শনিবার

দিবস দগ্ধ যুবা মলয় রায়চৌধুরী : রবীন্দ্র গুহ

 

  • দিবস দগ্ধ যুবা মলয় রায়চৌধুরী : রবীন্দ্র গুহ

    বুদ্ধদেব বসুর জামাই রাজা মীনাক্ষীর স্বামী জ্যোতির্ময় দত্ত । দেখেছি তোমাকে খুবই খাতির করত । লাল শালু মোড়া বইতে হাত রেখে সবটাই কনফিউজ করে দিল । পরে আবার হাইকোর্টের ব্যারিস্টারও খুঁজে দিল । কী চরিত্র ! পাশাপাশি তরুণ সান্যাল, অনিল করঞ্জাই, করুণানিধান মুখোপাধ্যায়, আলো মিত্র, ত্রিদিব মিত্রকে দ্যাখো । সুনীল গাঙ্গুলির অ্যাটিচুড পুরোপুরি আলাদা । আমেরিকা থেকে তোমাকে লেখা চিঠিটা রুখাতিখা ছিল । কিন্তু সাক্ষ্য দিতে এলো ভিন্ন রূপে । চিঠিটা ছিল এই রকম : “মলয়, তুমি কলকাতায় কী সব কাণ্ড করছ ? ...কলকাতা শহরটা আমার । আমি ওখানে গিয়ে রাজত্ব করব তোমাকে ভয় করতুম যদি তোমার মধ্যে একটুও জেল্লা দেখতে পেতুম ।” সুনীল আরও লিখেছিল, “চালিয়ে যাও ওসব আন্দোলন কিংবা জেনারেশনের ভণ্ডামি ।” মলয়, তুমি কি চিঠিটা পড়ে গোসা করেছিলে ? বড় কথা নয় । ( তোমার চিঠিটা ‘সুনীলকে লেখা চিঠি’ বইতে নেই কেন ? ) আমার প্রশ্ন ? কী ধরণের জেল্লা দেখতে চেয়েছিল সুনীল ? ‘সেই সময়ের’ জেল্লা ? ‘পুরবপচ্ছিম’-এর জেল্লা ? ‘কাকাবাবুর’ জেল্লা ? 
     
    ধ্যুস, মুখের জেল্লা আর সাহিত্যের জুলুস/ঔজ্বল্য এক জিনিস কি ? সুনীল কবিতাকে কমার্শিয়াল করতে চায়নি, কিন্তু বড়োবাজার পাওয়ার জন্য ঘন-ঘন অদলবদল করেছে ।ফলে জেল্লা দেখা দিয়েছে তার কবিতায় । এরকম একটি অধৈর্য শব্দ ব্যবহার কি সুনীলের ইচ্ছাকৃত ? দুজনেই তখন সম্ভাবনাপূর্ণ কবি । শুধু মলয় রায়চৌধুরীর ওপর অসন্তোষের কারণ কি ? উৎপলকুমার বসুও তো ছিল । সন্দীপন অধার্মিক ধড়িবাজ । সুনীল কাম্য বস্তুটি লাভের জন্য অত্যাসক্ত, যারপরনাই বদ্ধপরিকর । আমার ধারণা কি স্ববিরোধী মলয় ?
     
    সন্দীপন অধার্মিক একারণে যে সে শত প্রতিশত দোহাতি । তোমাকে এই সময়ে সন্দীপন লিখেছিল মনে আছে : “মলয় কিছু একটা করো ; কৃত্তিবাস আমার দরোজা বন্ধ করে দিয়েছে ।” সুনীল কেন ক্ষুব্ধ হয়েছিল ? অধার্মিকতার জন্য ?
     
    অনেক ভেবেচিন্তে আদালতে তোমার পক্ষে বয়ান দিয়েছে সুনীল । কবিতাটি যে কোনোমতেই অশ্লীল নয় -- সে কথা জোরালো কন্ঠে বলেছে । পরে সমীর রায়চৌধুরীকে লেখা চিঠিতে এও বলেছে, “এর কারণ, আমার কোনো মহত্ব নয় ।” একই চিঠিতে অশ্লীলতা, “অশ্লীলতা বলে আমি কিছু মানি না ।” দোসরা অক্টোবর সুভাষ ঘোষ আর শৈলেশ্বর ঘোষ মুচলেকা দিয়েছিল ‘হাংরি আন্দোলনের দর্শনে ওরা বিশ্বাস করে না । সুবিমল খুব হতাশ হয়েছিল । এই বাঁকবদলের পিছনে কার ইশারা ছিল ? এই প্রজন্ম এসব কথা জানতে চায় । ওরা কি বাস্তবিক সমকামী ছিল? আদালতে কতোরকম চমকপ্রদ ঘটনা । কতি বিচিত্র মানুষ । বাবু কালীকিঙ্কর, উকিল সত্যেন বন্দ্যোপাধ্যায় । আর সেই গির্জার পাদ্রিটি ? করুণার নিগ্রো প্রেমিকা ? হাংরি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সমকামীতার তথা যৌনতার বদনাম কে বা কারা রটিয়েছিল ? কেন ? 
     
    কাঠমাণ্ডুতে ঠমেল পাড়ায় প্রতিদিন একটাকা ভাড়ায় মাটির ঘর --পাশে শেয়ে থাকা মার্কিনী, জাপানি তরুণ-তরুণী -- গে লেসবিয়ান, হেট্রো । আর হ্যাঁ, খাগড়ায় মশারির চালে ফণা তোলা সেই গোখরো সাপটা ? মশারির ভেতরে তুমি আর সুবিমল বসাক । আরে বাপস । শরদ দেওড়ার গদির কথা বাদ চলে গেল যে । কি একটা হিন্দি পত্রিকার সম্পাদক ছিল না ? জ্ঞানোদয় ? শরদের পত্রিকার অফিস ঘরটাকে তুমি বলতে গদি । সন্ধ্যার পর সেখানে নানারকম পানাহার ও কবিতার আসর বসত । একবার কৃত্তিবাস-খ্যাত কবি দীপক মজুমদারপাঁচমারির ঘুঙুর পায়ে সেই আসরে নেচেছিল । বাংলা সাহিত্যে এতো গাদাগাদি ভিড় যে দীপকের দাঁড়াবার জায়গাটুকুও নেই । হায় বঙ্গের কবি, তুমি ক্যালেণ্ডার হয়ে থাকো । তুমি তো জানোই, এইরকম ক্যালেন্ডার হয়ে রইল আনন্দ বাগচি, বাবু বরেন গাঙ্গুলি, দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায়, ফালগুনী রায়, উদয়ন ঘোষ ।

     

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন