অর্ঘ্য দত্তের প্রশ্ন :
"আজ মলয় রায়চৌধুরীর জেল না হলেও কি উনি হাংরির
মুখ হয়ে উঠতেন? উনি কি ঐ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ এখনও আত্মপ্রচারের জন্য
অপ্রয়োজনেও ব্যবহার করেন বলে মনে হয় না?"
অনুপম মুখোপাধ্যায়ের
উত্তর :
"আমার যতদূর জানা আছে, মলয় রায়চৌধুরীই তো আহ্বায়ক ছিলেন ওই
মুভমেন্টের। বাকিরা অনেকেই পরে ওঁকে ল্যাং মেরেছিল। কিন্তু আজ তারাই হাংরির
খ্যাতিতে ভাগ বসাতে চায়। মলয়দা এখনও দারুণ লিখছেন। মলয়দার যদি জেল না হত,
তাহলে কী হত? জানি না। যেমন জানি না রবীন্দ্রনাথ নোবেল না পেলেও ২৫শে বৈশাখে
ইস্কুল কলেজে ছুটি থাকত কি না। মলয়দা জানেন যদি নিজের অমরত্বের আয়োজন উনি
নিজেই না করে যান, ওঁর হয়ে সেই ব্যবস্থা কেউ করবে না। এটা রবীন্দ্রনাথও করে
গেছেন। বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাত। তার কুলীনতা নেই, অন্তত সেন আমল অবধি। এটা
সম্ভবত একটা সমষ্টিগত মানসিক সমস্যা আমাদের সমাজে। বাঙালির অতীতে যেহেতু
আর্যাবর্তের গৌরব নেই, সে তার অতীত ভুলতেই চায়। এখানে তাই যাঁরা বড় বাঙালি,
তাঁরা নিজেদের স্মৃতিরক্ষার আয়োজন নিজেরাই করে যেতে বাধ্য হন, অন্যথায়
তাঁদের মুছে যেতে হয়। মলয়দা সেটাই করছেন। যদি তিনি অনবরত হাংরি নিয়ে কথা না
বলে যেতেন, দেখতেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ও নিয়ে আলোচনাই হত না। যেমন ফেসবুকে
দেখবেন পবিত্র মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে কোনো কিছু উচ্চারিত হয় না। অথচ
পবিত্রদাও ষাটের দশকে ধ্বংসকালীনের মতো মুভমেন্ট করেছিলেন, ‘কবিপত্র’-এর
মতো পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন অর্ধশতক ধরে। তাঁকে নিয়ে কথা কই? আমি নিজেও
যদি ফেসবুকে নিজের ঢাক তুমুল না বাজাতাম, সম্ভবত আপনি জানতেন না অনুপম বলে
কেউ আছে, বা তার ইন্টারভিউ নেওয়া যায় নিজের কাগজের জন্য।"