যাহঃ,
আজ মলয়দার অফিসিয়াল জন্মদিন ছিল নাকি! মনের এই হয়েছে লিট্টিমি। ওই
জোব্বাধারী দেড়িয়াল বুড়োর জন্মদিন কিন্তু মনে রাখতে হয় না। ইদানিং বেজায়
চাপ। পুজোর এক সপ্তা আগে থেকে আজ অব্দি তিনটে চার-ফর্মার বইয়ের কাজ ফিনিশ
করলাম। কিন্তু অপ্প যে জিরেন নেবো তার যো নেই। লেখার পচুর ফরমাস।
এমতাবস্থায় কাল রাত দেড়টা নাগাদ যদি ওই পোস্ট দিয়েই থাকি যে, আজ থেকে
তোমাদের ফেসবুকে থাকছি না --- ক্ষুব্বেশি গাজোয়ারি হলো, বলো তোমরাই? তো,
দশ টাকায় আধ কিলো মাদ্রাসি ওল, গোটাকতক আলু, পাঁচ টাকার পেঁয়াজ, দেড় ছটাক
তেল, আর আট টাকার গ্যাস। এই দিয়ে একলা-সপেটা মানুষের দিব্যি চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু, আজ ভোরে, ন'টায় ঘুম ভাঙতে যেই-না অনলাইন হয়েছি, ওমা। হুলোর মা
তুলোর মা সব গুচ্ছের হুমকি পাঠিয়ে কেরামত করে রেখেছে গো আমার ইনবক্সে!
'থাকবেন না মানে! ঘাড়ে মাথাটা রাখতে চান তো?' --- এইপানা সব ধুড়কি।
তো, অগত্যা ফিরতেই হলো। তদুপরি আজ নাকি মলয়দার জন্মদিন। একটা জিনিশ মার্ক করেছি, আমাকে বা মলয়দাকে নিয়ে যাঁরাই লেখালেখি করেছেন, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উদয়ন ঘোষ, রবীন্দ্র গুহ, কমল চক্রবর্তী, বারীন ঘোষাল, নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, কার্তিক লাহিড়ী, দেবজ্যোতি রায়, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজলক্ষ্মী দেবী, দীপঙ্কর দত্ত, বনানী দাস, তনুময় গোস্বামী, তপোধীর ভট্টাচার্য, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ হাসমত জালাল, প্রভাত মিশ্র, দিব্যাংশু মিশ্র, সঞ্জীব নিয়োগী, কৌশিক চক্রবর্তী, কৌশিক মিত্র, অরুণাভ দাস, ইরাবান বসুরায়, আর যাঁদের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, যাঁরা আমাদের লেখালেখি নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাঁদের কেউই আমার বা মলয়ের 'কালচারাল হাইব্রিড'-বোধের ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করেননি, বা, সেটাকে হাইলাইট করেননি। অনেকে হয়ত অজ্ঞানে, বা কলকাতাকেন্দ্রিক অনুশাসনিক ভাবুকতার কারণে সজ্ঞানে বাদই দিতে চেয়েছেন ব্যাপারটিকে। অথচ আমাদের দুজনেরই তামাম জীবন, পড়াশোনা, লেখাচর্চা, রাগ, ঘৃণা, তিক্ততা, আক্রমণের টার্গেট, বেঁচে থাকার বজহ বা অজুহাত, বেস, হয়ে ওঠা ইত্যাদির মূলে এই সাংস্কৃতিক দো-আঁশলাপনার বোধই যুগপৎ সুপ্ত ও মুখর থেকেছে। আজন্ম তথাকথিত 'বহির্বঙ্গে' লালিত এবং বহির্বঙ্গ-ফেরত মূল সংস্কৃতিতে বহিরাগত না-হলে হয়ত আমাদের লেখার নিজস্ব চিন্তাবিশ্বই গড়ে উঠত না। বিগ্রহ বা প্রতিষ্ঠান ভাঙা, প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে মাস্তানি ফুটপথিয়া বিহারি ভাষায় মলয়ের কবিতায় দুর্যোধন চ্যালেঞ্জ জানায়, দ্যাখো তোমরা -----
"আব্ববে পাণ্ডবের বাচ্চা যুধিষ্ঠির
বহুতল বাড়ি থেকে নেবে আয় গলির মোড়েতে
নিয়ায় ল্যাঙবোট কৃষ্ণ ভীম বা নকুল কে কে আছে
পেটো হকিস্টিক ক্ষুর সোডার বোতল ছুরি সাইকেল চেন
বলে দে দ্রৌপদীকে আলসে থেকে ঝুঁকে দেখে নিক
আমাদের সঙ্গে আজ কিছু নেই কেউ নেই ....
কবিতা বা অন্যবিধ লেখালেখিতে কোনো পূর্বাদর্শ বা বিশুদ্ধতার চর্চা না করে মলয় আগাগোড়া নিজের প্রতি সৎ থাকার চেষ্টা সহ নিজের আহরিত জ্ঞান, মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক রাজনীতিক আর্থিক ও সাংস্কৃতিক তত্ত্বগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন এবং আধুনিকতার এইসব উপাদানের অসারতা প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে সীমানা ভাঙার কাজ করে এসেছেন বলেই আজ তিনি মনোযোগ ও বিতর্কের বিষয়। আর এসবের পেছনে স্বাভাবিক ও পরোক্ষ ভিত্তি হিশেবে, অনুঘটকের কাজ করেছে তাঁর শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন ও প্রোঢ়ত্ব জুড়ে বিহার ও ভারতবর্ষের অন্যান্য ভাষা-সংস্কৃতির রাজ্যে সুদীর্ঘ যাপন। এই যাপনই তাঁকে দো-আঁশলা সাংস্কৃতিক জীব হিশেবে নি জেকে দেখার স্বচ্ছতা ও অকপটতা দিয়েছে ভাবলে ভুল হবে না।
বিহার-বাংলার যৌগ-সংস্কৃতি থেকে উঠে এসেছিলেন বলে, দুষ্কৃতী অধ্যাসিত বস্তিতে প্রতিপালিত হয়েছিলেন বলে, এবং ক্ৰমে-ক্ৰমে বঙ্গসংস্কৃতির বদলায়মান স্বরূপ জলবৎ দেখে ফেলেছিলেন বলে, বাংলা কবিতা ও আখ্যান সাহিত্যে কলকাতার ঔপনিবেশিক প্রভুমুখী দাসত্ব লক্ষ করেছিলেন বলেই, চেতোমান মলয় প্রথম থেকেই তাঁর লেখায়, বিশেষত কবিতায়, সন্ত্রাস অথবা তাঁর স্বীয় ভাষায় 'ছুরি চাকু চালানো' রপ্ত করেছেন। তাঁর বহু কবিতায় ওই সেলাখানার বিবরণ আছে, এবং সেই সন্ত্রাসী চিত্রকল্প। আর এইসব চিত্রকল্পের ধারাবাহিক অনুশীলনে তাঁকে স্বাভাবিক ভাবেই সাহায্য করেছে তার বাস্টার্ড কালচার। তাঁর আশৈশব-আহরিত প্রায় হাজার খানেক অঘোরি ছোটলোকি অশ্লীল কুৎসিৎ কুচেল অসৎ অভাগা দুর্ব্যবহৃত শব্দাবলি ও তার অভ্যন্তরীণ ইথস। বর্তমানের প্রতিফলনের দরুন সন্ত্রাসী ইমেজ, যা নিছক জান্তব বা যৌন নয়, এ এক মলয় রায়চৌধুরীর কবিতাতেই মেলে। যৌগ-সংস্কৃতির ডামাডোল অবস্থান থেকে সীমালঙ্ঘনের, বিগ্রহ ও মসনদ ভাঙার, যৌক্তিকতা ও আধুনিকতার দর্শনকে এভাবে গুমখুন পাল্টাখুন করার কাজটি, ফালগুন রায়কে মনে রেখেও বলা যায় ---- ইতিপূর্বে বাংলা কবিতায় অন্য কেউ করেছেন বলে মনে হয় না। যৌগ-সংস্কৃতিতে মানসিক দীর্ঘ যাপনের কারণেই, বাংলার তাবৎ শব্দাবলিতে তাঁর নিবাস থাকা সত্ত্বেও, তিনি যখনই কিছু লেখেন, ওই দোআঁশলা সাংস্কৃতিক নিবাসটি তাঁর সদরে এসে কড়া নাড়ে। এই সততা, এই অকপটতা আমরা আর কার মধ্যে দেখেছি?
আসলে, আমার মনে হয়, যে-কথা আজিজুল হকও বলেছেন, মলয় রায়চৌধুরী এক অন্য পেরিফেরির জীব। মলয়ের হার্ট খুব স্ট্রং, রক্তে দুর্নিবার তেজ। মলয়ের চাইতে অনেক গুণ বড়ো ভাবুক ও মেধাবান চরিত্র ছিলেন সমীর রায়চৌধুরী। কিন্তু, আমার মনে হয়, মলয় আগাগোড়াই 'হয়ে উঠতে' চেয়েছেন। এই হয়ে-ওঠা সবার 'বশের' কথা নয়। হয় ক্ষমতার অভাব, নয় তষ্টির। মলয়ের ফলাফলটা বিলকুল যাকে বলে, রেস্পন্সিবল ইরেন্সিবলিটি। এই সূত্রেই একটা না-তোলা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। যে, মলয় রায়চৌধুরী কীসের জোরে নিজেকে হয়ে ওঠালেন, বিগ্রহের বিরুদ্ধে দাঁড় করালেন, হাতুড়ি চালালেন --- সেই মানসিক, চেতনিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটটি সমগ্রতার আলোকে অনুসন্ধানের তাগিদ একটা তাই থেকেই যাচ্ছে গবেষকদের কাছে। আর কিছুদিন সময় নিচ্ছি। হয়ত ২০১৯-এর শেষদিকে এই নিয়েই আমার একটি গদ্যগ্রন্থ আসবে। তাতে আমার এই গর্ব অবশ্যই নথি থাকবে, যে, একদিকে জাঁদরেল মূর্খ প্রতিষ্ঠান, ব্রিটিশ গুরুর বীর্যিত পচাগলা মূল্যবোধে আকণ্ঠ বাঙালি বুদ্ধিজীবী-আলোচকের কেরবালা যাঁকে বুঝতে না পেরে, বা সভয়ে, এড়িয়ে রয়েছেন, মুখ ফিরিয়ে, তাঁকে সহ্য করতে না-পারা রঙরুট বন্ধুদের রিসালা, তাঁদের সম্মিলিত করাল মেঘের সামনে একটি সেলাই-না-পড়া লেখকের দ্বারা এই অঘটন তাঁদের দিনদাহাড়ে চাক্ষুষ করতে হবে।
জনম দিন মুবারক বস্!
তো, অগত্যা ফিরতেই হলো। তদুপরি আজ নাকি মলয়দার জন্মদিন। একটা জিনিশ মার্ক করেছি, আমাকে বা মলয়দাকে নিয়ে যাঁরাই লেখালেখি করেছেন, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উদয়ন ঘোষ, রবীন্দ্র গুহ, কমল চক্রবর্তী, বারীন ঘোষাল, নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, কার্তিক লাহিড়ী, দেবজ্যোতি রায়, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজলক্ষ্মী দেবী, দীপঙ্কর দত্ত, বনানী দাস, তনুময় গোস্বামী, তপোধীর ভট্টাচার্য, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ হাসমত জালাল, প্রভাত মিশ্র, দিব্যাংশু মিশ্র, সঞ্জীব নিয়োগী, কৌশিক চক্রবর্তী, কৌশিক মিত্র, অরুণাভ দাস, ইরাবান বসুরায়, আর যাঁদের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, যাঁরা আমাদের লেখালেখি নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাঁদের কেউই আমার বা মলয়ের 'কালচারাল হাইব্রিড'-বোধের ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করেননি, বা, সেটাকে হাইলাইট করেননি। অনেকে হয়ত অজ্ঞানে, বা কলকাতাকেন্দ্রিক অনুশাসনিক ভাবুকতার কারণে সজ্ঞানে বাদই দিতে চেয়েছেন ব্যাপারটিকে। অথচ আমাদের দুজনেরই তামাম জীবন, পড়াশোনা, লেখাচর্চা, রাগ, ঘৃণা, তিক্ততা, আক্রমণের টার্গেট, বেঁচে থাকার বজহ বা অজুহাত, বেস, হয়ে ওঠা ইত্যাদির মূলে এই সাংস্কৃতিক দো-আঁশলাপনার বোধই যুগপৎ সুপ্ত ও মুখর থেকেছে। আজন্ম তথাকথিত 'বহির্বঙ্গে' লালিত এবং বহির্বঙ্গ-ফেরত মূল সংস্কৃতিতে বহিরাগত না-হলে হয়ত আমাদের লেখার নিজস্ব চিন্তাবিশ্বই গড়ে উঠত না। বিগ্রহ বা প্রতিষ্ঠান ভাঙা, প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে মাস্তানি ফুটপথিয়া বিহারি ভাষায় মলয়ের কবিতায় দুর্যোধন চ্যালেঞ্জ জানায়, দ্যাখো তোমরা -----
"আব্ববে পাণ্ডবের বাচ্চা যুধিষ্ঠির
বহুতল বাড়ি থেকে নেবে আয় গলির মোড়েতে
নিয়ায় ল্যাঙবোট কৃষ্ণ ভীম বা নকুল কে কে আছে
পেটো হকিস্টিক ক্ষুর সোডার বোতল ছুরি সাইকেল চেন
বলে দে দ্রৌপদীকে আলসে থেকে ঝুঁকে দেখে নিক
আমাদের সঙ্গে আজ কিছু নেই কেউ নেই ....
কবিতা বা অন্যবিধ লেখালেখিতে কোনো পূর্বাদর্শ বা বিশুদ্ধতার চর্চা না করে মলয় আগাগোড়া নিজের প্রতি সৎ থাকার চেষ্টা সহ নিজের আহরিত জ্ঞান, মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক রাজনীতিক আর্থিক ও সাংস্কৃতিক তত্ত্বগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন এবং আধুনিকতার এইসব উপাদানের অসারতা প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে সীমানা ভাঙার কাজ করে এসেছেন বলেই আজ তিনি মনোযোগ ও বিতর্কের বিষয়। আর এসবের পেছনে স্বাভাবিক ও পরোক্ষ ভিত্তি হিশেবে, অনুঘটকের কাজ করেছে তাঁর শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন ও প্রোঢ়ত্ব জুড়ে বিহার ও ভারতবর্ষের অন্যান্য ভাষা-সংস্কৃতির রাজ্যে সুদীর্ঘ যাপন। এই যাপনই তাঁকে দো-আঁশলা সাংস্কৃতিক জীব হিশেবে নি জেকে দেখার স্বচ্ছতা ও অকপটতা দিয়েছে ভাবলে ভুল হবে না।
বিহার-বাংলার যৌগ-সংস্কৃতি থেকে উঠে এসেছিলেন বলে, দুষ্কৃতী অধ্যাসিত বস্তিতে প্রতিপালিত হয়েছিলেন বলে, এবং ক্ৰমে-ক্ৰমে বঙ্গসংস্কৃতির বদলায়মান স্বরূপ জলবৎ দেখে ফেলেছিলেন বলে, বাংলা কবিতা ও আখ্যান সাহিত্যে কলকাতার ঔপনিবেশিক প্রভুমুখী দাসত্ব লক্ষ করেছিলেন বলেই, চেতোমান মলয় প্রথম থেকেই তাঁর লেখায়, বিশেষত কবিতায়, সন্ত্রাস অথবা তাঁর স্বীয় ভাষায় 'ছুরি চাকু চালানো' রপ্ত করেছেন। তাঁর বহু কবিতায় ওই সেলাখানার বিবরণ আছে, এবং সেই সন্ত্রাসী চিত্রকল্প। আর এইসব চিত্রকল্পের ধারাবাহিক অনুশীলনে তাঁকে স্বাভাবিক ভাবেই সাহায্য করেছে তার বাস্টার্ড কালচার। তাঁর আশৈশব-আহরিত প্রায় হাজার খানেক অঘোরি ছোটলোকি অশ্লীল কুৎসিৎ কুচেল অসৎ অভাগা দুর্ব্যবহৃত শব্দাবলি ও তার অভ্যন্তরীণ ইথস। বর্তমানের প্রতিফলনের দরুন সন্ত্রাসী ইমেজ, যা নিছক জান্তব বা যৌন নয়, এ এক মলয় রায়চৌধুরীর কবিতাতেই মেলে। যৌগ-সংস্কৃতির ডামাডোল অবস্থান থেকে সীমালঙ্ঘনের, বিগ্রহ ও মসনদ ভাঙার, যৌক্তিকতা ও আধুনিকতার দর্শনকে এভাবে গুমখুন পাল্টাখুন করার কাজটি, ফালগুন রায়কে মনে রেখেও বলা যায় ---- ইতিপূর্বে বাংলা কবিতায় অন্য কেউ করেছেন বলে মনে হয় না। যৌগ-সংস্কৃতিতে মানসিক দীর্ঘ যাপনের কারণেই, বাংলার তাবৎ শব্দাবলিতে তাঁর নিবাস থাকা সত্ত্বেও, তিনি যখনই কিছু লেখেন, ওই দোআঁশলা সাংস্কৃতিক নিবাসটি তাঁর সদরে এসে কড়া নাড়ে। এই সততা, এই অকপটতা আমরা আর কার মধ্যে দেখেছি?
আসলে, আমার মনে হয়, যে-কথা আজিজুল হকও বলেছেন, মলয় রায়চৌধুরী এক অন্য পেরিফেরির জীব। মলয়ের হার্ট খুব স্ট্রং, রক্তে দুর্নিবার তেজ। মলয়ের চাইতে অনেক গুণ বড়ো ভাবুক ও মেধাবান চরিত্র ছিলেন সমীর রায়চৌধুরী। কিন্তু, আমার মনে হয়, মলয় আগাগোড়াই 'হয়ে উঠতে' চেয়েছেন। এই হয়ে-ওঠা সবার 'বশের' কথা নয়। হয় ক্ষমতার অভাব, নয় তষ্টির। মলয়ের ফলাফলটা বিলকুল যাকে বলে, রেস্পন্সিবল ইরেন্সিবলিটি। এই সূত্রেই একটা না-তোলা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। যে, মলয় রায়চৌধুরী কীসের জোরে নিজেকে হয়ে ওঠালেন, বিগ্রহের বিরুদ্ধে দাঁড় করালেন, হাতুড়ি চালালেন --- সেই মানসিক, চেতনিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটটি সমগ্রতার আলোকে অনুসন্ধানের তাগিদ একটা তাই থেকেই যাচ্ছে গবেষকদের কাছে। আর কিছুদিন সময় নিচ্ছি। হয়ত ২০১৯-এর শেষদিকে এই নিয়েই আমার একটি গদ্যগ্রন্থ আসবে। তাতে আমার এই গর্ব অবশ্যই নথি থাকবে, যে, একদিকে জাঁদরেল মূর্খ প্রতিষ্ঠান, ব্রিটিশ গুরুর বীর্যিত পচাগলা মূল্যবোধে আকণ্ঠ বাঙালি বুদ্ধিজীবী-আলোচকের কেরবালা যাঁকে বুঝতে না পেরে, বা সভয়ে, এড়িয়ে রয়েছেন, মুখ ফিরিয়ে, তাঁকে সহ্য করতে না-পারা রঙরুট বন্ধুদের রিসালা, তাঁদের সম্মিলিত করাল মেঘের সামনে একটি সেলাই-না-পড়া লেখকের দ্বারা এই অঘটন তাঁদের দিনদাহাড়ে চাক্ষুষ করতে হবে।
জনম দিন মুবারক বস্!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন