আমি ও সমীর
আমি – সমীর, তুই আমার কে
সমীর – ছায়া
আমি – যখন আমার ছায়া নেই
সমীর – মায়া
আমি – সবর্ত্র বিরাজমান চেতনা আমিও
সমীর – আমি তার পরিচিত
আমি – তোর আড়ালে আমার স্বরূপ গোপন, তুই মিথ্যা
সমীর – তুই ব্রহ্ম তাই গোপন, আমি প্রকাশ্য তাই মায়া
আমি – আমি সবর্ত্র বিরাজমান চেতনায় সম্পৃক্ত
সমীর – ব্রহ্ম পৃথক নয় আমিও পৃথক নই, তোর সংলগ্ন, তুই উইকেট আগলে বল ফেস করছিস, আমি রানার, তুই হয়ে রান তুলছি
আমি – আমি ঋত
সমীর – তুই আর আমি মিলে সত্যানৃত
আমি – তুই ঋতত্ব খর্ব করছিস
সমীর – ওটাই আমার খেলা, তুই আর আমি মিলে তবেই কোয়ান্টাম ব্রহ্মাণ্ড
আমি – তুই আমার মাথার ওপর বসে থাকা ফিঙে, তুই বহিরাগত
সমীর – তুই যখন ঘুমিয়ে পড়িস আমি তোর স্বপ্ন হয় জেগে থাকি
আমি – আমি কবিত্ব
সমীর – আমি তার টাইটেল
আমি – আমি মরে গেলে তুই কি করবি
সমীর – আমার মৃত্যু নেই, আমি তোর ভূত ও অমরত্ব
আমি – ব্রহ্ম সত্য জগৎ সত্য
সমীর – তা বলতে পারিস। তবে মিথ্যাই রহস্যময়। সত্য মিথ্যা নিয়েই তোর শিল্পসাহিত্য। ধর্ম খেলাধূলা ভাষা চাষবাস শিল্পসাহিত্য ম্যাজিক (যার বিবর্ধিত রূপ বিজ্ঞান) এই ষড়ত্ব।
আমি – ইন্দ্রজাল, গ্রেট এ্যাবাউট টার্ন
সমীর – সমীর শব্দের সঙ্গে তোর মূল অস্তিত্বের কোনো যোগ নেই, তবু ‘সমীর’কে অর্থবহ করে তুলতে হবে তোকে।
আমি – তুই তাহলে কি আমারি চিহ্ন বিস্তার
সমীর – আমি তোর উশনা
আমি – আমার ডি এন এতে তুই নেই
সমীর – না তা মানছি, তবে আমি না হলে তুই অচল স্রেফ ঠুঁটো জগন্নাথ
আমি – তাই তো ছাপ্পান্ন ভোগের রন্ধনশালা
সমীর – দারুময়, কাষ্ঠবৎ
আমি – পরাকাষ্ঠা
সমীর – আমি না হলে তুই নিরুপায়
আমি – তাহলে আমি মরলে তুই আমাকে বহন করবি
সমীর – হ্যাঁ তা ঠিক, তবে সেই সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য রচনার দায় তোর
আমি – আজন্ম চুক্তি
সমীর – সভ্যতা বিস্তার, আমি আর তুই জগতের কাছে অভেদ্য
আমি – আমার একাকীত্বে তোর প্রয়োজন নেই
সমীর – তোর সবর্জনীনতায় আমি অপরিহার্য
আমি – তুই আমার সম্বোধন
সমীর – মানুষ নিজেকে ছাড়া সব কিছুর মানবিকীকরণ করেছে নামকরণের মাধ্যমে। তার নিজ নিজ নামগুলি ব্যতিক্রম
আমি – আমার পোষা বিড়ালের নাম আছে
সমীর – অবশেষ বিড়ালের নাম নেই, সে ঝাঁক হয়ে পরিচিত মার্জার, কার্যকারণে সীমায়িত
আমি – তুইও আমার মৃজ্, একটু বাড়িয়ে বললে উশনা
আশ্চর্য প্রদীপ
“ভোর না হতেই হঠাৎ অরবিন্দর ফোন :
পেয়ে গেছি... ঘরের ঠিক বাইরে কার্নিশে মস্ত মৌমাছির চাক। দুটো স্ট্র যোগ করে পৌঁছে গেছি মৌমাছিদের মধুভান্ডে... টানছি... আমার ঠোঁট দুটো কাঁপছে মৌমাছিদের গুঞ্জনের স্পন্দনে... মিষ্টতার নির্ভেজাল স্বাদ... ফুলে ফুলে ওরা ছড়িয়ে দিয়েছে আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি... শব্দব্রক্ষ্মের বিজিবি ধ্বনিবার্তা... নিষিক্ত হওয়ার অর্গাজম... সেও তো গুঞ্জন স্পন্দন... চার মাত্রার ছকের মায়ানাচ...
মনে আছে নিশ্চয়ই, সূর্যের মাঝখানে জ্বলন্ত পিন্ড... তার তেজ বা তেজস্ক্রিয়া চারপাশের ফোটোস্ফিয়ারে পৌছায় হাজার হাজার বছরে, অথচ সেখান থেকে পৃথিবীতে পৌঁছায় মাত্র আট পয়েন্ট থ্রি সেকেন্ডে...
সূর্যের বিষয়ে আমরা অনেক কিছুই জানি... জানি কণা সংসারের জন্মলগ্ন ওই সূর্যে... আর কণা থেকেই তো আমরা পেয়েছি বর্ণমালা...
পিন্ডকে আমরা বলতে পারি কোর এরিয়া, যেখানে হাইড্রোজেন জ্বলছে... আর বেরিয়ে আসছে প্রোটন... অথচ নিউট্রন সেখানে অনুপস্থিত... আর ফোটন কণা থেকেই তো বেরিয়ে আসছে ইলেকট্রন...
সমীরদা, আরও অনেক কথা আছে কণা সংসারের, সে বিষয়ে আপনিও অনেক কিছু জানেন... কাল ভোরে আবার সে সব নিয়ে কথা হবে...”
চন্দ্রমুখী হোমিও
বন্ধুমহলে সোমেনের পরিচয় ডাক্তারবাবু। সারাক্ষণ হোমিওপ্যাথির বই নিয়ে পড়াশোনা করে। আর হোমিওপ্যাথি ওষুধের নামের মধ্যে আশ্চর্য সব ঝুরোগল্প লুকিয়ে আছে। আজ সকালেই সোমেন আমার কাছে যখন এসেছিল, কথায় কথায় সোমেনকে এই ব্যাপারটা নিয়ে উস্কে দিলাম। যে যে-লাইনে আছে, তার প্রাণের কথায় সেখানেই যাদুবাস্তবতা।
--আচ্ছা সোমেন, মানুষের যত অসুখ হয়, তার পরিত্যক্ত বা বর্জন থেকে নিয়ে কোনো ওষুধ আছে কি? এই ধরো যেমন মল পুঁজ থুতু এসব নিয়ে ওষুধ? সোমেনের মুখ মুহূর্তে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। --হ্যাঁ, আছে তো! যেমন যক্ষা রোগীর পুঁজ থেকে একটা ওষুধ আছে, নাম টিউবারকুলিয়াম।
--তা দিয়ে কী হয়? কোন্ রোগ সারে? --এই ধরুন মানুষের পছন্দ, পছন্দও তো একটা রোগ! ধরুন কোনো একজন মানুষের স্ত্রী বেড়াল পুষতে পছন্দ করে, কিন্তু তার স্বামী পছন্দ করে না। কিংবা ধরুন তার উল্টোটাও হতে পারে, স্বামী পছন্দ করে, কিন্তু তার স্ত্রী পছন্দ করে না। --অর্থাৎ তুমি বলতে চাও, আখ্যানের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে পারে যক্ষা রোগীর পুঁজ!
--হ্যাঁ, তা তো হতেই পারে। যেমন ঘরে তোলা পুঁজি আর ফেলে দেওয়া পুঁজ। --হোমিওপ্যাথি তো জানে ইকোনমি। অতএব প্রয়োজন শুধু মিলিয়ন ডোজ। --যেমন যে বেড়াল পছন্দ করে, মিলিয়ন ডোজ পড়লে তার পছন্দ বদলে যাবে। সে তখন হয়তো বেড়ালের জায়গায় কুকুর পুষতে চাইবে। --ধরো যদি শরৎচন্দ্রকে খাইয়ে দেওয়া যেত মিলিয়ন ডোজ, কিংবা যদি মিলিয়ন ডোজ খাইয়ে দেওয়া হতো দেবদাসকে, তাহলে কী হতো? কিছুটা ভাবতে সময় নিল সোমেন। তারপর বলল -- আমার মনে হয়, তাহলে দেবদাস আর পারুর বাড়িতে যেত না। কষ্ট করে তাকে রক্তবমিও করতে হতো না। আসলে রক্তবমি করার নাটকীয়তার প্রয়োজনই হতো না। --তাই! আর দেবদাস তাহলে কার নায়ক হতো? সোমেন আবার কিছুটা ভাবতে সময় নিল। তারপর ডাক্তারবাবুর মতো গম্ভীর গলায় বলল -- তখন দেবদাস হতো শুধুই চন্দ্রমুখীর...
ডগমগপুর
হাংরি মামলায় সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল। তিনি সেই সাক্ষ্যে বলেছিলেন, তিনি একবার মাত্র হাংরি বুলেটিনে লিখেছেন, আমন্ত্রিত লেখক হিসেবে। কিন্তু আমার কাছে ফাইলের স্তূপের মধ্যে আমি খুঁজে পেলাম যে, সন্দীপন হাংরি বুলেটিনে লেখার জন্যে দেবী রায় অর্থাৎ হারাধনবাবুকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভরে অনুনয় বিনয় করেছেন। হাংরি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই চিঠিটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। চিঠিটির পাঠ এইরকম :
প্রিয় হারাধনবাবু, হাংগ্রি জেনারেশনের জন্য লেখা পাঠালাম। প্লট, কনটেন্ট, ক্রাফট এসব বিষয়ে ডেফিনেশন চেয়েছেন। আপাতত অন্য কতকগুলো ডেফিনেশন পাঠালাম, ওগুলো পরে লিখবো। প্রকাশযোগ্য কিনা দেখুন।
১) ছাপলে সবকটি একসঙ্গে ছাপতে হবে – নইলে খাপছাড়া লাগবে।
২) শেষের তারিখটা রাখবেন।(লিখে, কেটে দিয়েছেন)
৩) ছাপার ভুল যেন বেশি না থাকে, দরকার মনে করলে অনুগ্রহপূর্বক একটা ফ্রেশ কপি করে প্রেসে দেবেন।
‘অমৃত’তে আমার বইয়ের যে বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে, দেখেছেন? নইলে পাবলিশারের কাছে গিয়ে তার একটা কাটিং পাঠাবার ব্যবস্থা করলে খুশি হই। ঐ বিজ্ঞাপনটাই ‘দেশ’এ বেরুবার কথা আছে – যদি বেরোয়, তার প্রুফটা কাইন্ডলি দেখে দেবেন। ‘আনন্দবাজার’এ লেখকদের কোনো বিবৃতি বেরিয়েছিল নাকি? তাহলে তারও একটা কাটিং পাঠাবেন।
সামনের মাসে বাড়ি পাল্টাবো। আরও একমাস থাকবো বা ততোধিক। সহজে যাব না। শরীর ভালো। ছোটগল্পের আবার লেখা দিতে পারলাম না, সম্ভব হলে ক্ষমা করবেন। ভালোবাসা নিন।
সুনীলবাবুকে (হাজরা) প্রীতি জানাচ্ছি। ইতি --
ডগমগপুর / ২৬-১১-১৯৬২ সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
* হাংগ্রি জেনারেশনের একটা সিম্বল করবেন বলেছিলেন। কী হলো? পাঁচ নঃ পঃ করতে পারেন।
* কমাগুলো ভেবেচিন্তে দিয়েছি, ঐগুলোই আসল জিনিস, যেন থাকে।
* শেষের তারিখটা যেখানে আছে, ওখানে প্রকাশের তারিখ দেবেন।
* ‘অভিযান’ ‘পূরবী’তে হয়েছিল তো?
চিঠির বাঁদিকে মার্জিনের পাশে লিখেছেন :
আগামী সপ্তাহে নতুন ঠিকানা পাঠাবো। তার আগে চিঠি দিলে, কুমুদ বাংলো, রুম নম্বর ৫, Tikore, চূনার, মির্জাপুর – এই ঠিকানায় চিঠি দেবেন। ‘আক্রমন’ বানানটা কি – ‘ন’ না ‘ণ’?
পুনশ্চ : লেখাটা প্রকাশ হবার আগে আপনি ছাড়া কেউ যেন না দেখে। অনেক বাদ দিয়ে খুব নরম করে সব দিক বাঁচিয়ে লিখেছি, ভয় নেই।
(নোট : এই চিঠির সঙ্গে দশটি কবিতা পাঠিয়েছিলেন। একটি কবিতা নিচে রাখা হলো।)
বেশ্যা
“বেশ্যার ঘরে আয়না থাকবেই, দেওয়াল-জোড়া আয়না, ছোট বড়, নানা সাইজের দামি বা সস্তা আয়না, একেকটা কারুকার্য করা। খাদ্যদ্রব্য কদাচিৎ দেখেছি, তবে বাসন থাকে। কাচের, কলাইয়ের, কাঁসা ও পিতলের বাসন। বেশ্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কটি তথ্য এই হতে পারে যে, ১) সে উপহার পেতে ভালোবাসে ২) তার soul আছে ৩) তার লজ্জাহীনতা সত্যের মতো ৪) সে মৌলিক নির্বোধ ৫) সামনে কোনো সময় নেই, এমন মানুষ যদি ভাবা যায়, সে সেইরকম।
তার সম্পর্কে একটি কথাই গভীরতর ভাবে ভেবে জানার। তার শরীর যখন একজন ভোগ করে, কী মানসিক অবস্থায় সে থাকে! লোক এলে সে সুখী হয়, বিরক্ত হয়, ঘৃণাও করে। লোককে হিংসা সে কখনও করে না। যখন লোক তাকে উলঙ্গ করে, সে বিরক্ত হয়; একবার উলঙ্গ হলে স্বস্তি বোধ করে, আর তার সহজ লাগে। কিন্তু বেশির ভাগ লোক একসঙ্গে উলঙ্গ হয় না, আলো নেভার আগে অন্তত আন্ডারওয়ার বা গেঞ্জি পরে থাকে। তার নগ্নতা সে দেখে, তাকে দেখতে দেয় না। তারপর কতকগুলি নিয়মকানুন তারা মানে, বেশ্যারা, সে সময় শয়তান তাদের সাহায্য করে বা ঈশ্বর, সে জন্য তারা কদাচিৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়”।
(নোট : এরপর আর এক প্যারাগ্রাফ তিনি লিখেছেন এবং কেটে দিয়েছেন, তাই তা আর উদ্ধৃত করা যাচ্ছে না।)
এমনই ছিলেন আমার প্রিয়বন্ধু প্রয়াত সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়।
ধ্বনিজন্মে আত্মীয়সভায়
পাবলোর সঙ্গে পরিচয়ের পর ধ্বনিদখলের খেলা কিছুটা বুঝতে পেরেছি। পাবলো প্রথমেই জানতে চেয়েছিল, আমি কি হাঙরের প্রজনন ঋতুর গান শুনেছি? আমি তো এসবই শুনে বেড়াই। যেমন প্রত্যেক বছর কখনো হেমন্তের কখনো মান্না দে’র পুজো সংখ্যার রেকর্ড কিনতাম। এবার যেমন কবীর সুমনের গানের সিডি কিনেছি। আর ‘ক্ষেপচুরিয়াস’ ব্লগে প্রত্যেক কবির নতুন নতুন শব্দে তার ধ্বনি অহং জেনেছি।
ক্যানারি দ্বীপের গায়ক পাখি(ল্যায়ার বার্ড) প্রত্যেক প্রজনন ঋতুতে সঙ্গমের অধিকার পাওয়ার জন্য তার সঙ্গিনীকে নতুন গান শোনায়। তার নতুন গান মানে নতুন শব্দ। বহুদিন মানুষের মতো তারাও ঋতু মানে প্রকৃতির ঋতু শুধু বুঝত। আর বর্ষার গান শীতের গান হেমন্তের গান বসন্তের গান শুধু গাইত। নতুন প্রজন্মের সঙ্গিনীদের আর এই বস্তাপচা গান ভালো লাগে না। তারা চায় আরও নতুন অণ্বেষণ আরও নতুন শব্দ। যে দিতে পারবে সেই পাবে পিতৃত্বের অধিকার।
পাবলোর কাছেই প্রথম শুনি হাইওয়ে সাউণ্ডের কথা। ওঁর সঙ্গে এক বাঙালি ছোকরাকে দেখেছিলাম, তার নাম সমীর। ল্যায়ার ফার্মি ল্যায়ার বোসনের জন্য নতুন গান বাঁধে। এবারে সে হাইওয়ে সাউণ্ড খুঁজে পেয়েছে। সে সারাদিন দেখে, তীব্র গতিতে নানা গাড়ি ছুটে যাচ্ছে হাইওয়ে দিয়ে। সেই গাড়ির শব্দের স্বর সে তার গলায় তুলে নিয়েছে। আর এবার তবে মারকেল্লা! পাবলো বলেছিলেন, মন দিয়ে শোনো, এর কাছাকাছি আর কোনো পুরুষ পাখি ঘেঁষতে পারবে না। ল্যায়ার বোসন মন দিয়ে শোনে, কেননা তার এমন শব্দ চাই, যা দিয়ে সে বুঝতে পারে যে, ল্যায়ার ফার্মি নিরাপত্তাকে কতটা চিনেছে। ল্যায়ার ফার্মির অহং মানুষের মতো অহঙ্কার নয়।
একী! ফার্মির গলায় এ কোন্ শব্দ? ল্যায়ার বোসনও শুনেছিল, কিন্তু ততটা গুরুত্ব দেয়নি। এতো হাইওয়েতে স্পিড লিমিট কম করা, আগের গাড়িটায় যাতে ধাক্কা না লাগে, তাই পেছনের হাই স্পিড লিমিট গাড়িটায় ব্রেক কষার শব্দ। আর ব্রেক কষার শব্দ তো নিরাপত্তার নতুন আইডেনটিটি! সেই স্বরটাই তুলে নিয়েছে ফার্মি।
নিরাপত্তাকে এভাবে, এত গভীরভাবে চিনতে পেরেছে বলে বোসন আর ফার্মি এবার নাচতে নাচতে সঙ্গমে মিলিত হয়।
প্রতিদ্বন্দ্বী
বনগাঁর জয়ন্ত আর উরুগুয়ের ফেদেরিকো অনলাইনে তাস খেলছে। বনগাঁর আকাশে যখন চাঁদ, ফেদেরিকোর নাগালে তখন সূর্য। খেলতে খেলতে পিঠ কুড়োচ্ছে। একই স্পেসে আলাদা সময়।
জয়ন্ত আয়নায় মুখ দেখে নিচ্ছে। ওর চোখের কোণে কালি। রাত জাগার চিহ্ন। ফেদেরিকো ফ্রেশ। দিন এখনও বাকি।
এই রাউন্ডে জয়ন্ত জিতেছে। পরের রাউন্ডের চয়েস ওর হাতে। মাঝে একদিন ফাঁকা, ভেবে নিচ্ছে...
--তোরা কী খেলা খেলছিস্, এই খেলার উদ্দেশ্য কী, -- প্রশ্ন করে অলোক।
: ব্রিজ, সেতু বন্ধনের খেলা, বলতে পারিস্ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা
--ফেদেরিকো কি তোর প্রতিদ্বন্দ্বী?
: মহড়া, ফ্রেন্ডলি খেলায় মক্শ করছি টুর্নামেন্টের আগে
--তাহলে তো আটটা টেবিলে চারজন মিলে লাগাতার খেলতিস্ নিয়ম মতো
: উত্তর জাপান আর দক্ষিণ ফকল্যান্ডকে নিয়ে!
--হ্যাঁ
: না, আমরা দুজনে খেলে বরং বুঝতে পারছি, খেলার উদ্দেশ্য এতো সোজা নয়...
--কেন?
: আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আমারই আগের অবস্থান ও কীর্তি... আমারই বিগত কাল...
--তাহলে ফেদেরিকো নিমিত্ত মাত্র!
: বলতে পারিস, প্রতিদ্বন্দ্বী শেষমেশ সে নিজে, তার অতীতের সে...
প্রস্রবণ
চাইবাসায় ফিরে যাব। দু’দিন হয়ে গেল। শক্তি আর আমার ভালো লাগছে না। সোনুয়া থেকে রওয়ানা হবার সময় ফরেস্টার কুতুদাকে পেয়ে গেলাম। তিনি জঙ্গলের ভেতরের পথঘাট ভালো ভাবে চেনেন। লালমাটির রাস্তা। তবে পাকারাস্তা দিয়ে ফেরার চেয়ে অনেক কম সময় লাগে। জঙ্গল আর জঙ্গলের জীবনকে আরও কাছ থেকে জানা যায়। আমাদের জিপে তিনি উঠে গেলেন। তাঁর সাইকেলটিও গাড়িতে তুলে নেওয়া হলো। ড্রাইভার ছাড়া খালাসীও রয়েছে।
আমাদের রুটে যেসব গ্রাম পড়বে, তার নামগুলো কুতুদা পরপর লিখে দিলেন। শক্তি জেনে নিল কোথায় ভালো মহুয়া বা রসম্ পাওয়া যায়। গাড়ি রওয়ানা দিল। আমার স্বভাবমতো আমি কিছু লজেন্স সঙ্গে নিয়েছি। ওয়াটার বটলে জল আছে। পথে একুশটা গ্রাম। গ্রামগুলোতে মানুষ ঘনিষ্ঠ হয়ে পাশাপাশি ঘর বানিয়ে থাকে। কেননা, জল যেখানে পাওয়া যায়, সেখানেই মানুষ ভিড় করে। ফরেস্টার বললেন, এই অঞ্চলে প্রচুর প্রস্রবণ রয়েছে। বনবিভাগ সেগুলো দেখাশোনা করে। বেশিরভাগ প্রস্রবণ অর্জুন গাছের শিকড়ের জায়গা থেকে বেরিয়েছে। সকালের দিকেই প্রচুর জল পাওয়া যায়। তারপর বেলা যত বাড়ে, জল কমে যায়। অনেকটা কর্পোরেশনের টাইম কলের মতো।
পাঁচ ছ’টা গ্রাম পেরোনোর পর কুতুদা নেমে গেলেন। ড্রাইভার এবং আমাকে পরিষ্কার করে রুটচার্ট বুঝিয়ে দিলেন। ড্রাইভার অবশ্য বলল, “পুরানা সাহেবকো লেকর হম ইস রাস্তা সে লৌটে”। শক্তি আমার দিকে চেয়ে বলল, “আমাদের গায়ে প্রচুর লালধুলো জমেছে। তোয়ালেটা দিয়ে ভালো করে ঝেড়ে দে”। আমাদের দুজনের চোখেই চশমা, এই একটা সুবিধে।
এই রুটের শেষ গ্রামটা আমার আর শক্তির চেনা। সেখানকার অনেক লোকজন আমাদের চেনে। কাছাকাছি ওরা সরকারী স্কিমে মাটি কাটার কাজ করে। শক্তি ইতিমধ্যে তার মহুয়া পেয়ে গেছে। গ্রামগুলো দেখতে দেখতে যেতে আমাদের ভালো লাগছে। প্রত্যেক গ্রামে একটা বা দুটো প্রস্রবণ। প্রস্রবণের জায়গাটা ছায়ায় ঘেরা। জলও তাই ঠান্ডা থাকে।
শেষ গ্রামটার নাম তোন্তো। তার খুব কাছাকাছি পাকারাস্তা। পথে আমরা বেশ খানিকটা মাছ কিনলাম। প্রথমে আমরা গেলাম চাইবাসার মধুটোলার বাড়িতে। ওরা কিছুটা মাছ আমাদের ভেজে দিলেন। কথা বলার সময় শক্তি খুব দূরত্ব রাখছে। কেননা, ইতিমধ্যে খানিকটা মহুয়া তার পেটে গেছে। শক্তি এখন নিজেই এক অন্তঃপ্রস্রবণ। ওর কথাগুলোও এখন কবিতার ভাষায়। জল দিয়ে ভালো করে চোখমুখ ধুয়ে নিল।
নিমডি যাওয়ার পথে আমরা একটা বড় পাউরুটি কিনলাম। আমি শক্তিকে বললাম, “সময়টা দেখতে দেখতে কেটে গেল। আমরা নিমডির বাড়িতেও ফিরে এলাম”। শক্তি বলল, “সেদিন সেই যে লিখলাম না -- ‘দিন চলে যায় কালের পাতায়’ -- কিন্তু আজ জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আসার সময় মনে হলো -- ‘দিন চলে যায় শালের পাতায়’...
বহুতল
অন্নপ্রাশনের সময় ‘স’ উঠল। ‘স’ থেকে ছোটকাকা বললেন সমীর হোক। অক্ষরে জন্ম আমার শব্দ হলো সেদিন। রাশিনাম। মা বলেন, “রাশিনাম গোপন রাখতে হয়”। ছোটকাকা মানতে রাজি নন। “রহস্যটা না বলেই হলো”। বড়দি বললেন, “কই? আমার তো অন্নপ্রাশন হয়নি! মেয়েদের কেন হতে নেই? মেয়েদের কি অক্ষর ওঠে না?” ছোটকাকা বললেন, “জেনে রাখ, বাংলা ভাষার সব অক্ষর পুরুষবাচক। ইনি-প্রত্যয় যোগ করলে স্ত্রীরূপ পাবি”। বামুন পরিবারের পুরুতমশাই বললেন, “শাস্ত্রের নিদান”। তিনি জ্যেঠিমাকে বললেন, “আপনি তো সব জানেন। অনুষ্ঠানে নিষেধ নেই। নিমন্ত্রণ খাওয়া দাওয়া আশীবার্দ নেওয়া সবই যেমন কে তেমন হবে। শুধু অক্ষর উঠবে না”। বড়দির দিকে মুখ করে বললেন... “তবে প্রত্যয়ে তুমিও শব্দ হবে... মায়ের জাত। এসব অনুষ্ঠান তো ভাষা শিক্ষার!”
এসব কাহিনী আমার সম্পর্কে হলেও আমার রচনা নয়, মায়ের... মায়ের মুখে বারবার শুনে মায়ে-পোয়ে। ছোটবেলায় যখন মায়ের কোল পুরোপুরি ছাড়িনি, হাঁটতে শিখেছি, আর একটু হেঁটেই বলতাম ‘কোলে করো’, সেই বয়সে যখন যার বাড়িতে গিয়ে মায়ের মতো আদর ভালোবাসা পেয়েছি, তখন তাকেই ডেকেছি ‘মা’ বলে। আর আসার সময়ে বলে এসেছি, “দুটো... তিনটে... হলো”। বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, শব্দের এলাকা সম্প্রসারিত হচ্ছে বোধে অবোধে... সেই প্রথম ভাবনায় অগোচরে রহস্যের জন্ম ঘটেছে। মা’র কোল থেকে নেমেছি।
পরে দেখি পরিযায়ী পাখি... বদলির চাকরি... পরকীয়া প্রেম... পুণার বৌদি... ধানবাদের বৃষ্টি... সবই বাড়িঘর, ভিটেমাটির বাড় বাড়ন্তের সেই দুটো... তিনটে, এভাবে কতো যে বেড়েছে... রাশিচক্র থেকে ভ-চক্রে ঢুকেছি, ভূ... ভূত... ভদন্তে... ভান্তে রহস্যে ঢুকে পড়া।
একদিন চাইবাসার নিমডি পাড়ার প্রতিবেশী মেয়ে মনোরমা এলো। একসময়ে আমার বাড়ন্ত প্রেমের বাড়ন্ত বাড়ি... আশ্রয়... এবার দেখি সিঁথিতে সিঁদুর, বেশ গিন্নিবান্নি কথাবার্তা। ঢোকার মুখে ছেলেমেয়েদের জুতো দেখে বলল, “দ্যাখো তোমার ছেলেমেয়ের এখন বাড়ন্ত বয়স, প্রতিদিন জুতো কিনতে হয়। তা কাপড়ের জুতো কিনবে, যেমন কেডস্, বড়টার ছোট হয়ে গেলে ছোটটাকে পরাবে”।
যে ছিল আশ্রয়... সে এবারে সাশ্রয় শেখাতে এসেছে...। তারপর শিলিগুড়ির শ্বশুরবাড়ির গল্প বলল... বরকে নিয়ে আলাদা হয়েছে... খানিকটা জমি কিনেছে... বাড়ির খিড়কি দোরের দিকে বাগান করেছে...
শেফালির শুনে ভালো লাগল না, মা মুচকি হাসলেন, কেননা মা আমাকে প্রথম প্রথম মনোরমার বাড়ি নিয়ে গেছিলেন। তারপর শেফালিদের বাড়িতে। এখনও মনোরমা প্রায় আসে... কোথায় শিলিগুড়ি... কোথায় বারাসাত... আর কোথায় চাইবাসা...! সেবার যাবার সময়ে যখন বলল, ‘চলি’, দেখলাম তার বয়স্ক চোখেমুখে এখনো প্রশ্রয় মুছে যায়নি...
মাঝে মাঝে সে আসে ফেলে যাওয়া বাড়িটার রঙ ফেরাতে...
বাদামতলার ভুবন
...কেউ কেউ বলেন, এ জি বেঙ্গলের ভুবন। আবার কেউ কেউ বলেন, নন্দীগ্রামের ভুবন। শেষপর্যন্ত বাদামতলায় তিনি যে জমিটা কিনেছিলেন, তার একদিক দিয়ে হাই-টেনশন বিদ্যুতের তার চলে গিয়েছিল বলে, ওই জমিটা কেউ কিনছিল না। শেষে ভুবনই কিনলেন।
ভুবন গল্প বলেন। গান শোনেন। কবিতা আওড়ান। সারক্ষণ মুখে মুখে কবিতা তৈরি করেন। তাঁর দুই মেয়ে হবার পর দেখা গেল, কিছুতেই আর ছেলেপুলে হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এক বড় গাইনিকের শরণাপন্ন হলেন। অনেক পরীক্ষার পর ধরা পড়ল, ভুবনের স্পার্মে ক্যানসার হয়েছে। ডানদিক ও বাঁদিকের দুটো আলাদা আলাদা করে পরীক্ষা করে দেখা গেল, বাঁদিকের বিচিতেই তার এই রোগ হয়েছে।
ভুবন এখানে এসে থামেন। কেননা, গাইনিক তাঁকে বলেছিলেন, বিচির একটা ভালো বাংলা প্রতিশব্দ আছে -- ‘বৃষণ’। সেই থেকে ভুবনও তাঁর গল্পে বৃষণ শব্দটি ব্যবহার করতেন।
ভুবনের ফার্স্ট স্টেজ আর বড় চাকরি, গাইনিকরা তাঁকে পাঠিয়ে দিলেন টাটা ক্যানসার ইনস্টিটিউটে, পরবর্তী চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য। ট্রেনে সারা রাস্তা গান গাইতে গাইতে গেলেন ভুবন। যেন কিছুই হয়নি। তারপর হাসপাতালে পৌঁছে দেখলেন, তাঁর ডাক্তার একজন পুরুষ, কিন্তু ডাক্তারের সঙ্গে রয়েছেন প্রচুর সুন্দরী নার্স। তাঁরা অধিকাংশই মহারাষ্ট্র ও কেরলের মেয়ে। তবে একজন বাঙালিও ছিলেন। তিনি ভুবনের গানগুলো অনুবাদ করে অন্যদের বলে দিতেন।
ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, আপনাকে একটা বৃষণের মোহ ছাড়তে হবে ভুবনবাবু। ভুবন বললেন, আপনারা যা ভালো বুঝবেন, তাই করবেন। অপারেশন থিয়েটারেও গান গাইতে গাইতেই অ্যানেস্থেশিয়ার কারণে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি।
ঘুম যখন ভাঙল, যিনি প্রধান নার্স, তিনি বললেন, আপনার অপারেশন সাকসেসফুল, চিন্তা করবেন না! বিভিন্ন বিভাগ থেকে অন্যান্য ডাক্তাররা এসেও ভুবনকে দেখে নিজের নিজের মন্তব্য মেডিক্যাল চার্টে লিখে রাখলেন। যিনি গাছ গাছড়ার স্টেরয়েড নিয়ে কাজ করছেন, তিনি এসে বললেন, আপনি ফিরে গিয়ে নিয়মিত কাঁচা হলুদ আর আখের গুড় খাবেন। ঠিক কতটা খেতে হবে, তিনি তাঁর প্রেসক্রিপসনে লিখে দিলেন। আর যিনি প্রধান গাইনিক, তিনিও তাঁর ওষুধ লিখে দিলেন।
দশদিন পর ভুবন ছাড়া পেলেন হাসপাতাল থেকে। ইতিমধ্যে ভাবতে ভাবতে ভাবতে ভুবন মনে মনে তাঁর মনের মতো একটি কবিতাও সৃষ্টি করে ফেলেছেন। কবিতার শেষ দুটি লাইন -- “একটি আমার নিঃস্ব / আরেকটিতে সারা বিশ্ব”।
ভুবনের চিকিৎসার যে ফলাফল, অর্থাৎ দুটি বৃষণের মধ্যে একটির বাদ যাওয়া এবং একটির থেকে যাওয়া, যেন মহাজগৎকথার সঙ্গে ভুবনের অস্তিত্বের মিলেমিশে যাওয়া!
সম্রাট আকবর ও এ্যালেন গীনসবার্গ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে কোথায় যে নিয়ে চলেছে ঘোড়সওয়ার... ঘোড়া ছুটছে অথচ ছোটার শব্দ নেই! মনে হচ্ছে, যেন চিনতে পারছি জায়গাটা। ঘোড়সওয়ার আমাকে এনেছে সিকান্দ্রায়। এই তো সম্রাট আকবরের সমাধিক্ষেত্র! হঠাৎ জাঁহাপনার গম্ভীর স্বর – তোর সেই বেআদব সাহেব বন্ধুটার খাতায় ‘দীন-ই-ইলাহি’র ড্রইং তুই চাইবাসায় দেখেছিলিস্... মনে পড়ছে? তখন জানতে চাস্নি কেন ড্রইংটা কোত্থেকে পেল?
--“হুজুর, সে বলেছিল, ওটা এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে সে পেয়েছিল”।
--“তুই তাকে বলিস্নি এটা ‘দীন-ই-ইলাহি’ ধর্মের লোগো, যা ধমর্গ্রন্থের প্রচ্ছদে আছে? আর দেখ্ আমার এই আবাসের প্রত্যেক পাথরে ঐ একই ড্রইং রয়েছে”।
--“হুজুর, ও তা হলে গোপন করেছিল। আমার মনে হয়, ও আপনার সিকান্দ্রায় এসেছিল। অনেক বড় কবি, তাই আমি ওকে সন্দেহ করিনি। তাছাড়া হুজুর ও তো কৃত্তিবাসের দলে মিশতো, যারা আমার সেই সময়ের বন্ধু”।
--“ড্রইংটা একটু ব্যাখ্যা কর, দেখি তুই কতটা মনে রেখেছিস্!”
--“একটা বড়ো বৃত্তের মধ্যে একটা ছোট বৃত্ত... তিনটে মাছের শরীর আলাদা আলাদা রয়েছে বড় বৃত্তে... আর তাদের একটাই মাথা যা রয়েছে বড় বৃত্তের মাঝখানের ছোট বৃত্তে। দুটো বৃত্তের কেন্দ্র একটাই। কেন্দ্রই মাছের চোখ। ‘দীন-ই-ইলাহি’ ধর্মের সারাৎসার। আমি কবিকে পাটনা যেতে বলেছিলাম। সেখানেই আমার মা-বাবা-ছোটভাই সেই সময়ে থাকত। আর অশোক রাজপথের খুদাবক্স লাইব্রেরিতে রাখা আছে ‘দীন-ই-ইলাহি’র পাণ্ডুলিপি। সে দেখে নিতে পারবে। তাতে তার সন্দেহ দূর হবে। হুজুর, পরে কবি পাটনায় গিয়েছিল এবং আমার ছোটভাই তাকে খুদাবক্স লাইব্রেরিতে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে কবি স্বচক্ষে সেই ড্রইং দেখে এবং ড্রইংয়ের ছবিও তোলে। তারপর আপনিও নিশ্চয়ই দেখেছেন ‘ইণ্ডিয়ান জার্নাল’ গ্রন্থে কবি ঐ লোগো ব্যবহার করেছে। কিন্তু গ্রন্থসূত্র কোথাও দেয়নি। কেননা, তা হলে এটা ফাঁস হয়ে যাবে যে, ভারতের জ্ঞানভাণ্ডার কাদের দখলে এবং ভিনদেশিরা আসে সেই জ্ঞানভাণ্ডারের হদিশ খুঁজে পেতে। অথচ বাংলা কবিতার ইতিহাস বলে, বাঙালি কবিরা নাকি বিট কবিদের দ্বারা প্রভাবিত!”
--“হ্যাঁ, কিন্তু কেন বলে, তা তুই খোঁজ নিয়েছিস?”
--“হুজুর, সে তো হীনমন্য দালালগুলো স্বদেশের পক্ষ না নিয়ে আজও বিদেশিদের তোল্লা দিয়ে যাচ্ছে... হুজুর, এটাকেই তো আমরা বলছি ঔপনিবেশিকতাবাদী আধুনিকতা...”
--“আচ্ছা দেখছি আমি, কি বিহিত করা যায়! ওহে ঘোড়সওয়ার এই ছোকরাকে কলকাতায় যেখান থেকে নিয়ে এসেছিস, সেখানে ছেড়ে দিয়ে আয়!”
হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। দেখি, আমি কলকাতাতেই আছি! সকাল হচ্ছে তখন...”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন