সমীর রায়চৌধুরীর অধুনান্তিক কবিতা : অভিজিত পাল
প্রবাল দাশগুপ্ত অধুনান্তিককে বলেছেন “সাজানো বাগানের পরের স্টপ” । আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই কথাগুলোতে, “কিছু কাল আগে ‘সাজানো বাগানের পরের স্টপ’ বলে একটা প্রসঙ্গ ফেঁদেছিলাম। সেই সূত্রে ভেবে বলো তো, তুমি যখন আধুনিক বিজ্ঞানের দূরবীক্ষণ আর অণুবীক্ষণ দিয়ে দূরের মহতো মহীয়ান্ আর কাছের অণোর্ অণীয়ান্ জিনিসপত্রকে যথাক্রমে কাছে টেনে আনো এবং বাড়িয়ে মাঝারি আয়তনে নিয়ে আসো যাতে তোমার নজরে তাকে ধরতে পারো, তখন তুমি আদতে কী করছ? আমি বলে দিই? জিনিসটাকে তুমি তোমার বাগে আনছ, যাতে তোমার পছন্দমতো ম্যাগনিফিকেশনে দেখতে পাও। বাগ, ইয়ানী বগীচা, ওই বাগান আর কী। তোমার সাজানো বাগানে নিয়ে আসতে পারলে তবে তুমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলো, এইবার ধরতে পেরেছি। নীটশে যখন পাগল হয়ে যাচ্ছেন ঠিক সেই সময় দিয়ে, যতদূর মনে পড়ছে ১৮৮৯ সালে, একজন প্রখ্যাত নীটশেবিদ পণ্ডিতকে চিঠি লিখে বলেন, “আমাকে তুমি ধরতে পেরেছ ভালো করেই জানি। খুব ভালো ধরেছ। এবার আমায় ছাড়তে পারবে কি? ছেড়ে দেখাও তো?” অধুনান্তিক শেখাটা ওই ছাড়তে শেখার দস্তুর। বাগে আনা কথাটার ব্যুৎপত্তি যাঁরা জানেন তাঁরা ভুল ধরিয়ে দেবেন, সেই অপেক্ষায় আছি, পাঠক তুমি তখন ধরতে পারবে আসল উত্তরটা কী হবার কথা, আমি আগাম বলে রাখছি, তার পর ভুলে যেও না উত্তরটা ধরতে পারার পর ছাড়তে পারাও চাই, নইলে তোমার সঙ্গে আকাশের সংযুক্তি ছিঁড়ে যাবে, পড়ে থাকবে খালি আধুনিকবাদের যুক্তি, দেখবে যে মাটির সঙ্গে একেবারেই আকাশের কোনো যোগ নেই তাকে আর মাটি বলে চিনতেই পারছ না, মনে হচ্ছে ছাই।
চারিদিকে অসত্য কথন, মিথ্যাচার, ক্ষমতার রহস্যাবৃত কথাস্রোত সচেতন মানুষকে দগ্ধ করে। এক আস্তিক বিপন্নতা দেখা দেয়। লেখার মাধ্যমে সে তার কথন বিশ্বকে ব্যাপ্তি দেয়। পুনর্নির্মাণ করে তার সত্যদ্রষ্টা সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ।
ধারণাময় এই ধরিত্রীর মাইক্রোস্তরে যতই প্রবেশ করা যায়, দেখা যায়, বহু সংকেত এমনই যে, বাস্তব জগতে বা প্রাত্যহিক কাজেকর্মে তা তেমন কাজে লাগে না। তবু তা প্রয়োজনীয় নয়, একথাও বলা যাবে না। অস্বীকার করা যাবে না, ব্যক্তি মনের সৃজন জগতের মুক্তির একটি পরিসর নির্মাণে তার ভূমিকার কথা।
এমনই অনেক টুকরো-টাকরা নিয়ে সমীর রায়চৌধুরী লিখেছিলেন ‘মেথিশাকের গন্ধ’ । পাঠকদের মনকে তা আনন্দ দিয়েছে অনায়াসে এবং পাঠকেরা তা সহজ ভাবে গ্রহণ করেছেন। এই ধরনের অমীমাংসেয়তাকে গ্রহণ করবার জন্য পাঠকদের সৃজনশীল মন অপেক্ষায় থাকে। এখানে তাঁদের সৃজনশীল মন অনায়াসে খেলতে পারে। অর্থাৎ একটা খেলাধুলার পরিসর তাঁদের চাই। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, জহর সেন মজুমদারের ‘হৃল্লেখ বীজ’, মিহির চক্রবর্তীর ‘গ্যেডেলের অসম্পূর্ণতা তত্ত্ব’, রবীন্দ্র গুহর ‘কি লিখি কীভাবে লিখি’, আমাদের ভাষায় এই একই কারণে এঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের নিজস্ব কথনবিশ্ব নির্মাণ করেছেন। আর একজন সাংবাদিকের প্রতিবেদন থেকে এখানেই এই টেক্সটগুলির পার্থক্য।
সমীর রায়চৌধুরী বলেছেন, “আমার নিজের এই বৃদ্ধ বয়সে অনেকেই বলেন যে, অনেক তো হলো, এখন কিছুটা ঢিমেতালে লেখালেখি করা দরকার এবং বিশ্রামের প্রয়োজন অনেক বেশি। অথচ আমার সৃজনশীল মন জানে, লেখালেখিতেই আমি আমার যৌবন ফিরে পাই। কেননা, আমি আজও নীরবতার রহস্যসন্ধানী।”
অঙ্গস্বভাব -
আজ কেউ আসবে কলিংবেল বেজে উঠবে দুবার
কোনো এক সময় সহসা ডেকে উঠবে নিরিবিলি কাক
মাধবীলতার লাল ফুলগুলো অন্ধকার ঘনিয়ে এলে সাদা হয়ে উঠবে
দেখা না পেয়ে নতুন কবিতার বই আমার টেবিলে রেখে কবি ফিরে যাবে
অচেনা ট্যাক্সির ধাক্কায় পাড়ার চেনা কুকুর থেঁতলে পড়ে থাকবে
হঠাৎ বেপরোয়া গুলি চলবে শিল্পায়নের বড় জরুরি প্রয়োজনে
অকস্মাৎ প্রিয় নেতার ভাবমূর্তি স্বভাবত রসাতলে যাবে
প্রিয় খেলোয়াড় গো-হারান হেরে মাঠ থেকে অসাফল্যের যুক্তি নিয়ে ফিরবে
প্রিয় নারী কোনো এক পুরনো অভিমানে পাশ ফিরে শোয়
অনিশ্চিত আর সুনিশ্চিতের গোপন নিজমূর্তি ধরবে,
বাঁ চোখ নাচছে…
চর্যামাংস -
উপাসকের বিপরীত শব্দ ভিখিরি
ভালো শোনায় যদি বলা যায় ভিক্ষুক
ভিক্ষুক এলে ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে বৌদ্ধধর্ম
তার পেছনে দাঁড়িয়ে তন্ত্রসাধনা
ততক্ষণে উপাসকের বিপরীত শব্দ উপাসক
আরো ঘোর উপাসক
যে-লোকটা পৃথিবীতে প্রথম প্যাঁদানি খেয়েছিল সেই কবি
সে চেয়েছিল শব্দের দ্বিবিধ অর্থ কবিতার ডাবলমিনিং
নিম্নাধিকারী ও জ্ঞানীর জন্য একেবারে আলাদা
কেননা সে-ই টের পেয়েছিল মুখ ও মুখোশ
ঋণী ও মহাজন
প্যাঁদানি ও শুশ্রুষা-
সে জানে মারপ্যাঁচ
তারই জন্য অপেক্ষা করছে
পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র চাবুক
প্রকৃতি -
বলতে পারেন স্যার আজকাল কার প্রকৃতি মারহাব্বা যাচ্ছে
মকবুল ফিদা হুসেন নাকি বিকাশ ভট্টাচার্য
রেফারেন্সের জন্যে ওল্টাতে পারেন সেন্ট পারসেন্ট নেচার ওরিয়েন্টেড জীবনানন্দের রূপসী বাংলা
এ-ব্যাপারে যুৎসই টিপস নিয়ে আসতে পারেন মনসিজ মজুমদারের কাছ থেকে
শিববাবুর সেজো বা মেজো, যে মেয়েটির নাম ছিল প্রকৃতি সে তো বায়োটেকনোলজি শেষ করে
বেশ ডাঁসালো এন আর আই বিয়ে করে চলে গেছে ক্যালিফোর্নিয়া না উরুগুয়ে
বছরে বছরে ছেলেপুলে নিয়ে এসে বড়ো হওয়া দেখিয়ে যাবে সল্টলেকের মা আর ছুটকি পিসিকে
এবার ভেবে দেখা যাবে হেলেন কার্টিসের নিমকের কাছে যাব
নাকি ডাবরের মার্গোহয়ে রাখা থাকবে মাসকাবারির ফর্দে
দিনক্ষণ তিথির পাশে একাদশি আর পূর্ণিমা কবে কবে যেন বাতের ব্যথা বাড়ে
ড্রইংরুমের ক্যালেন্ডারে শক্তি চাটুজ্জের কবিতার প্রেরণা হয়ে ঝুলে থাকো
ভাটপাড়ার নিতাই আর নিখিলেশ দু'চার দিনে হয়তো টোটকা ব্যাংক খুলবে
খনার বচনের সঙ্গে পাঞ্চ করে প্রোপোজাল ছাড়বে ই-কমার্সে
শুধু ঘরে বাইরে দু-একটা শাঁসালো মাল্টিন্যাশানাল স্পনসর চাই
এসো, মামণি খুকুসোনা শিশি বোতলের মধ্যে হার্বাল হয়ে ঢুকে পড়ো—
শোনা যাচ্ছে পোস্টমডার্ন ব্যাপারটা নাকি রাইজোম্যাটিক ঘাসেদের মতো
ছাড়াছাড়ির চেয়ে জড়াজড়ি জাপটাজাপটি হাম্পিমাম্পি আরাফত মার্কা—
চিরকাল হন্যে হয়ে সাদাসাপটা সরজমিন স্বদেশ নিভুঁই খুঁজে যাওয়া…
দীপক কবে চাইবাসায় এসেছিল মনে আছে
বিটুর যখন প্যারাটাইফয়েড হয়েছিল ঠিক তার পরে
সেদিন মধুটোলার বাড়িতে গরুটার কালো বাছুর হয়েছিল
প্রেসিডেন্সি কলেজের ড্রাগ খাওয়া ছেলে-মেয়েগুলো
ফিরে যাবার পরের রবিবার-
ক'দিন পরেই ছিল রাসযাত্রা
সন্দীপনদার বউ, ভাইয়ার হাতে বাবার জন্য মাছ পাঠিয়েছিল,
বাহাদুরনীর কাছে এক গ্লাস দুধ চেয়েছিল—
জানেন তো সকাল হলে ওর লাগে, তা না হলে
ফ্রেশ হয় না, গরমটা পেটে পড়লে তবে…
ফ্রেশ হলে ওর কথা শুনবেন,
দেখবেন আপনাদের ভালো লাগবে
সন্দীপনদা হনি-টোটোনদের ছায়া নিয়ে গল্প বলেছিল
তুমি বলেছিলে হিরণ মিত্র ছায়া নিয়ে ছবি আঁকেন…
আরে… মনে পড়ছে সেদিন ছায়াদির মেয়ে হয়েছিল
সতেরো বছর পর…
তখন সহায়জীর বাগানে কত রঙের গোলাপ ফুটেছিল
সংস্কৃতি
ফার্নিচারের দোকানে চেয়ারের হাজিরা ছিল সরাসরি ব্যবসাদারির
খদ্দের আর দোকানদারের গজিয়ে-ওঠা দরদাম
এক অপেক্ষমাণ পণ্য
ছিল মালিকানার অন্বেষণ
অর্থময়তার তাগিদ
আটমাত্রা ছিল দোকানির
ছমাত্রা যোগ করলেন ক্রেতাবিশেষ
বেচাকেনা-কাটতি প্রথক শব্দমালার অধীন
প্রতিমূহূর্ত ক্রয়লেখায় প্রদর্শনযোগ্য
যেমন ক্যাশমেমো নেই কালানুক্রমিকতায় চেয়ারের সমর্থক
তারো আগে কাঠ শ্রম পালিশ সময় সংখ্যা
বা তোরে আগে কেবল অনিশ্চয়তায় সম্ভাবনার প্রস্ফুট
এখন এই রেস্তোঁরায় ক্যাশমেমো বলতে চা টোস্ট ওমলেট
আপ্যায়নের সাময়িকতায় বিশিষ্ট
খদ্দের খুঁজছে অথচ নিজের জন্য নয়
যেভাবে সম্ভাবনা অনিশ্চয়তায় প্রস্ফুট
যেভাবে আরামকেদারা হয়ে উঠেছিল রক্ষণকামী
স্বপ্নের চেয়ে স্মৃতি রোমন্হনে পটু
যেভাবে প্রতিমুহূর্তে জৈবিক হয়ে উঠতে চায় সাংস্কৃতিক !
হাতলওলা চেয়ারে পেয়ে বসে অহংকার
খেলনা-বাঁশি
নীরব আর কোলাহলের মাঝখানে মানুষের আলো…
অরা ফটোগ্রাফি আত্মপরিচিতির নতুন চিহ্ণ…
খেলনা-বাঁশি বায়না ধরেছে বাল;গোপাল…
পুরোনো বাড়ির আনাচে-কানাচে বুড়ি মাকড়সার রাজ্যপাট…
নৈঃশব্দ্যের থ… ওতপেতে আছে নগপদবাচ্য শব্দগুলি…
আদ্রতার উল্লোল… প্রত্যেক বেলুনের স্বপনএ মহাকাশ…
নদীর বাঁক তার ইচ্ছাকৃত নয়…
হলুদ হয়ে যে পাতা ঝরে গেল তাকে ভয়…
যে জানে নদীর স্বভাবে পরাজিত…
ধাতুগর্ভজল শব্দে, ছড়ালে বাঁশি বেজে ওঠে…
খেলনা-বাঁশির কোনো নিজস্ব আঙ্গিক নেই…
কেবল নিজস্ব আঙ্গিক জন্মান্তর মানে…
পূর্বপুরুষকে জল দেয়…
অক্ষর নিয়ে খেলি নিরঙ্কুশ মূর্ছনায়…
জীবন ও মৃত্যর মাঝখানে
শুধু ঐ খেলনা-বাঁশি
অচেনা মেয়েমানুষের গোপন
খেলনা-মুখোশ নিয়ে শিশুদের খেলা
নৈর্ব্যাক্তিক যামলসাধনায় মায়া…
একটি বহুরৈখিক টেক্সট
তাহলে দুর্গাপুর থেকে আজই ফিরলেন আর ওই রজতশুভ্র
আমি তো মিনিং ব্যাপারটার একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছি
একটা বিশ্বব্যকরণের যোগান অর্থবোধকতা খুঁজছে বানান
দুর্গাপুরে কি পাত্রী দেখলেন নাকি কবিদের সঙ্গে
রথীনের বোউ বেশ ছোটো সাইজের ভুত আর চোরের ভয়
যেভাবে চিনির শিশি খুঁজে বের করে একরতি পিঁপড়ে
বুঝে ফেলাকে যে-জন্যে বলা হয়েছিল অবগতি
এবার প্লেটোর গুহার বিপরীত দিকে
ওই রসুলপুর সেই ব্রাশ ফেলে যাওয়ার স্মৃতি মেলডি
ঘটনা স্হির দর্শক গতিময় ঘটনা দর্শক খুঁজছে
কপালে একটা ছোট্ট কাটা দাগ আর সব ভাল মেয়েটার কী হল
বৈদ্যবাটির হাইটটা কম তবে হাতে রেখেছেন তো
ছেলে কী বলছে কোয়ান্টাম নিয়ে ভাবছে কেরিয়ারিস্ট
প্রেম করার সময় নেই
সেই যে মাছধরা ট্রলারের ডেরিকে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন অচেনা পাখির ঝাঁক
সম্ভাব্য সফলতার নিশ্চয়তার চিরকুট
রজতশুভ্র নতুন কিছু লিখছে নাকি এখনো সেই রসুলপুর
ধরুন আনন্দ কত রকমের এক গোলে জেতার অনন্দ
লোডশেদিঙে আচমকা ফিরে আসা আলো
পুরোনো প্রেমিকার সঙ্গে হঠাৎ উল্টোদিকের বাসের জানালায়
কুড়িয়ে-পাওয়া পঞ্চম জর্জের আধুলি রসুলপুর মানে
একটা কিছি ভর করলেই মুশকিল
মিনিং থামতে জানে না না কোনো শেষ-কথা নেই…
নিজস্ব রোদের জন্য
নতুন বাড়িটাতে যেদিন প্রথম বিকেলের রোদ এসে
জীবনের খোঁজ নিয়েছিল
সেদিন থেকেই এবাড়ির নিজস্ব রোদ
নিজস্ব হাওয়া বাতাস মেঘলার জন্ম
সবকিছু যা একান্তই এবাড়ির
যেভাবে কিছু রোদ কিছু বৃষ্টি নিয়ে বেঁচে থাকা সংসার চায়
যেভাবে স্হানিকতা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চায় মহাভাষ্য থেকে
যেভাবে ব্যক্তিগত রোদের কাতরতা নিয়ে এক সময়
পশ্চিমের বারান্দায় অতসীলতাকে বাঁক নিতে দেখেছিলাম-
দেখেছিলাম রোদের জন্য ঠাকুমার হাপিত্যেশ
এখনো মনে পড়ে যায় দ্বারভাঙায় আমাদের ডাইনিং টেবিলে
চা পানের সঙ্গী এক চিলতে রোদ্দুর
স্কুলের ছুটির ঘন্টার সঙ্গে চলে যাওয়া রোদের অন্য এক সম্পর্ক ছিল
যেমন কিছু-কিছু ছায়ার সঙ্গে আমাদের নিভৃতের যোগাযোগ
যেভাবে কিছু রোদ কিছু ছায়া ব্যক্তিগত সঞ্চয়ে জমা পড়ে
যেভাবে স্হানিকতা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চায় মহাভাষ্য থেকে।
মাংসপরখ -
মাংসের ভুতুড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে
আঙুলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে স্তনমাংস
ঠোঁট ঘুরপাক খেতে খেতে মাংস বেছে নিচ্ছে
এক এক জায়গায় ঠোঁট নেমে আসছে মাংসের বাদবিচার
যেন পুরোটা শেফালি নয় শেফালিই তো
মুখে মাংসের চুল লাগছে মুখে মাংসের মসৃণ ঠেকছে
মুখে মাংসের হাড় ঠোঁট ঘুরপাক খাচ্ছে
স্তনের চারপাশ দেখে নিচ্ছে ঘাড়ের চারপাশ দেখে নিচ্ছে
বগলের পাশ দিয়ে যেতে যেতে ঠোঁট ফিরে আসছে
ঠোঁট খুঁজতে খুঁজতে চাইছে
ঠোট দিয়ে মাংসপরীক্ষা সেরে নিচ্ছে আমার মাংস
ঠোঁটের অধীন আমার মাংসব্যবস্হা
আমি ও আমার ঠোঁট অস্তিত্বের জট খুলে রাখছে
ঠোঁট মাংসব্যবস্হার মধ্যে তার বখরা সুনিশ্চিত করে তুলে
আমাকে ঠোঁটের অধীন ঠোঁটের কাঠামোয়
এখন আমি বলতে শুধু ওষ্ঠদ্বয়
বীজ স্হাপনের আগে বিস্তৃত চিৎ ভূস্হল পরখ করে নিতে
রসায়নবিদ্যাসহ ঠোট ঘুরছে
পৌরুষ নির্মাণ
কিছুক্ষণ পূর্বে তোমায় আমি বারান্দায় দেখেছি
নিভৃত ঐ ভঙ্গিমার জন্য তুমি আমার সাবাস পেয়েছো
অথচ বারান্দা আমার নয়,
ঠিক সেই সময়ে উদাসীন গন্তব্যে তুমি ডবলডেকারের যাত্রী
তোমার উদাসীনতা আমাকে স্মৃতির প্রান্তরে উড়িয়ে নিয়ে যায়
এলোমেলো দুপুরের ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে,
অথচ তোমার গতি গন্তব্য যাত্রা কোনোটাই আমার নয়
কেবলমাত্র তোমার সেই মুহূর্তের উদাসীনতা আমার আয়ত্তে
এভাবে একই সময়ের মধ্যে তুমি অনেকগুলি সময়ে ছড়িয়ে পড়ছো
তোমার এইসব কারণেই অনেক নাম ও নানান রূপ;
পৃথিবীর যাবতীয় ফুল খোঁপায় সাজিয়ে এগিয়ে আসছো
আমি বিশেষজ্ঞ নই
উদ্ভিদবিজ্ঞানীর দক্ষতায় সমস্ত ফুলের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারছি না
একসময়ের দেখায় তোমাকে সমেত যেকোনো একটি ফুলকেই দেখছি
ফু্ল পাপড়ি পরাগ ভ্রূণ বৃন্ত সবকিছুকে পৃথক পৃথক দেখার জন্য
আলাদা পোকামাকড়ের ব্যবস্থা আমি টের পেয়েছি
এভাবেই প্রকৃতি ও অসীম থেকে আমি তোমায় ভিন্ন রাখতে চাই
পুরুষ মানেই মহিলা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ এমন ধারণায় আমি নেই,
তোমার জেল্লা, হয়রানি, এবং বিকিরণের মধ্যেই আমার টালমাটাল;
সেদিন তুমি সিঁড়ি অব্দি এগিয়ে এসে আমায় কিছু একটা বলতে চেয়েছিলে
এসব কথা কোনোদিনই বলবে না এই তোমার স্বাভাবিকতা
অথচ আরেকদিন কান ঝালাপালা করে কী সব বলেছিলে আমি কিছুই শুনিনি,
এই আমাদের দূরত্ব
এমনই আমাদের নিজস্ব অন্ধকার
একসময়ে সামান্য লেপের মধ্যে আমায় লুকিয়ে রাখছ
অথচ ঠিক সেইসময়ে ঘুটঘুটে বনেজঙ্গলে
তোমার সান্নিধ্যেও আমি সকলের কাছে দ্রষ্টব্য
দখল করে নেওয়াই যদি পরিভাষা হয়
পরস্ত্রী নামে কোনো শব্দ এখনও তৈরি হয়নি
বরং পরপুরুষ বলতে পারো
তুমি আড়মোড়া ভাঙতে আমি আছড়ে ভেঙে পড়ছি
একটা আস্ত মানুষকে তোমায় আমি দেখিয়ে উঠতে পারছি না
তুমি টুকরো টুকরো ছড়ানো কাঁচের মতো খিলখিল করে এলিয়ে পড়ছ
আমি সাবধানে পা ফেলে ফেলে এগোচ্ছি
কোনো সময়েই তোমার ঐ খেলার মধ্যে আমি সম্পূর্ণ নয়
এই আমার সময়সীমা
এই আমার দিগ্বিদিক
অথচ সম্পূর্ণ একটা পুরুষ মানুষ তুমি দেখতে চেয়েছিলে...?
নাকি তোমার তেমন দেখার ইচ্ছে নেই!
দক্ষিণ দিক থেকে হাওয়া আসছে আবার তোমার কার্পাসের খেলা
তুমি আমায় তিষ্ঠোতে দেবে না
কিংবা এভাবেই তুমি আমায় রাখছ
তোমার গতিপথের মধ্যে।
মানুষেরা
মানুষেরা ভাগাভাগি করে হাসপাতাল আর বোমা তৈরী করে যাচ্ছে
বকযন্ত্রে শব্দ ঢেলে আমি লক্ষ্য করছি ওদের দুর্বিনীত ঘোরাফেরা
বৈরীনাগাদের ফারকাটি স্টেশনে আমি শোনাচ্ছি বাউলগান
ধানের কৌশল জেনে কৃষকেরা কাটিয়ে দিচ্ছে বিশাল জীবন
আন্দামান হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি জুজু হতে পারছিনা
ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর রাজনীতির জন্য গুলি চালাচ্ছে
ছবি পাল্টে দেওয়ার জন্য মানুষেরা বলছে জনতা পুলিশে সংঘর্ষ
যেন পুলিশ এক ধরণের প্রাণী
জনতা আরেক ধরণের জীব
এখন আমি স্রেফ উবু হয়ে বসে নীল অতসী খুঁজছি
হিতাহিতবোধ হারিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি শেষ রক্ষাকবচ
আমার কাছ থেকে আমার দূরত্ব আমি কমিয়ে আনতে চাই
আমি সরাসরি সেইসব মূর্খদের ঘৃণা করি
যারা ধর্ম সংস্থা রাষ্ট্র ঐতিহ্য নীতি আর রাজনীতির দোহাই দিয়ে
মানুষকে যে-কোনো প্রকারে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়
আমাকে ছাড়িয়ে আমি কোথাও যেতে চাইনা
আমি শব্দ থেকে ফিরে পেতে চাই আমাকে
অথচ শব্দের মধ্যেই রয়ে গেল আমার আত্মা
এদিকে ঘরে ফিরে এসে দেখছি হণি আর বেলা
শান্তিতে সারাদুপুর ঘুমিয়ে আছে
ভীড়ের মধ্যে টোকা মারতে গিয়ে আমি বুঝতে পারছি
শেষপর্যন্ত আমাকে ছাড়া আর করণীয় কিছুই নেই
ছাড়পত্র
জেমস বন্ড... হার ম্যাজেস্টি তোমাকে দিয়েছেন লাইসেন্স টু কিল
আর হরিণাহরিণী তুমি নিজের জোরে অর্জন করেছ
সংহারের মুখোমুখি পলায়ন... শুক্রাচার্য কে তোমাকে
দিয়েছে লাইসেন্স টু রিভাইড... দাম্পত্য কী সহজে
বিষয় থেকে বিষয়হীনতায় চলে যায়... আর প্রেম
যত দিন যায় অনতীত বাল্যে থেকে যায়... লাউকুমড়ো
তুমি ফলন্তের কেন যে ফলের মাথায় ফুল আনো...
কবিতা... তুই অন্যকূটের মেলায় তবু আজও তোর
অন্নচিন্তা চমৎকারা...
প্রতিরোধ... তুমি আছো বলে কলিংবেলটা ডাকছে...
প্রেমিকা... তোমার মর্ষকামী রূপ আমি চিনি তবু
...মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে কেন
আমার ধর্ষকামী প্রবণতাকে ডাক দিয়েছিলে...
জ্যামিতি... তুমি আছো বলে অসম সাবলীলায় চিহ্ন
হয়ে আছ...
মাধবী কেবল তোমাকে
জানিয়ে রাখি খিড়কি দোর দিয়ে এলেও আমি
তোমার সেই নলরাজা......
ষাট বছরের তেরছা ওম
ষাট বছরের জমাখরচের হিসেব রেখে
কবিতার শব্দ গা ঢাকা দিয়েছে সন্ত্রাসবাদী শিবিরে
স্রোত যেতে চায় সমুদ্রের দিকে মাছেরা যায় স্রোতের বিরুদ্ধে
মতান্তর নিয়ে পরিযায়ী স্বভাব আসে সীমান্ত পেরিয়ে
পকেটে জালনোট নিয়ে কমরেড ফুচকা খায় শহিদমিনারে
নীল পাগড়ির আড়ালে এলোচুলের বেহিসাব গোপন রাখে জনশীর্ষ
নকশালেরা করিডর গড়ে চলেছে সন্তর্পণে
সাদা পাউডার বেচছে বাড়ির কাজের মেয়ের মেজছেলেটা
ব্রেকিং নিউজে উঠে আসছে বমধামাকা আতঙ্কবাদী হামলা
নিম্নচাপে উড়ে আসা মেঘ জানে জল তার চক্রে ফিরে যাবে
উচ্চতার দখল মেনে সিয়াচিনের নির্জন বরফের বুকে তেরঙ্গা উড়ছে
বিপন্নতার অনুপাতে কবিতার কাগজের সংখ্যা বাড়ছে—
কবি ভাবছেন রবিশষ্য ভাষান্তরে সমধ্বনিমনস্কতা মেনে কর্ন
যে কী তবে নিখোঁজ স্বজনের খোঁজ সীমান্ত পেরিয়ে
সূর্যেরব ঔরসে যেভাবে মহাকাব্যে দেখা দেয় কুন্তীপুত্র কর্ণ
জ্যামিতির শর্ত নিয়ে সময়-নিরপেক্ষ শব্দের অন্তরে…
জমিজিরাত।
নিত্যযাত্রী
যেভাবে একফালি মেঘের জলদেশে কিছুকাল থেকে আসে
ঝর্ণার আপেলবাগান পেরিয়ে যাওয়া
গা-বাঁচানো যানজট বা সাজানো পথ অবরোধের সঙ্গে পেরোতে চাওয়া
সময়ের সম্পর্কের কথা আমরা জানি;
কেননা শেষাবধি ঈশ্বরও তো দুরকমের, হয় সে মানুষের মতো দেখতে
নয়তো কোনো কিছুরই মতো দেখতে নয়, অর্থাৎ যাকে বলা হয় নিরাকার–
সাবঅ্যাটমিক লেভেলে বাড়তে থাকে ফাঁক দিয়ে গলে যাওয়ার মনোভাব
ন’টা পঁচিশের যানজটে আটকে যায় রিঙ্কুদের স্কুলে যাঔবার সময়
মিস্টার সান্যালের অফিসটাইম ভবতোষবাবুর কার্যক্রম
পিছিয়ে যায় পথের ধারের গাছটিতে ফুল আসার সময়
আর বেশ কিছু সময়মনস্ক কীটপতঙ্গের বিলিব্যবস্হা,
যেভাবে ফল ঠোকরানো পাখিদের তোড়জোড়
স্হিরভুলুনি প্রজাপতিদের উড়ে যাওয়ার দিকে লক্ষ রাখে–
গণিতেও একই সঙ্গে কথা ওঠে সসীম অসীম আর অপরিমেয় সূক্ষ্মের
গাড়িঘোড়া শব্দটি থেকে ঘোড়া বেরিয়ে চলে যায় নিখিলের আস্তাবলে
তবু জানা হয়ে ওঠে না অনিত্যযাত্রী নারদের বাহন কেন ঢেঁকি শীতলার গাধা
যান চলাচল ইশারাময় করে তোলে ট্র্যাফিকসংকেত পেছনে খালাসি
পথঅবরোধের সঙ্গে দূরদর্শীরা মিলিয়ে দেন পারানির কড়ি—
মর্ত্যধামে মার খাচ্ছে সুধীরের অটোরিক্সার খেপ তার কামাবার সময়
তবু সম্পর্কের জটিলাতার ঈষৎ হদিস দিতে
পেছনে লেখা আছে ‘বৌদির আশীর্বাদ’
টেক্কা বিষয়ক জটিলতা
যাঁরা নিয়মিত তাস খেলেন বা তাসখেলার মারপ্যাঁচ দেখে আসছেন
তাঁরা লক্ষ করেছেন ব্রিজ রামি ব্রে তিনতাস
বিন্তি ফিস টোয়েন্টিনাইন তাসের অনেক ভূবন
কখনো বিশ্বজয়ী তুরুপের তাস
কখনো গোলামের চেয়ে খাটো আবার দহলার চেয়ে মনমর্জিতে বেশি
কখনো হরতনের টেক্কা চিড়িতনের টেক্কার চেয়ে কেউকেটা
কখনো কাগাবগা চুনোপুঁটি
যত খেলা বদল হয় পালটায় টেক্কার কদর আর তার প্রাণ প্রাচুর্য
যে কোনো রাউন্ড খেলার শেষে শুরু হয়ে যেতে পারে
রুইতনের টেক্কা নিয়ে ভয়ংকর বিতর্ক
একটা অবস্হানকে বলা যেতে পারে ইসকাপনের টেক্কা ফেলার যথাসময়
একটা খোপকে সনাক্ত করা যায় হরতনের টেক্কা পাশ করে যাওয়ার অবসর
মনে হতে পারে পিট পাওয়া নিয়ে শুরু হয়ে গেছে
হাইজেনবার্গ আর শ্রোয়েডিংগারের মধ্যে জগৎ বিচারের মৌল মতান্তর
আমরা জেনে গেছি দুরকমের উঠকিস্তি প্রত্যেক রাউন্ডে আসংখ্য সম্ভাবনা
কখনো মানুষ উঠবঢ সিঁড়ি থেকে যাবে স্হির
কখনো সিঁড়ি ক্রমাগত উঠে যাবে মানুষ নড়বে না
তবে ক্রমশ এভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় চারটে টেক্কার
কোনো সুনিশ্চিত হাতযশ নেই
আর তাসখেলা কোনো সরলতা পরখ করার আয়োজন নয়
কেননা শেষাবধি সংশয় থেকে যেতে পারে
চিড়িতনের পাঁচ পিটের পর হরতনের টেক্কা বের করা ঠিক ছিল কিনা–
কুকুরের গল্প
একটি টিনের চাদর ঘষটানি থেকে উঠে আসছে একটি কুকুরের আর্ত চিৎকার
আর্ত শব্দের মধ্যে থেকে যাচ্ছে একটি বিপন্ন রেফ
একটি সংঘর্ষের পরিমিত ধ্বনিবাহিকতা
আততায়ী বা অমসৃণ দ্বিতীয়পক্ষের উপস্হিতি
যেভাবে ধাতু সম্পর্কে নিহিত রয়েছে গোলাপের বর্ণসংকেত
কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বেন চিদানন্দ সোম
তিনি যেহেতু সারা জীবন কুকুর পুষেছেন
তাঁর বিশ্বচরাচরের গল্পে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায় এক মহাজাগতিক অলৌকিক ছিটকুকুর
সে গল্প চিদানন্দকে পোষ মানায়—
আর্ত শব্দটির প্রতি সমর্থন তুলে নেওয়ার মুহূর্তে
টিনের চাদরের ঘযটানির সংবাদ থেমে যেতে চায়—
ছন্দ
প্রত্যেক বাক্যের মধ্যে কিছু শব্দ পাশ ফিরে থাকে
প্রত্যেক শব্দের মধ্যে কিছু অক্ষর থেকে যায় স্বল্প উচ্চারণে
কিছু উপসর্গ প্রত্যেক ধাতুর সম্পর্কে থেকে যায় অর্থবিহীন
বুঝ আর অবুঝের মধ্যে বোঝাপড়া রাখে কার্যসাধিকা
নীলুদের স২সারে ছোটমাসি মুখ বুজে কাজ করে যায়—
জটিলতার কাছে সোপর্দ রয়েছে
গতির অরৈখিক নকশা
অংশ-প্রীতি, ঘুম
যেভাবে বিশৃঙ্খলা ছন্দের মুখোশ ।
আমি ও আমার ঠোঁট অস্তিত্বের জট খুলে রাখছে
ঠোঁট মাংসব্যবস্হার মধ্যে তার বখরা সুনিশ্চিত করে তুলে
আমাকে ঠোঁটের অধীন ঠোঁটের কাঠামোয়
এখন আমি বলতে শুধু ওষ্ঠদ্বয়
বীজ স্হাপনের আগে বিস্তৃত চিৎ ভূস্হল পরখ করে নিতে
রসায়নবিদ্যাসহ ঠোট ঘুরছে
প্রাসঙ্গিক
চুম্বকের ঠিক মাঝখান থেকে ঘুমন্ত জলাশয় ভেসে ওঠে
ক্রমশ ফুরিয়ে-আসা জন্মদিনের মোমবাতি দ্রুত নিভিয়ে দেয়
বিষুবরেখার কাছাকাছি দুপুর হলে বর্ষা নামে
একটা ছটফটে ঢেউ মুঠোয় তুলে দেখে নেয়
চুম্বকের ঠিক মাঝখানে আছে আকর্ষণ আর প্রত্যাখ্যান
এক-এক সময় তারা শুধু পোশাক বদল করে
একজন যখন রাতের পোশাকে সাজে অন্যদিক তখন স্বপ্নভাঙার ঘোরে
ঘুমন্ত জলাশয়ের গল্প শোনায় কেননা দিকচিহ্ণ যার নাগালপ্রিয়
তার কোনও মধ্যবিন্দু আছে কি না আর যদিও বা থাকে
সেখানে সেই আকর্ষণ ও প্রত্যাখ্যান কীভাবে পাশ ফেরে
কেননা শেষ ট্রেনের প্রসঙ্গ এলে পাশাপাশি একটা তারিখের কথা ওঠে
আনুভূমিক
…আমার মা আজকাল দিনদিন ছোটো হয়ে যাচ্ছে…
একই স্পেসে আলাদা সময়ে
দুই তাসুড়ে
নবগাঁর জয়ন্তর চাঁদ আর উরুগুয়ের ফেদেরিকোর সূর্য
অনলাইনে তাস খেলছে
পিঠ কুড়োচ্ছে
যশোদার কোলে ভূমিষ্ঠ আনুভূমিক
বাড়ছে দেশকালের স্পর্ধা
ব্রিজ খেলছে
অঅসেতুসম্ভব সেতুবন্ধন
গোলাকার ভূমন্ডলে ঘটমান পৃধিবী ত্রিকোণ
কবিতার নদীর প্রেমিক কোলাহল
নির্জনতা কোলা হলের প্রেমিকা
ত্রিকোণ প্রেমের ফাঁদে
আজও নদী আঁকাবাঁকা
ওয়ে ওয়ে
১.
পাগলি কানে কানে বলে—
খেয়ে সুখ নেই
পরে সুখ নেই
ঘুমিয়ে সুখ নেই
ওরে—
প্রাণভরে গান গাইতে চেয়েছিলাম
গান তো হলো না—
২.
সব দেখে শুনে
নিরাপত্তার খাতিরে
মা আমাকে রেখে গেছেন
বৃদ্ধাশ্রমে
কই
মা আর দেখতে আসেনি
কে বলবে
তুই ভালো আছিস বাবা—
৩.
মন্দিরের গায়ে কেউ আর ভালোবাসা খোদাই করে না—
ভালোবাসানিয়া উলকি এঁকে আঁকে বুকে
চিবুকে পিঠে তলপেটে নিতম্বে মাংসে
তোমরা যারা দৃশ্য ভালোবাসো—
এসো
মাংসে আসার আগে
উলকি পেরোও ।
এই কবিতার সম্ভাব্য শিরোনাম
লোমশ মুনির গল্প
চিত্রলেখার সখীসংবাদ
বাণরাজার মেয়ের রূপকথা
বিষ্ণুপুরাণের আনলিমিটেড সেক্সস্টোরি
সেভেন ও ক্লকের অ্যাড স্নিপেট
একটি উদারবাদী কবিতা
‘সেভেন-ও-ক্লক’-এ ঠিক সাতসকালে নিয়মিত দাড়িকামানোর কথা
অবশ্য সেভেন-ও-ক্লক কি জানে কেন ঊষা সাতরকমের
মুশকিল এই যে চলে আসতে পারে ঊষা-ফ্যান কিংবা ঊষা মঙ্গেশকরের হালফিল
অথচ প্রয়োজন ছিল চিত্রলেখার আঁকা অনিরুদ্ধদের সেই ফ্রি হ্যান্ড স্কেচের
যেদিন ছটা বত্রিশে সেফটিরেজর রেডি হয়ে যায় সেদিন গালের এখানে-সেখানে
ছেড়ে-যাওয়া খোঁচা-খুচ রেখে দিতে চায় স্মার্টনেসের অভাববোধ
থুতনির কাটা দাগটার কাছে যেখানে দীর্ঘ অতীতের বাঁকা চিহ্ণ খোঁদল হয়ে আছে
একসময় মাসতুতো বোন রিংকুর সঙ্গে সিঁড়ির কোনটায় হুটোপাটি করে খেলতাম
একটি অনুশাসনপ্রিয় বাজারমনস্ক অর্থনীতি-নির্ভর ব্লেডের এসব তো জানার কথা নয়
তার লক্ষ্য হিমাক্স জিলেট উইলকিনসন্স সোর্ড লেজর এবং ভারত
বা সেই সব আলসে ডিপেন্ডিং কনজিউমার যাঁদের জন্য সেভেন-ও-ক্লক থ্রো-অ্যাওয়ে
শেভিংমনস্কতাগুলির মার্কেটস্টাডি সার্ভে-প্রোপোজালমতো শেভিং শ্রেণিসমাজ
নরসুন্দর নাপিত ক্ষৌরকার নাপতে স্নায়য়িতু জাতিগত প্রতিদ্বন্দ্বীদের ফেলে রেখে
সাতটা আটচল্লিশে শেভিং শুরু করলে দেখা যায় ঠোঁটের নিচে খাঁজে
ঝুলপির বাঁদিকে দু-একটি রক্তাক্ত দাগ আফটার-শেভ লোশনের জন্য
প্যারালাল শিফট রাখে, পাস অন করে দেয় এক্সট্রাস্মুদ শেভের জন্য প্রেসনজল
শেভিং-ফোমে পি-টু-রেজার ডবল-অ্যাকশান কার্টিজে—
রিংকুর কথা কিছুতেই যেন না মনে পড়ে, থ্রো-অ্যাওয়ে নসট্যালজিয়া,
শুধু এটুকু বলা যায় যে লোমশ মুনি তীর্থযাত্রায় থাকতেন যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে–
হ্যালো মহেশ চোপরা ইয়োর ডোর-টু-ডোর লেটেস্ট চেকআপ কী বলছে !
শ্যাওলার প্রজনন
পোকাখেকো গাছেদের ডাইনীস্বভাবে শিরদাঁড়ায়
জন্ম জন্মান্তর পেরিয়ে উঠে আসছে পোকাজীবন
সবুজ ফিরে আসছে ক্লোরোফিলে পাতাবাহারের পাতাহরফে
ক্লোরোফিল দিবসে সবুজের হাঁ মুখের রহস্য খুলছে
মেয়েমানুষেরা মাসিক রক্তপাতের আঁশটে লুকিয়ে রাখছে
এই তো সেদিন জেটি থেকে ট্রলারে উঠতে গিয়ে অথৈ সমুদ্রে
সেকেন্ডের কাঁটায় ডুবছে সময় অবলম্বন খুঁজছে আত্মজীবন
গুপ্তচিহ্ন জমা পড়ছে বেড়ালের ঠ্যাং তোলা প্রস্রবণে
শ্যাওলা প্রজননের উষ্ণতায় কাঁকড়া বিছের বনে বুদবুদিয়া নদীতে
হাজার হাজার বিছে সন্তানের জন্য গর্ভদেশে সেঁক দিচ্ছে
সাবধানে পা রেখে হাঁটছি ঝরাপাতার আস্তরণে
ভিমরতি আর ভিমবাঁধের পুনশ্চ পেরিয়ে মল্লভূমির মল্লারপুর
অন্ধকার নামছে গাছেদের ছায়া নামছে পঞ্চমুখি জবার দেশে
আল্পনা
কবিতায় গৃহীত হওয়া মাত্র
শব্দ নিষিক্ত
জৈব সত্ত্বায়
আর সব বাস্তবের মতো
কবিতার বাস্তব
সমীর মানুষিক
আক্ষরিক
আমার আমি থেকে ভিন্ন
প্রতিচ্ছবি
লিখিত হওয়া মাত্র
সেও আমি
শেফালি আল্পনা
অধুনান্তিক
যারা আস্ত রসগোল্লা একবারে মুখে পুরে দেয়
আর যারা ছোটো করে ভেঙে থেমে থেমে খায় অথবা
চারটে দিলে এক-আধখানা শেষমেষ এঁটো প্লেটে ফেলে রাখে
সেই সব আচরণের সামাজিক অবস্হান নিয়ে ভাবতে পারেন রোঁলা বার্থ
তিনি বঙ্গ-সংস্কৃতির রসগোল্লার সঙ্গে পর্তুগিজ অভিযাত্রীদের
মিষ্টান্নপ্রীতির খুঁটিনাটি সূত্রগুলি জানেন, যেভাবে রসগোল্লার সঙ্গে
ইউরিয়া বা চিনি-কেলেঙ্কারির হদিশ রাখেন স্বাধীনোত্তর সাংবাদিক-লবি
অথবা বাতাসার সঙ্গে ঈশ্বরের আরাধনার যোগসূত্র জানতেন পতঞ্জলি
রসগোল্লার সঙ্গে কমলাভোগের বা রসমুণ্ডির পার্থক্যকে
হালুইকর ও মোদক সম্প্রদায়ের জাতিগত ইতিহাসের দিক থেকে
দেখা হবে কি না সে-বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কে অনায়াসে
নিয়ে যাওয়া যেতে পারে পিছড়া-বর্গ আন্দোলনকারীদের কাছে
আর অতিমাত্রায় রসগোল্লা খাওয়ার প্রতিযোগীতার সঙ্গে
বস্তুবাদী দ্বান্দ্বিকতার সম্পর্কসূত্র একসময়ে জানতেন মাননীয় সুভাষ চক্রবর্তী
অবশ্য ভবপাগলা বলে গেছেন রসগোল্লার সঙ্গে আমেজে
গোল্লায় যাওয়ার সম্পর্ক নিছক রসবোধের যার জ্যামিতিক
সাদৃশ্য-বর্ণনা পাওয়া যাবে গোল-গল্পে বা গোল-কবিতায় তবে
লেডিকেনির বদলে যাঁরা রসগোল্লা ভালোবাসেন
হলফ করে বলা যায় তাঁরা কোনমতেই আর যাই হোন বর্ণবিদ্বেষী নন
কেননা আগ্রহের বা উদগ্রীবের যাবতীয় কূটরহস্য রাখা আছে
লোকায়ত অন্ধকারে উৎবিড়ালেরা অহোরহ যেখানে অতর্কিতে হানা দেয়…
হণির ভিতর দিয়ে দেখা যায়
জাহান্নমে যাক গ্রহনক্ষত্রসমূহ ভেঙে পৃথিবীও যাক জাহান্নমে
লাথি মেরে সব ভেঙে চুরমার করে দিলে কাল আমি সহাস্যবদনে
হাততালি দিয়ে মঞ্চে কোনোরূপ গ্লানিহীন নুরেমবার্গের আদালতে
তুড়ি মেরে কাঠগড়া মুঠোয় গুঁড়িয়ে তোমাদেরও পারতাম ভেল্কি সবিস্তারে ।
সৌরমণ্ডলের পথে তছনছ পৃথিবীর অন্ধকার ফেরি আবর্তন
কোনোরূপ রেখাপাত সম্ভব ছিল না গ্রন্হে হৃদয়ে মেধায়
আমার শরীর ঘিরে ইহুদির হিন্দু শিখ মুসলিমের আততায়ী আদর্শের ঘৃণ্য রক্তপাত
আমাকেও জয়োল্লাস দিয়েছিল মূত্রপাতে পোষা রাজনীতি ।
তোমাদের আস্ফালনে বিনয়ী মুখোশ ঘিরে আমার হনির জন্মদিন
আমারই মুখোশ ধরে টান মেরে ছিঁড়ে ফ্যালে আর্ত চিৎকারে–
ধান উৎপন্ন হওয়ার গন্ধ এখন পেয়েছি শুঁকে কৃষকের উর্বর শরীরে
কুমারী মহিলাদের উজ্জ্বল মসৃণ দেহে বহুবার হাত রেখে উত্তরনিশীথে
পরাগ চমকে উঠে স্পর্শ করে নারীর সমগ্র দেহ জুড়ে
আশ্রয় ছড়ানো আছে প্রীত এক ধরণের মিহি রুখু বালি ।
ক্রমে সেই সমস্তই নাভির ভিতরে আনে রুদ্ধ আলোড়ন,
জেগে ওঠে মৃগনাভি, চেয়ারে টেবিলে গ্রন্হে অম্লান মাঠের ভিতরে
ধু-ধু রিক্ত প্রান্তরের দিকে শাবক প্রসব করে রঙিন প্রপাত,
চারিদিক ফলপ্রসূ হয়ে গেছে রাশি-রাশি প্রতিহারী ধান–
মনে হয় বহুক্ষণ মাঠে-মাঠে গড়াগড়ি দিয়ে বিছানায় উঠে আসে নারী
ক্ষুধার্ত শিকড়গুলি ঢেকে যায় নীড় আস্বাদনে ;
তখনই উৎপন্ন হওয়ার গন্ধ জাগে, কৃষকের উর্বর শরীরে
প্লুত আবছা আঁধারে তাই বারংবার মনে হয় পৃথিবীর সহজ সুদিন
ফিরে এলো সুধাশান্তি
আমার হনির জন্য তোমাদের কাছে আমি ঋণী চিরদিন ।
ছাদনাতলার ক্রসকানেকশন
দৃশ্য তিন: সময়
দেয়ালে ঘড়ি, ঘড়ি থেকে বেরিয়ে কয়েকজন ব্যস্ত পুরুষ
হনহন করে এগিয়ে গেল, বের হলো আড়মোড়া ভাঙা
নারীভঙ্গি,— হনহনে লোকগুলোর একজন নারীকে
দেখছে, নারীশরীর প্লটজমিতে পালটে যায়— অন্যজন
মাথা হেঁট করে কুকুরে যেভাবে মাংস শোঁকে, জমি
দেখছে খুঁটিয়ে— নারী এবার দেখছে গাছের ডালে
বসা ফিঙে, লোকটাকে ইশারায় দেখায়
ঐ জমিটা যেখানে পাখি বসে! পাখি ডাল
ছেড়ে সকলের জমির উপর দিয়ে উড়ে যায়—
পাখির পেছনে ছুটতে থাকে হনহনে পুরুষের ভিড়—
—সবাই ঘড়িতে ঢুকছে— ঘড়ি স্বয়ং পাখি হয়ে ফুড়ুৎ—
নারীর আড়মোড়া, পুরুষের হনহনে হাঁটার ভঙ্গি, ঘড়ির
সেকেন্ডের কাঁটা, উড়োপাখির ডানা,— ডানা থেকে
ঝরে পড়ছে প্রসাধনসামগ্রী টুকিটাকি গ্যাজেট আসবাব—
জড়ো হচ্ছে রদ্দি বাতিল কাবাড়ির আস্তানায়— কবি হুমড়ি
খেয়ে বেছে নিচ্ছেন উপমা প্রতীক লোগো—
নানা রঙের সিন্ডিকেট
একজন ভাবুক ব্যক্তি মানুষের কাছে ভাববিশ্বই তাঁর ভূখন্ড
একজন ইসলামিস্ট্ মনে করেন ইসলাম তাঁর কৌম
সীমার দু’পারে ভাষা আন্দোলনে শরিক বা বিশ্বাসী যাঁরা
বাংলা ভাষাই তাঁদের ভূখন্ড
তা বলে তাঁরা নাস্তিক নন
নেটিজেন সুকুমার চৌধুরী মনে করেন
বহির্বঙ্গ আজ অপ্রাসঙ্গিক
বন্ধু ফণীশ্বরনাথ রেণু নেপালের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন
পিকাসোকে দেখা গেছে স্পেনের গৃহযুদ্ধে
তাঁর ভাববিশ্বের টানে
আজ অনেক জুয়াড়ির খেলার জায়গা বেটিং সিন্ডিকেট
এক কোটি টাকা মানে খোঁকা
তার বেপরোয়া জুয়ার দান
তাকে ক্রিকেটের ভি আই পি বক্সে দেখা যায়
বা মন্ত্রীত্বের গদিতে
একজন কবির কাছে যুক্তির বাইরে বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া
আর কোনো গত্যন্তর নেই
এক শূন্য থেকে আর এক শূন্যের দিকে চলেছি আমরা
না লিখতে পারার কষ্টের চেয়ে লেখকের আর কোনো কষ্ট নেই
বহুদিন পর একটা কবিতার বই বেরিয়েছে
তবু সে ভয়ে ভয়ে
দোপাটি ফুলের সুরলিপি
তেজময় বিন্দু থেকে শিথিল বিন্দুতে আমাদের গমনাগমন
বিগব্যাঙ তেজপুঞ্জের বিস্ফোরণ
নৈঃশব্দের ক্রন্দন
ব্রক্ষ্মান্ডের জন্মমুহূর্তের সম্প্রসারণ
মানুষও জন্মমুহূর্তের পর ডুকরে ওঠে
তরঙ্গকণা তখন আসঙ্গকাতর
দিনে দিনে আমৃত্যু সম্প্রসারিত হবে বলে
শুধু বিড়ালের শুদ্ধিভাব জানে
সে তখন অ-বিড়াল
আমি তখন অ-সমীর
তুমি তখন অ-শেফালি
বিগ্ক্রাঞ্চ মৃজ ধাতুর মৃত্যুদিবস
ঐ দেখ ফুরিয়ে যাচ্ছে অ – উ – ম
মানুষের স্বপ্নের মৃত্যু.
আল্পনা
কবিতায় গৃহীত হওয়া মাত্র
শব্দ নিষিক্ত
জৈব সত্ত্বায়
আর সব বাস্তবের মতো
কবিতার বাস্তব
সমীর মানুষিক
আক্ষরিক
আমার আমি থেকে ভিন্ন
প্রতিচ্ছবি
লিখিত হওয়া মাত্র
সেও আমি
শেফালি আল্পনা
ব্রাক্ষ্মণ ব্রাক্ষ্মণীর দাম্পত্য কাহিনী
ভাষাদেশের দিগ্বিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই প্রেম কাহিনী
বরফ বরফি
ব্রাক্ষ্মণ ব্রাক্ষ্মণীর জমাট বাঁধা দাম্পত্য
বরফির মিষ্টি স্বভাব
বরফ চায় সংরক্ষণ
দাম্পত্যের উষ্ণতায় সে গলে যায় অনায়াসে
দুজনেই অবস্থানপন্নতায় অভ্যস্ত
আমাদেরই মতো ক্ষণস্থায়ী
এই আছি এই নেই
জন্মান্তরে অবিশ্বাসী
রূপান্তরে তার রূপের কদর...
নির্লিপ্ত নিয়তি…
যে যার যেমন
নেতৃত্বের পছন্দ হাত তোলা ঝ
ঝ’য়ে ঝামেলা
প্রথম ভাগের পড়ুয়ারাও তা জানে
ব্যারিটোনে ক্ষুৎকৃত্য আর ঠুংকৃত্য
হাঁচি যেমন ক্ষুৎকাতরতা
সূর্যের রোববার যেমন ব্যাকরণ সম্মত
ভাবনার কোনো কৌমুদী নেই
নেই দিবানিদ্রার স্বপ্নের
মা এই সেদিন নির্বিকার বললেন
স্বপ্ন ও জাগরণে
এখন যেমন নষ্টচন্দ্র দর্শনে দর্শকের কলঙ্ক হয় না
আতসীচিত্রণ
হাতে আছে পাওয়ার পাপলু
কাকে ফিরিয়ে আনতে চাস বল্
বিন পগ চ্যলে শুনে দিল্ কাণ্হা
বিন হাত কার্য্ ক্যরে বিধি নানা
বরষে কম্মল ভিঙ্গে পানি
বাঘ চোখের নিমেষে পালটে যায় রেসিং বাইকে
জলে ভাসতে থাকা সিংহের ছায়া
ওই দেখ বদলে যাচ্ছে ফোর হুইল ড্রাইভে
পানপাতার আড়ালে চোখ ঢাকা মেয়েটা
পান সরলেই দেখবি তোর চিরকালের প্রেমিক
নিম্বাস মেঘ সরলেই চড়ন্ত রোদ
পূর্ণিমার চাঁদ
আয়নাঘর
ঘুম ভেঙে আয়নায় দেখি বাবার তিনকাল পেরোনো মুখ
রাতে খুলে রাখা দাঁতের ডিবে খুঁজছে
ইসেবগোল খেয়ে ঘুমিয়ে ওঠা লোকটার শুকনো গলায় তেষ্টা…
কোঁচকানো গালে ছ-দিনের দাড়ি, ভুরুর বাড়ন্ত চুল চোখ ঢাকছে…
ফিটকিরির গুঁড়ো দিয়ে ঢিমেতালে মাড়ি শেষ যত্নে ধুয়ে নিচ্ছে…
সাদা মাথায় তিনটে কালো চুল দেখে নির্বিকার ফোকলা শূন্য হাসছে…
খুলে রাখা নাক কান চোখ অঙ্গপ্রত্যংহগ তাঁর দলিলে নেই
বর্ণমালার ক্ষয়িষ্ণু অমৃতকণা দ্যাখে পরস্পর বর্ণগুলি মৌলকণা
করোগেটেড কপালের বলিরেখায় কেওসের চিহ্ণ
কদিন বাদেই আসবে ডেটল না-রাখা টিনের কাঁচি চিরুনি…
ইমলিতলার ভ্যানওয়ালা লটারি পাওয়ার গল্প শুনিয়ে যাবে…
এমনই অনেক অনুভব ভব হয়ে উঠছে আয়নায় দেখা মুখের ভাঁজে…
পেছন ফিরে দেখি চিরযৌবন আর কবিতার খাতা নিয়ে সমীর–
শেফালির সঙ্গে বকখালিতে আজ তের ডেটিঙ
পরস্পরের ভূপ্রকৃতি বাস্তুতন্ত্র গিরিখাত আগ্নেয়মুখ চিনে নিতে এখনও বাকি…
কবিতা খাতা শেষ পাতায় লিখে রাখে ইজা
আয়নাঘরে পেছনের আয়নায় বাবা পিতামহের মুখ দেখছে…
প্রপিতামহ দেখছে প্রপৌত্রের মুখ
পাঁচ রাউণ্ডের শেষে শেষ ডিফেন্সে আমি গোলপোস্টে একা
নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে বিপক্ষের কর্ণার কিকের মুখোমুখি
গোলার সামনে দুই জার্সি জটলায় পজিশন নিচ্ছে
হেড-বেহেড মাথার ওপর বল ঘুরছে ফিরছে
পক্ষ-বিপক্ষ বুঝে উঠতে হিমসিম খাচ্ছে
ভয় এবার যদি পেনাল্টিকিকের হুইসল বাজে
আয়নাঘরের সম্ভাবনা মাঠে…
টুথব্রাশ সম্পর্কে যে-সব কথা এখনও বলা হয়নি
প্রশ্ন উঠতে পারে একটা টুথব্রাশে ঠিক কত মাত্রায় শ্রমদিবস আছে, ঐ টুথব্রাশের সঙ্গে জযিত আছে কিনা দারিদ্ররেখার নিচে থাকা কোনও শ্রমিকের এলোমেলো সংসারের ঝড়ঝাপটার অনুপস্হিতি আর অনিচ্ছাকৃত লেটমার্ক, ঠিক কতখানি পুঁজি নিয়ে শুরু হয়েছিল এই বহুজাতিক টুথব্রাশের নির্মাণ-প্রক্রিয়া, কিংবা যে সেলকাউন্টার থেকে বাছাই করে আনা হয়েছে সেই ব্রাশগুলি কতদূর প্রতিযোগীতামূলক এও ভাবা যেতে পারে ব্রাশের অ্যা২গুলার গঠন আমাদের আর্সেনিকগ্রস্ত জলে কতখানি আশাব্যঞ্জক, যদিও ভয় আমার টারকোইশ আর পিকক ব্লুর মাঝামাঝি রঙের আদরের ব্রাশখানি সামনের সপ্তাহে ঠিক হয়ে থাকা যুথিকার বিয়েতে কারো সঙ্গে মিশে না যায়, তবে কুষ্ঠিবিচারে হয়তো দেখা যাবে ভোপালে বেড়াতে গিয়ে হোটেলে ফেলে আসার একটা আবছা সম্ভাবনার ইতস্তত উঁকিঝুঁকি, অথচ ব্রাশ সম্পর্কে প্রধান বিচার্য মাড়ি আর দাঁতের সঙ্গে কিছুকাল যুৎসই হওয়ার দাবি যা এই ভরসাবাতিল দিনকালে শেষ পর্যন্ত কতটা ধোপে টিকছে কে জানে, কেন না যতদূর শোনা যায় সেসব রানিং প্র্যাকটিস ডেনটিস্টের কাছে এই ব্রাশ কোম্পানির প্রতিনিধি যায়নি তাঁরা হয়তো বিনা বাক্যব্যয়ে বলে ফেলবেন, টুথব্রাশটি সত্বর ফেলে দিতে, হয়তো দেখা যাবে আক্কেল দাঁতের দিকে যাওয়ার সময় চারিত্রিক কারণে এই টুথব্রাশের এপাশ ওপাশ হওয়ার মতিগতি ঈষৎ পালটে যায়, লক্ষ্য রাখা দরকার ব্রিসলগুলো স্বভাবগুণে ইঁদুরবান্ধব, পরখ করা যেতে পারে ব্রাশটার অচেনা গঠন আর হালফিল রঙের শেড দিয়ে আপনার চোখ-ছলছল ছোটো মেয়েটাকে কালে ভদ্রে ভোলানো যাবে কিনা, কিংবা দাঁতের অযোগ্য হয়ে ওঠার পর চুলের কলপে কতটা কাজে লাগবে ; হয়তো শেষমেশ দেখা যাবে আপনার স্ত্রী যেখানে ব্যবহৃত জড়ো করেন সেখানেও ঢুকে যেতে পারে ভবিষ্যতে দুটো পয়সার চিন্তায়, অবশ্য এই টুথব্রাশ সম্পর্কে একটা কথা এখনও বলা হয়নি মানে চাঁদের উল্টোপিঠে যে চন্দ্রযান গিয়েছিল সেই প্রযুক্তির ভাসাভাসা স্পর্শে এই বেস্ট সেলার অভিনব ব্রাশ দাঁতের এবড়ো-খেবড়ো উল্টোদিকে অনায়াসে চলে যেতে পারে ঠিকমতো স্ট্রোক আর মুভমেন্ট জানা থাকলে — তবে মুশকিল এই যে ঝাঝা স্টেশানে ভোরবেলার ট্রেনের জানালার দিকে কটা পবসার জন্য যে ছেলেটা একগোছা দাঁতন বাড়িয়ে দেয় তার কাছে আমাদের ধোপদুরস্ত স্বভাববদলের খবর এখনও পৌঁছে দিতে পারিনি…
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন