তপন দাশ : বাংলাদেশ
( এই কবিতাটি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হবার আগে লেখা )
বার্লিনের দেয়ালের এধারে-ওধারে
দুই জার্মানের হঠাৎ দেখা হয়ে গেল ।
ডিনার টেবিলে বসে নিরুদ্বিগ্ন ছুরি দিয়ে চিরছি মুরগির পেট
সামনের দিকটা তোমার, পেছনটা আমার
তোমার সিলেট আমার মুর্শিদাবাদ, কেমন ?
ধান কাটা হয়ে গেলে পর সুজলা সুফলা বাংলাদেশ তৈরি করছি
দুর্গাপুর চিত্তরঞ্জন এবং কামারহাটি
সামনের দিকটা তোমার, পেছনটা আমার
ভাগবাঁটোয়ারা করে নেয়া যাক ।
কফিহাউস সাপ্লাই দিচ্ছে মনীষী
কমিউনিস্ট পার্টি ভোটের বাজে বিপ্লব করছে
তোমার সিলেট, আমার মুর্শিদাবাদ, কেমন ?
ভোটের রেজাল্ট শুনে বাংলাদেশে কাঁচকলার দাম বেড়ে যায়
যে কোনো সময়েই ভয়ানক কিছু ঘটে যেতে পারে
এবং ঘটে না বাংলাদেশে
‘৪৭ সালে আমি খুনোখুনি করিনি
‘৪৭ সালে আমি শান্তি শান্তি করিনি
‘৪৭ সালে আমি জন্মাইনি
‘৬৭ সালে আমি মুরগির পেট চিরছি
নিয়ন আলো আর মার্কাসস্কোয়ার একই বাংলাদেশে
ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড নরমুণ্ডের পাশের ফুটপাতে
সুস্হির জাবর কাটে মহিলারা সংগ্রামী বাংলাদেশে
আমার শরীরে বইছে তিন হাজার অস্ট্রোলয়েডের রক্ত
আমার শরীরে বইছে হাজার নেগ্রিটোর রক্ত
আমার শরীরে বইছে ন’হাজার এ্যালপাইনের রক্ত
আমার শরীরে বইছে বাঙালি বাবা-মা’র ভেতো রক্ত
মানুষ হবার জন্যে নিজেকে বন্দী করেছি আদর্শের জেলে
ভারতবর্ষের অন্য সবাই আমার চরণাশ্রিত হোক -- এটাই চাই
ওয়াশিংটনের সেলুনে কাটাতে যাচ্ছি যৌনকেশ
বাংলাদেশে চালান দিচ্ছি কনট্র্যাসেপ্টিভস
বাঙালী হয়েছি বলে বাঙালী তৈরী করছি আণ্ডারপ্যান্ট ছুঁড়ে ফেলে
বাংলাদেশকে মেড়োরা দখল করুক চাই না বলে
আসামে বাঙালী বিতাড়ন দেখে কোঁকাচ্ছি
রাত্তিরে ভয় পাই আমার ওপর ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে বোমার চূড়ান্ত শেল
পাশবালিশ জড়িয়ে অধঃপতন থেকে রক্ষা পাই
প্রেসিডেন্সি কলেজে ক্লাস করছি বাঙালী হবার জন্যে
মুরারি দু’আনার বাদাম কিনে জাতকুল মিলিয়ে স্বর্গীয় বিদ্রোহী প্রেম চালাচ্ছে
মুরগির পেট চিরছি বাঙালী কায়দায়
হিন্দি প্রতিরোধ আন্দোলন করার আগে পেয়ার-মোহব্বতে লাইন দিচ্ছি
অনুপমার জন্যে রাত্তিরে হাঁপাতে থাকি
বাংলাদেশের বয়স কতো হোল
মুরগির পেট চিরছি উনিশশো সাতষট্টি সালে
বাংলাদেশ কবে মারা যাবে কবে পোড়ানো হবে বাংলাদেশকে
সামনেটা তোমার, আচ্ছা, পেছনটা আমার
তোমার বেরুবাড়ি আমার…
কবে খতম হবে বাংলাদেশ ।।
[ ষাটের দশকে হাংরি আন্দোলনের পত্রিকা “জেব্রা”-র দ্বিতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত ]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন