হাংরি আন্দোলনকে ফিল্মে খিল্লি করেছিলেন সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় তাঁর বাইশে শ্রাবণ-এ । কোনও প্রয়োজন ছিল না অথচ তিনি গৌতম ঘোষকে একজন হাংরি কবি হিসেবে তুলে ধরলেন যার লেখা নাকি কোথাও ছাপা হয় না আর যার বুদ্ধিবিভ্রম ঘটে গেছে । হাংরি আন্দোলন এই সিনেমায় এসেছে হাংরিয়ালিস্ট কবি নিবারণ চক্রবর্তী’র হাত ধরে। মানসিক বিকারগ্রস্থ এই কবি হাংরি আন্দোলনকে নিজের মধ্যে ধরে রেখেছেন এবং কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গভীর রাতে এলোমেলো ভাবে ঘুরে বেড়ান, সেলফোনে তাঁর কবিতার বইয়ের প্রকাশক রবীন্দ্রনাথের সাথে কথা বলেন, কবিতা আবৃত্তি করে শোনান রাতের মাতালদের। এই কবি পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত, কলকাতা বইমেলায় আগুন ধরিয়ে দেয়ার অপরাধে। এই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত শেষ পর্যন্ত মানসিক হাসপাতালে হয়েছিল। কোলকাতা শহরে ঘটে যাওয়া সিরিয়াল কিলিঙ একসময় এই কবির দিকেই আঙ্গুল তুলে ধরে।
লোকটা কেমন হাংরি, যার বন্ধুবান্ধব নেই, দল নেই, কফি হাউসে যায় না, খালাসিটোলায় যায় না, বন্ধুদের নিয়ে হ্ইচই করে না, মধুসূদনের সমাধিতে খালাসিটোলায় বারদুয়ারিতে হাওড়া স্টেশনে নিমতলা শ্মশানে কফি হাউসে দাঁড়িয়ে জোরে-জোরে কবিতা পড়ে বন্ধুদের শোনায় না, মাদক নেয় না, নিজেদের দলের পত্রিকা নেই, নিজেই লিফলেটে ছাপাবার বদলে একজন খোচরের ওপর নির্ভর করে কবিতা প্রকাশের জন্য ! প্রসঙ্গত আমি প্রকাশ করতুম ‘জেব্রা’, সুবিমল বসাক ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, অরুণেশ ঘোষ ‘জিরাফ’, দেবী রায় ‘চিহ্ণ’, ত্রিদিব ও আলো মিত্র ‘উন্মার্গ’ আর The Waste Paper, প্রদীপ চৌধুরী ‘ফুঃ’, শৈলেশ্বর ঘোষ ‘ক্ষুধার্ত’, সুভাষ ঘোষ ‘ক্ষুধার্ত খবর’ এবং পরে অলোক গোস্বামী প্রকাশ করতেন ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’। ফিল্মে কয়েকজন হাংরি আন্দোলনকারীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে চরিত্রটাকে আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রমাণ করার জন্য ! এই ফিল্মের কারণে দর্শকদের কাছেও হাংরি আন্দোলন হয়ে উঠেছিল খিল্লি করার ব্যাপার । পরাবাস্তব আন্দোলন, ডাডা আন্দোলন, বিট আন্দোলন, র্যাঁবো-ভেরলেন নিয়ে যেসমস্ত ফিল্ম তৈরি হয়েছে তাতে তাঁদের খিল্লি করা হয়নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন