বুধবার

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও হাংরি আন্দোলন : প্রবালকুমার বসু

প্রবালকুমার বসু
ভাবছিলাম দশ পনেরো বা কুড়ি বছর পরে, যখন আমরা এই সময় থেকে আরো একটু দূরত্বে পৌঁছে যাব, ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতে পারব আরো একটু নিস্পৃহভাবে, কীভাবে দেখব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে? শুধুই একজন লেখক যিনি পাতার পর পাতা অক্লান্ত গদ্য-গল্প-উপন্যাস লিখে গেছেন অথবা একজন কবি যিনি বাংলা কবিতায় এনেছিলেন প্রথম আন্তর্জাতিক ভাষা? অথবা একজন সর্বাঙ্গীণ আধুনিক মানুষ, বাঙালি, যিনি তাঁর চিন্তায়, মননে, ব্যবহারে সর্বতোভাবে স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছিলেন অন্যদের থেকে, সর্বাধিক প্রভাবিত করেছিলেন সময়কে, পরবর্তী প্রজন্মকেও।

একজন সাহিত্যিক যখন সমাজে মহীরুহ হয়ে ওঠেন, সেটা শুধুই তাঁর লেখার জন্য হন না। লেখার সঙ্গে-সঙ্গে তাঁর যাপন, সামাজিক অনুভূতি ও দায়বদ্ধতা, মানবিক দিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সহানুভূতিশীলতা – এই সবেরই সমন্বয় সেই ব্যক্তিকে এমন এক জায়গায় উপনীত করে, যেখানে তাঁর দিকে তাকালে মনে হয় তিনি আমাদের কল্পনার চেয়ে বৃহৎ, আদর্শের চেয়ে মহৎ। আমাদের সাধ্য কী তাঁকে আমাদের ভাবনার মধ্যে ধরি!
খুব কাছ থেকে গত পনেরো বছর মানুষটিকে দেখতে-দেখতে আমার মনে হয়েছে, আমি খুব সৌভাগ্যবান যে আমি যে-সময়ে জন্মেছি, সেই সময়ের মধ্যেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বেঁচে রয়েছেন, আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারছি, আড্ডা মারতে পারছি, নানান আবদার করতে পারছি আর উনি অক্লেশে আমাকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। এই আমি কিন্তু শুধুই আমি নই, এই আমি আমারই মতন আরো অনেক তরুণ, অতি তরুণ, অধিক তরুণ কবি বা লেখক যাঁরা আমারই মতন সমান সৌভাগ্যবান। সুনীলদা আসলে আমার পারিবারিক বন্ধু, পিতৃবন্ধু সে প্রায় গত শতাব্দীর পাঁচের দশকের সময় থেকেই। আমাকেও উনি দেখেছেন ছোটবেলা থেকেই, কিন্তু এসব সত্ত্বেও আমাকে তাঁর খুব কাছের একজন, বন্ধুর মতো করে নিতে কোথাও আটকায়নি। খুব কাছাকাছি থাকতে-থাকতে যতবারই তাঁকে নিজের মতো করে বোঝবার প্রয়াসী হয়েছি, ততবারই তিনি প্রকাশিত হয়েছেন আরো মহৎ মানুষ হয়ে, আরো বৃহৎভাবে। বারবার ভাবতে চেয়েছি কী কী সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা তাঁকে করে তুলেছে এক মহীরুহ।
সুনীলদার মধ্যে ছিল নেতৃত্ব দেওয়ার এক সহজাত বৈশিষ্ট্য। ওঁর সমসাময়িক বন্ধুরাও মেনে নিয়েছিলেন সেই নেতৃত্বকে। একবার কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি হাংরি আন্দোলন থেকে অমনভাবে সরে এলেন কেন? উনি বলেছিলেন, দেখলাম সুনীল এই আন্দোলনে যোগ দিলো না। সুনীল যখন নেই, এই আন্দোলনের সার্থকতা নিয়ে আমার ভেতরেই সংশয় দেখা দিলো। এমনই ছিল সমসাময়িক বন্ধুদের সুনীলের প্রতি আস্থা। দশকের পর দশক পেরিয়ে এই আস্থার জায়গাটা পালটায়নি একটুও। এই একবিংশ শতাব্দীতেও তরুণতম কবি-লেখকদের হাজির হতে দেখেছি তাঁর কাছে তাদের অসহায়তা নিয়ে, তিনি পরম েস্নহে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন সাহায্য করতে।
সুনীলদা হিসাব করে সিগারেট খেতে পারতেন না, মদ্যপানও নয়। বেশ কয়েকবার নানান জায়াগায় নানান সময় প্রশ্ন করেছি, এরপরও এত লেখেন কী করে? বলতেন, মনটা ভারমুক্ত রাখতে হয়। কারো প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই, বিদ্বেষ নেই। বলতেন, এগুলো নেতিবাচক শক্তি। সামগ্রিক শক্তির মধ্যে এই নেতিবাচক শক্তিকে ধরে রাখলে নিজেরই ক্ষয়। একবার শারদীয় দেশের উপন্যাস শেষ করতে দেরি হচ্ছিল (প্রায় প্রতিবছরই হতো)। এদিকে মহালয়া প্রায় এসে গেল। একদিন বুধসন্ধ্যায় সুনীলদা বললেন, আজ তাড়াতাড়ি চলে যাব কাল সকালের মধ্যে লেখাটা শেষ করে দিতেই হবে, তা না হলে শারদসংখ্যা বেরোতে দেরি হয়ে যাবে। জানতে চাইলাম, তাহলে আজ এলেন কেন? বললেন, অমুকে কবিতা পড়বে, অনেক করে ধরেছিল, না বলতে পারিনি। ওর কবিতা পড়া হলেই চলে যাব। কাউকে না বলতে পারতেন না তিনি। পরদিন দেখা হতে জানতে চাইলাম, লেখা শেষ করেছেন? বললেন, করেছি, কিন্তু আর একটু হলেই আটকে যেতাম। গাড়ি না থাকায় ট্যাক্সি করে ফিরতে-ফিরতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম। উপন্যাসটা কী করে শেষ করব ভাবছিলাম। ট্যাক্সিচালক কিছুটা ইচ্ছাকৃতভাবেই ঘুরপথ ধরলো। নামার সময় ট্যাক্সিচালককে বললাম, এতো বেশি ভাড়া তো হয় না। তাতে সে একটি কটূক্তি করল। স্বাভাবিকভাবেই আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো, আমাকে তো এখন গিয়ে লিখতে হবে। ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ালে তো লেখার মানসিকতাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। যা ভাড়া চাইছিল দিয়ে উঠে এলাম ওপরে। একে কী বলব? সংযম? পরিমিতিবোধ? একটা গোটা জাতির বোধহয় এর থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে যে কোথায় থামতে হয়, কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হয়। সারাজীবন তিনি তাই লেখাকেই গুরুত্ব দিয়ে গেছেন। বলতেন, আমাকে লিখতে হবে। লেখার জন্যই তো এই আমার  অস্তিত্ব।
আর একটা জিনিস তাঁর কাছ থেকে শিখেছি, তা হলো, ভালো বলতে শেখা। তিনি বলতেন, ভালোমন্দ মিশিয়েই তো সবকিছু। মন্দটা না হয় না-ই দেখলাম। ভালোটাই দেখতেন তিনি। শুধুই ভালোটা। আর এই দেখায় অনুপ্রাণিত হতো বাকিরা, উদ্বুদ্ধও হতো। এই ভালো দেখার মধ্যে কোনো ফাঁকি ছিল না, ছিল আন্তরিকতা আর বিশ্বাস। এর প্রধানতম স্বাক্ষর নীললোহিত চরিত্রটিই। এ-এক বিরলতম সৃষ্টি, যার তুলনা বিশ্বসাহিত্যে নেই। এই নীললোহিতের কোনো কলুষ নেই, কোনো মন্দ নেই। মন্দ সে ভাবতেই পারে না। এ তো খুব কাছ থেকে জানা-চেনা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ই। তারই তো খণ্ডিত সত্তা, যা আপামর শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালিকে ভাসিয়ে দিয়েছে।
অল্পবয়সী কেউ উপন্যাস লিখছে বা লিখতে চাইছে জানলে আমি আত্মপ্রকাশের উদাহরণ দিই। অর্থাৎ এমন একটা কিছু লেখো যা বাঙালি পাঠক আগে পড়েননি। বেশকিছু বছর পর কিছুটা নিস্পৃহ ফিরে তাকাব যখন দেখব বাংলা গদ্যভাষাকে এক ঝটকায় সাহিত্যের ভাষা থেকে দৈনন্দিন মুখের ভাষায় নিয়ে এসেছিলেন যিনি তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কবিতার ক্ষেত্রেও তাই। তাঁর হাত ধরেই তো প্রথম আন্তর্জাতিক ভাষার স্বাদ পায় বাংলা কবিতা। ভিজে ভিজে অস্ফুট রোমান্টিকতাকে যেন পৌরুষ দিলেন তিনি কবিতায়। রোমান্টিকতায় যে-শরীরী প্রয়োজনও অনিবার্য, সকল অবগুণ্ঠন সরিয়ে সুনীলই প্রথম সাহস জোগালেন পরবর্তী প্রজন্মকে।
আমাদের জীবনযাপনের যা কিছু অপরিহার্য, ক্ষোভ, ভালোবাসা, অভিমান, হতাশা, যা জড়িয়ে আছে যাপনচিত্রের প্রতি পরতে অথচ যা ব্যস্ততার ফিকিরে উপলব্ধির গোচরে কখনো আসে না, দীর্ঘনিশ্বাসের মতো সেই উপলব্ধি সুনীলের কবিতায় নতুন করে আবিষ্কার করতে শেখাল যেন নিজেদেরকেই। এই আাবিষ্কারের অনুভূতি পাঠকের কাছে নতুন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আগে জীবনানন্দেও এই আবিষ্কারের অনুভূতি বাংলা কবিতা পাঠকের একবার উপলব্ধি হয়েছিল। কিন্তু তা ছিল প্রথাগত ঐতিহ্যের নিরিখেই। বাংলা কাব্যভাষার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কাব্যভাষার মেলবন্ধ কিন্তু ঘটেছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত দিয়েই। বিশ্বকাব্যস্রোত এসে যুক্ত হয়েছিল বাংলা কাব্যস্রোতে।
বাংলা কবিতার ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নিঃশব্দে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা কবিতার ভাষা, আঙ্গিক ও মননের মাধ্যমে বদলে দিয়েছিলেন কবিতার স্বরূপ যার ফল সৃষ্টি করছিল এক নতুন দীক্ষিত পাঠক যাঁদের অনেকে কবিও। এই পুরো বিষয়টাই ঘটছিল গত শতাব্দীর ছয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়, যার পর আমরা বাংলা কবিতায় একদল তরুণ কবিকে পেলাম, যাঁরা এই একই ধারায়, যে-ধারার সূচনা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে, সেই ধারায় কবিতা লিখতে এলেন। যেখানে প্রতিটি পঙ্ক্তিই যেন এক নতুন উন্মোচন। অনিশ্চিত। শেষ পর্যন্ত পৌঁছানো না-অবধি পাঠক জানেন না এই কবিতা কোথায় নিয়ে গিয়ে ফেলবে। এখানে তাঁর নির্মাণ রীতিবহির্ভূত।
কবিতার স্মরণযোগ্যতা নিশ্চয়ই একজন কবির কাছে শ্লাঘার। এই স্মরণযোগ্যতা অনেক সময় তৈরি হয় লিরিকধর্মিতার অনুরণনের কারণে আবার অনেক সময় বিষয়ের উপস্থাপনার দর্শনে। সুনীলের কবিতা লিরিকধর্মী নয়, আমাদের দৈনন্দিন কথা বলাই উঠে আসে তাঁর কবিতায়। তবু সেইসব পঙ্ক্তির কী অসাধারণ স্মরণযোগ্যতা। জীবনে এক-একটা মুহূর্ত যেন প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায় তাঁর কবিতায়।
একজন সৃজনশীল ব্যক্তি মৃত্যুর পরেও অনেকদূর অবধি হেঁটে যান যখন তাঁর সৃষ্টির বাইরেও তাঁর কাজের মাধ্যমে অবদান রাখেন সমাজে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর চিন্তা, তাঁর আন্দোলন বাঙালিকে তাঁর কাছে ঋণী করে রাখবে। বাংলা রাজ্যে প্রতিটি সাইনবোর্ড হতে হবে বাংলায়, তার সঙ্গে অন্য ভাষাও থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাকে বাদ দেওয়া চলবে না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছে বহুবার দরবার করেছিলেন যাতে সরকারি সমস্ত চিঠিপত্র পশ্চিমবঙ্গে বাংলায় লেখা হয়। বাধ্য করেছিলেন ব্রিটিশ ক্যালকাটাকে সরকারিভাবে কলকাতা বলে মেনে নিতে।
সুনীলদার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমার এক পুরনো সহকর্মী – যাঁর বয়স এখন পঁয়ষট্টি – ফোন করেছিলেন। উনি বললেন, ওঁদের বয়সী বা তার থেকে ছোট যারা এঁরা বড়ই হয়ে উঠেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পড়তে-পড়তে, তাঁকে আশ্রয় করে। এই যে একটা সময়কে, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে নিজের মনন, মেধা আর শ্রম দিয়ে তাদের মানসিক গঠনের উপাদান জুগিয়ে গিয়েছেন, রবীন্দ্র-পরবর্তী সময়ে আর কোনো বাঙালি এতোটা পারেননি। ঘুরেফিরে আমার ভেতরে কেবলই বাজতে শুনছি পুরনো সহকর্মীর সেই কথাটিই, আমরা তো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পড়তে-পড়তে বড় হয়ে উঠেছি।
নবপর্যায় কৃত্তিবাসের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছিলাম আমি। দুটো সংখ্যা ওঁর সঙ্গে সম্পাদনা করেছিলাম। ২০০৪ সাল নাগাদ শিল্পীদের লেখালিখি নিয়ে একটা সংখ্যা হয়েছিল। পরিতোষ সেন, হিরণ মিত্র, যোগেন চৌধুরী থেকে শুরু করে ইলিনা বণিক পর্যন্ত অনেকেই লিখেছিলেন। যেকোনো কারণেই হোক সুনীলদা দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমাকে। শিল্পীদের কাছে লেখা চেয়ে চিঠি দিতে হবে। চিঠি ছাপা হতে সুনীলদা বললেন, আমি একদিকে সই করেছি, তুমি অন্যদিকে সই করো। সঙ্কুচিত হয়ে বললাম, আমি কেন? বললেন, তুমিও তো এই সংখ্যার একজন সম্পাদক। পত্রিকা প্রকাশের আগে বললেন, সম্পাদকীয় লিখে দাও। আমি বললাম, সে তো আপনি লিখবেন। বললেন, সে তো লিখবই, কিন্তু শিল্পীদের লেখালিখির সম্পাদকীয় তুমি লিখবে। ওই একবারই নবপর্যায় কৃত্তিবাসে দুটো সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিল।
একই অভিজ্ঞতা কৃত্তিবাস গল্পসংখ্যা সম্পাদনা করার সময়। প্রায় ৪০ বছর পর কৃত্তিবাস গল্পসংখ্যা পুনরায় বেরোতে চলেছে, একটা উদ্দীপনা ছিলই। দায়িত্ব বর্তালো আমার ও আরেকজন তরুণ কবির ওপর। প্রাথমিক নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল আমাদের। সুনীলদা তখন হাঁটু অপারেশনের জন্য হাসপাতালে। আমাদের নির্বাচনের পর উনি বললেন গল্পগুলো একবার উনি পড়বেন। হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে-শুয়ে প্রতিটা গল্প পড়েছিলেন উনি। কৃত্তিবাস কবিতাসংখ্যাতেও একই নিষ্ঠা। প্রতিটা কবিতা পড়ে তারপর ছাড়পত্র দিতেন। হয়তো কবিতা-নির্বাচনে একটু বেশি উদার ছিলেন উনি। কবিতার চেয়েও কবি হয়তো প্রাধান্য পেত বেশি। অনেকবার প্রশ্ন করাতে বলতেন, কোনো সংখ্যায় সত্তর শতাংশ কবিতা ভালো থাকলেই হলো। এই সত্তর শতাংশটা কোথা থেকে পেলেন কখনো জানতে চাইনি।

এমন এক ব্যক্তিত্বকে খুব কাছ থেকে দেখার বা জানার নেতিবাচক দিক হচ্ছে দুর্বলতাগুলোও দেখে ফেলা। দুস্থ বা গরিব প্রতিপন্ন করতে পারলে বিশেষ জায়গা পাওয়া যেত তাঁর কাছে। হয়তো নিজে এই জায়গা থেকেই উঠে এসেছেন বলে বহু তরুণ কবিরই সংগ্রামটা বুঝতেন আর চেষ্টা করতেন যতটা সম্ভব সাহায্য করতে। কিন্তু অনেকেই সুযোগ নিত এই দুর্বলতার। নিজের অধিষ্ঠানকে ব্যবহার করতে-করতে একসময়ে ব্যবহৃত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি নিজেই।

আজ থেকে ১৫-২০ বছর পর যদি কোনো লাইব্রেরিতে হঠাৎ করে ঢুকে পড়ি, যেখানে শুধুই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সব বই রাখা, তাহলে আমি কোন বইগুলো পড়ার জন্য এগোবো? নিশ্চয়ই কবিতার বইগুলো। যা বারবার পড়ার পরেও আমার কাছে নতুন থেকে যাবে। আর যা পড়তে-পড়তে আমার বারবার মনে হবে যে, লোকটা জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কবিদের সঙ্গ করে  গেলেন, কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা করে গেলেন, যিনি অসংখ্য সাহিত্য-পুরস্কার পেয়েছেন যা সবই গদ্যের জন্য, তিনিই একদিন একান্তে আমাকে শিখিয়েছিলেন, কাউকে যদি কিছু না দিতে পার অন্তত সৌজন্যটুকু দিও। যিনি সবসময় উপদেশ দিতেন সচেতন থাকতে যাতে পাণ্ডিত্য যেন প্রতিভাকে ছাপিয়ে না যায়।
শেয়ার করুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন