শুক্রবার

হাংরি আন্দোলন ও একজন হাংরি কবি -- ত্রিদিব মিত্র -- নিষিদ্ধ বিশ্বাস রচিত

হাংরি আন্দোলন এবং একজন হাংরি কবি

আন্দোলনের  শুরু : ১৯৬১  সালের নভেম্বরের দিকে পাটনা শহর হতে এ আন্দোলন শুরু হয় । যে কবিরা এ আন্দোলন শুরু করেছিলেন তাদের মধ্যে মলয় রায় চৌধুরী, ত্রিদিব মিত্র , সুনিমল বসাক, শক্তি চট্রোপাধ্যায়, সমীর রায় চৌধুরী এবং বিনয় মজুমদার  ছিলেন অন্যতম । বাঙলা বা ভারতীয় ইতিহাসে ইশতেহার বিলি করে সাহিত্য আন্দোলন মনে হয় এর (হাংরি) বাইরে আর নেই । যদিও প্রথম প্রকাশিত ইশতেহারটি ইংরেজি ভাষায় করা হয়েছিল । তার কারন তৎকালে পাটনায় কোন বাংলা প্রেস ছিল না । ১৯৬১ হতে ১৯৬৪ পযর্ন্ত এ আন্দোলন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সমর্থ  হয়েছিল । বেশ কিছু বাস্তব অবস্থার কারনে সরকারের কোপানলে পড়ে এবং কয়েকজন হাংরি কবির বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ১৯৬৪ সালের পর এ আন্দোলন তার প্রকাশ্যতা হারায় ।  নকশাল বাড়ীর আনোলনের পর উত্তর বঙ্গের তরুন কবিরা এ আন্দালনকে আবার জীবন দান করার চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু তাত্বিক ভিত্তি না থাকায় তারা সফলতা পায় বলে অনেকে মনে করেন ।      আর এ আন্দোলকে যারা সমর্থন করতো এবং  কবিতায়- চেতনায় ধারন করতো তারা ইতিহাসে হাংরি কবি বা হাংরি জেনারেশন নামে পরিচিত ।
ছবি- হাংরি আন্দোলনের ইশতেহার-১৯৬৪
হাংরি আন্দোলন: ত্রিদিব মিত্র কবিতা

হাংরি জেনারেশন আন্দোলন: রাজসাক্ষী সুভাষ ঘোষ-এর মুচলেকা
সুভাষ ঘোষ-এর মুচলেকা:
আমার নাম সুভাষচন্দ্র ঘোষ। গত এক বৎসর যাবত আমি কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে যাতায়াত করছি। সেখানে আমার সঙ্গে এক দিন হাংরি আন্দোলনের উদ্ভাবক মলয় রায়চৌধুরীর পরিচয় হয়। সে আমার কাছ থেকে একটা লেখা চায়। হাংরি জেনারেশন বুলেটিনের খবর আমি জানি বটে কিন্তু হাংরি আন্দোলনের যে কী উদ্দেশ্য তা আমি জানি না। আমি তাকে আমার একটা লেখা দিই যা দেবী রায় সম্পাদিত হাংরি জেনারেশন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আমি তা আমার রুমমেট শৈলেশ্বর ঘোষের কাছ থেকে পাই। সে হাংরি বুলেটিনের একটা প্যাকেট পেয়েছিল। আমি এই ধরণের আন্দোলনের সঙ্গে কখনও নিজেকে জড়াতে চাইনি, যা আমার মতে খারাপ। আমি ভাবতে পারি না যে এরকম একটা পত্রিকায় আমার আর্টিকেল ‘হাঁসেদের প্রতি’ প্রকাশিত হবে। আমি হাংরি আন্দোলনের আদর্শে বিশ্বাস করি না, আর এই লেখাটা প্রকাশ হবার পর আমি ওদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছি।
(স্বাক্ষরের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ )
সুভাষ ঘোষ পরে একটি ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, যে দলটি পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছিল। তিনি এই দলের সদস্য হন এবং দলের রাজনৈতিক মিছিলে ও র‌্যালিতে দলের পতাকা নিয়ে ইনক্লাব জিন্দাবাদ করে বেড়াতেন। তিনি ভুলে গিয়েছিলেন যে হাংরি জেনারেশন আন্দোলন একটি প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলন । তাঁর এই অধৎপতনের কারণে পরবর্তীকালে তাঁর কলম থেকে আর উল্লেখযোগ্য লেখা বেরোয়নি।
হাংরি জেনারেশন : রাজসাক্ষী শৈলেশ্বর ঘোষ-এর মুচলেকা
হাংরি জেনারেশন সাহিত্য আন্দোলনে সবচেয়ে লজ্জার ঘটনা ছিল দুই জন আন্দোলনকারীর রাজসাক্ষী হওয়া। এনারা দুইজন হলেন শৈলেশ্বর ঘোষ ও সুভাষ ঘোষ। কেবল রাজসাক্ষী হওয়াই নয়, এনারা দুই জন মুচলেকাও লিখে দিয়েছিলেন। মলয় রায়চৌধুরীর যখন নিম্ন আদালতে একমাসের কারাদণ্ডের আদেশ হল, এনাদের টিকিটিও দেখতে পাওয়া যায়নি। প্রায় দশ বছর চুপচাপ থেকে এনারা আবার উদয় হন। হাংরি জেনারেশন শব্দটি এড়িয়ে এনারা ক্ষুধার্ত নাম দিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করা আরম্ভ করেন। তা এই জন্য যে মুচলেকায় তাঁরা লিখে দিয়েছিলেন যে হাংরি জেনারেশন আন্দোলন ও ম্যাগাজিনের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই।
তারপর আটের দশকে মলয় রায়চৌধুরী পূনর্বার কবিতা লেখা আরম্ভ করলে এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মলয় রায়চৌধুরীর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হতে থাকলে এনাদের মনে হয় যে তাঁদের মৌরসিপাট্টা বুঝি শেষ হতে চলল। কিন্তু পাঠকবর্গ ইতোমধ্যে তাঁদের কুকর্মের কথা জেনে গিয়েছিলেন। এনারা দুইজন বহু ছোকরাকে জুটিয়ে পুনরায় হাংরি জেনারেশনের জাওয়াজ তোলেন। পাঠক আর তাঁদের বিশ্বাস করছে না দেখে তাঁরা হাংরি জেনারেশন সংকলন বা হাংরি জেনারেশন সমগ্র ইত্যাদি নামে ঢাউস গ্রন্হাবলী বাজারে ছাড়তে আরম্ভ করেন। এই গ্রন্হগুলিতে মলয় রায়চৌধুরী তো ছিলেনই না, উপরন্তু প্রধান-প্রধান হাংরি আন্দোলনকারীদেরো পাওয়া যাবে না। ১৯৬১-এর মূল আন্দোলনকারীরা রাজসাক্ষীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে চাননি, লেখাও দেননি। শেষ পর্যন্ত এই দুইজন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতক প্রতিপন্ন হন যা অধ্যাপক শিবনারায়ণ রায় তাঁর জিজ্ঞাসা পত্রিকার সম্পাদকীয়তেও লিখেছিলেন।
বিশ্বাসঘাতক দুইজনের মুচলেকা নিম্নে দেয়া হল:
শৈলেশ্বর ঘোষ:
আমার নাম শৈলেশ্বর ঘোষ। আমার জন্ম বগুড়ায় আর বড় হয়েছি বালুরঘাটে। আমি ১৯৫৩ সনে বালুরঘাট হাই ইংলিশ স্কুল থেকে স্কুল ফাইনাল পাশ করেছি, ১৯৫৫ সনে বালুরঘাট কলেজ থেকে আই এস সি, ১৯৫৮ সনে বালুরঘাট কলেজ থেকে বি এ, আর ১৯৬২ সনে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বাংলায় স্পেশাল অনার্স। ১৯৬৩ সনে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে একদিন কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসে দেবী রায় ওরফে হারাধন ধাড়া নামে একজন তাঁর হাংরি জেনারেশন ম্যাগাজিনের জন্য আমাকে লিখতে বলেন। তারপরেই আমি হাংরি আন্দোলনের লেখকদে৪র সঙ্গে পরিচিত হই। আমি ব্যক্তিগতভাবে খ্যাতিমান লেখক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, রবীন্দ্র দত্ত, বাসুদেব দাশগুপ্ত, প্রদীপ চৌধুরী এবং উৎপলকুমার বসুকে চিনি। গত এপ্রিল মাসে একদিন কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসে মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে আমার দেখা হয়, এবং তিনি আমার কাছে কয়েকটা কবিতা চান। তাঁর কাছ থেকে একটা পার্সেল পেয়েছি। আমি মলয় রায়চৌধুরীকে চিনি। তিনি হাংরি আন্দোলনের স্রষ্টা। হাংরি জেনারেশন ম্যাগাজিনে আমি মোটে দুবার কবিতা লিখেছি। মলয় আমাকে কিছু লিফলেট আর দু তিনটি পত্রিকা পাঠিয়েছিলেন কিন্তু সেগুলি সম্পর্কে কোনো নির্দেশ তিনি আমাকে দেননি। সাধারণত এই সব কাগজপত্র আমার ঘরেই থাকত। এটুকু ছাড়া হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে আমি আর কিছু জানি না। অশ্লীল ভাষায় লেখা আমার আদর্শ নয়। ১৯৬২ থেকে আমি হুগলি জেলার ভদ্রকালীতে ভূপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যালয়ে স্কুল টিচার। মাইনে পাই দু’শ দশ টাকা। বর্তমান সংখ্যা হাংরি বুলেটিনের প্রকাশনার পর, যা কিনা আমার অজান্তে ও বিনা অনুমতিতে ছাপা হয়, আমি এই সংস্হার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। ভবিষ্যতে আমি হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখব না এবং হাংরি পত্রিকায় লিখব না

হত্যাকাণ্ড
ত্রিদিব মিত্র
আমাকে বারবার জীবন থেকে হড়কে জীবনের ফঁদাই পড়তে হচ্ছে
মৃত্যু কেবলই কেবলই প্রতারণা করছে আমার সঙ্গে
চারটে বাঘ আর তিনটে বুনো শুয়োরের
ধ্বস্তাধস্তি চলছে আবছা জ্যোৎস্নায়
আমার মিথ্যে জিভ থেকেই সত্যের চ্যালেঞ্জ ফঁড়ে
ঝলসা দিচ্ছে মানু-বাচ্চাদের
তাদের কান্না শুনে বধির হয়ে যাচ্ছে আমার কান
আনন্দে সাততলা অব্দি লাফিয়ে উঠছে আমার জিভ
প্রেমিকার কষ্ট দেখে আনন্দে কঁদে উঠেছিলাম আমি
চুমু খেতে গিয়ে আলজিভ শুকিয়ে আসছে আমার
চারিদিকের ভিজে স্যাঁতসেতে অন্ধকার থেকে
আমি দানব না যিশুকৃষ্ট বুঝতে না পেরে
রেস্তঁরায় ভিড় করছে মেয়েমানুষেরা
আজ আর কোনো রাস্তা খঁজে পাচ্ছে না কেউ সরলভাবে হাঁটবার
সব রাস্তাই লুটিয়ে থাকে
সব পাপোষের তলায় গড়িয়ে যায় ধুলোর ঝড়
সব জীবনের মথ্যেই ভয়ংকর কাঁপানো অর্থহীনতা শূন্যতা
আঃ মৃত্যু বাঞ্চোৎ মৃত্যু
অপমৃত্যুও ফেরার হয়ে পালাচ্ছে আমার ভয়া
কেননা আমি বুঝে গেছি মৃত্যুর দমবন্ধ ভান
কেননা আমি মৃত্যুর কাছে গিয়েছিলাম সরল চোখে
ভয়ে কঁচকে গিয়েছিল তার চোখ
অন্ধ চোখে কঁদে উঠেছিল মাথা নিচূ করে
এবং খালি হাতে নির্জন রোদে ফিরতে হল আমাকে জটিল চোখে
নিজেকে নিজের থেকেও লুকিয়ে রাখতে পারছি না আর
আমার নপুংসকতা দেখে তুমি হেসে উঠেছিলে-আমার ভালবাসা
ভয় আর ভালবাসার মধ্যে শুয়ে তুমি ফিরে গেলে ভয়ের কাছে
বঁচার তাগিদে তুমি ফিরে এলে মগজের কাছ-বরাবর
ফালতু মগজের জ্যামিতিক অঙ্ক থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলাম আমি বিশৃঙ্খলায়
সভ্যকে ঘৃণা করেও লুকিয়ে রইলে সভ্যতার কলকব্জায়
বদহজম থেকে তৈরি হল আমার বদরাগ
সমাজের ভুল চেতনা থেকে নিজেকে ঝুলিয়ে দিলাম শূন্যের বেতারে
টেলিফোনের মধ্যে দিয়ে রোজ তিন কোটি চুমু
এপার-ওপার করছে পৃথিবীময়
রেলের মোটা তার বেয়ে উড়ে যাচ্ছে ৭৪ কোটি মাছি
আমার শরীরের চারিদিকে অসংখ্য ‘টোপ’
নিজেকে ঝাঁঝরা করে জীবনের সঙ্গে মানুষের সঙ্গে
খেলতে চাইলাম চাতুরী
তোমার প্রতারণা থেকে ভালবাসা আলাদা করতে পারছি না একদম
আমি ভাবছি আমাদের প্রথম অভিসম্পাতের কথা
আমি ভাবছি আমাদের শেষ চুম্বনের কথা
আমার দিব্যজ্যোতি আমার আম্ধকার
আমার চারধারে বেইজ্জতি আর বেলেল্লাপনা বারবার
চলছে মানুষের
আমি বুঝতে পারছি মানুষ মানুষকে ভালবাসতে পারছে না
….মানুষ মানুষকে কোনোদিনই ভালবাসেনি
উঁচু বাড়ির মাথা থেকে লাফিয়ে পড়ছে হৃদয়সুদ্ধ লাশ
আমি দেখতে পাচ্ছি প্রয়োজন কিরকম মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে আকাশের দিকে
আমার ধর্ম কি মনে করতে পারছি না কোনোদিন বুঝিনি বলে
আমার শিরা থেকে রক্ত ছিনিয়ে নেবে বলে
স্হায়ী-অস্হায়ী যুদ্ধ চলছে মানুষের আগুপিছু
পাঁজর গুঁড়ো করে বেরিয়ে আসছে রজনীগন্ধার ডানা
অ্যালকহলিক রক্তের ফেনা থেকে তৈরি হচ্ছে আঁশটৈ ক্ষুরধার ভালবাসা
আমি ক্রমশ প্রেম থেকে শরীরহীনতায় ভাসছি
প্রেমিকার বেগুনি মুখ জ্বলে উঠছে ফঁসে যাচ্ছে প্রয়োজনমত
অদরকারি কাগজপত্রে ঢেলে দিচ্ছি আমার বর্তমান
কবিতা আমার বুক থেকে শুষে নিচ্ছে আমার আয়ু
আমার ভালবাসা রক্তমাংস থেকে মানুষ তৈরি করছে তাদের ফিচলেমি
অসুস্হ ভালবাসা ফিরিয়ে আনবার জন্য
মনুষ্যযন্ত্রের সঙ্গে হায় তুমিও
আমার সকল উত্তাপ জযো করে তৈরি করলাম লালগোলাপের পালক
ব্যবসায়িক উৎপাদন থেকে কুড়িয়ে নিলে তুমি একমুঠো প্রতারণা
আগুনের হল্কা চুঁড়ে দিলে আমার গায়ে
শিশুর মত হেসে উঠলাম আমি
পুড়ে গেল আমার সমস্ত শরীর
আকাশ ঘঁষে ছুটে গেল আমার ক্রোধ
স্বাধীনতার হাতে হাত রাখতে পারছে না কেউ ভয়ে
ওঃ
আমার আর সবার মাঝখানে গজিয়ে উঠছে একটা সুদীর্ঘ গভীর ফাটল
আমি বুঝতে পারছি আমার দ্বারা কিছুই হবে না
নিজেকেও তেমন করে ভালবাসা হল না আমার
এই এক জন্মেই হাঁপিয়ে উঠছি আমি
এক সঙ্গেই হাসছি আর হাসছি না
ওঃ ক্লান্তি ক্লান্তি – অক্লান্ত আওয়াজ – আঁকাবাঁকা টানেল –
লুপ – পরিসংখ্যান – ক্ষুধা – মহব্বৎ – ঘৃণা –
কেবল বোঝা বয়েই জীবন চলে যায় ১০১% লোকের
আত্মাকে খঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সমস্ত শরীর ছেঁকেও
বিপ্লবউত্তেজনানারীসংঘর্ষহিংস্রতাবন্যনীরবতা নাচছে
আমি একবারও নিজের দিকে তাকাতে পারছি না ফিরে
মানুষের কোনো কাজই করে উঠতে পারলাম না আজ ওব্দি
ফালতু অব্যবহার্য হয়ে কুঁকড়ে শুয়ে আছি বমিওঠা চোখে
মগজে চোলাই কারবার চলছে গুপ্ত ক্ষমতার
কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে লালা ওরফে আমার ভালবাসা আমার অসহায়তা
মানুষের রক্তাক্ত পেঁজা শরীরের পাহাড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে
অক্ষম আর আঊর্ব স্বাধীনতা
মানুষের ক্ষীণ শরীর বেয়ে শরীর ঘিরে শরীর ধরে চলেছে
অসংখ্য বিশৃঙ্খল শৃঙ্খলা
ওঃ আমি কোনো দিনই ভালবাসতে চাইনি
আঃ…………………………….আঃ
কলজে গঁড়িয়ে যায় চাপা হিংস্রতায়
বুকের ভেতর ইনজিনের চাপা ক্রোধ
রক্তের উত্তেজনে থেকে তৈরি হচ্ছে বন্যতা
অস্তিত্বহীন আত্মার পায়ে স্বেচ্ছায় প্রণাম রেখেছিল সুবো
তিন মাস জঘন্য নীরবতার পর আঁৎকে উঠে কুঁকড়ে গিয়েছিল প্রদীপ
মানুষের সাহসিকতাকে ভুল করে সন্দেহ করতে শিখেছি
ভুল জেনে ভুল মানুষের সঙ্গে মিশে
আমি চালাক হতে ভুলে যাচ্ছি স্বেচ্ছায়
ভাঁটার সঙ্গে সঙ্গে চতুরতা মূর্খতাও গড়িয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে
ত্রিদিবের মুখ ত্রিদিব নিজেই কতদিন চিনতে পারেনি
আদপে সত্য কোনো স্পষ্ট মুখ খঁজে পাচ্ছি না নিজের
“মানুষের নিজস্ব কোনো চরিত্র নেই” বলতে ককিয়ে উঠেছিল
৩৫২ কোটি মানুষ তায় ঐতিহ্য আর পোষা চরিত্রহীনতা
ওঃ অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে এখন
কে বা কারা গলা টিপে ধরছে ভুল করে
আমার ।
তাদের অজান্তেই…
(১৯৬৩ সালে শিবপুরের পুরানো বাড়িতে থাকাকালীন রচিত, এবং মলয় রাচৌধুরী সম্পাদিত ‘জেব্রা’ পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত । )
অনেকে মনে করেন হাংরি আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে । কিন্তু বর্তমান আধুনিক কবিদের  ( সরকারি দালাল গুলোকে বাদ দিলে যারা থাকে ) লেখা কবিতা বা তাদের চিন্তা চেতনা দেখলে আমার মনে হয় না এ আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে । তবে এটা ঠিক আন্দোলনের রকমেরও পরিবর্তন হয়েছে । কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে যায় নি তবে পরিবর্তন হয়েছে ভাষার স্বাভাবিক পরিবর্তনশীলতার মত । আর স্পেংলারের সংস্কৃতি সংগা বা পরিবর্তনের নিয়মকে যথার্থ  ধরলে , আমাদের বর্তমান সংস্কৃতি কি স্বাভাবিক গতিধারায় চলছে । আমাদের সংস্কৃতি কি নিজ সমাজ হতে খাদ্য বা বেচে থাকার মত উপাদা  পাচ্ছে ? উত্তর যদি হয় না তবে আমাদের সংস্কৃতি কোন পথে যাবে ?

Report this ad

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন