রবিবার

মলয় রায়চৌধুরী সম্পর্কে রবীন্দ্র গুহ

 


বিশিষ্ট সাহিত্যিক অজিত রায় লিখেছেন, 'ভৌগোলিক কাটছাঁট, দেশভাগ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ঔপনিবেশিক স্পৃহার খপ্পরে পড়ে বাঙালি নিজের সর্বস্ব আজ খুইয়ে ফেলেছে। এমনকী, বিশুদ্ধ পশ্চিমবঙ্গীয় সংস্কৃতিও আজ মিথ মাত্র। ভারতবর্ষীয় বাঙালির কোন সংস্কৃতিই আজ অবশিষ্ট নেই; সময়ের চাপে সব উচ্ছন্নে গেছে। জন্ম নিয়েছে এক জগাখিচুড়ি কালচার। ছত্রখান সংস্কৃতি। বাঙালির পোশাক পাল্টেছে বহুদিন হল, বহু খোঁপা আর সিঁথি এখন বিদেশিনী, এমনসব হেয়ারডু যা বাঙালি কস্মিনকালে ভাবেনি। পুরুষেরা তামুক দোক্তা বিড়ি গড়গড়া ছেড়ে সিগারেট বিয়ার ব্রাউনসুগারে মজেছে। যে-ফুটবলে বাঙালির নিজস্ব দাপ ছিল তা এখন আকখা ওয়ার্ল্ড খেলছে, বাঙালি লোকাল ট্রেনে আর রকে বসে খেলছে তিন-পাত্তি, টোয়েন্টি নাইন। বাঙালি টুসু ভাদু রবীন্দ্রসঙ্গীত ভুলে পাঞ্জাবি পপে মাজা দোলাচ্ছে। পড়াশোনা চাকরি ব্যবসা থেকে ক্ৰমে উৎখাত হতে হতে বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি বলে যা রয়ে গেছে, তা হলো, রকে বসে বুকনি ঝাড়া, পরস্পর পেছনে লাগা, লেংগি মারা, মিথ্যে বলা, হীনমন্যতা, চা চপ ঝালমুড়ি, লোকনিন্দা, ভাইয়ে-ভাইয়ে হিংসে, কথায় কথায় মাথাগরম আর খিস্তিবাজি। পাশাপাশি শনি-শেতলার পুজো, তৃণমূল-সিপিএম, আর দুগ্গাপুজোয় চাঁদা আর হুল্লোড়বাজি।' ...
"'অজিত রায় ভাষাবিদ ফার্দিনান্দ দ্য স্যসুরের মতো নিরপেক্ষ, স্পষ্টবাদী, পোস্ট-মডার্নিস্ট। তো, এইখান থেকে আমাদের পাঠ শুরু হয় মলয় রায়চৌধুরীর সাহিত্য। ফাদার পিয়ের ফালোঁ মলয়কে একটি পত্রে লিখেছিলেন, 'আপনি হতাশা আর বিতৃষ্ণার মুখোশ পরেই লেখেন; তবু আমার বিশ্বাস, আপনার এই মুখোশ-পরা কৃত্রিমতাই নয়, আমরা সবাই কোন একটা মুখোশ পরি, আদর্শবাদিতার মুখোশই হোক কিংবা আদর্শ প্রত্যাখ্যানের মুখোশ। তাতে অসত্য হয় না, মুখোশ তো চাইই। .... শুনেছি, আপনার নামে অনেক অভিযোগ অনেকে তোলে, গালাগালিও দেয়।'
"এই মুখোশ কথাটা নিয়ে তখন বিস্তর ঘোটালা হয়েছিল। বাবু লেখকরা চটে গেছিলেন। মলয়ের 'দয়া করে মুখোশ খুলে ফেলুন' কথাটা নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেছিল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাজ্জাদ শরিফকে বলেছিল, 'আমরাই তো বলেছিলাম মুখোশ খুলে ফেলুন, হাংরিরা বলেছিল মুখোশ পরে নিন।' সুনীল ডাহা মিথ্যে বলেছিল। হাংরিরাই বাবুদের মুখোশ খুলতে বলে, বাড়িতে বাড়িতে অফিসে চিঠি বিলি করে। ফলে, সুনীল-সহ তার প্রিয় দলদাসদের অলখ-জ্বালা ক্ষোভ। বাবু শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় বলল : 'এরা বাঙালি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান, উচ্চাভিলাষী, আবেগপ্রবণ, অসহিষ্ণু, খ্যাতিলোভী এবং শতবিদ্রোহ সত্ত্বেও পুলিশের রক্তচক্ষু দর্শনে সন্ত্রস্ত।' বাবু শরৎ আরো বলেছিল, 'এই কারণে মলয় লেখালেখি ছেড়ে দিয়ে পালাল।' ..... পালাল যদি, কে বেঁচে আছে তবে?"
---------------------------------------------------
'শহর' ৪৩-এ আসছে মলয় রায়চৌধুরীকে নিয়ে রবীন্দ্র গুহর জোরঝড় লেখা : 'মুখোশধারী বদনাম মলয় কীভাবে আজও বেঁচে আছেন'। পুজোর পরই প্রকাশ পাচ্ছে। দাম ২০০/-

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন