সোমবার

সুনীল,
         তোর চিঠিগুলো সবই পেয়েছি । তোকে একটা গল্প লিখে পাঠিয়েছি, পেয়েছিস নিশ্চয়ই । ঐটাআই কৃত্তিবাসে ছাপা হোক এই আমার ইচ্ছে । তবে এ সম্পর্কে তোর মতামত খোলাখুলিভাবে জানতে চাই । গল্পটা তোর কিরকম লেগেছে ? গল্পটার নাম ‘মুখাবয়বের দিকে’ও দেয়া যায় । আরও কয়েকটা গল্প লেখার চেষ্টা করেছি , দ্রুতই তোকে পাঠাব । ‘মুখাবয়ের দিকে’ গল্পটার মূল কথা এই যে ক্ষুধার্ত সমরেশকে একতা মস্তবড়ো খাদ্যই হজম করে নিলো । বিভিন্ন মুখচ্ছবি আত্মসাৎ করতে করতে যে ছবিটা নির্মিত হয়ে এসেছিল মালতী তাকেই গ্রাস করে নিলো ।
         পরে যা গল্পটা পাঠাচ্ছি তার নাম ‘দেরি করিয়ে দেওয়া’ । এই গল্পের মূল কথা এই যে, গঠন করার জন্যই চতুর্দিকে একটা ‘দেরি করিয়ে দেওয়ার’ ব্যবস্হা রয়েছে । সমরেশের সেজকাকার মেয়ের স্নেহ, দরজা জানালায় রঙ করার জন্য গণি মিস্ত্রির ব্যবহৃত সময় বা সেজকাকা শেষের রুগিকে যে কোরামিন দিয়ে এলেন, তাও ঐ একই ব্যবস্হার অধীনে। কিভাবে ক্রমে নিরর্থক হয়ে যায় এই ব্যবস্হা শেষ দৃশ্যে তারই প্রশ্ন উথ্থাপিত ।
         পদ্যও লিখেছি কয়েকটা। পাঠাচ্ছি । তোর যা ভালো লাগে তাই করিস । আমার মন আজকাল ভালো নেই । চাকরিটা একেবারেই ভালো লাগছে না । কলকাতায় কয়েকটা চাকরির জন্য অ্যাপলাই করেছি । পেলে ছেড়ে দিই এটা ।
         মলয়ের বের করা দুটো কাগজ পেয়েছি । একটা ইংরেজিতে অন্যটা বাংলায় । ইংরেজিতে লেখার ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলাম । ও জানিয়েছে ওটা পাটনায় ছাপিয়েছে, পাটনায় বাংলা ছাপানো সম্ভব নয় । মলয়ের কোনো কোনো মতামতের সঙ্গে যদিও আমি একমত নই তবুও ওই ধরণের প্যামফ্লেট ছাপানোয় আমার অমত নেই । শক্তিও সম্পূর্ণভাবে এর সঙ্গে যুক্ত যদিও তোকে হয়তো অন্যরকম বলে থাকতে পারে । এর পরের বার থেকে স্রষ্টা, নেতৃত্ব এই সব শব্দগুলো প্রত্যাহার করে নেবার জন্য মলয়কে জানিয়েছি মলয় রাজি হয়েছে ; এসব বিষয়ে ও হারাধন ধাড়াকে ( দেবী রায় ) লিখেছে । এই ছেলেটিই ওখানকার কাজ সব দেখাশুনা করছে । মলয় কৃত্তিবাসেও লিখতে চায় । তোর যদি আপত্তি না থাকে ওকে জানাস । ও চায় তুই ওর প্যামফ্লেটে কিছু লিখিস এবং কবিতা দিস । তোর কি এই ধরণের প্যামফ্লেট সম্পর্কে খুব আপত্তি রয়েছে?
         কৃত্তিবাসের জন্য যে কাগজের দরকার সেটা শক্তিকে বলিস, যাতে মলয়ের বইয়ের জন্যে কেনা কাগজটাই কৃত্তিবাসকে দিয়ে দেয় । মলয়ের বইয়ের জন্য তিন রিম কাগজ ওর কাছে কেনা আছে । কৃত্তিবাস প্রেসে দেওয়া হলেই আমায় জানাবি ।
        চিঠি দিস । প্রীতি রইলো ।
                                                                              সমীর
                                                                            ৫/৪/১৯৬২
                                                                                                    














কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন