........শম্ভু
রক্ষিত.......
(কাব্যগ্রন্থ- ‘সময়ের কাছে কেন আমি বা কেন মানুষ’, ‘প্রিয় ধ্বনির জন্য কান্না’, ‘রাজনীতি’, ‘পাঠক,অক্ষরগুলি’, ‘সঙ্গহীন
যাত্রা’, ‘আমার বংশধররা’, ‘আমি কেরর
না অসুর’...)
.......আমি আমার জন্যে নতজানু হইনা, আমি চাই উন্মোচন
আমি প্রকৃতির মধ্যে যেন নিরপরাধ এবং শান্তভাবে
বিচরন করতে পারি.....
ক্ষতসত্রের দাগ দিয়ে ঘিরে রাখা
সত্তরের দশক।কেউ বলবে গ্রাম দিয়ে শহরকে মুড়ে রাখার কথা আবার কেউ বুর্জোয়াবিকল্প
সমাজ সচেতনারই অগ্নিভ উত্তরাধিকার বহনের কথা শোনাবে। আসলে সত্তরের দশক বেশ খানিকটা
অমীমাংসিত , বেশ খানিক বিবিক্ত। অথচ দশকের বোধিবৃক্ষ্মমূলের কোথাও লুকিয়ে রাখা নেই
শম্ভু রক্ষিতের মত মহাসময় নিয়ে মূলধারার বাইরে থেকে যাওয়া কবির জন্মছক। তাঁর একটা
সাদাকালো পাহাড়ের গড় রয়েছে, রয়েছে গুটিয়ে থাকা ফুসফুস আর ঝুনঝুনি নাড়া বৃক্ষের
উপবাসী চোখ, যা নিয়ে তিনি হেঁটে যান কবিতাপোড়া ছাইয়ের সাম্রাজ্য ধরে; তাঁর জীবন –জিজ্ঞাসা- কবিকৃতি সবই বোধহয় প্রকৃত অর্থে স্বরচিত,স্বতন্ত্র্য, যেখান থেকে
তাঁর খেদ করার কিছু নেই আর যেখানে দাঁড়িয়ে দিশাহারা গ্যালাক্সির দিকে মুখোশমিছিলের
দিকে শ্লেষ ছুঁড়ে দিয়ে তিনিই বলতে পারেন-“আমরা
সকলেই পরীক্ষা দিতে বসেছি, খাতা জমা রেখে যেতে হবে।মহাকাল কাকে কত নম্বর দেবে তার ওপরেই নির্ভর করছে কবি ও কবিতার ভবিষ্যৎ। খাতা জমা
দিয়ে চলে যাবো। চল্লিশ পঞ্চাশ বছর পর খাতাগুলো দেখা হবে, যদি কিছু সারবস্তু থাকে ,
পাশ করবেন- নাহলে গোল্লা!!”……শম্ভু
রক্ষিত মানেই কাঁধে ভারী ঝোলা ব্যাগ, লিকলিকে চেহারার নিম্নবিত্ত নাবিকটি যাঁর
ঠাঁই নেই প্রায় কোন কবিতা সংকলনেই, যিনি অপাংক্তেয় প্রায় প্রতিটি কবিতাবাসরে অথচ
কবিতার দুর্যোগে নক্ষত্রসন্ধানী তিনি, উল্কার মত নৈঃশব্দের উৎস অবধি তাঁর জগৎ তাঁর
ঐশ্বর্য। চাপরাশী বাংলা কবিতায় এর থেকে বেশি কিইবা আশা করতে পারে বিশুদ্ধপ্রীতি
বাংলা কবিতা? সঠিক অর্থে বলতে গেলে শম্ভু রক্ষিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রিয় ধ্বনির জন্য কান্না(১৯৭১)’‘ থেকেই সাজিয়েছেন তাঁর নিজস্ব এক
দূরত্বের ধারনা, এক অননুকরনীয় ভাষা, আত্মভেদী শব্দকোষ যা চিরমুক্ত প্রবাহ থেকে
প্রবাহমানে , আরম্ভ থেকে সে চলেছে নতুন আরম্ভের দিকে, অহংকারের দিকে।
তাঁর ভাষা নিরাকার, দর্শন থেকে শুরু করে মহীলতার পরাবাস্তববাদ –গভীরতায় ঠাসা তাঁর
কবিতাগাথা তাঁর কোলাহল তাঁর লবণমুক্ত তন্ময়তা। বাংলা কবিতার স্রোতের বিপক্ষে তিরিশ
দশক ধরে গড়ে তোলা তাঁর ঘর-মাটি-আলো-জল যা
তাকে সারস্বতের গুনগ্রাহীতা নয় বরং শিখিয়েছে বিশুদ্ধ কবির জনক হিসেবে নিজেকে
অতিনিপুনভাবে প্রবী্ন করে তোলা। দারিদ্র্য,যন্ত্রনায় কাহিল হয়েও তিনি ‘ব্লুজ’ বা ‘মহাপৃথিবী’র মত সমান্তরাল
পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন ; কলেজ স্ট্রীটে
দেখা হলেই অবাক লাগত মেদিনীপুরের বিরিঞ্চিবেড়িয়া
থেকে মানুষটা হাতে করে মহাপৃথিবীর প্রূফ নিয়ে হাজির ,এত অদম্য কবিতাপ্রীতি বোধহয়
সামান্য কবির ভেতর সুসজ্জিত মৌলিকতা না থাকলে সম্ভব নয়। কবি এখানে পরিচিতির বাইরে,
প্রাসঙ্গিকের বাইরে , তবু তিনি সমস্ততায় তবু তিনি লিপিত নতুনের প্রতিদিনে। পার্থিব
অল্পতার ভেতরেও শম্ভু রক্ষিতের মত কবিই হয়ত তাই বলতে পারেন-“রূপ ঐশ্বর্যের তৃণগুলি নিয়ে এসো ও বশীভূত হাড়/লৌকিক সৌন্দর্য আমাদের অনেক আছে”……………।।
প্রিয়
ধ্বনির জন্য কান্না(২৭)
হৃদরোগের
সন্ধান নিয়ে ঢুকে পড়ো। সরবরাহকারী নির্মাণযন্ত্র
পৃথিবীর
মেঘময় আতঙ্ক শেষপর্যন্ত আধার হিসেবে।
ঊর্ধ্বময়
সর্বনাশ ভেবে স্নায়ুতন্ত্রের কাজ। সুরক্ষিত জল
দহনক্রিয়া
মাথার ধ্মনী ছিঁড়ে যাও, বোতল, বায়ুর কাঠিন্য অনুশীলন শরীর
অরণ্যসমগ্র,
পাখিদের শ্রবণশক্তি, আঙুরসমস্যা শজ নয়
উজ্জ্বল
মাথার পর্যবেক্ষণ ভেঙ্গে অবসাদ্গ্রস্ত উচ্চগ্রামের অংশে
প্রমানিত
হি, অন্ধ দৈবজ্ঞ, সৌরশক্তি,প্রশান্তি যেন আওয়াজ বিক্রি
টিন-ভর্তি
কুয়াশা নিয়ে মানুষ-জীবজন্তুর মাথা হয়ে হাতজোড় করি
বসো
গৌরবসূর্য, অদ্ভুত ভূত-প্রেত বিশ্বাস সে-বিষয়ে সচেতন
পৃথিবীর
মেঘ, শিষ,দৃষ্টিনির্ভর আস্বাদনের ফসল রহস্যের মিশ্রণ চেওনা
অতুল
ঘনরাশি ও উরসুলা কিয়দংশের লাল রং লেগে আছে দুর্যোগমথিত
এলাকায়;
তোমার কোনো অলৌকিক পরিক্রমা নেই। শুধু ফুলবাগিচার
ও জল
বায়ু কুয়াশার অংশ লক্ষনীয়, সাড়া দাও । রূপকের মত বিবরণ, দৈববানী
সম্পূর্ণ
ভিত্তিহীন প্রমানিত হয়েযায়; শরীরের ভিতর বেশী, নিশ্চিত প্রমাণ এই
গবেষণা
শক্তি, কেন-না, এখাএন এই উক্ত সত্যি স্বর্ণময় হয়-আবিস্কার
রং তুলি
বিপদের হূঁশিয়ারী রূপকর্ম হয় ও যেন আদানপ্রদান
তোমার
সহানুভূতিশীল হৃদয়টি আমার চাই...
যুত-যৌগ-তন্ত্র
আমার
স্বরযন্ত্রের ঠিক নিচের থেকে গঠনকারী ক্ষীণ মূল শ্বাসনালী
আমার
হৃদপিন্ডের মুখে নেমে এসে অণুস্তরে পৃথক দুই ক্লোমশাখায়
গঠনাকৃতি
নিয়েছে
আমার নরম
হাল্কা ক্লোমশাখা-দুটি ডাইনে বাঁয়ে এগিয়ে
তড়িৎধর্মী
শাখা প্রশাখায় ভাগ হয়ে
আমার দুই
ফুসফুসের দুই দিকে ঢুকে
আমার
শরীরের নানাস্থানে ধর্মোদেশ দিয়ে বেড়াচ্ছে;
তারা
আমার মূল শ্বাসনালীর মতো উত্তেজনাপূর্ণ-ফাঁপা রয়েছে
আমার
স্থিতিস্থাপক তন্তু দিয়ে আমার সরু সরু নলগুলো তৈরী
তাদের আজ
মাইক্রোস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে আমাকে দেখতে হচ্ছে
খুব কঠিন
দেখালেও এরা হাড়ের তৈরী নয়
এগুলি
কচকচে ধরনের একরকম উপাস্থি দিয়ে তৈরি
আর তারা
এস-পি-ডি-এফ উপাস্থি দিয়ে গঠিত
তাদের
নির্দিষ্ট আকার আছে
আর তারা
কেলাসাকার বা বর্তুলাকার
আমার
পাতলা মাংসপেশী কখনো চুপসে যাচ্ছে না
কেননা
আমার শ্বাসনালীর প্রশাখা আমার ফুসফুসের থেকে
অনেক
দূরেই রয়েছে
আমার
ফুসফুসের বায়ুকোষ পর্যায়ক্রমে একবার করে
চুপসে
গিয়ে বায়ুশূন্য হচ্ছে
আবার
ফুলে উঠে দিব্যি ব্রম্ভ্যবিদ্যা শিখছে
আমার
সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম ব্রংকলগুলি যদি সংখ্যা গণনা করা যায়
তাহলে
প্রত্যেক দিকে সংখ্যা হবে আড়াই কোটি
আর
বায়ুকোষের যুক্ত ইনফণ্ডিবুলামের সংখ্যা গণনা করলে হবে
প্রায়
চল্লিশ কোটির বেশী
আমার
স্বরযন্ত্রের বাক্সের মধ্যেই দুই পাশ থেকে দুটি ঝিল্লির পর্দা
আড়াল
টানা আছে
তার
মাঝখানে একটু ফাঁক
বলা বাহুল্য
আমার স্বরযন্ত্রের বাক্সটি বা আমার ভোকাল কার্ডের পর্দাগুলি
রৌপ্যবৃক্ষের
আকারে সরুমোটা হয়ে অবস্থান করে
আমাকে
চিহ্নিত করছে...
সেই ঘাসওয়ালা
সেই ঘাসওয়ালা
তার ভাষায়, ‘ঠিকমত কালো, পাতলা’
‘বুজুকুশাস’
জীবানু গজাবার উপায় খুঁজছিল
সেই ঘাসওয়ালা
তিনপায়ে দ্রুত ছুট লাগিয়ে
ভূঁই-এর প্রায় অর্ধেকটা খেয়ে ফেলেছিল
বিস্ময় ০০০ তার দেহ থেকে গজাচ্ছে
তিনটি অপ্রতিহত দ্গদগে লালচে মাথা
সংলাপঃ নিয়তির বচনের সঙ্গে জ্বলতে থাকছে
পদহীন শিশু
ভিখিরি ও মাছির তাড়া খেয়ে
কখনো ছুটে
ঘন ঘিঞ্চি বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ছে
কখনও আওড়াচ্ছে;
আলাউকম আবশো আমহারাঞ্চা আউকাল্লে
সেই ঘাসওয়ালা
আর হাতির শূঁড় যাদের গলায়
যাদের কাছে শিলমোহরের কোন গরু নেই
তাঁবুর আচ্ছাদন বিছিয়ে
তাদের জন্য ছায়ায় আশ্রয় তৈরী করছে
সেই ঘাসওয়ালা
সেই ঘাসওয়ালা
টুকরো টুকরো মেঘেদের ভর করে মরিয়া রহস্যে ফুলছে
ষাঁড়ের চামড়ায় তৈরী শাদা ঢাল নিয়ে
অনেক জলাশয়কে ঘিরে ধরছে
চিন্তন
আমি
ভেবেছি আমাকে ঘরের দেওয়ালে বিভিন্নভাবে
স্থাপন
করে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করব।
আমি আজ
নিরস্ত্র, অযুগ্ম, ত্বরমাণ।
আমি
আমাকে আত্মসাৎ ও আক্রমন করি
দ্বিধাহীন
ভাবে সমস্ত কিছু প্রকাশ করে দেখাই
আমি
আমাকে থামিয়ে রাখি, অপরিবর্ত আকার তৈরি করি
আমি
আমাকে দেবতার, পর্বতমালার
বা
জড়পিন্ডের ঋজুরেখা তৈরি করতে কখনো দেখিনি
ধ্রুব
বিশ্লেষণ ও স্থির বিষয়বস্তুতে আমি ক্লান্ত।
আমি
বস্তুতে আমাকে দেখছি না
আমার
হাতের একটা ছোট পেরেক সেই আমাকে দেখে যাচ্ছে
আমার
ভেতর হালের কলাকৌশলের দেদার অনুপ্রবেশ
ঘটেছে
অসংখ্য
বিশ্বাস, সূর্যের যোজনা, অকৃত্রিম অস্তিত্ব, আলজিঘন কালচে পাথর
বড়বেশী
অর্থবহ ছবি, মধুর বিহ্বল কারুকার্য সচেতন হয়ে আমরা মধ্যে আসছে
প্রয়োজনের
চেয়েও বেশি বৈচিত্র্যসৃষ্টি করা উদাহরন
বৃত্তাকার
গতিশীল পাহাড়
আমি
চিন্তা ও নিষ্ঠার শুদ্ধ পার্থক্য দেখাই স্বচ্ছ পাথরে
উত্তর
হতে দক্ষিনের অভিযোগো নিবদ্ধ করি
প্রতিরূপমূর্তি
আমাকে দেখে ফেলে
ও
মুখোমুখি কাষ্ঠখণ্ড
আমি লাল
রঙ পরিমিতভাবে সূর্যকিরনের মত সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছি
শঙ্কুর
মত ধূসর ছাইরঙের কিছু গ্রাম,কিছু শহর দেখা যাচ্ছে
গড়িয়ে
পড়ছে রঙিন ঘাসের ঘোড়া
আমি
জীবন্ত আগ্নেয়গিরি-অনুসন্ধানযানের ওপর শুয়ে প্রতিধ্বনি খুঁজছি ।
পুনরাবৃত্তি
চারপাশের
রিক্ত হৃদয় চিৎকার করে এসে দাঁড়াল গোচারনভূমির উপরে।
প্রত্যেকবার
আমার পাশ বেয়ে প্রদর্শিতমুখ অভিশপ্তের উন্মুক্ত প্রার্থনার মত
বিবস্বানের
নির্দেশে স্বতন্ত্রভূমি তৈরি করল ।
এক শ্বেত
কুষ্ঠরোগিনী শতছিন্ন পোশাকের তলায় হাত ঢুকিয়ে আমার শরীরে
উচ্ছ্বাসের
সংলাপ ঢালছিল। তার বৈশিষ্ট্য সমর্পিত, পরিপূর্ণ এবং তার
প্রশ্নকটি
আমার কাঁধের ওপর হয়ে দিনের উষায় জঠরাগ্নি নামাচ্ছে।
পিতলের
বাতিদানের চিহ্ন ধরে এসে গান গেয়ে ক্লোম জাগল।
মিশ্রিত
ধ্বনি অবলীলাক্রমে এক একজন নৃত্যাঙ্গনা নোংরা আর উকুনভর্তি
নারীর
মেঘবেশ্ম শাড়ির ছোট ছোট ঘোড়াদের ওপর পশুর
গলা বানিয়ে ফেলল।
সবই
বেসুরো। অপরিণত । স্বচ্ছন্দ ।
তিনজন
আবকার আমার ঘরের মেঝেয় বসে হিজিবিজি বানাচ্ছে।
সামান্য
আগে জানলাম। আমি তখনো আমার হয়ে ওঠেনি। নির্দিষ্ট।
মৃতদের
বিস্ময়কর শক্তি দেখে আমার ভীষন রোষ হলো। আমি রাসায়নিক
তন্তুর
কাছে অনেকদিন কাউকে গলে যেতে দেখলাম না। কোন মানুষ
ছায়া হতে
পরিবর্তন এল। অপিঙ্গল বাতাসকে আমি কি করে
সম্বোধন
করব!আমার আপশোস থাকল।
সুখের
ক্ষীণ শব্দের মধ্যে আমার চাবুক এবং
চিরন্তন যেন জাহানের চিত্রের ঘাড় বেঁকিয়ে
রূপান্তরিত। আধুনিক ।
অনেকেই
থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। সহগামিনীরা বেগবান জলোচ্ছ্বাসের মত
এগিয়ে
এল। ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে নাচতে লাগল। আর প্রত্নতত্ত্ব ভূতত্ত্ব ও
আবহাওয়া
বিজ্ঞানীদের শাসন করে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল।
আমার
শূন্য যন্ত্রনা। আমার অজ্ঞেয় হৃদয়ে ধারনার আইনঘড়ি । প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তাদের
নিরুদ্দেশ যাত্রায় ষাঁড়ের ও মেষশিশুর অবসর।
সবই
নির্ব্যাজ নিকুঞ্জের বাইরে এসে পড়ল। দেখল মাটির ওপর
বিচ্ছিন্নতার
ভেতর আমি পরিপূর্ণতা জুড়ে রয়েছি। আমার অভিসন্তাপ মুখ
দেখা
যায়নি। আমার উদ্ধ্বত মুখ, শুদ্ধ, উন্মুক্ত, অভ্যর্হিত ।
এফিডেবিট
আজ আমার
বরাদ্দ একটা প্লেটে শক্ত রুটি আর অদ্ভুত পাঁউরুটি আর গরুর
ও শূকরের
মাংস আর সালতি আর চা কফি আজ সি~বি~আই এর খবরদারির
মধ্যে
আছি আজ কাঠের খটাং খটাং শব্দ-করা ডি এফ লিফটে চড়ে নতলার
ঘরে এসে
আমি পৌঁছেচি আজ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলাকে দেখা গেছে
মোজাম্বিকের
আদি প্রেসিডেন্ট সামোরা ম্যাচেলের ঘরনী গ্রাকা ম্যাচেলের
সঙ্গে আজ
কলকাতার অফিস পাড়ায় একটি বেসরকারী লকার কোম্পানীর
মালিকদের
এক শরিক কোম্পানির ন-হাজার গ্রাহকের ভল্টের চাবি পকেটে
নিয়ে
বিদেশে যাওয়ায় আমার এক আত্মীয় চূড়ান্ত সংকটে পড়েছে আজ
কলকাতার
মুক্তারামবাবু স্ট্রীটের মল্লিকবাড়ি থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হবে
তাতে
পালকি ঘোড়ার গাড়ি পুরনো দিনের গাড়ি থাকবে শোভাযাত্রা শেষ
হবে
আলমগীরের পৌত্র ওসমানের সমাধিস্থলে আজ প্রয়াগে একটি সতীদাহের
ব্যবস্থা
করা হয়েছিল আজ মুম্বাইয়ের স্টেট ব্যাঙ্কের ডেপুট ম্যানেজিং
ডিরেক্টরকে
সময় দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ভারতীয় হকি কি আজ
আটলান্টা
থেকে হীরে নিয়ে আসবে আজ মনসার গান আজ মুজরিম হাজির
আজ এ
মাউথফুল অব স্কাই আজ পঞ্চায়েত সমিতির ভোট আজ মাওয়ের
মৃত্যুবার্ষিকী
হংকঙে কিংবা বেজিঙে অর্ধশত বেদনা রাখার অঙ্গীকার আজ
কোনও
কোনও অঞ্চলে দু এক পশলা বৃষ্টি অথবা ব্জ্রবিদ্যুৎ বা বন্যাসহবৃষ্টি
হবেই আজ
থেকে পর্যটনকর শেয়ার বিক্রির নতুন নিয়ম রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আজ
শিক্ষক
অধ্যাপক সরকারী কর্মচারীদের বেতন আটকানোর প্রস্তাব আজ থেকে
বাংলাদেশী
মোটর ব্যাটারি সংস্থা ভারতে বিক্রী করবে কলোনেল মোটর
পাটশিল্পে
সংরক্ষন বজায় রাখার আজ আর্জি এন জ়ে এস সি কর্তার আজ
ভারতকে
১৩৫০ কোটি ডলার সরকারী ঋন দেবে আমার শ্বশুরকূলাজ
পানাগড়ের
বাজারে ভীষন ক্রিয়াহীন কালিমূর্তির তাণ্ডব আজ শুটিং শুরু
হয়েছে
সাধ আহ্লাদের আজ হ্রাদকানির সুবিশাল ভাক্লাভ হাভেলের ইন্ডিয়া
দর্শন আজ
দেবোত্তর সম্পত্তি আইনের ৩৫ ধারা লঙ্ঘন করেছে স্বামী
নিশ্চলানন্দ
সরস্বতী জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে অ্যানফ্রাক্স রোগের মহামারী
ঠেকানো
সম্ভব হয়েছে বলে বনমন্ত্রী আজ দাবি করেছে আজ থেকেই তো
বাংলার
বঙ্গীয় হাঙামা শুরু হয় আমার মাতৃকুল আজ অভিবাদন সম্পর্কে
নতুন
আইনকানুন ঘোষনা করে আমি কী কাজ করি আজ অবশ্য সি বি
আই বা
পিতৃকূল জানতে পারেনি আজ আমি আমার উদ্ভট নাটকের চরিত্র
বিশেষ আজ
আমার বরাদ্দ একটা প্লেটে শক্ত রুটি আর
অদ্ভুত পাঁউরুটি আর
মুক্তিবাদ
যারা
আমাকে ডিগডিগে
আমার
রুহকে যুদ্ধের হিরো
আমার
ঈশ্বরকে অনিষ্টজনক
আমার
কবিতাকে
চাকচিক্যময়
আভিজাত্য বা বিক্ষিপ্ত প্রলাপ মনে করে
আহ ভাইরে
তারা
বাণিজ্যের অযথার্থ ক্ষমতা দিয়ে
তাদের
নাক মুখ কান দখল করে
এই
শক্তিশালী প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রের
অস্তিত্ব
রক্ষা করুক
যারা
বালি ফুঁড়ে
আমাকে
বাল্যপাঠ শেখাচ্ছে
আহ ভাইরে
তারা
মেকি সুন্দরের মিথ্যে সীমারেখা প্রত্যাখ্যান করে
অন্তত্ব
একটা ছোটখাটো দেবদূতের সন্ধান করুক
অকেজো
জ্যুকবক্সে স্থির ডিস্ক
জীবনের
আর ভাঙা ইঁটের
অশুভ
যুদ্ধপরা যন্ত্রনায় আন্তর্জাতিক কোরাস
আহ ভাইরে
কবরখানা
আর টাউনশিপের সুড়ঙ্গের মধ্যে গুঞ্জন করা
আস্তাবলের
ধূর্ত পিটপিটে মায়া
মধ্যে
মধ্যে ফ্যাঁকড়া
আহ ভাইরে
কাঁধে
অগ্নিবর্ণের ক্যামেরা
হাতে
অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ট্রানজিস্টর
অন্য
সম্রাটের দায় যাতে মেটে
মাংস ভেদ
করে সচল ফ্রেস্কোর মত
এইসব
রেডিয়ো-টিভি-অ্যাকটিভ যুবশক্তি
মুক্তিবাদ
এবং জাঁকজমক খুঁড়ে নৈশস্তব্ধতা
আহ ভাইরে
সাক্ষ্য
আমার অস্তিত্বের কেন একটা অজ্ঞাত উদ্দেশ্য আছে-আমি জানি না
আমার তুষারশুভ্র হাত আমাকে এগিয়ে দিয়ে
নিজেকে ফুটকি রঙের
সাহায্যে প্রকাশ করে
আমি থাকি
তার যন্ত্রপাতির ও তার রত্নভরা শরীরের টূকরো টাকরার মাঝে
নির্দিষ্ট
আমি, অদ্বিতীয় শান্ত, মানুষকে বোঝাই দর্শনীয়ভাবে উর্ধ্বে যেতে ও
নীলরঙের
সন্ধ্যায় ছদ্মবেশে ঘুরি এক জাজ্জ্বল্যমান মূহূর্তকে প্রতিষ্ঠা
করার
জন্যে আমার ঘৃষ্ট স্বরঃ আমি নগরের কোথা থেকে আসছি?
আমাকে কি
ঈশ্বরের নিঃসঙ্গতার উপায়সমূহ উপহার দেওয়া যায়? আমার
শীতল
স্থাপত্য কাঠামো সম্পর্কে কি কিছু করা উচিত? আমি মাথা নাড়ি
আমার
মনঃসংযোগ অস্থিচূর্ণিত বামনমূর্তির
বেশে নয়।
শিকারী পাখির বেশে।
আমি
প্রতীক্ষা করি। আমি সর্বদাই আক্রমন থেকে আত্মরক্ষায় বিস্তৃত
সবুজ
টুপির তলায় আমি মোহিনী দৃশ্য এনে বসাই
ভাঙা
ভাঙা গোঙানি নিয়ে তাকিয়ে থাকি। আমি স্বীকার করি-
আমি
হচ্ছি সেই ধরনের মানুষ যে শুধুমাত্র আবর্জনা দিয়ে যায় না
আমি নদীর
উজানে গিয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিই।
আমি ঊষার
অস্পষ্ট আলোতে নিজেকে বিশ্লেষন করি
আমি
বিস্ময়কর সব আভরণ ছাড়িয়ে কাজে নামি
আমি
সিদ্ধান্ত নিই যে আলো আমি সৃষ্টি করি তা হারিয়ে যায় আমি
হিমঘাসে
বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছি, সকলের সামনে কেঁচোর মত গুটিয়ে যাচ্ছি
বস্তুত
শতাব্দীর মৃত আত্মারা উপুড় হয়ে ঝুঁকে পড়ে
হাড়ে
হাড়ে ঠাণ্ডা অনুভব। উঁহু, ও হো
আমি
বৃক্ষের সোনালী গুঁড়ি দিয়ে নিজেকে রূপান্তরিত করি।আমি
বাস্তবিক
ভয়ংকর। গলা আমার আচ্ছাদিত গন্ধক ও ক্লোরিনের ওড়নায়
তবু আগুন
যত্ বেড়ে ওঠে আমিও লুকোতে থাকি
আমি
ব্যাখ্যেয় হেসে পথচলতি লোকের সামনে দুহাত তুলে ধরি
শেষে
তাদের মিলিয়ে দিই গিঁট বেঁধে
শেষতম
কলস্বর আমায় ঠেলতে থাকে।আমার প্রাচীন এই কোলাহলে
সৃষ্টির পরিসরের জড়তা কেটে গিয়ে
অনুপস্থিত লোকেদের ছায়া এসে
পড়বে
আমি সেই
রং পবিত্র গন্ধ যার ভেতর টলে যায়
আমি সেই
ক্ষুদে সূর্য, আমার দুটো ডাকের মধ্যে একটা কথা লা হয়ে যায়
আমি আমার
পান্ডুবর্ণ কানাঘুষার কার্পেট পাতা রাস্তায়
আমার ভবিষ্যৎটাকে ফাটতে
দেখেছি…
সার্টিফিকেটের পাঠ
আমার যে ভাই চায়না সার্টিনের একটা লম্বা আলখাল্লা পড়ত
এবং এক নির্দিষ্ট জায়গায় আমাকে খুব
জমকের সঙ্গে সম্বধর্না জানাত
সে আগুনে পুড়ে গিয়ে মারা গিয়েছে।
আর আমার যে বন্ধু অস্ত্রোপচার বিদ্যায়
ছিল অত্যন্ত কুশলী
এবং যে তরবারি ও তীরপূর্ণ তূনীর নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে
সূর্যকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল
সে হাজতে পচে শেষে আত্মহত্যা করেছে
আমি বস্তুতঃ এখনও মারা যাইনি
এবং আমার মতলবের কথা ঘুণাক্ষরেও কারও কাছে প্রকাশ করিনি
কারণ এটা প্রকাশ করার মত কথা নয়।
২
ওদের দ্গদগে লালচে হাত
(থেমে) ওদের আমি ফুলগুলো দিতে চাইনি
অবোধ শিশুগুলি খেলায় মেতেছে
(থেমে) দুঃখের বিষয় ওরা আদেশ মানে না।
ওরা নগ্ন
হয়ে যথেচ্ছ যৌনক্রিয়াকলাপ প্রদর্শন করছে
(থেমে) বিপ্লব থেকে মানুষের
মনকে ওরা দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবার
পক্ষে
ওদের
সবচেয়ে কার্যকারী অস্ত্র
ওরা
বাগানে মগ্ন গাছ পুঁতে দিচ্ছে
(থেমে) আমার বাগানের গোলাপগাছগুলোর চোখে প্রবীণদের দৃষ্টি ।
প্রিয়
ধ্বনির জন্য কান্না(৯৬)
ওখানে বাণিজ্য-জাহাজরা নোঙর ফেলে। দরিদ্র এক মানুষ ভগ্নস্তুপ দেখে
সর্বপ্রাচীন বাড়ি ধ্বংস হয়ে আসে। সুস্থ করে গাছের পাতা
অন্ধপ্রথাগুলি দাবি জানায়। মানুষজাতি পরিশ্রান্ত স্বপ্নচারী প্রাস্তর
বা জলরাশি অগ্নিময় হৃদয়ের পারে নেমে আসে। মেঘের শুকনো আনাগোনা
বিদ্যুতের সিরসিরানির সঙ্গে অন্তরীক্ষের শেষ খেলা দূরে সরে যায়
কৃষ্ণবর্ণ অরণ্যের অন্তরালে ঘ্রাণময় হ্রদে আমার হৃদয় স্বপ্নে মুগ্ধ হয়
জরা-মৃত্যুর পাশে ভিড় করা গাছের মধ্যে
উন্মুক্ত উদার সূর্যালোক এসে দাঁড়ায়
বৃক্ষের প্রত্যঙ্গ নড়ে এবং মৃদু হয়ে
ভাসে বিষন্নতা
আমার স্মৃতি নেই, আমি বিদ্বেষ কলহের অন্তঃসার বুকে নিয়ে বৃদ্ধ হয়ে আছি
আজ দেখি, অসংখ্য হিমাদ্রি-মৃত্যুভয়গুলি একদিন দুহাত দিয়ে বেঁধেছিল আমায়
আমায় ধরে থাকে অনন্ত সুচিরমৃত
শোভনপৃথিবী
আমার একাকীপাখি আমার মধ্যে বিশ্রাম
রাখে চিরকাল
মেঘে মাস্তুলে চিহ্নিত একটি সান্ধ্য আকাশ, জলে সূর্যাস্তের আভা
ত্রিশ কোটি অসহায় ছেলের কাছে বসে ক্ষমা চাই
হে জনচিহ্নহীন,দিশাহীন ছড়ানো-যৌগিক পরাজয়
স্বর্ণধরনীর মধ্যে সবুজের বৈষম্য হয়ে আসা দেখি
মধুর জীবিত শীত নিয়ে যে-লোকটা গুঁড়ি
মেরে আসছে
ও এখানে দাঁড়িয়ে নেই
ওকে চিরমুক্ত সৃজনব্রতে নামতে দাও
ভূগর্ভের পাথর খুঁড়ে-ও একবার তাপময় নির্জনতা গ্রাস করেছিল
*******************************
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন