একটা সাহিত্য অনুষ্ঠানে গিয়ে আচমকাই পরিচয় ঘটেছিল রাজা সরকার, সমীরণ ঘোষ
এবং মনোজ রাউতের সঙ্গে। যদিও ওদের সচরাচর কোনো সাহিত্য অনুষ্ঠানে দেখা যেত
না তবু তিনটে মুখই আমার পরিচিত ছিল। সেটাই স্বাভাবিক, শহরে কজনই বা
লেখালিখি করতো! জানা ছিল ওদের পত্রিকার নাম কুরুক্ষেত্র, ঋত্বিক এবং
ধৃতরাষ্ট্র। ওরা আমাকে গুরুত্ব দিতো না জন্য আমিও ওদের এড়িয়ে চলতাম। সেদিন
কিভাবে যেন দূরত্বটা ঘুচে গিয়েছিল! অনুষ্ঠান শেষে আমরা চারজন দীর্ঘক্ষণ
আড্ডা দিয়েছিলাম। শুধু সেদিন নয়, তার পরের দিনও। এমন কী তার পরের পরের পরের
দিনও। অবশ্য দিন না বলে সন্ধ্যে বলাটাই সঠিক হবে।
আড্ডা দিচ্ছি বটে কিন্তু টের পাচ্ছি তেমন জমছে না। আমার লেখালিখি নিয়ে ওদের তিনজনেরই কোনো মাথাব্যথা নেই। ওদের লেখাপত্র নিয়ে আমি মাথা খাটাতে চাইছি বটে কিন্তু হালে পানি পাচ্ছি না কারণ ওদের লেখালিখির ধরণ ছিল আমার ঘরানার চে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের। এমন কিছু শব্দ সেসব লেখায় থাকত যেগুলোকে এতদিন অশ্লীল বলেই মেনে এসেছি।তাছাড়াও পুরোটাই এমন খিটকেলে ধরণের যে চাইলেও এগোনো যাচ্ছে না। এরকম পরিস্থিতিতে বন্ধুত্বও এগোনর কথা নয়। আচ্ছা, দেখা হবে, এরকম কিছু একটা বলে উঠে পড়া এবং ভবিষ্যতে ওপথ না মাড়ানোটাই ছিল স্বাভাবিক পন্থা। কিন্তু তেমনটা হলো না। কেন? জানি না। কে জানে, পুরোন দিনের গল্পে যেমন থাকত, বিধাতা অলক্ষে দাঁড়াইয়া হাসিলেন, প্রথমদিনের আলাপের ক্ষণে হয়ত তেমন কিছু ঘটেছিল! হয়ত কেন, আলবত ঘটেছিল। নাহলে আমি কেনই বা একতরফা ভাবে প্রতি সন্ধ্যেয় হাঁ করে ওদের কথা গিলে যাব? কেনই বা ওদের পরামর্শ মোতাবেক নিজের পাঠক্রম বদলে নেব!
রাজা, মনোজ এবং সমীরণের সঙ্গে যে ততদিনে হাংরিদের যোগাযোগ ঘটে গিয়েছে, সেটা কিন্তু তখন জানতাম না। অবশ্য জেনেই বা কী হোত, আমি তো হাংরি আন্দোলন কী বস্তুু সেটাই জানতামই না!
ওদের সুবাদে পরিচিত হলাম হাংরি সাহিত্যের সঙ্গে। পড়লাম সুভাষ, শৈলেশ্বর, ফালগুনি, প্রদীপ, বাসুদেব, অরুণেশদের লেখাপত্র। পড়ে কাঁচামাথা ঘুরে যাবার উপক্রম। এর নাম সাহিত্য! সেই কবে থেকে সাহিত্য পড়ে আসছি, সেসবে যৌন বিবরণও যথেষ্টই ছিল কিন্তু খানিকটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। এরকম সরাসরি নয়। পড়ে শরীর কিছুটা গরম হোত। কিন্তু এরা যেন চামড়া তুলে নিয়ে লালাভ শরীরটা দেখাচ্ছে। পড়তে গিয়ে গা ঘুলিয়ে ওঠে ! ভাবি, এসবও যদি সাহিত্য পদবাচ্য হয়ে থাকে তবে তা কখনই সরস্বতীর আশীর্বাদ পুষ্ট হোতে পারে না বরং অভিশাপগ্রস্ত বলা যেতে পারে। হয়ত সে কারণেই এদের জেল জরিমানা ঘটেছিল।
তবে এদের ভেতরে বাসুদেব দাশগুপ্তর লেখাপত্র খানিকটা টেনেছিল। ওর টেকনিকে খানিকটা মুগ্ধতা জেগেছিল। মনে হয়েছিল সর্বাংশে অভিনব। তাবলে বাসুদেবের সব লেখাই যে ভালো লেগেছিল, তা নয় কেননা কিছু গল্পকে পূর্বদোষেই দুষ্ট মনে হয়েছিল।
দুঃখ পেয়েছিলাম। আচ্ছা, যাদের এত পড়াশোনা, কলম যাদের এতটা শক্তিশালী তারা কেন শব্দ সচেতন নন! অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে কি সুখ পান? কেন লেখেন এমন? বিশেষ করে অশ্লীলতার দায়ে রাষ্ট্র কর্তৃক অভিযুক্ত হওয়ার পরও!
এসব প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে পড়লাম ওদের সাক্ষাতকার এবং প্রবন্ধগুলো। চোখের সামনে থেকে বন্ধ জানালা খুলে গেল। জানলাম, সাহিত্য নিছকই বিনোদনের মাধ্যম নয়। বরং বিনোদনের সাহিত্য এক আফিম। পাঠক রুচি নামক ইওটোপিয়াকে সামনে রেখে শিল্প সংস্কৃতির যে বেসাতি চালু আছে তার মূল উদ্দেশ্য শুধুই মুনাফা নয়,জনচেতনাকে দাবিয়ে রাখাও। সাহিত্য এবং জীবনকে একই মুঠোয় ধরতে হয়।
জানলাম, সত্য যদি শিব হয়েও থাকে কিন্তু সেটা আদৌ সুন্দর নয়। তাছাড়া সত্য কখনও একমাত্রিক হয় না। বরং জীবনের মূল সত্যকে গোপন করতেই কলাকৈবল্যবাদ কিংবা প্রগতিশীলতার তত্ত্বের জন্ম।
এতদিন জানতাম, লিটল ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠানের আঁতুড় ঘর। এখানে হাঁটতে শিখে কবি/লেখকবৃন্দ দৌড়ে গিয়ে ঢুকে পড়ে প্রতিষ্ঠানের বারান্দায়। ব্যস, খোলা বারান্দায় এরপর যতখুশী নাচানাচি, জাগলারি, হাতসাফাই দেখানোর অনন্ত স্বাধীনতা। বারান্দার নীচে দাঁড়িয়ে পাঠককূল সেসব দেখে জীবন সার্থক করে তুলবে। ওই ভিড়ের মধ্যে থাকা কয়েকজন লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক কলার তুলে বলবেন, বন্ধুগণ, ওই যে প্রোদুনোভা ভল্ট স্পেশালিস্টকে দেখছেন, উনি আমার সাপ্লাই।
এবার জানলাম,লিটল ম্যাগাজিন কোনো সমান্তরাল সাহিত্য সৃষ্টির আখড়া নয়, বরং প্রচলিত সাহিত্যের বিপরীতে এর অবস্থান। লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে আরেকটি শব্দ ওতপ্রোত জড়িত- আন্দোলন। যে আন্দোলনের উদ্দেশ্য,পাঠককে সচেতন করে তার প্রত্যাশা বাড়ানো। লিটল ম্যাগাজিন বাজারি রুচির তোয়াক্কা তো রাখেই না বরং তেজস্ক্রিয় ভাষা মারফৎ প্রতিষ্ঠিত ধ্যান-ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। কারণ প্রতিষ্ঠিত ধ্যান-ধারণা সব সময়ই ওপর থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়ে থাকে। জীবনের তলা থেকে উঠে আসে না। গা গতরের ভাষা ব্যবহার করে ভাষাকে এলিটিজম থেকে মুক্ত করাটাই লিটল ম্যাগাজিনের প্রধান কাজ। পাঠককে ঘা মেরে জাগাতে ভাষা সন্ত্রাস ঘটাতে হবে। একমাত্র সেভাবেই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা যাবে। পরিচিত হলাম নতুন শ্লোগানের সঙ্গে, প্রতিবাদের সাহিত্য।
কিন্তু কেমন হবে সেই সব লেখাপত্র? পড়লাম,মানিক-জীবনানন্দ-জগদীশ-সতীনাথ-শান্তিরঞ্জন-অদ্বৈত-দস্তেয়ভস্কি- মিলার- জেঁনে- র্যাঁবো- বারোজ - কামু- কাফকা। পড়লাম মার্কসবাদ সংক্রান্ত কিছু লেখাপত্রও। কারণ একমাত্র মার্কসবাদই তাত্ত্বিক ভাবে প্রমাণ করেছে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা নিছকই আবেগ সঞ্জাত কোনও রোমান্টিক আগ্রহ নয়। এর সুস্পষ্ট আর্থ- সামাজিক-রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে। একমাত্র মার্কসবাদীরাই জানে, বিপ্লবী কর্মকান্ডের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে যুক্ত করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা অসম্ভব।
জানলাম, বুঝলাম কিন্তু মেনে নিলাম কি? যদি মেনে নিয়ে থাকি কেন নিলাম? এসব কূট প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফের নিজের প্রসঙ্গে ফিরতে হবে। ত্রুটি মার্জনীয়।
এমন এক পরিবারে জন্মেছি যাদের ঝুঁকি বহির্ভূত জীবন যাপন করে চলাটাই একমাত্র লক্ষ্য। কোনো ঝুট ঝামেলার আভাসটুকু পেলে সঙ্ঘারামে খিল এঁটে বসে থাকাটাই ছিল পারিবারিক রেয়াজ। মনুষ্য জীবন কি খইমুড়ি নাকি যে অহরহ ফুটবে? তার চাই নিস্তরঙ্গ জীবন।সুতরাং স্নেহ-প্রীতি-সম্মান-ভক্তি-শ্রদ্ধা -শৃঙ্খলা, এজাতীয় কিছু শব্দের প্রতি পরিবারের প্রত্যেকের ছিল অন্ধ আনুগত্য। প্রতিবাদ নামক শব্দটার ধার কাউকেই খুব একটা ধারতে দেখিনি।
আড্ডা দিচ্ছি বটে কিন্তু টের পাচ্ছি তেমন জমছে না। আমার লেখালিখি নিয়ে ওদের তিনজনেরই কোনো মাথাব্যথা নেই। ওদের লেখাপত্র নিয়ে আমি মাথা খাটাতে চাইছি বটে কিন্তু হালে পানি পাচ্ছি না কারণ ওদের লেখালিখির ধরণ ছিল আমার ঘরানার চে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের। এমন কিছু শব্দ সেসব লেখায় থাকত যেগুলোকে এতদিন অশ্লীল বলেই মেনে এসেছি।তাছাড়াও পুরোটাই এমন খিটকেলে ধরণের যে চাইলেও এগোনো যাচ্ছে না। এরকম পরিস্থিতিতে বন্ধুত্বও এগোনর কথা নয়। আচ্ছা, দেখা হবে, এরকম কিছু একটা বলে উঠে পড়া এবং ভবিষ্যতে ওপথ না মাড়ানোটাই ছিল স্বাভাবিক পন্থা। কিন্তু তেমনটা হলো না। কেন? জানি না। কে জানে, পুরোন দিনের গল্পে যেমন থাকত, বিধাতা অলক্ষে দাঁড়াইয়া হাসিলেন, প্রথমদিনের আলাপের ক্ষণে হয়ত তেমন কিছু ঘটেছিল! হয়ত কেন, আলবত ঘটেছিল। নাহলে আমি কেনই বা একতরফা ভাবে প্রতি সন্ধ্যেয় হাঁ করে ওদের কথা গিলে যাব? কেনই বা ওদের পরামর্শ মোতাবেক নিজের পাঠক্রম বদলে নেব!
রাজা, মনোজ এবং সমীরণের সঙ্গে যে ততদিনে হাংরিদের যোগাযোগ ঘটে গিয়েছে, সেটা কিন্তু তখন জানতাম না। অবশ্য জেনেই বা কী হোত, আমি তো হাংরি আন্দোলন কী বস্তুু সেটাই জানতামই না!
ওদের সুবাদে পরিচিত হলাম হাংরি সাহিত্যের সঙ্গে। পড়লাম সুভাষ, শৈলেশ্বর, ফালগুনি, প্রদীপ, বাসুদেব, অরুণেশদের লেখাপত্র। পড়ে কাঁচামাথা ঘুরে যাবার উপক্রম। এর নাম সাহিত্য! সেই কবে থেকে সাহিত্য পড়ে আসছি, সেসবে যৌন বিবরণও যথেষ্টই ছিল কিন্তু খানিকটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। এরকম সরাসরি নয়। পড়ে শরীর কিছুটা গরম হোত। কিন্তু এরা যেন চামড়া তুলে নিয়ে লালাভ শরীরটা দেখাচ্ছে। পড়তে গিয়ে গা ঘুলিয়ে ওঠে ! ভাবি, এসবও যদি সাহিত্য পদবাচ্য হয়ে থাকে তবে তা কখনই সরস্বতীর আশীর্বাদ পুষ্ট হোতে পারে না বরং অভিশাপগ্রস্ত বলা যেতে পারে। হয়ত সে কারণেই এদের জেল জরিমানা ঘটেছিল।
তবে এদের ভেতরে বাসুদেব দাশগুপ্তর লেখাপত্র খানিকটা টেনেছিল। ওর টেকনিকে খানিকটা মুগ্ধতা জেগেছিল। মনে হয়েছিল সর্বাংশে অভিনব। তাবলে বাসুদেবের সব লেখাই যে ভালো লেগেছিল, তা নয় কেননা কিছু গল্পকে পূর্বদোষেই দুষ্ট মনে হয়েছিল।
দুঃখ পেয়েছিলাম। আচ্ছা, যাদের এত পড়াশোনা, কলম যাদের এতটা শক্তিশালী তারা কেন শব্দ সচেতন নন! অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে কি সুখ পান? কেন লেখেন এমন? বিশেষ করে অশ্লীলতার দায়ে রাষ্ট্র কর্তৃক অভিযুক্ত হওয়ার পরও!
এসব প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে পড়লাম ওদের সাক্ষাতকার এবং প্রবন্ধগুলো। চোখের সামনে থেকে বন্ধ জানালা খুলে গেল। জানলাম, সাহিত্য নিছকই বিনোদনের মাধ্যম নয়। বরং বিনোদনের সাহিত্য এক আফিম। পাঠক রুচি নামক ইওটোপিয়াকে সামনে রেখে শিল্প সংস্কৃতির যে বেসাতি চালু আছে তার মূল উদ্দেশ্য শুধুই মুনাফা নয়,জনচেতনাকে দাবিয়ে রাখাও। সাহিত্য এবং জীবনকে একই মুঠোয় ধরতে হয়।
জানলাম, সত্য যদি শিব হয়েও থাকে কিন্তু সেটা আদৌ সুন্দর নয়। তাছাড়া সত্য কখনও একমাত্রিক হয় না। বরং জীবনের মূল সত্যকে গোপন করতেই কলাকৈবল্যবাদ কিংবা প্রগতিশীলতার তত্ত্বের জন্ম।
এতদিন জানতাম, লিটল ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠানের আঁতুড় ঘর। এখানে হাঁটতে শিখে কবি/লেখকবৃন্দ দৌড়ে গিয়ে ঢুকে পড়ে প্রতিষ্ঠানের বারান্দায়। ব্যস, খোলা বারান্দায় এরপর যতখুশী নাচানাচি, জাগলারি, হাতসাফাই দেখানোর অনন্ত স্বাধীনতা। বারান্দার নীচে দাঁড়িয়ে পাঠককূল সেসব দেখে জীবন সার্থক করে তুলবে। ওই ভিড়ের মধ্যে থাকা কয়েকজন লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক কলার তুলে বলবেন, বন্ধুগণ, ওই যে প্রোদুনোভা ভল্ট স্পেশালিস্টকে দেখছেন, উনি আমার সাপ্লাই।
এবার জানলাম,লিটল ম্যাগাজিন কোনো সমান্তরাল সাহিত্য সৃষ্টির আখড়া নয়, বরং প্রচলিত সাহিত্যের বিপরীতে এর অবস্থান। লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে আরেকটি শব্দ ওতপ্রোত জড়িত- আন্দোলন। যে আন্দোলনের উদ্দেশ্য,পাঠককে সচেতন করে তার প্রত্যাশা বাড়ানো। লিটল ম্যাগাজিন বাজারি রুচির তোয়াক্কা তো রাখেই না বরং তেজস্ক্রিয় ভাষা মারফৎ প্রতিষ্ঠিত ধ্যান-ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। কারণ প্রতিষ্ঠিত ধ্যান-ধারণা সব সময়ই ওপর থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়ে থাকে। জীবনের তলা থেকে উঠে আসে না। গা গতরের ভাষা ব্যবহার করে ভাষাকে এলিটিজম থেকে মুক্ত করাটাই লিটল ম্যাগাজিনের প্রধান কাজ। পাঠককে ঘা মেরে জাগাতে ভাষা সন্ত্রাস ঘটাতে হবে। একমাত্র সেভাবেই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা যাবে। পরিচিত হলাম নতুন শ্লোগানের সঙ্গে, প্রতিবাদের সাহিত্য।
কিন্তু কেমন হবে সেই সব লেখাপত্র? পড়লাম,মানিক-জীবনানন্দ-জগদীশ-সতীনাথ-শান্তিরঞ্জন-অদ্বৈত-দস্তেয়ভস্কি- মিলার- জেঁনে- র্যাঁবো- বারোজ - কামু- কাফকা। পড়লাম মার্কসবাদ সংক্রান্ত কিছু লেখাপত্রও। কারণ একমাত্র মার্কসবাদই তাত্ত্বিক ভাবে প্রমাণ করেছে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা নিছকই আবেগ সঞ্জাত কোনও রোমান্টিক আগ্রহ নয়। এর সুস্পষ্ট আর্থ- সামাজিক-রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে। একমাত্র মার্কসবাদীরাই জানে, বিপ্লবী কর্মকান্ডের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে যুক্ত করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা অসম্ভব।
জানলাম, বুঝলাম কিন্তু মেনে নিলাম কি? যদি মেনে নিয়ে থাকি কেন নিলাম? এসব কূট প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফের নিজের প্রসঙ্গে ফিরতে হবে। ত্রুটি মার্জনীয়।
এমন এক পরিবারে জন্মেছি যাদের ঝুঁকি বহির্ভূত জীবন যাপন করে চলাটাই একমাত্র লক্ষ্য। কোনো ঝুট ঝামেলার আভাসটুকু পেলে সঙ্ঘারামে খিল এঁটে বসে থাকাটাই ছিল পারিবারিক রেয়াজ। মনুষ্য জীবন কি খইমুড়ি নাকি যে অহরহ ফুটবে? তার চাই নিস্তরঙ্গ জীবন।সুতরাং স্নেহ-প্রীতি-সম্মান-ভক্তি-শ্রদ্ধা -শৃঙ্খলা, এজাতীয় কিছু শব্দের প্রতি পরিবারের প্রত্যেকের ছিল অন্ধ আনুগত্য। প্রতিবাদ নামক শব্দটার ধার কাউকেই খুব একটা ধারতে দেখিনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন