সোমবার

হাংরি জেনারেশান আন্দোলন : অপূর্ব সাহা

 রোদ্দুর অনেক আগেই উঠেছিল

By অপূর্ব সাহা
(ইউটিউবের জন্মও হয়নি সেদিন। সেই ষাটের দশকেই অশ্লীলতার অভিযোগে গ্রেফতার, কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল বাংলা সাহিত্যের হাংরি জেনারেশনের কবি সাহিত্যিকদের। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি কবিতা, ‘প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’। লিখেছেন অপূর্ব সাহা।)
.
রোম্যান্টিক বাংলা সাহিত্যের ভেজা ভেজা স্যাঁতস্যাতে নরম মাটিকে চড়া রোদ্দুরের তাপ ঝলসে দিয়েছিল সেই ষাটের দশকেই। ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার সমান্তরালে দানা বেঁধে উঠেছিল হাংরি জেনারেশন আন্দোলন। মধ্যবিত্ত ভন্ডামিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সমাজ তথা প্রতিষ্ঠানের বেঁধে দেওয়া শিল্প সাহিত্য প্রকরণ তছনছ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ক্ষুধার্ত প্রজন্মের কবি-লেখকেরা। খানিকটা বিচ্ছিন্ন ভাবেই পাটনা, ত্রিপুরা, বাঁকুড়া, কলকাতার সম-মানসিকতা সম্পন্ন সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, শৈলেশ্বর ঘোষ, বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুভাষ ঘোষ, প্রদীপ চৌধুরী, সুবো আচার্য, ফাল্গুনী রায়, হারাধন ধাড়া, সুবিমল বসাক প্রমুখ জড়ো হয়েছিলেন ক্ষুধিত প্রজন্মের ছাতার তলায়। নিকটবর্তী ছিলেন বিনয় মজুমদার, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, সতীন্দ্র ভৌমিকেরা।
.
বুলেটিন, ইস্তাহার বিলি বিতরণের পাশাপাশি আনন্দবাজার পত্রিকা অফিসে সমালোচনার জন্য জুতোর বাক্স পাঠাতেন তাঁরা। ডাকযোগে সমাজের তাবড় ‘প্রতিভাশালী’দের মুখোশ পাঠিয়ে সেখানে লিখে দিতেন— মুখোশ খুলে ফেলুন। নোবেলজয়ী কবি অ্যালেন গিনসবার্গ ও তাঁর পুরুষ বন্ধু পিটার অরলোভস্কি ভারতে এসে হাংরিদের সঙ্গে রাত কাটিয়ে গিয়েছেন শ্মশানে, সোনাগাছিতে। অন্ত্যজ জীবনযাপন প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক শব্দ ব্যবহারে তোলপাড় হয়েছিল তৎকালীন প্রসাধন-শোভিত বাঙালি বুদ্ধিজীবি, পাঠক, সিংহভাগ লেখকেরা। স্বভাবতই সাজানো বুলিতে বিরাশি সিক্কার এই হাংরি-থাপ্পড় আলোড়িত করেছিল প্রতিষ্ঠানের রাজাগজাদের। অচিরেই প্রয়োজন হয়েছিল বাপের অবাধ্য ছেলেদের একটু কড়কে দেওয়ার।
.
ষাটের দশকে অশ্লীলতার দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল কয়েকজন হাংরি কবি-লেখকের বিরুদ্ধে। কবি শৈলেশ্বর ঘোষ এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘‘২রা সেপ্টেম্বর, ১৯৬৪, সকাল ৭.৩০ মিনিট। সুভাষ এবং আমি সবে ঘুম থেকে উঠেছি, বাইরে গিয়ে চা খাবো, এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। দরজা খোলামাত্র ঘরের মধ্যে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল ৮-১০ জন লোক। মেঝেয় বিছানায় জুতো-সহ দাঁড়িয়ে গেল ওরা। টেনে হিঁচড়ে ফেলতে লাগল জিনিসপত্র, বইপত্র। হাতে সার্চ ওয়ারেন্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল, তারা লালবাজার থেকে আসছে।…৯.৩০-এ জানানো হল যে আমাদের ওরা গ্রেফতার করছে।…পরের দু-তিন দিনের মধ্যে কলকাতায় দেবী রায়, পাটনায় মলয় রায়চৌধুরী এবং সমীর রায়চৌধুরী গ্রেফতার হয়। মলয় ও সমীরকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ত্রিপুরায় প্রদীপ চৌধুরী গ্রেফতার এড়িয়ে কিছুকাল কাটায় বটে, কিন্তু তাকেও গ্রেফতার করে কলকাতা আনা হয়।’’ মলয় লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও সাহিত্যে অশ্লীলতার অভিযোগে’ তাঁদের গ্রেফতার করা হলেও ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছিল উৎপলকুমার বসু, সুবিমল বসাক, বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুবো আচার্য এবং রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। যদিও তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি।
.
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সামাজিক-রাজনৈতিক কারণে নানা সময়ে বিভিন্ন বই বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কিন্তু অশ্লীলতার অভিযোগে বাড়ি থেকে থানা, থানা থেকে আদালত কোমরে দড়ি দিয়ে শিল্পী-সাহিত্যিকদের টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এর আগে বাংলার মাটিতে কখনও ঘটেনি। কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে মামলা চলেছিল ১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছর মে পর্যন্ত, মোট নয় মাস। অভিযুক্তদের কেউ কেউ রাজসাক্ষীও হয়ে যান। এই মামলায় শক্তি-সুনীল-সন্দীপন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। মূল অভিযোগের কেন্দ্রে ছিল মলয় রায়চৌধুরী লিখিত ‘প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটি। মলয়ের কবিতাটি ‘অবসিন’ কি না, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে সরকারি উকিল জানতে চান। প্রশ্ন করেন, কবিতাটা পড়ে কি আপনার অশ্লীল মনে হচ্ছে? সুনীল বলেন, ‘‘কই না-তো! আমার তো বেশ ভাল লাগছে পড়ে।’’ শক্তি বলেছিলেন, কবিতাটি তাঁর ভাল লাগেনি। মলয় সেকথা জানিয়েছেন তাঁর নিজের লেখাতেই।
.
এই মামলা হাংরি জেনারেশনকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়। যুগান্তর-আনন্দবাজার- দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় সংবাদ, সম্পাদকীয়, কার্টুন ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। আমেরিকার ‘টাইম’ ম্যাগাজিন, আর্জেন্টিনার বুয়েনস এয়ার্সের ‘প্যানোরমা’ পত্রিকা-সহ মেক্সিকো, জার্মানির বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় হাংরি আন্দোলনকারীদের লেখালেখি ও সেই সংক্রান্ত মামলার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আমেরিকান কবি ক্যারল বার্জ ‘প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটির ইংরাজি অনুবাদ করে পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করেন।
.
বিচারক অমলকুমার মিত্র মোকদ্দমার রায় ঘোষণা করেছিলেন ১৯৬৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর। রায়ে বলা হয়েছিল, ‘‘অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণিত এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯২ ধারায় দণ্ডিত এবং সেই ধারা বলে তাকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হল। অন্যথায় একমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আলোচ্য প্রকাশনার যে কপিগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সেগুলি নষ্ট করে ফেলার আদেশ দেওয়া হল।’’ পরে হাইকোর্ট অবশ্য মলয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করে। এবং নিম্ন আদালতের জরিমানার রায় প্রত্যাহার করে।
যে টেক্সটে 'হাংরি আন্দোলন মলয় রায়চৌধুরী' লেখা আছে-এর একটি উদাহরণ হতে পারে
সমস্ত প্রতিক্রিয়া
আলী আফজাল খান, Sameer Bhattacharya এবং আরও 83 জন

বুধবার

THE HUNGRY LUMINARY -- MALAY ROYCHOUDHURY

 



THE HUNGRY LUMINARY— MALAY ROY CHOUDHURY (EPISODE 1)

TRANSLATED FROM THE BENGALI BY SRAMAN SIRCAR

 

1

By the time I noticed my sandal was torn, we had barely set foot outside the College Street Coffee House after wrapping up one of our usual intellectual chats that always began at 8 on Saturday evenings. The loop that held my hallux had come off, and while holding it between my middle toes, I had somehow scraped my way onto the street and was wondering if I should simply carry the sandal in my hands after all, since repairing it meant I would then have to walk all the way to Sealdah. I was with Subimal Basak. He immediately quipped that the realists among us would have argued it would have been wiser to leave the torn sandal behind at the Coffee House itself for those lacking such a possession.

Suddenly, a group of six to seven men leaped out of the darkness of the street and surrounded us. I recognized some of the faces in the dim light—they had left the café an hour earlier—and instinctively realized that we could save ourselves only by fighting them together. One of the men ran up to Ismail’s cigarette store beneath the staircase of the Coffee House, picked up the iron rod that had been resting there, and struck at us. Subimal blocked the blow, grabbed the rod with both his hands, and yanked with all his might—the man clad in dhoti and a shirt flew off his feet and smashed into the shuttered bookshop on the pavement. A dog groaned at the commotion in its sleep.

Now armed with the iron rod, Subimal let out a full-throated roar that shattered the silence of the night—Come out, you swines of Suresh Samajpati!—and landed a sickening blow on one of the attackers. Even in the shadows, I could see the sinews on his muscles had flared up like snakes raising their heads to strike. The men decided they had seen enough and all of them fled along Bankim Chatterjee Street and College Street. It was all over within a minute or so. With the rod on our shoulders and both my sandals hanging from it, we marched our way back home.

If Subimal Basak hadn’t been there with me that night, I would have been brutally thrashed for sure. In any case, I wasn’t well-versed in the Japanese techniques of martial arts. Subimal, however, had an appearance that was thoroughly unlike any poet—he was dark and burly with equally black curly hair and lacked all signs of nobility and sophistication. Originally from East Bengal, he would come across as an archetypical tough and obstinate proletariat. Back then he used to work at the Income Tax House in Chowringhee and resided in his paternal uncle’s tiny jewelry store in the Baithakkhana Bazaar near Sealdah. The year was 1963. I had visited Kolkata for about a fortnight and put up in his den.

The jewelry store used to bear a spartan look, was entirely windowless, and lacked even a ceiling fan; the two of us had to sleep on mattresses strewn on the floor. Answering nature’s call every morning meant going all the way to Sealdah station to make use of the trains idling along the platforms. Breakfast consisted of puffed rice and tea in cheap, earthen cups. For baths, we only needed towels and water taps on the adjacent street. The taps were often set so low that we had to crawl on all fours before we could sit under them. After drying ourselves, we would set off from Sealdah and travel through Bowbazaar till we reached Subimal’s office. While he would report to his department, I would venture to the roof of the Income Tax House and take a seat, with my towel serving as a cushion. Falguni Roy, a resident of Baranagar, and Tridib Mitra, who worked in the Writers’ Building at the time, would join us later in the afternoon for poetry sessions under the open sky, along with weed rolled into cheap cigarettes. When we felt hungry, Subimal would take us to his office canteen for lunch.

The nights were spent being a witness to Subimal’s literary experiments with the Bengali prosaic text called Chhaata Maatha. Lying on the mattress with a pillow under his stomach, he would spend hours deconstructing the narrative of the book, only to recompose it in the typical Dhakaiya Kutti style that had been characteristic of the old Bengali dialect once popular in East Bengal. I could never offer any help in this regard since the dialect was not known to me. As Subimal scribbled new words and phrases from his diary onto a piece of paper, the dim light of the lone lamp would cast a shadow of his head on the wall, its oily smell soon wafting all over the store. The idle yawns of old men would occasionally float in from the street outside. Every now and then, Subimal would blurt out, “Hey Malay, there’s someone in my ears again, I can clearly hear them speak!” and then wait for this supposed angel in his ears to offer him a novel word or an interesting turn of phrase, almost jumping in excitement whenever the angel would so oblige. His literary struggles would last late into the night, while I would fall asleep with an arm over my eyes and a dull pain in my calves from all the miles walked in the day.

We had been attacked with an iron rod the other night in retaliation for the masks we had gifted earlier. Subimal Basak, Debi Roy, and I had once chanced upon an enormous stockpile of masks being sold really cheap at wholesale rates in the Bagri Market of Burra Bazaar. We immediately bought two hundred of them—masks that depicted everything from animals, birds, and vermin to jesters, idiots, and monks. We even got a local job press to stamp the following message on them— 

Kindly Take Off Your Masks

Hungry Generation

Over the next few days, we began sending them off by post. Several were also directly placed in the letterboxes of the homes of prominent individuals. We spared no one: poets, authors, politicians, bureaucrats, police officers, professors, journalists, and businessmen were all at the receiving end. Soon afterward, gales of fury and indignation began raging throughout the city. Such a reaction was expected, but the brutal attack was not. The litterateurs of the day who had sent the goons after us are now lost in time, I don’t even come across their names or works anymore. It seems they have been utterly crushed under the weight of the literary establishment and turned into excellent manure for the fields! Back then, however, they were outraged by our masks and had deemed such an act totally unbecoming of poets and writers.

Before the advent of the Hungry Movement within Bengali literature, authors and poets here would go around looking unperturbed and unkempt, proudly flaunting their indifference to all worldly matters. Dressed mainly in a khadi kurta-pajama with a bag on their shoulder, they would judge the world through their languid, half-closed eyes like the typical frail matinee hero of the cinema of yesteryear. Interested only in the elitist Bengali favored in bourgeois circles, they relished ranting about how good they were and how bad was the rest of the world. They were so blindly obsessed with the vocabulary popularised by Rabindranath Tagore that, more often than not, their work read little better than literary fodder for the high-income groups. And when it came to portraying the lives of the lower classes in society, except the writers of the Kallol Movement, everyone else was busy putting vapid, petty bourgeois idealism on paper.

Despite the literary uproar brought in the wake of the Bengal Renaissance of the 19th century, by the beginning of the 1960s, the social duty of authors was entirely limited to merely influencing the tropes and motifs prevalent in the literature of the time, rather than using language to create a better society for posterity. As a result, there was a glaring absence of literary works that could radically alter the very intellectual framework of Bengali society. Literature was deemed to be primarily a so-called fine art that was excessively reliant on Tagore’s vocabulary, and elitist Bengali litterateurs entirely lacked the courage to incorporate the syntax and diction of the marginalized groups into their work. Subimal Basak and Subhash Ghosh, two of the poets actively involved with the Hungry Movement, were actually the first to do so within their own writings. Like the authors of the Kallol Movement, they were able to expand the horizon of literature by focusing on the experiences of the marginalized and interpreting them within the right social context. However, unlike the Kallol writers, the authors of the Hungry Movement themselves came from the lower classes, and naturally, their work evolved into a subaltern shockwave within the Bengali literature of the era. 

2

The Hungry Movement had originally been my brainchild. After the final exam of my MA in Economics at Patna University, there was ample time on my hands. The various threads of Marxist ideology were all tangled up in my mind back then, and I would relish sorting them out, only to entwine them once again. Meanwhile, my diary would keep getting heavier with more and more poems. I would also travel a lot with my friend Tarun Sur; sometimes we would go to Allahabad or take a steamer to Shonpur, a truck to Kolkata, or a bus to Ranchi. My elder brother worked for the Fisheries Department in Chaibasa at the time, and his friends from Kolkata—some of whom were well-known poets of the 1950s—often visited him to enjoy the region’s country liquor. Chaibasa was steeped in the sights and sounds of traditional tribal society, and I would go there too every now and then. Roaming all alone in the forests of the place, I would often explore the different villages of the Santhal tribe, observing the customary bloody cockfights where the birds would have knives tied around their feet. Upon returning to Patna, I would always be scolded by my father for my aimless wanderings.

Mother would fret over me as well since my paternal grandfather had a similarly restless disposition, and he refused to settle down anywhere despite roaming almost the entirety of South Asia all the way from Rangoon to Rawalpindi. He worked as a professional painter during the colonial era creating watercolor portraits of royal women from the various feudal kingdoms of the subcontinent. My father picked up some of his skills and later opened a photography studio in Patna. At the same time, my uncle was also hired as an artist by the Patna Museum. That’s why after the demise of my grandfather, our family put down roots in the city of Patna itself. My paternal grandmother Apurbomoyi, on the other hand, used to reside in our ancestral home in Uttarpara. A highly orthodox Brahmin lady, she would roam all over the home muttering to herself with just a red towel around her otherwise bare body. She spoke Bengali with a thick, colloquial accent, pronouncing words like ‘Brahmin’, ‘Kayastha’, or ‘motorman’ as ‘Bemmo’, ‘Kayet’, or ‘mochorman’ respectively. I was always afraid that she would raise a furor over my habit of eating beef and pork despite being a Hindu, and that’s the reason why I preferred putting up with Subimal in his uncle’s jewelry store in Kolkata.

Then came the year 1961. After the results of the MA final exam were out, my father began coaxing me to apply for higher studies at the Delhi School of Economics. But by then, I had already become captivated by the world of poems. Only twenty-two years old at the time, I was totally obsessed with poetry and Marxism. One day, I suddenly came across an interesting expression by the English poet Geoffrey Chaucer that completely turned my world upside down: In the sowre hungry tyme. Hungry time, and that too a sour, hungry time! It made me realize that even in Bengali, the verb ‘eat’ has been subtly used to convey a plethora of meanings—we eat a kiss, as opposed to giving one; we eat a beating, rather than receiving one; if you’re corrupt, you might eat a bribe; you could eat your head off when annoyed, or eat the wind while going for a stroll. The word ‘hungry’ by then had a firm grip on my mind, and I decided to appropriate Chaucer’s hungry time for our own Indian literary traditions.

The elitist poems of Buddhadeb Basu, Amiya Chakrabarty, Bishnu Dey, and Sudhindranath Dutta were all the rage back then. The leftist journals were dominated by Subhash Mukhopadhyay, Dinesh Das, and Birendra Chattopadhyay, while the little magazines were obsessed with Shankha Ghosh, Alokeranjan Dasgupta, Alok Sarkar, and Sunil Gangopadhyay. The intellectual essence of their poems was based entirely on the world of privileged society. Their language was the mollycoddled tongue of the upper classes, with 90% of their vocabulary borrowed from Rabindranath, and they were particularly proud of their ability to dig up the most arcane and complicated words from the dictionary. The upcoming poets of that era were meanwhile mesmerized by their literary hero Buddhadeb Basu, who was known for being the Casanova editor of the Kabita magazine and could often be seen in a nightgown drinking tea with sugar cubes. Teeming with hatred, malice, fury, envy, inebriety, debauchery, and cynicism, their poems amounted to little more than philosophical sacrilege. They also used a host of bookish prosodies just to keep the reader distracted. Being mired in the petty-bourgeois environment, they could not even dream of challenging the reader through their poetic rhythm. Even their translations did not do justice to the work of foreign poets, since they were often marked by their own voice and style in Bengali. And when it came to the eventual poetic quality of their work, it always turned out to be utterly timid and effeminate.  


The above has been excerpted from the book titled Hungry Kingbadanti: History of a Literary Revolution written by Malay Roy Choudhury, and first published in July 1994. This is the first in the series of writings from the book that will be published eventually on the magazine’s website. Keep a lookout for the upcoming episodes!







.




কৌশিক সরকার-এর কথামৃত

 বিষয় মলয় রায়চৌধুরী : কৌশিক সরকার-এর কথামৃত


তোমাদের কাছে কবুল করতে লজ্জা নেই, আমি না লোকটা খুব -- যতই পাঙ্গা নিই না কেন -- আদতে, ষেনটিমেনটাল। আজ মলয়দার একটা পোস্ট দেখে চোখে জল এসে গেল। একা আমার নয়, আশা করি,  আরো অনেকেরই। মলয়দা এটা চাইছিলেন এমন নয়। হিড়িক দেবার মতো, পাবলিককে, খামখা, বয়স তাঁর নেই। বাপকেলে অই একজনই বুজ়উর্গ আদমি টিঁকে আছেন এই ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো, সমাজ দুনিয়ায়। কাশ এভাবে যদি সন্দীপন সুনীল শৈলেশ্বর সুবিমলদাকে পেতাম ফেসবুকে নট টু সে অ্যাবাউট কমল মজুমদার। ওঁরা অন্য এরার লোক। মলয়দা একটা অদ্ভুত কথা লিখলেন। "কত বই পড়া হয়নি। আর পড়ার সময়ও নেই।" আমি বিশ্ব ন্যাকা একটা লোক। আমোদগেঁড়ে। চোখ ফেটে জল এল। ষিনেমা দেখতে গেলেও আমার বুক ভেসে যায় চোখের জলে। চোখের জলে না বীর্যের জলে! সন্দীপনদা বলত। পিচকিরি দিয়ে জোকারের মতো কাঁদি। কমলবাবু বলতেন আমার কান্নায় যেন বাজ না পড়ে। গাছ শুকিয়ে যাক তিনি চাননি। এ হল গিয়ে রামকৃষ্ণ লাইন, উচ্চাঙ্গের নওটঙ্কি। আমি বলব, বই পড়ে সময় নষ্ট করবেন না মলয়দা। আর বই পড়াটা শুধু টেমপোরাল ব্যাপার নয়। ওটা অ্যাট দা সেম টাইম একটা টেকনিকাল কারসাজি, গ্যাঁড়াকল, উইজ়ডম। বাঙালিরা হিজিবিজি বই পড়বে। যে এখনো আরো পঞ্চাশ বছর বাঁচবে সে-ও অগ্রিম বঞ্চিত। এ শুধু অশিতিপর মানুষের দুঃখ নয়। কী পড়তে হবে সেটা কি একজন জানে! পড়তে অনেক সাহস লাগে। এখানে নিটশের পাঠকই নেই তো দেরিদা হাইডেগার। বাঙালি জাতটা স্কলারলি নয়। নট অ্যাটঅল। কোথায় এলান ভিতাল। কোথায় আমোর ফাতি। সন্দীপন তো মালদোরর বগলে নিয়ে ঘুরত। কেউ চাইলে তাকে আবার মুরগি করত। হেব্বি বৈঠকবাজি। আমি নিজের চোখে দেখেছি, সেনট্রাল অ্যাভিনউ কফিহাউসে। একাধিক লেখককে ধুর বানাতে। এমনকি শৈবাল মিত্রকে যেভাবে খোরাক করলেন। আমি মনে মনে খুব হাততালি দিয়েছি। সুবো আচার্য আরেক ধুর, লোত্রেমো চেয়েছিল। সেটা কথা নয়। অথচ সন্দীপনদা শন দো মালদোরর নিয়ে কোনোদিন কিছু লিখলো না। আসলে পড়াশোনা জারি রাখেনি। সারাজীবন শুধু আউটসাইডার নিয়েই কপচে গেল। কামু তো ছেলে ভোলানো ছড়া। তাও যদি দা ফলটা পড়ত। অথচ, উৎপল বসু ছিল এই সন্দীপনেরই ধামাধরা। মানে বইটই না পড়া ব্যাপারে। ক্ষুধার্তদেরও ঐ একই দশা। কবে শৈলেশ্বর আর্তো পড়েছে, সুভাষ ঘোষ হেনরি মিলার, বাসুদেব সেলিন কোনো চিহ্ন এমনকি সিনডার্স পর্যন্ত পাওয়া যায় না টেক্সটুয়ালিটির ভেতর। আমি মলয়দাকে বললাম, ফেসবুকে লাইভ করুন। মুখে বকে যান অনর্গল। কথাই থাকবে। ইউটিউবে আপলোড দেওয়ার লোক আছে। টকিং কিওর। ভাষা চিকিৎসা। ডাজ়াইন তো বাই ডেফিনিশন জন্ম-মরিজ। অস্তিত্বই বিমারি: নিরাময়। বকে যান। যে কথা বলে সে-ই জয়েসের কাছাকাছি। কথাই সাহিত্য। ভয়েস-বহেস। স্বর সংগ্রহ। পাখির নীড়ের থেকে খড়। হাঁসের নীড়ের থেকে খড়। স্বরই এফিজি: খোড়ো কাঠামো। জাতীয় গ্রন্থাগারে দেখা হলে যখন তাঁকে জিগেস করতাম সুবিমলদা আফসোস করে বলতেন লেখা হচ্ছে না হাতে ব্যথা। আমি বললাম, ডিকটেশন দিন। কত লোক বোর্হেসের কথা টুকে নিত। লেখক অরিজিনালি ধৃতরাষ্ট্র, পর্নস্টার, জন্মান্ধ, হোমার, একশো ছেলের বাবা, অথচ স্ত্রীযোনিই দর্শন করেনি, একেই বলে শব্দভেদী বাণ, অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ। কথাই স্কাল্পচার। সুবিমলদা বলল হাতে না লিখলে পুরোটা নিজেকে প্রকাশ করা যায় না। এসব ভুল ধারণা। টেপরেকর্ডার এক্সপেরিমেন্ট। লেখা একটা বোরিং প্রক্রিয়া। তুমি কি ওস্তাগর। ঠায় বসে ঐ নিজামের গায়ে নাচনেওয়ালির ঘাঘরায় চুমকি বসাবে! তুমি শালা শিল্পী সামুরাই। লেখা একটা মুভিং কারবার। ছবি আঁকার মতো। দূরে বসে সিগারেট টানো আর দ্যাখো, নিজের অর্ধসমাপ্ত ক্যানভাস। আর্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছাড়াও অব্যবহিত দূরত্ব দরকার। লেখা মাইওপিক। সক্রিটিস তাই কখনো লেখেনি। আপনি দরকার হলে আত্মজীবনী লিখুন। আবারও। রুশো তো চারবার লিখেছিল। এগজহসট করা যায় না আত্মঅটোপসি। সুনীলের জন্য তাই আমার বড় দুঃখ হয়। গর্ব করত ওর লেখা নাকি স্বীকারোক্তিমূলক। সব কথা কি লিখে গ্যাছে! লিখতে হবে। দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। আসুরিক টাস্ক। মানুষ সিসিফাস। সব কিছু ফাঁস করতে এসেছে। তুমি প্রমিথিউস। সুনীল আগে প্রমিথিউয়ান ছিল। তাই লিখতে পেরেছিল: গভীর রাত্তিরে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি  দেশলাই জ্বেলে, ও গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই। কবিতা এভাবেই মিথ্যে কথা বলে যা সত্যের চেয়েও সেনসেসনাল। সব কথা বলে দিতে হবে। নিজেকে ধ্বংস করে। লেখকের কোনো মা বাপ থাকে না। সে অনাথ, বেজন্মা। তার পিছুটান কী আছে। যা কেউ করেনি আপনি তাই করুন। সব বলে দিন। পৃথিবীর শেষ বইটা আপনাকেই লিখে যেতে হবে।