রবিবার
Sunil Gangopadhyay on Hungryalism
শনিবার
সুভাষ ঘোষ : আত্মীয় বলে শৈলেশ্বর ঘোষ সম্পর্কে কখনও মুখ খোলেননি
" প্রতিষ্ঠান বিরোধিতায় তোমার ভূমিকা কী ? তুমি কি গাছেরও খাও, তলারও ?
শোষণ ও জোযা়ল সম্পর্কে তোমার ধারণা কেমন ? তোমার ইগো ক'হাত লম্বা - কেবল
আমাকে দ্যাখো - ব্যাপারটা কেমন বোঝো তুমি ? তোমার ও তোমার বাবার বিছানার
মধ্যে কতটা ফারাক ? বাবার সঙ্গে any joint account ? কীরকম এটি, তোমার বয়স
বাডা়র সঙ্গে, বড় বাজার - তুমি কি লেখার ভেতর লেখক খোঁজো ? পাঠক লেখা
নিচ্ছে না - তাহলে কি লেখা ভাঙব ? ভাষা ভাঙব, ছাঁচ ভাঙব, নিজেকে ভাঙব,
না পাঠকের হোল চুলকোবো ? কেমন ওই বৌদির বাপের বাড়ি ? "
- সুভাষ ঘোষ
"আমাদের কেউ কখনও ভদ্রলোক বলেনি, আমরাও জানি আমরা ভদ্রলোকের কেউ না... যে নোংরা জীবনের ভেতর, অশ্লীল জীবনের ভেতর ভদ্রলোকের জাত মানুষকে ঠেলে ফেলে দিযে়ছে , সেই মানুষের ভাষা, কথা কী করে শুদ্ধ শুচিময় হবে ? ... আসলে আমরা তাদেরই নোংরামি, অশ্লীলতা তাদেরকেই ফিরিযে় দিযে়ছি-- তাদের সামনে মেলে ধরেছি তাদের ভন্ড ডিহিম্যানাইজড জীবনপ্রণালী -- তাদের কোড ল্যাঙ্গুযে়জ ধরে ফেলি আমরা, তাই অপরাধ -- অপরাধ আমাদের তাই -- তাই আমরা নোংরা, কুৎসিত, অসভ্য, মেযে়সংক্রান্ত, যৌনসংক্রান্ত, নৈরাজ্যসংক্রান্ত. অপাঠ্য, অবোধ্য আমরা --"
-সুভাষ ঘোষ
"এই সভ্যতার কাছে কবিই সবচেযে় বড় অপরাধী। কারণ সভ্যতার বেঁধে দেওযা় গন্ডীর সীমা কবিই প্রথম লঙ্ঘন করে। কবি শব্দই আমাদের কাছে বিদ্রোহবাচক। কবি, প্রচারিত মহত্বের আডালে কামার্ত মুখগুলি চিনে ফ্যালে - কবির চোখ সমস্ত গোপন হত্যাকাণ্ড দেখে ফ্যালে। যারা শ্রেষ্ঠ তাদের ধ্বংস করেই এই সভ্যতা আনন্দ পায়। কবি যথার্থ সর্বহারা সে সক্রিয় এবং আক্রমণকারী, তার হারাবার কিছুই নাই । সর্বহারা বলেই সে প্রতিটি শব্দের প্রকৃত ইতিহাস আবিষ্কার করতে পারে । আইনসম্মত বেশ্যাবৃত্তিই এই সভ্যতার চমকপ্রদ ইতিহাস। কবির সৃষ্টিকে ভয়ংকর ব'লে মনে করে । তার কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়। স্বপ্নহীন পৃথিবীতে কবিই কেবল স্বপ্ন দেখে । স্বপ্নহীন মানুষ কবির সৃষ্টিকে অশ্লীল মনে করে । বিদ্রোহকে বিকার মনে করে। ভালোবাসাকে অপরাধ বলে ঘোষণা করে। 'সাফল্য'ই কবির কাছে সবচেযে় অশ্লীল শব্দ। মেলাবে মিলিযে় দেবে সে কবি নয়, সে এক ঘুষখোর যে সস্তায় বাজিমাত করতে চায়।" --শৈলেশ্বর ঘোষ
সর্বহারা শৈলেশ্বর ঘোষের বাংলো বাড়ি
কবি শৈলেশ্বর ঘোষ।হাংরি আন্দোলনের অন্যতম কবি।
হ্যাঁ,ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল তাঁরও সঙ্গে।প্রায় দেড়দশক জুড়ে।অনেক স্মৃতি, ঋণও অনেক।তবু ভেঙে গেল, মুগ্ধতা কেটে গেল!দূরত্বও তৈরি হলো অনেকটা।দূরত্ব বাড়াতে হাজির হয়ে গেলেন তাঁর অনুগত চাকরবাকরেরা! যেমনটি হয়, যেমনটি হয়ে এসেছে এযাবৎ!
তবু অনেক ঋণ তাঁর কাছে।হাংরি এবং হাংরি ঘিরে ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পনাগুলির অনেক গল্প তাঁরই কাছে শোনা যে!
ভালবাসতেন গাঁজা।ভালবাসতেন হেনরী মিলার,আঁতোয়া আর্তো,নিজের প্রশংসা এবং স্তুতি।
সাক্ষাৎকার দেবার আগে, শর্ত রাখলেন,মলয় রায়চৌধুরী এবং 'প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবেনা।মেনে নিলাম।বিরক্ত হলাম প্রথমবার।
প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কথা বলেছেন বরাবর।একইভাবে গভীর রাতে টেলিফোনে যোগাযোগ রেখে গ্যাছেন কবি শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে।অন্যদিকে 'শৈলেশ্বর ঘোষ সংখ্যা'-য় লিখতে অস্বীকার করেছেন 'মহামান্য' অভিভাবক-কবি শঙ্খ ঘোষ!
হ্যাঁ, মৃত্যুর আগে সরকার পরিচালিত লিটলম্যাগাজিন মেলার উদ্বোধন করার সুযোগও পেলেন তিনি।মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গে ছবিও উঠলো তাঁর!
কবির মৃত্যুর পর এসব কথা বলা যায়?
যায়! যায়তো!
--কৃশানু বসু
প্রতিষ্ঠান আয়োজিত সভায় সর্বহারা শৈলেশ্বর ঘোষ
- সুভাষ ঘোষ
"আমাদের কেউ কখনও ভদ্রলোক বলেনি, আমরাও জানি আমরা ভদ্রলোকের কেউ না... যে নোংরা জীবনের ভেতর, অশ্লীল জীবনের ভেতর ভদ্রলোকের জাত মানুষকে ঠেলে ফেলে দিযে়ছে , সেই মানুষের ভাষা, কথা কী করে শুদ্ধ শুচিময় হবে ? ... আসলে আমরা তাদেরই নোংরামি, অশ্লীলতা তাদেরকেই ফিরিযে় দিযে়ছি-- তাদের সামনে মেলে ধরেছি তাদের ভন্ড ডিহিম্যানাইজড জীবনপ্রণালী -- তাদের কোড ল্যাঙ্গুযে়জ ধরে ফেলি আমরা, তাই অপরাধ -- অপরাধ আমাদের তাই -- তাই আমরা নোংরা, কুৎসিত, অসভ্য, মেযে়সংক্রান্ত, যৌনসংক্রান্ত, নৈরাজ্যসংক্রান্ত. অপাঠ্য, অবোধ্য আমরা --"
-সুভাষ ঘোষ
"এই সভ্যতার কাছে কবিই সবচেযে় বড় অপরাধী। কারণ সভ্যতার বেঁধে দেওযা় গন্ডীর সীমা কবিই প্রথম লঙ্ঘন করে। কবি শব্দই আমাদের কাছে বিদ্রোহবাচক। কবি, প্রচারিত মহত্বের আডালে কামার্ত মুখগুলি চিনে ফ্যালে - কবির চোখ সমস্ত গোপন হত্যাকাণ্ড দেখে ফ্যালে। যারা শ্রেষ্ঠ তাদের ধ্বংস করেই এই সভ্যতা আনন্দ পায়। কবি যথার্থ সর্বহারা সে সক্রিয় এবং আক্রমণকারী, তার হারাবার কিছুই নাই । সর্বহারা বলেই সে প্রতিটি শব্দের প্রকৃত ইতিহাস আবিষ্কার করতে পারে । আইনসম্মত বেশ্যাবৃত্তিই এই সভ্যতার চমকপ্রদ ইতিহাস। কবির সৃষ্টিকে ভয়ংকর ব'লে মনে করে । তার কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়। স্বপ্নহীন পৃথিবীতে কবিই কেবল স্বপ্ন দেখে । স্বপ্নহীন মানুষ কবির সৃষ্টিকে অশ্লীল মনে করে । বিদ্রোহকে বিকার মনে করে। ভালোবাসাকে অপরাধ বলে ঘোষণা করে। 'সাফল্য'ই কবির কাছে সবচেযে় অশ্লীল শব্দ। মেলাবে মিলিযে় দেবে সে কবি নয়, সে এক ঘুষখোর যে সস্তায় বাজিমাত করতে চায়।" --শৈলেশ্বর ঘোষ
সর্বহারা শৈলেশ্বর ঘোষের বাংলো বাড়ি
কবি শৈলেশ্বর ঘোষ।হাংরি আন্দোলনের অন্যতম কবি।
হ্যাঁ,ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল তাঁরও সঙ্গে।প্রায় দেড়দশক জুড়ে।অনেক স্মৃতি, ঋণও অনেক।তবু ভেঙে গেল, মুগ্ধতা কেটে গেল!দূরত্বও তৈরি হলো অনেকটা।দূরত্ব বাড়াতে হাজির হয়ে গেলেন তাঁর অনুগত চাকরবাকরেরা! যেমনটি হয়, যেমনটি হয়ে এসেছে এযাবৎ!
তবু অনেক ঋণ তাঁর কাছে।হাংরি এবং হাংরি ঘিরে ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পনাগুলির অনেক গল্প তাঁরই কাছে শোনা যে!
ভালবাসতেন গাঁজা।ভালবাসতেন হেনরী মিলার,আঁতোয়া আর্তো,নিজের প্রশংসা এবং স্তুতি।
সাক্ষাৎকার দেবার আগে, শর্ত রাখলেন,মলয় রায়চৌধুরী এবং 'প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবেনা।মেনে নিলাম।বিরক্ত হলাম প্রথমবার।
প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কথা বলেছেন বরাবর।একইভাবে গভীর রাতে টেলিফোনে যোগাযোগ রেখে গ্যাছেন কবি শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে।অন্যদিকে 'শৈলেশ্বর ঘোষ সংখ্যা'-য় লিখতে অস্বীকার করেছেন 'মহামান্য' অভিভাবক-কবি শঙ্খ ঘোষ!
হ্যাঁ, মৃত্যুর আগে সরকার পরিচালিত লিটলম্যাগাজিন মেলার উদ্বোধন করার সুযোগও পেলেন তিনি।মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গে ছবিও উঠলো তাঁর!
কবির মৃত্যুর পর এসব কথা বলা যায়?
যায়! যায়তো!
--কৃশানু বসু
প্রতিষ্ঠান আয়োজিত সভায় সর্বহারা শৈলেশ্বর ঘোষ
লেবেলসমূহ:
CPM chamcha,
Saileswar Ghosh,
Subhas Ghosh
শুক্রবার
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় : "মলয় ইচ্ছে করেই আমার আমেরিকা-বাসের সময়টা বেছে নিয়েছিল"
হাংরি জেনারেশন আন্দোলনকে বেশির ভাগ কবি-লেখক কেন ঈর্ষা করেন ?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর ঈর্ষা : "মলয় ইচ্ছে করেই আমার আমেরিকা-বাসের সময়টা বেছে নিয়েছিল"
বাসব রায়কে দেয়া সাক্ষাৎকারে, গৌহাটির
'যুগশঙ্খ' পত্রিকায় ২০০৬ সালে প্রকাশিত, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, "মলয়
ইচ্ছে করেই আমার আমেরিকা-বাসের সময়টা বেছে নিয়েছিল ।" মলয় রায়চৌধুরী
সেসময়ে একজন অচেনা প্রবাসী যুবক ছিলেন এবং দাদা সমীর রায়চৌধুরীর সঙ্গে
পরামর্শ করে হাংরি আন্দোলন আরম্ভ করতে চাইছিলেন ।
পরবর্তীকালে হাংরি আন্দোলনের খ্যাতি বা কুখ্যাতি যেভাবে সারা ইউরোপ আমেরিকায় সাড়া ফেলেছিল, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হাংরি আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে গেছেন । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দুটি কারণে হাংরি আন্দোলনের পপতি ঈর্ষান্বিত ছিলেন । প্রথম, তিনি মনে করতেন তাঁর 'কৃত্তিবাস' গোষ্ঠীকে ভেঙে ফেলার জন্য হাংরি আন্দোলন আরম্ভ করা হয়েছে, এবং যেহেতু তিনি কলকাতায় নেই, মলয় রায়চৌধুরী সেই সুযোগটি নিয়েছেন । দ্বিতীয়, তিনি মনে করতেন, বাংলা সাহিত্যে কোনো আন্দোলন হলে তার নেতৃত্ব থাকা উচিত তাঁর নিয়ন্ত্রণে ; মলয় রায়চৌধুরী নেতৃত্ব শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের হাতে দিয়ে ভুল করেছেন কেননা নেতৃত্ব দেবার মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা ও যোগাযোগ শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের নেই ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কৃত্তিবাস পত্রিকায় হাংরি আন্দোলনের বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় লিখেছিলেন । হাংরি আন্দোলনকে ভেঙে দেবার হুমকি দিয়ে আমেরিকা থেকে মলয় রায়চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছিলেন । সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে আমেরিকা থেকে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন হাংরি আন্দোলন থেকে বেরিয়ে যেতে ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যদি হাংরি আন্দোলনের সাহিত্যের বিরোধী থাকতেন তাহলে বাসব রায়কে বলতেন না যে, "মলয় ইচ্ছে করেই আমার আমেরিকা-বাসের সময়টা বেছে নিয়েছিল।" প্রকৃতপক্ষে তিনি ঈর্ষান্বিত ছিলেন ।
পরবর্তীকালে হাংরি আন্দোলনের খ্যাতি বা কুখ্যাতি যেভাবে সারা ইউরোপ আমেরিকায় সাড়া ফেলেছিল, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হাংরি আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে গেছেন । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দুটি কারণে হাংরি আন্দোলনের পপতি ঈর্ষান্বিত ছিলেন । প্রথম, তিনি মনে করতেন তাঁর 'কৃত্তিবাস' গোষ্ঠীকে ভেঙে ফেলার জন্য হাংরি আন্দোলন আরম্ভ করা হয়েছে, এবং যেহেতু তিনি কলকাতায় নেই, মলয় রায়চৌধুরী সেই সুযোগটি নিয়েছেন । দ্বিতীয়, তিনি মনে করতেন, বাংলা সাহিত্যে কোনো আন্দোলন হলে তার নেতৃত্ব থাকা উচিত তাঁর নিয়ন্ত্রণে ; মলয় রায়চৌধুরী নেতৃত্ব শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের হাতে দিয়ে ভুল করেছেন কেননা নেতৃত্ব দেবার মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা ও যোগাযোগ শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের নেই ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কৃত্তিবাস পত্রিকায় হাংরি আন্দোলনের বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় লিখেছিলেন । হাংরি আন্দোলনকে ভেঙে দেবার হুমকি দিয়ে আমেরিকা থেকে মলয় রায়চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছিলেন । সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে আমেরিকা থেকে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন হাংরি আন্দোলন থেকে বেরিয়ে যেতে ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যদি হাংরি আন্দোলনের সাহিত্যের বিরোধী থাকতেন তাহলে বাসব রায়কে বলতেন না যে, "মলয় ইচ্ছে করেই আমার আমেরিকা-বাসের সময়টা বেছে নিয়েছিল।" প্রকৃতপক্ষে তিনি ঈর্ষান্বিত ছিলেন ।
বৃহস্পতিবার
সোনালী মিত্র নিয়েছেন মলয় রায়চৌধুরীর সাক্ষাৎকার
মায়াজম : '' প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার ''
এর পরে মলয় রায়চৌধুরীর সেই কবিতা আর এলো কই যে আগামী প্রজন্ম মনে রাখবে ?
নাকি বিতর্ক হয়েছিল বলে কবিতাটা বিখ্যাত হয়েছিল ? নাকি মলয় রায়চৌধুরীর সব
প্রতিভা ঢাকা পড়ে গেলো ''প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার '' এর সৌজন্যে ?
মলয় : ওটা ছিল মূলত দ্রুতির কবিতা ;
আক্ষেপানুরাগের কবিতা । ওই কবিতার দরুন পঁয়ত্রিশ মাস ধরে আদালত-উকিল-চাকুরি
থেকে সাসপেনশানের কারণে অর্থাভাব ইত্যাদির ফলে দ্রুতির রেশ আক্রান্ত
হয়েছিল । কলকাতায় তো আমার মাথাগোঁজার ঠাঁই ছিল না, কেননা আমরা তখন পাটনায়
থাকতুম । সুবিমল বসাক ছাড়া অন্যান্য বন্ধুরাও কলকাতায় তাদের আস্তানায় রাতে
থাকতে দিত না । উত্তরপাড়ার আদিবাড়ির খণ্ডহরে রাতে থাকলে সকালে কলকাতা
আদালতে যাবার জন্যে প্যাসেঞ্জার ট্রেন, যার সময়ের ঠিক ছিল না । ইলেকট্রিক
ট্রেন তখন সেরকমভাবে আরম্ভ হয়নি । সে কি দুরবস্হা । টয়লেট করতে যেতুম
শেয়ালদায় দাঁড়িয়ে থাকা দূরপাল্লার ট্রেনে ; রাত কাটাতুম সুবিমলের জ্যাঠার
স্যাকরার এক-ঘরের দোকানে, বৈঠকখানা পাড়ায় । একই শার্ট-প্যাণ্ট পরে দিনের পর
দিন কাটাতে হতো ; স্নান রাস্তার কলে, সেগুলোও আবার এতো নিচু যে হামাগুড়ি
দিয়ে বসতে হতো । কবিতা লেখার মতো মানসিক একাকীত্বের সময় পেতুম না মাসের পর
মাস ।
‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটা তখন বিখ্যাত হয়নি ; হয়েছে এই বছর
পনেরো-কুড়ি হল । তখন তো ভয়ে লোকে হাংরি শব্দটাই ব্যবহার করত না, কবিতাটা
নিয়ে আলোচনা তো দূরের কথা । আমার মনে হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ওদেশে
কবিতাটা প্রকাশের ব্যাপারে বা হাংরি আন্দোলন নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে ভীতি
ছিল না । ঢাকায় মীজানুর রহমান ওনার পত্রিকায় ধারাবাহিক আমার ‘হাংরি
কিংবদন্তি’ প্রকাশ করেছিলেন । আশির দশকে আমার বেশির ভাগ লেখা প্রকাশিত
হয়েছে ঢাকার পত্র-পত্রিকায় । বাংলাদেশের কবিদের দেখাদেখি পশ্চিমবঙ্গে বছর
দশেক পরে কবিতাটা প্রকাশের সাহস যোগাতে সক্ষম হন লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকেরা
। এখন তো কলকাতার সংবাদপত্রের পুস্তিকাতাও প্রকাশিত হতে দেখি ।
‘ক্ষুধার্ত’, ‘ক্ষুধার্ত খবর’ ইত্যাদি যে পত্রিকাগুলো সুভাষ ঘোষ আর বাসুদেব
দাশগুপ্ত প্রকাশ করত, তাতেও ওরা আমার কবিতা প্রকাশ করতে বা আমার নামোল্লেখ
করতে ভয় পেতো ; এমনকি হাংরি শব্দটা এড়াবার জন্য ক্ষুধার্ত শব্দটা প্রয়োগ
করা আরম্ভ করেছিল । আসলে শৈলেশ্বর ঘোষ, সুভাষ ঘোষ আদালতে আমার বিরুদ্ধে
রাজসাক্ষী হয়ে গিয়ে আত্মঅবমাননার গাড্ডায় পড়েছিল ।
আমার মনে হয় তোদের নাগালে আমার বইপত্র পৌঁছোয় না বলে কেবল ‘প্রচণ্ড
বৈদ্যুতিক ছুতার’ দ্বারা প্রভাবিত রয়েছিস । আমার উপন্যাস ‘ডুবজলে যেটুকু
প্রশ্বাস’ আর ‘অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা’ তো বেশ বৌদ্ধিক রেসপন্স পেয়েছে, বিশেষ
করে কম বয়সী অ্যাকাডেমিশিয়ানদের থেকে । নয়তো কেনই বা বিষ্ণুচন্দ্র দে আমার
কবিতা নিয়ে পিএচডি করবেন, উনি ওনার গবেষণাপত্র গ্রন্হাকারে প্রকাশ করেছেন ।
স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় এম ফিল করবেন ? মারিনা রেজা ওয়েসলিয়ান
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাংরি আন্দোলন নিয়ে গবেষণার জন্য আসবেন ? আরও কয়েকজন
তরুণ-তরুণী গবেষণা করছেন । অধ্যাপক দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি
‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটা বিনির্মাণ করে অ্যাকাডেমিশিয়ানদের সাইটে
আপলোড করেছেন । পড়ে দেখতে পারিস । তুই দিল্লিতে থাকিস বলে আমার বইপত্র পাস
না। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ইটালি থেকে গবেষণার জন্য আসছেন ড্যানিয়েলা
লিমোনেলা ।
মায়াজম : হাংরি আন্দোলন নতুনধারার
কবিতার জগতে বিপ্লব এনেছিল । কিছুদিন ফুল ফুটবার পরেই রোদের তাপে মিইয়ে
গেলো ! মতপার্থক্য জনিত কারণেই কি আন্দোলন শেষ হয়ে গেলো ? পৃথিবীতে সমস্ত
আন্দোলনই প্রথমে আগুন লাগিয়ে দেয় মানুষের বুকে , আবার আগুন নিভিয়েও দেয়
আন্দোলনের হোতারা , হাংরি ও এর ব্যতিক্রম হোল না কেন?
মলয়: হ্যাঁ, পৃথিবীর সব আন্দোলনই একটা
নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে ; তার কাজ হয়ে গেলে মিলিয়ে যায় ; আন্দোলন
মাত্রেই সমুদ্রের আপওয়েইলিং । হাংরি আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় একের পর এক
কতোগুলো আন্দোলন হয়ে গেছে বাংলা সাহিত্যে । তারা মিডিয়া প্রচার পায়নি বলে
সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি । আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মিডিয়ার
দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলুম, যে কারণে এই মাস তিনেক আগেও বিবিসির
প্রতিনিধি এসে একটা প্রোগ্রাম তৈরি করে নিয়ে গেলেন আর প্রসারণ করলেন । গত
বছর আমেরিকা থেকে অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে একটা ফিল্ম তৈরি করে নিয়ে
গেলেন ; হাংরি আন্দোলন নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বক্তৃতা দেবার সময়ে ওনার
কাজে লাগে ফিল্মটা। হাংরির পর তো কবিতার আর গদ্যের ক্রিয়েটিভ ধারাই পালটে
গেছে ।
মায়াজম : আপনারা কবিতা আন্দোলন করে কি
করতে চেয়েছিলেন ? এতদিন পরে পেছনের দিকে তাকালে কি মনে হয় অল্পবয়সে হুজুকে
চেপেছিল আপনাদের সাহিত্য সাধনা ? আপনারা যা চেয়েছিলেন তার কতখানি সফলতা
অর্জন করেছিলেন ? যদি সফলতা অর্জন করে থাকেন তাহলে ধরে রাখতেই বা পারলেন না
কেন ?
মলয় : না, আমাদের আন্দোলন কেবল কবিতার
আন্দোলন ছিল না । গদ্য-নির্মাণ আর ছবি-আঁকারও আন্দোলন ছিল । ছবি আঁকায় ১৯৭২
সালে অনিল করঞ্জাই ললিত কলা অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন । বাসুদেব
দাশগুপ্তের ‘রন্ধনশালা’ গল্পের বইটা সেই ষাটের দশকেই প্রশংসিত হয়েছিল ; এখন
তো ওর রচনাসমগ্র প্রকাশিত হয়েছে, আর পাঠকদের দ্বারা সমাদৃত হচ্ছে । হাংরি
আন্দোলনের কারণে পাঠবস্তু মুক্ত হয়ে গেছে যুক্তির কেন্দ্রিকতা থেকে; কবিতা
আর গল্প লেখা হচ্ছে মুক্ত-সূচনা, মুক্ত-সমাপ্তি এবং মুক্ত আঙ্গিক নিয়ে ;
মানের নিশ্চয়তা এড়াতে পারছে ; অফুরন্ত মানে গড়তে পারছে; সংকরায়ণ ঘটাতে
পারছে; ‘আমি’কে বহুমাত্রিক আর বহুস্বরিক করে তুলতে পারছে ; শিরোনামের
পরিবর্তে রুবরিক প্রয়োগ করতে পারছে ; ভঙ্গুরতা আনতে পারছে ;
মাইক্রোন্যারেটিভকে গুরুত্ব দিতে পারছে; ফ্লাক্স তৈরি করতে পারছে । এ থেকেই
তো বোঝা যায় যে পরের পর প্রজন্মে সফলতা ক্রমশ চারিয়ে যেতে পেরেছে ।
মায়াজম : হাংরি ভূত কি গায়ে চেপে বসে আছে
এখনও আপনার পরিচয়ের সঙ্গে ? এখন ও যা লেখেন মানুষ তুলনা টানে হাংরি কবিতার
সঙ্গে , এটাকে উপভোগ করেন না খারাপ লাগে ? জীবনের এইপ্রান্তে এসে কি মনে
হয় হাংরি আন্দোলন অন্যকোন ভাবে পরিচালনা করা যেত যাতে এই সময়েও সমান
প্রাসঙ্গিকতা থাকত ?
মলয়: হাংরি আন্দোলনের তো কেউ পরিচালক
ছিলেন না । আমাদের আন্দোলনের কোনো সম্পাদকীয় দপতর, হেড কোয়ার্টার, হাই
কমাণ্ড, পলিট ব্যুরো জাতীয় ব্যাপার ছিল না । যাঁর যেখান থেকে ইচ্ছে বুলেটিন
বা পুস্তিকা প্রকাশ করার স্বাধীনতা ছিল । বাঙালির সাহিত্য চেতনায় এই
ব্যাপারটা ছিল অভাবনীয় । প্রথম দিকে হ্যাণ্ডবিলের আকারে বেরোতো আর ফ্রি
বিলি করা হতো ; যিনি বের করতেন তিনিই বিলি করতেন । কবিতার পোস্টারের
প্রচলনও আমরাই সর্বপ্রথম করি, তখনকার দিনে উর্দু লিথোপ্রেসে অনিল
করঞ্জাইয়ের আঁকা পোস্টার ছাপিয়ে । দেয়ালে সাঁটার কাজটা করতেন ত্রিদিব মিত্র
আর ওনার প্রেমিকা আলো মিত্র । এখন যেটা হয়েছে তা হাংরি নাম ঘাড়ে চেপে
যাওয়ার নয় । যা মাঝে-মাঝে নজরে পড়ে তা হল, মলয় রায়চৌধুরী নামটা আমার লেখার
আগেই পাঠকের কাছে পৌঁছে একটা ইমেজ গড়ে ফেলার । এর জন্য আমার কিছু করার নেই ।
জনৈকা পাঠিকা লিখে জানিয়েছিলেন যে আমার কবিতাগুলোকে তিনি প্রিডেটর মনে
করেন, এবং আমাকে নয়, আমার কবিতার সঙ্গে তাঁর সুপ্ত যৌনসম্পর্ক গড়ে ওঠে তা
তিনি টের পান । অর্থাৎ এ-ক্ষেত্রে আমার নামকে অতিক্রম করে তিনি আমার কবিতার
সঙ্গে সম্পর্ক পাতিয়ে নিয়েছেন । এই তরুণীর চরিত্রটিকে আমি ‘ভালোবাসার
উৎসব’ কাব্যনাট্যে ব্যবহার করেছি । হাংরির ভুতপ্রেত আমার চেয়ে পাঠক-পাঠিকার
ওপর চেপে বসেছে বেশি করে । আর হাংরি আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা না থাকলে তুই
পাঁচ দশক পর বিষয়টা নিয়ে উৎসাহী কেন ?
মায়াজম : স্পষ্টত তখন হাংরি আন্দোলন নিয়ে
বাংলার কবিদল দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল , যারা সঙ্গে থাকব বলেও পরে সরে
গিয়েছিলেন , যারা কিছুদিন থাকবার পরে সরে গিয়েছিলেন , যারা প্রথম থেকেই
বিরুদ্ধে ছিলেন , তাদের প্রতি আপনার কখনও কি মনে হয়েছে যে শিল্প-সাধনার
স্বাধীনতার পরিপন্থী ছিলেন তারা ? কিংবা তাদের সেই সাহস ছিল না ?
মলয় : দু’ভাগ নয়, অনেক ভাগ । লেখালেখির
জগতে এই ধরণের ঘটনা আকছার ঘটে । এটা ব্যক্তিচরিত্রের ব্যাপার, শিল্প-সাধনার
নয় । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমেরিকা থেকে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার
বসু, শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে ওসকাচ্ছিলেন হাংরি আন্দোলন ছেড়ে
বেরিয়া যাবার জন্য । তাঁরা বেরিয়ে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে পুলিশের সাক্ষী হয়ে
যেতেই উনি ফিরে এসে আমার পক্ষের সাক্ষী হয়ে গেলেন আর নিজের বন্ধুদের ছবিটা
বাঙালির ইতিহাসে নোংরা করে দিলেন । মীজানুর রহমান ‘হাংরি কিংবদন্তি’
ধারাবাহিক প্রকাশ করার পর গ্রন্হাকারে বের করতে চাইছিলেন, কিন্তু সেখানেও
শামসুর রাহমানের মাধ্যমে তাঁকে বিরত করা হয় ; করেছিলেন ‘কৃত্তিবাস’ গোষ্ঠীর
কবিরা । স্ট্যালিন যখন পরাবাস্তববাদীদের জেলে পুরছিলেন তখন কয়েকজন
কমিউনিস্ট হয়ে-যাওয়া পরাবাস্তববাদী স্ট্যালিনকে সমর্থন করেন । হুমায়ুন আজাদ
আর অভিজিৎ রায় হত্যা নিয়ে আল মাহমুদ আর নির্মলেন্দু গুণ মুখে লিউকোপ্লাস্ট
লাগিয়ে বসে রইলেন । আল মাহমুদ একজন মৌলবাদী, তাঁর আচরণ বোঝা যায় ।
নির্মলেন্দু গুণ মুখ খুললেন না ভয়ে, এসট্যাবলিশমেন্ট তাঁকে সাহিত্যের
ইতিহাস থেকেই লোপাট করে দিতে পারে এই আশঙ্কায় । পশ্চিমবঙ্গেও গণধর্ষণের
ঘটনা ঘটে, কিন্তু ‘পরিবর্তনওয়ালা’ কবি-সাহিত্যিকরা মুখে লিউকোপ্লাস্ট চিপকে
লুকিয়ে পড়েন । শিল্প-সাধনার স্বাধীনতা তখন কোথায় যায় ?
মায়াজম : মলয় রায়চৌধুরী একটা ব্র্যান্ড ।
মলয় রায়চৌধুরী তকমা ছেপে গেলে অনেক কিছু করে ফেলা যায় যা একটা সাধারণ
শিল্পীর দ্বারা সম্ভব নয় ! আপনার কি মনে হয়নি এতদিন যা লিখেছেন , যা লিখছেন
এসব যেন কিছুই নয় , চরম কিছু বাকি রয়ে গেলো যা এখনও লেখা হোল না ! শেষ
সময়ে এসে কি পেছনে তাকিয়ে হাঁটেন না সামনের পথ তৈরি করার খেলাতে মেতে আছেন ?
মলয় : হ্যাঁ, আসল লেখা এখনও লেখা হয়ে
ওঠেনি ; মগজের মধ্যে ঘটে চলে অনেকরকমের ভাবনাচিন্তা। ব্র্যাণ্ড কিনা তা
জানি না । আমার কতো প্রবন্ধ, কবিতা, উপন্যাস, কাব্যনাট্য গ্রন্হাকারে
প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে । ব্র্যাণ্ড হলে তো কোনো না কোনো প্রকাশক রাজি
হতেন প্রকাশ করতে । কেউই রাজি হন না । অনেকে ছাপার জন্য টাকা চেয়ে বসেন ।
টাকাই যদি দিতে হয় তো নিজেই ছাপিয়ে ফ্রি বিলি করা ভালো, যেমন রবীন্দ্রনাথ
করতেন । কেননা প্রকাশকরা টাকা নিয়ে নাকি যথেষ্ট কপি ছাপেন না, শুনেছি
কয়েকজন তরুণ কবি-সাহিত্যিকের কাছে । পেছনে ফিরে তাকাই না । আমি বইপত্র
সংগ্রহ করি না, নিজের বইও আমার কাছে নেই, তাই আগের লেখাগুলোর সঙ্গে
সম্পর্কটা অবিরাম ছিন্ন হয়ে চলেছে । আমার বইয়ের কোনো লাইব্রেরি নেই ।
বই-পত্রিকা পড়ি, আগ্রহী পাঠকদের বিলিয়ে দিই ।
মায়াজম : যৌবনে শুভা শেষ জীবনে
অবন্তিকা'র মধ্যে দিয়ে প্রেমের ভিন্নতা খুঁজতে চাওয়া কি কোন ভুল সংশোধন ?
নারীকে যখন ভোগ্য , পুরুষকে ও যখন ভোগ্য ভেবে সমস্ত নৈরাশ্যকে প্রশ্রয়
দেওয়া হয় , তখন কি মনে হয়নি শ্মশানের পাশেই হাসনুহানা গাছে কত ফুল ফুটে আছে
, সেই ফুলের শোভা ও নৈরাশ্যর মতই ভীষণ সত্য , ফুলকে উপেক্ষিত করা যায় ?
মলয় : শুভা যৌবনের নয় ; বয়ঃসন্ধিকালের ।
আমার “রাহুকেতু” উপন্যাস পড়লে তুই আমার জীবনের কয়েকজন নারীর সঙ্গে পরিচিত
হতে পারবি । “ভালোবাসার উৎসব” কাব্যনাট্যেও আছেন তাঁরা । আমার ‘অলৌকিক
প্রেম ও নৃশংস হত্যার রহস্যোপন্যাস’ বইতে একটি নারী চরিত্র আছে যে একজন
আধচেনা পুরুষের হাত ধরে বলে ওঠে, ‘চলুন পালাই’ । এটা আমার জীবনে একজন নারীর
প্রবেশের প্রয়াস ছিল । অবন্তিকা একটি নির্মিত প্রতিস্ব । এর আগে রামী,
বনলতা সেন, নীরা, নয়ন, সুপর্ণা ইত্যাদি ছিল কবিদের নিজস্ব নারী । অবন্তিকা
সেরকম নারী নয়, সে স্বাধীন, পাঠকের কাছে, আলোচকের কাছে, নির্দ্বিধায় যায় ।
অবন্তিকা আমার স্লেভগার্ল নয় ।
মায়াজম : এই সময়ের কবিতার ভবিষ্যৎ কি ?
এই সময়ের কবিতা কোনপথে এগিয়ে গেলে হাংরি যেখানে শেষ করেছিল সেখান থেকে শুরু
করা যাবে ? নাকি এখনকার কবিরা গোলকধাঁধায় পড়েছে , কি করবে না করবে কিছুই
যেন লক্ষ্য নেই তাদের সামনে ? নাকি এখনকার কবিতা সমাজ রাষ্ট্র সময় থেকে সরে
যাওয়া কোন জাফর শা ? কোন উত্তাপ লেগে নেই তাদের হৃদয়ে ?
মলয় : এখন তো অনেকের কবিতা পড়ে আমার
হিংসে হয়; অসাধারণ কবিতা লিখছেন এখনকার কবিরা । মনে হয় শব্দ বাক্য ছন্দ সবই
তো রয়েছে, আমি কেন এদের মতন লিখতে পারছি না । যেমন রাকা দাশগুপ্ত,
সাঁঝবাতি, মুজিবর আনসারী, বিভাস রায়চৌধুরী, অনুপম মুখোপাধ্যায়, বিদিশা
সরকার, বহতা অংশুমালী, মিচি উল্কা প্রমুখ । সব নাম এক্ষুনি মনে আসছে না ।
মায়াজম : কবির চেতনায় কোন না কোন পূর্বজ
কবির একটি আদর্শগত ধারাপাত থেকে যায়, এটা প্রাচীন কাল থেকেই লক্ষণীয় ,কবি
অগ্রজ কোন কবির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন ? আসলেই কে কাউকে সামনে রেখে
এগিয়ে যাওয়া যায় সাধনায় ? যদি যায় কতদূর গিয়েই বা ফিরে আসা উচিত নিজের
চেতনায় ?
মলয় : শৈশবে আমাদের পরিবারে শিউনন্দন
কাহার আর বাবার ফোটোগ্রাফি দোকানে রামখেলাওয়ন সিং ডাবর, দুজন কাজের লোক ছিল
। শিউনন্দন নিরক্ষর হলেও পুরো রামচরিতমানস মুখস্হ ছিল । রামখেলাওয়ন রহিম,
দাদু আর কবির থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারত । তারা কাজের লোক ছিল বলে সরাসরি
বকুনি দিতে পারত না, কিন্তু রামচরিতমানস বা রহিম-কবির-দাদু থেকে কোট করে
জানিয়ে দিত আমরা কী ভুল করছি । আমার বাল্যস্মৃতি “ছোটোলোকের ছোটোবেলা”র ‘এই
অধম ওই অধম’ অংশে আমি তাঁদের উদ্ধৃতি দিয়ে নিষেধ করার কিছু উদাহরণ দিয়েছি ।
অগ্রজ কবিদের বদলে এই দুই জনের প্রভাব আমার ওপর গভীরভাবে পড়েছিল । তাছাড়া,
আমাদের বাড়িতে প্রথম স্কুলে পড়তে ঢুকেছিলেন আমার দাদা সমীর রায়চৌধুরী ।
আমাদের পরিবার সেই অর্থে শিক্ষিত-সংস্কৃতিমান পরিবার ছিল না । বাবা-মা আর
জেঠা-কাকারা কেউই স্কুলে পড়েননি । বাবা-জেঠারা সুযোগ পাননি কেননা ঠাকুর্দা
ছিলেন ভ্রাম্যমান ফোটোগ্রাফার-আর্টিস্ট, বেশির ভাগ সময় কাটাতেন প্রিন্সলি
স্টেটের সদস্যদের পেইনটিং আঁকায় ; উনি সপরিবারে মুভ করতেন এক জায়গা থেকে
আরেক জায়গায় । আমার বাবা তো জন্মেছিলেন লাহোরে । গোঁড়া বামুন পরিবার ছিল
বলে ঠাকুমা আর বড়োজেঠা রবীন্দ্রসঙ্গীতকে মনে করতেন বেমমো ; বহুকাল
রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ ছিল আমাদের বাড়িতে ।
মায়াজম : প্রতিটি সফল পুরুষের পিছনে নাকি
একজন নারী শক্তি বিরাজ করেন ।আপনার কলমের প্রাণোচ্ছল পরিনতির জন্য কোন
নারীশক্তিকে কি আধার মানতে চান ?কবি কলম দূর্ধষ রোম্যান্টিক, এই
রোম্যান্টিসিজম এখনো কি প্রেমে পড়তে বাধ্য করে ?আপনার কলমে যে নারীদের পাই
তারা কি শুধুই কল্পনারী নাকি বাস্তবেও তাদের ছোঁয়া আছে ?
মলয় : না, আমার পেছনে কোনো নারী নেই,
মানে প্রেমিকা-নারী নেই । তবে সাপোর্ট সিস্টেম হিসাবে মা ছিলেন । যে
নারীদের আমার লেখায় পাস, তারা কল্পনারী নয়, বাস্তবের নারী, একমাত্র
অবন্তিকা হল বিভিন্ন নারীর উপাদান নিয়ে নির্মিত একটি প্রতিস্ব । ‘চলুন
পালাই’ পর্ব থেকে আমি আর প্রেমে পড়তে চাই না । রোম্যান্টিক হওয়াটাই আমাকে
বিপদে ফেলেছে বারবার । বড্ড ডিসট্র্যাকশান হয় প্রেমে । বুড়ো হয়ে গেছি বলে
বলছি না, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ।
মায়াজম : একদম সর্বশেষ প্রশ্নটা করেই
ফেলি , আগামীদিনে আপনার পরিকল্পনা কি ? নতুন কি কোন পরিকল্পনা আছে লেখালেখি
নিয়ে ? পাঠকরা কি নতুন স্বাদের কিছু পেতে চলেছে আপনার কলম থেকে ?
মলয় : তোরা তো আমার লেখাপত্র যোগাড় করে
পড়িস না । কমার্শিয়াল পত্রিকায় আমার লেখা বেরোয় না যে হাতে পাবি।
‘রাহুকেতু’ উপন্যাসে লেভেল-জামপিং আর ফ্রো-টু আঙ্গিক দেবার কাজ করেছি ।
‘ঔরস’ উপন্যাসে ফর্ম ভেঙে মানুষের পাশাপাশি মাছিদেরও টিভি সাংবাদিকের
চরিত্র দিয়েছি । ‘গল্পসংগ্রহ’তে বিভিন্ন জীবজন্তু পাখিপাখালিকে
রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক মানুষের ভূমিকা দিয়েছি । চটকল আর পাটচাষের দুর্দশা
নিয়ে ‘নখদন্ত’ উপন্যাসটায় ডায়েরি, নোটস, সত্য ঘটনা আর কাহিনির মিশেল দিয়েছি
। ‘জঙ্গলরোমিও’ নামে একটা উপন্যাস পুজোর সময় প্রকাশিত হবার কথা, যার গল্প
একদল ক্রিমিনালদের নিয়ে, সেখানে কারোর নাম উল্লেখ করা হয়নি, তাদের সংলাপের
ঢঙই তাদের পরিচয়। এলেকট্রা কমপ্লেক্স নিয়ে একটা নভেলাও প্রকাশিত হবে পুজোর
সময় বা পরে, তাতেও ফর্মের নিরীক্ষা করেছি ।
বুধবার
শীলা চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় : অনিন্দিতা চৌধুরী
“ভালোবাসা পেলে আমি কেন পায়সান্ন খাবযার সব আবেদন নগণ্য হয়ে যায় ভালোবাসার কাছে, তেমনই কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তার জীবনে প্রেম এসেছিলোও অত্যন্ত সরব উপস্থিতি নিয়ে। মলয় রায়চৌধুরীর দাদা সমীর রায়চৌধুরীর শ্যালিকা শীলা চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমে পড়েন তিনি। একসাথে অনেকটা সময়ও কাটান তারা। শীলা কলেজে গেলে বাইরে গাছতলায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতেন শক্তি। ধারণা করা হয়, সেই অপেক্ষারই ফসল ছিল ‘হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো।
যা খায় গরীবে, তা-ই খাব বহুদিন যত্ন করে”
সমীর রায়চৌধুরী চাকরিজনিত কাজে বাইরে গেলে বাড়িতে মাঝেমাঝে শক্তিকে রেখে যেতেন এবং বলাই বাহুল্য যে এ কাজটি তিনি বেশ আগ্রহের সাথেই করতেন! একবার তো এতদিন থেকে গিয়েছিলেন যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার খোঁজে গিয়ে বলেন, “তুই এখানে ইস্টিশান পুঁতে ফেলেছিস ?” কিন্তু দুঃখের বিষয়, সে প্রেম পরিণয় পর্যন্ত গড়ায়নি এবং এই ব্যর্থতা তার জীবনে বেশ গভীর দাগ কাটে। সাহিত্যজীবনেও এর বেশ প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।
এ নিয়ে তার লেখা ‘কিন্নর ও কিন্নরী’ উপন্যাসটি প্রকাশ পায় ১৯৭৭ সালে। এটি ছাড়াও ‘অম্বা ও দেবব্রত’, ‘রামচন্দ্র ও শর্বরী’, ‘সোম ও তারা’, ‘অর্জুন ও উত্তরা’ নামক চারটি ব্যর্থ প্রেমের উপন্যাস তিনি উপহার দেন বাংলা সাহিত্যকে, যার উৎসও মনে করা হয় তার নিজের জীবনে প্রেমের ব্যর্থতাকেই। উল্লেখ্য, এই উপন্যাসগুলোর সবগুলোই পৌরাণিক চরিত্র কেন্দ্রিক।
১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি হাংরি বুলেটিনে শক্তির কবিতা বেরুতো এবং তিনি এ আন্দোলনে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তার ডাকেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, বিনয় মজুমদার প্রমুখ। কিন্তু পরে আন্দোলন থেকে তার দূরে সরে যাওয়া এমনকি নিজেকে নিরাপদে রাখতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে তার কিছু কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। তিনি যে নিজেকে পুরোপুরি এ আন্দোলন থেকে সরিয়ে নিয়েছেন, তার প্রমাণ করতে তিনি পুলিশের কাছে আন্দোলনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যও দেন। এবং তখন তার ডাকে যোগদানকারীরাও আন্দোলন থেকে পিছু হটে।
হাংরি আন্দোলনের সহযোদ্ধা মলয় রায়চৌধুরীর ভাষ্যমতে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এ আন্দোলন ত্যাগ করার পেছনেও একটি প্রধান কারণ ছিল এই ব্যর্থ প্রেম। শীলার সাথে বিচ্ছেদের পর তার মনে হয় যে জীবনে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক হতে পারলেও শীলার পিতা তাকে মেনে নিতেন এবং অর্থচিন্তা তখন তাকে অনেকটাই পেয়ে বসে। এরপর ১৯৬৩ সালে একটি সংবাদপত্রে চাকরির প্রস্তাব পান শক্তি। কিন্তু চাকরির শর্ত ছিল, তাকে হাংরি আন্দোলন ছাড়তে হবে। এ কারণেই হাংরি আন্দোলনের প্রতি অতীতের বহু সংযুক্তির পরও তা থেকে শক্তি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন ।
মলয় রায়চৌধুরীর কয়েকটি অধুনান্তিক বা পোস্টমডার্ন কবিতা
একটি পোস্টমডার্ন সনেট
যে ~ পো্স্টমডার্ন ~ নাতিদীর্ঘ ~ সনেট ~ যে
যে ~ হ্যাঁ, ভাবুন, ভাবুন, বলা হয়েছে ভাবতে, ভাবুন ~ যে
যে ~ আমি বটানিকালের বটগাছ যার গুঁড়ি খুঁজছেন ~ যে
যে ~ আমি বেসনে ফ্রাই বকফুলের বড়া বাসরঘরে খেয়েছিলেন ~ যে
যে ~ এ তো এখন বুড়ো কুমির, কামড়ে মাংস ছিঁড়ে খাবে এমন নয় ~ যে
যে ~ আমি কিউরিও-দোকানের দোয়াত, কলমে নিব চেরা ~ যে
যে ~ পিঁপড়ের মৃত্যুতে শোকসভায় কবিতাপাঠ হয় না ~ যে
যে ~ জজসাহেব তো মৃত্যুদণ্ড দিয়েই খালাস ~ যে
যে ~ ফাঁসুড়ে হিসেবে আমার নামডাকে কান দিলেন না ~ যে
যে ~ কাফকা ফ্রায়েড চিকেন আসলে কেএফসি ~ যে
যে ~ নদীর মৃত্যুতে পুরসভায় শোকসভা হয় না ~ যে
যে ~ খেয়েছে সে দুঃখের আরশোলার পেটে জন্মাবার ফলে ~ যে
যে ~ পাঁজর গোনার বয়সে পৌঁছোতে ~ হাঁপায় ~ যে
যে ~ কৌতূহল ~ আর কীই বা জাগাবে ~ যে
যে ~ প্রথমে সামনের পা তারপর পেছনের পা তুলে ধনুকের মতন ~ যে
যে ~ ঘোড়ার মৃত্যুতে সহিসের বাড়িতে শোকসভা ~ যে
যে ~ লাফ দিতে ~ পারবে না সেই কুচকুচে ঘোড়ার ঢঙে ~ যে
যে ~ নিজের ~ পাদপ্রদীপ নিয়ে উড়তে থাকে ~ যে
যে ~ খুরে-খুরে গড় শুনে টের পায় না গাধা গোরু মোষ ঘোড়া ~ যে
যে ~ জীবনে জেব্রার পিঠে চেপে ~ হায়েনার কান্না এড়িয়েছিল ~ যে
যে ~ বাতি আর আগুন নেভানোর সঙ্কটধ্বনির মানে না-বুঝে ~ যে
যে ~ সুমিষ্ট আর সুগন্ধ ভোজনের সবুজ ঘাস খেয়ে ভাবছিল ~ যে
যে ~ ভেবে ভেবে ~ ভবিদের ভোলানো গেল না ~ যে
যে ~ বীর সিংহের কোমরবন্ধে ঝোলানো খাপে ~ যে
যে ~ বাতাসের মৃত্যুতে উড়োজাহাজের শোকসভা ~ যে
যে ~ টেস্টটিউব খোকাখুকুদের জগতসংসারের নোংরামি থেকে ~ যে
যে ~ বাঁচাতে চেয়েছিল ~ উপায় নেই বলে ~ যে
যে ~ মহৎ মানুষ কেবল নিজের কাজের জন্যই জন্মায় ~ যে
যে ~ নিরো কিংবা নিরোনীর হুমকিতে কুঁকড়ে যেতে বাধ্য ~ যে
যে ~ শিল্পী মাত্রেই ~ উন্নতমানের ঝাড়ুদার ~ যে
যে ~ শব্দের পেটে কপচানি ঢুকিয়ে ভয় দেখাতে পারে ~ যে
যে ~ পিতৃতন্ত্র আর মাতৃতন্ত্র লোপাট হয়ে হিজড়েতন্ত্রের বোদ্ধা ~ যে
যে ~ বইয়ের পাতায় দরোজাগুলোয় উই ধরায় ~ যে
যে ~ বনলতা সেনের চেয়ে জাঁ দুভালের পালতোলা টান ~ যে
যে ~ আবসাঁথ না পেলে আর কোনোদিন মদ ছোঁবো না ভাবতেই ~ যে
যে ~ কিসের লোভে কার্ডধারীরা মুখ বুজে সবকিছু মেনে নিতো ~ যে
যে ~ নদীর মিল্কশেক জল চটচটে হয়ে যেতে থাকে ~ যে
যে ~ দেশ মরলে রাজনীতিকদের আনন্দসভা ~ যে
যে ~ বৃষ্টিতে ~ যে ~ টেলিফোন বুথের প্রাগৈতিহাসিক স্মৃতি ~ যে
যে ~ কাগজের কাপে ব্যথার জীবানু ~ চুমুক দিই ~ যে
যে ~ রবিশংকরে শ্রীশ্রী যোগ করে দেখি বীণা বিয়োগ ~ টাকা ~ যে
যে ~ টুথপেস্টগুলোয় ভ্যানগঘের রঙে দাঁত মাজার ~ যে
যে ~ সব্যসাচী নাম হলেও অর্জুন নয় ~ সাক্ষাৎ বকাসুর ~ যে
যে ~ রক্তমাংসের ধুমকেতু ভোটে জিতলে বাজি পোড়ে ~ যে
যে ~ এই বছর প্রতিটি মাসই বৈশাখ ~ পাঁজি ~ দেখতে ~ যে
যে ~ ফুলশয্যার অ্যামেচার প্রেমিক ~ হটেনটট ভেনাস ~ যে
যে ~ পেছন থেকে চোখ টিপে-ধরা রাষ্ট্রের হাত ~ যে
যে ~ কাক মরলে কাকেদের শোকসভায় বিরক্তি ~ যে
যে ~ প্রেমিকার অপেক্ষায় ছুরিতে শান দিয়ে রান্নাঘরে ~ যে
যে ~ ভিতুদের পুরস্কৃত করার প্রকল্পে ~ কাকাতুয়া ~ যে
যে ~ মুখ থুবড়ে পড়ার মেটাফর ~ হামিংবার্ড ~ টুনটুনি নয় ~ যে
যে ~ মানুষের মৃত্যুতে কেউ শোকসভা কেউ মজাসভা ~ যে
যে ~ যে ~ যে ~ যে ~ যেমন চলছে তেমন চলুক ~ যে ~ যেএ-৪ মাপের কাগজে
এ-৪ মাপের কাগজের একেবারে মাঝখানে ইন্সপেক্টর অ. ব্যা.
হদিশ পাচ্ছিলেন না নামগুলোর মালকিনি কারা
অ্যাসিসস্ট্যান্ট ইন্সপেকটরের মতে এই মেয়েগুলোই অ. ব্যা-কে
খুন করেছে, কিন্তু কেন লেখা, “আমার মৃত্যুর জন্য কেহ…”
যতোগুলো থানায় ইন্সপেক্টর অ. ব্যা-এর পোস্টিঙ হয়েছে
কন্সটেবলরা জানতো উনি প্রতিদিন সকালে গায়ত্রীমন্তর
গুজগুজ করে পড়েন
অথচ ইন্সপেক্টর অ. ব্যা-এর বাড়িতে পুজোর ঘর পাওয়া যায়নি
গঙ্গাজল পাওয়া যায়নি, পাঁজিও না
কিন্তু একটা ঘরে রঙিন ফোলানো গ্যাস-ভরা কনডোম পাওয়া
গেছে, সেই ঘরে তারা নিজের ইচ্ছেয় উড়ছিল
বেলুন ফোলাবার সিলিণ্ডারও পাওয়া গেছে, ঘরের ভেতরে ঢুকে
কমিশনার সায়ের লাফিয়ে লাফিয়ে যতোই অন্তত একটা
কনডোমকে নাগালে আনার চেষ্টা করেন, সেগুলো পালিয়ে
সিলিঙে গিয়ে ফিকফিকিয়ে হাসে
মেঝেয় খুঁজে পান একটা গ্যাস-ফুরোনো কনডোম তাতে কালি ওঠে না
এরকম রঙ দিয়ে একজন মেয়ের নাম লেখা
মেয়েটি কে মেয়েটি কে মেয়েটি কে মেয়েটি কে মেয়েটি কে মেয়েটি
যে কে তা একজন কন্সটেবল বলতে পারল
“হুজুর ও তো বেপাড়ার, এ-৪ কাগজে যতো নাম আছে সবই তার মানে
বেপাড়ার”
এ-৪ তালিকা নিয়ে অ. ব্যা-এর পোস্টিঙের শহরে বেপাড়ায় ঢুঁ মেরে
কমিশনার শ. চ্যা. বিশেষকিছু জানতে পারলেন না
তিনি তো আর খদ্দের হয়ে জাননি, পুলিশ হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে দেখে
মেয়েরা নিজের অন্য নাম বলেছে, কেননা রোজ সন্ধ্যায় ওদের
নামবদল হয়
শেষকালে অ.ব্যা. সম্পর্কে গুজবই কাজে দিল । অ. ব্যা, গায়ত্রীমন্তর
পড়ার সময়ে রগের ওপরে পিস্তলের নল ঠেকিয়ে পড়তেন
তিনি মনে করতেন যে যদি বেপাড়ায় যাওয়া পাপই হয় তাহলে
৯ এমএম গুলি তাঁর মগজ ফুঁড়ে বেরিয়ে যাবে
তবু তেমন সুরাহা হল না কেননা পিস্তলের ট্রিগারে কারোর
আঙুলের ছাপ পাওয়া গেল না । শ. চ্যা. ফাইলে লিখলেন
“কেস ক্লোজড; কনডোমগুলো ভালো কোম্পানির । ৩৫৯৭টা
কনডোম । অফিসারের ভবিষ্যৎ উজ্জল ছিল । মরণোত্তর
সম্বর্ধনা দেয়া হউক ।”গী এবং আ-এর প্রেম
আ কেন আত্মহত্যা করেছিল তা ওর স্ত্রী গী-এর উথালিপাথালি চিৎকার থেকে
ছেঁকে জানতে পারছিলুম
গী বলছিল, ছি ছি ছি ছি প্যাসেঞ্জার ট্রেন ছাড়া কোনো সুপারফাস্ট ট্রেন
পাওনি গো ! তুমি সবেতেই ফেল করে গেলে গোওওওওওও
গী-এর কান্না আমার বেজায় ভালো লাগছিল, মনে মনে বলছিলুম, আরো কাঁদ
আঁচলখসা বুকের ধবধবে মাখন, আগে তো দেখিনি, আহা
আ কোনো চিরকুট লিখে যায়নি, বেশ করেছে, গী এখন বুঝুক ঠ্যালা, পুলিশ
গী অতিসুন্দরী বলে আ কোনো যৌতুক নেয়নি, চাউনিতেই ঘায়েল
হয়ে গিয়েছিল, বিছানায় বিফল হয়ে গেল, কেন !
গী ভার্জিন থেকে গেল । এর পর যদি গী কাউকে বিয়ে করে সে কি
অবন্তিকার কমপ্লেকসিটি
শ, যে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, অবন্তিকার প্রেমিক নং ১, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়বার সময়ে ওর সঙ্গে ইংরেজিতে
প্রেম করতো ।
শ-এর বাবা জ ( দুই ) ফরাসিদেশ থেকে হটেনটট ভেনাসের যোনি
কিনে এনেছিলেন ( কথিত আছে )।
জ ( এক ) যিনি অবন্তিকার মেশোমশায়, তা জানতে পারেন, শ-এর
বাড়ি যেতে বারণ করে দ্যান।
অলোকনন্দা গোস্বামী দোলের দিন রঙ খেলতে চায়নি বলে শিফন
শাড়ি পরেছিল।
অবন্তিকার খুব ঈর্ষা হল, শিফন শাড়ি দিয়ে অলোকনন্দার মাইয়ের
খাঁজ দেখা যাচ্ছিল ।
জ ( দুই ) নামকরা পেইনটার, উনি কেবল যুবতীদের খাঁজ আঁকেন,
কলকাতার কালবৈশাখিতে অনেকের খাঁজে জল চুয়েছিল
অবন্তিকার মনে হতো প্রেম কেবল মাতৃভাষায় সম্ভব, একদিন
অ্যানাইস নিনকে লেখা হেনরি মিলারের চিঠি পড়ে বুঝতে
পারলো যে শ বই থেকে টুকলিফাই করেছিল ।
ক্লাসটিচার সিসটার ব ( এক ) আয়ারল্যাণ্ডে ফিরে গেলেন, তাঁর
বদলি টিচার কেরালার, সিসটার আইয়াক্কম ।
জ ( দুই ) কেরালার টিচারকে বাইবেল উপহার দিলেন, যাতে কালচে
খাঁজ আঁকতে পারেন ।
অবন্তিকা ২নং প্রেমিক খ ( তিন ) এর দিকে ঝুঁকলো, কেননা
সে স্কুলে বাংলায় প্রথম হতো আর অবন্তিকার মেসোর
ওপন হার্ট সার্জারির খরচ দিয়েছে।
প্রতিদান হিসেবে অবন্তিকা খ ( তিন ) কে ব্লাউজে হাত ঢুকিয়ে
টিপতে অনুমতি দিয়েছিল ( আহা কী আনন্দ )।
মিস্টার শৈলেন বোস মারা গেছেন । মিস্টার অজিত গাঙ্গুলিও।
অবন্তিকা ওনাদের নাম শোনেনি ।
দ ( দুই ) এর দপতরে শ চাকরি করতে গেল ; খ ( তিন )
ইটালির একজন ছাত্রীর সঙ্গে চলে গেল বিদেশে ।
প্রেম সম্পর্কে অনির্বাণের কোনো ধারণা গড়ে ওঠার আগেই র-নামের
স্কুল থেকে সে দ-নামের কলেজে ভর্তি হবার পর অবন্তিকা
যাকে সবাই অবু বলে ডাকতো, পরিচয়ের প্রথম দিনেই বললে
আমি ডেটিং-ফেটিং করি না।
অনির্বাণ, যে জ ( দুই ) এর জারজ ছেলে, উত্তরে বলেছিল, আমিও
ফাকিং-সাকিং করি না । বেচারা ন্যাড়া বোষ্টম হয়ে গেল।
“মেয়েদের মাসিক প্রকাশ করা উচিত নয়”, সাইনবোর্ডে লেখা, তলায়
পেইনটিঙ, জিনস-পরা যুবতীর মাসিক হবার রক্ত লেগে।
পত্রিকার নাম ‘আরেত্তেরি ইস কি মা কা আঁখ’ ।
পড়ার পর অবন্তিকা নিজের পাছায় হাত দিয়ে চেক করে নিল। নেই।
যুবতী সাইনবোর্ড থেকে নেমে জিগ্যেস করল, পাতা ফুঁকবে?
মইনুদ্দিন খানের কাঁধে হাত রেখে জ ( এক ) নির্বাচনে কজন মারা
গেছে তা আলোচনা করতে-করতে গেল।
কালবৈশাখির মেঘ একটু একটু করে জমা হচ্ছে, ছাতা আনেননি
কেরালার টিচার, ওনার খাঁজ অতিপবিত্র, দেখানো যাবে না
বৃষ্টির জল তা মানতে বাধ্য নয় ।
শ একদিন জানতে পারলো তার বাবা জ ( দুই ) যাকে হটেনটট
ভেনাসের যোনি বলে সকলকে ঈর্ষায় পুড়িয়েছেন তা আসলে
ফরম্যালিনে চোবানো বড়ো বাদুড়
খবরের কাগজে সংবাদটা পড়ে ম, যার সঙ্গে স্নাতকোত্তর পড়ার সময়ে
অবন্তিকার পরিচয় হবে, নিজেকে বলেছিল কি লজ্জা কি লজ্জা
মরা বাদুড় দেখেও লিঙ্গোথ্থান হয় ।
অনির্বাণ বোষ্টম হয়ে এক সুন্দরী বোষ্টমীকে ফাঁসিয়েছে, কী কুক্ষণে যে
লটারির টিকিট কিনেছিল দশ লক্ষ টাকা পেয়ে চুল গজালো।
অবন্তিকা একদিন ম-কে কাফে কফি ডে-তে বললে যে ওর একটা মাই
কেউ এখনও টেপেনি ।
ম বলেছিল, চিন্তা করিসনি, আমি টিপে দেবো । ম এমনই চরিত্রহীন যে
তার আগেই শ-এর খুড়তুতো বোনের মাই টেপার অফারের
সদ্ব্যাবহার করে ফেলল।
খবরের কাগজের উত্তর সম্পাদকীয়তে হটেনটট ভেনাসের আসল যোনি
আর জ ( দুই )-এর বাদুড় যোনির তুলনা প্রকাশিত হলো।
পেইনটিঙের সমালোচকরা আবিষ্কার করলেন জ ( দুই ) এর খাঁজের
তেলরঙগুলো আসলে বাদুড়দের ছবি ।
ম একদিন অবন্তিকাকে প্রস্তাব দিল যে পূর্ণিমার রাতে সেন্ট্রাল পার্কের
ঘাসে ফুলশয্যা করা যাক ।
ম-এর মা ট ( দশ ) পার্কে সঙ্গমরত দুজন মানুষকে ভাবলেন ভুত আর
ভুতনির অষ্টাঙ্গদশা, দেখেই দুহাত তুলে দৌড়োলেন ।
ম-এর বড়ো ভাই প ( এক ) মাকে দৌড়ে আসতে দেখে সাপ মারার
লাঠি নিয়ে পার্কে ছোটোভাইকে দেখে চটে গেলেন।
ম-এর মা ট ( দশ ) বড়ো ভাই প ( এক ) কে স্তোক দিলেন যে তোকে
তিনচারটে মেয়ের সঙ্গে একই দিনে বিয়ে দেবো।
ট ( দশ ) এর ছোটোবোন ট ( নয় ) যে জ ( এক )-এর ডিভোর্সি বউ
তা কেবল অবন্তিকা আর ম জানতো।
ট ( নয় ) ম-কে বললেন, ঘাসে লীলেখেলা করিস কেন রে, হাঁটু ছড়ে
যাবে, আমার বাড়ির ব্যবহার-না-করা বিছানা তো ছিলই।
ট ( নয় ) এর ব্যবহার-না-করা বিছানায় লিলেখেলা করার সময়ে ম-কে
অবন্তিকা বললে, তুমি আমার প্রেমিক নং ১৮ ।
ম অবাক হলো যে এর আগে সতেরোজন প্রেমিক কি বিছানার চাদরে
রক্ত মাখাতে পারেনি !
অবন্তিকা ম-কে জানালো যে জ ( এক ) যিনি ওর মেসোমশায় তিনি
এই শহরের ভার্জিনিটি রিপেয়ার বিশেষজ্ঞ ।
শ, যে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, জ ( এক )-এর ভার্জিনিটি রিপেয়ারের
হিসেব রাখে, তার কাছ থেকে ম জানতে পারলো যে এই শহরের
প্রতিটি ভার্জিনের ভার্জিনিটি রিপেয়ার করা ।
জ (এক ) আর জ ( দুই ) দুজনেই তাঁদের স্হাবর-অস্হাবর সম্পত্তি ম
আর অবন্তিকাকে লিখে দিয়ে গেছেন ।
ম আর অবন্তিকা ছেলে মেয়ে বউ জামাই নাতি নাতনি নিয়ে এখন সুখে
থাকার চেষ্টা করে অথচ পারে না ।
আরেত্তেরি ইস কি মাঁ কা আঁখ
কন্ঠস্বরে শাকাহারি ঘুর্ণি
এই কথার মানে আমি জানি কিন্তু তরুণীটিকে চিনতে পারলুম না
ওফ, তরুণীটির সে কি ঘেমোত্বকের স্ফূলিঙ্গ
ওই স্ফূলিঙ্গ আমি চিনি, সে কথায় পরে আসছি
এমন নয় যে আমার চামড়ায় রুই মাছের আঁশ আছে বলে
তারপর চোখের আলোয় চোখের ভেতরে দেখতে পেতেন
আর বাড়ি ফিরে তাদের স্কেচ আঁকতেন পয়সা খরচ হতো না
মিকেলাঞ্জেলো, রুবেন, এদুয়ার্দ মনে, এগোন শেলে
দিয়েগো ভেলাসকোয়েজ এত্তোজন বিরাট বিরাট শিল্পী
রবীন্দ্রনাথের আঁকা জলরঙটা আমায় দিয়ে গালে চুমু খেয়ে
ফরাসি ভাষায় নগ্নিকা যা বললে তা ওই ঘেমোত্বকের
লেবেলসমূহ:
Adhunantika Poetry,
Postmodern Poetry,
Uttaradhunik Poetry
মঙ্গলবার
হাংরি আন্দোলনের কবিতায় প্রতিবাদের উৎস : মোমিন মেহেদী
মোমিন মেহেদী | |
মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০১১ | |
হ্যান্ডবিলের আকারে সাহিত্যকৃতি প্রকাশের পেছনে ছিল সময়কেন্দ্রিক ভাবধারাকে চ্যালেঞ্জের প্রকল্প । ইউরোপীয় সাহিত্যিকদের পাঠবস্তুতে তো বটেই , মাইকেল মধুসূদন দত্ত-র প্রজন্ম থেকে বাংলা সন্দর্ভে প্রবেশ করেছিল শিল্প-সাহিত্যের নশ্বরতা নিয়ে হাহাকার । পরে, কবিতা পত্রিকা সমগ্র, কৃত্তিবাস পত্রিকা সমগ্র, শতভিষা পত্রিকা সমগ্র , ইত্যাদি দুই শক্ত মলাটে প্রকাশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপের এই নন্দনতাত্বিক হাহাকারটিকে । পক্ষান্তরে, ফালিকাগজে প্রকাশিত রচনাগুলো দিলদরাজ বিলি করে দেয়া হতো , যে-প্রক্রিয়াটি হাংরি আন্দোলনকে দিয়েছিল প্রাকঔপনিবেশিক সনাতন ভারতীয় নশ্বরতাবোধের গর্ব। সেইসব ফালি কাগজ, যাঁরা আন্দোলনটি আরম্ভ করেছিলেন, তাঁরা কেউই সংরক্ষণের বোধ দ্বারা তাড়িত ছিলেন না, এবং কারোর কাছেই সব কয়টি পাওয়া যাবে না । ইউরোপীয় সাহিত্যে নশ্বরতাবোধের হাহাকারের কারণ হল ব্যক্তিমানুষের ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্রিয় ভূমিকা প্রদান । যে-ট্র্যাজেডিভাবনা গ্রেকো-রোমান ব্যক্তি-এককের পতনযন্ত্রণাকে মহৎ করে তুলেছিল; পরবর্তীকালের ইউরোপে তা বাইবেলোক্ত প্রথম মানুষের 'অরিজিনাল সিন' তত্বের আশ্রয়ে নশ্বরতাবোধ সম্পর্কিত হাহাকারকে এমন গুরুত্ব দিয়েছিল যে এলেজি এবং এপিটাফ লেখাটি সাহিত্যিক জীবনে যেন অত্যাবশ্যক ছিল। ১৯৬১ সালের নভেম্বরে, কালীপুজার রাতে যে বুলেটিন প্রকাশিত হল, তা হল ইংরেজিতে । অনেকে পৃষ্ঠপট না জেনেই মন্তব্য করতেন যে বাংলা সাহিত্যের আন্দোলন কি না শুরু করা হল ইংরেজি ভাষায় । ইতিহাসের দায় মিটিয়ে লেখা কবিতা কখনোই কবিতা হয় না। চিরন্তন এই সত্যকে ধারন করে এগিয়ে চলে কবিতা। পৃথিবীতে সব কালে, সব দেশে কবিতার ইতিহাস ও রাজনীতি সংলগ্নতা একটি স্বাভাবিক ও সার্বজনীন বিষয়। বিশেষ ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পটভূমিতেই যে মহৎ কবি ও কবিতার জন্ম হয়, তা এমন কোন কাব্যপ্রেমিক নেই যে বিশ্বাস করে না। কবি পাবলো নেরুদা, ফেদোরিকা গার্সিয়া লোরকা, নাজিম হিকমত, পাউল সেলান, সিমাস হিনি, কাজী নজরুল ইসলাম ও আরো কত শত কবি যে ইতিহাসের দায় মিটিয়ে বড়ো কবি সে কথাতো স্কুলের শিশুরাও জানে । |
বিশ্বকবিতার প্রেক্ষিতে হাংরি আন্দোলনের কবিতা : বীরেন মুখার্জি
বিশ্বকবিতায় ফরাসি সিম্বলিজম, একজিস্টেন-শিয়ালিজম, ফিউচারিজম, ইম্প্রেশনিজম
কিংবা স্যুরিয়ালিজমের মতো আন্দোলনগুলো ছিল সময় ও কালকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার
ক্ষেত্রে এক দৃঢ় অঙ্গীকার। এসব আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়,
কবিগোষ্ঠীর হাতে ‘নতুন প্রপঞ্চ বিনির্মাণের আগে পূর্ববর্তী সামাজিক,
রাষ্ট্রিক, অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখেই কবিদের এগোতে হয়। একটি
নতুন সাহিত্য-আন্দোলন দানা বাঁধে তখনই, যখন তার সম্পূর্ণ উপাদান সমাজদেহের
অভ্যন্তরে একটু একটু করে বেড়ে উঠতে থাকে।’ বাংলায়ও কয়েকটি কবিতা আন্দোলনের
তথ্য মেলে। ষাটের দশকে পশ্চিম বাংলার ‘হাংরি জেনারেশন’ বা ‘শ্রুতি আন্দোলন’
কিংবা বাংলাদেশের ‘স্যাড জেনারেশন’ তাদের মেনিফেস্টোয় যে বিষয়গুলোর প্রতি
গুরুত্বারোপ করেছে, সেই আধুনিকতার মধ্যে উত্তরাধুনিকতার চেয়েও ভয়াবহ
আত্মঘাতী প্রবণতা লক্ষ্যযোগ্য। ‘হাংরি আন্দোলন’ বাংলা কবিতায় বাঁক
পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেও শেষপর্যন্ত পুরোপুরি সফলতা পায়নি। তবে
এ আন্দোলনের পর আলোকপ্রাপ্তির যুক্তিবোধ, যৌন স্বাধীনতা, শৃঙ্খলমুক্তির
ঔদার্য ইত্যাদি প্রপঞ্চ হিসেবে পরবর্তী কবিতায় স্থান করে নেয়। বলাই
বাহুল্য, বিচ্ছিন্নতা, অনৈক্য, নিঃসঙ্গতা, সংস্কৃতির পচন, অবক্ষয় সমাজেরই
একটি প্রপঞ্চ। সাম্প্রতিক কবিরা বিশৃঙ্খলাকে প্রাধান্য দিয়ে ভাঙনে আস্থা
রেখেছেন, এমনটি লক্ষ করা যায়। তাই সাম্প্রতিক কবিতা হয়ে উঠছে সংশয় ও সংকটের
প্রতিনিধি। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে কবিতা হয়ে উঠছে জনবিমুখ। কখনো ‘ভাষা
হয়ে পড়ছে সংকেতের দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা, ভাব পেয়ে যাচ্ছে ব্যঞ্জনা, কবিতা
আসছে এগিয়ে এবং সে কবিতার সবটা শরীর সংকেতের এই সূক্ষ্ম অশরীরী উপস্থিতির
দ্বারা এমনভাবে আক্রান্ত যে, কবিতার মূল কাব্যগুণ থেকে তাকে আলাদা করে দেখা
সম্ভব নয়। আবার রহস্যময়তা ও জীবনজটিলতার প্রতীকী ব্যঞ্জনা কোনো কোনো
ক্ষেত্রে কবিতাকে নির্মেদ গতিময়তা এনে দিলেও সাম্প্রতিক কবিদের সংশয়বাদী
মানসিকতা সমষ্টিগত সৌন্দর্যচেতনার ধারা কবিতায় তুলে আনতে সামগ্রিকভাবে
ব্যর্থ হচ্ছে, এমনটি অনুমান করা যায়।
হাংরি আন্দোলনের অবদান নিয়ে বিতর্ক : বিষয় প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার
হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করা নিয়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আরেক ওজোর : রুহুল আমিন
গত শতাব্দির সাড়া জাগানো সাহিত্য আন্দোলন ছিল হাংরি আন্দোলন।বিশেষ করে
পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকজন উঠতি সাহিত্যিকদের মধ্যে নতুন এক যুগের হাতছানি
নিয়ে যেন আসে হাংরি আন্দোলন। যদিও হাংরি আন্দোলন নিয়ে অনেক সমালোচনাও আছে।
তারপরও হাংরি আন্দোলন অনেক সাহিত্যিকের জন্মও দিয়েছে বলা যায়। ১৯৬১ সালের
নভেম্বরে ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলনের জনক মনে
করা হয় তাদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম। সমীর রায়চৌধুরী, দেবী
রায় ও মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে মিলে হাংরির আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। তবে
১৯৬৩ সালে সমীর, দেবী ও মলয়ের সঙ্গে মতপার্থক্য সৃষ্টি হওয়ার কারণে তিনি
হাংরি ত্যাগ করেন। এই সময় তিনি যোগ দেন হাংরির বিকল্প প্লাটফর্ম হিসেবে
বিবেচিত পশ্চিমবঙ্গের আরেক গুণি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কৃত্তিবাস
গোষ্ঠীতে। হাংরি ছাড়ার আগে শক্তি প্রায় ৫০টি হাংরি বুলেটিন প্রকাশ
করেছিলেন। পরবর্তীতে কৃত্তিবাসের কবি সুনীল ও শক্তির নাম তৎকালের সাহিত্যিক
মহলে বেশ উচ্চারিত হতে থাকে। এও ঠিক যে সুনীল হাংরি আন্দোলনের ঘোর বিরোধী
ছিলেন এবং ১৯৬৬ সালে সেই মনোভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় কৃত্তিবাসের এক
সম্পাদকীয়তে।
হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করা নিয়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আরেক ব্যাখ্যা : প্রবালকুমার বসু
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি হাংরি আন্দোলন থেকে
অমনভাবে সরে এলেন কেন? উনি বলেছিলেন, দেখলাম সুনীল এই আন্দোলনে যোগ দিলো
না। সুনীল যখন নেই, এই আন্দোলনের সার্থকতা নিয়ে আমার ভেতরেই সংশয় দেখা
দিলো।
"আত্মার ইরিটেশান থেকে হাংরি কবিতার জন্ম" : ডক্টর তরুণ মুখোপাধ্যায়
লেবেলসমূহ:
তরুণ মুখোপাধ্যায়,
হাংরি আন্দোলন,
Hungry Generation.,
Malay Roychoudhury,
Tarun Mukhopadhyay
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
হাংরি আন্দোলনের অবদান
রাজীব ভৌমিক ০২/০৯/২০১৫, ১৭:২১ মি:
পরবর্তী পর্যায় পড়ার অনুরোধ রইলো | ভালো থেক |
শিল্প সংস্কৃতির যে কোন শাখাতেই অগ্রসর হতে হলে তার (ইতিহাস) পিছনের পথটি সম্পর্কে ভালোরকম জানতে হয়। হাংরি জেনারেশানের কবিতা সেই পিছনের পথের এক বিরাট মাইলস্টোন। ধুমকেতুর মত উদয় এবং বিলয়ের আগে যে উজ্জলতা তা থেকে উৎসারিত হয়েছিল তা নস্যাৎ করা অসম্ভব।
আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসে হাংরি জেনারেশানের কবিতা একটি অন্যতম ইম্পরট্যান্ট চ্যাপটার । ভালোবসুন/ মন্দবাসুন, পছন্দ করুন বা নাই করুন, কবিতা চর্চার ক্ষেত্রে ভালো নম্বর পেতে হলে এই অধ্যায় ভালো করে জানতে হবে।
আপনি সেই দুরূহ কাজে আলোকপাত করেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ।
পুনঃ ৩য় প্যারায় শক্তি চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বলতে গিয়ে " প্রতিষ্ঠানবিরোধী " না হয়ে প্রতিষ্ঠান অনুসারী হবে মনে হয়। কারন তিনি বাজারি কাগজে যোগ দিয়েছিলেন।
ধন্যবাদ।
মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা, গল্প ও উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য হল যে সেগুলো মুক্ত-সূচনা ও মুক্ত-সমাপ্তি দ্বারা চিহ্নিত; এবং তা বহুমাত্রিক. আঠ্গিক-ভাঙা, ঘটমান, যুক্তির কেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত, কেন্দ্রাতিগ, অফুরন্ত অর্থময়, সংকরায়িত, রাইজোম্যাটিক. অপরিমেয়, ভঙ্গুর বাকপ্রতিমায় আপ্লুত, একাধিক বার্তাবহ এবং ক্যানন-অতিক্রমী ।
হাংরি আন্দোলন এই ভাবনাকে কিছুটা হলেও তো উসকে দিয়েছিল। আমি এর নিন্দা করছি না। তবে যে কোন একপেশে ভাবনার বিরোধী আমি। "প্রচন্দ বৈদ্যুতিক ছুতার"- এরকম স্ত্রী জননাঙ্গের আখ্যায়িকা ব্যাঞ্জক কবিতা- যেসব দেশে ন্যুডিটি, ফ্রি সেক্স স্বাভাবিক- সে সব দেশেও উচ্চাঙ্গের কবিতার মর্যাদা পায় কিনা আমার জানা নেই!
হাংরির দিকে যদি তাকাই এটাই একমাত্র বাংলা সাহিত্যের বাঁধ ভাঙার অন্দোলন। এখানেই প্রথম দেখি বাংলা সাহিত্যে কিছু অশ্লীল শব্দের প্রয়োগ, (যদিও শ্লীল অশ্লীল এর বিচার কে করে আর বিচারকের বিচারের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে আপনার সামাজিক মুন্ডপাত হবে, সবাই স্বঘোষিত-স্বনিযুক্ত বিচারক।) এখানেই পাই গুরুচান্ডালি থেকে অন্যান্য সব বিধি নিষেধের শিখল ভাঙতে। (হাংরি যে সাহিত্যের সব আভিজাত্যকে ভেঙেদিয়ে রাতারাতি মুষ্টিমেয় কিছু লোকের সস্তার ছেনালি বা লোকদেখান আন্দোলন ছিল না তা বুঝতে গেলে এ বিষয়ের অন্তস্থলে পৌচানোর দরকার, কিন্তু ক'জন তা করবে সেটাই ভেবে দেখার।) বরং তা ছিল বাংলা সাহিত্যের উন্নতির জন্য। আমি তো মনে করি এই হাংরির কারণেই কলকাতা কেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্য, ঢাকা কেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্যকে অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়েছে, ঢাকা কেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্যে আমি নতুন কোন অভিযোজন দেখতে পাই না যে ধরনের অভিযোজন কলকাতায় দেখি।
আর একটি কথা বলতেই হয়, হাংরি কবিতাগুল যখন বারবার গুরুচান্ডালি দোষে দুষ্ট হচ্ছিল তখন সুনীল গাঙ্গুলি বলে ছিলেন "কবিতা পাঠকের মরমে পৌঁছানোর জন্য সাধু চলিত শব্দের মিশ্রণ আনা যেতেই পারে, তবে তা যেন পাঠকের কর্ণকুহরে আঘাত না হানে।" এ প্রসঙ্গে আমার মনে হয় এই আসরের কবিরা সুনীল বাবুর কথার প্রথম অংশ মেনে চলেন অর্থাৎ " কবিতা পাঠকের মরমে পৌঁছানোর জন্য সাধু চলিত শব্দের মিশ্রণ আনা যেতেই পারে," এইটুকু কিন্তু পাঠকের পাঠকের কর্ণকুহরে তা আঘাত হানছে কি না তা ভারার দায়বদ্ধতা তাদের নেই।
একটা উদাহরন দেই ; হাংরির অনেক আগে লেখা এই দুটি লাইন-
" পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল। " এখানে করে ক্রিয়া পদ চলতি ভাষা কিন্তু পোহাইল ক্রিয়া পদ সাধু কিন্তু তাতে পাঠকের কানে শ্রুতি মাধূর্য আঘাত করে নি। কিন্তু এই আসরের কবি যখন লেখেন -
" আমি তোর ছোঁয়া অনুভব করি আমার বিছানায়,
সারাদিন ছুটে বেড়াচ্ছি তোর আশেপাশে, সেথায়
আমার সব বুকভরা ভালোবাসা দেব তব পায়।"
কবিতার এই তিনটি লাইন আমার সংগ্রহ করে রাখা ছিল। কারন একই ব্যক্তিকে একবার তোর আর তব শুনতে ভালো লাগছিল না আর সেথায় ও তব সাধুভাষা যেখানে অন্য চলিতের মধ্যে এটা কানে লাগছিল তাই জানিয়ে ছিলাম সবিনয়ে। তারপর কি হল সেটা উহ্য থাকাই ভালো। আমার আশঙ্কা এই যে "কবিতা পাঠকের মরমে পৌঁছানোর জন্য সাধু চলিত শব্দের মিশ্রণ আনা যেতেই পারে," শুধু এই কথাটি ব্যবহার না বাড়তে থাকে আসরে।
আমি কিন্তু এই কবিতায় কোনো অশ্লীলতা খুঁজে পাইনি। আগেই বলেছি শ্লীল অশ্লীলের বিচারের মাপকাঠির কি আর তার নির্ধারণ কে করল।
আমার এই মন্তব্যে জন্য যদি আপনার কোথাও আঘাত লেগে থাকে তা নিতান্তই আমার অঞ্জতা বশত, এরকম কিছু হলে অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
মলয়, ১৯৬০ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইকনমিকস নিয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন | তিনি কর্মসূত্রে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক, এগ্রিকালচার রিফাইনানস ডেভেলাপমেন্ট কর্পোরেশন, লাখনও, হয়ে যোগ দেন ন্যাশানাল ব্যাংক ফর এগ্রিকালচার এণ্ড রুরাল ডেভেলাপমেন্ট -এ এবং এই সংস্থার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হয়ে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৯৭ সালে |
শুধুমাত্র কবিতা, নানা বিষয়ে মতের মিল না হওয়া ও সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তির স্পৃহা তাঁকে তাঁর পি.
এইচ.ডি অসমাপ্ত রেখেই কলকাতায় চলে আসতে বাধ্য করে | কলকাতায় এসে তাঁর প্রধাণ কাজ হয় "হাংরি জেনারেশন বা হাংরিয়ালিস্ট সাহিত্য আন্দোলনের (১৯৬১ ~ ১৯৬৫)" সূচনা ও নেতৃত্ব প্রদান করা | মলয় রায়চৌধুরীকে আমরা এই বিখ্যাত সাহিত্য আন্দোলনের জনক বা পথিকৃৎ বললে অত্যুক্তি করা হবে না |
রবীন্দ্রনাথ নিজেই অশ্লীলতার দায়ে পরেছিলেন | এখন সংক্ষেপে বলি পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে| রবীন্দ্রনাথ এই কথাগুলি নিজে বলেছিলেন মংপুতে মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়িতে বসে ----"কথা ও কাহিনীর"'শ্রেষ্ঠভিক্ষা'কবিতায় আছে না
অরণ্য আড়ালে রহি কোনমতে একমাত্র বাস নিল গাত্র হতে ,বাহুটি বাড়ায়ে ফেলি দিল পথে ভূতলে ' ওই কবিতাটি যখন বেরুলো ,মহাশয় আমাকে বলিলেন ,রবিবাবু এটা লেখা কি ঠিক হয়েছে ? ছেলেরা পড়বে আপনার কবিতা ,
'একমাত্র বাস নিল গাত্র হতে'---- ঠিক হবে কি ? এতটা অশ্লীল রচনা ছেলেদের পড়া ঠিক হবে না | কি আর বলব বল ?
আর একটি উদাহরণ : রবীন্দ্রনাথের শেষ জীবনের প্রেয়সী ওকাম্পো অর্থাত বিজয়া কে উদেশ্য করে এমন কতগুলি কবিতা লিখেছিলেন এবং তার মধ্যে প্রেমের অভিব্যক্তি এতটাই বেশি ছিল যে কবিতাগুলি তার পুত্র রথী ও পুত্রবধু প্রতিমা দেবীকে পাঠাতে পারেন নি | মলয় রায়চৌধুরী না হয় তার কবিতার মধ্যে কিছু ব্যবহারিক ভাষা ব্যবহার প্রয়োগ করেছেন |
যাই হোক এ ব্যাপারে অনেক কিছু আলোচনা করা যেতে পারে | এখন লিখতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে |
আজ পড়লাম।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থেকো |