বৃহস্পতিবার
হাংরি কিংবদন্তি । প্রকাশক : প্রতিভাস, কলকাতা
লেবেলসমূহ:
হাংরি আন্দোলন,
হাংরি কিংবদন্তি,
হাংরি জেনারেশন
রবিবার
"প্রচন্ড বৈদ্যুতিক্ ছুতার"আবৃতি:তনুময় গোস্বামী
Maitreyee Bhattacharjee Chowdhury & Jash Sen at Kolkata Literary Meet 2019
Hungry generation | Wikipedia audio article
Hungryalists and the Beatniks: Malay Roychoudhury Interviewed Part-2
The Hungryalist Interview with Maitreyee Bhattacharjee Chowdhury
মঙ্গলবার
হাংরি আন্দোলনকারীদের ফোটো
সমীর রায়চৌধুরী
বাসুদেব দাশগুপ্ত
অরুণেশ ঘোষ
শম্ভু রক্ষিত
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
মলয় রায়চৌধুরী
বিনয় মজুমদার
অনিল করঞ্জাই
শৈলেশ্বর ঘোষ
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
সুবিমল বসাক
সেলিম মুস্তফা
প্রদীপ চৌধুরী ও সুবো আচার্য
সুভাষ ঘোষ
অরুণ বণিক
অজিতকুমার ভৌমিক
ত্রিদিব মিত্র
অবনী ধর
সমীরণ ঘোষ
দেবী রায় ( হারাধন ধাড়া )
অরূপ দত্ত
উৎপলকুমার বসু
নিত্য মালাকার
ফালগুনী রায়
করুণানিধান মুখোপাধ্যায়
রাজা সরকার ও অলোক গোস্বামী
দেবদাস আচার্য
সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী ও উৎপলকুমার বসু
ত্রিদিব মিত্র, জর্জ ডাউডেন ও সুবিমল বসাক
বাসুদেব দাশগুপ্ত
অরুণেশ ঘোষ
শম্ভু রক্ষিত
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
মলয় রায়চৌধুরী
বিনয় মজুমদার
অনিল করঞ্জাই
শৈলেশ্বর ঘোষ
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
সুবিমল বসাক
সেলিম মুস্তফা
প্রদীপ চৌধুরী ও সুবো আচার্য
সুভাষ ঘোষ
অরুণ বণিক
অজিতকুমার ভৌমিক
ত্রিদিব মিত্র
অবনী ধর
সমীরণ ঘোষ
দেবী রায় ( হারাধন ধাড়া )
অরূপ দত্ত
উৎপলকুমার বসু
নিত্য মালাকার
ফালগুনী রায়
করুণানিধান মুখোপাধ্যায়
রাজা সরকার ও অলোক গোস্বামী
দেবদাস আচার্য
সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী ও উৎপলকুমার বসু
ত্রিদিব মিত্র, জর্জ ডাউডেন ও সুবিমল বসাক
লেবেলসমূহ:
হাংরি আন্দোলন,
হাংরি জেনারেশন,
Hungry Generation,
The Hungryalists
বুধবার
পারমিতা চক্রবর্ত্তী আলোচনা করেছেন মলয় রায়চৌধুরীর ছোটোগল্প 'দাচু ওয়াইফু'
জাপানের পথে : পারমিতা চক্রবর্ত্তী
মলয় রায়চৌধুরীর লেখা নিয়ে কথা বলা খুব কঠিন । তবুও ওনার লেখার প্রতি যে দায়বদ্ধতা তা ভীষণ ভাবে উল্লেখযোগ্য । "দাচু ওয়াইফু” তেমনই একটি গল্প ৷ নামকরণটিতে গল্পটি শুরুতে একটা ধাক্কা লাগবে পাঠকের মনে ৷ গল্পের শুরুতে একটা টানটান শিহরণ ৷ কিছু কিছু মানুষের কাছে একাকিত্ব একটা বিলাসিতা আবার কারোর কাছে ক্রাইসিস ৷ একটি মানুষ যখন একাকিত্বের জীবন উপভোগ করে তখন তার কাছে গোটা অস্তিত্বটা একটা রোমান্সের মত I সেই গন্ডীর মধ্যে ঢুকে পড়ে আস্ত নেশার বোতল ৷ গল্পের শুরুতে একটা আগুন ধরানো পরিবেশ ৷ ১৮ ডিগ্রি সুইঙ মোডে এসি, চালিয়ে কম্বল চাপা দিয়ে ঘুমোচ্ছে গোটা শহর ৷ ডলার খরচে বেঁঁচে থাকার আনন্দ ৷
এমনই একরাতে আগুনের টুকরো ছড়িয়ে পড়ে গোটা ঘরে ৷ নেশার আমেজে ঘুমিয়ে থাকা মানুষটি টের পায় যখন তার চামড়ায় যন্ত্রণা লাগে । বাকি পর্দা জ্বলছে ৷ সোফা I আগুন দখল করেছে ড্রইংরুম ৷'' আমার স্লিপিং স্যুটে আগুন ধরে গেছে ,চামড়ায় বসে যাচ্ছে যন্ত্রণা "এখানেই মনে হয়েছে গল্প'র ক্লাইমেক্সে কোথায় যেন একটু ছেদ পড়েছে ৷মনে হচ্ছে পরিবেশটা যেন আন্ডার কন্ট্রোল ৷শাওয়ারের জল ধুয়ে দেয় উলঙ্গ শরীর I আগুন স্পর্শ করে অস্তিত্বকে ৷
এভাবেই বয়ে যাওয়া ঘটনাকে এগিয়ে নিয়ে চলল শব্দবন্ধ ৷ আগুন নষ্ট করে দেয় তার মুখ, দেহের ওপরের অংশ, পিঠ আর পা । পোড়া জায়গাগুলো ছিল গভীর । কান, নাক, কনুই থেকে হাড় বেরিয়ে যায় । বেশ কিছু সার্জারি হলেও বায়োমেট্রিকসে বদল হয়নি । চোখ ঠিক ছিল । আঙুলের ছাপও পোড়েনি ।
ফলসরূপ সার্জারিতে ঘটে যায় আমূল পরিবর্তন তার মুখের । এই ঘটনা নাড়া দেয় গল্পের এসেন্সকে । গল্পটিতে জাপানের বর্ণনা আছে ৷ জাপানের অলিগলি জুড়ে হেঁটে বেড়ায় গল্পরা ৷ গল্প মানে নারী ৷ প্রকৃতি'র আদি রহস্য লুকিয়ে আছে যার কোল জুড়ে ৷ গল্প'র মূল চরিত্র যিনি, তিনি একজন অবিবাহিত পুরুষ । একাকিত্বের অবসরে তিনি নেহাতই একজন পথপ্রদর্শক ছিলেন ৷ এমন এক সময় তিনি তার জীবনে দ্বিতীয় শক্তির অভাব উপলব্ধি করেন । কেউ একজন যে তাঁর নিস্তব্ধ জীবনের সঙ্গী হবে ৷তাঁকে শুশ্রূষা দেবে ৷ যৌনইচ্ছা'র তাগিদ অনুভব করেন ।
জাপান দ্বীপপুঞ্জে মানুষ প্রথম বসতি স্থাপন করে প্রাগৈতিহাসিক কালে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে জাপানের আদি জোমোন সংস্কৃতি (যার নামকরণ হয়েছে স্বতন্ত্র "দড়ির দাগ দেওয়া" মাটির বাসন থেকে) ক্রমশ য়ায়োই সংস্কৃতির দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়। য়ায়োই যুগে মূল এশীয় ভূখণ্ড থেকে জাপানে নতুন প্রযুক্তির আগমন ঘটেছিল। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে চীনের "হান গ্রন্থে " জাপানের প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায়। স্বপ্নের নগরী বলা যায় জাপানকে ৷এদেশে রাতের রোশনাইয়ে আলোর সাথে হাত ধরে নারী ৷ জাপান শহরে বোবা কালা নারীর সংখ্যা বেশী । তারা বিক্রি হন ডলারের হিসাবখাতে ৷ তেমনই এক নারী হিনাত ৷ যে সুন্দরীর রাজ্যের রাণী ও নৈঃশব্দের অধিপতি সে ৷ । হিনাতকে দেখেই ভালোবেসে ফেললেন নায়ক ৷ কোলে তুলে নিয়ে গেলেন বিছানায় ৷
"প্রেম করছি যখন, হিনাত বলে উঠল, আঃ, লাগে ।
আমি উঠে বসলুম । বললুম, কী বলছ তুমি ? কথা বলছ ?"
এখানে যেন মূল চরিত্রের আরও কিছু সংলাপ কিংবা অনুভব জরুরী ছিল মনে হয়েছে ৷ কোথাও যেন তঞ্চকতার সাথে শব্দের ব্যাখ্যা চাইছিল ৷কিন্তু তা পূরণ হয় ভালোবাসা দ্বারা I
"ভালোবাসা পেলে প্রাণ জেগে ওঠে, বলল হিনাত, চোখের পাতা কাঁপিয়ে, ভালোবাসার ক্ষমতা তুমি জানো না ।
আমি হিনাতের দিকে তাকিয়ে বসে রইলুম ।
ও মিটিমিটি হাসছে, যেমন দেখেছিলুম জাপানে ।
এসি চালিয়ে হিনাতকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লুম । সত্যিই, ভালোবাসার ক্ষমতা অপরিসীম, সিলিকনে তৈরি নকল যৌনপুতুল বা সেক্স ডলের মধ্যেও প্রাণ সঞ্চার করতে পারে ।
সুন্দরীতমা সে, কেমন করেই বা নিখুঁত হবে । খুঁত কেবল এই যে ওর হৃদয় ছিল না ।"
এই স্তবকে পাঠকের মনে কেমন যেন ধোঁয়াশা লাগে । অর্থাৎ হৃদয়ের ঠিকানা তো নিশ্চিন্দিপুর ৷ সেখানে নেই কোন পরিসর I
"দার্শনিকরা তো বলে গেছেন যে চোখ হলো আত্মায় প্রবেশের পথ । ওর চোখে রয়েছে সৌন্দর্যের ক্ষমতা, হাসিতে রয়েছে পুরুষকে জয় করে নেবার ক্ষমতা ।
হিনাতের হাত দুটো তুলে আমাকে জড়িয়ে ধরতে সাহায্য করলুম, ও তাকিয়ে রইলো আমার দিকে ৷আজ থেকে সিলিকনের যৌনপুতুল হিনাত আমার দাচু ওয়াইফু, জাপানি ভাষায় যেমন বলে, ওলন্দাজ স্ত্রী বা রহস্যময়ী পত্নী।”
গল্পের পরিণতি এখানেই শেষ ৷ আরও একটু বেশী পাওনা ছিল যেন আমাদের কাছে ৷ তবুও লেখক কখনও জাপান যাননি, কিন্তু মনে হয়েছে যেন জাপানের অলিগলি তাঁর ঘোরা ৷ এখানেই একজন লেখকের সার্থকতা ৷গল্পটির পরতে পরতে লুকিয়ে আছে রহস্য যা কিনা আরও একটু বিস্তৃতি লাভ করতেই পারত ; তবুও এইটুকুই বা কম কি ৷ মলয় রায়চৌধুরীর লেখা নিয়ে কিছু বলা বড় ঔদ্ধত্য, তবুও যেন আরও একটু চেয়েছিলাম ।
( মাসিক কৃত্তিবাস পত্রিকায় এই গল্পটি প্রবন্ধ হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল । )
লেবেলসমূহ:
পারমিতা চক্রবর্ত্তী,
মলয় রায়চৌধুরী
শনিবার
মলয় রায়চৌধুরীর 'নিজের বাছাই' - শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের প্রাথমিক পাঠ-প্রতিক্রিয়া
যে লেখকের কলমের ভরকেন্দ্র হল মনস্হিতির বোধ ও উপলব্ধির,
একাকীত্বের খুল্লমখুল্লা জবানবন্দি, তাঁর সামনে দাঁড়াতে অস্বস্তি হয়।
প্রচলিত জনপ্রিয় সাহিত্যের ফিল-গুড ব্যাপারটা হারিয়ে যায় দুম করে, কারণ
এতটা সততা তীব্র ও অসহনীয়। কিভাবে মলয় রায়চৌধুরী তাঁর লেখায় আত্মপ্রক্ষেপণ
ঘটিয়েও নিরপেক্ষ হয়ে যান, সামাজিক ঘটনার দ্রষ্টা হন, নির্মম সমালোচনায়
শাণিত ইস্পাত হয়ে ওঠেন, তাঁর নিজের এই বাছাই সঙ্কলনটি পড়লে টের পাওয়া যায় ।
কিভাবে মলয় রায়চৌধুরী তাঁর লেখায় আত্মপ্রক্ষেপণ ঘটিয়েও নিরপেক্ষ হয়ে যান,
সামাজিক ঘটনার দ্রষ্টা হন, নির্মম সমালোচনায় শাণিত ইস্পাত হয়ে ওঠেন, সেটা
বোঝা যাবে এই বইটা পড়লে। আর তাই নেক্রোফিলিয়া বা শবদেহের সঙ্গে সংগমের মত
বিষয় তাঁর হাতে পড়ে হয়ে ওঠে অন্তর্ঘাতের মাধ্যম। মলয় নিজেকেই যেন ছুরি দিয়ে
কোপাতে থাকেন, আর তখন যে রক্তপাত হয় সেটাই তাঁর লেখালিখি। নেক্রোপুরুষ,
স্বমেহনের দর্শন, অথবা ডিসটোপিয়ার দেশ, যাই পড়ি না কেন, মলয় সেখানে নিজের
মাংসের টুকরোই সাজিয়ে রেখেছেন। আশ্চর্যের ব্যাপার যে মলয় রায়চৌধুরী বাংলা
সাহিত্যে কালজয়ী লেখক হতে আসেননি, তিনি এসেছিলেন বাঁক বদলের জন্য, যেন
সেটাই তাঁর কাজ। মলয়ের সেরা লেখা কোনটা? সম্ভবত মলয়ও জানেন না। কেননা তিনি
সেরা লেখা লিখতে চাননি কখনো, চেয়েছিলেন চলমান সাহিত্যের ওপর হাতুড়ির ঘা
মেরে নিজের ভাষাটাকে প্রতিষ্ঠা করতে। কতটা সফল হয়েছেন, সময় বলবে। কিন্তু এই
সঙ্কলনটা পড়লে বোঝা যায়, এত বয়েসে এসেও মলয় গেরিলা আক্রমণের রণনীতি থেকে
পিছু হটবার পাত্র নন।
ব্যক্তিগতভাবে আমি সবথেকে বেশি তড়িদাহত হয়েছই নেক্রোপুরুষ নামক গদ্যটি পড়ে। এটা এতই অন্যরকম যে একে গল্প, উপন্যাস, কনফেশন এরকম কোনও খোপে ঢুকিয়ে দিতে না পেরে 'গদ্য' নামক একটি সাধারণীকৃত উপাধি বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হল। বাড়ি ভেঙ্গে পড়ার শব্দ তখনই শোনা যায়, যখন তা শোনার জন্যে কেউ থাকে। সাহিত্যের কাজ কী? ক্যাথারসিস করা? মানে, মোক্ষণ? বরং মলয়ের লেখা প্রতিমুহূর্তে ক্যাথারসিসের উল্টোদিকে হাঁটে, নেক্রোপুরুষ তার প্রধান উদাহরণ। মোক্ষণ করা, শান্তি দেওয়া তাঁর কাজ নয়, বরং আপাতশান্তির বোধটাকে আঘাত করাই মূল উদ্দেশ্য! নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নেওয়া’র গড্ডালিকা স্রোতগুলোর পালটা স্রোত সাহিত্যে-জীবনযাপনে আসে। আর, যতোটা ‘সংস্কৃতি’ ঠিক করে দেওয়া রাষ্ট্র থাকবে, ততটাই থাকবে রাষ্টনির্মিত, তথা পুঁজিনির্মিত সেই ‘সংস্কৃতিকে’ প্রত্যাখ্যান। হয়তো সমান্তরাল, তবু থাকবে। প্রবলভাবেই। অনেকটা এরকম
"হ্যাঁ, আমি মেয়েদের শবের সঙ্গে প্রেম করে পরম সন্তোষ পাই। নাঃ, পেতুম বলা ভাল। মেয়েদের শব মাত্রেই, হোয়াট ইউ কল, সচ্চিদানন্দময়ী, যাদের বুকের ভেতরে আর বাইরে লেজার আলো কিং কোবরার মতন কুণ্ডলী পাকিয়ে ওত পেতে থাকে, আচমকা বেরিয়ে জাপটে ধরে, আলোয় আলো করে দেয় অস্তিত্বকে"। (নেক্রোপুরুষ)
আত্মস্বীকৃতি, ঐতিহ্যের নামে স্খলনের সর্বস্ব বিনাশী যে সাহিত্যরাজনৈতিক প্রকল্প মলয় গ্রহণ করেছেন, খুব অস্তিত্বগত কারণেই মূলধারার সাহিত্যের পক্ষে তাকে হজম করা সম্ভব হয়নি। তাই এক সময়ে একে হাংরি, ক্ষুৎকাতর এবম্বিধ বহু অভিধায় ভূষিত করা হয়েছিল। কিন্তু সত্যি বলতে কি হাংরি রূপকেও আর বেঁধে ফেলা যাচ্ছে না মলয় রায়চৌধুরির লেখাকে। কিং কোবরা যখন অস্তিত্বকে আলোয় আলো করে দিচ্ছে, এমন উপমা তো আমাদের ধ্রুপদী সাহিত্য থেকেই সারজল সংগ্রহ করে নিয়েছে বলা চলে। পূর্বজদের থেকে ঋণ নিয়ে তারপর ট্র্যাডিশনকে আক্রমণ করা, অসম্ভব শক্তিশালী কলম ছাড়া এমন হওয়া সম্ভব নয়। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে, অন্তত এই বাছাই সংকলন পড়ে এমনটাই মনে হয়েছে যে মলয় রায়চৌধুরীর আক্রমণ পণ্যবাহী সভ্যতাজাত ব্রয়লার সংস্কৃতির প্রতি। বাংলার আবহমান ট্র্যাডিশনের কাছে দিনের শেষে তাই নতজানু থেকে তিনি উচ্চারণ করতে পারেন "আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে বাংলা ভাষা আমার স্বদেশ নয়" (আমার স্বদেশঃ বাংলা ভাষার জন্য প্রেমের কবিতা)
বহু আগে আর্থার মিলার বলেছিলেন, ‘ভাষাকে যে আক্রমণ সরে সেই ভাষাকে বাঁচায়।’ মলয় রায়চৌধুরি একই সঙ্গে হন্তারক ও পরিত্রাতা হিসেবে নিজেকে খুঁড়তে চাইছেন। এই যাত্রাপথ কঠিন, এবং সকলের জন্য নয়।
ব্যক্তিগতভাবে আমি সবথেকে বেশি তড়িদাহত হয়েছই নেক্রোপুরুষ নামক গদ্যটি পড়ে। এটা এতই অন্যরকম যে একে গল্প, উপন্যাস, কনফেশন এরকম কোনও খোপে ঢুকিয়ে দিতে না পেরে 'গদ্য' নামক একটি সাধারণীকৃত উপাধি বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হল। বাড়ি ভেঙ্গে পড়ার শব্দ তখনই শোনা যায়, যখন তা শোনার জন্যে কেউ থাকে। সাহিত্যের কাজ কী? ক্যাথারসিস করা? মানে, মোক্ষণ? বরং মলয়ের লেখা প্রতিমুহূর্তে ক্যাথারসিসের উল্টোদিকে হাঁটে, নেক্রোপুরুষ তার প্রধান উদাহরণ। মোক্ষণ করা, শান্তি দেওয়া তাঁর কাজ নয়, বরং আপাতশান্তির বোধটাকে আঘাত করাই মূল উদ্দেশ্য! নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নেওয়া’র গড্ডালিকা স্রোতগুলোর পালটা স্রোত সাহিত্যে-জীবনযাপনে আসে। আর, যতোটা ‘সংস্কৃতি’ ঠিক করে দেওয়া রাষ্ট্র থাকবে, ততটাই থাকবে রাষ্টনির্মিত, তথা পুঁজিনির্মিত সেই ‘সংস্কৃতিকে’ প্রত্যাখ্যান। হয়তো সমান্তরাল, তবু থাকবে। প্রবলভাবেই। অনেকটা এরকম
"হ্যাঁ, আমি মেয়েদের শবের সঙ্গে প্রেম করে পরম সন্তোষ পাই। নাঃ, পেতুম বলা ভাল। মেয়েদের শব মাত্রেই, হোয়াট ইউ কল, সচ্চিদানন্দময়ী, যাদের বুকের ভেতরে আর বাইরে লেজার আলো কিং কোবরার মতন কুণ্ডলী পাকিয়ে ওত পেতে থাকে, আচমকা বেরিয়ে জাপটে ধরে, আলোয় আলো করে দেয় অস্তিত্বকে"। (নেক্রোপুরুষ)
আত্মস্বীকৃতি, ঐতিহ্যের নামে স্খলনের সর্বস্ব বিনাশী যে সাহিত্যরাজনৈতিক প্রকল্প মলয় গ্রহণ করেছেন, খুব অস্তিত্বগত কারণেই মূলধারার সাহিত্যের পক্ষে তাকে হজম করা সম্ভব হয়নি। তাই এক সময়ে একে হাংরি, ক্ষুৎকাতর এবম্বিধ বহু অভিধায় ভূষিত করা হয়েছিল। কিন্তু সত্যি বলতে কি হাংরি রূপকেও আর বেঁধে ফেলা যাচ্ছে না মলয় রায়চৌধুরির লেখাকে। কিং কোবরা যখন অস্তিত্বকে আলোয় আলো করে দিচ্ছে, এমন উপমা তো আমাদের ধ্রুপদী সাহিত্য থেকেই সারজল সংগ্রহ করে নিয়েছে বলা চলে। পূর্বজদের থেকে ঋণ নিয়ে তারপর ট্র্যাডিশনকে আক্রমণ করা, অসম্ভব শক্তিশালী কলম ছাড়া এমন হওয়া সম্ভব নয়। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে, অন্তত এই বাছাই সংকলন পড়ে এমনটাই মনে হয়েছে যে মলয় রায়চৌধুরীর আক্রমণ পণ্যবাহী সভ্যতাজাত ব্রয়লার সংস্কৃতির প্রতি। বাংলার আবহমান ট্র্যাডিশনের কাছে দিনের শেষে তাই নতজানু থেকে তিনি উচ্চারণ করতে পারেন "আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে বাংলা ভাষা আমার স্বদেশ নয়" (আমার স্বদেশঃ বাংলা ভাষার জন্য প্রেমের কবিতা)
বহু আগে আর্থার মিলার বলেছিলেন, ‘ভাষাকে যে আক্রমণ সরে সেই ভাষাকে বাঁচায়।’ মলয় রায়চৌধুরি একই সঙ্গে হন্তারক ও পরিত্রাতা হিসেবে নিজেকে খুঁড়তে চাইছেন। এই যাত্রাপথ কঠিন, এবং সকলের জন্য নয়।
লেবেলসমূহ:
মলয় রায়চৌধুরী,
শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
শুক্রবার
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় : সুবো আচার্যের অধঃপতন ও উদ্ধার - অনুকুল ঠাকুরের ভূমিকা
লেবেলসমূহ:
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়,
সুবো আচার্য,
Hungry Generation.
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)