অঁতনা আতো : মলয় রায়চৌধুরী
আধুনিক নাটক তত্ত্বের বিবর্তনে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত অঁতনা আতো, ফ্রান্সের মার্সেইতে ১৮৯৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জন্মেছিলেন । তাঁকে স্যাকরেড হার্ট কলেজে ভর্তি করা হয় । এই প্রতিষ্ঠানে তাঁর পরিচয় হয় আর্তুর র্যাঁবো, স্তেফান মালারমে আর এডগার অ্যালান পো’র বইপত্রের সঙ্গে । সহপাঠীদের সহযোগিতায় একটি ব্যক্তিগত সাহিত্য পত্রিকা আরম্ভ করেন। ১৯০৭ থেকে ১৯১৪ পর্যন্ত কলেজ শিক্ষার শেষে তিনি লক্ষণীয়ভাবে সামাজিক জীবন থেকে সরে যেতে শুরু করেন এবং নিজের বেশিরভাগ রচনা ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেন আর সংগ্রহের বইপত্র বিলি করে দেন । ছেলের আচরণে এরকম পরিবর্তন দেখে অঁতনা আতোর বাবা-মা তাঁকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান আর জানতে পারেন তাঁদের ছেলে মাঝেমাঝে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে । তখনকার চিকিৎসা পদ্ধতি তেমন উন্নত ছিল না । মস্তিষ্কের চিকিৎসার জন্য আফিমের নানারকম রসায়ন ব্যবহার করা হতো ।
আঁতোর সম্পূর্ণ নাম আঁতোয়া মারি য়োসেফ পল আতো । সৃজনশীল জীবনে তিনি একজন ফরাসি লেখক, কবি, নাট্যকার, ভিজ্যুয়াল শিল্পী, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা এবং থিয়েটার পরিচালক হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। অনেকে মনে করেন যে তাঁর পরিবারে নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ের কারণে অঁতনা আতোর মস্তিষ্কের রোগ হয়ে থাকবে। তাঁর বাবা-মা ছিলেন প্রথম খুড়তুতো ভাই-বোন । তাঁর ঠাকুমা ছিলেন স্মির্নার অধিবাসী, এখনকার ইজমির, তুর্কির অন্তর্গত । তাঁর পিতামহ, ক্যাথরিন চিলি, মার্সেইতে থাকতেন, যেখানে তিনি একজন ফরাসি নাগরিক মারিয়াস আতোকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর দিদিমা, মারিয়েট চিলি, স্মির্নাতে থাকতেন, যেখানে তিনি স্থানীয় জাহাজি লুই নালপাসকে বিয়ে করেন। ফলে আতো সারা জীবন তাঁর গ্রীক বংশধারার দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিলেন। শৈশবে ধরা পড়ে তিনি বংশানুক্রমিক সিফিলিসে আক্রান্ত ।
প্রায় পাঁচ বছর বিভিন্ন মানসিক চিকিৎসালয়ে আঁতোর চিকিৎসা হয়।১৯১৬ সালে আঁতোকে ফরাসি সেনাবাহিনীতে ভর্তি করা হলে তাঁর চিকিৎসায় কিছুকালের বিরতি ঘটে। "একটি অনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যের কারণে" তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল । আতো পরে দাবি করেছিলেন যে তিনি রাতের বেলায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হেঁটেচলে বেড়াতেন, তাই তাঁকে ছাঁটাই করা হয়েছিল । আতোর মা জানিয়েছিলেন যে অঁতনা আতো একটুতেই নার্ভাস হয়ে পড়তেন বলে সেনাবাহিনী তাঁকে বরখাস্ত করেছিল। আবার আঁতোকে ভর্তি করা হয় মানসিক চিকিৎসালয়ে । ১৯১৯ সালের মে মাসে, মানসিক চিকিৎসালয়ের পরিচালক আতোর জন্য লাউদানাম প্রেসক্রাইব করেন ।
অঁতনা আতো সারাজীবন লাউদানামের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন । ১৯২১ সালে আঁতো প্যারিসে ডাক্তার এদুয়ার তুলুজের মানসিক চিকিৎসালয়ে আবাসিক হিসাবে থাকা আরম্ভ করেন । তিনি কিছু দিনের জন্য সেরে উঠতেন কিন্তু আবার আক্রান্ত হতেন । লাউদানাম হল আফিমের একটি টিংচার যাতে ওজন অনুসারে প্রায় ১০% গুঁড়ো আফিম থাকে (১% মরফিনের সমতুল্য )। আফিম পোস্তোর নির্যাস ( পাপাভার সোমনিফেরাম ) অ্যালকোহলে ( ইথানল ) দ্রবীভূত করে লাউদানাম তৈরি করা হয়। লালচে-বাদামী রঙের এবং অত্যন্ত তেতো, লাউদানামে মরফিন এবং কোডিন সহ বেশ কয়েকটি আফিম অ্যালকালয়েড রয়েছে । উনিশ শতক পর্যন্ত লাউদানাম বিভিন্ন অবস্থার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হত , কিন্তু এর প্রধান ব্যবহার ছিল ব্যথার ওষুধ এবং কাশি দমনকারী হিসেবে । বিশ শতকের গোড়ার দিকে, লাউদানাম প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি হত এবং এটা অনেক পেটেন্ট ওষুধের একটা উপাদান ছিল । ১৯৮০ থেকে মার্কিন চাপে লাউদানাম মাদক হিসাবে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত । মানসিক চিকিৎসকদের সম্পর্কে আতো লিখেছিলেন, "একজন ডাক্তার এবং একই সঙ্গে একজন সৎ মানুষ হওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু একই সাথে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য উন্মাদনার ছাপ বহন না করে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়া অশ্লীলভাবে অসম্ভব।”
ফ্র্যাংক হিলটন তাঁর বই ‘বদলেয়ার ইন চেইন’-এ লিখেছেন, মাদকাসক্ত শিল্পী হিসেবে বোদলেয়ারের ব্যক্তিত্ব, লেখা, আঁকা, পরিবার, টাকাকড়ি সামলানো, সামাজিক এবং যৌন সম্পর্কের উপর আফিম আসক্তির খারাপ পরিণতির ছবি তুলে ধরে। হিলটনের মতে, বোদলেয়ারের গোপন অমীমাংসিত ইডিপাল কমপ্লেক্স ছিল না। লাউদানামে আসক্তির কারণে তাঁর বন্ধু-সম্পর্ক, রাজনৈতিক আর ধর্মীয় আদর্শবাদও ব্যর্থ হয়েছিল। মাদকের অপব্যবহার তাঁর প্রেমেও প্রভাব ফেলেছিল। গ্রেট ব্রিটেনে ১৮৬৮ সালের ফার্মেসি অ্যাক্টের আগে, নাপিত, কেক-বিস্কুটের দোকান, লোহা-ব্যবসায়ী, স্টেশনারি দোকান, তামাক ব্যবসায়ী, মদ ব্যবসায়ী' সবাই আফিম বিক্রি করত। আফিম আর লাউদানাম পাওয়া সহজ ছিল । অঁতনা আতোর ক্ষেত্রে আরেকটি মাত্রা যোগ হয়েছিল ; তা হলো তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীনতা । কিন্তু বোদলেয়ারের বিপরীত, যৌনতাকে এড়িয়ে চলতেন আতো। তিনি মানব শরীরের প্রতি আচ্ছন্ন ছিলেন; তিনি যৌনতার ধারণাকে ঘৃণা করতেন এবং নিজের যৌন প্রতিত্ব থেকে নিজেকে আলাদা করার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন ।
অঁতনা আতো : ম্যান অব ভিশান’ গ্রন্থে, লেখিকা বেটিনা এল. ন্যাপ আতোর মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে লিখেছেন: “আতো জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অক্ষম ছিলেন; তিনি অন্যদের সাথে সম্পর্ক গড়তে পারতেন না; এমনকি তিনি তাঁর নিজের পরিচয় সম্পর্কেও নিশ্চিত ছিলেন না।” ন্যাপ মন্তব্য করেছেন যে "আতো মূলত তাঁর অসুস্থতাকে ঘিরে একটা সম্পূর্ণ আধিভৌতিক পরিমন্ডল তৈরি করেছিলেন, অর্থাৎ নিজের রোগের মাধ্যমে রহস্যবাদীর রাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন। তাঁর মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তিনি নিজে এবং সবকিছুই তাঁর কাছ থেকে বাহ্যিকভাবে বিকিরিত হতো।" আতোর ‘দ্য আম্বিলিকাস অফ লিম্বোকে; উল্লেখ করে, ন্যাপ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আতো "মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে" লোকদের এমন একটা যাত্রায় নিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছেন, 'যেখানে যেতে তারা কখনই সম্মত হবে না।' যেহেতু নাট্যকলা সম্পর্কিত তাঁর ধারণাগুলো তাঁর অসুস্থতা থেকে উৎসারিত হতো, তাই তিনি থিয়েটারকে একটা নিরাময়কারী প্রণালী হিসাবে দেখেছিলেন; এমন একটা উপায় যার মাধ্যমে ব্যক্তিকে থিয়েটারে টেনে এনে তার ব্যবচ্ছেদ, শল্যচিকিৎসা এবং কেটে ফেলে তাকে খুলে ফেলা , এবং তারপরে তার নিরাময় করা।
অনুরূপ বক্তব্য সানচে ডি গ্রামন্টের ‘হরাইজন’ পত্রিকার প্রবন্ধে প্রকাশ করা হয়েছিল, যিনি আতো সম্পর্কে লিখেছেন, "যদি মনে করা হয় যে আতো একজন পাগল মানুষ, তবে আতো নিজের পাগলামিকে স্বাগত জানিয়েছেন । তাঁর কাছে যুক্তিবাদী জগত ছিল না; তিনি হ্যালুসিনেশনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন যা যুক্তিকে বিলুপ্ত করে এবং তার বিচ্ছিন্নতার মর্মার্থ গড়ে তোলে । আতো ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে সেই সীমার বাইরে রেখেছিলেন যেখানে বিচক্ষণতা এবং উন্মাদনার বিরোধিতা করা যেতে পারে এবং নিজেকে জাদু এবং অযৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি ব্যক্তিগত জগতের কাছে সমর্পণ করা যায়।”
আমরা জানি এলিজাবেথ ব্যারেট-ব্রাউনিং, লর্ড বায়রন, উইল কলিন্স, জর্জ ক্র্যাবে, চার্লস ডিকেন্স, জন কিটস, পার্সি বিশি শেলি এবং ওয়াল্টার স্কটের মতো ইউরোপীয় লেখকরা আর পেইনটাররা অনেকেই আফিম বা আফিম থেকে তৈরি মাদক খেতেন । অন্যান্য ওষুধগুলোও আইনত উপলব্ধ ছিল। রানি ভিক্টোরিয়াকে মাসিকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য মারিহুয়ায়ানার টিংচার দেওয়া হতো । এমনকি রানি ভিক্টোরিয়া জনপ্রিয় পণ্য ‘ভিন মারিয়ানির’ জন্য একটি প্রশংসাপত্র লিখে দিয়েছিলেন, যা ছিল অ্যালকোহল আর কোকেনের মিশ্রণ, আর তিনি ক্লোরোফর্মের 'আনন্দজনক পরিমাপের বাইরে' প্রভাবগুলি উপভোগ করতেন যখন তা তাঁকে প্রসবের সময় দেওয়া হতো । সেসময়ে আফিম আর লাউদানাম শিশু আর প্রাপ্তবয়স্ক সকলের জন্যই উদ্বেগজনক রোগে দেওয়া হতো, যেমন 'স্নায়বিক কাশি', হুপিং কাশি, অন্ত্রের প্রদাহ, দাঁতের ব্যথা, ড্রপসি আর অবিরাম হেঁচকি। লাউদানাম ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় যা জ্বর, অনিদ্রা, এলার্জি, পিত্তশূল, মূত্রাশয়ের প্রদাহ, কলেরা মর্বাস, ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, আর পাইলসের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা হতো।
পিকাসো ছিলেন প্যারিসে বসবাসকারী শিল্পীদের অন্যতম যিনি জাঁ ককতোর সঙ্গে আফিম নিতেন । প্যারিসের আরও বহু শিল্পী লাউদানাম নিতেন । এই শিল্পীদের অনেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন এবং পিকাসোও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাঁকে আর তাঁর বন্ধুদের প্রায়ই তাঁর ধোঁয়ায় ভরা স্টুডিওর মেঝেতে দেখা যেত। পিকাসো আফিমের ধোঁয়ার গন্ধ সম্পর্কে বলেছিলেন যে এটা 'পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান গন্ধ'। একবার একটা ড্রইঙ এঁকে অঁতনা আতো তার ওপর লিখেছিলেন, "মোটেই বাস্তব নয় কিন্তু সর্বদা সত্য এবং এভাবেই বিষণ্নতার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি অনুভব করতেন যে তিনি বাস্তব নন, তিনি অন্য কেউ, অথচ তবুও জানতেন যে তা একেবারে সত্য ।
স্বাভাবিক যে মাথার যন্ত্রণা থেকে ছাড়ান পাবার জন্য অঁতনা আতো অহরহ লাউদানাম খেতেন । যাইহোক, আতো যে শুধুমাত্র লাউদানাম খেতেন তাই নয়, তিনি অন্যদেরও তার ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন। যারা কোকেন এবং আফিমের মতো মাদকদ্রব্যকে নিষিদ্ধ করতে চাইছিল তাদের আতো কড়া ভাষায় আক্রমণ করতেন । ১৯২৫ সালে তিনি বলেছিলেন, "যেহেতু আমরা কখনই মানবতার হতাশার কারণগুলি সনাক্ত এবং নির্মূল করতে সক্ষম হব না, আমাদের কোনও অধিকার নেই একজন মানুষকে নিজের দুঃখ থেকে মুক্ত হবার উপায়কে বাধা দেওয়ার। যদিও আতো লাউদানাম ব্যবহারের সুপারিশ করতেন, মাদকের সাথে তাঁর সুস্থ সম্পর্ক ছিল না। একবার মেক্সিকোতে গিয়ে যখন হেরোইনের উইথড্রল সিম্পটম দেখা দেয়, তখন তাঁকে তাঁর ঘোড়ায় ওপরে ঠেলে বসিয়ে দিয়েছিল কয়েকজন লোক মিলে, কারণ আতো শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন । তিনি নিজেই সেই অবস্হার বর্ণনা করে লিখেছেন যে “যেন একট ফুলে ওঠা আঠার দৈত্য হয়ে গিয়েছিলাম।”
মানসিক চিকিৎসা সম্পর্কে আতো লিখেছেন, “"আমি, নিজে, ৯ বছর একটি উন্মাদ আশ্রমে কাটিয়েছি আর কখনও আত্মহত্যা করার কথা ভাবিনি, যদিও আমি জানি যে সকালের পরিদর্শনের সময় একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আমার প্রতিটি কথোপকথন আমাকে নিজেকে ফাঁসিতে লটকাতে প্ররোচিত করেছিল কারণ আমি সচেতন ছিলাম যে আমি তার গলা চিরে মারতে পারব না।” মানসিক চিকিৎসা সম্পর্কে বেশ বিরক্ত ছিলেন তিনি যা তাঁর এই উক্তি থেকে স্পষ্ট হয়, “এ কারণেই আমাদের কলঙ্কিত সমাজ কিছু উচ্চতর বুদ্ধিবৃত্তির তদন্তের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করার জন্য মনোরোগবিদ্যা আবিষ্কার করেছে কেননা ভবিষ্যদ্বাণীর অনুষদগুলি তাদের অসুবিধাজনক মনে হয়। না, ভ্যান গঘ উন্মাদ ছিলেন না, কিন্তু তাঁর চিত্রকর্মগুলো ছিল গ্রীক আগুন, পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ, যার দৃষ্টিকোণ বুর্জোয়াদের বর্ণালী সামঞ্জস্যকে গুরুতরভাবে বিপর্যস্ত করতে সক্ষম হয়েছে।”
দুই
ষোলো বছর বয়সে তাঁর প্রথম মানসিক ভারসাম্যহীনতার পর অঁতনা আতো জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন চিকিৎসালয়ে, তবুও হার মানেননি। "নিরাময়যোগ্য প্যারানয়েড প্রলাপ" রোগে আক্রান্ত আতো হ্যালুসিনেশন, গ্লোসোলালিয়া এবং হিংসাত্মক ক্রোধে ভুগতেন। তাঁর চিকিৎসা সম্ভবত ততটাই ক্ষতি করেছিল যতটা সুস্হ করেছিল। তিনি অত্যন্ত সন্দেহজনক ইনসুলিন থেরাপি সহ বৈদ্যুতিক শক চিকিৎসার মতো সত্যিকারের ভয়ঙ্কর পদ্ধতি সহ্য করেছিলেন, যার দরুন কিছু সময়ের জন্য আতো কোমায় চলে যান। তা সত্ত্বেও, অঁতনা আতো একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী তাত্ত্বিক এবং নাট্যকার হিসেবে পরিচিতি পান, যিনি "নিষ্ঠুর থিয়েটার" ভাবকল্প তৈরি করার জন্য বিখ্যাত। তাঁর মঞ্চনাটক আর শ্রুতিনাটক দর্শক ও শ্রোতাদের ইন্দ্রিয় এবং সংবেদনশীলতাকে আক্রমণ করার জন্য ভেবেচিন্তে তৈরি করা হয়েছিল এবং তাদের জীবনের যেগুলো মূল বাস্তবতা —- যৌনতা, নির্যাতন, হত্যা এবং ধাতুরস, ঋতুরক্ত, মলত্যাগ সম্পর্কে বোধ জাগিয়ে তোলার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। অঁতনা আতো অভিনেতা আর দর্শকদের মধ্যে সীমা ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলেন, আর নাটককে এমন একটা অনুষ্ঠান হিসেবে উপস্হাপন করতে চেয়েছিলেন যা আনন্দদায়ক, অনিয়ন্ত্রিত এবং এমনকি বিপজ্জনক হবে । অঁতনা আতোর নাটকের ধারণা ইউরো-আমেরিকান মঞ্চে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। সুসান সন্টাগ যেমন লিখেছিলেন, "এখন থিয়েটার নিয়ে যারা কাজ করে তারা কেউই আতোর নাট্য ধারণার প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।"
অঁতনা আতো প্যারিসে ১৯২০ এর দশকের পরাবাস্তববাদী লেখক, শিল্পী এবং পরীক্ষামূলক নাট্যদলে যোগ দেন। রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ফলে আঁদ্রে ব্রেতঁ তাঁকে পরাবাস্তববাদী গোষ্ঠী থেকে বের করে দেন । ১৯২৭ সালে আঁদ্রে ব্রেতঁ কর্তৃক বহিষ্কৃত হওয়ার কারণ ছিল কমিউনিজমে অঁতনা আতোর অবিশ্বাস । ফ্রান্সে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে পরাবাস্তববাদীদের যোগাযোগ বৃদ্ধিকে ভালো চোখে দেখেননি অঁতনা আতো। রস মারে লিখেছেন, "আঁতো মোটেও রাজনীতির মানুষ ছিলেন না, এমনকি তিনি মার্কসবাদিদের বর্জন করতে বলতেন।তাছাড়া, "ব্রেতঁ বেজায় থিয়েটার-বিরোধী হয়ে উঠছিলেন কারণ ব্রেতঁ থিয়েটারকে বুর্জোয়া এবং প্রতিবিপ্লব হিসাবে দেখেছিলেন।" অঁতনা আতো বলেছিলেন, আঁদ্রে ব্রেতঁর মুখের ওপর, “মার্কসবাদিদের মুখে আমি হেগে দিই।” পরাবাস্তববাদীদের নিজেদের মধ্যে মারামারি হলেও, আতোকে কেউ ঘাঁটাতে সাহস পায়নি । আঁদ্রে ব্রেতঁ অবশ্য পরবর্তীকালে লিখেছিলেন, “ অঁতনা আতোর সমস্তকিছুকে অস্বীকৃতির আবেগপূর্ণ, নায়কোচিত বার্তাকে আমি অভিবাদন জানাই কেননা সেগুলোই আমাদের জীবিত রেখে হত্যা করে।”
আতোর প্রথমদিকের কাজগুলোকে "কৃত্রিম" হিসাবে বর্ণনা করেছেন কেউ-কেউ, তা এই জন্য যে সেই সময়ে গতানুগতিক নাট্যধারণা ছিল প্রবল । আঁতোর কাছে তাঁর ধারণাগুলো ছিল একযোগে আশীর্বাদ এবং অভিশাপ —দুইয়ে মোড়া, যা তিনি টুকরো-টাকরা কাগজে লিখতেন এবং ১৯৩০ এর দশকের শেষের দিকে বন্ধু, শত্রু এবং কয়েকজন নেতা ধরণের ব্যক্তিত্বকে ( এমনকি হিটলারকে ) পাঠিয়েছিলেন। এই কাজগুলোর কোনও অনুবাদ বা প্রতিলিপি করা হয়নি, আর হাতের লেখা বেশ দুর্বোধ্য হওয়ায় পাঠকদের সামনে আসেনি । অভিনেতা রজার ব্লিনকে লেখা চিঠিতে আতো বলেছিলেন, “যারা আমাকে হেরোইন নেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য অভিনয় করে তারা সবাই, আর যারা ১৯৩৯ সালের রবিবারের [অবৈধ] মে মাসের জন্য অ্যান ম্যানসনের [একজন বন্ধুর] উপর আঙুল তুলেছে, আমি তাদের প্যারিসের একটা চৌরাস্তায় জীবন্ত পোড়াবো, আর আমি তাদের শরীরে ছেঁদা করে দেব আর তাদের মজ্জা পুড়িয়ে দেব।
১৯২৫ সালের ডিসেম্বরে অঁতনা আতো প্রকাশ করেন তাঁর “সুস্পষ্ট ভাষা বিষয়ক ম্যানিফেস্টো”, মূলত পরাবাস্তববাদীদের, বিশেষ করে আঁদ্রে ব্রেতঁ’র বক্তব্যের সঙ্গে তাঁর মতামতের পার্থক্য স্পষ্ট করার জন্য । আতো’র ম্যানিফেস্টোটা এরকম :
“আমি যদি খারাপ বা ভালোতে বিশ্বাস করি না । যদি আমি ধ্বংস করার মতো প্রবল প্রবণতা অনুভব করি, যদি নীতিমালায় এমন কিছু না থাকে যা আমি যুক্তিসঙ্গতভাবে মেনে নিতে পারি, তাহলে বুঝতে হবে তার অন্তর্নিহিত কারণটি রয়েছে আমার শরীরের মাংসে।
“আমি ধ্বংস করি কারণ আমার দৃষ্টিতে, যুক্তি থেকে যা কিছু গড়ে ওঠে তাতে বিশ্বাস করা যায় না। আমি কেবলমাত্র সেই প্রমাণে বিশ্বাস করি যা আমার মজ্জাকে আলোড়িত করে। যা আমার যুক্তিবোধের প্রতি সম্বোধন করে তাতে নয়। আমি স্নায়ুর রাজ্যে নানা রকম স্তর খুঁজে পেয়েছি। বুঝতে পারি যে এখন সাক্ষ্য-প্রমাণের মূল্যায়ন করতে আমি সক্ষম। আমার জন্য বিশুদ্ধ মাংসের এলাকায় এমন প্রমাণ রয়েছে যার সঙ্গে যুক্তি প্রমাণ করার কোন সম্পর্ক নেই। যুক্তি এবং হৃদয়ের মধ্যে চিরন্তন দ্বন্দ্ব আমার শরীরে নিষ্পত্তি হয়, যদিও তা আমার মাংসে স্নায়ু দ্বারা সিঞ্চিত । অনুভূতিশীল অকল্পনীয়তার রাজ্যে, আমার স্নায়ুর দ্বারা গড়ে ওঠা ছবিখানা সর্বোচ্চ বুদ্ধিবৃত্তির রূপ নেয়, যা থেকে আমি তার বুদ্ধিবৃত্তির গুণকে ছিনিয়ে নিতে অস্বীকার করি। সুতরাং বলতে হচ্ছে যে, আমি একটি ভাবকল্পের গঠন পর্যবেক্ষণ করি, যা কিনা বস্তুসমূহের প্রকৃত পূর্ণতা বহন করে, তা আসলে একটা ভাবকল্প যা সৃষ্টির ধ্বনি নিয়ে আমার কাছে পৌঁছোয়।
“ কোনও ইমেজ আমাকে সন্তুষ্ট করে না যদি না তা সেইসঙ্গে জ্ঞান হয়, যদি না ইমেজটা তার সাথে নিজস্ব সারবত্তা এবং নিজস্ব স্পষ্টতা ধরে রাখে। আমার মন, বিতর্কমূলক যুক্তির কারণে ক্লান্ত, একটা নতুন, পরম মাধ্যাকর্ষণের চাকায় সম্পৃক্ত হতে চায়। আমার কাছে এটা সর্বোত্তম পুনর্গঠনের মতো ব্যাপার, যাতে শুধু অযৌক্তিক নিয়মগুলো লাগু হয়, আর জয় হয় একটা নতুন মর্মার্থের আবিষ্কার । এই মর্মার্থ মাদকের ব্যাধিতে হারিয়ে গেছে আর ঘুমের পরস্পরবিরোধী কল্পনার কাছে একটা গভীর বুদ্ধিমত্তার চেহারা উপস্থাপন করেছে। এই মর্মার্থ মনের ওপর নিজের বিজয় , আর যদিও এটা যুক্তির দ্বারা অখণ্ডনীয়, তবু তা উপস্হিত থাকে , অবশ্য সেটা কেবল মনের ভেতর । এটা হলো শৃঙ্খলা, বুদ্ধিমত্তা । এটাই বিশৃঙ্খলার গুরুত্ব। কিন্তু তা এই বিশৃঙ্খলাকে যেমনকার তেমন ভাবে গ্রহণ করে না, এটা তাকে ব্যাখ্যা করে আর ব্যাখ্যা করে বলে তাকে হারিয়ে ফ্যালে। এটা হলো অযৌক্তিকতার যুক্তি। আর একজন লোক শুধু এই সব কথাই বলতে পারেন । আমার স্বচ্ছ অযৌক্তিকতা বিশৃঙ্খলাকে ভয় পায় না.
“মন বলতে যা বোঝায় তার কিছুই আমি বাতিল করি না। আমি শুধু আমার মনকে তার নিজস্ব নিয়ম আর অঙ্গসুদ্ধ অন্য কোথাও নিয়ে যেতে চাই। আমি মনের যৌন প্রক্রিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করি না, বরং এই প্রক্রিয়াটির বিপরীতে আমি সেই আবিষ্কারগুলোকে আলাদা করে দিতে চাই যা স্বচ্ছ উদ্দেশ্য সরবরাহ করে না। আমি স্বপ্নের জ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করি, কিন্তু তা কেবল তাদের কাছ থেকে নতুন মালমশলা পাবার জন্য। আমি চাই সংখ্যাবৃদ্ধি, সূক্ষ্মতা, প্রলাপের বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টি, দ্রুত ভবিষ্যবাণী নয়। একটি ছুরি আছে যা আমি কখনও ভুলি না।
“কিন্তু এই ছুরিটা স্বপ্নের ভেতরে অর্ধেক ঢুকে আছে, যা আমি নিজের ভেতরে রাখি, যা আমি স্বচ্ছ ইন্দ্রিয়ের পরিসীমানায় আসতে দিই না। যাকিছু ইমেজের এলাকার অন্তর্গত তা যুক্তির দ্বারা অপরিবর্তনীয় এবং তাকে অবশ্যই ইমেজের মধ্যে থাকতে হবে বা বিনষ্ট হতে হবে। সে যাই হোক, ইমেজের মধ্যে একটা কার্যকারণ থাকে, এমন বহু ইমেজ আছে যেগুলো ইমেজে-ভরা বিশ্বের জীবনীশক্তির তুলনায় পরিষ্কার ।
“মনের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে অসংখ্য প্রাণীর বহুরূপী এবং ঝকমকে ইঙ্গিত থাকে। এই ইন্দ্রিয়াতীত এবং চিন্তাশীল ধূলিকণা নিজের ভেতর থেকে নিয়মানুসারে গড়ে ওঠে , স্বচ্ছ যুক্তি বা আটকে দেয়া চেতনার এলাকার বাইরে ।
“ইমেজের উচ্চতর এলাকায়, সঠিকভাবে বলতে গেলে বলতে হয় বিভ্রম, বা বস্তুগত ত্রুটির অস্তিত্ব নেই, বিশেষ করে জ্ঞানের বিভ্রমের প্রসঙ্গ তো তোলাই উচিত নয় । তবে এটাই হলো আসল কারণ কেন একটা নতুন জ্ঞানের মর্মার্থ জীবনের বাস্তবতায় নিঃসন্দেহে অবতীর্ণ হতে পারে ।
“জীবনের সত্য বস্তুসমূহের আবেগের মধ্যে নিহিত। মানুষের মন নানা রকমের ভাবকল্প দিয়ে বিষিয়ে দেয়া হয়েছে। মানুষকে সন্তুষ্ট হতে বলবেন না, তাকে কেবল শান্ত হতে বলুন, যাতে সে বিশ্বাস করে যে সে তার অবস্থান খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র পাগলরাই সত্যিকার শান্ত থাকতে পারে ।”
তিন
প্যারিসে, আতো বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ফরাসি নাটক-পরিচালকের কাছে শিক্ষানবিশী করেন । এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জ্যাক কোপেউ, আঁদ্রে আঁতোয়া, গেয়র্গে এবং লুদমিলা পিতোয়েফ, শার্ল দুলাঁ, ফারমাঁ গেমিয়ার এবং লুনে পো । লুনে পো, প্রথম আতোকে পেশাদার থিয়েটারে প্রথম কাজ দিয়েছিলেন, পরে তিনি আতোকে "অভিনেতাদের মাঝে হারিয়ে যাওয়া একজন চিত্রশিল্পী" হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। তাঁর মূল নাট্য প্রশিক্ষণ ছিল শার্ল দুলাঁর দল, ‘থিয়েটার দে ল'আটেলিয়ারের’ অংশ হিসেবে, যেটিতে আতো ১৯২১ সালে যোগদান করেন। সেই দলে আতো আঠারো মাস ছিলেন।
শার্ল দুলাঁর দলের সদস্য হিসাবে, আতো প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘন্টা প্রশিক্ষণ নিতেন। আতো দুলাঁর শিক্ষার একজন শক্তিশালী প্রবক্তা ছিলেন । আতো বলেছিলেন: "দুলাঁর প্রশিক্ষণে আমি অনুভব করি যে আমি প্রাচীনকালের যাবতীয় গোপনীয়তা এবং উৎপাদনের সম্পূর্ণ বিস্মৃত রহস্য আবার আবিষ্কার করছি।" তাঁরা পূর্ব এশীয় থিয়েটারে, বিশেষ করে বালি এবং জাপানের অভিনয় ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন । দুলাঁ অবশ্য পশ্চিমা মঞ্চনাটকে পূর্ব এশীয় থিয়েটারের ভাষা ও শৈলী গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেননি। দুলাঁর বক্তব্য ছিল, "আমাদের পশ্চিমা থিয়েটারের উপর একটা দীর্ঘ ঐতিহ্যের থিয়েটারের নিয়ম চাপিয়ে দিতে চাওয়া, যার নিজস্ব প্রতীকী ভাষা আছে, একটা বড় ভুল হবে।"
নানা বিষয়ে দুলাঁর সঙ্গে আতোর মতপার্থক্য দেখা দেয়, বিশেষ করে আলেকজান্ডার আর্নক্সের হুওন ডি বোর্দোতে সম্রাট শার্লেমেনের অভিনয় নিয়ে মতান্তর এমন স্তরে চলে যায় যে ১৯২৩ সালে আতো দুলাঁর দল ছেড়ে বেরিয়ে যান। তারপর তিনি ১৯২৩ সালে পিতোয়েফের দলে যোগ দেন, কিন্তু পরের বছর সেই দলও ছেড়ে দেন তার কারণ এই সময়ে আতো সিনেমা করার দিকে ঝোঁকেন। চলচ্চিত্রে একজন সমালোচক, অভিনেতা এবং লেখক হিসেবে কাজ করার একটি সক্রিয় কর্মজীবন ছিল অঁতনা আতোর। আতো কুড়িটিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি অ্যাবেল গ্যান্সের ‘নেপোলিয়ন’ ( ১৯২৭ ) ছবিতে জাঁ-পল মারাট এবং কার্ল থিওডর ড্রেয়ারের ‘দ্য প্যাশন অফ জোয়ান অফ আর্ক’ ( ১৯২৮) ফিল্মে একজন সন্ন্যাসীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরিচালক জার্মেইন ডুলাক-এর , সিশেল অ্যান্ড দ্য ক্লারজিম্যান’ ফিল্মের স্ক্রিপ্ট ( ১৯২৮ ) লিখেছিলেন আতো । এই ফিল্মটি পরাবাস্তববাদী সালভাদর ডালি এবং লুই বুনুয়েলকে প্রভাবিত করেছিল।১৯২৯ সালে বিখ্যাত চোখের মণি কাটার দৃশ্য দিয়ে আন চিয়েন আন্দালু’ তৈরি করেছিলেন। অ্যাবেল গ্যান্সের ‘নাপোলেয়ঁ’ ( ১৯২৭ ) ছবিতে জাঁ-পল মারাতের চরিত্রে আতোর অভিনয় মারাতের ব্যক্তিত্বের শৌর্য বোঝাতে অতিরঞ্জনের আশ্রয় নিয়েছিলেন আতো । তিনি বেশ কয়েকটা চলচ্চিত্রের দৃশ্য লিখেছিলেন, তার মধ্যে দশটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। অঁতনা আতোর একটা দৃশ্যকল্প তৈরি করা হয়েছিল ‘দি সিশেল অ্যান্ড দি ক্লার্জিমান’ ফিল্মে ( ১৯২৮ ) । জার্মেইন দুলাক পরিচালিত এই ফিল্মটিকে অনেক সমালোচক প্রথম পরাবাস্তববাদী চলচ্চিত্র বলে মনে করেন। সিনেমা সম্পর্কে আতো লিখেছেন, “সিনেমা বলতে বোঝায় মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখীতা, আলোকবিদ্যার সম্পূর্ণ উত্থান, দৃষ্টিভঙ্গি এবং যুক্তির ভাঙন। এটি ফসফরাসের চেয়ে বেশি উত্তেজনাপূর্ণ, প্রেমের চেয়েও বেশি চিত্তাকর্ষক।"
ফিল্ম নির্মাণ ও স্ক্রিপ্ট লেখা ইত্যাদির পথ বন্ধ অনুভব করে, তিনি রজার ভিত্রাক এবং রোবের অ্যারনের সাথে আলফ্রেড জ্যারি থিয়েটারের প্রতিষ্ঠা করেন। ‘থিয়েটার আলফ্রেড জ্যারির’ জন্য লেখা "দ্য ম্যানিফেস্টো ফর অ্যান অ্যাবোরটিভ থিয়েটার" (১৯২৬-২৭) তে, অঁতনা আতো পরাবাস্তববাদীদের সরাসরি আক্রমণ করেছিলেন, যাদের তিনি "ঠোঙা বিপ্লবী" বলে অভিহিত করেন । তিনি ঘোষণা করেন যে পরাবাস্তববাদীরা "কমিউনিজমের কাছে মাথা নত করছে", যা "একটি অলস মানুষের বিপ্লব" বই আর কিছু নয় । রজার ভিত্রাক আর রোবের্ অ্যারনের সাথে কাজ করার জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করার প্রয়াস করেছিলেন যা ফরাসি থিয়েটারে আমূল পরিবর্তন ঘটাবে। অঁতনা আতো সেই সময়কার পশ্চিমা থিয়েটার-ভাবনার বিরোধীতা আরম্ভ করেন । তিনি বলেছিলেন যে গতানুগতিক পরিকল্পিত প্লট এবং স্ক্রিপ্টেড ভাষা প্যানিং করে তাঁর সমসাময়িকরা সাধারণত একই প্রথায় দিনের পর দিন নাটক মঞ্চস্হ করে চলেছেন, কোনও নতুন ভাবনা-চিন্তা নেই । রজার ভিত্রাককেও পরাবাস্তব আন্দোলন থেকে বের করে দিয়েছিলেন আঁদ্রে ব্রেতঁ । তাঁরা ১৯২৭ সালের জুন থেকে ১৯২৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চারটি প্রযোজনা মঞ্চস্থ করেন । নাটকগুলো স্বল্পস্থায়ী ছিল, কিন্তু আর্থার অ্যাডামভ, আন্দ্রে জিদ এবং পল ভ্যালেরি সহ ইউরোপীয় শিল্পীদের একটি বিশাল অংশ আতোর নাটকগুলো দেখতে আসতেন ।
১৯৩৩ সালে আতো ‘থিয়েটার অব ক্রুয়েলটি’ নামে একটি ম্যানিফেস্টোতে নাটক সম্পর্কে তাঁর ভাবনা-চিন্তা প্রথম প্রকাশ করেন । ১৯৩৮ সালে লেখেন ‘থিয়েটার অব দি ডাবল’।অঁতনা আতোর এই গুরুত্বপূর্ণ তত্বটি ১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি গালিমার প্রকাশনার ‘মেটামরফোসিস’ সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয় । যখন এই বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, তখন আতো সেন্ট-অ্যানের একটি মানসিক চিকিৎসালয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্হায় ছিলেন, যাকে বলা যায় প্রায় ক্যাটাটোনিক । প্রবন্ধসংগ্রহ জুড়ে, আতো প্রচলিত থিয়েটারের উপর তাঁর আক্রমণের রূপরেখা দিয়েছেন এবং ভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন। অভিব্যক্তি ছিল দর্শকদের সাথে তাঁর সংযোগের কেন্দ্রবিন্দু। আতোর সংজ্ঞায়িত ‘থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটি’, দর্শকদের সংবেদনকে আক্রমণ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। বলেছে যে নাটকটা যেন দর্শকদের এমনভাবে ক্রোধান্বিত করে যা সেই সময়ের ইউরো-আমেরিকান থিয়েটার করতো না।
নিষ্ঠুরতার থিয়েটার - এটা কি? "যা কিছু কাজ করে তা একটি নিষ্ঠুরতা" আতো তাঁর প্রবন্ধে বলেছেন। "একটা চরম কর্মকাণ্ডের ধারণার উপর ভিত্তি করে, সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে, ঠেলে, পরিধি বাড়িয়ে থিয়েটারকে পুনর্নির্মাণ করতে হবে।" আতোর বিষয়বস্তু যদি দেখা হয় - মারকুইস ডি সাদে, ব্লুবিয়ার্ড, জেরুজালেমের পতন, মেক্সিকো জয় - এই ফরাসি কবি, অভিনেতা, মিডিয়ামের বিপ্লবী অভিব্যক্তির পিছনে এমন একজনকে পাবেন যিনি শিল্পীকে লেখক বা পরিচালক হিসাবে না দেখে একজন সৃষ্টিকর্তা হিসাবে ভেবেছিলেন। একজন স্বপ্নদর্শী ।
নিষ্ঠুরতার থিয়েটার ভাবকল্প সম্পর্কে আতো লিখেছেন, “নিষ্ঠুরতার থিয়েটার মানে আমার জন্য প্রথমত কঠিন এবং নিষ্ঠুর থিয়েটার। এবং, কর্মক্ষমতার স্তরে, এটি এমন নিষ্ঠুরতা নয় যে আমরা একজন আরেকজনের দেহে আঘাত করে, আমাদের ব্যক্তিগত চামড়া-মাংস-অন্ত্র ছিঁড়ে বের করব, কিংবা সেই অ্যাসিরিয়ান সম্রাটদের মতন, মানুষের কান, নাক, বা সুন্দরভাবে কেটে নেয়া নাকের পার্সেল পাঠিয়ে একে অপরের উপর অনুশীলন করব । নিষ্ঠুরতার থিয়েটার কিন্তু অনেক বেশি ভয়ানক এবং প্রয়োজনীয় নিষ্ঠুরতা যা আমাদের বিরুদ্ধে সমাজ ব্যবহার করে । আমরা স্বাধীন নই। এবং আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়তে পারে। এবং নিষ্ঠুরতার থিয়েটার সবাইকে সতর্ক করে শেখানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।”
এই তত্বগুলোর মাধ্যমে অঁতনা আতো ইউরোপীয় আভাঁ গার্দের একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসাবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি পান। বিশেষ করে, তিনি ‘থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটির; ধারণার মাধ্যমে বিংশ শতাব্দীর থিয়েটারে গভীর প্রভাব ফেলেছেন। এবং আদিবাসী মেক্সিকান এবং বালিনিজ নাট্যপ্রথাকে কাজে লাগিয়েছেন। ‘থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটি’ ঐতিহ্যগত পশ্চিমা থিয়েটার থেকে আলাদা । আতোর কাজগুলো জাঁ জেনে, গেয়র্গে গ্রোটোস্কি, পিটার ব্রুক এবং রোমিও ক্যাসেলুচি সহ বহু শিল্পীর ওপর প্রভাব ফেলেছে ।
পরীক্ষামূলক থিয়েটার এবং পারফরম্যান্স শিল্পের বিকাশে একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছে আতোর ভাবনা-চিন্তা ও কর্মকাণ্ড। তাঁর ধারণাগুলো. পারফরম্যান্স অনুশীলনের ভাষার, এবং যুক্তিবাদের প্রভাবশালী ভূমিকা বর্জন করে, পৃথিবীব্যাপী আভাঁ গার্দ আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করতে সহায়তা করেছে। তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর অনেক কাজ জনসাধারণের সামনে উপস্হাপন করা সে সময়ে সম্ভব হয়নি। যেমন ‘স্পার্ট অফ ব্লাড’ ১৯২৫ সালে লেখা অথচ ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত দেখানো হয়নি। পিটার ব্রুক এবং চার্লস মারোভিটজ রয়্যাল শেক্সপিয়ার কোম্পানিতে তাদের "থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটি" সিজনের অংশ হিসাবে এটি মঞ্চস্থ করেছিলেন। কারেন ফিনলে, স্প্যাল্ডিং গ্রে, লিজ লেকম্পটে, রিচার্ড ফোরম্যান, চার্লস মারোভিটজ, স্যাম শেপার্ড, জোসেফ চাইকিন, চার্লস বুকাওস্কি, অ্যালেন গিন্সবার্গ এবং আরও অনেকের মতো শিল্পীরা আতোকে তাঁদের অন্যতম প্রভাব হিসাবে উল্লেখ করেছেন। উত্তেজনা ও চাঞ্চল্য প্রকাশের উদ্দেশ্য বলে মনে করা হয়, আঁতো’র ছোট নাটক ‘জেট অফ ব্লাড’, বা ‘স্পার্ট অফ ব্লাড’ । পাঠ্যটি যুক্তিভাঙনময় এবং মঞ্চের দিকনির্দেশগুলি পরাবাস্তব। ধ্বংসের দৃশ্য রয়েছে । একটি ভূমিকম্প আছে, একটি বিশাল হাত — এবং রক্তের একটি ফোয়ারা। নারীর যোনি থেকে বিছে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসে। মঞ্চ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে মৃতদেহ। এটি প্রথম ১৯৬৪ সাঁলে আতো’র থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটি সিজনের অংশ হিসাবে প্রদর্শনের পর ১৯৬৫ সালে অ্যালবি থমাস তৈরি করেন এর একটি ফিল্ম সংস্করণ, ‘দ্য স্পার্ট অফ ব্লাড’। সমালোচক অ্যালিসন ক্রগগন এই নাটক সম্পর্কে বলেছেন যে, আতো ' গতানুগতিক মডেলের পরিবর্তে একটি অনুঘটক এবং একটি প্ররোচনা' গড়ে তুলেছেন।
উন্মাদনার তাৎক্ষণিক ঝাঁকুনি সত্ত্বেও, নাটকটির মধ্যে আকর্ষণীয় কিছু আছে। আতো বলেছিলেন যে ফরাসী ভাষা বড্ডো সীমিত, সমস্ত ভাবনা লিখে প্রকাশ করা যায় না । তাঁর নাটকটা তাই বিপরীত ভাষা থেরাপির মতো, আমাদের বাস্তবতাকে ঘিরে বর্ণালী দেয়াল ভেদ করার একটি জাদুবিদ্যার উপায়। যেহেতু এটা দর্শক-শ্রোতার ইন্দ্রিয়ের ওপর আক্রমণ করে, টের পাওয়া যায়, মাদক সবসময় প্রভাব ফেলেছে। এটি নেরভাল এবং আলফ্রেড জারির জন্য জরুরি ছিল, দুজনেই আতোর অগ্রদূত। জারিকে নাকি খড়ের বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, কাছাকাছি ইথারের একটা সিলিন্ডার। আতোর এমন ছিলেন যে লোকটাকে বেশ্যালয়ে তাজা মৃতদেহের মতো দেখাতো - তাঁকে সরবরাহ করা বিভিন্ন ওষুধের যেকোনো একটি দ্বারা তাঁর মৃত্যু ঘটা অসম্ভব ছিল না।
চার
বেশিরভাগ সমালোচক বিশ্বাস করেন যে নাট্যতত্ত্বে আতোর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হল তাঁর "নিষ্ঠুরতার থিয়েটার", একটি তীব্র নাট্য অভিজ্ঞতা যা প্রপস, জাদু কৌশল, বিশেষ আলো, আদিম অঙ্গভঙ্গি, বক্তব্য এবং ধর্ষণ, নির্যাতন এবং হত্যার থিমগুলিকে একত্রিত করে মঞ্চস্হ করার কথা বলে । দর্শক ও শ্রোতারা জীবনের মূল উপাদানগুলির মুখোমুখি হন। ১৯৩১ সালে, প্যারিস ঔপনিবেশিক প্রদর্শনীতে অঁতনা আতো বালির নৃত্য পরিবেশন করতে দেখেছিলেন। অনেকের মতে আতো যা দেখেছিলেন তার অনেকটাই তিনি ভুল বুঝেছিলেন, তবু তা নাটকের জন্য তাঁর অনেক ধারণাকে প্রভাবিত করেছিল। অ্যাড্রিয়ান কার্টিন লিখেছেন যে বালিনিজদের সঙ্গীত এবং শব্দের ব্যবহারের তাৎপর্য ইউরোপীয়দের থেকে ভিন্ন । আতো তাদের 'হিপনোটিক' ছন্দ, উচ্চনাদ দামামার প্রভাবের পরিসর, সঙ্গীতজ্ঞদের তৈরি বিভিন্নরকম কাঠের বাজনার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন ।
সেটা ছিল বালিনিজ থিয়েটারের একটি অংশ যা আতো ১৯৩১ সালে প্যারিস ঔপনিবেশিক প্রদর্শনীতে দেখেছিলেন, যা অঙ্গভঙ্গি এবং অভিনয় সম্পর্কে তাঁর ধারণাগুলো বদলাতে শুরু করেছিল। তিনি মুখের অভিব্যক্তি এবং কথ্য শব্দের আপেক্ষিক গুরুত্বহীনতার ব্যবহারে আগ্রহী ছিলেন। অঙ্গভঙ্গি, তিনি অনুভব করেছিলেন, একজন শিল্পীর অচেতন এবং সচেতন উদ্দেশ্যগুলোকে এমনভাবে জুড়ে দিতে পারে যা শব্দেরা প্রকাশ করতে পারে না (যদিও একজন লেখক হিসেবে তিনি নিজে, বিশ্বাস করতেন যে শব্দগুলো কী-কী করতে পারে)। যা শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয় তা অঙ্গভঙ্গি করে অভিনেতারা মঞ্চে সেগুলো দৃশ্যমান করতে পারে। তিনি বললেন যে, 'সমস্ত সত্য অনুভূতি বাস্তবে উপস্হাপন-যোগ্য নয়। প্রকাশ করা মানেই বিশ্বাসঘাতকতা। কিন্তু উপস্হাপন করা মানে তাকে ছত্রভঙ্গ করা। সেজন্যই একটা ছবি, একটা রূপক, একটা ফিগার যা কিনা প্রকাশ করা যায় মুখোশের সাহায্যে সেটা সংলাপ আর তার বিশ্লেষণের চেয়ে আত্মার জন্য বেশি তাৎপর্য রাখে।
এর কিছুদিন পরেই তিনি ‘লা নুভেলে রেভিউ ফ্রানসেইজি” পত্রিকায় তাঁর 'ফার্স্ট ম্যানিফেস্টো ফর এ থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটি' প্রকাশ করেন; এটি পরে তার মূল বই “দি থিয়েটার অ্যান্ড ইটস ডাবল’-এ একটি অধ্যায় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল । এতে তিনি 'টোটেম এবং অঙ্গভঙ্গির একটি নতুন নাট্যভাষা তৈরি করার তাঁর অভিপ্রায় বর্ণনা করেছেন - যা কথোপকথন বর্জিত স্থানের ভাষা যা সমস্ত ইন্দ্রিয়কে আবেদন করবে'।
অঁতনা আতোর থিয়েটারে শ্রোতা-দর্শক যা দেখছেন-শুনছেন সেই তত্ত্বকে প্রাধান্য দিয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে থিয়েটারের অনেক পুরোনো নিয়মনীতি বাতিল করতে হবে । তিনি অনুভব করেছিলেন, মঞ্চে যা দর্শক-শ্রোতা দেখবে, 'স্বপ্নে তাদের গুরুত্ব থাকা উচিত' । প্রসেনিয়াম আর্চ, তার বিরুদ্ধে কাজ করে। নাটকের অভিনয়ে তিনি শ্রোতা এবং অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে কোনো বাধা ছাড়াই একটি একক খেলার জায়গা তৈরি করতে অডিটোরিয়াম এবং মঞ্চের বিলুপ্তিতে বিশ্বাস করতেন।
নিষ্ঠুরতার থিয়েটার একটি দর্শন এবং একটি ডিসিপ্লিন, দুইই । আতোর থিসিসে 'নিষ্ঠুরতা' ছিল শ্রোতাদের চমকে দেওয়ার এবং মোকাবিলা করার উপাদান । শব্দের বাইরে গিয়ে আবেগের সাথে সংযোগ করার কথা বলেছেন তিনি, যা কিনা স্নায়ু এবং হৃদয়কে জাগিয়ে তোলার ক্ষমতা রাখে । তিনি বিশ্বাস করতেন অঙ্গভঙ্গি এবং আন্দোলন, পাঠ্যের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। শব্দ এবং আলো সংবেদনশীল ব্যাঘাতের সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। দর্শকদের, তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, অভিনয়ের একটি অংশ হিসেবে প্রস্তুত করা উচিত। থিয়েটার হওয়া উচিত 'সংগঠিত নৈরাজ্যের' একটি কর্মকাণ্ড । আতোর থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটির ধারণা হলো অভিনয়ের শ্রোতাদের অংশভাক করে তোলা। শ্রোতা এবং অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া হওয়া উচিত, আলো, নড়াচড়া, নাচ, কান ফাটানো শব্দ এবং আরও অনেক কিছুর মাধ্যমে শ্রোতা-দর্শকদের নাটকের চরিত্র করে তোলা প্রয়োজন মনে করতেন আতো।
দুর্ভাগ্যবশত ‘লেস সেন্সি’ ছিল একমাত্র নাটক যা আতো তাঁর ‘থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটির’ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে মঞ্চস্হ করেছিলেন। এটি পার্সি বিসি শেলির ‘লেস সেন্সির’ ওপর ভিত্তি করে অভিনীত হয়েছিল, ১৮১৯ সালে রচিত একটি কাব্যনাট্য। কবিতাটা ছিল হাউস অফ সেন্সি দ্বারা অনুপ্রাণিত । যখন লেখা হয়েছিল তখন এটি মঞ্চযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। এতে পিতৃহত্যা এবং অজাচারের কাহিনি দর্শানো হয়েছিল। বর্তমানে, শেলির ‘লেস সেন্সি’ ইউরো-আমেরিকান নাটকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়।নাটকটি অঁতনা আতোর সংস্করণে প্যারিসের থিয়েটার দেস ফোলিস-ওয়াগ্রামে অভিনীত হয়েছিল। শুধুমাত্র ১৭ বার দেখানো হয় কিন্তু দর্শকদের থেকে আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও, তা ‘থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটির’ উৎকৃষ্ট নিদর্শন হিসাবে সমালোচকদের আকৃষ্ট করেছিল । ‘লেস সেনসি’ সম্পর্কে মঞ্চ-উপস্হাপক বলেছিলেন যে শুরুর দৃশ্যটা ছিল "তীব্র ঝড়-ঝাপটার বায়ুমণ্ডলীয় অশান্তির ইঙ্গিত , যার সাথে বাতাসে দোল খেতে থাকা পর্দা, হঠাৎ-হঠাৎ বিকট আর বাড়তে থাকা আওয়াজের তরঙ্গ আর সেই সঙ্গে নাচানাচি করতে থাকা ভিড়ের বেলেল্লাপনা” । সমালোচক জেন গুডঅল ‘দ্য সেনসি’ সম্পর্কে লিখেছেন, "প্রতিফলনের উপর কর্মের প্রাধান্য, ঘটনাগুলির বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছিল ।একক সংলাপ, আকস্মিক, ঝাঁকুনিপূর্ণ পরিবর্তনের প্রয়োজনে কাটা-কাটা সংলাপ, প্রয়োগ করা হয়েছিল আকস্মিকতার প্রভাব তৈরি করার জন্য। সংলাপ আর নানারকম ধ্বনির চরম ওঠানামা সংবেদনশীল সচেতনতাকে ধরে রাখার চেষ্টা করে নাটকটায় ।”
তাঁর জীবদ্দশায় অঁতনা আতোর তত্ত্বগুলো প্রাথমিকভাবে তত্ত্ব হিসেবেই রয়ে গিয়েছিল কিন্তু ক্রমশ তাদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে থাকে । অবশ্য অনেকে যুক্তি দেন যে আতোর ধারণাগুলো সর্বদা সুসংগত বা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তবু একথা অনস্বীকার্য যে তাঁর তত্ত্বগুলো সমসাময়িক থিয়েটারের গতিপথ বদলে দিয়েছে । জাঁ জেনে এবং স্যামুয়েল বেকেট সহ ইউরোপীয় লেখকদের একটা প্রজন্মের উপর তাঁর কাজ গভীর প্রভাব ফেলেছিল। পরিচালক পিটার ব্রুক ছিলেন আতোর তত্বের একজন প্রধান সমর্থক, যা তাঁর বই ‘দ্য এম্পটি স্পে’স-এ প্রকাশ করেছেন। পিটার ব্রুক প্রযোজিত ‘কিং লিয়ার’ এবং ‘মারাট/সেড’ সবচেয়ে স্পষ্টভাবে আতোর চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত । জিম মরিসন, ১৯৬০-এর দশকের আমেরিকান ব্যান্ড ‘দ্য ডোরস’-এর প্রধান গায়ক, অনুষ্ঠান এবং পারফরম্যান্সের উপর আতোর তত্বের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। জন কেজ, মার্স কানিংহাম এবং দ্য লিভিং থিয়েটার সকলেই আতোর প্রতি ঋণ স্বীকার করেছেন।
১৯৬৪ সালে পিটার ওয়েইসের নাটকের প্রযোজনায় আতোর তত্ব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ করা হয়েছিল - যার নাম ছিল ‘দ্য পার্সকিউশন অ্যান্ড অ্যাসাসিনেশন অফ মারাট অ্যাজ পারফর্মড বাই দ্য অ্যাসাইলাম অফ দ্য অ্যাসাইলাম অফ দ্য মারকুইস ডি সেড’। ব্রুকের নির্দেশনায় - রয়্যাল শেক্সপিয়ার কোম্পানির জন্য। প্রায়শই, আতোর নাটক প্রদর্শন করার সময়ে দর্শকদের কেন্দ্রে রেখে চারপাশে অভিনয়ের কাঠামো তৈরি করা হতো । নাটকের ভিতর আটকে থাকা দর্শকদের গতানুগতিক থেকে একেবারেই ভিন্ন অভিজ্ঞতা হতো। আতোর ‘লেস সেন্সি’ ( ১৯৩৫ ) নাটকটি এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়ে যে তার নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করে এবং তারপর তার মেয়ের ভাড়াটে খুনিদের হাতে খুন হয় । মেয়েটি বাপকে নির্মূল করার জন্য লোকগুলোকে নিয়োগ করেছিল। আতোর কাজের আরেকটি উদাহরণ হল ‘দ্য ফাউন্টেন অফ ব্লাড’ ( ১৯২৫ ), মানুষের, বিশেষ করে নারীদের দ্বারা বিশ্ব সৃষ্টি এবং এর ধ্বংস সম্পর্কে একটি প্রহসন। আতোর অন্যান্য নাটক, দৃশ্যকল্প এবং গদ্যের মতো, ‘লেস সেনসি’ এবং ‘দ্য ফাউন্টেন অফ ব্লাডকে’ প্রচলিত, সভ্য মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করার উদ্দেশ্যে লেখা। আতো চেয়েছিলেন মানুষের পরিমার্জিত মুখোশের পেছনে লুকিয়ে থাকা প্রাকৃতিক, বর্বর প্রবৃত্তিকে বের করে আনা। ‘ দ্য ফাউন্টেন অফ ব্লা’ড সম্পর্কে, অ্যালবার্ট বারমেল লিখেছেন, “সব মিলিয়ে, ‘দ্য ফাউন্টেন অফ ব্লাড’ হল একটি দুঃখজনক, বিদ্বেষপূর্ণ, আবেগপ্রবণ প্রহসন, জল্পনা-কল্পনার এক অপূর্ব স্রোত এবং নাটকের ইতিহাসে এক অনন্য অবদান। "
যদিও আতোর নিষ্ঠুরতার থিয়েটার ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা হয়নি, তাঁর ধারণাগুলো আধুনিক থিয়েটারের অনেক চিন্তকের বিষয়বস্তু হয়েছে এবং অনেক বিশ্লেষক আতোর ধারণাগুলো এখনও অধ্যয়ন করে চলেছেন। লেখক জর্জ ই. ওয়েলওয়ার্থ, ‘ড্রামা সার্ভেতে’, নিষ্ঠুরতার থিয়েটারকে ব্যাখ্যা করেছেন "নৈর্ব্যক্তিক, নির্বোধ-এবং সেইজন্য নির্মম-নিষ্ঠুরতার বয়ান, যার সবকিছু পিতৃতন্ত্রের অধীন। আতোর দৃষ্টিতে জগতসংসারের প্রাকৃতিক শক্তিসহ মহাবিশ্ব প্রকৃতপক্ষে নিষ্ঠুর , এবং এই নিষ্ঠুরতা, তিনি অনুভব করেছিলেন, এটি একটি একক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্য যার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন হতে হবে। আতোর থিয়েটার অবশ্যই দর্শকের অনুভূতিকে চূর্ণ এবং সম্মোহিত করবে।" ‘সেওয়ানি রিভিউতে’ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে ওয়ালেস ফাউলি নিষ্ঠুরতার থিয়েটারের আরেকটি বর্ণনা দিয়েছেন এবং তা হলো: “এমন নাটকীয় উপস্থাপনা যার মঞ্চায়নের সময় দর্শক বিস্মিত এবং এমনকি আতঙ্কিত হয় ।সন্ত্রাস বা উন্মত্ততার সেই অভিজ্ঞতার সময় দর্শকরা সত্যের একটি নতুন বয়ান বোঝার প্রয়াস করেন ।”
সুসান সোনট্যাগ লিখেছেন যে আতোর তত্ব এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে 'পশ্চিম ইউরোপ এবং আমেরিকার সমস্ত সাম্প্রতিক থিয়েটারের কোর্সকে দুটি কালখণ্ডে ভাগ করা যেতে পারে - ‘আতোর আগে এবং আতোর পরে'।
পাঁচ
অঁতনা আতোর নিষ্ঠুরতার থিয়েটার তাঁর নিজের জীবন থেকে পাওয়া । তাঁর জীবনের জটিলতাগুলোর মাধ্যমে তিনি দর্শকদের তাদের নিজস্ব জটগুলো খোলার হদিশ দিতে চেষ্টা করেছেন । সারা জীবন একজন কবি, লেখক, নাট্যকার, অভিনেতা, থিয়েটার পরিচালক এবং আরও অনেক কিছু হিসাবে কাজ করেছেন আতো। তিনি আজ বিংশ শতাব্দীর থিয়েটারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসাবে স্বীকৃত। পরীক্ষামূলক থিয়েটারের এই ধারাটি এমনভাবে সীমানা ঠেলে-ঠেলে এলাকাকে বাড়িয়ে দিয়েছে যা অন্য ধরনের ইউরো-আমেরিকান থিয়েটার করতে পারেনি । আতো দর্শকদের অভিজ্ঞতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
১৯৩৫ সালে অঁতনা আতো মেক্সিকো যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । তাঁর মনে হয় যে “দেশটার সভ্যতায় ফিরে আসার পক্ষে এক ধরণের গভীর আন্দোলন" এখনও ঘটছে । প্যারিসের মেক্সিকান লিগেশন তাঁকে একটি ভ্রমণ অনুদান দেয় এবং তিনি ১৯৩৬ সালের জানুয়ারিতে মেক্সিকো চলে যান, কিন্তু সেখানে তিনি এক মাস পরে পৌঁছোন। ১৯৩৬ সালে তিনি তাঁর প্রথম মেক্সিকান-প্যারিসিয়ান বন্ধু, চিত্রশিল্পী ফেদেরিকো ক্যানত্যুর সাথে দেখা করেন। সেই সময়ে ক্যানতু পশ্চিমা সভ্যতার অবক্ষয় নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। মেক্সিকোয় গিয়ে আতো তারাহুমরান আদিনিবাসিদের বিষয়ে অধ্যয়ন ও তাদের সঙ্গে জীবনযাপন করা আরম্ভ করেন । তিনি তাদের মাদক পিয়োটির আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন । সেই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলেন ‘ভয়েজ টু দি ল্যাণ্ড অফ দি তারাহুমারা’ যেটা ইংরেজিতে ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘দি পিয়োটি ডান্স’ নামে । এই অভিজ্ঞতার বিষয়বস্তু তাঁর পরবর্তী কবিতাগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, প্রাথমিকভাবে অতিপ্রাকৃতের সাথে সম্পর্কিত। তারাহুমারাদের দেশে প্রবেশের পর আতো হেরোইন থেকে তার ভয়ঙ্কর উইথড্রয়াল সিম্পটম রেকর্ড করেছিলেন। একটি পাহাড়ের ধারে তাঁর মাদকের শেষ সরবরাহ ত্যাগ করার পর, তাঁকে আক্ষরিক অর্থে তার ঘোড়ায় তুলে দিতে হয়েছিল ।.
আতোর কাজগুলোতে প্রায়শই পরীক্ষা-নিরীক্ষা, মাদকের ব্যবহার, রহস্যবাদ এবং আরও নানারকম থিম রয়েছে। সারা জীবন তিনি স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় ভুগেছেন এবং মানসিক হাসপাতালে জীবন কাটিয়েছেন। আতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভয় পাননি এবং যে পর্যায়ে তিনি মেক্সিকোতে তারাহুমরান লোকদের সাথে থাকতে গিয়েছিলেন আর তাদের জীবনযাত্রা থেকে জরুরি নাটকীয় ও সাহিত্যিক সম্পদ আহরণ করতে চাইছিলেন, তখনও তাঁর স্কিৎসোফ্রেনিয়া চাগিয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। সেখানে, দক্ষিণ আমেরিকার আদি নিবাসীদের পিয়োটি আচার-অনুষ্ঠান উৎসবে অংশ নেয়া আর তারাহুমারা ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় এই মাদক ও সংশ্লিষ্ট উৎসব সম্পর্কে লিখেছেন।পিয়োটি হল একটা ছোট, ডাঁটিহীন ক্যাকটাস যাতে সাইকোঅ্যাকটিভ অ্যালকালয়েড, বিশেষ করে মেসকালাইন থাকে। পিয়োটি মেক্সিকো আর দক্ষিণ-পশ্চিম টেক্সাসের স্থানীয় ক্যাকটাস। খাওয়ার ফলে এর সাইকোঅ্যাকটিভ বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত, পিয়োটি অন্তত ৫০০০ বছর ধরে আদিবাসী আমেরিকানদের দ্বারা সাংস্কৃতিক উৎসবে এবং ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ।
ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, শিল্পী এবং কবিরা চিরকালই স্বাভাবিক উপলব্ধি এবং দৈনন্দিন চেতনার বিকল্প অন্বেষণ করেছেন। অ্যালডাস হাক্সলির মতো ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবীদের মেসকালিন ভ্রমণ থেকে শুরু করে উইলিয়াম এস বারোজের দুঃস্বপ্নের সাইকেডেলিক দর্শন পর্যন্ত, হ্যালুসিনোজেন দ্বারা প্রভাবিত লেখকরা দেবতা এবং দানব উভয়ের সাথে পরিচিত হয়েছেন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে কবি, শিল্পী, লেখকদের মধ্যে হ্যালুসিনোজেনিক ওষুধের প্রতি আগ্রহের আবির্ভাব কথাসাহিত্যে একটি ক্রমবর্ধমান দূরদর্শী প্রবণতা তুলে ধরে, যা সাহিত্যিক অভিব্যক্তির পূর্ববর্তী রূপগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে । স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ এবং উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের মতো প্রারম্ভিক রোমান্টিক কবিদের জন্য, নেশাগ্রস্ত কবির জীবনযাত্রায় কল্পনার রশ্মিনির্দেশক হিসাবে লাউডানাম এবং অ্যালকোহল জরুরি মনে করা হতো। পরের প্রজন্মে কবি-শিল্পীরা আকৃষ্ট হলেন রাসায়নিক মাদকে ।
উইলিয়াম বারোজ এবং পঞ্চাশ ও ষাট দশকের বিট লেখকরা তৃতীয় বিশ্বে তাদের জৈব শেকড় অনুসন্ধান করতে হ্যালুসিনোজেনগুলোকে ড্রয়িংরুমের বাইরে এবং রাস্তায় সরিয়ে নিয়ে গিয়ে সাইকেডেলিক ল্যান্ডস্কেপ পুনর্বিন্যাস করেছিলেন। ঔপন্যাসিক উইলিয়াম বারোজ এবং কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ মেক্সিকোতে পিয়োটি এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ইয়েজ গ্রহণ করেছিলেন। গিন্সবার্গের কবিতা ‘হাউল’-এর কিছু অংশ পিয়োটির প্রভাবে লেখা হয়েছিল। গিন্সবার্গ এলএসডিতে থাকাকালীন একটি কবিতাও লিখেছিলেন যা তাঁকে নৃবিজ্ঞানী গ্রেগরি বেটসন দিয়েছিলেন । জাঁ জেনের মতো অন্যান্য নাট্যকাররাও থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। জেনে ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক এবং নাট্যকার যিনি রাজনৈতিক কর্মী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর কাজগুলি প্রায়ই ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজক ছিল। তিনি অপরাধ, সমকামিতা এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে লিখেছেন। বেশিরভাগ আলোচক মনে করেন আতোর থিয়েটার দ্বারা সবচেয়ে সফলভাবে প্রভাবিত হয়েছেন জাঁ জেনে ।
কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ দাবি করেন আতোর কাজ, বিশেষ করে “ঈশ্বরের বিচারকে বাতিল করা বিষয়ক” শ্রূতিনাটক, তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা "হাউল"-এর উপর অসাধারণ প্রভাব ফেলেছিল।তাঁর প্রভাব দেখা যায়: কাফকার ‘দ্য ট্রায়াল’ ( ১৯৪৭) এর ব্যারাল্টের প্রযোজনায় । ১৯৬৮ সালের শীতকালে, উইলিয়ামস কলেজে আতোর প্রতি উৎসর্গীকৃত ইন্টারসেশন ক্লাস হয়েছিল, যাতে কিথ ফাউলারের নির্দেশনায় সপ্তাহব্যাপী "নিষ্ঠুরতার নাট্য উৎসব" হয়। এই উৎসবে ‘দ্য জেট অফ ব্লাড’, ‘অল রাইটিং ইজ পিগ শিট’, এবং আতোর বেশ কিছু মূল রচনার প্রযোজনা অন্তর্ভুক্ত ছিল ; একটি ‘টেক্সাস টাওয়ার’ হত্যাকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে এবং আরেকটি ‘দ্য রেসারেকশন অফ পিগ ম্যান’ নামে এনসেম্বল ক্যাথারসিস উপস্হাপন করা হয়েছিল। কানাডায়, নাট্যকার গ্যারি বোটিং দ্য এওলিয়ান স্ট্রিংগার থেকে জেন রক ফেস্টিভ্যাল পর্যন্ত ‘আতোনীয়’ কর্মকাণ্ডের একটি সিরিজ তৈরি করেন এবং ‘প্রমিথিউস রি-বাউন্ড’ সহ আতোনীয় থিম সহ এক ডজন নাটক মঞ্চস্হ করেন। লেখক এবং অভিনেতা টিম ডালগ্লিশ ইংরেজি ফিজিক্যাল থিয়েটার কোম্পানি বেয়ার বোনসের জন্য দ্য লাইফ অ্যান্ড থিয়েটার অফ অঁতনা আতো ( ১৯৯৯ ) নাটকটি লিখেছেন এবং প্রযোজনা করেছেন। নাটকটি আতোর নাট্যকার হয়ে ওঠার প্রথম বছর থেকে আরম্ভ হয় যখন তিনি প্রতিষ্ঠা পেতে চাইছিলেন এবং তাঁর শেষ বছরগুলি কতো যন্ত্রণাদায়ক, আইকনোক্লাস্টিক ও বহিরাগত হিসাবে মানসিক চিকিৎসালয়ে কাটিয়েছেন ।
অঁতনা আতো লিখেছিলেন, “সব লেখাই শুয়োরের গু । যারা অস্পষ্টতা ত্যাগ করে এবং তাদের মাথায় যা সক্রিয় তা সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করে তারা, শুয়োর । সমগ্র সাহিত্যিক মহল হলো শুয়োরের খোঁয়াড়। বিশেষ করে তারা, যারা তাদের আত্মার মধ্যে সুবিধার গোপন ডেরা বেঁধেছে, আমি বলতে চাইছি, তাদের মাথার কোনও না কোনও অংশে আর কঠোরভাবে মস্তিষ্কের নির্ধারিত এলাকায় । তারা ভাবে তারা তাদের ভাষার অভিভাবক; যাদের জন্য শব্দের অর্থ আছে । আমি তাদের সুনির্দিষ্ট কাজের কথা ভাবছি, সেই স্বয়ংক্রিয় নাকালের কথা যা তাদের আত্মাকে বাতাএ উড়িয়ে দেয় - তারা শুয়োর।”
দার্শনিকদের ওপরও আতোর উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা যায় । আতো লিখেছিলেন, “আপনি যখন মাংনুষকে অঙ্গবিহীন একটি শরীরে পরিণত করবেন, তখন আপনি তাকে তার সমস্ত স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি দেবেন এবং তাকে তার প্রকৃত স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবেন।” জিলে দেল্যুজ এবং ফেলিক্স গুয়াত্তারি , আতোর "অঙ্গ ছাড়া শরীর" শব্দবন্ধ নিয়েছিলেন তাঁদের শরীরের ভার্চুয়াল মাত্রা এবং পুঁজিবাদ এবং স্কিৎসোফ্রেনিয়ার বাস্তবতার মৌলিক স্তরের ধারণা বর্ণনা করার জন্য। দার্শনিক জ্যাক দেরিদা আতোর কাজের অবদান ‘প্রধান দার্শনিক চিকিৎসা’ বর্ণনা করেছেন তাঁর "প্যারোল সোফেলি" ধারণার মাধ্যমে। নারীবাদী দার্শনিক জুলিয়া ক্রিস্তেভা আতোর "প্রক্রিয়ায় বিষয়" নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ছয়
১৯২৩ সালে, আতো তাঁর কয়েকটা কবিতা ‘লা নুভেল রেভিউ ফ্রান্সেইজি’ জার্নালে পাঠিয়েছিলেন। সেগুলো প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, কিন্তু আতোর কবিতা এনআরএফ-এর সম্পাদক জ্যাক রিভিয়েরকে কৌতুহলী করেছিল, আর তিনি আতোকে ডেকে পাঠান। পোস্টের মাধ্যমে দেখা করার পর তারা তাদের সম্পর্ক চালিয়ে যান। এই চিঠিগুলির সংকলন একটি গুরুত্বোপূর্ণ কাজ ছিল । আতোর প্রথম প্রধান প্রকাশনা। আতো এনআরএফ-এ তাঁর আরও রচনা প্রকাশ করতে থাকেন, যার মধ্যে রয়েছে "ফার্স্ট ম্যানিফেস্টো ফর এ থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটি" ( ১৯৩২ ) এবং "থিয়েটার অ্যান্ড দ্য প্লেগ" ( ১৯৩৩ )। দ্য থিয়েটার অ্যান্ড ইটস ডাবলকে একত্রিত করার সময় তিনি এই প্রকাশনাগুলি তাতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন । আতো লিখেছেন, "কবিতা একটি বিচ্ছিন্ন এবং নৈরাজ্যিক শক্তি যা উপমা, সংসর্গ এবং চিত্রকল্পের মাধ্যমে পরিচিত সম্পর্কগুলোকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।"
শিল্পীর মানসিক অসুস্থতার জন্য অনেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় আতোর সৃজনশীল ক্ষমতাগুলো আংশিকভাবে থেরাপির উপায় হিসাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। এডোয়ার্ড টুলুজের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন, আতোকে কবিতায় নিজেকে প্রকাশ করতে উৎসাহিত করা হয়, যা টুলুস পরে ‘জার্নালে ডেমেন’-এ প্রকাশ করেন। আতোর জীবন এবং তাঁর কাজ, সাইকোথেরাপির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তাঁর মানসিক যন্ত্রণাকে প্রতিফলিত করেছে এবং মাদকদ্রব্যের উপর তাঁর নির্ভরতার কারণে তা আরও জটিল হয়েছিল। মাঝে মাঝে তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস প্রকাশ করতেন ; অন্য সময় তিনি চার্চের নিন্দা করতেন এবং নিজেকে দেবতায় উত্তীর্ণ করেছেন। তিনি মানবদেহের প্রতিও আচ্ছন্ন ছিলেন; তিনি যৌনতার ধারণাকে ঘৃণা করতেন এবং নিজের যৌন প্রতিস্ব থেকে নিজেকে আলাদা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
‘অঁতনা আতো : ম্যান অফ ভিশান’ গ্রন্থে, লেখক বেটিনা এল. ন্যাপ তাত্বিক হিসাবে আতোর মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে লিখেছেন: “আতো জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অক্ষম ছিলেন; তিনি অন্যদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে পারতেন না; এমনকি তিনি তাঁর নিজের পরিচয় সম্পর্কেও নিশ্চিত ছিলেন না।” ন্যাপ মন্তব্য করেছেন যে "আতো মূলত তাঁর অসুস্থতার চারপাশে একটি সম্পূর্ণ আধিভৌতিক প্রণালী গড়ে নিয়ে ছিলেন, বা, বলা যায়,, তাঁর নিজের রোগের মাধ্যমে রহস্যবাদীর রাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন। তাঁর মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তিনি নিজে এবং সবকিছুই তাঁর অস্তিত্ব থেকে বাহ্যিকভাবে বিকিরিত হতো ।" আতোর ‘দি আমবিলিকাস অফ লিমবো’-র কথা উল্লেখ করে, ন্যাপ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আতো দর্শক-শ্রোতা-পাঠকদেরও "'ডিরেঞ্জড ম্যান' তৈরি করতে চেয়েছেন, মানুষকে এমন একটি যাত্রায় নিয়ে যেতে চেয়েছেন 'যেখানে তারা যেতে কখনই সম্মত হবেন না।'" তিনি আরও ব্যাখ্যা করেছেন, "যেহেতু নাটকীয় শিল্প সম্পর্কে আতোর ধারণা ছিল যে সেগুলো তাঁর অসুস্থতাসঞ্জাত, তিনি থিয়েটারকে নিরাময়কারী ওষুধ হিসাবে দেখেছিলেন। এমন একটা উপায় যার মাধ্যমে মানুষ থিয়েটারে এসে ছিন্নভিন্ন, বিভক্ত এবং কেটে খুলে ফেলার জন্য রাজি, তারপরে তার নিরাময় করা যেতে পারে।" ন্যাপ তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে আতোর জনপ্রিয়তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন: “তাঁর সময়ে, তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি নিজের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন, নিজের মধ্যে বিভক্ত, তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাঁর অভ্যন্তরীণ জগত এবং বাইরের শক্তির শিকার। তাঁর কল্পনার জোয়ারের শক্তি এবং তাঁর থেরাপিউটিক অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করা হয়েছিল এবং একজন পাগলের উন্মাদনা হিসাবে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিষ্ঠান তাঁকে একপাশে সরিে দিয়েছিলছিল।বর্তমান কালখণ্ডের মানুষ আতোর রচনা, ভাবনা, আঁকায় সাড়া দিতে পারে কারণ তারা অনেক মনস্তাত্ত্বিক মিল খুঁজে পায় এবং সখ্যতা ভাগ করে নেয়।"
সানচে ডি গ্রামন্ট ‘হরাইজন’ পত্রিকার প্রবন্ধে আতো সম্পর্কে লিখেছেন, "যদি আতো পাগল ছিলেন, তবে আতো নিজের পাগলামিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর কাছে যুক্তিবাদী জগত সন্দেহজনক ছিল; তিনি হ্যালুসিনেশনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন যা যুক্তিকে বিলুপ্ত করে এবং তার বিচ্ছিন্নতার মর্মার্থ তৈরি করে। আতো ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে সেই সীমার বাইরে রেখেছিলেন যেখানে বিচক্ষণতা এবং উন্মাদনার বিরোধিতা করা যেতে পারে, এবং নিজেকে জাদু এবং অযৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি ব্যক্তিগত জগতের কাছে আত্মসমর্পণ করা যেতে পারে।"
আতো তাঁর শেষ এগারো বছরের মধ্যে নয়টি মানসিক চিকিৎসালয়ে বন্দী জীবন কাটিয়েছেন কিন্তু জীবনীকার সুসান সন্টাগের মতে, তাঁর জীবনের শেষ তিন বছরে তাঁর কিছু সেরা কবিতা লেখা অব্যাহত রেখেছিলেন: “এই সময়ের মধ্যে আতোর লেখার দুর্দান্ত বিস্ফোরণ পর্যন্ত হয়। ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৮ এর সময়টায়. আতো কবিতাকে ‘বদ্ধ লিরিক বিবৃতি’ হিসাবে ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন এবং কবিতায় একটি দীর্ঘশ্বাসের কণ্ঠস্বর খুঁজে পেয়েছিলেন যা তাঁর কল্পনাপ্রসূত প্রয়োজনের পরিসরের জন্য পর্যাপ্ত ছিল। এমন একটি কণ্ঠস্বর যা প্রতিষ্ঠিত ফর্ম থেকে মুক্ত এবং যার সমাপ্তিও ছিল মুক্ত, এজরা পাউন্ডের কবিতার মতো।" যাইহোক, সোনটাগ, অন্যান্য জীবনীকার এবং পর্যালোচকরা একমত যে আতোর সামগ্রিক ও প্রগাঢ় প্রভাব ছিল থিয়েটারে। ১৯২০-১৯২৬ সালের অঁতনা আতোর প্রারম্ভিক চিঠি, প্রবন্ধ, উক্তি, নাটক; এবং অন্যান্য লেখাগুলি পড়লে একটি অভ্যাস, বৈশিষ্ট্য এবং আবেশ প্রকাশ করে যা তাঁর নিজস্ব। প্রধান জীবনীকার এবং সমালোচকরা পর্যাপ্তভাবে ব্যাখ্যা করেননি, যেমন, তাঁর আফিম খাওয়া; তাঁর স্বনির্বাচিত একাকীত্ব; এবং তাঁর চরম উদ্ভাবনের সময়কাল, "অসাড়তা ছড়ানো" এবং মানসিক শূন্যতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। তাঁর সুপরিচিত "লেটারস টু রিভিয়ের" এর আগে, তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, তিনি কখনই "সম্পূর্ণভাবে" তাঁর মনকে দখল করতে পারেননি ( ১৯২১ ) এবং তিনি প্রশ্ন করেছিলেন যে তার কবিতাগুলি "প্রকৃত এগারোটি মনের স্হিতি" ( ১৯২২ ) প্রকাশ করেছে কিনা।
"লেটারস টু রিভিয়ার"-এ আতো বলেছিলেন যে চিন্তাভাবনা এবং ভাষার সাথে তাঁর সমস্যাগুলি "মনের ভয়ঙ্কর রোগ" থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, কিন্তু রিভিয়ার এবং পরবর্তী সমালোচকরা তাঁর রচনা বিশ্লেষণের অন্যান্য ব্যাখ্যার পরামর্শ দিয়েছেন: শারীরিক বা রূপক অসুস্থতা, এবং বিস্তৃত তাত্ত্বিক কাঠামো যা আতোকে একটি সারিতে বসায় । ধর্মনিরপেক্ষ রহস্যবাদী, দূরদর্শী বিদ্রোহী বা "শুদ্ধ" চেতনার শিষ্যের মতো ভূমিকা ইত্যাদি ব্যাখ্যাগুলির কোনটাই বলতে পারে না কেন তিনি এত অসহায় বোধ করতেন।আতোর সমস্যা এবং একক অভিজ্ঞতার সর্বোত্তম ব্যাখ্যা সিজোফ্রেনিয়া রোগে খোঁজার চেষ্টা হয়।
আগেই জানিয়েছি, অঁতনা আতো ষোলো বছর বয়সে তাঁর প্রথম বিষণ্নতাজনিত ভারসাম্যহীনতার শিকার হন; একুশ বছর বয়সে, তাঁর বংশগত সিফিলিস ধরা পড়ে। ১৯২০ থেকলে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত তাঁর বেশিরভাগ কাজ, যা প্রচলিত ইইউরোপীয় মতামতের বিপরীতে লিখেছিলেন , আবেশ তাড়িত আত্মজীবনীমূলক, “মন" এবং "মাংস"-র সার্বজনীন সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা না করে তাদের ভেতরে তাঁর ক্রমাগত ক্রমবর্ধমান স্কিৎসোফ্রেনিক বিভাজন থেকে চাগিয়ে ওঠা একক সমস্যা এবং উদ্বেগগুলি প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে। আম্বিলিক্যাল লিম্বো, (নার্ভ স্কেলস, দ্য সিচুয়েশন অফ দ্য ফ্লেশ, ক্লিয়ার ল্যাঙ্গুয়েজে ম্যানিফেস্টো, হেলয়েস এবং অ্যাবেলার্ড এবং নরকে একটি ডায়েরি থেকে টুকরো টাকরা) রচনাগুলো ছাড়াও তাঁর প্রধান প্রবন্ধগুলো একটা গভীর স্কিৎসোফ্রেনিক সংকটের প্রকৃতি এবং প্রভাবগুলি বর্ণনা করেছে যার অভিজ্ঞতা ১৯২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর হয়েছিল। এই কাজগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর তিক্ততা, সাধারণ পাঠকের কথা ভেবে যা কবি-লেখকরা এড়িয়ে চলেন। তাঁর সমসাময়িক লেখক-আলোচকদের কাছে নিজেকে সফলভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে, যার মধ্যে স্পষ্টতই, পরাবাস্তববাদীরা ছিল, তিনি আলাদা হয়ে যেতে থাকেন সমগ্র পাঠক সমাজ থেকে।
অঁতনা আতোর জন্য, অন্ধকারে নিমজ্জন ছিল অন্ধকারকে কাটিয়ে ওঠা। আনাইস নিন জানিয়েছেন, একবার প্যারিসের এক উজ্জ্বল রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেলে আতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে পথচারীদেরকে তাদের অভ্যন্তরীণ অন্ধকার কাটিয়ে উঠতে উৎসাহিত করছিলেন । আতোর দৃষ্টিতে, শরীর এবং মন ছিল অবিচ্ছেদ্য, এবং যা একই যন্ত্র হিসাবে কাজ করে। চিকিৎসালয়ে তিনি ইলেকট্রিক শকে ক্ষুব্ধ, মেজাজহীন, আপাতদৃষ্টিতে নানা রকমের আত্মপ্রশ্নে জর্জরিত, তবুও সর্বদা অধ্যবসায়ে একাগ্র ছিলেন। মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন জেনেও নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেননি।অনেক সময়ে তিনি একজন প্রতারক ঈশ্বরকে উৎখাত করতে ব্যস্ত হয়ে উঠতেন ।
সাহিত্যের সেবক হিসেবে মার্কামারা লেখক হওয়াকে আতো ঘৃণা করতেন। এটি লেখক হতে জানতেন। ১৯৪৭ সালের আন্তর্জাতিক পরাবাস্তববাদী প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য ব্রেটনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার পর তিনি আঁদ্রে ব্রেতঁকে বলেছিলেন "আমার জন্ম, জীবন, মৃত্যু, বাস্তবতা এবং ভাগ্য সম্পর্কে নিজস্ব ধারণা আছে, এবং আমি এমন কোনো সাধারণ ধারণায় অংশগ্রহণ করি না যার মাধ্যমে আমি নিজেকে ছাড়া অন্য কোনো মানুষের সাথে থাকতে পারি।" তিনি আরও বলেছিলেন যে তিনি "পৃথিবীর সমস্ত জাদুকর এবং সূচনাকারীদের সমস্ত সম্প্রদায়ের সাথে প্রতি রাতে এবং দিনে প্রকাশ্য সংগ্রামে যুঝে চলেছেন।"
সাত
বহু ক্ষেত্রে আতোর কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অন্তর্নিহিত, তবে এটি সংজ্ঞায়িত করা সহজ নয়। সর্বোপরি, তাঁর লেখা আর আঁকা যেন হতাশার স্মৃতিময়, ভাষার অপ্রতুলতার প্রতিবাদের একটি দীর্ঘ আর্তনাদ, মানবসমাজ, দেহ ও মনে। আতো ছিলেন এমন একজন বিপ্লবী যিনি চেতনাকে সংজ্ঞায়িত করে দেয় এমন সীমাবদ্ধতা উৎখাতের জন্য লড়াই করে গেছেন। যেন তাঁর উপলব্ধির প্রান্তে আধ্যাত্মিক সারাংশের উপচ্ছায়া গড়ে তুলতে পেরেছেলেন এবং তাকে দখল করতে তাঁর অক্ষমতার ফলে উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সমস্ত কাজকে "নথিপত্র" হিসাবে বর্ণনা করেছেন—-অর্থাৎ, কবিতা, প্রবন্ধ, বিতর্ক, নাটক ইত্যাদি "শিল্প" নয়, কিন্তু সত্যের অধরা স্তরে পৌঁছানোর জন্য তাঁর ক্ষীণ প্রচেষ্টার নথি মাত্র। মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট-এর প্রদর্শনীতে থাকা তাঁর আঁকা ড্রইঙগুলোকে তিনি একইভাবে "নথিপত্র"-র তকমা দিয়েছেন৷ প্রায় সত্তরটা আইটেম রয়েছে—তাঁর জীবনের শেষ দশকের ড্রইঙ (তিনি ১৯৪৮ সালে মারা যান), পেইনটারদের কাছে তেমন সুপরিচিত নয় । তারা একক এবং শক্তিশালী কাজ। আতো তাঁর লেখালিখি আর আঁকাকে কখনও "ক্যারিয়ার" এর পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করেননি ।
আতো ১৯৪৪ সালের দিকে আন্তরিকভাবে আঁকতে শুরু করেছিলেন। ১৯৪৫ সাল নাগাদ, তিনি হায়ারোগ্লিফিক্স নামে একটি বড় ছক তৈরি করছিলেন: মানুষের চিত্র, প্রতীকী বস্তু এবং শব্দের ক্ষেত্র, যার মধ্যে অনেকগুলি তাঁর উদ্ভাবিত ভাষায়। রঙের ইঙ্গিতসহ পেন্সিলের এই ড্রইঙগুলোর মধ্যে কয়েকটাতে চিত্রগত গুণ রয়েছে যা অত্যন্ত উদ্দীপক বলে মনে করেন শিল্প আলোচকরা । প্রকৃতপক্ষে, প্রসঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন, কেউ কেউ এগুলোকে বাতিক হিসাবে ভুল করতে পারে। একাধিক স্তন, বিভিন্ন যৌনাঙ্গ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে দালির পেনিস-অন-ক্র্যাচের প্রভাব আছে । ক্রাচ হল সালভাদর দালির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছবি এবং তাঁর অনেক কাজে এর উপস্হিতি পাওবঅ ড়অব। এটি প্রথম এবং সর্বাগ্রে বাস্তবতার প্রতীক এবং বাস্তব জগতের মাটিতে একটি নোঙ্গর, জীবনের অপ্রতুলতার জন্য আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক সমর্থন প্রদান করে। ক্রাচ ঐতিহ্যের প্রতীক, অপরিহার্য মানবিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখে ।
১৯৪৬ সালে, অঁতনা আতোর পেন্সিলের কাজ আরও জোরালো হয়ে ওঠে, রঙগুলি আরও দৃঢ়, দুঃস্বপ্নের দিকগুলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। ‘দ্য থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটি’ শিরোনামের একটি কাজে, কাঁচের কফিনে ১৯৪৬ সালের মে মাসে, তিনি তাঁর প্রথম আত্মপ্রতিকৃতি তৈরি করেছিলেন। এতে এত বেশি আঁচড় দেয়া হয়েছে যে এটা দেখতে প্রায় ভাস্কর্যের মতো, এবং বিন্দু দিয়ে আচ্ছাদিত যা দেখতে গুটিবসন্তের মতো —- ক্যাটালগের একটি প্রবন্ধ ফ্রয়েডকে উদ্ধৃত করেছে, জিলে ডেলিউজের কথায়, "পৃষ্ঠ এবং ত্বককে অনুধাবন করার জন্য স্কিৎসোফ্রেনিক যোগ্যতার উপর অসীম সংখ্যক ছোট গর্ত দিয়ে বিদ্ধ করা হয়েছিল। একই সময়ে তৈরি একটি নীল মাথা আরও ভয়ঙ্কর, যেন চিৎকারে ধরা পড়ে, সমস্ত রোগাক্রান্ত বিন্দু দিয়ে আবৃত, চোখ এবং গলা। এটা, নরক থেকে বাড়িয়ে দেয়া একটা মুখ.।
১৯৪৭ সালে, আতো রোডেজের মানসিক হাসপাতাল থেকে আইভরি-সুর-সেইনের একটি বাসায় চলে যান, যেখানে তিনি বেশি সক্রিয় ছিলেন আর তিনি লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তেমন অস্বস্তি বোধ করতেন না । এখানে তিনি আঁকেন, অনুপ্রবেশকারী এবং বেশ বৈচিত্র্যময় প্রতিকৃতিগুলির একটি সিরিজ। উদাহরণস্বরূপ, রোলাঁ প্রেভেলকে প্রায় ম্যাটিস ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়েছে, কোলেট থমাসকে এমন সূক্ষ্ম করা হয়েছে যা কোমলতার সমান, যখন জ্যাক প্রেভেরকে মনে হয় দুই ভাগে করাত দিয়ে কাটা হয়েছে আর আবার সেলাই করা হয়েছে, ম্যানিয়া ওইফার একটি পেঁচায় পরিণত হয়েছে, আর্থার অ্যাডামভের নাক আর লিঙ্গ জায়গা বদল করেছে।ছবিগুলো সম্পর্কে আতো বলেছেন, "আপনি অবশ্যই ড্রইঙগুলো দেখুন এবং ভিতরে কী আছে তা বোঝার চেষ্টা করুন।" তিনি আরও লিখেছেন যে "মানুষের মুখ একটি শূন্য শক্তি, মৃত্যুর একটি ক্ষেত্র" এবং রূপ এবং বিষয়বস্তুর প্রান্তিককরণ মুখের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের তলায় যা রয়েছে তার মধ্যে বৈসাদৃশ্যের বেশি দূরে নেই। তাঁর প্রতিকৃতিগুলি এতটাই আপসহীন যে তারা পিকাসো বা জিয়াকোমেত্তির চেহারাকে ভদ্র করে তোলে।
আতো মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হতে পারেন, কিন্তু তাঁর শিল্প উন্মাদনায় আক্রান্ত নয় । পোর্ট্রেট, যেখানে তিনি বিকৃতি এবং কাগজ ছিঁড়ে যাওয়া শারীরিক শক্তির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ প্রতিনিধিত্ব করার সময় বাহ্যিক বাস্তবতাকে চিত্রিত করার জন্য শান্ত পর্যবেক্ষণ এবং একাডেমিক দক্ষতা ব্যবহার করেছিলেন, উদাহরণস্বরূপ, তার দর্শনের অনেক আকর্ষণীয় বিজ্ঞান-কাল্পনিক প্রকাশগুলোর চেয়ে বেশি সমস্যাজনক। তাঁর কাজকে ব্লেক বা হোল্ডারলিনের তুলনায় "বহিরাগত শিল্প" ধরণের তকমা পরানো যায় না । আতোর শিল্প ছলনাময়। আমরা যা দেখি তার ভেতরে অনুপ্রবেশ বেশ তীব্র আঘাত সৃষ্টি করে। ছবিগুলোর স্পষ্টতা তাদের বিভ্রম গড়ে তোলার ক্ষমতায়। আতো বলেছেন, “দেহের এইসব কাটা, এই জখম, এই ফাটল, এই আকস্মিক এবং অতল ঝরনার স্মৃতি ঠিক করা এবং স্থায়ী করা ছাড়া আমি কখনও অন্য কারণে লিখিনি।”
আতোর জীবনের সংক্ষিপ্ত শেষ পর্ব ১৯৪৬ সালে প্যারিসে ফিরে আসা থেকে শুরু করে ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ফরাসী মানসিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে নয় বছর কারাভোগ করার পর থেকে আতোর সবচেয়ে অসাধারণ কাজ হলো তাঁর কবিতা । ব্ল্যাক হিউমারের সাহায্যে, আতো তাঁর নিজের মর্যাদাকে তিরস্কার করেছেন। মার্সেই-তে জন্ম নেওয়া বোকাশিশু অর্থাৎ "মোমো" ( তাঁর নিজের নামকরণ ) তাঁর আত্মপরীক্ষাকে আলোকিত করে। আতোর “মোমো” চরম ধর্মহীন অশ্লীলতা এবং তার তাৎক্ষণিক শারীরিক উপলব্ধি এবং তার একাকীত্বের অনুভূতির সূক্ষ্ম উদ্ভবের মধ্যে চলে যায়। বইটির পাঁচ-অংশের ক্রমটি শেষ হয় আতোর মনস্তাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠানের নিন্দার মাধ্যমে । আতো দ্য মোমো, ভিচি ফ্রান্সের অধীনে রোদেজের একটি স্যানিটোরিয়ামে থাকার সময় তার শেষ লেখা। এই সময়ে, তিনি ইলেক্ট্রোশকের সম্মুখীন হন, এবং নিজস্ব নরকের ডাবল মোমোর সাথে যুদ্ধ করেন।
‘আতো দ্য মোমো’ একটি ভয়ঙ্কর কাব্য সংকলন। এর ভাষা সমসাময়িক মান অনুযায়ী হিংসাত্মক এবং পর্নোগ্রাফিক। মোমোর যন্ত্রণাদায়ক এবং পৌরাণিক ব্যক্তিত্ব। বিষয়বস্তুতে দ্য মোমোর প্রধান ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আতো তাঁর সুস্থতার সময়ে তৈরি করেছিলেন। এতে গ্লোসোলালিয়া ( বিশেষ করে ধর্মীয় উপাসনায় একটি অজানা ভাষায় কথা বলার আপাতদৃষ্টিতে ঘটনা ; এটা বিশেষ করে পেন্টেকস্টাল এবং ক্যারিশম্যাটিক খ্রিস্টানদের দ্বারা অনুশীলন করা হয় ।) , কাল্পনিক হারমেটিক ( দুর্বোদ্ধ ভাষা ) এবং স্ক্যাটালজিকাল ( মলত্যাগ বিষয়ক ) শব্দের খেলা রয়েছে। ‘আতো দ্য মোমো’-র প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে নিজের অঙ্গ, এবং পৌরাণিক ঐতিহ্যের মধ্যে সৃষ্টির ভূমিকা । আতোর কবিতাগুলো মাংস ও মলমূত্রকে মহিমান্বিত করে, কিন্তু যৌনতা তাঁর জন্য ছিল সর্বদাই ত্যাজ্য। অজাচার, নরমাংস খাওয়া এবং আত্মহত্যা কবিতার স্বাভাবিক প্ররোচনা, যা সভ্য পশ্চিমা মানুষের দ্বারা নিশ্চিহ্ণ করে দেয়া উপজাতীয় সংস্কৃতির কার্যকলাপ দ্বারা প্রমাণিত । সভ্যতা এতটাই ক্ষতিকর যে ইউরোপ মেক্সিকোর মতো একসময়ের গর্বিত উপজাতীয় দেশগুলিকে অবক্ষয় এবং মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে গেছে, মাংসের পবিত্রতাকে পৃথক করে ঈশ্বরের মন্দ দিয়ে বিষাক্ত করেছিল ইউরোপ। অনিবার্য শেষ পরিণতি হবে আত্ম-ধ্বংস এবং মানসিক দাসত্ব, যে দুটি মন্দ তাঁর নিজের জীবনে প্রচণ্ড যন্ত্রণা ও কারাবাস ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি। এইভাবে তিনি রাজনীতি এবং মার্কসবাদকে সর্বান্তকরণে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যার ফলে পরাবাস্তববাদীরা তাকে বহিষ্কার করেছিল।
আতো শিল্পের অসম্ভবতা উপস্থাপন করেন। তাঁর অস্বাভাবিক নকল, দ্য মোমোর সাথে তাঁর টানাপোড়েন সম্পর্কটাকে দৈহিক এবং আধিভৌতিক এবং মূলত চিন্তাভাবনা, অভিজ্ঞতা এবং মানসিক অসুস্থতার চারপাশে পরস্পরবিরোধী সত্যকে তুলে ধরে। তিনি দেখান সাইকোথেরাপি এবং ফার্মাকোলজির দ্বৈতবাদের বাইরেও একটি জগত রয়েছে। কিন্তু তা দেহের অনিবার্যতার সত্য, আমাদের দেহের অনিবার্য ভাঙ্গন, তিক্ততা দূর করে না। যেহেতু স্কিৎসোফ্রেনিয়ার আধিভৌতিক দিকগুলির বিষয়ে কোনও ঐক্যমত হতে পারে না, তাই আভাঁ গার্দ ধারাবাহিকভাবে "পাগলামি"কে গুরুত্ব দিয়েছে, যেমন ঘটেছে সালভাদর দালি, ফ্রিদা কাহলো, পিকাসোর পেইনটিঙের ক্ষেত্রে।
আট
‘আতো দ্য মোমো’ থেকে একটা অংশের অনুবাদ এখানে দিচ্ছি যাতে পাঠক অঁতনা আতোর কাব্যকৃতির সঙ্গে পরিচিত হন
মাটির সাথে মিশে যাওয়া গলিত শবের চাকা লাগানো জমিতে,
গলিত শবের শ্বাসপ্রশ্বাসের জমিতে
এই শূন্যতার,
শক্ত এবং নরমের মধ্যে।
.
কালো, বেগুনি,
অনমনীয়
বিনোদনমূলক
এবং এটাই সবকিছু।.
.
যার মানে হলো একটা হাড় রয়েছে,
কোথায়
সৃষ্টিকর্তা
বসলেন কবির ওপর,
তার বাক্যগুলোর
গ্রাহীক্ষমতা মুছে ফেলার জন্য
যেন মগজটা পাদছে
যে সে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে তার ভোদার ভেতর থেকে বের করে আনে,
যে সে তার ভেতর থেকে বের করে আনবে
যুগের তলানি থেকে,
তার ভোদার গর্ত পর্যন্ত,
আর এটা ভোদা সম্পর্কে কোনো কৌতুক নয়
যে সে তার উপর এভাবেই খেলতে থাকে,
এটা সমগ্র পৃথিবীর কৌতুক
যার অণ্ড আছে
তার পুরুষালি ভোদার ভেতরে
আর যদি আপনি ছবিটা বুঝতে না পারেন,
--আর সেই কথাই আমি আপনাকে বলতে শুনছি
বৃত্তের মধ্যে,
যে আপনি ছবিটা টের পাবেন না
যা একেবারে তলার দিকে
আমার ভোদার গর্তে,--
তার কারণ আপনি অতলের কথা জানেন না,
জিনিসপত্রের নয়,
তা আমার ভোদার,
আমার,
যদিও যুগের তলানি থেকে
আপনারা সবাই সেখানে গোল-চক্কোর মেরে জিভ দিয়ে চাটছেন
যেন একজন পরকীয়াকে গালাগাল দিচ্ছেন,
বন্দী করে মৃত্যুদণ্ডের ষড়যন্ত্র কষছেন।
গে রে ঘি
রেগহেঘি
গেঘেনা
এ রেঘেনা
আ গেঘা
রিরি
পোঁদ আর শার্টের মধ্যে,
বীর্য আর জুয়ায় কম বাজির মধ্যে,
সদস্য আর হেরো লোকের মধ্যে,
ঝিল্লি আর ব্লেডের মধ্যে,
নরুন এবং ছাদের মধ্যে,
শুক্রাণু এবং বিস্ফোরণের মধ্যে,
'মাছের কাঁটা আর এবং 'শিকনির মাঝে
পোঁদ এবং প্রত্যেকের মধ্যে
খিঁচুনি
চেপে দেবার ফাঁদ
একটা বীর্যপাত মৃত্যুর হইচই
একটা বিন্দু নয়
বা একটা পাথরও নয়
আবদ্ধ এলাকায় মরে ফেটে যাওয়া
বা আত্মার বিচ্ছিন্ন অংশও নয়
(আত্মা জিনিসটা পুরানো করাত ছাড়া আর কিছুই নয়)
বিচ্ছিন্নতার শ্বাসের
কিন্তু ভয়াবহ কালহরণ
ধর্ষিত, ডানা-ছাটা, পুরোপুরি চুষে ফেলা
সমস্ত অস্বচ্ছল ক্যারদানি করে
গুমাখা লোকগুলোর
বেঁচে থাকার জন্য
যাদের খাবার মতন আর কোনো খোরাক ছিল না
আতোকে
গিলে ফেলা ছাড়া
মোমো
আমার তুলনায়
সেখানে, যেখানে একজন তাড়তাড়ি সঙ্গম সেরে ফেলতে পারে
আমার চেয়ে
দ্রুত ঠাটিয়ে তুলতে পারে
আমার অভ্যন্তরে
যদি সে তার মাথা রাখার যত্ন নিয়েছে
সেই হাড়ের বাঁকের ওপরে
যা মলদ্বার আর লিঙ্গের মাঝে থাকে,
যে কোদাল হাড়ের কথা আমি বলছি
একটা স্বর্গের
আঁস্তাকুড়ের মধ্যে
পৃথিবীতে যার প্রথম প্রতারণা
বাবা বা মা ছিল না কেউ
কে তোমাকে এই গুহায় এনে ফেলেছে,
কিন্তু
আমি
আমার উন্মাদনায় জড়িয়ে গেছি।"
ওরা এটারই অনুশীলন করে।
যদি কোনো ডাক্তার না থাকত
তাহলে কোথাও কখনো রোগী হত না,
রোগাক্রান্ত কঙ্কালদের
মেরে ফেলে কাটাছেঁড়া আর চামড়া ছাড়াবার জন্য,
কেননা সমাজ আরম্ভ হয়েছে ডাক্তারদের মাধ্যমে
রোগীদের মাধ্যমে নয়।
যারা বেঁচে থাকে, তারা মৃতদের জিনিসপত্র খেয়ে বাঁচে।
আর এর জন্য জরুরি যে একইভাবে মৃত্যুও বেঁচে থাকুক;
আর উন্মাদ আশ্রমের মতন কিছুই নেই যা শান্তভাবে পালন করবে
মৃত্যুকে , এবং মৃত মানুষদের ইনকিউবেটরে পুরে রাখবে।
নয়
ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য অঁতনা আতো ধ্বংসাত্মক নন, তিনি জানতেন তিনি মরণশীল, তাই দগ্ধ করার ভাষায় লিখে গেছেন, ধূমায়িত রেডিয়াম মাছের ধোঁয়ার মতো। এই দৃষ্টান্তে রেডিয়াম, ওপর থেকে চাপানো ঝামেলা হিসাবে নয়, শক্তি হিসাবে, যা মানুষের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা থেকে উদ্গত হয়। যদিও প্রায় ক্রমাগত শারীরিক যন্ত্রণার মধ্যে – তিনি যখন পাঁচ বছর বয়সে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, এবং মাথাব্যথা তাঁর বাকি জীবন ধরে চলতে থাকে—-এবং মানসিক যন্ত্রণা, তিনি একচল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত যুক্তিসঙ্গতভাবে কাজ করেছিলেন, যখন বেশ কয়েকটি মানসিক ঘটনা তাঁকে বিপর্যস্ত করেছিল, বিশেষ করে মানসিক হাসপাতালে বন্দী করা, যাকে "অনিরাময় প্যারানয়েড প্রলাপ" হিসাবে বর্ণনা করা হয়, তাতে ভুগেছিলেন এবং সেই আশ্রয় ছেড়েছিলেন কেবল অন্য আরেকটিতে প্রবেশ করার জন্য। সব মিলিয়ে, তিনি বাহান্ন বছরের মধ্যে প্রায় পনেরোটি এক বা অন্য ধরণের চিকিৎসালয়ে বন্দীর জীবন কাটিয়েছেন ।
মানসিক ভারসাম্যহীনতা আর চিকিৎসালয়ের বন্দীজীবন সত্ত্বেও আতো যথেষ্ট লেখালিখি করতে পেরেছিলেন। তাঁর লেখাগুলো ফরাসি সংস্করণে ২৬টি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একজন অভিনেতা হিসাবে প্রশিক্ষিত ছিলেন, এবং ফিল্ম পরিচালনা করেছিলেন, নিজের অভিনয়-মঞ্চ খুঁজে পেয়েছিলেন এবং দ্য থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটি হিসাবে সংগৃহীত দূরদর্শী তাত্ত্বিক প্রবন্ধগুলির একটি সেট লিখেছিলেন, যা আজও নাট্য অনুশীলনকারীদের প্রভাবিত করে চলেছে। তিনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন । বহুমুখী প্রতিভা বলতে যা বোঝায় তাই ছিলেন তিনি । তিনি পরাবাস্তববাদীদের একজন প্রাথমিক সদস্য এবং গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় গবেষণা ব্যুরোর পরিচালক ছিলেন। দুই বছর পর আঁদ্রে ব্রেতঁ তাঁকে গোষ্ঠী থেকে বের করে দেন–-প্রায় সকল সদস্যকে তাড়াতাড়ি বা পরে বহিষ্কার করা হয়েছিল—-কিন্তু ব্রেতঁ পরে অনুতপ্ত হয়েছিলেন, আতোকে একজন "উদ্ভাবনী মানুষ" এবং “সম্ভবত সবার মধ্যে সত্যিকারের পরাবাস্তববাদী” বলে অভিহিত করেছিলেন।
অভিব্যক্তির অন্তর্নিহিত স্তর আতোর জন্য প্রাথমিক ছিল আর শিল্পীর গভীর, অত্যাবশ্যক চরিত্রের যোগাযোগের জন্য প্রযুক্তিগত নির্বাহ ছিল গৌণ। তাঁর পরবর্তী কাজগুলোতে, এই দর্শনটি জটিল হয়ে উঠেছে কারণ তিনি কখনও কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে প্রথম রচনাকেই ব্যবহার করতেন, কোনো পরিশীলন করতেন না।মনে হয় অভিব্যক্তির শক্তি পরীক্ষা করে চলেছেন আজীবন। এই পদ্ধতিটি তাঁর তথাকথিত "বানানো", টেক্সট এবং চিত্রের মিশ্রনে সর্বোত্তম অভিব্যক্তি খুঁজে পেয়েছিল যা আতো ১৯৩৭ সালে আয়ারল্যান্ড ভ্রমণের সময় একটি স্নায়বিক বিপর্যয়ের পরে তৈরি করতে শুরু করেছিলেন। আতোর কাজকে পরে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলে, তাঁর ডাক্তার মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ হিসাবে “বানানো” কাজগুলো উল্লেখ করেছিলেন। দেশলাই আর সিগারেট দিয়ে পোড়ানো এবং ক্রস, ইনফিনিটি চিহ্ন এবং অন্যান্য বিমূর্ত চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা, কাগজের এই নৃশংস টুকরোগুলোতে লুকিয়ে আছে আতোর, তীব্র আর্তনাদ। কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে আতোর কাজগুলো - একই সাথে ভয়ঙ্কর এবং সুন্দর - তাঁর বিপর্যস্ত জীবন যাপনের খতিয়ান । যেন তাঁর প্রতিস্ব কাগজের পৃষ্ঠায় জ্বলছে । জীবনের শেষের দিকে এসে নিজেকে এবং নির্যাতিত উথালপাথালদের সমন্বয় করার চেষ্টা করে গেছেন।
৬ এপ্রিল, ১৯৩৩ তারিখে, রেনে অ্যালেন্ডির আমন্ত্রণে, অঁতনা আতো ‘দ্য থিয়েটার অ্যান্ড দ্য প্লেগ’ নামের অদ্ভুত শিরোনাম দিয়ে সোরবোনের দর্শকদের কাছে একটি সম্মেলনের প্রস্তাব দেন। সেখানে যে অনুষ্ঠানটি হতে চলেছে তার পূর্বাভাস কেউ দেয়নি, ফলে তার কোনো নথিপত্র নেই। একমাত্র প্রমাণ যা আছে তা আনাস নিনের ডায়েরির লিখন । ডায়রিতে নিন লিখেছিলেন “অ্যালেন্ডি এবং আতো একটা বড় টেবিলের পিছনে বসে ছিলেন। অ্যালেন্ডি আতোর সাথে শ্রোতা-দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন। ঘর শ্রোতায় ছিল ঠাশাঠেশি। সোরবোন মঞ্চে বসে আতো কী বলবেন তা ভুলে যান আর কোনো শব্দ বেরোয় না তাঁর মুখ থেকে । তিনি কোথায় বসে আছেন তা ভুলে গিয়েছিলেন, ভুলে গিয়েছিলেন সম্মেলনের কথা। থিয়েটার, তাঁর পাশের ডক্টর অ্যালেন্ডি, উপস্হিত দর্শক, তরুণ ছাত্র, শিক্ষক এবং মঞ্চ পরিচালকদের কথা ভুলে গিয়েছিলেন। তাঁর মুখে যন্ত্রণার খিঁচুনি দেখা দেয় এবং তাঁর চুল ঘামে ভিজে ওঠে। চোখ বিস্ফারিত, পেশী শক্ত, আঙ্গুলগুলোর নমনীয়তা বজায় রাখতে লড়াই করছেন । হঠাৎ হাউমাউ করে উঠলেন । স্বগত প্রলাপ বকতে লাগলেন। যেন তিনি প্রত্যক্ষ করছেন তাঁর মৃত্যু ঘটছে, যেন ক্রুশবিদ্ধ হবার প্রতিনিধিত্ব করছেন। উপস্হিত দর্শকদের দমবন্ধ হতে থাকে। তারা হাসতে হাসতে ফেটে পড়ে। সবাই হাসছিল ! শেষে লোকজন এক-এক করে বেরিয়ে গেল, চেঁচামেচি করে, প্রতিবাদ করে। চলে যাওয়ার সময় তারা দরজায় লাথি মারতে মারতে বেরিয়ে গেল। কিন্তু আতোর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।” অঁতনা আতোকে ( ১৮৯৬ - ১৯৪৮ ) কোনো একটা নির্দিষ্ট খোপে ফেলে আলোচনা করা কঠিন । যদিও তাঁর নাম সাধারণ পাঠকেরা বিশেষ জানে না তিনি থিয়েটার, সমালোচনা এবং শিল্পকলার উপর প্রগাঢ় প্রভাব ফেলতে সফল হয়েছেন, যাঁরা তাঁর নাম শোনেনি তারাও তাঁর দ্বারা প্রভাবিত ।
দশ
১৯৩৭ সালের আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে, আতো আয়ারল্যান্ডে গিয়েছিলেন আসন্ন সর্বনাশের প্রস্তুতি বা সাক্ষী হতে। তাঁর গন্তব্য ছিল ইনিশমোর, তিনটি আরান দ্বীপপুঞ্জের একটি (সাধু ও পণ্ডিতদের দ্বীপ হিসেবে খ্যাত )। সম্ভবত আতো ভাবছিলেন যে সময়ের শেষ কালখণ্ডে আটলান্টিকের তরঙ্গের সাথে পূর্ব দিক বিধ্বস্ত হবে। তিনি নিজের সঙ্গে একটা বেতের ছড়ি নিয়ে ঘুরতেন যা তাঁর মতে ছিল যিশু খ্রিস্ট এবং সেন্ট প্যাট্রিক-এর। আয়ারল্যান্ডে থাকতে আতো ফ্রান্সের বেশ কয়েকজন শিল্পী ও লেখককে পোস্টকার্ড এবং চিঠি লিখেছিলেন, যার মধ্যে পরাবাস্তববাদী আন্দোলনের নেতা আঁদ্রে ব্রেতঁও ছিলেন ।
আয়ারল্যান্ডে ঘুরে বেড়াবার সময়, আতো ইওগানাচটের বিচ্ছিন্ন গ্রামে এবং কিলরোনান, গালওয়ে, কোব আর ডাবলিনে সময় কাটিয়েছিলেন। মনে হয় তিনি আয়ারল্যান্ডে তার পুরো সময়টা কাটিয়েছিলেন কোনো টাকাকড়ি ছাড়াই। ডাবলিন পুলিশের সাথে তাঁর বেশ কয়েকদিন ক্রুদ্ধ ঝগড়া হয়েছিলখ। তাঁকে সম্ভবত একজন ভবঘুরে হিসেবে মারধর করা হয়েছিল। তাঁকে ডাবলিনের মাউন্টজয় কারাগারে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। সদুত্তর দিতে পারেননি বলে একজন অবাঞ্ছিত বিদেশি হিসাবে আয়ারল্যান্ড থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। আসলে খুব কম ইংরাজি এবং গ্যালিক বলতে না পারায় তিনি নিজেকে বোঝাতে পারেননি । প্যারিস দূতাবাস থেকে একটা পরিচয়পত্র ছিল তাঁর কাছে । আইরিশ সরকারী নথি অনুযায়ী তাঁর বেশিরভাগ সময় একটা হোটেল ঘরে কেটেছিল যার জন্য তিনি খরচ মেটাতে পারেননি। জেসুইট সম্প্রদায়ের মিলটাউন হাউসের মাঠ থেকে তাঁকে জোর করে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়, কিন্তু আতো চলে যেতে অস্বীকার করেন।আয়ারল্যাণ্ড থেকে নির্বাসনের আগে তিনি কিছু সময়ের জন্য কুখ্যাত মাউন্টজয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। নির্বাসনের সময়ে তাঁর দুই হাত বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ।
১৯৪৩ সালে, যখন ফ্রান্স জার্মানি এবং ইতালির দখলে ছিল, তখন রোবের ডেসনোস আতোকে ভিচি অঞ্চলের অভ্যন্তরে রোদেজের মানসিক হাসপাতালে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করেছিলেন, যেখানে তাকে ডাঃ গ্যাস্টন ফেরডিয়ারের দায়িত্বে রাখা হয়েছিল। রোডেজে আতোকে ইলেক্ট্রোশক শক আর্ট থেরাপি করা হয়েছিল। চিকিৎসক বিশ্বাস করতেন যে আতোর যাদুমন্ত্র তৈরি করা, জ্যোতিষের চার্ট তৈরি করা এবং অদ্ভুত ছবি আঁকার অভ্যাস মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ। আতো অন্যদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু করেন। আতো ইলেক্ট্রোশক চিকিৎসার নিন্দা করতেন এবং ক্রমাগতভাবে তাদের বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করতেন। তিনি ডাক্তারদের অনুরোধ করতেন যে তাঁকে “তার বান ফিরিয়ে দেয়া হোক”।আলোচক আলেকজান্দ্রা লুকস লিখেছেন যে "তাঁর নামের 'পুনরুদ্ধার'" সম্ভবত "স্বাস্থ্য সম্পর্কে তাঁর ডাক্তারদের ধারণাকে শান্ত করার একটা কারসাজি"। এই সময়েই আতো আবার লিখতে এবং আঁকা শুরু করেন, দীর্ঘ সুপ্ত সময়ের পর। ১৯৪৬ সালে, ফার্ডিয়ের আতোকে তাঁর বন্ধুদের কাছে দিয়ে আসেন, যারা তাঁকে আইভরি-সুর-সেইনের সাইকিয়াট্রিক ক্লিনিকে ভর্তি করে দেন।এই ক্লিনিকে বন্ধুরা তাঁকে আবার লিখতে উৎসাহিত করেন, যেকারণে নিজের কাজের প্রতি আগ্রহ আবার জেগে ওঠে। তিনি প্যারিসের অরেঞ্জেরিতে ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের একটা প্রদর্শনী দেখতে যান এবং"ভ্যান গগ, দ্য ম্যান সুইসাইডেড বাই সোসাইটি" প্রবন্ধটা লেখেন। ১৯৪৭ সালে, ফরাসি ম্যাগাজিন K এটি প্রকাশ করে।
১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে, আতোর মলদ্বারে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এর দিন কয়েক পরে, ৪ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে প্যারিসের দক্ষিণ-পূর্ব শহরতলির আইভরি-সুর-সেইনের একটি মানসিক ক্লিনিকে তিনি মারা যান। তাঁকে এস্টেটের মালী প্রথম দেখতে পান। আতো নিজের বিছানার পাশে একটা জুতা হাতে চুপচাপ বসে আছেন। সন্দেহ করা হয়েছিল যে তিনি মাদক ক্লোরাল হাইড্রেটের বেশি ডোজ নেবার দরুন মারা গিয়েছেন। নীটশে এবং বুদ্ধের মতো, অঁতনা আতো দুঃখকে অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য হিসাবে দেখেছিলেন এবং একজন সম্পূর্ণ মানুষ হওয়ার জন্য যে মূল্য দিতে হয় তা তিনি জানতেন। তিনি সমস্ত ইউটোপিয়াকে অনিবার্য ডিস্টোপিয়া হিসাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন