বুধবার

মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে নালিশ ও হাংরি আন্দোলনকারীদের মুচলেকা


মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে নালিশ ও হাংরি আন্দোলনকারীদের মুচলেকা


শক্তি চট্টোপাধ্যায় : ( বয়স ৩১ বছর ) পিতা বামাচরণ চ্যাটার্জি । ঠিকানা ৪ অধরচন্দ্র দাস লেন, কলকাতা।
আমার নাম শক্তি চট্টোপাধ্যায় । আমি একজন স্নাতক এবং লেখক । আমি ইউএসআইস-এ একজন ক্যাজুয়াল অনুবাদক । এটা ঘটনা যে এই আন্দোলন কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে আমি আরম্ভ করেছিলাম। তারা প্রাথমিক উদ্দেশ্য থেকে সরে গেছে দেখে আমি এই আন্দোলনের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছি । আমি হাংরি জেনারেশন নামে পুস্তিকাটি দেখেছি যাতে আমার নাম প্রকাশকরূপে দেখানো হয়েছে । এই তথাকথিত হাংরি জেনারেশনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না এবং আমি তা প্রকাশ করিনি । আমি মলয় রায়চৌধুরী ও তার দাদা সমীর রায়চৌধুরীএবং সুভাষ ঘোষ, শৈলেশ্বর ঘোষ, প্রদীপ চৌধুরী ও উৎপলকুমার বসুকে চিনি । আমি মলয় রায়চৌধুরীর হাতের লেখার সঙ্গে পরিচিত । এই পুস্তিকাটি কোথা থেকে ছাপানো হয়েছে এবং কে এর খরচ দিয়েছে তা আমি জানি না ।
আমার মতে মলয় রায়চৌধুরীর রচনাগুলো মানসিক বিকৃতিতে পরিপূর্ণ এবং তার ভাষা নোংরা ।
আমি পুস্তিকাটির একটি কপি দেখেছি এবং মলয় রায়চৌধুরীর লেখা ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ শিরোনামের কবিতাটির ঘোর নিন্দা করেছি । ( ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫, স্বাক্ষর শক্তি চট্টোপাধ্যায় ) । মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে পুলিশ পক্ষের সাক্ষী।
পবিত্র বল্লভ : ( বয়স ২২ বছর ) পিতা ঠাকুরদাস বল্লভ । ঠিকানা ২৮/এ পাইকপাড়া রো, কলকাতা ৩৭।
আমার নাম পবিত্র বল্লভ । ১৯৬৩ সালে আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেছি । কামারহাটির সাগর দত্ত ফ্রি হাই ইংলিশ স্কুলে আমি সহশিক্ষক । প্রথমদিকে যে আইডয়া নিয়ে হাংরি জেনারেশন আরম্ভ হয়েছিল তা আমি গ্রহণ করেছিলাম কিন্তু প্রাসঙ্গিক পুস্তিকাটি প্রকশের পর আমি বুঝতে পারি যে তারা মূল ধ্যানধারণা থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করি । যতোদূর আমার মনে আছে দুই বছর পূর্বে হাংরি জেনারেশনের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সংখ্যায় আমার নাম কেবল প্রকাশিত হয়েছিল । তাদের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হবার পর আমি কোনো লেখা দিইনি । কোথা থেকে রচনাগুলি প্রকাশিত হয় এবং কে ছাপার খরচ দেয় তা আমি জানি না ।
আমার মতে তাদের রচনাবলী মানসিক বিকৃতিতে পূর্ণ এবং ভাষা বেশ নোংরা । আমি পুস্তিকাটির একটি কপি দেখেছি এবং মলয় রায়চৌধুরীর ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটির ঘোর নিন্দা করেছি । আমি মলয় রায়চৌধুরীর হাতের লেখার সঙ্গে পরিচিত । ( ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪, স্বাক্ষর পবিত্র বল্লভ ) । মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে পুলিশ পক্ষের সাজানো সাক্ষী ।
শৈলেশ্বর ঘোষ : ( বয়স ২৬ বছর ) পিতা বিশেশ্বর ঘোষ । ঠিকানা ১৬/বি শ্যামাচরণ মুখার্জি স্টপিট, কলকাতা এবং রঘুনাথপুর গ্রাম, পুলিশ স্টেশান বালুরঘাট, জেলা দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ ।
আমার নাম শৈলেশ্বর ঘোষ। আমার জন্ম বগুড়ায় আর বড় হয়েছি বালুরঘাটে। আমি ১৯৫৩ সনে বালুরঘাত হাই ইংলিশ স্কুল থেকে স্কুল ফাইনাল পাশ করেছি, ১৯৫৫ সনে বালুরঘাট কলেজ থেকে আই এস সি, ১৯৫৮ সনে বালুরঘাট কলেজ থেকে বি এ, আর ১৯৬২ সনে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বাংলায় স্পেশাল অনার্স। ১৯৬৩ সনে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে একদিন কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে দেবী রায় ওরফে হারাধন থাড়া নামে একজন তাঁর হাংরি জেনারেশন ম্যাগাজিনের জন্য আমাকে লিখতে বলেন। তারপরেই আমি হাংরি আন্দোলনের লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হই। আমি ব্যক্তিগতভাবে খ্যাতিমান লেখক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, রবীন্দ্র দত্ত, বাসুদেব দাশগুপ্ত, প্রদীপ চৌধুরী এবং উৎপলকুমার বসুকে চিনি। গত এপ্রিল মাসে একদিন কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসে মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে আমার দেখা হয়, এবং তিনি আমার কাছে কয়েকটা কবিতা চান। তাঁর কাছ থেকে জানতে পারি যে হাংরি জেনারেশন প্রকাশিত হবে । একমাস আগে  তাঁর কাছ থেকে একটা পার্সেল পেয়েছি, তাতে কপিগুলো ছিল। আমি মলয় রায়চৌধুরীকে চিনি। তিনি হাংরি আন্দোলনের স্রষ্টা। হাংরি জেনারেশন ম্যাগাজিনে আমি মোট দুবার কবিতা লিখেছি। মলয় আমাকে কিছু লিফলেট আর দুতিনটি পত্রিকা পাঠিয়েছিলেন কিন্তু সেগুলি সম্পর্কে কোন নির্দেশ তিনি আমাকে দেননি। সাধারণত এইসব কাগজপত্র আমার ঘরেই থাকত। এটুকু ছাড়া হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে আমি আর কিছু জানি না। অশ্লীল ভাষায় লেখা আমার আদর্শ নয়। আমি উপরোক্ত ঠিকানায় ৪৫ টাকা মাসিক ভাড়ায় আমার আত্মীয় সুভাষ ঘোষের সঙ্গে গত দুই বছর যাবত রয়েছি । ১৯৬২ থেকে আমি হুগলি জেলার ভদ্রকালীতে ভূপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যালয়ে স্কুল টিচার। মাইনে পাই দু’শ দশ টাকা। বর্তমান সংখ্যা হাংরি বুলেটিনের প্রকাশনার পর, যা কিনা আমার অজান্তে ও বিনা অনুমতিতে ছাপা হয়, আমি এই সংস্হার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিভবিষ্যতে আমি হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখব না এবং হাংরি পত্রিকায় লিখব না। আমি অশ্লীল রচনা লিখব না এবং তা আমার সাহিত্যিক নির্ণয় । বর্তমান বুলেটিনটি ছাপিয়েছেন প্রদীপ চৌধুরী। ( ২ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪, স্বাক্ষর শৈলেশ্বর ঘোষ ) । মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে পুলিশ পক্ষের রাজসাক্ষী ।
                                            

সমীর বসু : ( বয়স ২৩ বছর ) । পিতা রাখালচন্দ্র বসু । ঠিকানা ৫/এ মোতিলাল শীল লেন, কলকাতা ১১
আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ও বর্তমানে বেকার । আমি একজন লেখক এবং কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসে প্রায়ই যেতাম, যেখানে সন্ধ্যাবেলায় কলকাতার কমবয়সী লেখকরা একত্রিত হন । আমি হাংরি জেনারেশনের উদ্যোক্তা শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, মলয় রায়চৌধুরী ও সমীর রায়চৌধুরী সম্পর্কে জানতে পেয়েছিলাম ।
আমি এবং আরও কয়েকজন লেখক অর্থাৎ আনন্দ চট্টোপাধ্যায়, মলয় দাশগুপ্ত, শংকর দে ও অন্যান্য অনেকে সাহিত্যের সম্পর্কে  হাংরি জেনারেশনের মতাদর্শ অনুমোদন করিনি ।
আমার মতে তাদের রচনাবলী মানসিক বিকৃতির প্রকাশ এবং ভাষা অত্যন্ত নোংরা । বিদেশি বিট কবিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই আন্দোলন শক্তি চট্টোপাধ্যায় আরম্ভ করেছিলেন কিন্তু মলয় রায়চৌধুরী এই আন্দোলনের নেতা নন । আমাকেও হাংরি জেনারেশনে লিখতে বলা হয়েছিল কিন্তু আমি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলাম ।
ওরা কফিহাউসে যে ম্যানিফেস্টোগুলো বিতরণ করত তার কয়েকটা আমি পেয়েছিলাম । এই বিশেষ পুস্তিকাটি মলয় রায়চৌধুরীর উদ্যোগে প্রকাশিত হয়েছিল । আমি তাকে দেখেছি কফিহাইসে লেখকদের কাছ থেকে লেখা চাইতে । এই পুস্তিকাটি আমি দেখেছি এবং মলয়ের লেখা ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটি তৎক্ষণাৎ নিন্দা করেছি ।
আমি মনে করি যে সাহিত্যের নামে এই ধরণের অশ্লীলতা এখনই বন্ধ করে দেয়া উচিত ।
( ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৪, স্বাক্ষর সমীর বসু ) । মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে পুলিশ পক্ষের সাজানো সাক্ষী ।
সুভাষ ঘোষ: ( বয়স ২৭ বছর ) । পিতা শরৎচন্দ্র ঘোষ । ঠিকানা ১৬বি শ্যামাচরণ মুখার্জি স্টিট, কলকাতা ২ এবং গ্রাম শেখেরপোলা, পুলিশ স্টেশান বগুড়া, পোস্ট ভবানীগঞ্জ, জেলা বগুড়া, পূর্ব পাকিস্তান ।
আমার নাম সুভাষচন্দ্র ঘোষ, পিতা শরৎচন্দ্র ঘোষ। আমি ১৬বি শ্যামাচরণ স্ট্রিট, কলকাতা-২-এর একতলার একটি ঘরে শৈলেশ্বর ঘোষের সঙ্গে থাকি, যে আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয় । বাড়ির মালিক অমূল্য দে ঐ বাড়িতেই থাকেন এবং আমাদের কাছ থেকে ৪৫ টাকা মাসিক ভাড়া আর ইলেকট্রিক খরচের জন্য দুই টাকা নেন।আমি এবং শৈলেশ্বর ঐ ঘরে গত দুই বছর থেকে রয়েছি । ১৯৪৯ বা ১৯৬০ সালে আমি বগুড়া থেকে বালুরঘাটে মাইগ্রেট করি এবং আমার খুড়তুতো ভাই মৃণালকান্তি ঘোষ, যিনি একজন ব্যবসায়ী তাঁর  বাড়িতে আশ্রয় নিই । বালুরঘাটে আমাকে বালুরঘাট হাই স্কুলে ক্লাস এইটে ভর্তি করা হয় এবং ১৯৫৩ সালে আমি সেখান থেকে স্কুল ফাইনাল পাস করি । ১৯৫৫ সালে বালুরঘাট কলেজ থেকে আইএস সি পাশ করি । সাধারণত আমি আমার খরচ আমার পিতা এবং বিশেষ করে আমার বড়ো ভাই অতুলচন্দ্র ঘোষ, যিনি দ্বারভাঙ্গা শুগার মিলে কাজ করেন তাঁর কাছ থেকে পেতাম ।
১৯৫৫ সালে আমি কলকাতায় আসি ও বিদ্যাসাগর কলেজে বিএসসি পড়ার জন্য ভর্তি হই এবং কর্নওয়ালিস স্ট্রিট, কলকাতায় বিদ্যাসাগর লজে থাকা আরম্ভ করি ।
১৯৫৭ সালে আমি বিএসসি পাশ করি। তারপর, অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে সিটি কলেজে বিএ কোর্সে ভর্তি হয়ে এক বছরের জন্য পড়ি । ব্যক্তিগত কারণের জন্য আমি ঐ কলেজে ছাত্র হিসাবে উইথড্র করে নিয়ে ১৯৬০ সালে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিই । সেই বছরই আমি হজুরি মল লেনের ( মুচিপাড়া  পুলিশ স্টেশান ) বেঙ্গল লাইব্রেরি অ্যাসোশিয়েশান থেকে লাইব্রেরিয়ানশিপের সার্টিফিকেট কোর্স পাশ করি । ১৯৬১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমার জন্য ভর্তি হই এবং ১৯৬২ সালে সাফল্যের সঙ্গে পাশ করি । ১৯৬২ সালে আমি হুগলি ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে মাসিক ১৮৯ টাকায় গ্রন্হাগারিকের চাকরি পাই এবং এক বছর কাজ করার পর পদত্যাগ করে বালুরঘাটে আমার অসুস্হ পিতাকে দেখতে যাই ; তিনি মারা যান । ১৯৬৩ সালের নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে  আমি কলকাতায় ফিরে এসে ইনটারভিউ দিই এবং জুলাই ১৯৬৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বেলেঘাটাস্হিত ডিগ্রি কলেজ অফ সেরামিক টেকনোলজিতে গ্রন্হাগারিকের চাকরি পাই ।
গত এক বৎসর যাবত আমি কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসে যাতায়াত করছি । সেখানে একদিন হাংরি আন্দোলনের উদ্ভাবক মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় হয় ; সে জানায় যে সে একজন লেখক । সে আমার কাছ থেকে একটা লেখা চায় । হাংরি জেনারেশন বুলেটিনের প্রকাশের খবর আমি জানি বটে কিন্তু হাংরি আন্দোলনের যে ঠিক কী উদ্দেশ্য তা আমি জানি না । আমি তাকে আমার একটা লেখা দিই যা দেবী রায় সম্পাদিত হাংরি জেনারেশন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । আমি তা আমার রুম মেট শৈলেশ্বর ঘোষের কাছ থেকে পাই । সে হাংরি বুলেটিনের একটা প্যাকেট পেয়েছিল। আমি প্রদীপ চৌধুরী, সুবো আচার্য, বাসুদেব দাশগুপ্ত, উৎপলকুমার বসু, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এবং অন্যান্য লেখকদের সঙ্গে ১৯৬৪ সালে দেখা করি ।
আমি এই ধরণের আন্দোলনের সঙ্গে কখনও নিজেকে জড়াতে চাইনি, যা আমার মতে খারাপ । আমি ভাবতে পারি না যে এরকম একটা পত্রিকায় আমার আর্টিকেল ‘হাঁসেদের প্রতি’ প্রকাশিত হবে । আমি হাংরি আন্দোলনের আদর্শে বিশ্বাস করিনা, আর এই লেখাটা প্রকাশ হবার পর আমি ওদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছি । অশ্লীল রচনা লেখা আমার উদ্দেশ্য নয় এবং পূর্বেও ছিল না । ( ২ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪, স্বাক্ষর সুভাষ ঘোষ ) । মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে পুলিশ পক্ষের রাজসাক্ষী ।
                                                  

উৎপলকুমার বসু : ( বয়স ২৮ বছর ) । পিতা : পি.কে. বসু । ঠিকানা : ২৫ রয়েড স্ট্রিট, কলকাতা ২৬
আমি অবিবাহিত এবং আমার বয়স ২৮ বছর । বর্তমানে আমি ২৫ রয়েড স্ট্রিটে থাকি । আমি জিওলজিতে স্নাতকোত্তর এবং আশুতোষ কলেজে লেকচারার হিসাবে যুক্ত ।
১৯৬২ সালে বা তার কাছাকাছি সময়ে হাংরি জেনারেশন প্রকাশনা সর্বপ্রথম আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে । আমি সাহিত্য আন্দোলনে আগ্রহী ছিলাম । পরে আমি মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে পরিচিত হই এবং তার দাদা সমীর রায়চৌধুরী আমার পূর্বপরিচিত । এই গোষ্ঠীর একত্রিত হবার জায়গা ছিল কলেজ স্ট্রিট কফিহাউস এবং ক্রমে-ক্রমে আমি অন্য সদস্যদের সঙ্গেও পরিচিত হই, যথা শৈলেশ্বর, সুভাষ এবং দেবী রায় ওরফে হারাধন ধাড়া এবং তাদের অনুরোধে আমি বিভিন্ন সময়ে হাংরি জেনারেশন পুস্তিকায় প্রকাশের জন্য লেখা ও কবিতা দিয়েছি । প্রকাশনাটি কোথা থেকে ছাপানো হতো এবং কে এর ছাপাবার খরচ দিতেন তা আমি জানি না ।
১৯৬৪ সালে গ্রীষ্মের সময়ে মলয় পাটনা থেকে কলকাতায় এসে আমাকে জানান তিনি পুস্তিকা প্রকাশের ব্যবস্হা করছেন এবং আমাকে একটি লেখা দিতে অনুরোধ করেন । আমি ‘কুসংস্কার’ নামে একটি লেখা দিই । আমি ব্যক্তিগতভাবে পাণ্ডুলিপি মলয়কে দিয়েছিলাম ও তারপরে কলকাতা ছেড়ে ডালহাউসি রওনা দিই, যেখানে আমি প্রায় দু’মাস ছিলাম । কলকাতায় ফিরে আমি কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসে পুস্তিকাটির একটি কপি দেখতে পাই । পরে আমি ডাকেও একটি কপি পাই ।
আমার মতে মলয় রায়চৌধুরীর রচনাবলী নিদারুণ বিরক্তি ও ননসেন্সের বোধ বহন করে । আমি মনে করি ওদের সাহিত্য আন্দোলন দুশ্চরিত্রতায় অধঃপতিত হয়েছে এবং সেকারণে আমি হাংরি জেনারেশনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি । মলয়ের হাতের লেখা দেখার সুযোগ আমার হয়েছে ।
( ৫ এপ্রিল ১৯৬৫ , স্বাক্ষর উৎপলকুমার বসু )। মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষের সাক্ষী ।
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় : ( বয়স ৩০ বছর ) । পিতা : ইউ এন চ্যাটার্জি । ঠিকানা : ১৮ সারদা চ্যাটার্জি লেন, হাওড়া ।
আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং কলকাতা কর্পোরেশনে অ্যাসিসট্যান্ট ইন্সপেক্টরের চাকরি করি । সেই সঙ্গে আমি একজন লেখক এবং কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসে যেতাম যেখানে সন্ধ্যাবেলায় কলকাতার তরুণ সাহিত্যিকরা একত্রিত হন । সমীর রায়চৌধুরী আমার ব্যক্তিগত বন্ধু । হাংরি জেনারেশনের উদ্যোক্তা অর্থাৎ শক্তি চট্টোপাধ্যায়, মলয় রায়চৌধুরী ও অন্যান্যদের সঙ্গে আমি পরিচিত হই । যদিও আমি হাংরি জেনারেশনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নই, সাহিত্য আন্দোলনে আমার আগ্রহ ছিল । হাংরি জেনারেশনের কয়েকটি ম্যানিফেস্টোতে আমার রচনার বিজ্ঞাপন আছে । একটি প্রকাশনায় আমার নাম প্রকাশক হিসাবে ছাপা হয়েছে । তা করা হয়েছে লেখক হিসাবে আমার খ্যাতি ব্যবহার করার জন্য কিন্তু যেহেতু আগে থাকতে আমার অনুমতি নেয়া হয়নি, আমি প্রতিবাদ করি । বর্তমান প্রকাশনাটিও আমার চোখে পড়েছে । একজন কবি হিসাবে আমি মলয় রায়চৌধুরীর  ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটির বিষয়বস্তু কিংবা ভাষাকে অনুমোদন করি না । মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে চিঠিপত্রে আমার যোগাযোগ ছিল, সে সাহিত্যিক বিষয়ে আমার মতামত চাইতো । ( ১৫ মার্চ ১৯৬৫, স্বাক্ষর সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ) । মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষের সাক্ষী ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন