মলয় রায়চৌধুরী প্রসঙ্গে দু-একটি কথা
উৎপলকুমার বসু
মলয় রায়চৌধুরী এখনকার বাংলা সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট নাম ।
তিনি ছয়ের দশকে লিখতে শুরু করেন এবং এখনও লিখছেন । তাঁর কবিতা, গদ্য প্রবন্ধ, সাক্ষাৎকার, ইস্তাহার ও পোলেমিক্স এর সমগ্র সংগ্রহ প্রকাশিত হলে একটি প্রয়োজনীয় কাজ হবে বলে আমার ধারণা ।
তিনি সাহিত্যিক নন । অর্থাৎ 'সাহিত্যের সেবক' বললে আমাদের স্মরণে যে-ছবিটি ভেসে ওঠে, তাঁকে সেই শ্রেণীতে ফেলা যাবে না । বাংলা সাহিত্য তাঁর হাতে যতটা না পূজিত হয়েছে--- আক্রন্ত হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ।
গত চল্লিশ বছরে, বাংলা সাহিত্যের রণক্ষেত্রে যা যা ঘটেছে, তা লিপিবদ্ধ করার যোগ্যতা বা ধৈর্য আমার নেই । তবে, সংক্ষেপে এটুকু বলা যায় যে মলয় রায়চৌধুরী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়েই যুদ্ধে নেমেছিলেন । তাঁর তাত্বিক প্রস্তুতি ছিল । এবং তথাকথিত বাংলা 'সংস্কৃতি'-র ঘরে তাঁর লালন পালন নয় বলে ওই কালচারের পীঠভূমিগুলিকে অবজ্ঞা করার মতো দুঃসাহস তিনি দেখিয়েছেন ।
বাংলা আধুনিক কবিতার প্রসঙ্গটি নিয়ে যদি ভাবা যায়, তবে দেখব, জীবনানন্দই সেই অঞ্চলের প্রধান পুরুষ । তাঁকে পেছনে ফেলে এগিয়া না-গেলে পরবর্তী একটা নতুন যুগের পত্তন হওয়া সম্ভব ছিল না । জীবনানন্দ কয়েকটি উপাদানকেঅবলম্বন করেছিলেন । যেমন অভিনব ইমেজ বা চিত্রকল্পেরব্যবহার, মহাজাগতিক সচেতনতা, মানুষের উদ্যম ও প্রচেষ্টার প্রতি তীব্র অবজ্ঞা এবং সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি গৌণ বিষয় । মলয় রায়চৌধুরী ও তাঁর প্রজন্মের লেখকদের ওই পাঠশালাতেই হাতে খড়ি হয়েছিল । কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাঁদের অন্য ধরণের পথসন্ধান শুরু হয় । বাংলা সাহিত্যের প্রধান ধারাটি একপ্রকার স্হিতাবস্হায় পৌঁছে গিয়েছিল । তার বাঁধ ভেঙে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না । তিনটি উপন্যাস ও স্মৃতিচারণেও মলয় রায়চৌধুরীর ওই আক্রমণকারী প্রবণতা লক্ষ করি । কথাপ্রসঙ্গে তিনি একবার বলেছিলেন---'লেখা রাজনীতি ছাড়া আর কী হতে পারে'।
বলা বাহুল্য, তিনি দলীয় বা সংসদীয় রাজনীতির কথা বলেননি । তিনি বলেছেন 'পলিটি'-র কথা । আমরা সবাই মিলে কীভাবে থাকব---মলয় রায়চৌধুরী তারই একটা বোঝাপড়ার দলিল তৈরি করেছেন ।
(হাওয়া-৪৯ পত্রিকার বৈশাখ ১৪০৮ বা এপ্রিল ২০০১ সংখ্যা থেকে পুনর্মুদ্রিত )
উৎপলকুমার বসু
মলয় রায়চৌধুরী এখনকার বাংলা সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট নাম ।
তিনি ছয়ের দশকে লিখতে শুরু করেন এবং এখনও লিখছেন । তাঁর কবিতা, গদ্য প্রবন্ধ, সাক্ষাৎকার, ইস্তাহার ও পোলেমিক্স এর সমগ্র সংগ্রহ প্রকাশিত হলে একটি প্রয়োজনীয় কাজ হবে বলে আমার ধারণা ।
তিনি সাহিত্যিক নন । অর্থাৎ 'সাহিত্যের সেবক' বললে আমাদের স্মরণে যে-ছবিটি ভেসে ওঠে, তাঁকে সেই শ্রেণীতে ফেলা যাবে না । বাংলা সাহিত্য তাঁর হাতে যতটা না পূজিত হয়েছে--- আক্রন্ত হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ।
গত চল্লিশ বছরে, বাংলা সাহিত্যের রণক্ষেত্রে যা যা ঘটেছে, তা লিপিবদ্ধ করার যোগ্যতা বা ধৈর্য আমার নেই । তবে, সংক্ষেপে এটুকু বলা যায় যে মলয় রায়চৌধুরী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়েই যুদ্ধে নেমেছিলেন । তাঁর তাত্বিক প্রস্তুতি ছিল । এবং তথাকথিত বাংলা 'সংস্কৃতি'-র ঘরে তাঁর লালন পালন নয় বলে ওই কালচারের পীঠভূমিগুলিকে অবজ্ঞা করার মতো দুঃসাহস তিনি দেখিয়েছেন ।
বাংলা আধুনিক কবিতার প্রসঙ্গটি নিয়ে যদি ভাবা যায়, তবে দেখব, জীবনানন্দই সেই অঞ্চলের প্রধান পুরুষ । তাঁকে পেছনে ফেলে এগিয়া না-গেলে পরবর্তী একটা নতুন যুগের পত্তন হওয়া সম্ভব ছিল না । জীবনানন্দ কয়েকটি উপাদানকেঅবলম্বন করেছিলেন । যেমন অভিনব ইমেজ বা চিত্রকল্পেরব্যবহার, মহাজাগতিক সচেতনতা, মানুষের উদ্যম ও প্রচেষ্টার প্রতি তীব্র অবজ্ঞা এবং সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি গৌণ বিষয় । মলয় রায়চৌধুরী ও তাঁর প্রজন্মের লেখকদের ওই পাঠশালাতেই হাতে খড়ি হয়েছিল । কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাঁদের অন্য ধরণের পথসন্ধান শুরু হয় । বাংলা সাহিত্যের প্রধান ধারাটি একপ্রকার স্হিতাবস্হায় পৌঁছে গিয়েছিল । তার বাঁধ ভেঙে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না । তিনটি উপন্যাস ও স্মৃতিচারণেও মলয় রায়চৌধুরীর ওই আক্রমণকারী প্রবণতা লক্ষ করি । কথাপ্রসঙ্গে তিনি একবার বলেছিলেন---'লেখা রাজনীতি ছাড়া আর কী হতে পারে'।
বলা বাহুল্য, তিনি দলীয় বা সংসদীয় রাজনীতির কথা বলেননি । তিনি বলেছেন 'পলিটি'-র কথা । আমরা সবাই মিলে কীভাবে থাকব---মলয় রায়চৌধুরী তারই একটা বোঝাপড়ার দলিল তৈরি করেছেন ।
(হাওয়া-৪৯ পত্রিকার বৈশাখ ১৪০৮ বা এপ্রিল ২০০১ সংখ্যা থেকে পুনর্মুদ্রিত )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন