শুক্রবার

হাংরি আন্দোলন নিয়ে সুনীল শক্তি সন্দীপন সমীর মলয় প্রমুখের চাপান-ওতোর

এগোল না পিছোল? পরে দেখছি | সময় এগোয় | বিদেশ যাত্রা, পাকাপাকি থাকার ব্যবস্থাকে গ্রহণ না করে পুনরায় কলকাতায় ফিরে আসা | দমদম এয়ারপোর্ট | পকেটে হাত | মাত্র দশ টাকা | মাথাতেও |পুনরায় বেকার | এ দোর ও দরজায় টোকা | সংসার চালানোর জন্য |
দিন বদলায় |
এক পা কবিতায় রেখেও অন্যটি গদ্যে | দু’হাতে, চারহাত পরিমাণ লেখা | দেখতে দেখতে জুলফি দুটো পাকা… | পকেটে দশ টাকা পুঁজি নিয়ে পারিজাতের ৯ তলা |
অর্থ যশ খ্যাতি | যে যাই বলুক সখী- সফলতা এরেই কয় | সাফল্যের স্বীকৃতি বহির্জগত থেকে | সমাজের কোন তলায় তোমার বাস…ব্যস-
এইসময়ের অপেক্ষায় ছিলাম | দেখা যাক সাফল্য কী দিল আর কী কেড়ে নিল…
১৯৯০
      সবিনয় নিবেদন শারদীয়া আনন্দবাজারে প্রকাশিত আপনার ধূলিবসন উপন্যাস পড়ি গত অক্টোবরের প্রথম দ্বিতীয় সপ্তাহে | উপন্যাসটি একই সাথে আমাদের আকৃষ্ট করে এবং প্রচন্ড একটা মানসিক ধাক্কা দেয় | প্রথম পাঠের চারমাস কেটে গেছে, মন্দিরার তাড়না থেকে আজও মুক্তি পাইনি | ….
কাহিনীটি দিকশূন্যপুরের ফ্যানটাসি হত তাহলে আপত্তি কিছু ছিল না | কিন্তু ধূলিবসন ফ্যানটাসি নয় | জ্যান্ত বাস্তবের পটভূমিতে গল্পকে গেঁথেছেন…বাস্তবতাকেই রূপ দিয়েছেন | বিশ্বাস্য বাস্তবের ভেতরে অবিশ্বাস্য এক ফ্যানটাসি ঢুকিয়ে দিয়ে দুইয়েরই জাত মেরে দিলেন?’
(তারপর বেশ কিছু সমালোচনা | সুন্দরবনের নদীতে সহবাস হয়না, বড় নদী কোন নদী? ইত্যাদি ইত্যাদি | কখনও লাইন ধরে, কখনও পাতার সংখ্যা দিয়ে)
চমক লাগে | প্রশ্ন অথচ প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর | জাস্ট লেখাটাকে ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে রোদে ফেলে দিল |
আমি এমনকিছুই চাইছিলাম | ভাবছি এইবার, এইবার কী হবে! এ চিঠি’ত বুদ্ধদেব বসু, শঙ্খ ঘোষ বা শক্তি-সন্দীপনের নয় | এমনকী নয় ফরাসি প্রেমিকা বা NRI ধনী বন্ধু- বান্ধবের | তা’হলে?
এই’ত পেয়েছি | দেখি…
২৭-২-৯০
      শ্রী রজত রায়
      প্রীতিভাজনেষু,
      আপনার ও দীপান্বিতা রায়ের সই করা চিঠি পেয়েছি | অতি চমৎকার, সহৃদয় চিঠি… আপনাদের চিঠির উত্তর দেবো বলে যত্ন করে রেখেছিলাম | এতে বেশি যত্নে যে, তারপর কোথায় যে রেখেছি আর খুঁজেই পাইনা | তা ছাড়া বাইরে ঘোরাঘুরি করতে হ’ল অনেক | উত্তর না দেবার জন্য লজ্জিত ছিলাম কিন্তু চিঠির বিষয়বস্তু মনে ছিল বলেই শারদীয় সংখ্যার উপন্যাসটি বই হয়ে বার করার আগে পরিমার্জনরা কথা ভেবেছি | করেছি সাধ্যমতন |
      আমার এতদিনের লেখকজীবনে পাঠকদের কাছ থেকে এমন অসাধারণ চিঠি পেয়েছি কদাচিৎ | আপনি এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছেন… রচনাটা ভালো হোক বা না হোক, তবু তো একজন অভিজ্ঞ পাঠককে এমনভাবে ভাবে নাড়া দিয়েছে!
(বিস্ময়ের এখনো বাকী | লিখছেন কোথায় কোথায় বদল এনেছেন ও কেন এনেছেন | কেন কিছু জায়গা অপরিবর্তিত রাখলেন | তার জাস্টিফিকেশান দিয়েছেন | )
আর শেষে লিখছেন-
      ‘এইরকম আমি ভেবেছি, হয়তো ঠিকমতন ফুটে ওঠেনি, সেটা আমার অক্ষমতা | আপনার চিঠির জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই | আপনার কাছ থেকে অনেককিছু শিখেছি | সুন্দরবনের নদীর ওপর নৌকায় সহবাস যে নিষিদ্ধ তা সত্যিই আমার জানা ছিল না |’
বড় বড় লেখকরা এত জাস্টিফিকেশান দেয়! নিজের লেখা নিয়ে কী কেন ইত্যাদি প্রভৃতি!
জানা ছিল না | জানলাম | শিখলাম | শুধরে নিলাম | যা পারলাম সবই আপনার জন্য যা পারলাম না তার দায় একান্তই আমার- এমন অনায়াস স্বীকারোক্তি | সাহিত্য মিনারের চূড়ায় বসেও…
গড়িয়ে গেলাম | পুরোনো দিনে…
টুকটাক নানা কথার মধ্যে জনা পাঁচেক ছাত্র তাদের বাংলা শিক্ষককে প্রশ্ন করেছিল, স্যার লেখক-কবির সবচেয়ে বড় গুণ কী? মানে, কী কী থাকলে একজন কেউ ভালো লেখক হতে পারে?
মিতভাষী শিক্ষক বলেছিলেন, দেখ জ্ঞান বুদ্ধি’ত থাকতেই হবে | আগ্রাসী পাঠক হতে হবে কিন্তু তারচেয়েও বেশী যেটা দরকার তা’হল সমালোচনা, বিশেষ করে নিন্দা গ্রহণ করার ক্ষমতা | ভুল স্বীকার করার সাহস | মনে রাখতে হবে, পাঠকই লেখকের ঈশ্বর | মনে রাখবি- লাইফ ইজ লারনিং |
তাই যেন দেখলাম | শুনলাম |
একজন পারফর্মারের প্রস্তুতি | বিভিন্ন রূপে | কখনও কবি কখনও বাচিক শিল্পী কখনও বা গদ্য লেখক ,সমালোচক | সারজীবন ধরে |
পর্ব (২)
অন্য কিছু চাই | অন্যকিছু দেখতে চাই | ঘুরছি | দেখছি | বুদ্ধ থেকে মমতা |অফিসের বস থেকে পত্রিকার সম্পাদক | বদল দেখছি | নামের | ক্ষমতা, চরিত্রে অনড়, অচল | সেই হুঙ্কার | সেই ‘আমি’ ‘আমি’ | আমি সর্বস্ব নেতা | তর্জনী | অস্থিরতা |
ধ্যাত্তেরি! ঢুকে পড়ি | পড়লাম |
      ৬০ এর দশক | কৃত্তিবাস দপ্তরে কবিতা বাছাই হচ্ছে | দেখছেন শক্তিশালী এক কবি | বাজে,অঘন্য, চলবে না…বলছেন আর ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন | ঠিক পাশেই বসে সম্পাদক | প্রত্যেকটা ফেলে দেওয়া কাগজ তুলে ফাইলে রাখছে | কৃত্তিবাস ঠিক দিনে, ঠিক সময়ে প্রকাশিত হচ্ছে | যদিও সব কবিতাই বাতিল করেছিলেন সেই কবি আর সব কবিতাই যত্ন করে তুলে রাখলেন সম্পাদক |
এ দৃশ্যের কথা মনে এল স্বাভাবিকভাবেই কতগুলো প্রশ্ন উঁকি মারে মনে | যেরকম , সম্পাদক কি অতিরিক্ত লিবারাল? শিল্পের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করেছেন?খালি চোখে স্পষ্ট, করছেন | কিন্তু পাশাপশি এটাও সত্যি একসঙ্গে বহু পাঠক ও লেখককে ধরে রাখছেন | বহু তরুণ কবিকে সুযোগ দিচ্ছেন |
সুযোগ দেওয়াকে কি জাস্টিফাই করা যায়? করলে কেন, কিভাবে ইত্যাদি ইত্যাদি | সুযোগের মধ্যে অনেক সময় ‘পাইয়ে দেওয়া’ লুকিয়ে থাকে | পাইয়ে দেওয়ায় আঁশটে গন্ধ | পাচ্ছি?
দেখি ভাল করে –
সেই কৃত্তিবাস দপ্তর |
      কমলকুমার মজুমদারের একটি গল্পের বই রিভিউ করতে হবে | কমলকুমারের স্নেহধন্য শিষ্যরা(সকল স ও শ) আছে | সম্পাদক নিজেও কমলকুমারের আপ্ত সহায়ক অথচ কী আশ্চর্য ভাবে সেই বই উঠে যাচ্ছে এক তরুণ অখ্যাত লেখকের হাতে | এমনই একজন যে কমলকুমারের একটিও গদ্য পড়েনি | সকলেই অবাক | স্বাভাবিক | সম্পাদক সমালোচিত | কিন্তু নির্বিকার |
বিন তুঘলক নাকি! ভাবি | ভাবাভাবির খেলা | ভাবনার উল্টোপিঠে অন্য ভাবনা |
ভাবনাগুলি বাছি:-
অখ্যাত এক তরুণকে বিখ্যাত কমলকুমারের বই রিভিউ করতে দিয়ে লাইমলাইটে নিয়ে আসা | প্রাথমিক সিদ্ধান্ত | গভীরে গিয়ে খুঁজলে কেমন চমক লাগে | কোথায় ?
এখানে…
আপনাকে যদি অপরিচিত একজন লেখকের বই রিভিউ করতে বলা হয় তা’হলে প্রথমে যেটা হবে আপনাকে পড়তে হবে | আগাপাশতলা পড়তে হবে এবং মন দিয়ে | কারণ তার লেখার সঙ্গে আপনি অপরিচিত |
এতে লাভ?
এক, পাঠক হিসেবে আপনার পুরো পড়া হয়ে গেল বইটি | নব্যধ্রুপদী সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় হল আপনার( সেইসময় ঐ ছেলেটির যা হয়েছিল) |
দুই, নব্যধ্রুপদী সাহিত্য আজও স্বকীয় স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল কিনা তাও প্রমাণিত হল | লেখক কমলকুমারের নব মূল্যায়নের পাশাপাশি তরুণ এক উঠতি লেখককে অপ্রচলিত গদ্যধারার সঙ্গে পরিচিতি প্রদান |
এক ঢিলে দুই পাখি |
মনে পড়ল, সেই ৮০ এর দশকের শেষদিকের গল্প | এক সপ্রতিভ স্মার্ট ছাত্র প্রশ্ন করেছিল তাদের বাংলা শিক্ষককে- এই যে আমরা কিছুতেই শিখব না ভেবে রাখি | আর সেই সমস্ত ভানায় আপনি জল ঢেলে দেন নিজস্ব ভঙ্গীতে | কোন শিক্ষকোচিত গাম্ভীর্য প্রদর্শন না করেই, এটা কী করে?
রসরাজ শিক্ষক হেসে- কেন বাতাস যে বলে আমি খুব ইয়ে টাইপ | ঘোড়েল |
ইয়ে টাইপ আর ঘোড়েল…একথা ছাত্ররা জানত তাদেরই কথা | তাদের বলা আড়ালে আবডালে | দে দে চম্পট সেদিন |
এখন মনে পড়ছে সেদিনের কথা …
– কী করে জানল বলতো?
– আমরা বলেছি | তাও সেতো অনেক আগে |
– জানত অথচ জানতে দেয়নি |
– জানে আমরা বলেছিলাম?
– কে জানে |
– কী ভয়ঙ্কর!
– কোন রূপে পুজিব উহারে?
– বন্ধু বা শত্রু যে-কোন রূপে | তবে স্বস্তি নেই | দোলাচল | অস্থিরতা |
– কাছে গিয়ে দূরে আসা | দূর থেকে কাছে…বারবার |
বন্ধু না শত্রু | শত্রু না বন্ধু | কাছের দূরের | শব্দে ঘুরপাক… খেতে খেতে ‘৬১ |
২১.১.৬১
      ‘আপনার সম্পর্কে,মূলত একমাত্র কথা, যা আপনাকে জানানোর | আপনার ব্যবহার আমাকে সাবধান করে দিয়েছে | কোনরকম সচেতন মনোযোগ না দিয়ে, শেষের দিকে আমি আপনার সঙ্গে মেলামেশা করছিলাম; যাবতীয় সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ধরে নিয়েছিলাম আপনি আমার বন্ধু | …
গত এক বছরে আপনি আমাকে মাঝে মাঝেই অপমান করেছেন | অপমান করা সঙ্গত হয়েছিল কি হয়নি, সে-কথা ভাবছি না | কারণ অপমান হচ্ছে অপমান | বন্ধুকে কেউ অপমান করে না |
যে বন্ধু নয়, অবশ্য তাকে করে | কিন্তু ঐ যে বললাম, আমার শেষপর্যন্ত ধারনা জন্মে যায় যে আপনি আমার বন্ধু, বা আরো কত বড় ভুল, আপনি আমার বন্ধু | আগের অপমানগুলি আমি ক্রমশ ভুলে যাই | কিন্তু ঐ যে হাসতে হাসতে বললেন একদিন, ‘ কী মশাই, are you angry with me’ জিজ্ঞেস করেছিলেন বলে আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ হয়নি | শেষ পর্যন্ত আপনার অনুরক্ত হয়ে পড়া ছাড়া আমার উপায় ছিলনা’- সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
এখনও ৬১, ঘুরছি | ঘুরছি | শুনছি-
      ’আমার প্রথম বই ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী বেরল | আপনি লিখলেন আনন্দবাজার পত্রিকায় সেই বিখ্যাত পঙক্তি – ‘ বাংলা সাহিত্য যদি কোনদিন সত্যভাষী হয় তবে আজ থেকে ৩০ কি ৫০ বছর পরে এই কৃশকায় গল্পগ্রন্থটির আর একবার খোঁজ পড়বে |’
আমার লেখা নিয়ে আপনার শেষ লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে | ‘সমবেত প্রতিদ্বন্দ্বী’ প্রকাশ হলে | এরপর চুপচাপ | পড়েননি তা’হয়না | লিখিত মন্তব্য নেই | সামনে তো নয়ই | পিছনেও না | আড়ালে বললেও কানে তো আসতই |’- সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩২ বছর ঘুরে ঘুরে | ক্লান্ত কিন্তু সজাগ | দেখি’ত-
৩০ শে জানুয়ারি ১৯৯৩
      ‘বন্ধুত্ব ব্যাপারে এক-একজনের একটা নিজস্ব খেলা আছে | শতরঞ্চের ওপর চার আনা দানা ফেলে কেউ বলে, ‘এই ষোলো আনা ফেললাম’ | বিশ্বাস করে যারা ষোলো আনা খেলে(অনেকে ডাবল দেয়), তারা পরে বুঝতে পারে, তারা ষোলো আনা খেলেছে মাত্র চার আনার ওপর |… এই কারণেই তাঁর সমসাময়িক বন্ধুরা কেউ জীবনানন্দের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পেরেছিলেন, এমন শোনা যায়নি | কারণ, উনি চার আনা ফেলতেন |
‘আপনি’ ষোলো আনা দেন, তবে ‘আপনার’ বন্ধুতা আঠারো আনা | দু আনা নিজের কাছে’- সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
দু আনা তাহার কাছে, তার কাছে | সেই দু আনা কেন কিসের জন্য কোন কাজে? পরে | আগে –
১৭ জুলাই ২০০০
      ‘মৃত্যু যত এগিয়ে আসছে আগাগোড়া আপনাকে মনে পড়ছে | আপনাকেই নম্বর দিয়েছি সবচেয়ে বেশী | হিসেবে এবং বেহিসেবে | আপনার যত বেহিসেব সব হিসেব নিয়ে | যে কতটা যাবে? একটাকা খরচ করে অনেকে ভাবে ১৬ আনাই খরচ করে দিল- অনেক মদ খেয়ে AAEI- তে ‘আপনি’ একদিন বলেছিলেন্- ‘ আমি জানি তখনো আমার ১ আনা আছে | তাই ১ টাকা খরচ…’- সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
আমকে টানল- ১টাকা খরচের পরও ১ আনা আছে – তে | দিক নির্দেশ করছে | প্রচলিত প্রবাদ – জাতে মাতাল তালে ঠিক |
অথচ কিপটে বলতে পারছিনা | কী বিপদ! হয়ত বা এই কারণেই বাংলা ভাষায় লিখে সব’চে উপার্জনক্ষম | সবসময় সতর্ক ও সচেতন |
দু আনা নিজের কাছে রাখে | হিসেব মেলেনি | এখনও | খুঁজে দেখি…
যা দেখলাম, তাতে স্পষ্ট বন্ধুর সঙ্গে মতান্তর আছে কিন্তু মনান্তর নেই | যতটা সহজে মতান্তর আর মনান্তর লিখি বিষয়টা অত সহজ নয় | কারণ অধিকাংশ সময়ই ‘ইগো’ নামক বস্তুটি টেনে ধরে | আমি কেন নিচু হব বা নামব মাথা চাড়া দেয় | এখানে কিন্তু ওসব ঝেড়ে ফেলে দিয়েই- ‘কী মশাই, are you angry with me’ বলে টেনে নেওয়া কাছে |
আর আছে, যতটুকু বলা সামনেই বলা | পিছনে নয় | আর তাই হয়ত দীর্ঘ পথ চলার পরও জীবনের উপান্ত বেলায় এসে শোনা যায়- ‘মৃত্যু যত এগিয়ে আসছে আগাগোড়া আপনাকে মনে পড়ছে | আপনাকেই নম্বর দিয়েছি সবচেয়ে বেশী |’
একটা বিশ্বাসযোগ্যতা, নির্ভরতার গন্ধ পাচ্ছি ? পাচ্ছি কিন্তু এত সহজে একজনের কথার ওপর ভিত্তি করেই কোন সীদ্ধান্তে আসতে পারছিনা | তাই ঘোরাঘুরি চলতেই থাকে…
ঘুরি…
বিহার-পাটনা- চাইবাসা | মলয়-শক্তি-উৎপল ও সমীর | অ্যাংরি যুবক | হাংরি জেনারেশান |
      শুনতে পাই… ‘আমার বইটা পেলাম | শক্তিদাকে বলবেন বাজার থেকে প্রতিটি কপি ফিরিয়ে নিতে এবং যতো কপি আছে তাদের সকলকে একত্রিত করে কেরাসিন তেলে ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিতে’- মলয় রায়চৌধুরী |
বুঝতেই পারি বইয়ের কথা | বই প্রকাশ নিয়ে ক্যাচাল | রাগ শক্তির ওপর কিন্তু চিঠি লিখছে অন্য একজনকে…. কেন?
শুনি | আর কী শোনা যায় | যায়…
      ‘ইতিমধ্যে বম্বে চলে এসেছি, শক্তির কাছে শুনেছিস নিশ্চয়ই | পাটনা থেকে ১৭ |৭ তারিখে চাইবাসা ফিরে, সেখানেই তোর চিঠি পাই…
মলয়ের বইয়ের ব্যাপারে আমাদের পরস্পরের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি রয়ে গেছে | মলয়ের বই সম্পর্কে সবচেয়ে দুঃখের কারণ এই যে ১ | খুবই Neglected ভাবে ছাপা হয়েছে, বিস্তর ভুল, যা কোথাও Sentence এর মানে পর্য্যন্ত বদলে দিয়েছে ইত্যাদি এবং সবচেয় দুঃখ ওর এই কারণে যে তুই কোন আগ্রহ নিসনি |
Manuscript পাঠিয়েছিলাম | তোর কাছে, টাকাও পাঠিয়েছি তোরই কাছে | অথচ তুই কেবল Hand-over করেছিস শক্তিকে | তাহলে কি সরাসরি শক্তিকেই পাঠানো যেত না!
শক্তির সম্বন্ধে যে উচ্ছ্বসিত উক্তি করেছি তা এখনও stand করে | ঐ উক্তি ওর দুর্বলতাকে কখনই include করে না | …তুই অনেক বেশী serious | কিন্তু কার্যত তুই তা করিসনি | তুই বিশেষ ভাবে treat না করে বিষয়টিকে formal ভাবে ভেবেছিস | আমি কখনই তোর সঙ্গে formal ব্যবহার করি না |’- সমীর
বুঝলাম | মলয়ের বই উপলক্ষ্যে টাকা ও Manuscript এসেছিল লোকটির কাছে | যদিও দায়িত্বে ছিলেন শক্তি এবং স্বভাবসিদ্ধ ভাবে কিছু খেয়াল করেননি | সমীর ও মলয় তাই অভিযোগ জানাচ্ছেন | সমীর ঘনিষ্ট বন্ধু | তাই, অভিযোগের থেকে চিঠিতে অভিমান বেশি | মলয় সমীরের ভাই হাংরি আন্দোলনের নেতা | শক্তির পূজারি | তবুও বইয়ের দায়িত্ব দিতে চাই অন্যজনকে | এটা কেন? আর একটু খুঁজে দেখি |
এই’ত-
      ‘আপনি বলেছেন্- ” শক্তি যেমন মেয়েলী, তুমি সেরকম ছেলেমানুষ”-(শ্রীমান লিখেছেন)- এটা লৌকিকতার ব্যাপার নয় | শক্তিদাকে আমি ভালোবাসি, আর ওখন থেকে সরা সম্ভব নয় | শ্রদ্ধা করি আপনাকে বেশী |’- মলয় রায়চৌধুরী |
একজনের প্রতি ভালোবাসা যেটা ভায়োলেন্ট, হট, ডেসপারেট কিন্তু শ্রদ্ধা অন্যজনকে | এখানেই হয়ত আবার ও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে বিশ্বাসযোগ্যতা বা নির্ভরতার প্রসঙ্গটি | পড়ে ? সত্যি পড়ে?
পড়ে | পড়ুন…
      ‘শক্তিদাকে আমি লিখেছি, প্রেসের সব কাজ আপনাকে বুঝিয়ে দিতে | এই ইশারাটা আমি আশা করেছিলাম, কাজ করবে | ভেবেছিলাম শক্তিদা শক্তিদা নিশ্চয়ই বুঝবেন, যে আপনাকে নিয়ে আমি আজ পর্যন্ত কোথাও কিছু লিখিনি তাঁকেই বলছি দায়িত্ব নিতে |’- মলয় রায়চৌধুরী |
ঘুরি | পড়ি | ঘুরে পড়ি… ল্যাং ? দেখি-
      ‘ হাঙ্গরি জেনারেশান যাতে দলাদলির মধ্যে না পড়ে, তাই প্রত্যেককেই বলে দেওয়া হয়েছে, যে যা ইচ্ছে যেখান থেকে হোক ছাপাতে পারে | হাঙ্গরি জেনারেশান কোনো পত্রিকা নয়, কোনো মহল্লা নয় |
আসলে একটা ওভার-অল দেখাশোনার জন্যে একজন প্রাইমাস ইনটার- প্রেয়ার্সের দরকার ছিল | আপনি ভাবছেন আপনাকে জানানো হয়নি আগে | সেরকম ভাবে এটার আবির্ভাব হয়নি | শক্তিদা এখানে এসেছিলেন, কলকাতায় গিয়েই দুম করে প্রস্তাব দিয়ে দিলেন |
নাঃ , আপনি অন্তত আমার দিকের দেখাশোনার ভারটা নিন | কারণ এমনিতেই এত দূর থেকে কিছুই হচ্ছে না, বরং হাঙ্গরি জেনারেশানের চেহারা বদলে যাচ্ছে |
আপনি যদি নেনে, তাহলে দেখবেন ব্যাপারটা একটা সিরিয়াস মোড় নিয়েছে | আপনি হয়তো ভাবছেন যে, অনেকে বলবে, ‘ শক্তি আরম্ভ করল, আর ও তাতে গিয়ে যোগ দিল’ তেমন যদি কেউ বলে, তাহলে সে-সব সমালোচকদের বাড়ী-ঘর্-দোর আগুন লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে |
আপনি দায়িত্বটা নিন | খাটবার দরকার হবে না | হারাধনকে( হাংরি জেনারেশান দেবী রায়) বললে সবই ও করবে | আপনি শুধু নির্দেশ দিয়ে দেবেন |
এখনকার মত আপনি যে-কোন একটা লেখা দিন, আর সেটা যেমন ভাবে বলবেন, তেমনভাবেই বের করা হবে | আপনি দায়িত্ব নিলে আরো অনেকেই অংশগ্রহণ করবেন | তাহলে আপনা থেকেই অন্যরকম হবে H.G.-এর ট্রেন্ডটা | যে-রকম ভেবেছিলুম আর কি | শক্তিদা নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন সর্বদা, নেতৃত্ব করাটা যে ওঁর পক্ষে সম্ভব নয়, তা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই?’ – মলয় রায়চৌধুরী |
’নেতৃত্ব’ | এসে গেল | অত সহজ! কতটা পথ হাঁটলে গুরু নেতা হওয়া যায়… মনে মনে | বলছি | ঘুরছি | ঘুরছি | বলছি |
আরও ল্যাং মারামারি চাই | আরও প্রতিকুল পরিস্থিতি | তবেই না বুঝব কন্ট্রোল কীরকম…
এই’ত-
      ‘তোর দীর্ঘ চিঠি পেলাম | শক্তিকে আমরাই এত বড় করে তুলেছি |এর মূল দায়িত্ব তোর, আমার ও মলয়ের্ | শক্তিকে লেখার জন্য প্রাথমিক উৎসাহ তুই-ই দিয়েছিলি | বারেবারে বাহবা দিয়ে ‘ বাংলা দেশের শ্রেষ্ঠ কবি’ এ কথা তুই-ই প্র্থম তুলেছিস | অর্থাৎ শুধু আজ শক্তি সে কথা নিজে বলছে | চাইবাসায় থাকতেই তোকে বাদ দিয়ে শিল্পের সিংহাসনে বসার একটা ঘোরতর প্ল্যান উৎপল ও শক্তি অনেকদিন আগেই করেছিলো | আমাকেও উপস্থিত থাকতে হয়েছিল এইসব আলোচনায়্ |

শক্তি ও উৎপল তোকে বাদ দিয়ে জেব্রা বের করতে পারবে বলে মনে হয় না | অন্ততঃ মলয় এটা হতে দেবে না | তাছাড়া সমস্ত নীচতার মধ্যেও সূক্ষ্ম বোধশক্তির দংশন শক্তিও এড়াতে পারবে না |…তোকে বাদ দিলে ওযে মারাত্মক অবস্থায় পড়বে তাও জানে | ও বলেছে জেব্রায় নাকি তোর লেখা থাকছে’- সমীর রায়চৌধুরী
এটুকু বুঝছি একটা চক্রান্ত হয়েছে | ঈর্ষার কারণ আছে | ঈর্ষা স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক | ঠিক না ভুল? ওসব থাক | ঈর্ষা প্রমাণ করে লোকটা সফল | সাফল্য শত্রু বৃদ্ধি করে | আপন হয় পর | তা’হলে কী শক্তি পর হয়ে গেল? দেয়াল আর দরজা এল সম্পর্কে? দেখি…
সেই চাইবাসা, সিংভূম…
      ‘ এখন তোমাকে চিঠি লিখতে ভালো লাগছে না | কথা বলতে ইচ্ছে করছে | …
তোমার চিঠিতে আমার বাড়ির বিষয় থাকে | আমি খুব পছন্দ করি নি জানো | এই কারণে নয় যে মাকে বা ভাইকে বা সাংসারিকতাকে আমি অপছন্দ করি | তা করা যায় না | আমি ওদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, আর ওদের চিন্তা করার যেমন বিশেষ কারণ রইলো না, চাইবো, তুমি ঐকারণে পীড়িত হছো না | এই সব সামান্যে তোমার পীড়া দেয় তা আমার অসহ্য |
আমি কতকগুল সহজ, দিনানুদৈনিকতা নষ্ট করে ফেলি সম্পূর্ণ আলস্যে, তুমি হয়তো সেগুলোর জন্য আমায় দোষী করবে | তুমি দোষী করলে আমি সত্যতা অমান্য করব না তবে আমি অপারগ | আমি অতো হিসেব করতে শিখিনি | আমি যেমন আমি তেমন | কিন্তু এ সত্ত্বেও তুমি আমায় না ভালোবেসে পারবে না | তোমার প্রতি আ-আলাপ নানাবিধ অন্যায় ক’রে চলেছি এবং পারিও দেখছি | জানি তোমার মতন আশ্রয় আমার নেই | সন্দীপ নয়, সমীরও নয় |
কেননা তোমার প্রতি আঘাতসমূহের সামান্য একটিতেও ওরা আমায় ঘৃণা করতো | এতৎসত্ত্বেও নিজেকে খুব ছোট মনে হয় না, হয়না হয়ত তোমার সুব্যবহারে বা আমার পূর্বোক্ত অর্থরহিত স্মৃতির জন্য’- শক্তি চট্টোপাধ্যায় |
ঘুরি ফিরি | কথাগুলো ঘুরপাক খায়…
      ‘মৃত্যু যত এগিয়ে আসছে আগাগোড়া আপনাকে মনে পড়ছে | আপনাকেই নম্বর দিয়েছি সবচেয়ে বেশী | হিসেবে এবং বেহিসেবে |’
      ‘যে আপনাকে নিয়ে আমি আজ পর্যন্ত কোথাও কিছু লিখিনি তাঁকেই বলছি দায়িত্ব নিতে |’
      ‘আপনি দায়িত্ব নিলে আরো অনেকেই অংশগ্রহণ করবেন | তাহলে আপনা থেকেই অন্যরকম হবে H.G.-এর ট্রেন্ডটা | যে-রকম ভেবেছিলুম আর কি | ‘
      ‘ জানি তোমার মতন আশ্রয় আমার নেই | সন্দীপ নয়, সমীরও নয় |
কেননা তোমার প্রতি আঘাতসমূহের সামান্য একটিতেও ওরা আমায় ঘৃণা করতো | এতৎসত্ত্বেও নিজেকে খুব ছোট মনে হয় না, হয়না হয়ত তোমার সুব্যবহারে ‘
বিভিন্ন মানুষের কথা | ভিন্ন প্রেক্ষিতে | তবুও তারা কোথায় যেন এক সূত্রে বাঁধা |
আঘাত আছে | প্রত্যাঘাত নেই | উদাসীনতা আছে | বর্জন নেই | একটা আশ্রয় | একটা নো-ম্যানস ল্যান্ডের হাতছানি |
হাতছানি | ঢুকে গেলাম…
      গ্রান্ড হোটেল | আনন্দ পুরষ্কার অনুষ্ঠান | অনুজ কবির কাঁধে হাত রেখে বলছে একজন- ‘ কবিতা জয়ের মাতৃভাষা’
এমনই একজন যাঁর অনেক পুরষ্কার ঝুলিতে কিন্তু কবিতার জন্য একটিও পুরষ্কার নেই |
পুরষ্কার শেষ কথা নয়্ | পুরষ্কারের পিছনে কত ছকবাজি…জানি জানি | তবুও অবাক হয়ে ভাবি কবিতার জন্য যে মানুষ অমরত্ব তাচ্ছিল্য করে তার মনে কী কোথাও কোন খেদ নেই? ঈর্ষা নেই?
এত অনায়াসে সমসাময়িক অগ্রজ বা অনুজদের শুধু ভাল, ভাল আর ভাল বলে যাওয়া |
মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত আনন্দ পুরষ্কার কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য হয়েও…
কী অদ্ভুত না!
আমি ঘুরি | কথারা ঘোরে | আমি দেখি….
      পারিজাত | ৯ তলা | অনেক লোক | স্তাবক | স্তাবক | কখনও স্তুতি তো কখনও হুঙ্কার…
তখনও মমতা আসেনি | বাংলা স্টেটসম্যান হৈ হৈ মাচিয়ে দিয়েছে | শাসকের ছাল খুলে নিচ্ছে | নিয়মিত কলামে গালি- ’গ্রেট গাঙ্গু’, সম্বোধন করে… ধান্দার কথা ইত্যাদি ইত্যাদি |
নাম আছে তবে ছদ্মনাম | স্তাবকেরা সব জানে… তারা কথা বলে-
– আপনি জানেন বেনামে এইসব কে লিখছে? আমরা জানি |
– আপনি এইসব অপপ্রাচারের বিরুদ্ধে কিছু বলুন |
– লোকে’ত বলবে আপনি প্রতিবাদ করেননি | তারমানে যা রটে তার কিছু’ত বটে…
কান পেতে আছি… কী একটা বলছে…শুনি…
– পড়ি’ত | রোজই পড়ি | ভাবি কবে প্রমাণ সহ আসবে আমি কী কী ধান্দা করেছি…করে কী কী পেলাম সেই লিস্ট…আসে না | আমি তাই আর ওসব নিয়ে ভাবি না |
বরং আমাকে নাড়া দিয়েছে একটি চিঠি | নামহীন একটি চিঠি | আমাকে অনুরোধ করেছে বাচ্চাদের জন্য, শুধুই বাচ্চাদের জন্য লিখতে…
সত্যি তো এখন তো অর্থের আর অত দরকার নেই | চুক্তিবদ্ধ থাকার জন্য লিখতে হয় কিছু লেখা কিন্তু আমি ভাবছি এবার বাচ্চাদের জন্যই লিখব…
– লিখছেন?
– আসলে আবাপ একসঙ্গে উপন্যাস জমা দিতে বলে | আমি’ত ওভাবে লিখিনা… তাই সমস্যা | দেখি কী হয়…
সঙ্গে সেই অমলিন হাসি |
কবি বলেছিলেন – কেউ কথা রাখে না…
কিন্তু কেউ কেউ রাখে | তাই হয়ত মৃত্যুর আগের দিন লিখতে পারার অবস্থায় না থেকেও মুখে মুখে বলে গিয়েছিলেন ছোটদের মহাভারত …
যা শালা! বলতে বলতে মৃত্যু এনে ফেললাম | একটু পিছিয়ে যাই…
’৮০ র দশকের শেষদিকে | গল্প হচ্ছে | হাঁটতে হাঁটতে…
– স্যার একবার নেতা হয়ে গেলে আর চিন্তা নেই | ওপরে নীচে ডাইনে বাঁয়ে | পয়সাই পয়সা | লাইফ পুরো স্মুথ এন্ড ফর্সা…
মিতভাষী বাংলা শিক্ষক বলেছিলেন- ভোট দাঁড়ালে নেতা হওয়া যায় | পয়সা দিয়ে ভয় দেখিয়ে ভোট কেনাও যায়… কিন্তু নেতৃত্ব এক অর্জিত গুণ | যা অর্জন করতে হয় | তার জন্য দরকার এক দীর্ঘ প্রস্তুতি… নিরুচ্চারিত বহিঃপ্রকাশহীনতা নেতৃত্বের এক উল্লেখযোগ্য দিক | নিজের মত বলবে কিন্তু চাপাবে না | অ-মানবিক সমালোচনা শোষন করার ক্ষমতা…
– ও বুঝেছি..চুমু থেকে চড় কোনকিছুতেই এক্সপ্রেশান বদলাবে না | অন্তত বাইরে দেখা যাবে না | কী ডেঞ্জারেস… অমানবিক নীরবতা…
অমানবিক নীরবতার ওপর দু-ফোঁটা…
      ‘ কত কথা যে আপনি রেখে দিয়েছেন- অন্য যে কেউ হলে ফেটে যেত | আপনি আত্মজীবনী লিখলে সে হবে এক পারমানবিক বিস্ফোরণ’- সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
      ‘আজকের এই সাহিত্য সমাজে থেকেও বোধহয় একমাত্র মানুষ, যিনি কখনো কারো নিন্দে করেননি | এমনকি আড্ডার সময়েও অন্য কেউ কারো নিন্দেমন্দ করলে তাঁকে থামিয়ে দিতেন | সর্বদা অকুন্ঠভাবে নিজের মত প্রকাশ করেছেন তেমনই অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, এ গুণটা আমি মনে করি খুব দুর্লভ’- শঙ্খ ঘোষ
মনে এল, কবি লিখেছেন-
     ’ কেউ আমাকে শিরোপা দেয়, কেউ দু’চোখে হাজার ছি ছি
      তবুও আমার জন্ম-কবচ ভালোবাসাকে ভালোবেসেছি’( জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় ন)
দু’ আনা নিজের জন্য রাখত মানুষটা | আর এই দু’ আনাতেই রয়েছে এই প্রস্তুতিগুলো… | সামাজিক সম্পর্ক পালনের প্রস্তুতি | আরও কিছু আছে | সে গল্প পরে..অন্যকোনদিন…
কিন্তু ভাট শেষ করার আগে… নাম |
যদিও সকলেই বুঝে গেছেন কার প্রস্তুতি পর্ব | জানেন সকলে বাংলা শিক্ষকের নাম… তবুও…
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শ্যামল কুমার মিত্র…
৭/৯ – সুনীলের জন্মদিন |
৫/৯ – শিক্ষক দিবস |
তাই, আজ | শ্যামল- সুনীল এক পাতাতেই থাক |
***********
তথ্য সূত্র –
১- সুনীলকে লেখা চিঠি , তালপাতা প্রকাশনী
২- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় , সম্পাদনা শ্যামলকান্তি দশ, অশোককুমার মুখোপাধ্যায়
৩- সন্দীপনের চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরি, প্রতিভাস
৪- একা এবং কয়েকজন ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা |
৫- এই সময়, একান্ত আলাপে স্মৃতিতে মগ্ন শঙ্খ ঘোষ

এমন আরো নিবন্ধ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন