বুধবার

শীলা চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় : অনিন্দিতা চৌধুরী

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের হাংরি আন্দোলন ত্যাগের কারণ : প্রেম

“ভালোবাসা পেলে আমি কেন পায়সান্ন খাব
যা খায় গরীবে, তা-ই খাব বহুদিন যত্ন করে”
যার সব আবেদন নগণ্য হয়ে যায় ভালোবাসার কাছে, তেমনই কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তার জীবনে প্রেম এসেছিলোও অত্যন্ত সরব উপস্থিতি নিয়ে। মলয় রায়চৌধুরীর দাদা সমীর রায়চৌধুরীর শ্যালিকা শীলা চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমে পড়েন তিনি। একসাথে অনেকটা সময়ও কাটান তারা। শীলা কলেজে গেলে বাইরে গাছতলায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতেন শক্তি। ধারণা করা হয়, সেই অপেক্ষারই ফসল ছিল ‘হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো।

সমীর রায়চৌধুরী চাকরিজনিত কাজে বাইরে গেলে বাড়িতে মাঝেমাঝে শক্তিকে রেখে যেতেন এবং বলাই বাহুল্য যে এ কাজটি তিনি বেশ আগ্রহের সাথেই করতেন! একবার তো এতদিন থেকে গিয়েছিলেন যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার খোঁজে গিয়ে বলেন, “তুই এখানে ইস্টিশান পুঁতে ফেলেছিস ?” কিন্তু দুঃখের বিষয়, সে প্রেম পরিণয় পর্যন্ত গড়ায়নি এবং এই ব্যর্থতা তার জীবনে বেশ গভীর দাগ কাটে। সাহিত্যজীবনেও এর বেশ প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।

এ নিয়ে তার লেখা ‘কিন্নর ও কিন্নরী’ উপন্যাসটি প্রকাশ পায় ১৯৭৭ সালে। এটি ছাড়াও ‘অম্বা ও দেবব্রত’, ‘রামচন্দ্র ও শর্বরী’, ‘সোম ও তারা’, ‘অর্জুন ও উত্তরা’ নামক  চারটি ব্যর্থ প্রেমের উপন্যাস তিনি উপহার দেন বাংলা সাহিত্যকে, যার উৎসও মনে করা হয় তার নিজের জীবনে প্রেমের ব্যর্থতাকেই। উল্লেখ্য, এই উপন্যাসগুলোর সবগুলোই পৌরাণিক চরিত্র কেন্দ্রিক।

১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি হাংরি বুলেটিনে শক্তির কবিতা বেরুতো এবং তিনি এ আন্দোলনে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তার ডাকেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, বিনয় মজুমদার প্রমুখ। কিন্তু পরে আন্দোলন থেকে তার দূরে সরে যাওয়া এমনকি নিজেকে নিরাপদে রাখতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে তার কিছু কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। তিনি যে নিজেকে পুরোপুরি এ আন্দোলন থেকে সরিয়ে নিয়েছেন, তার প্রমাণ করতে তিনি পুলিশের কাছে আন্দোলনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যও দেন। এবং তখন তার ডাকে যোগদানকারীরাও আন্দোলন থেকে পিছু হটে।

হাংরি আন্দোলনের সহযোদ্ধা মলয় রায়চৌধুরীর ভাষ্যমতে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এ আন্দোলন ত্যাগ করার পেছনেও একটি প্রধান কারণ ছিল এই ব্যর্থ প্রেম। শীলার সাথে বিচ্ছেদের পর তার মনে হয় যে জীবনে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক হতে পারলেও শীলার পিতা তাকে মেনে নিতেন এবং অর্থচিন্তা তখন তাকে অনেকটাই পেয়ে বসে। এরপর ১৯৬৩ সালে একটি সংবাদপত্রে চাকরির প্রস্তাব পান শক্তি। কিন্তু চাকরির শর্ত ছিল, তাকে হাংরি আন্দোলন ছাড়তে হবে। এ কারণেই হাংরি আন্দোলনের প্রতি অতীতের বহু সংযুক্তির পরও তা থেকে শক্তি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন