বুধবার

বাংলা ভাষায় হাংরি আন্দোলনের অবদান : তন্ময় ভট্টাচার্য

বাংলা ভাষায় হাংরি আন্দোলনের অবদান : তন্ময় ভট্টাচার্য

আমার মতে, হাংরি আন্দোলনকারীদের সাহিত্যের ভাষা হল একটা ভূমিকম্প। সেই ভূমিকম্প প্রচলিতের ভিতে আঘাত করেছিল। ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। এবং আফটার এফেক্টে আখেরে উপকার হয়েছে বাংলা সাহিত্যের। যদি ১৯৬২-১৯৬৫ এই সময়কালটাকে মধ্যিখানে রাখি, তাহলে এর আগেকার প্রচলিত ও বিখ্যাত সাহিত্যের সুর ও পরের প্রচলিত ও বিখ্যাত সাহিত্যের সুরে – হ্যাঁ, মেইনস্ট্রিমেরই, তফাৎ খুঁজে পাই আমি। ওই যে বললাম ‘আফটার এফেক্ট, তা ক্রমশ ছড়িয়ে গেছে সত্তর-আশি-নব্বইয়ের লেখায়। হয়তো স্পষ্ট নয়, রচয়িতারাও হয়তো জানেন না বা খেয়াল করেননি, কিন্তু অবচেতনে হলেও হাংরি আন্দোলনের ভালোটুকু তাদের লেখায় চলে এসেছে। পরিবেশনায়, শব্দব্যবহারে।

তাই, আমার বিশ্বাস, হাংরি আন্দোলনকারীদের সবচেয়ে বড় অবদান পরবর্তী জেনারেশনের সাহিত্যিকদের একধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে যেতে দেওয়া। ১৯৬২-১৯৬৫ – এই সময়কাল ও হাংরিদের কর্মকাণ্ড বাংলায় না ঘটলে, আমার ধারণা, আরও বিলম্বিত হত এই অগ্রগতি।

ষাট বছর পরে দাঁড়িয়ে, একজন তরুণ পাঠক হিসেবে পিছনের দিকে তাকালে, সমস্ত খুঁটিনাটি সরিয়ে মূল প্রভাবটুকুর দিকে খেয়াল রেখে আমার এটাই বারবার মনে হচ্ছে – হাংরিরা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। তাঁরা নিজেরা হয়তো সামগ্রিকভাবে খুব বেশি সাফল্য পাননি(বিক্ষিপ্তভাবে বা ইন্ডিভিজুয়ালি বলছি না), কিন্তু সাহিত্যের উপকারই হয়েছে তাতে। 

‘The Last Days of British Raj’ বইতে লিওনার্ড মোসলে একটা কথা বলেছিলেন – ‘সুভাষ বোসের আত্মা লালকেল্লায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।’ লালকেল্লায় আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার চলছিল তখন। ঠিক তেমনই, আমার মনে হয়, এই ষাট বছরের সাহিত্যের ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে হাংরিদের আত্মা। দেখা যায় না, টের পাওয়া যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন