বুধবার

সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের চিঠিশিল্পের নিদর্শন -- হাংরি আন্দোলন

সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়-এর চিঠি সুনীল, শক্তি, উৎপল,দীপেন ও দেবী রায়কে লেখা : হাংরি কিংবদন্তি


          প্রিয় দেবী, পর-পর দুসপ্তাহ এলেন না, কোনো চিঠিপত্রও নেই, দোষ একটিমাত্র করেছি । এতোদিনের বন্ধুত্বে একটি, আপনাকে লেখা দিইনি । এজন্যে যদি কিছু মনে করে থাকেন, আমার কিছু করার নেই । উৎপল আপনার ওখানে গিয়েছিল ? প্রিয় উৎপল অনেকদিন দেখা হয়নি । রয়েড স্ট্রিটে উঠে গেছেন ? আমি সুনীলের একটা চিঠি পেয়েছি । আমি খুব ভালো নেই । একদিন যদি চলে আসেন ভাল হয় --- আপনি তো শক্তির মতো ধান্দায় ঘোরেন না । আপনি চলে এলেই পারেন । বীটদের একটা পত্রিকা Now ডাকে পেয়েছি । প্রেরক C.Plymell একজন কবি । 1537 N. TO Peka/Wichita/Kansas/USA. একটা উত্তর দিন । ভাই শক্তি, 'দেশে' কলাম ছাপানো ব্যাপারে তৈরি plan কী successful হল, অন্যান্য planগুলো, শংকর, বরেন, সুভাষ মুখো থেকে শুরু করে নরেশ গুহ স্টিল সুনীল, বুদ্ধদেব, নীরেনবাবু ইত্যাদি মিলিয়ে, ও বিধু, রবীন দত্ত, সামসের সমেত ও অধুনা সংকর কী যেন ( ছাড়পত্র সম্পাদক ) প্লাস শরৎ, ভাস্কর, প্রণব প্রভৃতি নিয়ে যে বিরাট জাল ফেলেছিস, সেটা এবার তোল । আমরা আর কতো সময় দাঁড়িয়ে থাকব ? তারপরেও অপেক্ষা করতে হবে । আমেরিকাগামী প্লেনে দমদমে see off  করতে পারলে তবে আমাদের ছুটি । প্রিয় সুনীল, আপনার চিঠি পেয়েছি । আমার bedroom-এ উঁকি মারছেন কেন ? আমার সমূহ বিপদ --- এই প্রথম আমার মনে হচ্ছে, আমার দ্বারা বুঝে ওঠা সম্ভব হবে না এখন আমার কী করা উচিত, এখন এই প্রথম আমাকে অপরের উপদেশমতো চলতে হবে । প্রিয় দীপেন, তোমার কী হল ? কোথায় থাক ? তুমি যেন আমার সব অপরাধের শাস্তি আমি ভোগ করছি । প্রিয় উৎপল, আপনি ছাড়া কারো সম্পর্কে এখন বন্ধুত্বের বোধ নেই । সুনীলের জন্য আছে, কিন্তু তা বোধহয় সে আমেরিকায় আছে বলে ।
          শ্যামবাজার থেকে টু-বি ধরেছি, দোতলা, মাঝে-মাঝে বাসস্টপগুলির সুযোগ নিয়ে লিখছি । একদিন আসুন ।
                                                                                                                               আপনাদের সন্দীপন ।

( ১৯৬৩ সালে লেখা এই চিঠিটি সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ডাকে সবাইকে পাঠিয়েছিলেন ,কেবল দেবী রায়ের বাড়ি সকাল পাঁচটায় সাইকেলে চেপে গিয়ে কাঠর জানলা গলিয়ে দেবীকে খোঁচা দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে চিঠিটি হাংরি আন্দোলনের পত্রিকায় ছাপতে দেন । দেবী রায় তখন হাওড়ার বস্তিতে থাকতেন । সন্দীপনও হাওড়ায় থাকতেন এবং সাইকেল চেপে কলকাতায় কফি হাউসেও আসতেন অনেক সময়ে । )

[ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ১৫ জুন ১৯৬৪-এর চিঠির পঞ্চম প্যারায় সন্দীপনের এই চিঠটি সম্পর্কেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । সুনীল অনুমান করতে পারেননি যে সন্দীপন পত্রসাহিত্যেও ঝড় তুলতে চলেছেন । সুনীল দেবী রায়কে হারাধন ধাড়া বলে উল্লেখ করেছেন । সন্দীপন কিন্তু চিঠিটি সম্বোধন করেছেন দেবী রায়কে । ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন