সোমবার

হাংরি আন্দোলনের সময়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা মলয় রায়চৌধুরীর চিঠি

পাটনা
১.৯.১৯৬২
সুনীলদা,
         শক্তিদাকে আমি ভয়ংকর ভালবাসি, অথচ শক্তিদা আমাকে ভালো তো বাসেই না, উপরন্তু উদাসীন । আপনি লক্ষ করে থাকবেন, আধুনিক কবিতা বা আধুনিক ছোটগল্প সম্পর্কে আমার এমন কোনো প্রবন্ধ নেই যাতে শক্তিদার নাম নেই । শক্তিদা তো আমার কথা ভুলেই থাকেন । কেবল কলকাতার কিছু যুবকের সঙ্গে সময় কাটান, যারা শক্তিদাকে শ্রদ্ধা করা তো দূরের কথা, আমার মতন ভালোবাসে না ।
         শক্তিদা একেবারে মেয়েদের মতো । সুতরাং শক্তিদাকে আমার কাছে টেনে এনে, আমার অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভাগিয়ে দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো চতুর্দিক থেকে ওঁকে আক্রমণ করে দিশেহারা করে দেওয়া, তারপর উপর্যুপরি আকর্ষণ করা -- অনেকটা মেফিসটোফিলিসের মতো।
         আমি জানি, আক্রমণের পর হঠাৎ আহ্বান জানালে, তখন আর আমার সম্পর্কে শক্তিদার উদাসীন থাকা সম্ভব হবে না । আর আমি ছাড়া এখন শক্তিদার চলবেও না ।
         শক্তিদাকে আমি লিখেছি, প্রেসের সব কাজ আপনাকে বুঝিয়ে দিতে । এই ইশারাটা আমি আশা করেছিলাম কাজ করবে । ভেবেছিলাম যে শক্তিদা নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন, যে সুনীলদা সম্পর্কে আমি আজ পর্যন্ত কোথাও কিছু লিখিনি, তাঁকেই বলছি দায়িত্বটা দিতে। কিন্তু এর পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলেন উনি, ধরতে পারলেন না কি আমার বলার উদ্দেশ্যটা । পাটনায় যখন এসেছিলেন শক্তিদা, তখন ওঁর সমস্ত রচনার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ওনাকে জানিয়েছিলাম । অথচ উনি বুঝতেই পারলেন না শুধু ওঁর রচনারই আমি পারছি আলোচনা করতে, আরও যাঁদের নাম উনি করলেন যাঁদের সম্পর্কে আমায় হ্যাঁ-হুঁ দিয়ে সারতে হলো ।
         শক্তিদা আমার আক্রমণাত্মক চিঠি আপনাকে দেখিয়েছেন । ঠিক তারপরেই আহ্বানের চিঠিটা পেয়ে উনি নিশ্চয়ই ঘাবড়ে গেছেন । বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই যে আক্রমণ করাটা ছিল আহ্বানের অন্য রূপ । শক্তিদাকে অপমান করা আমার পক্ষে অসম্ভব । কারণ, দাদার চেয়েও শক্তিদাকে বোধহয় আমি বেশি ভালোবাসি । এখন, শক্তিদাকে ভালো বাসতেই হবে আমায় । শক্তিদা কলকাতায় আরও অনেকের সঙ্গে ঘুরবেন । আমার সম্পর্কে উদাসীন থাকবেন, এটা আমার পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব ।
         আমি যে চিঠি লিখব, শক্তিদা তার উত্তর দেবেন দাদাকে । অথচ দাদা বা আপনি শক্তিদাকে যতোটা ভালোবাসেন, আমি ওঁকে তার চেয়েও বেশি ভালোবাসি ।
         আপনি হয়তো বলবেন, “শক্তি যেরকম মেয়েলি, তুমি সেরকম ছেলেমানুষ” -- ( শ্রীমান লিখেছেন । )-- কিন্তু এটা লৌকিকতার ব্যাপার নয় । শক্তিদাকে আমি ভালোবাসি, আর ওখান থেকে সরে আসা সম্ভব নয় । শ্রদ্ধা করি আপনাকে বেশি, কিন্তু শক্তিদাকে করি এমন কিছু একটা, যেটা ভায়োলেন্ট, হট, ডেসপারেট ।
         শক্তিদার লেখা দিয়ে আমি এই যুগটাকেই চিহ্ণিত করতে চাইছি । এটাও কি শক্তিদার পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি ?
         প্রণাম নেবেন ।
                                                                             মলয়


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন