রবিবার

সুবিমল বসাক-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তন্ময় ভট্টাচার্য

 মুখোমুখি সুবিমল বসাক : প্রশ্নে তন্ময় ভট্টাচার্য

স্থান – বেলঘরিয়া, 04.11.13. সন্ধ্যা।

প্রশ্ন – আপনাদের হাংরি আন্দোলন যে হয়েছিলো,সেটা তো প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার, মানে সচরাচর যা হয়ে আসছে তার বিরুদ্ধে যাওয়ার। কিন্তু এখনকার দিনে যে রাজনীতিক,কবি নিজেদের ‘আলাদা’ বলছে, বা হাংরি জেনারেশানের যে নতুন কিছু করার চিন্তা, সেটাও কি একটা নতুন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাঁধা পড়ে যাওয়া নয়?

উত্তর – আসলে সেই ষাট দশকের ব্যাপারটা ছিলো অন্য। তখন প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা আমরা লেখার মাধ্যমে করতাম। প্রতিষ্ঠান বলতে তো তখন আনন্দবাজার ছিলো, বড়ো কাগজ ছিলো,ওরই এগেইন্সটে; যারা পুরো সাহিত্যের ব্যাপারটাকে হাতের মুঠোয় রেখেছিলো,তার এগেইন্সটে। পরবর্তীকালে আমরা দেখেছি যে রাজনীতিকও একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই প্রতিষ্ঠান আরো সাংঘাতিক। তারা তো নিজেদের দলভুক্ত লোক ছাড়া কারোর কথাই শোনে না,তারাই সব,তারাই শেষ। তারা সবকিছু বোঝে বেশি করে,সব দেখে ফেলে। অথচ তাদের যে এত ছিদ্র হয়েছে সেটাও ওদের ধরিয়ে দিলে ওরা...মানে তুমি যে বললে না ‘ক্ষেপচুরিয়াস’, ওই ক্ষেপচুরিয়াস হয়ে যায়।

প্রশ্ন – আচ্ছা,এই প্রতিষ্ঠান বিরোধীদের বাংলা সাহিত্যে অবদান কী? এটা কি একরকম স্ট্যান্টবাজি নয়?

উত্তর – প্রতিষ্ঠান বিরোধী যারা, তাদের তো বাংলা সাহিত্য ইতিহাস তো কোনো কাজেই লাগছে না। তারা তো নিজের মতো লিখছে। আর আমি দেখেছি ,যারা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে,তাদের মোটামুটি একটা তৈরি ফর্ম রয়েছে – এইরকম হবে,ওইরকম হবে – কাহিনী এইরকম,গল্প এইরকম – নিজেদের একটা প্যাটার্নে বেঁধে ফেলেছে। প্রতিষ্ঠান বিরোধীরা তো এগুলোর কিছুই মানে না,কাজেই তাদের আর কি এসে যায়!

প্রশ্ন – আচ্ছা,আজকাল অনেকে বলে,সাফল্য একপ্রকার ফুক্কুরি হয়ে গেছে,মানে আসবে যাবে এরকম।

উত্তর – সাফল্যটা কি ব্যাপারে?

প্রশ্ন – ধরুন সাহিত্যের ক্ষেত্রে বা রাজনীতির ক্ষেত্রেই... যারা প্রতিষ্ঠান বিরোধী বা প্রতিষ্ঠানমুখী,উভয়েই কি সাফল্য কামনা করে না নিজের নিজের ক্ষেত্রে?

উত্তর – না সেরকম কোনো মানে নেই। আমরা যেমন সাফল্য কামনা করি না। আমাদের তো লেখা ছাপাও হয় না। যদিও আমি একটা পুরস্কার পেয়েছি অনুবাদে,সে অনুবাদ তো নিজের ইয়ে নয়,খালি ভাষা দিয়ে তরজমা করে দেয়া। আর সাফল্য কোনো ব্যাপার না। কেউ এলো,কেউ গেলো,তাতে কিছু এসে যায় না। সাফল্য যাদের আসে, তাদের সাহিত্যে সাথে অর্থ আগমন হয় আর কি! তাদের টাকা-পয়সা আসবে,তাদের কয়েকটা বই বেরুবে,এই ধরণের ব্যাপারগুলো সাফল্য। আমাদের সেরকম কোনো ইচ্ছেও নেই,উদ্দেশ্যও নেই,ভাবিও না এই ব্যাপার নিয়ে।

প্রশ্ন – তাহলে আপনারা যখন হাংরি-তে সেই ষাটের দশকে এসেছিলেন,তখন আপনারা নতুন একধরণের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলেছিলেন, যে লালিত্য চলছে,সেটাকে বদলে নিজের মতো করে বদলে রূঢ় বাস্তব কে প্রকাশ করা...

উত্তর – যে যা লিখছে সে সেইরকমই লিখে যাচ্ছে,আর সেটাকেই তার সাহিত্য বলে মনে করা হয়।

প্রশ্ন – কিন্তু আপনাদের নিজস্ব চিন্তায় কি প্রতিষ্ঠা বা সাফল্যের কামনা জাগেনি সেইসময়? যে আমাদের চিন্তাটাও প্রতিষ্ঠিত হোক?

উত্তর – সেটা অন্য ব্যাপার। আমরা লিখছি কী জন্যে? লেখাটা ছড়িয়ে যাওয়ার জন্যেই তো? সকলে যাতে পড়ে,বুঝুক যে একটা অন্য ধরণের লেখা। বা আমরা একটা অন্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে লিখছি। বা আমাদের সাহিত্যসৃষ্টি একটু অন্য ধরণের। সকলে,এর আগে যারা লিখে গেছে,সেরকম নয়। দ্যাখো, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা বলতে,ছাপানোটা খুব বড়ো ব্যাপার নয়। সতীনাথ ভাদুড়ী কিন্তু প্রতিষ্ঠান বিরোধী। ছেপেছে বড়ো কাগজই; দেশ-এই ধরণের পত্রিকায়। আবার দ্যাখো, প্রতিষ্ঠান বিরোধী বলে কেউ সহজে তাদের গ্রহণও করছে না। তুমি বলতে পারো, উনি তো বড়ো বড়ো পুরস্কার পেয়েছেন,সবই ঠিক আছে। সেইরকমই,যদি মনে করো,আমাদের লেখাটাও প্রাতিষ্ঠানিক, হলে হবে! সে তো আমাদের জীবদ্দশায় হবে না, তাও কমার্শিয়াল ভ্যালু-তে কেউ যদি করে! কারণ আমার মনে আছে,আমরা যখন হাংরি লিফলেট-টা বার করি,পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। আমার কাছে অনেক ছিলো,ফেলে দিয়ে এলাম একজনার বাড়িতে। পরে ওই বইগুলো বিক্রি হয়েছে; যারা ব্যবসা করে,তারা অনেকগুণ দাম দিয়ে বিক্রি করেছে। এটাকে তুমি কী বলবে? আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপার? তা নয়।

প্রশ্ন – আচ্ছা,নেটে দেখলাম,হাংরি আন্দোলনের লিফলেটের অষ্টম সংখ্যায় আপনার লেখা প্রথম বেরিয়েছিলো,আর সেটাই অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলো। সেটাই কি প্রথম হাংরি লেখা আপনার?

উত্তর – না। আমার যেটায় বেরিয়েছিলো,তাতে সকলেরই ওইরকম লেখা ছিলো।

প্রশ্ন – আচ্ছা আপনি তো বোধহয় কবিতার থেকে গদ্য বেশি লিখেছেন?

উত্তর – গদ্যই লিখি। কবিতা মাঝেমাঝে। কিন্তু আমি গদ্যকার আর কি। আমরা তিনজন গদ্যকার ছিলাম। একজন হলো বাসুদেব দাশগুপ্ত। খুব শক্তিশালী। ওকে কেউ পাত্তা দেয়নি এখানে, ও-ও অবশ্য পাত্তা দেয়নি কাউকে। তারপর সুভাষ ঘোষ। বাসুদেবের লেখা পেলে পড়ো।

প্রশ্ন – হাংরি রচনা সংকলনে পাবো কি?

উত্তর – হ্যাঁ হ্যাঁ। ওটা বোধহয় শৈলেশ্বর ঘোষ করেছে। আমাদের হাংরি আন্দোলন যখন শেষ হয়ে যায়,ওরা আলাদাভাবে ‘ক্ষুধার্ত’ বের করে।

প্রশ্ন – পঁয়ষট্টি সালে যখন মলয়বাবু জেল থেকে মুক্তি পেলেন,আপনারা নির্দোষ প্রমাণিত হলেন,তারপরেও কি সবার সাথে যোগাযোগ ছিলো?

উত্তর – বোধহয় ছেষট্টি কি সাতষট্টি সালে মলয় বলল যে ‘আমি হাংরি জেনারেশানে শেষ’, ও তখন লেখালিখি ছেড়ে দিলো। আর আমরা তখন একেবারে অদ্ভূত অবস্থার মধ্যে কাটালাম। এদিকে সুভাষ,শৈলেশ্বর এরা সব আলাদা ‘ক্ষুধার্ত’ শুরু করলো।

প্রশ্ন – ইতিহাস যা বলে,উনারাই তো মুচলেকা দিয়েছিলেন রাজসাক্ষীর?

উত্তর – অনেককিছুই করেছিলো। শৈলেশ্বর ঘোষ তো শঙ্খ ঘোষের কথানুসারে কাজ-টাজ করতেন। তা আমরা ওকে বলতাম শঙ্খ ঘোষের ইয়ে আর কি! শঙ্খ ঘোষও ওদের অনেকই... শঙ্খ ঘোষের দৌলতে উনার বই-টই বেরিয়েছে, ক্ষুধার্ত সংকলন বেরিয়েছে। ওই পাবলিশার কিন্তু কখনো আমাদের জিজ্ঞেস করেনি। এইভাবে ওরা ওদের দিকে গেলো, আমরা আমাদের দিকে। এরপর মলয় যখন এলো, তখন আর হাংরি জেনারেশান নেই।

প্রশ্ন – আপনাদের আবার মনে হয়নি,পুরানো-রা যারা হাংরি আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলো,তাদের দিয়ে যদি আবার শুরু করা যায় নতুন করে?

উত্তর – চেষ্টা করেছিলো মলয়। পঁচাশি সালে এসে দেখাসাক্ষাৎ-ও করেছিলো,কেউ তেমন উৎসাহ দেখায়নি। তারপর মলয় পোস্টমডার্ন আন্দোলন শুরু করলো।

প্রশ্ন – তাতে কি সঙ্গী যথেষ্ট পেয়েছিলেন মলয়বাবু? কারণ এই আন্দোলন হাংরি-র মতো অতোটা নাম কাড়েনি।

উত্তর – না এটার কারণ আছে। পোস্টমডার্ন আন্দোলন তো বাইরের আন্দোলন। বিদেশীদের। সেই আন্দোলন ইন্ডিয়াতে করার ফলেই হোক বা যে কারণেই,ওটা হয় নি। কিন্তু গল্পের প্যাটার্ন পাল্টে দিয়েছিলো পোস্টমডার্নে মলয়। সকলেই নিজস্ব একটা শৈলী তৈরি করে ফেলেছিল। মলয়ের গদ্যের একটা আলাদা স্টাইল আছে। কবিতার তো আছেই। তবে আমি বোধহয় প্রতিটা গল্পে বা প্রতিটা গদ্যে পাল্টাতে থাকি। নতুন বিষয়,নতুন আঙ্গিক এমনকি নতুন ভাষায়ও। যেমন ‘ছাতামাথা’-টা হচ্ছে পূর্ববঙ্গের ভাষা। আবার ধরো ‘গেরিলা আক্রোশ’ – এইটা আবার পশ্চিমবঙ্গের ভাষায়। ‘প্রত্নবীজ’-টা বিহারের বাঙালিদের ভাষায়... যারা অনেকদিন হিন্দিভাষী অঞ্চলে রয়েছে,তাদের। তাছাড়া আরেকটা আছে,যারা এখানকার বিহারি, এখানে এসে থেকে গেছে,তাদের একটা অন্যরকম ভাষা।

প্রশ্ন – আচ্ছা,পড়েছিলাম, বিনয় মজুমদার একসময় হাংরি তে ছিলেন। আপনি কি উনাকে পেয়েছিলেন? না উনি আগেই ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন?

উত্তর – সে একেবারে প্রথম দিকে।

প্রশ্ন – উনার যতগুলো লেখা পড়েছি, হাংরির লেখা যেমন পড়লে চেনা যায়,সেরকম তো কোনো লেখা পাইনি।

উত্তর – আসলে সকলে ভাবে যে সেক্স নিয়ে লিখলেই বোধহয় হাংরি হয়। পড়েইনি হয়তো, বলে বসবে – ‘ও হাংরি! তাহলেই সেক্স নিয়ে লেখা।‘ সে অদ্ভূত ব্যাপার। বিনয়ের একটা বই আছে, নামটা সম্ভবত ‘বাল্মীকির কবিতা’, ওটায় ‘ভুট্টা সিরিজ’ আছে। ‘ফিরে এসো চাকা’র অনেক পরে। তারপরে ওই ‘বাল্মীকির কবিতা’ বইটা বিশ্ববাণী বের করে। হইচই হয়, অনেকে বারণ করে,বাধা দেয়, তাই পরে ও ওটাকে বাদ দিয়ে বের করে বইটা।

প্রশ্ন – মলয় রায়চৌধুরী-কে তো আন্দোলনের পুরোধা বলা হয়। উনি প্রতিষ্ঠান বিরোধীও। তাহলে এখন উনাকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কাগজের কাটিং জমান, বিভিন্ন তথ্য ফাইল আপ করেন, ব্লগেও মলয়বাবুর আপডেট দেখা যায় হাংরি জেনারেশান সংক্রান্ত। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

উত্তর – সেটা মলয়ের ব্যাপার,মলয়ই জানে। আমি বলতে পারবো না।

প্রশ্ন – এখন হাংরি-র কে কে বেঁচে আছেন?

উত্তর – মলয় আছে, ত্রিদিব,প্রদীপ চৌধুরী...সুবো আছে। মলয় ছাড়া কারোর সঙ্গেই যোগাযোগ নেই তেমন । প্রদীপ মাঝেমধ্যে টেলিফোন করে।

প্রশ্ন – সমীর রায়চৌধুরী?

উত্তর – উনি তো হাংরি নন। সমীর রায়চৌধুরীর ব্যাপারটা হলো, হাংরি আন্দোলনের সময় উনি ছিলেন না। দেবী রায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, মলয় – তিনজনে শুরু করেছিলো। সমীরের বন্ধু হলো শক্তি ও সুনীল। একটা কি দুটো সংখ্যায় বোধহয় ছাপা হয়েছিলো সমীরের লেখা। তারপর হাংরির যে সংখ্যা-টা নিয়ে গোলমাল, সেটায় উনার নাম পাবলিশার হিসেবে ছাপা ছিলো। তাকে অ্যারেস্ট করা হয় চাইবাসায়, অফিসে সাসপেন্ড হন।

প্রশ্ন – শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রথম দিকে ছিলেন,পরে সরে গেছিলেন কেন? আপনি পেয়েছিলেন উনাকে?

উত্তর – না না সেইসময় সরেনি। পরে। কফি হাউসের নীচে অনেক... আসলে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একটা চাকরির দরকার ছিলো। এই শুনি আর কি! এখন সমীর রায়চৌধুরীর ব্যাপারটা এমন যে উনিই বুঝি হাংরি শুরু করেছেন। ১৯৬৭ সাল থেকে মলয় অফ, আবার ফিরে আসে ১৯৮৫তে, এই সময়টায় আমি কিন্তু ধরে রেখেছিলাম সমস্ত ডকুমেন্ট। ফাইলও ছিলো আমার বাড়িতে। সুভাষ ঘোষ ওটা মেরে নেয়। আর সমীর রায়চৌধুরী আগাগোড়া কেরিয়ার তৈরি করে অফিসার হয়ে এদিক-ওদিক অনেক যায়।ওর বন্ধু মূলত ছিলো সুনীল, শক্তি, সমরেন্দ্র... ফলে ওর লেখার মধ্যে ওদের ব্যাপারটাই বেশি থাকে। এই তো সেদিন হাংরি জেনারেশান সম্পর্কে একটা সংকলন বেরিয়েছে দেখলাম ‘ চন্দ্রগ্রহণ’ নামে... দেখলাম পুলিশি নথি  - কোর্টে যে সমস্ত সাক্ষী-টাক্ষী হয়েছিলো... সে লেখাগুলো ছিলো আমার। কিন্তু উনি ওটায় লিখেছেন ‘সৌজন্য – হাওয়া’। তা হাওয়া থেকে যে বেরিয়েছে সেটা তো বলবে কোত্থেকে পেয়েছে! তা বলেনি! এটা অদ্ভূত! খ্যাতির বিড়ম্বনা।

প্রশ্ন – অনেক প্রচ্ছদে দেখেছি আপনার আঁকা...

উত্তর – অনেক এঁকেছি,অনেক হারিয়ে গেছে...কিন্তু আমার কয়েকটা বইটই-য়ে আমার আঁকা আছে।

প্রশ্ন – ধরুন, আপনি হাংরি তে ছিলেন, পরে অন্য লেখালিখি শুরু করেন যখন, বাধা পাননি? যে হাংরির লোক এভাবে লেখা চালিয়ে যাচ্ছে...

উত্তর – আমি খুব বেশি তো লিখিনি। অনুবাদ করেছি অন্য পত্রিকায়, কিন্তু দু-তিনটে সিলেক্টেড ছিলো। কবিতীর্থে লিখতাম ,কৌরবে লিখতাম। কে কি বললো,তাতে কিছু এসে যায়? যে লেখার, সে ঠিক লিখবে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে তো অনেকে অনেককিছু বলে, তাতে কী এসে যায় তার?

প্রশ্ন – ওই আদালতের ঘটনার পরে মলয়বাবু কি নিজেই জোর করে চলে গিয়েছিলেন সাতষট্টি-তে? সব সংযোগ ছিন্ন করে চলে যাওয়া?

উত্তর – হ্যাঁ... তারপর মলয় কিছু কাজ করেছিল, কিছু আজেবাজে কাজও করেছিল, যার ফলে ও আর থাকলো না, ভাবলো ওর যাতায়াতে হাংরি জেনারেশান-টা শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু শৈলেশ্বর-রা আবার শুরু করলো। তবে শৈলেশ্বর-দের পেছনে অনেক হাত ছিলো, সহায়ক হাত বলা চলে।

প্রশ্ন – ‘ক্ষুধার্ত’-তে আপনারা লিখেছেন?

উত্তর – না। আমি কখনো লিখিনি। তবে শৈলেশ্বর,সুভাষ,বাসুদেব দাশগুপ্ত,প্রদীপ চৌধুরী – ওরা লিখেছে তো!

প্রশ্ন – হাংরি তে সুনীল শঙ্খ শক্তি এদের মানসিক সহযোগিতা ছিলো?

উত্তর – মানসিক ভাবে অনেকেই ছিলো। শঙ্খ ঘোষ কোনোকালেই ছিলেন না। উনার সঙ্গে প্রথম দিকে আমার দু-একবার যাতায়াত হয়েছিলো,সেটা সতীনাথ ভাদুড়ির সম্পর্কে লিখি,সেই সময়। তারপর কোনো একটা কারণে যোগাযোগ নেই,আর আমিও যাইনি। আমার এখানে সিনিয়ার-দের সঙ্গে খুব বেশি আলাপ নেই। একমাত্র আলাপ ছিলো বা পছন্দ করতাম শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-কে। তার লেখার জন্যে। তার রাজনীতিবোধ অন্যরকম ছিলো। সুনীল দা’র সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিলো সেইসময় কয়েকবার...তারপর আর...

প্রশ্ন - আচ্ছা তখনকার দিনে যে বড়ো বড়ো পত্রিকা ছিলো,তারা হাংরি-র লেখা নিতো না কেন? জাস্ট সাহিত্য হয়নি বলে,না অশ্লীল বলে?

উত্তর – নিতো না তো তুমি কি গিয়ে জিজ্ঞেস করবে ‘কেন নেননি মশাই আমার গল্প?’ তা তো হয় না! অমনোনীত,ব্যাস! আর সবচেয়ে বড়ো কথা,পাঠাইও নি। জানতাম এটা ছাপবে না... পুরোনো সংখ্যা দেখে-টেখে... তবে হাংরির বাইরে প্রথম লেখাটা বোধহয় আমি ‘গল্প কবিতা’-তে দিয়েছিলুম। পরে সেই পত্রিকায় সুভাষ লেখে,বাসুদেবও লেখে। পাঠাইনি কোথাও। তখন নিজেরও আমার বিয়ে,বাড়ি,অফিস – নানা ঝামেলা চলছিলো।

প্রশ্ন –আন্দোলন চলাকালীন অফিস ছিলো? কোথায় কাজ করতেন আপনি?

উত্তর – হ্যাঁ।  ইনকাম ট্যাক্স অফিসে।

প্রশ্ন – আচ্ছা,আপনার কি মনে হয়,লেখক-দের সমাজ বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি দায় থাকা উচিৎ ?

উত্তর – সমাজ বা প্রতিষ্ঠান কি আমাদের প্রতি দায় রাখে? এই যে এত লেখা পড়ে রয়েছে,ওরা যদি আমাদের প্রতি দায়বদ্ধ,তাহলে তো ওরা আমার লেখা খোঁজ-টোজ করে ছাপতো। কেন দায়বদ্ধ হতে যাবো আমি?

প্রশ্ন – এখন তো ম্যাক্সিমাম লোক হাংরি আন্দোলন বলতে মলয়বাবুর নামই জানেন, যেহেতু উনি এখনও ফেসবুকে, ব্লগে চূড়ান্ত অ্যাক্টিভ। সেদিক দিয়ে আপনি... একটা লেখায় পড়ছিলাম, মলয় রায়চৌধুরী যখন কেন্দ্রে ছিলেন,সুবিমল বসাক প্রান্তে।*

উত্তর – ও ছিল বাইরে, আমি ছিলাম এখানে। ১৯৬৭ থেকে ও একেবারে আউট অফ বেঙ্গল। এলো পঁচাশি-তে। এই সময়টুকু আমি। মলয় কি করে হয়ে গেল? এটা বলা যায়, হাংরি জেনারেশানের তত্ত্ব মলয় সৃষ্টি করে গেছে।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন