মঙ্গলবার

সুমন চক্রবর্তী : মলয় রায়চৌধুরীর কবিতার বৈশিষ্ট্য

মলয় রায়চৌধুরীর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য সাহিত্যের সনাতন ধারা অনুশাসনের বিরুদ্ধাচরণ , প্রেম ও যৌনতা ।হাংরি আন্দোলনের স্রষ্টা মলয় রায়চৌধুরী স্বয়ং বলেছেন, এই আন্দোলনের অবস্হান আধুনিকতার গর্ভে ।

প্রশান্ত মহাসাগরের আকরিক মাটি ১টা নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে চাঁদ হয়ে গেল।’ যে চাঁদ কবিদের দিয়েছে রোমান্টিকতার প্রশ্রয় । পৃথিবী থেকে দূরে চলে গেলেও পৃথিবী ও চাঁদের পারস্পরিক টান ও আসক্তি পৃথিবী ও আকাশে রচনা করেছে জোয়ার-ভাঁটা, তিথিবন্ধন, পূর্ণিমা-অমাবস্যা, জ্যোৎস্না, সময়ের হিসেবনিকেশ, প্রেম ও যৌনতার নিশ্চিন্তির আধার ।চাঁদের মতোই নিরাময়ময়ী নীলা কবির কবিতায় বারবার আবির্ভূত হয়েছেন । ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’-এর শুভা থেকে সরে এসেছেন নীলার কাছে । পরবর্তীকালে তাঁর জীবনের বিভিন্ন নারী দেখা দিয়েছেন বিভিন্ন কবিতায়, অবন্তিকা, ইন্দ্রাণী, অনামিকা, সোনালী, কৃতি, উপমা এবং আরও অনেকে । আমরা এখন জানি তাঁরা সকলেই মলয়ের কবিতার প্রতিনিধিত্ব করেন । প্রকৃতিস্হ রমণী চাঁদেরই গুণসম্পন্ন—‘নীলার রোঁয়ায় জ্বলা-নেভা ১টা ছোট্ট হাইভোল্টেজ ঘাম আমার রক্তকে তোল্পাড় করে দিচ্ছে’ ; আবার কবি ফিরিয়ে এনেছেন নিশামণি রাত্রির উষ্ণতাকে — ‘নীলার লেপের নীচে শুয়ে আদ্দেক রাত্তিরে উঠে এলুম নিজের ঠাণ্ডা বিছানায়।’ এভাবেই নীলা ফিরে-ফিরে এসেছে, যেমন সুগন্ধময়ী রূপে—’স্নানের পর নীলার শীতল আর নরম চামড়ার কচি আতর ভেসে আসছে।’ কবি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন নিরাময়ের ইশারাগুলি । হঠাৎ-হঠাৎ আশ্চর্য সব পংক্তি উঠে এসেছে কবিতার ফাঁক ফোকর দিয়ে—’এখন এই রাত্তিরবেলায় সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপর চিৎ হয়ে আলতোভাবে শুয়ে/লাজুক মাছেদের শিস শোনার ইচ্ছে হচ্ছে আমার।’ অথচ স্বয়ং নীলা অর্থাৎ কবিতা বিপন্ন । তার বিপন্নতা, শারীরিক বার্তা এইভাবে উঠে এসেছে—’হৃদযন্ত্রের আলতো কাঁপনে কেঁপে ওঠা নীলার বাঁদিকের রুগ্ন স্তন আমার মনে পড়ছে এখন।’নীলার শরীরের ডানদিক আর বাঁদিক এক নয় । বাঁদিকের স্তন বরং রুগ্ন । উল্লেখ্য যে মলয়ের মামলায় বামপন্হী পত্রিকাগুলিও সমর্থন করেনি ; তাদের রুগ্ন ঔচিত্যবোধে আক্রান্ত ছিল তারা । তাদের অমান্য করে বামপন্হী কবি তরুণ সান্যাল মলয়ের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন । কিন্তু এখানেই মলয় প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি নিজেও কি স্বধর্মনিষ্ঠ ? নিজের গভীরেজাত চেতনার প্রতি নিষ্ঠাবান কি ? যেজন্য তিনি বলছেন, ‘আমার পা বুঝতে পার্ছে না যে আমিই তদের গতি আর দিক নিয়ন্ত্রণ কোর্ছি।’ যখনই কবি নীলার প্রসঙ্গে ফিরে আসছেন, আড়ালে আবডালে চেতনা ও চৈতন্যের প্রসঙ্গে তুলে ধরছেন কবিতার অন্তরাত্মায় ; এই বৈভিন্ন্যকে তুলে ধরেছেন আবার নীলার সান্নিধ্যের উষ্ণতার প্রসঙ্গে । উইলিয়াম ব্লেক, হুইটম্যান, জীবনানন্দ দাশ-এর অন্বেষার প্রসঙ্গে ।চেতনা ও চৈতন্যের ক্রিয়ায় ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’-এর শুভা ও ‘জখম’-এর নীলা অথবা পরবর্তীকালের অবন্তিকা একই অবস্হানপন্নতায় বিরাজ করছেন । মলয় বলেছেন যে তাঁর কবিতার নারীরা কেউ তাঁর স্লেভগার্ল নন, যেমন ছিলেন বনলতা সেন, নীরা, সুপর্ণা কবিদের নিজস্ব, যে কবিরা বলেন, ওইখানে যাওনাকো তুমি, মিশোনাকো ওইসব যুবকের সাথে । নীলা আরও পরিণত । নীলায় নীলিমাকে পাওয়া যায় । আবার নীলার আরেকটা অর্থ গ্রহরত্ন, যে রত্নকে সাধারণ মানুষ এড়িয়ে চলেন ।কবি বলেছেন, ‘স্ত্রীলোকদের পা-এ চলা রাস্তার গন্ধ শুঁকতে-শুঁকতে আমি এগিয়ে যাচ্ছি তাদের অ্যামেচার আস্তানার দিকে ।/অন্ধকার রাস্তার ওপর পায়ের ছাপ দেখে আমার বুক ছাঁৎ করে উঠেছিল!’ কবিতার এই কয়েকটি লাইনে কবি জীবজগতে ক্রমবিকাশের ধারাকে পুনঃস্মরণ করেছেন । মলয় রায়চৌধুরী স্ত্রীলোকের দাম্পত্যজীবনের পথ টের পাচ্ছেন, যাকে কখনই বিমূর্ত বলা যাবে না । আমাদের সহজাত বোধে, ডি.এন.এ.-এর পটচিত্রে জীবনের এই জার্নিগুলি খোদাই করা আছে । বোধবিজ্ঞানে দেখা যায় এই ধরণের বোধগুলিকে সেনসডেটাম ( Sense-datum ) বলা হয়েছে । যা কবিতা লেখার সময়ে একজন পরিণত কবি যখন তাঁর বোধের গভীরে ডুব দেন, সহযাত্রী হয়ে ওঠেন কবিতার গতিবেগের সঙ্গে, তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে জীবন ও জৈব, প্রকৃতি ও প্রকৃত একাকার হয়ে ওঠে । মলয় রায়চৌধুরীর কবিতার যারা নিয়মিত পাঠক, তাঁরা লক্ষ্য করেছেন তাঁর কবিতায় এমনই সব মহাজাগতিক ও একই সঙ্গে লোকায়ত সব মুহূর্তগুলিকে ।


বিশ শতকের ষাট বা ছয়ের দশক বাংলা কবিতার ইতিহাস যে-কারণে স্মরণীয় হয়ে আছে, তার মথ্যে হাংরি আন্দোলন অন্যতম, এ-বিষয়ে দ্বিমত নেই । আর এই হাংরি আন্দোলনের অন্যতম নেতা মলয় রায়চৌধুরী । যিনি আজও সৃজনক্ষম 

ভুল কি ঠিক, সে-বিচার করবে ইতিহাস বা মহাকাল । পরোয়াহীন এই লেখককে তাঁর নিজস্ব ভাষামুদ্রা ও ভঙ্গির জন্য অভিবাদন জানাতেই হয় । আমরা জানি প্রথাভাঙার স্পর্ধা তখন সরকার মানতে পারেনি । কাব্যে অশ্লীলতার জন্য মলয় রায়চৌধুরীকে গ্রেপতার করা হয় ।হাংরি আন্দোলন' আমূল নাড়া দিলো বাংলা কবিতার সনাতন ঐতিহ্যকে, নিয়মানুবর্তিতাকে ।


 " কেউ মানুষের কাছে জিতে গিয়ে মানুষের কাছে হেরে যায় ।"
" ভুল সংযম আমাকে এনে দিয়েছে ভুল বিরাগআমি ভুল
অহংকার নিয়ে ভুল ভিড়ের কাছে চলে গেছিআমি ভুল ভক্তি নিয়ে 

যে কোনো কারুর খোঁজে জেগে বসে রইলুম সারারাত
আমি ভুল নারীর পায়ের ওপরে রেখেচিলুম আমার নির্ভুল ভালোবাসা "

" ব্যথা ছাড়া জীবনে আর কিছু নেই", মানে ? তোর কথার 
হাঁফ-আকূলতা আমার হৃদরোগের কারণ আমি তো ২৪x৭ সাধু, 
ফলো করি ফলো করি ফলো করিমৃত্যু মানেই তো
প্রতিশোধ, মানুষের হোক বা প্রেমের দেখেছিস তো,
যতো রাগি ঝড়, ততো সে দেশদ্রোহী
অয়ি শব্দমোহিনী, না পড়েই উল্টে যাচ্ছি পাতার পর পাতা 

 অস্হির কৌতূহলে এই কবিতাটা এগোচ্ছে আর তোকে শুনতে
পাচ্ছে আমি তো বাকমোহন সাধু, লিখিসনি তো প্রেম কেন
ভিজে এবং গরমআসলে জীবন নষ্ট করার কায়দা সকলে
জানে না, ঘুম থেকে উঠে হাই তুলিস আর তোর গোলাপি
আলজিভ দেখি ..." ( তানিয়া চক্রবর্তীর জন্য প্রেমের কবিতা)


" আপনি আমার প্রিয় নারী, যদিও শুধুই
শুনেছি ঘুমন্ত কন্ঠের কালোফিল্মে দেখেছি, আগুন নগ্নিকা,
বুক দুটো অতো ছোটো কেনদুঃখ হয় নাকি ? আপনার মুখ
দেখে মনে হচ্ছিল বুক ছোটো বলে
তোমাকে দেখেই চুমু খেতে ইচ্ছে করেছিল, না না, হাঁ-মুখের
ঠোঁটে নয়পাছার দু-ঠোঁটে, আহা কি মসৃণ হতো রাজরানি
হওয়া, যেন ইস্কাপননষ্ট করে নেচে উঠছে বিদ্যুতের খ্যাতি,
যার অস্তিত্বে আমি বিশ্বাস করি নাখুলে বলি আপনাকে, আমি
কীরকমভাবে নারীকে খুঁজি তা বলছি শুনুন,যেমন
ঘোড়দৌড়ের জুয়াড়িরা ঘোড়ার রেসবই খুঁটে খুঁটে পড়ে
আমার ভেতর সেরকমই পোষা আছে কয়েকটা অসুখ
বুঝলেন, যখন প্রথম পড়ি, প্রেমে পড়ে গিসলুম নগ্ন
আপনার ! " ( নেভো মোম নেভো ) 


অবন্তিকার শতনাম
" আমি অবন্তিকার দুটো মাইয়ের নাম দিয়েছি
কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া...বাঁদিকেরটা আদর করলেই গোলাপি
হয়ে যায়...ডানদিকেরটা আদর করলেই হলদেটে রঙ
ধরে...বাঁদিকের বোঁটার নাম করেছি কুন্দনন্দিনী...বঙ্কিমের
বিষবৃক্ষ তখন ও পড়ছিল চিৎ শুয়ে...ডানদিকের বোঁটার নাম ও
নিজেই রেখেছে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার যে লোকটা সৈয়দ
মুস্তফা সিরাজের ডিটেকটিভ...ডিটেকটিভ বই পড়তে ওর জুড়ি
নেই...ছুঁলেই কাঁটা দিয়ে ওঠে তাই...যোগেন চৌধুরীর আঁকা
ঝোলা মাই ওর পছন্দ নয়...প্রকাশ কর্মকারের আঁকা কালো
কুচকুচে মাই ওর পছন্দ নয়...পেইনটিঙের নাম রাখা গেল না...

যোনির কি নাম রাখবো চিন্তা করছিলুম...অবন্তিকা চেঁচিয়ে
উঠলো পিকাসো পিকাসো পিকাসো..পিকাসোর যোনির কোনো
আদল-আদরা নেই...কখনও বাদামি চুল কখনও কালো কখনও
কিউবিক রহস্য...তাহলে ভগাঙ্কুরের...ও বলল সেটা আবার কি
জিনিস...ওর হাত দিয়ে ছুঁইয়ে দিতে বলল অমঅমঅমঅম কি
দেয়া যায় বলতো...পান্তুয়া চলবে...ধ্যুৎ...রস পানেই পান্তুয়া
নাকি আরও কতো রকম মিষ্টি হয়...ছানার পায়েস...নারকেল
নাড়ু...রসমালাই...নকশিপিঠা...রাজভোগ...লবঙ্গলতিকা...
হলদিরামে ভালো
লবঙ্গলতিকা পাওয়া যায়...আমি বললুম স্বাদ কিছুটা নোনতা..
ও বলল দুর ছাই আমি নিজে টেস্ট করেছি নাকি যাকগে বাদ
দে...হ্যাঁ...এগোই...পাছার কি দুটো নাম হবে...ডিসাইড
কর...ডিসাইড কর...তুই কর আমি তো দেখতে পাচ্ছি না...না না
ফের ফের...লাবিয়া নোনতা হলেও ওটার নাম দিলুম গোলাপ
সুন্দরী...পারফেক্ট হয়েছে...তাহলে পাছার একটাই নাম
দিই...নরম নরম কোনো নাম...পাসওয়র্ড...ঠিক...এর নাম দেয়া
যাক পাসওয়র্ড...ধ্যাৎ...পুরো রোমান্টিক আবহাওয়া ফর্দাফাঁই
করে দিচ্ছিস......গ্যাস পাস হয় বলে পাসইয়র্ড হতে যাবে কেন...

ছিঃ...তাহলে এর নাম হোক গরমের ছুটি...গরমে বেশ
ভাল্লাগে পাউডার মাখিয়ে পাছায় হাত
বোলাতে...ওক্কে...তারপর...ঘুমোবো কখন...বাঁ উরুর নাম দিই
ককেশিয়া...ডান উরুর নাম দিই লিথুয়ানিয়া...রাশিয়ানদের
উরু দারুণ হয় বিশেষ করে শীতকালে যখন ওরা চান করে
না...ভোদকা খেয়ে ভরভরিয়ে প্রতিটি রোমকুপ দিয়ে গন্ধ
ছাড়ে...শুয়েছিস নাকি কখনও রাশিয়ান মেয়ের সঙ্গে...না
কল্পনার যুবতীদের ইচ্ছেমতন হ্যাণ্ডল করা যায়...ছাড়
ছাড়...এগো...মানে নামতে থাক...তাড়াতাড়ি কর নইলে গাধার
দুলাত্তি দেবো...তা্হলে পায়ের নাম রাখছি জিরাফ...বামপন্হী
জিরাফ আর দক্ষিণপন্হী জিরাফ...এবার ওপরে
আয়,,,মুখে...ঠোঁট...ঠোঁটের নাম দিই আফ্রিকান
সাফারি...আচ্ছা...ঠোঁটের নাম আফীকান সাফারি...ব্লোজবে
খণ্ড খণ্ড মাংস ছিঁড়ে খাবো...খাস...থুতনিতে সেকেন্ড
চিন...পিৎজা কোক খাওয়া থামা...থুতনির নাম দিই গোলাপজাম...

কেন কেন কেন...পরে বলব...এখন দুচোখের
নামদিই...শতনাম হলো না
তো...চোখ বোজ চোখ বোজ...তুই তো একশোসমগ্র 

আবার শতনামের কী দরকার...তাহলে আয়...আজ তুই ওপরে না
নিচে ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন