শুক্রবার

হাংরি আন্দোলনের কবি ফালগুনী রায় : জহর সেনমজুমদার

পুনর্জীবিত শব্দভাণ্ডারে ফালগুনী রায় : জহর সেনমজুমদার এক ঘরোয়া আলাপচারিতায়, কবিতাপ্রসঙ্গে আলোচনা চলতে চলতে হঠাৎ আমাদের কবি প্রভাত চৌধুরী বললেন, ‘একজন কবি মৃত্যুর পরেও যখন বারবার পরবর্তী সময়ে মুদ্রিত হন কিংবা পুনর্জীবিত হন তখন বোঝা যায় সেই কবি অস্তিত্বকে প্রসারিত করে দিতে পেরেছেন এবং কবিতার ক্ষেত্রে নিজেকে মূল্যবান করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।’ কথাটা বলেই তিনি নিঃশব্দ হয়ে গিয়েছিলেন । আমরাও চুপ করে ভাবছিলাম এই অমোঘ সত্যতাকে । ফালগুনী রায়-এর কবিতা পাঠ করতে করতে প্রভাত চৌধুরীর ঐ কথাটাই যেন ফিরে এলো নতুনভাবে এই মুহূর্তচেতনায়, এই ভাবনাবলয়ের কেন্দ্রভূমিতে । ‘দরগা রোড’ পত্রিকায় উৎপলকুমার বসু ফালগুনী রায়ের ‘নষ্ট আত্মার টেলিভিসন’ গ্রন্হটিকে ‘ভয়ঙ্কর’ এবং ‘আততায়ীর হাসির মতো’ বলেছেন । কেন বলেছেন -- যদি এই প্রশ্ন আজ নিজের কাছে নিজেই করি ? হয়তো, তাহলেই বোঝা যাবে ফালগুনী রায়ের অমোঘ সংক্রমণ সময়ধূসরতাকে পেরিয়ে গিয়ে, লিরিককুয়াশাকে পেরিয়ে গিয়ে নতুন কবিতাভাবনার ‘নেশাতুর চাউনি’কে সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠা দিতে সফল হয়েছে । ফালগুনী রায় এভাবেই তাঁর দুর্বিনীত মাথাঝাঁকানির কবিতাসহ আজ গৃহীত হচ্ছেন এবং কালও গৃহীত হবেন । আমরা জানি গৃহীত হবার পথ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মতোই দুরুহ । কিন্তু গ্রহণের দায় থেকে আমরা যে গ্রহণের দ্বীপ গড়ে তুলেছি, অন্তত মনের ভেতর বা মনে-মনে, সেইখানে ফালগুনী রায় কি জমা দিলেন কি কি জমা দিলেন ? এইসূত্রে মনোজগতের রহস্যময় বাক্সে জমা পড়া কিছু বহু উজ্জ্বল পঙক্তির উল্লেখ করা যায় যা পাঠক ‘ফালগুনী রায় সংকলন’-এ পড়ে ফেলেছেন । রবীন্দ্রনাথে বাস করেও জীবনানন্দ যেভাবে রবীন্দ্রনাথের কবিতাকে আক্রমণ করেছিলেন, মূলত জীবনানন্দে বাস করা ফালগুনী রায় দ্বারা জীবনানন্দও একইভাবে আক্রান্ত হয়েছেন । কবিতার ইতিহাস তো এভাবেই আক্রান্ত হয়, বিবর্তিত হয় । পুনর্জীবিত থাকবার প্রথান ও স্বাস্হ্যকর লক্ষণ তো নিজের ভেতর থেকে উঠে আসা অমোচনীয় শব্দভাণ্ডার । ফালগুনী রায় সেই শব্দভাণ্ডারকে ধারণ করবার ক্ষমতা রাখেন বলেই তিনি রবীন্দ্রনাথ নন, জীবনানন্দ নন, তিনি ফালগুনী রায়, ব্রহ্মতালুর ঘি জ্বালিয়ে কবিতাশিকারী ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন