্যময় দূরত্বে আমার সামনে বসেছিল নারী
তার ধবধবে শরীর থেকে ঝরে পড়ছিল শিশিরের জল
আমি তার চোখের দিকে তাকাতেই রূপান্তর শুরু হয়
অতিরিক্ত রক্তচাপে তার শরীর রামধনুর মতো বেঁকে যায়
একটু পরে সে সোজা হয়ে বসে
সে স্পৃষ্ঠ সবিতার মতো লাল হতে থাকে
তার বুকের রূপালী গন্ধক বিকিরিত হতে থাকে
সারা ঘরে সৌর বিকিরণ
সে আমার চোখ থেকে চোখ সরায় না ফলে
যাবতীয় সৌর রশ্মিগুলি আমার শরীরে ঢোকে
গ্রহের মতো বিশাল বুক ওঠা নামা করতে থাকে
সেখানে মাংস আছে কিন্তু তা পচে না
আকার আছে সীমারেখা নেই
ফার্নেস থেকে ছিটকে পড়া এক স্ফুলিঙ্গ
তার ঠোঁটে লেগে আছে মৃত্যুভেদী হাসি
আমি বুঝতে পারছি তার ভালোবাসার উত্তাপ
স্ফুটনাঙ্ক ছাড়িয়ে গেছে
সাদা ছাইয়ের মতো আমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছি
আমি কাল নারীর ভালোবাসা জেনেছিলাম ।
গ্রহণ
প্রদীপ চৌধুরী
দলে দলে ছাদের ওপর উঠে আসছে মেয়েরা
অভিশপ্ত ২৪ ঘণ্টার আর মাত্র কয়েক সেকেণ্ড
শেষরাতের সংশয় ভরা আলো-অন্ধকারে
কেউ কারো মুখ দেখতে পাচ্ছে না শরীর
মনে হচ্ছে স্বপ্নে দেখা জীবনের যৌনপরমানু
মেঘের মতো ঘন হচ্ছে পারস্পরিক চুম্বনের টানে
শহরের বাড়িঘরগুলি একসঙ্গে
চলে যাচ্ছে হিমালয় পাহাড়ের কাছে আরো দূর
আকাশের হাতছানি মেয়েরা জেনেছে
ওদের শরীরের রেখা থেকে উপচে পড়া লালা
ও হলুদ কুসুম ভালোবাসার শেষ স্ফুলিঙ্গ স্পর্শে
একটি ওমলেটের মতো সুস্বাদু হয়ে উঠছে
রোমশ বিছানা ছড়ে দলে দলে মেয়েরা উঠে আসছে
অভিশপ্ত তিন ঘণ্টার আর মাত্র কিছুক্ষণ বাকী
অন্ধকারে কক্ষচ্যুত তারাগুলি ঢুকে পড়েছে
ওদের শরীরে শিরার ভেতর আরেকটি
অতিবেগুনী পৃথিবী স্পষ্ট হচ্ছে
পিতা ও সন্তানের মধ্যে আর কোন ব্যবধান নেই
গর্ভাধারের কাছে সৃষ্টির কোন ঋণ নেই
অপেক্ষমাণ এসবের আনন্দসঙ্গীতে
আতরের মতো চেতনায় ঢুকে পড়ছে মেয়েরা
সমষ্টিগত শরীর মেগনোলিয়ার মতো স্ফীত হচ্ছে—
সন্ধিতে সুগন্ধ নিয়ে মেয়েরা ছাদের উপর উঠে আসছে
গ্রহণ শেষ হতে আর মাত্র কয়েক সেকেণ্ড বাকি
কিছু পরে রোমশ বিছানাগুলি শতাব্দীর গিরিখাত হবে
পুরুষের সীসা নির্মিত কোমরগুলি স্তব্ধ বালিয়াড়ি
কিছু পরে বাসি কাপড়গুলিকে মেয়েরা এক এক করে
ছুঁড়ে দেবে গলির খরস্রোতা নদীতে
আকাশের আলো সরাসরি স্পর্শ করবে ওদের লুকানো ক্যাকটাস
মেয়েরা ডানা মেলে কবিদের আত্মায় ভেসে বেড়াবে
আততায়ী ও ডালিয়া
প্রদীপ চৌধুরী
লেখার টেবিলের বিপরীত দিকে আততায়ী
আমার মুখের দিকে মুখ তুলে বসে আছে ।
আমি তার নির্বাচিত লোক ।
ঘরের কোণে লুকানো অন্ধকার; সে আমাকে
কিছুই বলে না । অভিপ্রেত গলায় সে
আমার অসুবিধা, বিরক্তিকর ধারাবিবরণী
জানতে চায় ।
সামান্য অস্বস্তিতে কেবল একবার শরীর নড়ে—
তা কি অসুবিধা ?
না । আমরা যে যার সিগারেট
হাত থেকে ঠোঁটে তুলে নিই । ১ সেকেন্ড
চোখে চোখ থামে ।
আমার কাছাকাছি বিনিময়ের অপেক্ষায় সতীর্থ ।
‘বিদায়, ছোট্ট ডালিয়া ।’ আমি ধারাবাহিকতা
খুঁজে পেতে চাই । জঙ্ঘার সামান্য দূরে
ঝাঁক ঝাঁক পাখি—
কোন ধারাবাহিকতা নেই । জয়িতা,
আমার আঘাতে পুনর্মিলনের প্রতিশ্রুতি নেই ।
মাথায় যন্ত্রণা হয়, দুজনেই বাইরে আসি ।
মাথার উপরে আকাশ তেমনি রহস্যময় ।
তেমনি বিছানা ছেড়ে যেতে হয় একা বাথরুমে ।
বুকে ঘৃণা ভালবাসার চেয়ে কিছু বেশি ক্রিয়াশীল ।
দারিদ্র্য জায়গা বদল না করলে একদিন
চুম্বনের আনন্দ ও অপরাধ
কলগেট ফেনার সঙ্গে চৌমাথার টেপে... তাই হয় ।
এরপর দুর্গন্ধযুক্ত মুখ আর বিজ্ঞাপিত
দাঁতগুলি নিয়ে আমরা অপেক্ষা করব
কখন ঝলসানো মাংসের চাঁদ, অন্য
গ্রহ থেকে ছিটকে আসা এক টুকরো
প্রোটিন-সমৃদ্ধ ঊরু একেবারে থাবার
সামনে ধুপ করে পড়ে থাকবে ।
আমরা মৃতদেহে অভ্যস্ত তাই চোলাইমদের
মতো জীবনকে উত্তেজক পুঁজে, দেশীমালে
পরিণত করি । আর ভালবাসা জাগার আগে
যারা রাইফেল ও যৌনাঙ্গ হাতে তুলে নেয়,
একদিন মাঝরাতে
আততায়ীর অসম্পূর্ণতা নিয়ে তারাই দরজায়
করাঘাত করে । বলে, শুভরাত্রি, আমরা এসে গেছি !
ঐ তো উপবিষ্ট আততায়ী— নুয়ে পড়া
চেনা পথচারী ।
‘বিদায় ছোট্ট ডালিয়া’— যথাযথ বিনিময়ের
অভাবে আমার অসমাপ্ত স্বপ্নগুলির জন্যে
সামনেই অপেক্ষা করছে আততায়ী । আমার
উন্মোচন না হওয়া অব্দি একই ভঙ্গীতে
মুখোমুখি বসে থাকবে সারারাত । পরবর্তী
ভোরে আমাকে একই অবস্থায় ফেলে রেখে
রাসায়নিক পোষাকে বেরিয়ে যাবে । জয়িতা,
বলাৎকার দীর্ঘজীবী হোক !
আকম্পিত রাত্রিতে আমি সারাক্ষণ দেশলাই
আলোতে যার চোখে চোখ রেখে ১ সেকেণ্ড
থেমে গিয়েছিলাম, এরপর প্রতি রাতেই সে
আমার টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ায়; আমাকে দেখে ।
একদিন একটি বালকও দিগন্তরেখার আলো দেখেছিল
সেই বালক একদিন আলের পথ ধরে
ধানখেতের রহস্য ছাড়িয়ে আরো দূরে
মৃতদেহ ও আগুনের
খোঁজে বেরিয়ে পড়ে । আর মাঝরাতে আমার
ঘরে ফিরে আসে আততায়ী । একা ।
স্বামী-স্ত্রী এবং অন্যান্য-১
প্রদীপ চৌধুরী
তোমার শরীরে যে অতুলনীয় গর্ত
আমি দেখেছি ( এক জায়গায় অন্তত )
এবং আমার সন্ত্রাসবাদী বিবেক
( তুমি তা কি সম্পূর্ণ দেখেছো ? ) — এরপর
মানুষ হিসেবে আমরা আর কোন্ নতুন সর্বনাশে ভয় পাবো ?
ঐ গর্ত আছে জেনেও
সারাজীবন তোমার দিকে তাকাবো
স্বাভাবিকভাবে; তুমিও
জলের ওপর ঘুরপাক খেয়ে
ফিরে আসবে আমার অবয়বহীন
ক্ষুধার্ত শরীরের কাছে;
মানুষের কোষের অধঃপতনের স্বাদ
আমরা জেনেছি—
সমগ্র শরীরে এই অধঃপতন
বারবার না ঘটিয়ে আমাদের উপায় নেই
অবশিষ্ট প্রজন্মও এই মরণশীলতার মধ্যে চলে যাবে ।
স্বামী-স্ত্রী এবং অন্যান্য-২
প্রদীপ চৌধুরী
এই অভিপ্রেত নির্বাসন কেন মেনে নেয়া হয়েছে কে জানে ?
শীততাপ অনিয়ন্ত্রিত কারাগার—
কেন দাবার চাল ফেলে রেখে পরস্পর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি
জীবন্ত পাথরের মত অনিবার্য !
মনে পড়ে— ১নং ভ্রূণ হত্যার পর ভয়ে কয়েক রাত ঘুমুতে পারিনি
২য় বারও সেই ভয় কাটানো যায়নি
৩য় বারের আগেই আমরা জেনে নিয়েছিলাম “উঠিয়ে-নেয়া-পদ্ধতি”
সারা জীবনই কি এইভাবে চূড়ান্ত
সময়ে উঠিয়ে নিতে হবে ?
হয়ত তা-ই; এবং যথা সময়ে আমাদের
ছেলেকেও এই পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে হবে ।
স্ত্রীলোক
প্রদীপ চৌধুরী
নিওন ভর্তি ঘরে লুটোপুটি খাচ্ছে রাত্রি । লেখার
টেবিলে স্তূপীকৃত সরঞ্জাম । সামনে
পেছনে শেল্ফ গাদাগাদি বই, রেকর্ডার
ও ঢেকে রাখা জল ।
আমার মাথা স্থির ও পরনে পরিষ্কার লিনেন ।
আমি নিজেকে যুক্ত করতে পারছি না ।
দরকারী ও অদরকারী সন কাজের কথা—
সেই রাত্রিতে আমার ‘জাগরণ’ তাৎপর্য
হারিয়ে ফেলে । দেয়ালের একটু উপরে,
যেখানে আমার ছায়া, বিস্তৃত হয়ে পড়েছের
খোলাখুলি পাহাড়
আর দিগন্তরেখার কাছে আমি দাঁড়িয়ে আছি, একা ।
মাঝরাতে প্রিয় স্ত্রীলোক আমার ঘরে ঢুকে পড়ে ।
তার চোখ অপলক । দেখি তার ফর্সা শরীরে
অন্ধকার ভর করেছে— বছরের জমাট বিস্মৃতি
তাকে দেয়ালের ওপাশে নিয়ে যায় ।
সে আমাকে দেখতে পাচ্ছে । আমি
তার নিশি-পাওয়া গলা শুনতে পাচ্ছি না
হায়েনার মতো কানের দুল জ্বলজ্বল করছে । কার ?
৫ গজ দূরত্ব পেরিয়ে সে আমার কাছে আসতে পারছে না ।
আমার সহানুভূতি । বিশ্বাসঘাতকতা তাকে
প্ররোচিত করছে । মাসিক জলোচ্ছ্বাসের মতো
রাত্রির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে তার শরীরের অন্ধকার ।
একদিন মাঝরাতে আমার প্রিয় স্ত্রীলোক
আমাকে ছেড়ে এলডোরাডো দেশে পাড়ি দেয়
আরো বহুরাত আমি ঐ দেয়াল সরাতে পারবো না ।
আর আমার মনে পড়বে ঐ অন্ধকার শরীরে
একে একে ফুটে ওঠা নক্ষত্রগুলিকে—
তারা কিভাবে ফুটে উঠেছিল
আর কিভাবে ঝরে পড়েছিল অভিকর্ষের টানে ।
অধিগ্রহণ
প্রদীপ চৌধুরী
সুরভিত ঊরুতে হাত রেখে দেখি তেমনই
প্রদাহ আছে, কিন্তু সেই পাখিগুলি
ভুল ব্যবহারের ফলে উড়ে গেছে, চোখে পড়ে,
কালো কালো ক্ষত; তাদের ঝলসানো
পালকগুলি সারামুখে লেগে আছে ।
অভ্যস্ত আঙুল জানে এ কার অধিগ্রহণ ।
আমার অপভ্রমণের শেষ পাতা কটি
নিজেরাই উড়ে গেছে; আবছায়া রাস্তায়
অভিযাত্রী, সতীর্থ ও রোমশ উষ্ণতা—
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত; নির্দিষ্ট নিয়মে
চণ্ডাল গঙ্গার কাছে এসে যায়, বলে ‘যাবে নাকি !’
গলুইয়ের ভেতর বসে আমরা যে যার
ঊরুতে হাত রাখি, আমাদের কামনার
আগুনে পোড়ে পাখির শরীর—
গোল ইস্পাতের মতো চকচকে থালায়
ঝলসানো টুকরোগুলি জড়ো করি—,
একটি রহস্যময় জেটি শুয়ে সব কিছু দেখে ।
যুদ্ধ
প্রদীপ চৌধুরী
একটি মৃত গ্রহ থেকে যুদ্ধের সংকেত
ভেসে আসছে এখানে
এখানে এক ডিভিসন সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চল
নৈঃশব্দ্য বেতার থেকে শোনা যায় নারীর ফিস্ফিস্
ওদের কোমর থেকে খসে পড়েছে লাইফ্-বেল্ট
এক শতাব্দীর ভুল যুদ্ধের শেষে ওদের
রাইফেলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে
বুনো পাখির ঝাঁক
ওদের দণ্ডাজ্ঞাই ওদের স্বাধীনতা
ওদের গ্রেনেডগুলি বিস্ফোরিত হয়েছে—
এখন ইউকেলিপটাসের গন্ধে পুনরায়
জেগে ওঠে মহামারীগ্রস্ত এলাকা
লেবেলসমূহ:
প্রদীপ চৌধুরী,
হাংরি আন্দোলন,
Hungry Generation.,
Pradip Choudhuri
সোমবার
মলয় রায়চৌধুরীর বিতর্ক : সম্পাদনা মধুসূদন রায়
মধুসূদন রায়
আমার সাম্প্রতিকতম পোস্ট এবং এই পোস্টের প্রচ্ছদ দেখেই বুঝতে পারছেন কোন বিতর্কে জড়ানোর কথা বলছি । এবার তাহলে সত্যিটা বলাই যায় ।
মলয় রায়চৌধুরী এবং তাঁকে ঘিরে সাড়া জাগানো হাংরি সাহিত্য আন্দোলন – সবমিলিয়ে একটি বিতর্ক । সেইসব মিলিয়েই এই বই । যার সম্পাদনার দায়িত্বটি আমার উপর । সুতরাং এমন একটি বিষয়, যেখানে নিজের অস্তিত্ব কিছুটা হলেও জড়িয়ে যাওয়া – একটা অস্থিরতা, উদ্বেলতা । নিজের ভূগোল একেবারের সূক্ষ্ম এবং ক্ষুদ্র বলেই তাকে নিয়ে নিরীক্ষা করা যায় । কে না জানে, নিজস্বতাকে অতিক্রম করা বড় বিপজ্জনক !
মলয় রায়চৌধুরী -একজন পোস্টমডার্ন ভাবুক । তাঁর চিন্তাভাবনার স্তরকে কোন
নির্দিষ্ট আইডেন্টিটি দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না অথচ সাহিত্যে তিনি নিজেই
আইডেন্টিটি । বলা যায় বাংলা ভাষার চির প্রতিষ্ঠিত আধুনিক চিন্তাভাবনার
স্তরকে নাড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তাঁর প্রবেশ।
সে কারণেই ‘হাংরি আন্দোলন’ । আর যার আফটার এফেক্ট আমি আপনি অনুভব করে চলেছি অবিরত । অথচ এই আমার আপনার মনের মধ্যেই ঢুকে আছে এক বিষ-বীজ, হাংরিদের লেখা মানে গালাগাল ও অশ্লীল শব্দের কোলাজের ভেক্টর রূপ । সত্যিই কী তাই ?
কেন প্রয়োজন ছিল হাংরি আন্দোলনের ? মলয় রায়চৌধুরী কেন বিতর্কিত একটি নাম ?
আর তাই ‘মলয় রায়চৌধুরীর বিতর্ক’ ।
শীতল চৌধুরী, অজিত রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু ও মলয় রায়চৌধুরী প্রমুখদের লেখায় সমৃদ্ধ ।
বার্ণিক প্রকাশন থেকে প্রকাশের পথে এই বইটির প্রচ্ছদটি নির্মাণ করেছেন সুমন সেন Suman Sen ।
প্রচ্ছদে ব্যবহৃত মলয় রায়চৌধুরীর
ছবি – চন্দ্রিল গোস্বামী ।
সে কারণেই ‘হাংরি আন্দোলন’ । আর যার আফটার এফেক্ট আমি আপনি অনুভব করে চলেছি অবিরত । অথচ এই আমার আপনার মনের মধ্যেই ঢুকে আছে এক বিষ-বীজ, হাংরিদের লেখা মানে গালাগাল ও অশ্লীল শব্দের কোলাজের ভেক্টর রূপ । সত্যিই কী তাই ?
কেন প্রয়োজন ছিল হাংরি আন্দোলনের ? মলয় রায়চৌধুরী কেন বিতর্কিত একটি নাম ?
আর তাই ‘মলয় রায়চৌধুরীর বিতর্ক’ ।
শীতল চৌধুরী, অজিত রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু ও মলয় রায়চৌধুরী প্রমুখদের লেখায় সমৃদ্ধ ।
বার্ণিক প্রকাশন থেকে প্রকাশের পথে এই বইটির প্রচ্ছদটি নির্মাণ করেছেন সুমন সেন Suman Sen ।
প্রচ্ছদে ব্যবহৃত মলয় রায়চৌধুরীর
ছবি – চন্দ্রিল গোস্বামী ।
লেবেলসমূহ:
মলয় রায়চৌধুরী,
হাংরি আন্দোলন,
Hungry Generation.,
Malay Roychoudhury
হাংরি আন্দোলনের ইতিহাসকে বিকৃত করার অপচেষ্টা : কথাকলি দত্ত
লেবেলসমূহ:
শঙ্খ ঘোষ,
শৈলেশ্বর ঘোষ,
Hungry Generation.,
Malay Roychoudhury,
Sabyasachi Sen,
Saileswar Ghosh
রবিবার
"হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য" : শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং শীলা চট্টোপাধ্যায়ের প্রেম ।
শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রায় তিন বছর চাইবাসায় সমীর রায়চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন । সমীর যখন ট্যুরে যেতেন তখন শক্তিকে মধুটোলানিবাসী সুধীর চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে অতিথি হিসাবে রেখে যেতেন । শক্তি সুধীরবাবুর মেয়ে শীলার প্রেমে পড়েন এবং উপন্যাস লেখা ছেড়ে দিয়ে কবিতা লেখা আরম্ভ করেন । সবই প্রেমের কবিতা, শীলাকে উদ্দেশ্য করে লেখা । প্রচুর কবিতা লিখতেন পপতিদিন এবং সেগুলো শীলাকে শোনাতেন । শীলা কলেজে গেলে শক্তি প্রতিদিন ফেরার পথে অপেক্ষা করতেন ।
শক্তি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন শীলাকে । কিন্তু সুধীরবাবু অনুমোদন করেননি । তার কারণ শক্তি তখন বেকার ছিলেন এবং প্রতিদিন মহুয়ার মদ খেতেন । শীলাকে শক্তির প্রভাব থেকে দূরে রাখার জন্য সুধীরবাবু শীলাকে পাটনায় মলয় রায়চৌধুরীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন । শীলা পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করেন ।
শক্তি সন্দেহ করেছিলেন যে শীলার সঙ্গে তাঁর বিয়েতে বাগড়া দিয়েছেন সমীর ও মলয় । এই ঘটনায় তিনি এতোই মর্মাহত হন যে হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেন। ক্রোধে তিনি হাংরি মামলায় আদালতে মলয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন । তাঁর ও শৈলেশ্বর ঘোষ ও সুভাষ ঘোষের সাক্ষ্যের কারণে মলয় রায়চৌধুরীর একমাসের কারাদণ্ড হয় ।
মীনাক্ষী বিশ্বাসকে বিয়ে করার পর সমীর ও মলয়ের সঙ্গে শক্তির সম্পর্কে স্বাভাবিক হলেও আগের সেই বিশ্বাসনির্ভর সম্পর্ক ছিল না ।
শীলার বিয়ের পরও শক্তি তাঁর বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলেন এবং শীলার স্বামী সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলে এসেছিলেন শীলাকে যত্নে-ভালোবাসায় রাখতে । একটি পুত্র হবার পরই এক দুর্ঘটনায় সৌমেন মারা যান । শীলার অকাল-বৈধব্য সহ্য করতে পারেননি শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং তাও প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর কবিতায় ।
লেবেলসমূহ:
Hungry Generation.,
Shakti Chattopadhyay,
Shila Chattopadhyay
শৈলেশ্বর ঘোষ ও মলয় রায়চৌধুরী সম্পর্কে বাসব রায়
লেবেলসমূহ:
শঙ্খ ঘোষ,
শৈলেশ্বর ঘোষ,
Hungry Generation.,
Sabyasachi Sen,
Saileswar Ghosh
শৈলেশ্বর ঘোষ ও শঙ্খ ঘোষ সম্পর্কে সমরজিৎ সিংহ
লেবেলসমূহ:
শঙ্খ ঘোষ,
শৈলেশ্বর ঘোষ,
হাংরি আন্দোলন,
Hungry Generation,
Sabyasachi Sen,
Saileswar Ghosh
হাংরি আন্দোলনে শঙ্খ ও সুনীলের অবদান : সমীর রায়চৌধুরী
শুক্রবার
কথাকলি দত্ত : ইতিহাসের বিকৃতি : শঙ্খ ঘোষকে হাংরি বানিয়েছেন সব্যসাচী সেন !!
কথাকলি দত্ত : ইতিহাসের বিকৃতি
হাংরি জেনারেশন রচনা সংগ্রহ যখন দে’জ এর মতন নামী প্রকাশন সংস্হা প্রকাশ করে, তখন মনে ফুর্তি হয় । তাই বইটি তড়িঘড়ি সম্পাদকের কাছ থেকে সংগ্রহ করি । সম্পাদক সব্যসাচী সেনকে আমি জানি না । প্রথমে ভেবেছিলাম, ঘ্যাম কেউ হবেন বোধহয়, খোঁজখবর নিয়ে দেখলাম, না না, তেমন কেউ নন, শৈলেশ্বর ঘোষের চামচা । শঙ্খ ঘোষ অবধি এখনও পৌঁছোতে পারেনি বেচারা, চেষ্টা যদিও আছে খুবই, তবে শঙ্খর চামচা অভীক মজুমদারের কাছ অবধি পৌঁছে গেছে । যদি ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে । কথা হচ্ছে হাংরিদের নিয়ে -- এর মধ্যে আবার শঙ্খ ঘোষ এলেন কোথ্থেকে ! অভীক ভাইটি, সব্যসাচীর ভাইপোটি, শঙ্খ ঘোষকে আমি আনিনি -- এনেছ তোমরা -- বইয়ের শুরুতে । যে মাঝারি মাপের কবিটি লম্বা জিব বের করে সারা জীবন আনন্দবাজারের পা চেটে-চেটে কবিগুরু হলেন, তিনি নাকি হাংরি ! সোনার পাথরবাটি ! কাঁঠালের আমসত্ব ! তাঁর খিদে তো অন্য ভাই অভীক, ভাইপো সব্যসাচী ।
এখন ৬৭০ পাতার বই তোমাদের প্রকাশ করতে হল শুধু শঙ্খর নির্দেশে, শৈলেশ্বরকে হিরো বানাতে এবং হাংরি স্রষ্টা মলয় রায়চৌধুরীকে হেয় করতে ! বেচারা ! ইতিহাস চক-ডাস্টার নয় যা চাইলেই মুছে দেওয়া যায় ।
যে যাই বলুক, হাংরি আন্দোলনের স্রষ্টা মলয় রায়চৌধুরীই ছিলেন । তাঁর সঙ্গে আরও অনেকেই হয়তো ছিলেন, কিন্তু মলয় রায়চৌধুরী এই আন্দোলনের জনক ।
অভিভাবকবাবুরা কথা ঘোরাতে চাইলেও সত্যিটা সত্যই থাকবে । মলয়ের নেতৃত্বে ১১ টি প্রস্তাবের ইশতাহার বের করেছিল আন্দোলনকারীরা । একটা টকে যাওয়া ও পচে যাওয়া সময়ের বিরুদ্ধে ছিল প্রতিষ্ঠানবিরোধী প্রতিবাদ ।
লেবেলসমূহ:
শঙ্খ ঘোষ,
শৈলেশ্বর ঘোষ,
Hungry Generation.,
Malay Roychoudhury
বৃহস্পতিবার
শ্রীমন্তী সেনগুপ্ত : হাংরি আন্দোলনের স্রষ্টা মলয় রায়চৌধুরীর সাহিত্যপ্রতিভা
Sreemanti Sengupta
এই রচনাটি আমার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । প্রথমত, এটা এক ধরণের ফিরে আসা — আমি শব্দহীনতার মানসিক অবসাদে দীর্ঘকাল ভুগছিলাম, যখন আমার মনে হলো যে এর থেকে নিষ্ক্রমণের সহজ উপায় হবে কমপিউটারের কিবোর্ডে আঙুল রেখে টকাটক টাইপ করে যাওয়া । দ্বিতীয়ত, এই রচনাটি উৎসর্গ করেছি একজন ডিস্টার্বিং কবির প্রতি, এমন একজন যাঁর গভীরতায় প্রবেশ করার সাহস নেই আমার । এখানে আমি যা কিছু লিখব তা মলয় রায়চৌধুরী সম্পর্কে আমার বোধবুদ্ধির অতীত, যিনি বাংলা ভাষার কবি, স্কলার, ষাট দশকের হাংরি আন্দোলনের জনক । তিনি তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে ষাটের দশকের পশ্চিমবঙ্গে সক্রোধে আবির্ভুত হলেন, বাঙালির পচনরত সমাজকে পরিবর্তনের উদ্দেশ্য নিয়ে ।
আমি ইংরেজি উইকিপেডিয়া থেকে অনুবাদ করে একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি :-
“হাংরি জেনারেশন সাহিত্য আন্দোলন মলয় রায়চৌধুরী, সমীর রায়চৌধুরী (মলয়ের বড় ভাই), শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং হারধন ধাড়া (ওরফে দেবী রায়) আরম্ভ করেছিলেন । পরে ত্রিশের বেশি কবি এবং শিল্পীরা তে তাঁদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখ্য বিনয় মজুমদার, উৎপলকুমার বসু, ফাল্গুনী রায়, সুবিমল বসাক, ত্রিদিব মিত্র, রবীন্দ্র গুহ এবং অনিল করঞ্জাই।
“হারি আন্দোলনে মলয় রায়চৌধুরীর ভূমিকা তুলনীয় স্টিফেন মালর্মের সিমবলিজম , এজরা পাউণ্ডের ইমজিজম, আঁদ্রে ব্রেতঁর পরাবাস্তববাদ, এবং অ্যালেন গিন্সবার্গের বিট আন্দোলনের সঙ্গে। হাংরি আন্দোলন এখন ইংরাজিতে Hungryalism বা “ক্ষুধার্ত প্রজন্ম” নামে পরিচিত। হাংরি শব্দটি জিওফ্রে চসারের “ইন দ্য সাওয়ার হাংরি টাইম” থেকে নেয়া হয়েছে; দর্শনটি ওসওয়াল্ড স্পেঙ্গলারের “দ্য ডিক্লাইন অব দ্য ওয়েস্ট”-এর ওপর ভিত্তি করে । ১৯৬১ সালের নভেম্বরে আন্দোলনের প্রথম বুলেটিন ইংরেজিতে মলয় রায়চৌধুরী কর্তৃক প্রকাশিত হয় । তবে আন্দোলনটি ১৯৬৫ সালে ফুরিয়ে যায় । এরপর মলয় রায়চৌধুরী কবিতা ছাড়াও উপন্যাস, নাটক, এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু নিয়ে প্রবন্ধ লেখেন, যে ব্যাপারগুলো বাঙালি সমাজকে ভোগান্তির শেষ প্রান্তে এনেছে ।”
“ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ইংরেজী শিক্ষক হাওয়ার্ড ম্যাককোর্ড এবং পরে বাওলিং গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক, যিনি কলকাতা সফরের সময় মলয় রায়চৌধুরীর সাথে সাক্ষাত করেছিলেন, তিনি ফেরলিংঘেটি-সম্পাদিত ‘সিটি লাইাইটস জার্নাল’ ৩-এ এই বিষয়ে লিখেছিলেন : “ষাটের দশকের শুরুতে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে হাংরি জেনারেশনের সাংস্কৃতিক সংগঠনের আক্রমণের একটি কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হলেম মলয় রায়চৌধুরী”। মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা, “এসিড, ধ্বংসাত্মক, ক্ষতিকারক, নির্বিচার, অসম্মানজনক, ক্ষুব্ধ, আক্রমণাত্মক, হতাশাব্যঞ্জক, – এই ভয়ঙ্কর এবং বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গিকে চিত্রিত করে”।
এ থেকে আপনি তাঁর জীবন ও সময় সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন, অন্তত আমি যা বলতে পারব তার তুলনায় স্পষ্ট, কেননা প্রথমত, আমি অনুভবের তাৎক্ষণিকতায় বিশ্বাস করি যাতে পাঠকের সংবেদনকে আক্রমণ করতে পারি, এবং দ্বিতীয়ত, তাঁর সঙ্গে সাইবার জগতে আমার যোগাযোগকে আমি এই রচনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি ।
আমার অশেষ ভাগ্য যে মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে, যাঁকে আমি মলয়দা বলে ডাকতে ভালোবাসি, তাঁর সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল । এই ঘটনাটি ‘সোশাল নেটওয়র্কিঙের’ প্রতি আমার উদাসীন অবস্হানকে কিছুটা নমনীয় করেছে । মলয়দার রচনাবলীর সঙ্গে আমার প্রথম যোগাযোগ ঘটে একজন বুদ্ধিজীবীর মাধ্যমে, দুই বছর পুর্বে, যে ব্যাপারটিকে আমি মনে করি এ-পর্যন্ত আমার জীবনে একটি বাঁকবদলের ঘটনা । যা আমাকে যৌক্তিকতার পাহাড়চূড়া থেকে মোহাচ্ছন্ন জ্ঞানের অতলে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল, এবং আমি ভয়ংকর পতন থেকে নিজেকে বাঁচাবার জন্য একটা লতাকে আঁকড়ে ধরেছিলাম । তাঁর প্রথম যে রচনাটির সঙ্গে আমি পরিচিত হলাম তা ইনটারনেটে পাওয়া ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার” কবিতাটি । আমি কবিতাটির কয়েকটি লাইন তুলে দিচ্ছি, যা পড়ার পর আমি ব্লাশ করতে বাধ্য হয়েছিলাম এবং চোখ বুজে অনুভব করতে পারছিলাম যে এক গরম হল্কা আমার মাথার চুলের গোড়া থেকে বইতে আরম্ভ করেছে :-
তোমার তীব্র রূপালি য়ূটেরাসে ঘুমোতে দাও কিছুকাল শুভা
শান্তি দাও, শুভা শান্তি দাও
তোমার ঋতুস্রাবে ধুয়ে যেতে দাও আমার পাপতাড়িত কঙ্কাল
আমাকে তোমার গর্ভে আমারই শুক্র থেকে জন্ম নিতে দাও
আমার বাবা-মা আন্য হলেও কি আমি এরকম হতুম ?
সম্পূর্ণ ভিন্ন এক শুক্র থেকে মলয় ওর্ফে আমি হতে পার্তুম ?
আমার বাবার অন্য নারীর গর্ভে ঢুকেও কি মলয় হতুম ?
শুভা না থাকলে আমিও কি পেশাদার ভদ্রলোক হতুম মৃত ভায়ের মতন ?
ওঃ বলুক কেউ এসবের জবাবদিহি করুক
শুভা, ওঃ শুভা
তোমার সেলোফেন সতীচ্ছদের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীটা দেখতে দাও আমায়
পুনরায় সবুজ তোশকের ওপর চলে এসো শুভা
যেমন ক্যাথোড রশ্মিকে তীক্ষ্ণধী চুম্বকের আঁচ মেরে তুলতে হয়
১৯৫৬ সালের সেই হেস্তনেস্তকারী চিঠি মনে পড়ছে
তখন ভাল্লুকের ছাল দিয়ে সাজানো হচ্ছিল তোমার ক্লিটোরিসের আশপাশ
পাঁজর নিকুচি করা ঝুরি তখন তোমার স্তনে নামছে
হুঁশাহুঁশহীন গাফিলতির বর্ত্মে স্ফীত হয়ে উঠছে নির্বোধ আত্মীয়তা
পায়জামায় শুকিয়ে-যাওয়া বীর্য থেকে ডানা মেলছে
৩০০০০০ শিশু উড়ে যাচ্ছে শুভার স্তনমণ্ডলীর দিকে
ঝাঁকে-ঝাঁকে ছুঁচ ছুটে যাচ্ছে রক্ত থেকে কবিতায়
এখন আমার জেদি ঠ্যাঙের চোরাচালান সেঁদোতে চাইছে
হিপ্নোটিক শব্দরাজ্য থেকে ফাঁসানো মৃত্যুভেদী যৌনপর্চুলায়
ঘরের প্রত্যেকটা দেয়ালে মার্মুখি আয়না লাগিয়ে আমি দেখছি
এর আগে আমি এরকম কবিতা কখনও পড়িনি । আমি সবচেয়ে প্রথমে আসেপাশে তাকিয়ে দেখে নিলাম যে বাড়ির গুরুজনরা কেউ আমার কমপিউটার স্ক্রিনে উঁকি মারছেন না তো ! আমার চোখ কুঁচকে উঠল আর মণি দুটো ঘন হয়ে এলো, যেমন-যেমন আমি কবিতার ছবিগুলো মস্তিষ্কে স্পষ্ট করে তুলতে লাগলাম, তেমন তেমন ঘটতে লাগলো এগুলো ।
“এই লোকটা কী লিখছে রে বাবা ! লোকটা তো উন্মাদ আস্ফালন করছে !” আর তারপর বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে আমি আমার স্হিতির সঙ্গে আপোষ করে বুঝতে পারলাম যে কবিতাটা আমাকে মর্মপীড়ায় অভিভূত করেছে, কয়েকটা লাইন আমাকে ধর্ষণ করেছে । আমি একা ছিলাম না । অশ্লীল রচনার দায়ে মলয়দাকে আদালতে মামলার দুর্ভোগ পোয়াতে হয়েছিল, আর সেই মামলায় বাংলা কবিতার কয়েকজন নামিদামি মানুষ তাঁর বিরুদ্ধ সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
প্রায় এক সপ্তাহের ঘুমহীন দাহময় দুপুরের পর, আমি কবিতাটায় ফিরে-ফিরে যেতে লাগলাম, বয়ঃসন্ধির সেই বালিকার মতন যে সদ্য নিজের দেহের রহস্যগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়েছে । বিপরীত সেক্সের মানুষকে ছোঁবার জান্তব প্রবৃত্তি, দেহকে লুটেনেবার আগ্রহ, আরন্যক আকাঙ্খায় পাগল হয়ে ওঠার উপক্রম হলো । মলয়দার ভাষার ক্ষমতা আমাকে চিরকালের জন্য যেন অসাড় করে দিয়েছিল । আর তারপর হঠাৎই ফেসবুকে তাঁর সঙ্গে দেখা, আর আমাকে ঘিরে ধরল এক অদ্ভুত ভয় । স্পষ্ট কথায়, আমি এই ধরণের মানুষদের সম্পর্কে ভীষণ আতঙ্কিত । একদল শিল্পী আছেন যাঁরা তাঁদের শিল্পকর্মের প্রতি অত্যন্ত সমর্পিত । এই এলাকায় যাঁদের পাওয়া যাবে তাঁরা হলেন অ্যালেন গিন্সবার্গ, অ্যামি ওয়াইনহাউজ, কুর্ট কোবেইন এবং আরও অনেক চরমপন্হী-শিল্পী ; তাঁদের জন্য শব্দবন্ধটা আমিই তৈরি করেছি । তাঁরা বিপরীত সেক্সের মানুষদের দুর্নিবার আকর্ষণ করেন, তাঁরা নিজেদের সময় ও শিল্পের সঙ্গে চূড়ান্ত ও বিপজ্জনকভাবে জড়িয়ে পড়েন । পাবলো পিকাসোকে অনেক সময়ে গ্রিক পুরাণের অর্ধেক-মানব ও অর্ধেক দানব মিনোটরের সঙ্গে তুলনা করা হয় । মিনোটরের মতো তিনি চাইতেন যে নারীদের তাঁর সামনে বলি দেয়া হোক, তাঁর ব্যক্তিজীবনের ঘটনাবলী থেকে যা প্রমাণিত, যেসব ঘটনা পিছনে ফেলে গেছে ধারাবাহিকভাবে যন্ত্রণাগ্রস্ত স্ত্রীদের, রক্ষিতাদের ও সন্তানদের ।
মলয়দা আমাকে একবার বলেছিলেন যে তাঁর চেয়ে বয়সে কুড়ি বছর ছোটো একজন তরুণী তাঁকে থ্রেটেন করেছিলেন যে যদি মলয়দা তাঁকে বিয়ে না করেন তাহলে আত্মহত্যা করবেন । তরুণীটি নিজের কথা রেখেছিলেন । টয়লেটের অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন ।
আমি লুকিয়ে মলয়দার সাইবার জগতে প্রবেশ করেছিলাম, অত্যন্ত সাবধানে, ছায়ার মতো সশ্রদ্ধ প্রশংসকরূপে, যাতে আমি নিজে না উন্মাদনার বিপদে আক্রান্ত হই, কিন্তু আমি তাতে সফল হইনি । শেষ পর্যন্ত একদিন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ তোমার কবিতায় যৌনতার এরকম খোলাখুলি প্রয়োগের ভূমিকা কি ?”
মলয়দার অবাক-করা উত্তরে ছিল সাহসিক প্রশান্তি : “ভাষার লোভনীয় শরীরের সঙ্গে সঙ্গম করলে কবিতার জন্ম হয় ।”
শুনে, আবার আমি শব্দহীনতায় থতমত খেলাম । আমি ইনটারনেটে মলয়দার লেখাগুলোতে ঢুঁ মারতে লাগলাম ( সবই ‘ব্লগস উইথ জবস’ ট্যাগ করা ) , পাঠকের মন্তব্য থেকে বোঝা যায় তারা কবিতাগুলোকে অশ্লীল তকমা দিয়েছে । মলয়দা তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “অশ্লীলতা বলতে ঠিক কী বোঝায়? শুনতে ভালো লাগে এরকম শব্দে সাজানো রোমান্টিক ছবিকেই কি কবিতা বলা হবে ? তোমরা বরং পড়া অভ্যাস করো, তাহলে ঠাহর করতে পারবে ।”
মলয়দার বিষয়ে ভাবলে আমার মনে পড়ে কমলা দাস-এর কথা, আরেকজন একমাত্র কবি যার প্রভাব আমার ওপরে একই রকম হয়েছিল । তিনিও, পাঠকের গ্রহণ করার শেকল ভেঙে নিজের কন্ঠস্বরকে কবিতায় জায়গা দিয়েছেন । এই ধরণের মানুষের কাছে কবিতা হলো তাঁদের অস্তিত্বের প্রসারণ । ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক, আমি অন্তত তাই মনে করি, যেমন বন্ধুদের সম্পর্কে কুৎসা করা, অফিসের বসের সম্পর্কে গজগজ করা, দাঁত মাজা, কিংবা পেচ্ছাপ করার মতন ।
এই ধরণের মানুষরা অন্যের খারাপ লাগতে পারে ভেবে নিজের কাজকে কার্পেটের তলায় লুকিয়ে ফেলতে পারেন না, এই ভেবে যে তা করলে জনপ্রিয় হওয়া যাবে । তাঁরা বেশ বিপজ্জনক, অরুন্ধতী রায়ের ‘গড অফ স্মল থিংস’-এর আম্মুর মতন, তাঁদের থাকে চূড়ান্ত উন্মাদনা, দায়িত্বহীন এনার্জি, যেমন ভাই আর বোনের প্রেম, প্রেমের সীমারেখা লঙ্ঘন করে তারা ।
আমি এখন মলয়দার ‘ছোটোলোকের ছোটোবেলা’ পড়ছি । তাঁর কটু শৈশবের উষ্ণ স্মৃতিচারণা, মতামতে সমঝোতাহীন, অবাক-করা সততা এবং তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গে ও বক্রোক্তিতে পরিপূর্ণ । মলয়দার শৈশব কেটেছিল প্রাক-স্বাধীন ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনা শহরের এক এঁদো পাড়ায় । বালক মলয়ের চোখ দিয়ে দেখা জগতকে তিনি তুলে ধরেছেন, এবং অনেক সময়ে বর্তমানের জ্ঞানী, চোটখাওয়া লেখকের দয়াহীন সততায় গড়ে তুলেছেন ন্যারেটিভ । তাঁদের পরিবার, সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বংশ, মিথ্যা কুসংস্কার ও অতীত গৌরবে আক্রান্ত, অসহ্য দারিদ্রের মাঝে মাথা চাড়া দিয়েছিল । মলয় দারিদ্রের কথা বলেন, প্রথম দেখা এক উলঙ্গ বিধবার কথা, দুইজন বোবা দর্জি যারা তাঁদের বাড়ির সকলের পোশাক সেলাই করত, পায়খানা থেকে বেরিয়ে অদ্ভুত নিয়মপালন, পাটনা মিউজিয়ামের কিপার অব পেইনটিংস অ্যাণ্ড স্কাল্পচার তাঁর বড়োজেঠার সঙ্গে সেখানে গিয়ে দর্শনার্থীরা কেমন গ্রিক মূর্তির লিঙ্গে হাত দিচ্ছে তা এক বালকের বিস্ময়ে যে ঢেউ তোলে তার বর্ণনা ।
বইটা থেকে পাঠক পাবেন অনেককিছু, যা চাই তাই, সবকিছু, যখন কিনা প্রথম দৃশ্য থেকে শুরু হয় মলয়দার পনেরো বছরের জাঠতুতো ভাই বাড়িতে একজন বেশ্যাকে এনে বিদায় দেবার সময়ে মাঝরাতে ধরা পড়ার ঘটনা । কম বললেও একথা বলতে হয় যে মলয় রায়চৌধুরী একজন ডিস্টার্বিং লেখক । অনেক সময়ে আমি ওনার গড়ে তোলা দৃশ্যাবলী ও ঘটনায় প্রতিহত হই, এমনকি বিবমিষায় আক্রান্ত হই । কখনও বা মনে হয় তাঁর কবিতা যেন ফাঁদ পেতে রাখে, মর্মার্থহীন গোঁসায় ঠাশা, নঙর্থক এবং উত্তেজনাপূর্ণ । তারপর আমি ফিরে আসি সন্ধ্যার প্রশান্তিতে এবং সবকিছু আবার নিজের জায়গায় স্হান করে নেয় — সময়, ক্রোধ, মানুষের অবস্হার প্রতি অবিশ্বাস ।
সত্তর বছর বয়সের এই মানুষটার সঙ্গে কথা বলার সময়ে আমি ক্রুদ্ধ এবং নিজেকে ব্যর্থ অনুভব করি, যে লোকটা অবসর নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে মুম্বাইতে থাকে । লোকটার এতো বুকের পাটা হলো কেমন করে যে বিস্ময়করভাবে নিজের সততা প্রকাশ করে ? কোন সে স্পর্ধার অনুমতি লোকটা পেয়েছে যে এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে স্বাধীন । এই প্রশ্নগুলো মলয়দাকে করলে আমি ওনার দেয়া উত্তরে নিঃশব্দ হাসি শুনতে পাই:-
“তুই কি কখনও ভেবে দেখেছিস তোর জীবনে কে এমন হতে পারে যাকে তুই একই সঙ্গে ভালোবাসিস আর ঘৃণা করিস ? আমি সেই ধরণের ক্ষতিকর জীব যে আক্রান্ত হওয়াকে উপভোগ করে ! তুই কি লক্ষ্য করেছিস যে আলফা পুরুষ জানোয়ার তার বিপক্ষকে হারাবার জন্য মাথাকে ব্যবহার করে ? বাইসন, জিরাফ, সিংহ, হাতি, গণ্ডার, কুমির, যেকোনো ক্ষমতাবান জানোয়ার । আমি সেই ধরণের জানোয়ারদের মতন অস্তিত্ব বজায় রাখি, যারা একটা দলের নেতৃত্ব দেয় । যেমন সিংহ । সিংহের মতন আমি একাকীত্ব পছন্দ করি । লেখার জন্য আমি আমার মস্তিষ্ক ব্যবহার করি । পাঠক তো অপ্রাসঙ্গিক । ভাষাই হলো প্রেমিকা, যাকে আমি ভালোবাসি।”
আর ব্যাস, মলয়দা নির্ণয় নিলেন যে সাম্প্রতিক কবিতাগুলোকে ‘আলফা মেল পোয়েট্রি’ নাম দেবেন । লোকটা এই রকমই, বিরক্তিকরভাবে সরল । ওনার হৃদয় আর হাতের মাঝে কোনো জেসটেশান পিরিয়ড নেই । ওনার অনুভূতি ও যন্ত্রণার মাঝে কেউ একজন কয়েক আলোকবর্ষের দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছে । আমরা যারা ভেবেচিন্তে পা ফেলি তারা এই ধরণের ঔদ্ধত্য কেবল হাঁ করে দেখি । আমরা একে বলতে পারি ক্ষিপ্ত তারস্বর ; আমরা উত্যক্ত হয়ে পাতার পর পাতা বিতর্ক করতে পারি, ওনাকে ঘরে তালা বন্ধ করে রাখতে পারি, কিন্তু ওনাদের কলম কেড়ে নেবার ক্ষমতা, কষ্টযন্ত্রণা লাঘব করার ক্ষমতা, আমাদের নেই ।
একবার আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘তুমি কি সাধারণ সংসারি মানুষের মতন আচরণ করো ? বাজারে যাও, চায়ে দুধ ঢেলে চুমুক দাও ? ইত্যাদি ।”
উনি কোনো গুরুত্ব না দিয়ে উত্তর দিয়েছিলেন যে ওনার স্ত্রী বাজার ইত্যাদি করার দায়িত্ব নিয়েছেন, এবং উনি লিকার চা খান । আর খাদের কিনারায় বসবাসের চেয়ে সংসারি মানুষ হওয়া ঢের ভালো । আমার গভীর উদ্বেগকে এভাবে এড়িয়ে যাবার জন্য আমি ওনাকে ক্ষমা করতে পারিনি । লোকটা কি সত্যিই বাস্তব ?
উনি একবার বলেছিলেন, “পিকাসো সম্পর্কে তোর লেখাটা পড়লুম । দারুণ । আমার সম্পর্কে এক পাতা লিখলেই তো পারিস, কেননা এখন আমার বইগুলো পড়ে ফেলেছিল । যা ইচ্ছে লিখবি ; আমার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে চিন্তা করার দরকার নেই । আমি গণ্ডারের-চামড়া লেখক । তোর নিজের চিন্তাধারার ওপর ভালো দখল আছে । অতএব শুরু করে দে । আমাকে তুই যাকে বলে ‘পিস অব ইয়োর মাইন্ড’, তাই দিস ।”
এই ছোটো লেখাটা মলয় রায়চৌধুরীকে উৎসর্গ করলাম । অশ্লীলতার জয় হোক।
Sreemanti Sengupta
লেবেলসমূহ:
শ্রীমন্তী সেনগুপ্ত,
Sreemanti Sengupta
বুধবার
তৃণমূলের দলদাস ও প্রতিষ্ঠানের বরপুত্র শৈলেশ্বর ঘোষ বসে আছেন প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতাবান মন্ত্রীর পাশে
লেবেলসমূহ:
শৈলেশ্বর ঘোষ,
Hungry Generation
রবিবার
হাংরি জেনারেশন সাহিত্য আন্দোলনের স্রষ্টা মলয় রায়চৌধুরী
মলয় রায়চৌধুরী (ইংরেজি: Malay Roychoudhury) (জন্ম:
অক্টোবর ২৯, ১৯৩৯) বিশিষ্ট বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক,
অনুবাদক, সাংবাদিক এবং সর্বোপরি ১৯৬০-এর দশকের হাংরি
আন্দোলন—হাংরিয়ালিজম—তথা বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার জনক এবং এ
কারণে ১৯৬০-এর দশক থেকেই ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম
হয়েছিলেন। আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসে তিনি এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব।
গতানুগতিক চিন্তাধারা তিনি সচেতনভাবে পরিহারের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা
সাহিত্যে উত্তর আধুনিকতাবাদ চর্চা এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন।
১৯৬৪ সালে প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার কবিতার জন্য রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় গ্রেফতার ও কারাবরণ করেন।
মলয় রায়চৌধুরীর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য সাহিত্যের সনাতন ধারা অনুশাসনের বিরুদ্ধাচারণ। এ বিষয়ে স্বপ্ন পত্রিকায় লিখিত প্রবন্ধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান উল্লেখ করেছেন, ‘সাহিত্যের সনাতন অনুশাসনগুলির বিরুদ্ধে মলয় রায়চৌধুরীর বিদ্রোহ তাঁর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য’। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাষের অধিক। তার ১০টি কাব্যগ্রন্থ, ৪টি উপন্যাস, ১০টি সমালোচনা গ্রন্থ এবং কয়েকটি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েঝে। উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে শয়তানের মুখ, জখম, ডুব জলে যেটুকু প্রশ্বাস,নামগন্ধ চিৎকার সমগ্র,কৌণপের লুচিমাংস অ্যালেন গিন্সবার্গের ক্যাডিশ গ্রন্থের অনুবাদ প্রভৃতি অন্যতম। ২০০৩ সালে অনুবাদ সাহিত্যে তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
১৯৬১ সালে দাদা সমীর রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং হারাধন ধাড়ার
(দেবী রায় ) সঙ্গে হাংরি আন্দোলন আরম্ভ করে আবির্ভাবেই সাড়া ফেলে দেন ।
তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতায় প্রায় চল্লিশজন কবি, লেখক ও চিত্রশিল্পী এই
আন্দোলনে যোগ দেন, যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিনয় মযুমদার, সন্দীপন
চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, সুবিমল বসাক, বাসুদেব দাশগুপ্ত, ফালগুনী
রায়, অনিল করঞ্জাই, রবীন্দ্র গুহ প্রমুখ । এই আন্দোলনের মুখপত্র হিসাবে এক
পাতার বুলেটিন প্রকাশ করা হতো । ১০৮টি বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছিল, যার
মাত্র কয়েকটি ‘লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি’ এবং ঢাকা বাংলা একাডেমিতে
সংরক্ষণ করা গেছে । ১৯৬৫ পর্যন্ত এই আন্দোলন পুরোদমে চলেছিল; বিখ্যাত
হাংরি মকদ্দমার পর তা ভেঙে যায় । আন্দোলনটি নিয়ে মলয় রায়চৌধুরী ‘হাংরি
কিংবদন্তি’ নামে একটি গ্রন্হে আন্দোলনের ইতিহাস তত্ব ও তথ্য নিয়ে
বিস্তারিত লিখেছেন । পরবর্তীকালে প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়
নথিপত্র, আদালতে সাক্ষ্য, আদালতের রায় এবং হাংরি আন্দোলনকারীদের
সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘হাংরি আন্দোলন’ গ্রন্হ । মলয়
রায়চৌধুরী তিরিশ বছর যাবত যতোগুলি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সেগুলি একত্রিত করে
প্রকাশ করেছেন প্রতিভাস প্রকাশনী ।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি.দে মলয় রায়চৌধুরী ও হাংরি আন্দোলন বিষয়ে ৩৫০ পৃষ্ঠার গবেষণাপত্রের জন্য পিএচ.ডি. সন্মান দ্বারা ভূষিত হয়েছেন । ২০১৩ সালে হাংরি আন্দোলন নিয়ে আইআইটি খড়গপুর থেকে পিএইচডি করেছেন অধ্যাপক রিমা ভট্টাচার্য । ১৯৯৭ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাংরি আন্দোলন নিয়ে পিএইচডি করেছেন অধ্যাপক উদয়নারায়ণ বর্মা । দেবায়ুধ চট্টোপাধ্যায় হাংরি আন্দোলনের কবি [[দেবী রায়]] সম্পর্কে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এম ফিল করেছেন । রূপসা দাস ২০১৮ সালে মলয় রায়চৌধুরী সম্পর্কে গবেষণা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । ড্যানিয়েলা ক্যাপেলো হিডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি করেছেন ।
১৯৬৪ সালে হাংরি বুলেটিনে প্রকাশিত প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার কবিতাটির
জন্য মলয় অশ্লীলতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন এবং ৩৫ মাসব্যাপী কোর্ট কেস চলে ।
কলকাতার নিম্ন আদালতে সাজা ঘোষণা হলেও, ১৯৬৭ সালে উচ্চ আদালতে অভিযোগমুক্ত
হন । মলয়ের পক্ষে সাক্ষী ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তরুণ সান্যাল,
জ্যোতির্ময় দত্ত এবং সত্রাজিত দত্ত । মলয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষী ছিলেন শক্তি
চট্টোপাধ্যায়, শৈলেশ্বর ঘোষ, সুভাষ ঘোষ, পবিত্র বল্লভ, সন্দীপন
চট্টোপাধ্যায় এবং উৎপলকুমার বসু । বিরুদ্ধ পক্ষের সাক্ষ্যের কারণে তাঁর এক
মাসের কারাদণ্ডের সাজা হয়েছিল ।মকদ্দমা চলাকালীন মলয়ের খ্যাতি আমেরিকা ও
ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, এবং বিভিন্ন ভাষায় এই কবিতাটি অনুদিত হয় । ৪৫ বছর
পরও কবিতাটি নিয়ে বিতর্ক কবিতাটিকে জীবন্ত রেখেছে, এবং এম ফিল ও পি এইচ ডি
গবেষণার বিষয়বস্তু হয়েছে । গবেষণা করেছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
অধ্যাপক কুমারবিষ্ণু দে ও রবীন্দ্রভারতী থেকে অধ্যাপিকা স্বাতী
বন্দ্যোপাধ্যায় । ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত ‘Modern And Postmodern Poetry Of The Millenium’
সংকলনে দক্ষিণ এশিয়া থেকে অন্তর্ভুক্ত এইটিই একমাত্র কবিতা বলে ভূমিকায়
জানিয়েছেন সম্পাদক জেরোম রোদেনবার্গ। হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে The
Hungryalists নামে ২০১৮ সালে একটি বই লিখেছেন মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য চৌধুরী ।
মলয় রায়চৌধুরীর ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটিকে অধ্যাপক শীতল
চৌধুরী বলেছেন এটি বাংলা সাহিত্যে একটি সার্থক ও গুরুত্বপূর্ণ কবিতা ।
মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা, গল্প ও উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য হল যে সেগুলো
মুক্ত-সূচনা ও মুক্ত-সমাপ্তি দ্বারা চিহ্নিত; এবং তা বহুমাত্রিক.
আঠ্গিক-ভাঙা, ঘটমান, যুক্তির কেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত, কেন্দ্রাতিগ, অফুরন্ত
অর্থময়, সংকরায়িত, রাইজোম্যাটিক. অপরিমেয়, ভঙ্গুর বাকপ্রতিমায় আপ্লুত,
একাধিক বার্তাবহ এবং ক্যানন-অতিক্রমী ।উত্তরপ্রবাসী পত্রিকার হাংরি
আন্দোলন সংখ্যায় অধ্যাপক নন্দলাল শর্মা জানিয়েছেন যে, স্বয়ংসম্পূর্ণ
শিল্পবস্তু বা ‘আর্ট ফর আর্ট সেক’-এর ঔপনিবেশিক তত্বকে বর্জন করার কথা
বলেছেন মলয়, যা বাংলা সাহিত্যে তাঁর পূর্বে কেউ বলেননি ।
প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার কবিতাটি নিয়ে মৃগাঙ্কশেখর ও হ্যাশ তন্ময় একটি ছোটো ফিল্ম তৈরি করেছেন যেটি বিভিন্ন দেশের ফিল্ম উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে ।
মলয় রায়চৌধুরীর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য সাহিত্যের সনাতন ধারা অনুশাসনের বিরুদ্ধাচারণ। এ বিষয়ে স্বপ্ন পত্রিকায় লিখিত প্রবন্ধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান উল্লেখ করেছেন, ‘সাহিত্যের সনাতন অনুশাসনগুলির বিরুদ্ধে মলয় রায়চৌধুরীর বিদ্রোহ তাঁর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য’। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাষের অধিক। তার ১০টি কাব্যগ্রন্থ, ৪টি উপন্যাস, ১০টি সমালোচনা গ্রন্থ এবং কয়েকটি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েঝে। উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে শয়তানের মুখ, জখম, ডুব জলে যেটুকু প্রশ্বাস,নামগন্ধ চিৎকার সমগ্র,কৌণপের লুচিমাংস অ্যালেন গিন্সবার্গের ক্যাডিশ গ্রন্থের অনুবাদ প্রভৃতি অন্যতম। ২০০৩ সালে অনুবাদ সাহিত্যে তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
প্রাথমিক জীবন
মলয় রায়চৌধুরী অক্টোবর ২৯, ১৯৩৯ সালে ভারতের বিহার প্রদেশের রাজধানী পাটনা শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। পাটনার কুখ্যাত ইমলিতলা পাড়ায় তাঁর শৈশব কাটে অন্ত্যজ বিহারি ও অতি দরিদ্র শিয়া মুসলমানদের সঙ্গে। তাঁর স্মৃতিচারণ “ছোটোলোকের ছোটোবেলা” গ্রন্হে তিনি ইমলিতলায় অতিবাহিত তাঁর বাল্যকাল উপস্হাপিত করেছেন । তাঁদের পরিবারটি নিম্নবিত্ত ছিল ; তাঁর পিতা একা পাঁচ ভাইয়ের কুড়ি জনের সংসারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন । পারিবারিক দারিদ্য সত্বেও তাঁর বংশগৌরব ছিল ; তিনি সুতানুটি-গোবিন্দপুর-কলিকাতা খ্যাত সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের উত্তরপাড়া শাখার সন্তান। পিতা রজ্ঞিত রায়চৌধুরী (১৯০৯-১৯৯১) ছিলেন ভারতীয় চিত্রশিল্পী এবং মাতা অমিতা (১৯১৬-১৯৮২) ছিলেন পাণিহাটিস্থিত নীলামবাটির কিশোরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর (রোনাল্ড রস-এর সহায়ক) জ্যেষ্ঠ কন্যা। কলকাতার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিষদ কর্তৃক সংরক্ষিত সংগ্রহশালার (জাদুঘর) তথ্য অনুযায়ী মলয় রায়চৌধুরীর ঠাকুর্দা লক্ষ্মীনারায়ণ রায়চৌধুরী ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রশিল্পী। তার ভাই সমীর রায়চৌধুরী বাংলা সাহিত্যের একজন বিতর্কিত কবিশিক্ষা এবং কর্মজীবন
পাটনার সেইন্ট জোসেফ কনভেন্টে প্রাথমিক এবং রামমোহন রায় সেমিনারিতে ম্যাট্রিকুলেশানের পর অথ্রনীতিতে সাম্মানিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, এবং গ্রমীণ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ রূপে প্রশিক্ষনের পর প্রথমে রিজার্ভ ব্যাংক ও তারপর এঅরডিসি এবং নাবার্ডে গ্রামীণ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞের উচ্চপদে ভারতের বিভিন্ন শহরে ১৯৯৭ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন ।যুগশঙ্খ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের রিডার ড. শঙ্কর ভট্টাচার্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন যে মলয় রায়চৌধুরী সমগ্র জীবন ভারতের চাষি, তাঁতি, জেলে ও হস্তশিল্পীদের মাঝে কাটিয়ে প্রভূত অভিজ্ঞতা লাভ করেন, এবং তা তাঁর সাহিত্যকর্মে গভীর প্রভাব ফেলেছে। রামমোহন রায় সেমিনারিতে পড়ার সময়ে সেখানের গ্রন্হাগারিক নমিতা চক্রবর্তী তাঁকে ব্রাহ্ম কবি-লেখকদের রচনা পড়তে উৎসাহিত করেন ।হাংরি আন্দোলন
হাংরি আন্দোলনের ইশতাহার
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি.দে মলয় রায়চৌধুরী ও হাংরি আন্দোলন বিষয়ে ৩৫০ পৃষ্ঠার গবেষণাপত্রের জন্য পিএচ.ডি. সন্মান দ্বারা ভূষিত হয়েছেন । ২০১৩ সালে হাংরি আন্দোলন নিয়ে আইআইটি খড়গপুর থেকে পিএইচডি করেছেন অধ্যাপক রিমা ভট্টাচার্য । ১৯৯৭ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাংরি আন্দোলন নিয়ে পিএইচডি করেছেন অধ্যাপক উদয়নারায়ণ বর্মা । দেবায়ুধ চট্টোপাধ্যায় হাংরি আন্দোলনের কবি [[দেবী রায়]] সম্পর্কে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এম ফিল করেছেন । রূপসা দাস ২০১৮ সালে মলয় রায়চৌধুরী সম্পর্কে গবেষণা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । ড্যানিয়েলা ক্যাপেলো হিডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি করেছেন ।
প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার
কলকাতা আদালতের দণ্ডাদেশ।
সাহিত্যকর্ম
মলয় রায়চৌধুরীর প্রথম কাব্যগ্রন্হ শয়তানের মুখ ১৯৬৩ সালে কৃত্তিবাস প্রকাশনী ধেকে প্রকাশিত হয়েছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে গ্রন্হটিকে একটি জলবিভাজক বলে মনে করা হয়। মলয় তাঁর প্রতিটি কাব্যগ্রন্হে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন এবং একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার কবিতার জনকরূপে বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ স্হান করে নিয়েছেন। তাঁর কবিতা বাংলাসাহিত্যের সনাতন ঐতিহ্যকে, নিয়মানুবর্তিতাকে, আমূল নাড়া দিয়েছিল। কবিতার ভাষায়, ছন্দে, অলংকারে, চিত্রকল্পে তুমূল ভাংচুর পাঠকের অভ্যস্ত চোখ ও কানকে বিব্রত করেছিল। যৌনতার সংগে তিনি এনেছিলেন ব্যঙ্গ, আত্মপরিহাস ও অসহায় মানুষের নিষগফলতার যন্ত্রণা। উপন্যাস ও ছোটগল্পে তিনি নিজস্ব গদ্য সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর প্রবন্ধকে আপোষহীন বলে মনে করা হয়। তাঁর নাটক তিনটিকে বলা হয়েছে উত্তরাধুনিক, যদিও সেগুলি হাংরি আন্দোলন-এর সময়ে লেখা। তাঁর প্রবন্ধ ও পোলেমিক্সগুলি থেকে স্পষ্ট হয় কেন তাঁকে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার জনক বলা হয়। মলয় যাঁদের কাজ অনুবাদ করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন উইলিয়াম ব্লেক, জাঁ ককতো, সালভাদোর দালি, পল গঁগা, ব্লাইজি সঁদরা, ত্রিস্তান জারা, অ্যালেন গিন্সবার্গ, লরেন্স ফেরলিংঘেট্টি, পাবলো নেরুদা এবং ফেদেরিকো গারথিয়া লোরকা।মলয় গ্রন্হে সম্পাদক মুর্শিদ এ. এম. ভূমিকায় জানিয়েছেন যে নব্বুই দশকের পর রচিত তাঁর সাহিত্যকর্মকে বলা হয়েছে অধুনান্তিক । ২০১২ সালে তিনি প্রথম ডিটেকটিভ নভেল রচনায় হাত দেন । তাঁর সৃষ্ট মহিলা ডিটেকটিভ রিমা খান ( নোংরা পরি ) একজন ভিন্ন প্রকৃতির চরিত্রবৈশিষ্ট্যসহ উপস্হাপিত । বর্তমান যুগের পুলিস অফিসারদের ন্যা্য রিমা খান নির্দয় ও নির্মম । মলয় রায়চৌধুরীর প্রখ্যাত উপন্যাসটির নাম ডিটেকটিভ নোংরা পরির কঙ্কাল প্রেমিক ।সাহিত্যধারা
সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে মলয় রায়চৌধুরী
ফিল্ম
চিত্র পরিচালক শ্রীজিত মুখোপাধ্যায় বাইশে শ্রাবণ নামে একটি ফিল্ম পরিচালনা করেছেন। ফিল্মটিতে একজন হাংরি আন্দোলনকারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রখ্যাত পরিচালক গৌতম ঘোষ।প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার কবিতাটি নিয়ে মৃগাঙ্কশেখর ও হ্যাশ তন্ময় একটি ছোটো ফিল্ম তৈরি করেছেন যেটি বিভিন্ন দেশের ফিল্ম উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে ।
পুরস্কার
২০০৩ সালে অনুবাদের জন্য দেয়া সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার সহ বহু লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন ।
লেবেলসমূহ:
মলয় রায়চৌধুরী,
হাংরি আন্দোলন,
Hungry Generation,
Malay Roychoudhury
শুক্রবার
বাসব রায় (যুগশঙ্খ, গৌহাটি ) : শৈলেশ্বর ঘোষরা হাংরির ক্ষীরটা খেতে চেয়েছেন
লেবেলসমূহ:
শৈলেশ্বর ঘোষ,
Hungry Generation
বৃহস্পতিবার
মলয় রায়চৌধুরী : যখন সুবিমল বসাকের সঙ্গে চামউকুন বাছতুম
মলয় রায়চৌধুরী
ষাটের এলিট বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সুবিমল বসাক আবির্ভূত হয়েছিলেন কাউন্টারকালচারাল একজন সাবঅলটার্ন লেখক হিসাবে । নবারুণ ভট্টাচার্যের মতন তিনি অন্য মানুষদের জীবন থেকে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেননি, করেছেন নিজের নিম্নবর্ণ-নিম্নবর্গ জীবনের লাৎ খাবার অভিজ্ঞতা থেকে । সুবিমলের বর্গে শৈশবে গায়ে চামউকুন হয়, চুলে জট পড়ে, নখে ময়লা জমে, ময়লা নখ নিয়েই ভাত-ডাল মাখতে হয়, রাস্তার কলে স্নান করতে হয়, দেনার দায়ে বাপ আত্মহত্যা করলে কৈশোর থেকে সংসার চালাতে হয় । তাই মধ্যবিত্ত জীবনে পৌঁছেও এলিটদের সংস্কৃতিতে ঢোকার অনুমতি পান না সুবিমল বসাক । আসলে, যে বিদ্যায়তনিক আলোচক এলিট সংস্কৃতির প্রডাক্ট, তিনি তাঁর দোসরদের খোঁজ করেন পাল্প ফিকশানে, কেননা প্রতিষ্ঠানের ছত্রছায়া ছাড়া পাল্প ফিকশান শেকড় পায় না ।
উকুন জানতুম, চুলে হয়, বলতে গেলে দেখা যায় না, মাথার চুলে খুঁজে-খুঁজে বের করে টিপে মারতে হয়, বাঁদরদের মতন । ব্যাংকশাল কোর্টে মামলার সময়ে, রাতের বেলায় সুবিমল বসাকের জ্যাঠামশায়ের বইঠকখানার স্যাকরার প্রায়ান্ধকার দোকানঘরে মাদুরে শুয়েছিলুম, সুবিমল বলল, শালা, তোমার গায়ে চামউকুন হয়ে গেছে । সুবিমল আমার গা থেকে ছোটো ছারপোকার মাপের একটা চামউকুন তুলে বলল, পনেরোদিন স্নান করোনি, আদালতের পাবলিকদের সঙ্গে ওঠাবসা করছ, গায়ে চামউকুন হয়ে গেছে, বিহারিদের মতন । সত্যিই, ফৌজদারি আদালতে এতো রকমের ক্রিমিনাল জড়ো হতো যে সাবধানে না থাকলে খোস-পাঁচড়া, আর নানা ছোঁয়াচে রোগও হয়ে যেতে পারতো । কলকাতায় মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় দিনের পর দিন স্নান হতো না ; ততোদিনে চামউকুনরা নিজেদের বংশবৃদ্ধি করে ফেলতো আমার গায়ে ।
হাংরি আন্দোলন মামলার সময়ে কলকাতায় রাতের বেলায় যেখানে হোক মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে হতো ; সুবিমল বসাকের জ্যাঠামশায়ের স্যাকরার দোকান ছিল লাস্ট রিসর্ট । রিসর্ট !! চামউকুন বাছার রিসর্ট । ওর এক আত্মীয়ের বাড়ির দালানে মাদুরে শুয়ে রাত কাটিয়েছি । ওই পাড়ায় কোথাও ওর ব্যর্থ প্রেমের নায়িকা থাকতেন ।
চামউকুন যে কেমনতরো উকুন, তা অন্য হাংরি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছিলুম, কখনও দেখেনি । একটা চামউকুন মেরে কাগজে মুড়ে সুভাষ ঘোষ আর বাসুদেব দাশগুপ্তকে দেখিয়েছিলুম । বাসুদেব তখন বেবি-দীপ্তি-মীরার রেগুলার খদ্দের । সেই পাড়াতেও কারোর গায়ে চামউকুন দেখেনি ।
সুবিমল বসাক পাটনাতেই থাকতো, গান্ধি ময়দানের ওই পারে, পশ্চিম দিকে, গোলঘর নামে ব্রিটিশদের তৈরি একশো চুয়াল্লিশ পাকানো সিঁড়ির ঢাউস খামারবাড়ির কাছে ; গিন্সবার্গকে নিয়ে উঠেছিলুম ওই খামারবাড়ির টঙে, নেমে ভেতরে ঢুকে গিন্সবার্গ ওর ‘সানফ্লাওয়ার সূত্র’ কবিতা চেঁচিয়ে আবৃত্তি করার পর আফশোষ করেছিল যে একটা রেকর্ডার আনা উচিত ছিল ।
পাটনায় থাকলেও সুবিমল বসাকের সঙ্গে আমার আলাপ ছিল না ; ও পড়তো পশ্চিমের কোনো স্কুলে আর আমি পূর্বদিকের রামমোহন রায় সেমিনারিতে । তবে ওদের পরিবারের কথা বাবা জানতেন ; বলেছিলেন যে ওর বাবা নাইট্রিক অ্যাসিড খেয়ে দেনার দায়ে আত্মহত্যা করেছিলেন । কারোর বাবা আত্মহত্যা করলে তাঁর ছেলের মনে কেমন প্রতিক্রিয়া হয় ? কে জানে, আমার পক্ষে ভেবে ওঠা কঠিন । আমার খুড়তুতো বোন পুটি কড়িকাঠ থেকে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিল বাছুরের গলা থেকে দড়ি খুলে ।
‘দুরুক্ষী গলি’ নামে একটা উপন্যাস লিখেছে সুবিমল, ওর আত্মজীবনী, তাতে সোনার গয়না যে কতো ধরণের হতো আর তাদের বিস্ময়কর নাম ছিল, তা ওর ‘দুরুক্ষী গলি’ পড়ে জানা যায় । আমার মনে হয় এটা ওর সেরা উপন্যস, ধরা পড়ে আর্থসাংস্কৃতিক আর ঐতিহাসিক যুগলক্ষণ, আর সেই সঙ্গে বিলুপ্ত হতে-থাকা আত্মনির্ভর স্যাকরাদের ইতিহাসও বটে । পুঁজিবাদী স্বার্থের নিরিখে যখন সাহিত্যিকদের খ্যাতি বিবেচিত হচ্ছে, তখন বঙ্গসংস্কৃতিতে হঠাৎ ঢুকে পড়া ব্যাণ্টামওয়েট মুষ্ঠিযোদ্ধার আদলে ময়লা এক যুবক নিজের লেখালিখিকে নিয়ে গিয়েছে কলোনিয়াল ইসথেটিক রিয়্যালিটির বাইরে ।
সুবিমল পাটনা থেকে কলকাতায় চাকরি করতে গিয়েছিল বলে জানতো যে এখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকলে রাতে কতো বিপদে পড়তে হয় । অন্য হাংরি আন্দোলনকারীরাও অনেকে কলকাতার বাইরে থেকে পৌঁছেছিল, কিন্তু কেউই রাতের বেলায় থাকতে দিতে রাজি হয়নি, নানা অজুহাত দেখিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে ।
কলকাতায় হাংরি আন্দোলনের খবর পেয়ে সুবিমল বসাক জানতে পেরেছিল যে বুলেটিন ছাপাবার ইংরেজি ম্যাটার আর টাকাকড়ি আমিই দিই, তাই ১৯৬৩ সালের কোনো এক সময়ে আমার সঙ্গে পাটনায় দেখা করতে এসেছিল, আন্দোলনে যোগ দেবার উদ্দেশে । একদিক থেকে ভালোই হলো, ভেবেছিলুম, ঠিকই ভেবেছিলুম, কেননা চাষি পরিবারের হারাধন ধাড়া তখন নিজের পিতৃদত্ত নাম নিয়ে হিমশিম, এফিডেভিট করে দেবী রায় হবার নির্ণয় নিয়ে ফেলেছে ।
ঢাকার তাঁতি পরিবারের সুবিমল বসাকের নিম্নবর্গ নিয়ে তেমন মনোভাব ছিল না, যখন কিনা ওর বাবা স্যাকরা ছিলেন । দেবী রায় যেমন থাকতো হাওড়ার বস্তিতে, সুবিমল বসাকের বাড়ি গিয়ে দেখলুম, ওদের বাড়িও নিম্নবর্গ বিহারি এলাকায়, আর বাবা না থাকায়, একটা আধখেঁচড়া বাড়িতে বসবাস করে ওকেই ভাইদের বড়ো করে তুলতে হচ্ছে । কলকাতায় ট্রান্সফার নিয়ে চলে গিয়েছিল সাহিত্যের আকর্ষণে । কিছুকাল আগে নিম্নবর্গের জন্য নির্ধারিত একটা পুরস্কারও পেয়েছে সুবিমল । অনুবাদের জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমির পুরস্কার পেয়েছে ।
সুবিমল কাজ করতো ইনকামট্যাক্স দপতরে, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে । ও স্কেচ আঁকতে পারতো, উড-কাট করতে পারতো । তখন এসট্যাবলিশমেন্টের কর্তাদের ‘দয়া করে মুখোশ খুলে ফেলুন’ ছাপানো রাক্ষস জীবজন্তু ইত্যাদির মুখোশ, হাংরি আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিলি করা সারা হয়ে গেছে, বিয়ের কার্ডে ‘Fuck the bastards of Gangshalik school of poetry’ ছাপিয়ে বিদ্যায়তনিক কবিদের পাঠানো হয়ে গেছে, কলকাতার মালিকরা ব্লাস্ট ফারনেসে টগবগ করে ফুটছে, সুবিমল বলল যে, ও এবার নানারকম স্কেচ এঁকে স্টেনসিলে একশো কপি ছাপিয়ে বিলি করবে, হাংরি আন্দোলনের নতুন ধরনের বুলেটিন । আমি একটা চার্ট তৈরি করেছিলুম, উনিশ নম্বর হাংরি বুলেটিন হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল, তার স্টেনসিলও সুবিমল তৈরি করে দিয়েছিল । চার্টে দেখানো হয়েছিল যে বাঙালি কবিদের পূর্বপুরুষরা কবিয়াল ছিলেন ; পূর্বপুরুষরা সকলেই নিম্নবর্ণের ছিলেন বলে আধুনিক কবিরা বেশ চটে ছিলেন ।
মজার ছিল বুলেটিনগুলো, মধ্যবিত্ত কবি-লেখকদের ওয়াটারশেডের ওপর থেকে ঠেলে ফেলার জন্য যুৎসই । কয়েকটা মনে আছে : একজন তরুণীর সারা শরীর জুড়ে স্তন, একজোড়া পায়ের স্কেচ যা দেখলেই টের পাওয়া যায় যে মানুষ-মানুষী মিশনারি আঙ্গিকে ছিল, সামনা-সামনি যুবক-যুবতী যা দেখে মনে হবে ফুলদানি, এরকম বহু বুলেটিন, সপ্তাহে একটা করে। নিজের বইয়ের আর ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ পত্রিকার প্রচ্ছদও নিজেই আঁকতো সুবিমল । কেবল ওর ‘ছাতামাথা’ বইয়ের প্রচ্ছদ আমি পেপার কাটিং দিয়ে তৈরি করে দিয়েছিলুম । ‘ছাতামাথা’ বইয়ের উৎসর্গপত্রের আইডিয়াটাও দিয়েছিলুম ।
সংবাদপত্র দপতরে গিয়ে ব্ল্যাংক কাগজকে ছোটোগল্প হিসাবে জমা দেয়া আর রিভিউ করার জন্য বাচ্চাদের চটির বাক্স ব্রাউন কাগজে মুড়ে জমা দেবার ব্যাপারে সুবিমলও গিয়েছিল আমার সঙ্গে । এর জন্য শক্তি চট্টোপাধ্যায় খচে কাঁইবিচি, সাঙ্গোপাঙ্গোদের নিয়ে আমাকে আর সুবিমলকে প্যাঁদাবার জন্য কফিহাউসের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন । কফিহাউসের সিঁড়ির কাছে ইসমাইলের পান-সিগারেটের দোকানে লোহার রড লুকিয়ে রাখা হয়েছিল মার দেবার জন্য । নিচে নামতেই প্যাঁদাবার জন্য ঘিরে ধরা হয় । সুবিমল সেসময়ে ব্যাণ্টাম ওয়েট বক্সার, হুমকি দিয়ে তেড়ে ভোজপুরি গালমন্দ করতেই সব দেদ্দৌড়, যারা ঘিরে ধরেছিল তারা তো বটেই, শৈলেশ্বর ঘোষ, বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুভাষ ঘোষরাও । পরে জানা গিয়েছিল যে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় যেমন আয়ওয়া থেকে হুমকিচিঠি পেয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা, তেমনই পেয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় - উনি তখন সবে সহসম্পাদকের চাকরির অফার পেয়েছেন ।
পশ্চিমবাংলায় সেই সময়ে রিফিউজিরা সোভিয়েত দেশে বাংলায় অনুবাদ করা মার্কস-এঙ্গেলস পড়ে-পড়ে বামপন্হী হবার দৌড়ে শামিল । বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুভাষ ঘোষ আর অরুণেশ ঘোষও বই পড়ে ঢুকেছিল জমায়েতে, সবায়ের দেখাদেখি । পরে ওদের বক্তব্য ছিল যে মফসসলে বেঁচে থাকতে হলে এছাড়া উপায় ছিল না । ওদের বক্তব্যে যুক্তি ছিল, কেননা প্রমোদ দাশগুপ্ত ক্যাডার পাঠিয়ে স্কুলগুলো আর ক্লাবগুলো স্ট্যালিনি কায়দায় দখল করছিলেন । পরে তারা ইংরেজির এমন পেছন মেরে দিল যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ইউপিএসসির পরীক্ষাগুলোয় কেউই প্রতিযোগীতা করতে পারে না, দলে-দলে পালিয়েছে-পালাচ্ছে বাইরের রাজ্যে বা বিদেশে ।
বই পড়ে যা হয়, বামপন্হীরা জোটবেঁধে নিজেদের আখের গুছিয়ে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগীতায় মাতলো আর বামপন্হাকে ডোবালো । সুবিমল বসাক ওই সব বই পড়াপড়ির দিকে যায়নি, ওর আগ্রহ হয়নি, নিজের জীবনে যতো লাৎ খেয়েছিল, ওর দরকার ছিল না বই পড়ে সেসব জানা-বোঝার । লাৎগুলো ও প্রয়োগ করেছে ওর লেখায়, কবিতা-গল্প-উপন্যাসে । মনে রাখা দরকার যে সুবিমল যখন লেখালিখি আরম্ভ করে, তখন কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর সাহিত্যিকরা দল বেঁধে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের অনুগামী করে তুলেছিলেন ।
সুবিমল বসাক ‘ছাতামাথা’ নামে একটা ফিকশানে হাত দিলো, হাংরি আন্দোলনের ডামাডোলের মাঝেই, যেখানে সুযোগ পেতো লিখতে বসে যেতো । আমি আইডিয়া দিয়েছিলুম যে আমরা যেহেতু এসট্যাবলিশমেন্টের লিটেরারি ভ্যালুজকে রিভার্স করে দিচ্ছি, ‘ছাতামাথা’ ফিকশানের সংলাপ লেখো কলকাতার বুলিতে আর ন্যারেটিভ লেখো ঢাকার কুট্টিদের বুলিতে । কুট্টিদের বুলি নিয়ে সুবিমল প্রায়ই রগড় করতো । ‘আর্ট ফর আর্ট সেক’ এর ধরতাইকে ছিৎরে লাট করে দিয়েছিল ‘ছাতামাথা’, প্রধানত ট্রান্সকালচারালাইজেশনের বিরুদ্ধে স্হানিকতাকে প্রয়োগ করে ।
এখন বাংলাদেশে একটা বিদ্যায়তনিক ধুয়ো উঠেছে যে কলকাতার ভাষা বর্জন করে বাংলাদেশের কথ্যবুলিকে ভাষার পর্যায়ে উন্নীত করা হোক, তাইতে সাহিত্য রচিত হোক, অথচ যখন আমি ওনাদের বলি যে সুবিমল বসাক অলরেডি এই কাজ পাঁচ দশক আগে করে ফেলেছেন, তখন ব্রাত্য রাইসু আর সলিমুল্লা খানরা কানে তুলো দিয়ে থাকেন । সুবিমল বসাকের গদ্য আর পদ্য কাল্পনিক নিম্নবর্গীয় নয় । প্রতীকি নয়, তা রিয়্যাল ফ্লেশ অ্যান্ড ব্লাড । খোলনলচে পালটে ফেলার জন্য যতো ধরণের টেকনিক সম্ভব, ব্যবহার করেছে সুবিমল । তাকে যদি কোনো আলোচক অ্যানার্কিক বলে তকমা দেন, তাহলে তাই সই ।
নকশাল আন্দোলনের ঠিক আগে বেলঘরিয়ায় জমি কিনে সুবিমল নিজের আস্তানা গড়ে ফেলল, চারিদিকে সুনসান, তখনও বাড়িঘর তেমন হয়নি, সেখানে হাংরি আন্দোলনকারীরা জমায়েত হবার নিরিবিলি খুঁজে পেলো । ফালগুনী রায়, ত্রিদিব মিত্র আর ওর প্রেমিকা আলো মিত্র, করুণানিধান মুখোপাধ্যায়, অনিল করঞ্জাই, কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় আর বিদেশ থেকে যারা আসতো, যেমন ট্রেশম গ্রেগ, ডেভিড গারসিয়া, জর্জ ডাউডেন, নেপালি কবি পারিজাত যিনি আমার প্রেমে পড়েছিলেন এবং যাঁকে নিয়ে আমি বেশ কিছু প্রেমের কবিতা লিখেছিলুম ।
নকশাল আন্দোলনের সময়ে সুবিমল বসাকের বাড়ির সামনে প্রায়ই গোষ্ঠী-খুনোখুনি হতো, পুলিশও লাশ হাপিশ করার অন্ধকার খুঁজে পেতো । সুভাষ ঘোষ কিছুদিন ওর আস্তানায় ছিল আর সুবিমলের কাছে হাংরি আন্দোলন সম্পর্কিত যে কাটিঙের ফাইল ছিল তা নিয়ে শৈলেশ্বর ঘোষের শালা সুভাষ কুণ্ডুকে দিয়েছিল । অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ছিল সেটা, হাংরি আন্দোলনের সমস্ত কাটিঙ সংগ্রহ করে হাইকোর্টের ব্যারিস্টার করুণাশঙ্কর রায়কে দিয়েছিলুম । বহু সংবাদপত্রে আমার আর অনেক সময়ে আমার আর দেবী রায়ের কার্টুন প্রকাশিত হয়েছিল, হাংরি আন্দোলনের গবেষকদের কাজে লাগতো । সুভাষ ঘোষের আত্মীয় ছিল সুভাষ কুণ্ডু, শৈলেশ্বর ঘোষের শালা হবার সূত্রে।
সুবিমল বসাক ওর রিভার্স ন্যারেটিভ টেকনিক বজায় রেখে কবিতা লিখল পূর্ববঙ্গের বুলিতে, অথচ সেগুলো কেন নজর কাড়লো না বলা কঠিন, কেননা আইরিশ ভাষায় সিমাস হিনির লেখা কবিতা ইংরেজি পত্রিকায় নিয়মিত আলোচিত হয়েছে । সুবিমল ছোটোগল্প লেখা আরম্ভ করল কলকাতাবাসী অবাঙালি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, তাদের কথাবার্তায় যে বদল ঘটে গেছে তা প্রতিফলিত হলো ওর গদ্যে । বহুকাল অবহেলিত ছিল ওর বইগুলো । এখন তন্ময় ভট্টাচার্যের উদ্যোগে সৃষ্টিসুখ থেকে সেগুলো খণ্ডে-খণ্ডে প্রকাশিত হচ্ছে । সুবিমল বসাক ওর মায়ের কাছ থেকে আর বৃদ্ধা আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে ‘ঢাকাই বিয়ার গীত’ সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছিল । একটা ‘কুসংস্কার সংকলন’ও প্রকাশ করেছিল ।
হাংরি আন্দোলন মামলার সময়ে সুবিমল বসাকই শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গে ছিল । ওর অফিস থেকে চলে আসতো ব্যাংকশাল কোর্টে, আমার মামলার ডেট পড়লে । সুবো আচার্য, প্রদীপ চৌধুরী, শৈলেশ্বর ঘোষ, বাসুদেব দাশগুপ্ত সব হাওয়া হয়ে গিয়েছিল । আমি পাটনায় গেলে সুবিমল আমার উকিলদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো । হাইকোর্টের জুনিয়ার ব্যারিস্টার করুণাশঙ্কর রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো । হাইকোর্টে আমি মামলা জিতে গেলে সুবিমলই কোর্ট থেকে রায়ের কপি নিয়ে আমাকে পাঠিয়েছিল পাটনায় ।
তবে সুবিমলের একটা ধারণা ভুল । নব্বুই দশকে আমি আমার কলকাতা অফিসে বিভাগীয় প্রধান হয়ে ফেরার পর শৈলেশ্বর, সুভাষ, প্রদীপের সঙ্গে দেখা করেছিলুম । সুবিমলের সঙ্গেও । তাকে সুবিমল ভেবেছিল আমি হাংরি আন্দোলন রিভাইভ করতে চাইছি । আসলে আমি যে ইতিমধ্যে প্রচুর পড়াশুনা করে ফেলেছি, ভারতের বহু গ্রামে ঘোরাঘুরি করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, তার হদিশ পায়নি সুবিমল । যাই হোক, আমার নতুন লেখালিখি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে সুবিমল নিজেই বলেছে যে আমার লেখার ধরন আর ভাবনাচিন্তা পুরো পালটে গেছে ।
‘ছিটেফোঁটা’ পত্রিকার বইমেলা ২০১০ সুবিমল বসাক সম্বর্ধনা সংখ্যায় কলিম খান এই কথাগুলো সুবিমল বসাক সম্পর্কে লিখেছিলেন, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ :
“আধুনিকতাবাদী, অ্যাকাডেমিশিয়ান, প্রগতিপন্হি, কমিউনিস্ট-সাম্যবাদী, মৌলবাদী, হাংরি, উগ্রপন্হী... বহু রকম মানুষই আমরা চারিদিকে দেখতে পাই; এবং তাঁদের নেতৃস্হানীয়রা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অত্যন্ত স্বাতন্ত্র্যাভিমানী।স্বাতন্ত্র্যের অভিমানের মধ্যে সকলের থাকে বিশেষ হওয়ার, পৃথক হওয়ার প্রবণতা থাকে। তথাকথিত সাম্যবাদীদের মধ্যে তো স্বাতন্ত্র্যের অভিমান সবচেয়ে বেশি, যদিও স্বাতন্ত্র্য সাধারণভাবে বিশেষবাদী বা অসাম্যবাদী। বিপরীতে দেখা যায়, গ্রামবাংলার মানুষের মধ্যে, তথাকথিত ধর্মভিরু সাধারণ মানুষদের মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের অভিমান সবচেয়ে কম। তাঁদের ভিতরে সকলের থেকে পৃথক বা আলাদা হয়ে থাকার কোনো প্রবণতা দেখা যায় না, বিপরীতে মিলে-জুলে থাকার প্রবণতা দেখা যায়। বাংলা ভাষার শব্দার্থতত্বের বিচারে এরকম মানুষদেরই 'সুন্দর' মানুষ বলতে হয়। সেই হিসেবে শ্রী সুবিমল বসাকও সুন্দর মানুষ।
১৯৯৬ সালে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। বিগতকালের হাংরি আন্দোলনের এক বিদগ্ধ আত্মারূপেই আমি তাঁকে চিনেছিলাম। একালের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যাবাদী সমাজে সকল সামাজিক সত্তার ও প্রতিষ্ঠানাদির যেমন কেন্দ্র ও প্রান্ত হয়ে থাকে, হাংরি আন্দোলনেও সেইরূপ কেন্দ্র-প্রান্ত ব্যাপার ছিল। কেন্দ্রে যখন মলয় রায়চৌধুরী সগৌরবে বিরাজিত ছিলেন, তখন প্রান্তে ছিলেন সুবিমল বসাক। কালধর্ম তাঁকে যে-কলঙ্ক বা গৌরব দিয়েছিল, তা সবই তখন মলিন হয়ে এসেছিল। তাঁর স্বভাবের মধ্যে সেসবের রং-রূপ, তেজ-ছটা আমার চোখে খুব একটা পড়েনি। যেটি পড়েছিল, তা হল তাঁর নিষ্কলুষ আত্মার দীপ্তি। প্রথম আলাপেই বুঝেছিলাম, এই মানুষটির সঙ্গে নির্বিবাদে ঘর করা চলে।
কলকাতার বাংলা সাহিত্যের জগতে আমার অনুপ্রবেশ ঘটে ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৭-৯৮ সালের মধ্যেই আমি টের পেয়ে যাই, এই জগৎ অত্যন্ত কলুষিত হয়ে গেছে। ভাল সাহিত্যিক তো পরের ব্যাপার, আগে তো ভাল মানুষের সাক্ষাৎ পেতে হবে। এখানে যে ভাল মানুষের দেখা মেলা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে! কার্যত আজকের কলকাতায় বঙ্গসাহিত্যের সারস্বত ব্রহ্মলোকে ভালমানুষের দেখা পাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠেছে। যাঁরা মানিষ হিসেবেই কলুষিত, তাঁরা ভাল সাহিত্যিক হবেন, এমন আশা করা খুবই ত্রুটিপূর্ণ এবং দুরাশা মাত্র। তারই মাঝে যে আমি দু'চারজনকে ভালো মানুষ রূপে পাই, তাঁদেরই একজন শ্রী সুবিমল বসাক। ২০০০ সাল থেকে আমি সেমিনার, সাহিত্যসভা ইত্যাদিতে যাতায়াত বন্ধ করে দিই এবং অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়ে একান্তে নিজের কাজ করতে থাকি। সেই একান্ত সময়েও যাঁদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কমবেশি অক্ষুণ্ণ থাকে, শ্রী সুবিমল বসাক তাঁদের একজন। তাঁর সান্নিধ্য আমার খুবই ভাল লাগত। তাঁর ভালমানিষির গন্ধ মনেপ্রাণে মাখামাখি হয়ে যেত। মনে পড়ত সৈয়দ মুজতবা আলীর সেই অমোঘ বাণী --- 'কয়লাওলার সাথে দোস্তি, ময়লা হতে রেহাই নাই/ আতরওলার বাক্স বন্ধ, দিল খুশ তবু পাই খুশবাই।' শ্রী সুবিমল বসাকের সাহিত্যসৃষ্টি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কেননা, তাঁর সাহিত্য আমার মস্তিষ্কের স্বভাবের সঙ্গে খাপ খায়নি বলে তা আমার উপভোগ্য হয়নি। অতএব, যা আমি ভাল করে উপভোগ করিনি, তা রসাল ও সুস্বাদু কি না, বলদায়ক কি না, উপাদেয় কি না, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে আমি পারব না। কিন্তু মানুষটি যে আমার খুবই আপনজন রূপে গৃহীত হয়েছিলেন, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তাঁকে আমি 'সুন্দর মানুষ' বলেই চিনেছিলাম, চিনেছি, ভালবেসেছি।”
সুবিমলের ‘’হাবিজাবি’ কবিতা দিয়ে চামউকুন পর্ব শেষ করছি :-
আমারে মাইরা ফেলনের এউগা ষড়যন্ত্র হইসে
চারো কোনা দিয়া ফুসফুস আওয়াজ কানে আহে
ছাওয়াগুলান সইরা যায় হুমকে থিক্যা
অরা আমারে এক্কেরে শ্যায করতে সায়
আমি নিজের ডাকাইতে্ যা হাতেরে লইয়া সচেত্তন আসি
কেউ আইয়া চ্যারায় দিশায় চ্যাবা কথা কয় না
আমি সুপসাপ থাকি
ভালাসির গুছাইয়া আমি কথা কইতে পারি না
২ কইতে গিয়া সাত হইয়া পড়ে
১৫ সাইলে ৯ আইয়া হাজির হয়
ছ্যাব ফেলনের লাইগ্যা বিচড়াইতাসি অহন
আহ, আমার দাঁত মাজনের বুরুশ পাইতাসি না
বিশ্বাস করেন, কেউ একজনা আমার মুহের সকরা খাবার খাইসে ।
(হাংরি বুলেটিন নং ১৮ থেকে)
লেবেলসমূহ:
সুবিমল বসাক,
Subimal Basak
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)