শুক্রবার

কাজী শোয়েব শাবাব : চার্মিনার ঠোঁটে ফালগুনী রায়

কাজী শোয়েব শাবাব : চার্মিনার ঠোঁটে ফালগুনী রায় হাংরি জেনারেশন শব্দ দুটো প্রথমে শুনেই চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল ক্ষুধার্ত প্রজন্ম। শব্দ দুটো শুনলে কেন যেন শ্রমজীবী মানুষের দাবি-দাওয়া, আন্দোলন, দুর্ভিক্ষ, অন্যায়, শোষণ, ঘাম ঝরানো রোদে পোড়া কালো শরীর, অনাহার, অর্ধাহারে থাকা প্রোলেতারিয়েত মানুষের ছবিই ভেসে ওঠে মস্তিষ্কে। বাংলা সাহিত্যের স্থিতাবস্থা ভাঙার লক্ষ্যে ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে ভারতের পাটনা শহর থেকে শিল্প ও সাহিত্যের এক আন্দোলন শুরু হয় ১৯৬১ সালে। যদিও ১৯৬৫তে তা থেমে যায়। থেমে যায় বললেই কি থেমে যায়? থেমে যায় কাগজে-কলমে। হাংরি আন্দোলনের বিশাল ঢেউ লেগেছিল তখনকার তরুণ কবি-শিল্পী সমাজে। তেমন এক শক্তিমান কবি ফালগুনী রায়। শার্ল বোদলেয়ারের মতো নিজেকে কষ্ট দিয়ে (অতিরক্তি মদ্যপান, যথেচ্ছ জীবনযাপন) সৃষ্টি করে গেছেন শিল্প। ফালগুনী রায়ের আটটি কবিতা নিয়ে কিছু লিখব বলে কলম ধরেছি। শুরু করা যাক। ১. ইট ইজ ক্রিকেট : জীবন এখানে ক্রিকেটের সমার্থক। জীবনের প্রথম ইনিংসে যখন শূন্য রান, দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরির প্রস্তুতি। পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়ানোর সাহস। কিছুতেই হার না মানার ঘোষণা। কটাক্ষকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্বতন্ত্র ফালগুনী রায় হয়ে ওঠার ঘোষণা। কবিদের সাহস থাকতে হয়। সাহস না থাকলে লেখতে আসার মানে হয় না। কবিতার শেষাংশে যখন লেখেনÑ ‘আসলে আমি জেনে গেছি এখন/গিলক্রিস্টের রুদ্ররোষই পৃথিবীর সব নয়,/জীবনে ওরেলের শান্তচোখও আছে’। শেষ লাইন পড়ার পরই নেটে খুঁজে দেখেছি ক্রিকেটার ফ্রাঙ্ক ওরেলের শান্তচোখ। কী শান্ত, স্থির মায়া। মন ঠা-া করে দেওয়ার মতো। অনেকটা আশ্রয়ও আছে বোধহয়। ঠিক যেমন ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন’ Ñমনে পড়ে গেল। একদিকে ওরেলের শান্তচোখ, অন্যদিকে বনলতার পাখির নীড়ের মতো চোখ। দুজোড়া চোখই আশ্রয়ের আধার হয়ে ওঠে; জীবনের ক্ষত নিয়ে পলায়নপর কবির আশ্রয়। ২. ক্রিয়াপদের কাছে ফিরে আসছি : ঞযরহশ ড়ঁঃংরফব ড়ভ ঃযব নড়ী. আরোপিত প্রথার বাক্সে বন্দি চোখ বাক্সের বাইরে দেখে না কিছুই। প্রথা ভাঙার আওয়াজ আছে, আছে খোলস ছিঁড়ে বেরোনোর ক্ষমতা। গোঁড়ামিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। যন্ত্রণাকাতর ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার যখন বার বার প্রশ্নবিদ্ধ করে, তখন অসহ্য যন্ত্রণায় কবির কলম প্রসব করে, ‘আমি সোনার তরীর সব ধান লুট করে বিলিয়ে দেবো শান্তি নিকেতনের ভিখিরিদের ভেতর তারপর খালি নৌকায় চেপে গান গাইবো বাইশে শ্রাবণের জল ভর্তি কর্পোরেশনের কলকাতায়Ñ কে যাবি পারে ওগো তোরা কে’ পুঁজিবাদের গালে কষে চড় বসিয়ে দিয়েছেন ফালগুনী। তথাকথিত সামাজিকতার তোয়াক্কা না করেই বলতে পারেন, ‘আমি নেশাগ্রস্ত তাই সংসারী সাত্বিক বন্ধুরা দূরত্ব বজায় রাখে ঠিক ট্রামে ট্রেনে বাসে ফুটপাথেÑ আমি আন্দাজ মেপে কথা বলতে পারি না কিছুতেই’ আবেগ নয়, পোশাকি নয়, নিরেট বাস্তবতার প্রকৃত (নগ্ন) মূর্তি চোখের সামনে এনে বসিয়ে দিলেন। ‘আমি বাবামার ভালোবাসার আড়ালে যৌন বনিয়াদ’ ৩. ব্যক্তিগত বিছানা : মানুষ তার সহজাত প্রবৃত্তির বাইরে নয়। ভলোমানুষি দেখাতে গিয়ে আমরা মুখোশকে মুখ হিসেবে শুধু মেনেই নিই না বরং তা প্রতিষ্ঠা করতে উঠেপড়ে লেগে পড়ি। যা করি তা বলি না, যা বলি তা কতটুকু করি তাও ভেবে দেখা প্রয়োজন। ‘শুধুই রাধিকা নয় গণিকাও ঋতুমতী হয় তিন সন্তানের পিতা পরিবার পরিকল্পনার আদর্শপুরুষ কৈশোরে করে থাকে আত্মমৈথুন করে না কি’ এক পাশে জন্ম, অন্য পাশে মৃত্যু। এক সরলরেখার দুপ্রান্তে দুটি। মাঝরেখা বরাবর যাপিত জীবন। এক পাশে নতুন প্রাণের স্পন্দন, অন্য পাশে স্পন্দন থেমে যাওয়া দেহের অন্তিম পরিণতিÑ দাহ শেষে কয়েক মুঠো ছাই। মাঝখানে বসে কবি লেখেন, ‘আমি যে রাস্তায় থাকি তার একপ্রান্তে প্রসূতিসদন অন্যপ্রান্তে শ্মশানঘাট’ ফালগুনীর বিপ্লব সশস্ত্র না হলেও কলমই তার অস্ত্র। লেখাই বিপ্লব। বিট জেনারেশনের কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ ফুলকে অস্ত্রের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছিলেন। ‘ফ্লাওয়ার পাওয়ার’ শব্দবন্ধ তারই সৃষ্টি। ১৯৫৫ সাল থেকে আমেরিকা-ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে দেশটির রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা এর বিরোধিতা করেন। যুদ্ধবিরোধী এই আন্দোলনে গিন্সবার্গ ছিলেন সামনের সারিতে। তিনি সারা আমেরিকার আন্দোলনকারীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, আন্দোলনে ফুলের ব্যবহার করতে। পুলিশ আন্দোলনে বাধা দিতে এলে হাতে তুলে দেওয়া হতো ফুল। ‘ফ্লাওয়ার পাওয়ার’ যুদ্ধবিরোধী শান্তিপূর্ণ এক মুভমেন্টে পরিণত হয়েছিল। রাইফেল আর কবিতার মধ্যে একটা মিল আছে। রাইফেল থেকে ছোড়া বুলেট শরীর বিদ্ধ করে আর কবিতার শব্দ বা পঙ্ক্তি মর্মমূলে বিঁধে যায়। ‘ম্যাগাজিন শব্দটি আমি লক্ষ্য করেছি রাইফেল ও কবিতার সঙ্গে যুক্ত’ ৪. নির্বিকার চার্মিনার : ‘মা, আমি আর তোমাদের অভিজাত সমাজের মাজাঘষা বাঁকাহাসি হাসতে পারবো না’ স্পষ্ট কথা। কৃত্রিম হাসি মুখে ঝুলিয়ে রেখে হয়তো সবাইকে সন্তুষ্ট রাখা যায়, কিন্তু নিজের শান্তিপ্রাপ্তি ঘটে না। ভেতরে এক আর বাইরে আরেকÑ এই দ্বিমুখিতা কবির প্রকৃতিবিরুদ্ধ। ‘আমি পারবো না অসুখী লিঙ্গ নিয়ে প্রাক্তন প্রেমিকার গায়েহলুদের দিন দেবদাস হতে খালাসীটোলায়’ অনুভবের সঙ্গে লেখার ফারাক নেই। ওই যে ‘ভেতরে এক, বাইরে আরেক’ এটা করতে পারেন না ফালগুনী রায়। এই বৈশিষ্ট্যই তাকে ফালগুনী রায় করে তুলেছে। ‘পাড়ার দাদারা ধর্মের দোহাই দিয়ে দোলের দিন টিপে দ্যান পাড়াতুতো বোনদের মাই’ আসলে আমরা সুযোগের অভাবে সৎ। সুযোগ পেলে সততার পেট বাঁধাতেও সময় লাগে না। ‘বেলুড় মন্দিরে প্রণামরতা এক বিদেশিনীর স্কার্ট ঢাকা আন্তর্জাতিক পাইথনপাছা দেখে জেগেছিল আমার সীমাহীন যৌনতা’ এই স্বীকারোক্তি সত্য, সরল। অনেকে ছিঃ ছিঃ করতে পারেন। কিন্তু আপনি বুকে হাত রেখে বলুন তো, দুটো লাইন পড়ার পর এই দৃশ্য আপনি দেখতে পাননি। তার পর কিঞ্চিত শিহরণ জাগেনি (শরীর বা মনে)। যৌনতা খারাপ কিছু নয়, জীবনেরই অংশ। যৌনতাই আপনার অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়। এটা স্বীকার করতে এত আমতা আমতা করার কী আছে? কে বলতে পারেন জীবনে একবারও আত্মরতিতে মগ্ন হননি। অনেককেই দেখেছি মুখে সাধুপুরুষ। যৌনতার কথা শুনলেই একশ গজ দূরে সরে যান। অথচ মেমোরি তার অজস্র্র নীল ছবির ভা-ার। অনবরত চিন্তায় আর চোখ দিয়ে করে চলেন বলাৎকার যত্রতত্র। তা হলে ভ-ামি কেন? যৌনতার কথা উঠলেই নাক সিটকানোর কী আছে? যৌনতা আমার কাছে নমস্য। কিন্তু ধর্ষণ কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না (যদিও ধর্ষকাম প্রবণতা অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই থাকে)। কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটুকু সংযম না থাকলে নিজের শিশ্ন টেনে নিজেরই গুহ্যদেশে ঢুকিয়ে রাখা উচিত। ৫. নষ্ট আত্মার টেলিভিশন : কবিতাটা শুরুই হয় ভাগ্যের ফিরিস্তি দিয়ে। যদিও ভাগ্য বা অদৃষ্টের বদলে নিরেট বস্তুজগৎই ফালগুনীর কবিতার চারণভূমি। আপাত চামড়া ও পেশির আবরণে ঢাকা সুঠামদেহ দৃশ্যমান থাকলেও ফালগুনীর চোখ কঙ্কালই দেখে ফেলে। তার এই দেখার ক্ষমতাই তাকে করে তোলে আলাদা, যা প্রকৃত কবির বৈশিষ্ট্য। ‘আসলে মানুষ দেখে ফেলে যৌনতা ও অর্থনীতি দিয়ে তৈরি বাবা-মা-ভাইবোন নিজের বউ পরের বউময় সমাজ’ বিপ্লবীরা বড় প্রেমিক। বিপ্লব মানে শৃঙ্খলমুক্তি, মানে অধিকার বুঝে পাওয়ার আন্দোলন। প্রেমই বিপ্লবের শেকড়। এ কথা লিখতে গিয়েই আশির দশকের কবি সিরাজুদ্দৌলাহ বাহারের একটি কবিতার দুটো পঙ্ক্তি মনে এসে গেল। ‘চে বলেছেন, হাস্যকর মনে হলেও হতে পারে, এটাই সত্য প্রকৃত বিপ্লব উৎসারিত হয় গভীর ভালোবাসা থেকে।’ এবার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ চলে আসছে। যদিও শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত বলে কিছু থাকে না। অনেকের সঙ্গে মিলে অনেকের হয়ে যায়। কেবল অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাবে প্রেমিকা চলে যায় পুঁজিপতির বিছানায়Ñ এই বাস্তবতা নতুন নয়। আর এ বিচ্ছেদপর্বে বেচারা বেকার প্রেমিকের অবস্থা আপনাদের জানা। হুমায়ুন আজাদের ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’ স্মরণে আসছে এখন। যৌনতা দিলেই যদি প্রভু, মেটানোর আধার দিলে না। একটা প্রশ্ন থাকছে। আমাদের সৃষ্ট সমাজব্যবস্থায় একটা ছেলে বা মেয়ের যৌন উপলব্ধির পর কম করে হলেও ১০ থেকে ১৫ বছর লেগে যায় বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে। বিয়ে মানে শুধু মানসিক বিষয় নয়, জৈবিক প্রয়োজনও। যৌনক্রিয়ার সমাজস্বীকৃত সনদ। তো বিবাহপূর্বের এই ১০-১৫ বছরের যৌনতা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেন না। অবদমনের ওপর দিয়েই চালিয়ে দেন। সঙ্গে যুক্ত হয় আরোপিত নৈতিকতা। অতিরিক্ত অবদমনের বিস্ফোরণ কিন্তু ভয়ঙ্কর। এই বয়সটা যাপন করেন সবাই, যৌনজটিলতায় হাবুডুবুও খান, কিন্তু বলেন না কেউ। সমস্যা সমস্যাই থেকে যায়। ‘যৌনতা থাকে কিন্তু প্রয়োগ করবার জন্যে আধার বা/রাধা বা রমণী মানে মেয়েছেলে থাকে না মেয়েছেলে থাকে/যৌনতা থাকে না’। মেন্ডেলের বংশগতিবিদ্যা মানে বংশপরম্পরায় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পুনরাবৃত্তি আমাদের জানা। আর সেখান থেকেই হয়তো বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ের বংশ সম্বন্ধে জানার বিষয়টার উদ্ভব। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গঠনে পরিবার ও পরিবেশের অবদান অনেক। আর বাকিটা শিক্ষার (শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়) ওপরে বর্তায়। ‘মিস্টার খান্না হিন্দিভাষী কিন্তু কি আশ্চর্য তার স্ত্রী বাঙালী হওয়ায় মিস্টার খান্নার পাঁচ বছরের ছেলে বাঙলা হিন্দি দুটোই বলতে পারে জিভ দাঁত তালু কণ্ঠ ওষ্ঠের সম্যক ব্যবহারে’ ভার বইতে বইতে এক সময় মানুষ নির্ভার হতে চায়, হয়ে যায়। একটা ইৎবধশ বাবহ ঢ়ড়রহঃ-এ এসে দাঁড়ায়, যেখানে কোনো লাভও নেই লোকসানও নেই। অথবা একটা সংখ্যারেখার শূন্যতে। না ধনাত্মক না ঋণাত্মক। একেবারে নির্লিপ্ত। এমন অবস্থানে বসে ফালগুনী লেখেন, ‘দাঁড়িয়ে আছি চার্মিনার টানার উৎসাহ নেই ।কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বসে আছি আমি নিগ্রন্থ মানুষ’ ৬. কবিতা বুলেট : ‘বঙ্গসংস্কৃতির প্যান্ডেল উঠিয়ে নিলে পর ময়দানে সে জায়গায় চরে বেড়ায় ভেড়া .................. কবিদের যোগ্যতা আমি চাই বিচার্য হোক কেবলি কবিতায়’ খালি কলসি বাজে বেশি। অকবিদের আস্ফালন বেশি। উইপোকার মতো, মুখ শক্ত, পশ্চাদ্দেশ নরম। মুখ দিয়ে বিশ্বজয় করবে। এরা কবিতার নাম নিয়ে কবিতাকেই ধর্ষণ করে। আরে মূর্খ, শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে অন্ত্যমিল দিলেই কবিতা হয় না। ঘটে কিছু মাল থাকতে হয়। বেশিরভাগই গড্ডলিকা প্রবাহে (ভেড়ার পাল) মিশে যায়। এদের আস্ফালনেই পাঠক পালিয়েছে কবিতার পাঠ ছেড়ে। পাঠক বোকা নয়Ñ এ কথা ওদের খুলির ভেতরে ঢুকবে কবে? প্রিন্টিং লাইন এত সহজ হয়ে গেছে। টাকা থাকলেই দুম করে বই বের করা যায়। আরও আছে পদ ও পদবি। ক্ষমতার জোরে নামধারী কবি। কবিতার ‘ক’-ও বোঝে না অথচ বছর বছর চলে তাদের বই প্রকাশের ঢল। চলে পুরোদমে মার্কেটিং আর পদের জোরে প্রোমোটের পাঁয়তারা। তটস্থ মিডিয়াওÑ জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর। পরিস্থিতি যখন এই তখনও আশা আছে। প্রকৃত কবিরা নীরবে ধ্যানমগ্ন কাব্যসাধনায়। ফোটাচ্ছেন সৌরভ ছড়ানো বর্ণিল ফুল। ৭. নভোযান : সমাজ ব্যবস্থাটাই একটা নভোযানের মতো। আমাদের নিয়ে ছুটছে কোনো অজানা গন্তব্যে। আমাদের ইচ্ছা থাক বা না থাকÑ এই নভোযানই আমাদের গ-ি। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছিÑ তা খুব স্পষ্ট নয়। ভালো না লাগলেও এই যানেই থাকা বাধ্যতামূলক। বাইরে বের হওয়ার সুযোগ ক্ষীণ। একটা চলমান কয়েদখানাও বলা যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এ এক এমন অদ্ভুত গ-ি, যেখানে যার যা কাজ নয় তাকেই সেটা করতে হয়। বেঁচে থাকার বা জাগতিক ভালো থাকার লোভনীয় মুলো পরিকল্পিতভাবে নাকের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়। আসলে জীবন ও মৃত্যুর মাঝামাঝি এক ত্রিশঙ্কুদশা। ‘কবিদের দিয়ে হিসেব করাবে ব্যবসাদার আর কবিরা তার বিনিময়ে বৌ-বাচ্চা সংরক্ষণের অর্থ করে নেবে’ যাদের তলা ফুটো তারাই অন্যের ফুটো খুঁজে বেড়ায়। পারলে খুঁচিয়ে ফুটো তৈরি করে জনসমক্ষে ঘোষণা করে ‘অমুকের তলায় ফুটো আছে’। অথচ নিজের তলার ফুটো দিয়ে বেরিয়ে আসা ইজ্জত সবার সম্মুখে, সেদিকে খেয়াল নেই। ফালগুনী সে বিষয়ে লিখলেনÑ ‘এমন কি খিস্তিবাজরাও আমার কবিতায়/খুঁজে পাবে অশ্লীল শব্দ। চোররা আমায় ভাববে জোচ্চর’ ৮. ব্রেনগান : কখনো এমন সময় আসে যখন সবকিছুর মধ্যে থেকেও নিজেকে নির্বাসিত মনে হয়। সবার মধ্যে থেকেও একা। কবির লড়াই নিজের সঙ্গে। কবি ভীষণ একা, সম্ভবত ¯্রষ্টাও। ফালগুনীর কবিতা নিয়ে আমি আর লিখতে পারছি না। ব্রেনলাইন বরাবর একটা বন্দুক তাক করা আছে। সময়টা আততায়ী। আপনারা ফালগুনীর কবিতা পড়–ন। চার্মিনার নেই, ডার্বি ঠোঁটে নিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক বিদায় নিচ্ছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন