পথে পথে
বিধি আমার বামে থাকে বাস্তবতা ডানে
সুখের ভেতর দুঃখ কষ্ট অনেকখানি টানে
একটু একটু করে যখন একলা পথে চলি
কেউ আসে না ধারে কাছে কোনো কুসুমকলি
পথে পথে পা বাড়িয়ে যখন দূরে যাই
আশেপাশে কেউ থাকে না নিরাশ অসহায়
নিঃস্ব আমি হতে পারি হতাশাবাদী নই
স্বপ্ন-সুতোর চাদর গায়ে চলছি অবশ্যই
একদা এই দেশে চিলো সেই কাপড় মসলিন
ভিন্নভূমির দস্যুহেতু উধাও চিরবিলীন
অত্যাচারীর বিফলধ্বজা ওই প্রান্তে পোড়ে
চিরকালের পুন্যস্রোত উজ্জল সারাৎসারে
এমনি করেই চলছে সময় নিবিড় দুর্নিবারে
মানস-মনন গঠন-পঠন গভীর পারাপারে।
মধুমাছি
এখনো কথাগুলো মৌমাছি হয়ে ওড়ে প্রতিস্বরে
আর অহেতুকী আগুনে তাদের পাখাদুটি পোড়ে
কী যে সেই তীব্র আকর্ষণ কেউ বোঝে না
অন্ধকারেও নক্সা আঁকে সব বর্ণালী আলপনা
মধুরা ফুলে থাকে নিশ্চুপ নীরবে গোপনে
মৌ মৌ উড়ে উড়ে ফুলে ফুলে গড়ে মধুবনে
ফুলপাখি মৌচাক মৌমাছি মধুগ্রাম গড়ে
ডালে ডালে গুন গুন সঙ্গীতের সুর উপচে পড়ে
আগুনের শাদা ধোঁয়া চারদিকে মেঘাচ্ছন্নে
মধুমাছি দিশেহারা মৌবাড়ি ছেড়ে চলে নিঃশূন্যে
সবকিছু কেড়ে নেয় যাবতীয় মধুর ভাণ্ডার
মধুকর মধুকরী মধুকোষে জ্বালায় মধুথবর্তিকা অপার
সেই আলোতে উজ্জ্বল চারদিক প্রকৃতি অপরূপা
ফুলমধু মৌমাছি মৌচাক মধুলেহী মধুলোলুপা
ফুলে ফুলে মধু নিয়ে মৌমাছি মৌচাক বানায়
মৌয়াল লুটে নেয় জোর করে, সেইসব মৌ নিরূপায়।
নিভৃতি আনে মধুরিমা বিপন্ন মনোভূমিতে
একটু অবহেলা অকূল সাগরে ডুবে যায়
দূরে আকাশ ঝুলে আছে শূন্যতার প্রামেত্ম
তবুও দৃশ্যমান অতলের কালে বিষণ্ণতা বিদায়
মেঘগুলো জলে ভরে গেলে মানুষ কী বলে
এখন বৃষ্টি পড়বে না কি মরুভূমি সাগর হবে
অতঃপর বজ্রপাতে ছিন্নভিন্ন হয় প্রিয় বিহবলে
আর কী হবে মানুষের মঙ্গলবিভা থিতু বৈভবে
কোনোকিছুই কোনোকিছু নয় খানিক ইঙ্গিতময়
যদিও সম্পূর্ণতা সবসময় পরিবর্তনের প্রস্ত্ততি
পরিস্থিতি নিবিড় চাষের বিনম্র আলিঙ্গনে ঘন হয়
সাধারণত অসাধারণত্ব কোনোদিন পায় না স্বীকৃতি
দুঃখ নিরানন্দ সর্বদা অদৃশ্যতার অবগুণ্ঠনে লুপ্ত
হাসি আনন্দ সুখ সব উদ্ভাসিত বৈপরীত্যে সুপ্ত
কী এমন প্রত্যাশা যে আসতেই হবে প্রতিবার
না এসেও তো আসা যায় মনে মনে
আশা যায় আশা আসে বারংবার
আসা যায় আসার আশায় বসা যায় সিংহাসনে
আশা নেই আশা কখনো থাকে না অমন
আসা-যাওয়ার মধ্যেই আশার সরল মন
ওই যে বিন্দু বিন্দু আলো ওরা কারো নয় তেমন
ওরা সবার ওরা খুব নিজস্বপরায়ণ
আবার নিজেরও নয় অনমত্মকাল ঘুরে ঘুরে মরে
আসে আর আশায় আশায় আসা-যাওয়া করে
আশার আসায় যায় আসে সব
আসার আশায় নিত্য কলরব
আশায় আশায় দুরাশার প্রকৃত পরিচয়
ওলট-পালট এখন আশার আসা তার নিজস্ব বিষয়
আসার আশায় উড়ে উড়ে ওড়া
আশার আশায় শুরম্ন সেই পুরনো মহড়া
আসার আশা আর আশার আসা দূরে চলে যায়
আশার আসায় তবুও আশা জাগে সমস্যা কোথায়
সব কিছু খুলে বলা ভালো নয় এত আর
রেখে ঢেকে বলা মানে কিছু বলা যায় ঠিক
প্রায় সবে তাই করে মেঘে মেঘে অন্য দিক
অতি জলে ভাসে ভূমি আর শস্য ফল সার
সে-ই ভোগে বেশি যার নেই কম কোনো ভুলে
হালে সুদে হারে ফের কী-না বারে বারে ঘটে
তাতে কিছু যায় আসে কি-বা হবে তার বটে
মনে পড়ে পাতা নড়ে শ্যাম রাখি তবু কূলে
তাপে পোড়ে পাপ পুণ্য অন্য ভূত ভাব বোধ
শীতে ধরা থাকে সুখ হাস্য হর্ষ শুরু শেষ
দিকে দিকে সব দেখা যায় পালা যাত্রা বেশ
ভাষা থেকে হয় শুরু এতে হয় সব শোধ
পাখি মাছ নদী পলি মাটি গড়ে গৌড় দেশ
চির দিন কাল যাবে বয়ে এই প্রতি বেশ
বাঁকে বাঁকে খালে বিলে ছোট ছোট জলে ঢেউ কেন খেলা করে
কেন ওঠে নামে কেন তারা হাতে হাতে ধরে সব কিছু নিয়ে
যায় দূরে যেতে যেতে শুধু তারা দূরে যেতে থাকে যেতে যেতে
পিছু ফিরে চায় তবু তারা এই ভাবে যেতে যেতে আর কত
দূরে দূরে যাবে চির কাল সেই পথ পাড়ি দিলে পথ হারা
হবে তাকি তারা জানে দূরে গেলে কেন তারা কাছে আসে ধীরে
তারা আর কত দূর যাবে এই রাতে চলে যেতে যেতে দিনে
বারে বারে ফিরে ফিরে চেয়ে চেয়ে সেই দিন কত দিন হবে
সারা রাত জলে ভিজে ভিজে মেঘে মেঘে কত বেলা যায় চলে
আর ফেরা হয় নাকি নদী কূলে কত বড় মাছ মাথা তুলে
ইতি উতি চায় চোখে চোখে চোখ রাখে ওই পাড়ে গাছে গাছে
পাখি সব ওড়া উড়ি করে পাতা ধরে ঝুলে পড়ে ডালে ডালে
দোল খায় দুলে দুলে কথা কয় হেসে হেসে মনে মনে ভাবে
আর কোন দিন দেখা হবে কিনা হবে কিবা নাও হতে পারে
তবে সব শেষে চলে যেতে হবে দেখা হবে যদি চোখ দুটি
ভালো থাকে তবে ঠিক চলে যেতে হবে সেটা কেন কবে কোন
দিনে বলা যায় কিবা এক থালা ভরে আদা নুন ঝাল মুড়ি
নেড়ে নেড়ে ভেজে ভেজে মনে মনে কত কথা কিযে ধরা পড়ে
তার পরে ধীরে ধীরে তারা সব একে একে কাছে এসে বলে
যাই তবে চলে যাই ডুবে ডুবে বহু দূরে এত পথ নিয়ে
কিছু নেই সাথে সাথে তবু তাকে যেতে হবে যেতে যেতে দূরে
এক দিন তারা ঘর ছাড়া হবে তাকি তারা জানে কিনা জানে
বারে বারে কাছে আসা ফিরে ফিরে দূরে থাকা আর কত গত
ভোর বেলা সাঁঝ রাতে সুখে দুখে বারে বারে ফিরে ফিরে …
এক.
নিজের আমার কিছুই নেই
ব্যক্তিত্বহীন আমি-র
দেহ তৈরি পিতামাতার
মনটি অন্তর্যামীর
দুই.
পরিখাটি চারিদিকে
প্রাচীর প্রাসাদ ঘিরে
তবু আসে শত্রু
বারে বারে ফিরে
তিন.
মাঝরাতে বাজ পড়ে
ঠা-ঠা – বিদ্যুতায়িত
কর্ণকুহরে পৌঁছুলেই
সবকিছু সত্যায়িত
চার.
পাঁচমিশালি পাঁচে নয়
অগণন তার সংখ্যা
হয়তো দুই-তিনে মেশে
নেই কোনো ব্যাখ্যা
পাঁচ.
আকাশে মেঘ নেই
তবু নামে বৃষ্টি
ঝর্ ঝর্ ঝরে যায়
এ কী অনাসৃষ্টি
ছয়.
পিপাসায় বুক ফাটে
আকাশে জল নেই
মেঘ শুকিয়ে তুলো
শুধু আকাশগঙ্গা নামেই
চারিদিকে নিরাকার আকারের সার্থকতা
বহুদূরে মানুষের জনপদ দৃশ্যমান
নদীদের জলস্রোতে ভাসমান পাখিকুল
আনমনে ডুবুরির সাবলীল কুশলতা
প্রকৃতির অবদান সবকিছু মনোময়
সেইসব গুদামের ভাণ্ডারে কতকিছু
পেয়েছিল অফুরান কৃতকর্মে বিহবল
সারাদিন সারারাত আনন্দ শুধাময়
মাঝামাঝি বিষণ্ণ মনোভাব উপভোগে
পূর্ণতার সারাংশে বিধিলিপি নিচুমুখী
এরপর তারপর আগুয়ান যাযাবর
মরুভূমে সান্নিধ্য নিরাপদ বহুভোগে
আশালতা অশালীন বহমান সমুদয়
পাহাড়ের পাদদেশে উপত্যকা সবুজাভ
হৃদয়ের ঢেউগুলো নিরুপায় জলাধারে
পাশাপাশি যাযাবর সাবলীল কতিপয়
সবকিছু গণ্যমান্য অপমান অশালীন
বলিহারি অপরাধ মূল্যায়ন অন্তরীণ।
আমাদের সুখগুলো বিষণ্ণ হলে
দুঃখগুলো হেসে ওঠে
আনন্দরা অশ্রুসজল হলে
বেদনারা পুলকিত বোধ করে
বিখ্যাত ব্যক্তিগণ আরো খ্যাতি পান
যাবতীয় খ্যাতি লোপ করে
কুখ্যাতরা যাবতীয় কুকর্ম করে
আরো কুখ্যাত হন এবং এভাবে
অতিখ্যাতি লাভ করেন
সম্মানীয়রা আরো সম্মানিত হন
নিজেদের সম্মান হারিয়ে
অসম্মানীয়রা আরো অসম্মানিত হন
সমাজে সম্মান অর্জন করে
কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি অন্যদের
অপমানিত করে থাকেন হীনমন্যতায়
নিজেদের তথাকথিত ব্যক্তিত্ব বাড়াতে
আর বেচারা অন্যজনেরা তাদের দ্বারা
ব্যক্তিত্ব হারিয়ে নিজেদের
শুধু শুধু বিশিষ্ট ভাবেন
নিঃস্বতা নিঃশূন্য খুব সবকিছু পেয়ে
পূর্ণতা পরিপূর্ণতা পায় সর্বস্ব হারিয়ে
বিজয়ী জয়ী হয় অপরাজয়ে
পরাজয়ী হেরে যায় বিজয়ী হয়ে
পরাধীনতা পরাধীন পরাধীনতায়
স্বাধীনতা স্বাধীন স্বাধীনতায়
নিশ্চিত হওয়ার কী প্রয়োজন এখন
যেখানে অনিশ্চয়তার এত আয়োজন
বরং এই বিপদসঙ্কুলতায় দুলে দুলে
ভেসে ভেসে উৎপাটিত হই সমূলে
কোথাও স্থিরতা নেই নেই কোনো নিজস্বতা
নদীতে নৌকো ভাসে জলের কী স্বাধীনতা
কুলুকুলু বয়ে চলে যেদিকে ঢালুভূমি
দুই দিকে সারি সারি বিবর্তনের উষর জমি
পূর্ণ সতেজ সর্বংসহা দুঃখ-কষ্ট বহমান
মাঝে মাঝে কিছু আনন্দ-সুখ ম্রিয়মাণ
এটাই অনেক পাওয়া সমসূত্রে সময়বান্ধব
অপমান দুর্ব্যবহার ব্যক্তিস্বাধীনতার তা-ব
এভাবেই নাকি ব্যক্তিত্বের হাস্যকর সূচনা
দৃশ্যমান অর্থসম্পত্তি রক্ষায় এরূপ অবমাননা
ক্ষমতাবানদের আগ্নেয়াস্ত্রের মতোই শব্দাস্ত্র
যুগে যুগে ব্যবহৃত হতে হতে এখন ব্রহ্মাস্ত্র
সুখ-দুঃখও এখন শ্রেণিবিন্যাসে বহুবিভক্ত
যদিও হর্ষ বিষণ্ণতা যার যেমন একান্তই ব্যক্তিগত
সেই যে পথের শুরু তারপর আর বিরতি নেই অন্যজাত নদীরা দূরের সমুদ্রে
যায় না মাঝে মাঝে জলাশয়গুলো গভীরতার ভেতর ডুব দিয়ে জলের যোনি খুঁজে
মরে আর আকাশ বুক চিতিয়ে নক্ষত্র-শহর দেখে সূর্যের রেলগাড়িতে চড়ে বাড়ি
ফেরার কথা ভাবে ওই তো নগরের বিশাল গ্রামগঞ্জে সাইকেল আর সন্দেশের ভিড়
ট্রাফিক-দ্বীপ সরে যায় রাজপথে এবার চোখ বুজে সোজা তারপর ডাইনে মোড়
নৈর্ঋতে জলহীন এক রাজা সন্ধ্যার সরোবরে বাড়ি-ঘর নেই ডান চোখে লাল এবং
বাঁয়ে সবুজ নিয়ে ওই সাদা-রং পুলিশ দাঁড়িয়ে খেলনা-গাড়ি-ঘোড়া বটতলায়
গো-পালে রাখাল বাঁশি বাজালেই দুর্ঘটনা দুর্ঘটনায় পড়ে পথসব পথের ধারে
পথিকের কোথায় ঘর-বাড়ি বাতাস ছিঁড়ে গেছে চোখের ভেতর পুকুর উল্টোরথে
মেঘের ছাদ ফুটো হয়ে গেলে আঁধার বৃষ্টির দড়ি বেয়ে নিচে নামে উড্ডীন
পাখিরা সিঁড়ি ছাড়াও ওপরে উঠতে পারে, সেই ঘাসহীন সবুজ জমি শিশির
জমিয়ে কংক্রিট পাথরের কোনো চোখ নেই চারদিকে শুধু মনমণ্ডলীর নীল
শূন্যতা দৃশ্যহীন চলে যাওয়া নিরুদ্দেশের সাঁকো পেরিয়ে নারকেল পাড়ার
ওপারে সাপ কীটপতঙ্গ জীবজন্তু নিয়ে এক ট্যুরিস্ট গাইড এটা হলো দুঃখ
ওটা হতাশা নিরাশার ওপারেই ভাঙাবুক তার পাশেই বিষণ্নতা নিঃসঙ্গতা আর
আনন্দের প্রতœতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ ছাইদানি পরিপূর্ণ জ্যোৎস্নার প্রতীকায়িত
স্নানঘর অমানিশার কার্যকারণ পূর্ণিমার যাবতীয় কর্মকাণ্ড সিংহদ্বারের
অংশত নির্মাণ-কৌশল মৌমাছির বিস্তীর্ণ রহস্য হীরক ও প্লাটিনামের
শ্রেষ্ঠতম কয়লাখনি পাতালের অগণন পর্বতরাজি গভীরতম আঁধারের প্রজাপতি
আকাশগঙ্গায় আগুন নিয়ে অন্ধকার আলোর সঙ্গে খেলা করে এবং তারপর
সেই যে পথের শুরু পথের দায় পৌঁছে দেওয়া পথ পাড়ি দেয় পথে পথে
কারা যেন সঙ্গে ভিড়তে চায় তারা আর কিছুই চায় না শুধু পথ চলাতেই –
বিধি আমার বামে থাকে বাস্তবতা ডানে
সুখের ভেতর দুঃখ কষ্ট অনেকখানি টানে
একটু একটু করে যখন একলা পথে চলি
কেউ আসে না ধারে কাছে কোনো কুসুমকলি
পথে পথে পা বাড়িয়ে যখন দূরে যাই
আশেপাশে কেউ থাকে না নিরাশ অসহায়
নিঃস্ব আমি হতে পারি হতাশাবাদী নই
স্বপ্ন-সুতোর চাদর গায়ে চলছি অবশ্যই
একদা এই দেশে চিলো সেই কাপড় মসলিন
ভিন্নভূমির দস্যুহেতু উধাও চিরবিলীন
অত্যাচারীর বিফলধ্বজা ওই প্রান্তে পোড়ে
চিরকালের পুন্যস্রোত উজ্জল সারাৎসারে
এমনি করেই চলছে সময় নিবিড় দুর্নিবারে
মানস-মনন গঠন-পঠন গভীর পারাপারে।
মধুমাছি
এখনো কথাগুলো মৌমাছি হয়ে ওড়ে প্রতিস্বরে
আর অহেতুকী আগুনে তাদের পাখাদুটি পোড়ে
কী যে সেই তীব্র আকর্ষণ কেউ বোঝে না
অন্ধকারেও নক্সা আঁকে সব বর্ণালী আলপনা
মধুরা ফুলে থাকে নিশ্চুপ নীরবে গোপনে
মৌ মৌ উড়ে উড়ে ফুলে ফুলে গড়ে মধুবনে
ফুলপাখি মৌচাক মৌমাছি মধুগ্রাম গড়ে
ডালে ডালে গুন গুন সঙ্গীতের সুর উপচে পড়ে
আগুনের শাদা ধোঁয়া চারদিকে মেঘাচ্ছন্নে
মধুমাছি দিশেহারা মৌবাড়ি ছেড়ে চলে নিঃশূন্যে
সবকিছু কেড়ে নেয় যাবতীয় মধুর ভাণ্ডার
মধুকর মধুকরী মধুকোষে জ্বালায় মধুথবর্তিকা অপার
সেই আলোতে উজ্জ্বল চারদিক প্রকৃতি অপরূপা
ফুলমধু মৌমাছি মৌচাক মধুলেহী মধুলোলুপা
ফুলে ফুলে মধু নিয়ে মৌমাছি মৌচাক বানায়
মৌয়াল লুটে নেয় জোর করে, সেইসব মৌ নিরূপায়।
কোনোকিছুই কোনোকিছু নয়
নিভৃতি আনে মধুরিমা বিপন্ন মনোভূমিতে
একটু অবহেলা অকূল সাগরে ডুবে যায়
দূরে আকাশ ঝুলে আছে শূন্যতার প্রামেত্ম
তবুও দৃশ্যমান অতলের কালে বিষণ্ণতা বিদায়
মেঘগুলো জলে ভরে গেলে মানুষ কী বলে
এখন বৃষ্টি পড়বে না কি মরুভূমি সাগর হবে
অতঃপর বজ্রপাতে ছিন্নভিন্ন হয় প্রিয় বিহবলে
আর কী হবে মানুষের মঙ্গলবিভা থিতু বৈভবে
কোনোকিছুই কোনোকিছু নয় খানিক ইঙ্গিতময়
যদিও সম্পূর্ণতা সবসময় পরিবর্তনের প্রস্ত্ততি
পরিস্থিতি নিবিড় চাষের বিনম্র আলিঙ্গনে ঘন হয়
সাধারণত অসাধারণত্ব কোনোদিন পায় না স্বীকৃতি
দুঃখ নিরানন্দ সর্বদা অদৃশ্যতার অবগুণ্ঠনে লুপ্ত
হাসি আনন্দ সুখ সব উদ্ভাসিত বৈপরীত্যে সুপ্ত
আশা আর আসা
কী এমন প্রত্যাশা যে আসতেই হবে প্রতিবার
না এসেও তো আসা যায় মনে মনে
আশা যায় আশা আসে বারংবার
আসা যায় আসার আশায় বসা যায় সিংহাসনে
আশা নেই আশা কখনো থাকে না অমন
আসা-যাওয়ার মধ্যেই আশার সরল মন
ওই যে বিন্দু বিন্দু আলো ওরা কারো নয় তেমন
ওরা সবার ওরা খুব নিজস্বপরায়ণ
আবার নিজেরও নয় অনমত্মকাল ঘুরে ঘুরে মরে
আসে আর আশায় আশায় আসা-যাওয়া করে
আশার আসায় যায় আসে সব
আসার আশায় নিত্য কলরব
আশায় আশায় দুরাশার প্রকৃত পরিচয়
ওলট-পালট এখন আশার আসা তার নিজস্ব বিষয়
আসার আশায় উড়ে উড়ে ওড়া
আশার আশায় শুরম্ন সেই পুরনো মহড়া
আসার আশা আর আশার আসা দূরে চলে যায়
আশার আসায় তবুও আশা জাগে সমস্যা কোথায়
পলি মাটি গড়ে গৌড় দেশ
সব কিছু খুলে বলা ভালো নয় এত আর
রেখে ঢেকে বলা মানে কিছু বলা যায় ঠিক
প্রায় সবে তাই করে মেঘে মেঘে অন্য দিক
অতি জলে ভাসে ভূমি আর শস্য ফল সার
সে-ই ভোগে বেশি যার নেই কম কোনো ভুলে
হালে সুদে হারে ফের কী-না বারে বারে ঘটে
তাতে কিছু যায় আসে কি-বা হবে তার বটে
মনে পড়ে পাতা নড়ে শ্যাম রাখি তবু কূলে
তাপে পোড়ে পাপ পুণ্য অন্য ভূত ভাব বোধ
শীতে ধরা থাকে সুখ হাস্য হর্ষ শুরু শেষ
দিকে দিকে সব দেখা যায় পালা যাত্রা বেশ
ভাষা থেকে হয় শুরু এতে হয় সব শোধ
পাখি মাছ নদী পলি মাটি গড়ে গৌড় দেশ
চির দিন কাল যাবে বয়ে এই প্রতি বেশ
বারে বারে ফিরে ফিরে
বাঁকে বাঁকে খালে বিলে ছোট ছোট জলে ঢেউ কেন খেলা করে
কেন ওঠে নামে কেন তারা হাতে হাতে ধরে সব কিছু নিয়ে
যায় দূরে যেতে যেতে শুধু তারা দূরে যেতে থাকে যেতে যেতে
পিছু ফিরে চায় তবু তারা এই ভাবে যেতে যেতে আর কত
দূরে দূরে যাবে চির কাল সেই পথ পাড়ি দিলে পথ হারা
হবে তাকি তারা জানে দূরে গেলে কেন তারা কাছে আসে ধীরে
তারা আর কত দূর যাবে এই রাতে চলে যেতে যেতে দিনে
বারে বারে ফিরে ফিরে চেয়ে চেয়ে সেই দিন কত দিন হবে
সারা রাত জলে ভিজে ভিজে মেঘে মেঘে কত বেলা যায় চলে
আর ফেরা হয় নাকি নদী কূলে কত বড় মাছ মাথা তুলে
ইতি উতি চায় চোখে চোখে চোখ রাখে ওই পাড়ে গাছে গাছে
পাখি সব ওড়া উড়ি করে পাতা ধরে ঝুলে পড়ে ডালে ডালে
দোল খায় দুলে দুলে কথা কয় হেসে হেসে মনে মনে ভাবে
আর কোন দিন দেখা হবে কিনা হবে কিবা নাও হতে পারে
তবে সব শেষে চলে যেতে হবে দেখা হবে যদি চোখ দুটি
ভালো থাকে তবে ঠিক চলে যেতে হবে সেটা কেন কবে কোন
দিনে বলা যায় কিবা এক থালা ভরে আদা নুন ঝাল মুড়ি
নেড়ে নেড়ে ভেজে ভেজে মনে মনে কত কথা কিযে ধরা পড়ে
তার পরে ধীরে ধীরে তারা সব একে একে কাছে এসে বলে
যাই তবে চলে যাই ডুবে ডুবে বহু দূরে এত পথ নিয়ে
কিছু নেই সাথে সাথে তবু তাকে যেতে হবে যেতে যেতে দূরে
এক দিন তারা ঘর ছাড়া হবে তাকি তারা জানে কিনা জানে
বারে বারে কাছে আসা ফিরে ফিরে দূরে থাকা আর কত গত
ভোর বেলা সাঁঝ রাতে সুখে দুখে বারে বারে ফিরে ফিরে …
ছয়টি চার পঙ্ক্তির পদ্য
নিজের আমার কিছুই নেই
ব্যক্তিত্বহীন আমি-র
দেহ তৈরি পিতামাতার
মনটি অন্তর্যামীর
দুই.
পরিখাটি চারিদিকে
প্রাচীর প্রাসাদ ঘিরে
তবু আসে শত্রু
বারে বারে ফিরে
তিন.
মাঝরাতে বাজ পড়ে
ঠা-ঠা – বিদ্যুতায়িত
কর্ণকুহরে পৌঁছুলেই
সবকিছু সত্যায়িত
চার.
পাঁচমিশালি পাঁচে নয়
অগণন তার সংখ্যা
হয়তো দুই-তিনে মেশে
নেই কোনো ব্যাখ্যা
পাঁচ.
আকাশে মেঘ নেই
তবু নামে বৃষ্টি
ঝর্ ঝর্ ঝরে যায়
এ কী অনাসৃষ্টি
ছয়.
পিপাসায় বুক ফাটে
আকাশে জল নেই
মেঘ শুকিয়ে তুলো
শুধু আকাশগঙ্গা নামেই
বলিহারি অপরাধ
চারিদিকে নিরাকার আকারের সার্থকতা
বহুদূরে মানুষের জনপদ দৃশ্যমান
নদীদের জলস্রোতে ভাসমান পাখিকুল
আনমনে ডুবুরির সাবলীল কুশলতা
প্রকৃতির অবদান সবকিছু মনোময়
সেইসব গুদামের ভাণ্ডারে কতকিছু
পেয়েছিল অফুরান কৃতকর্মে বিহবল
সারাদিন সারারাত আনন্দ শুধাময়
মাঝামাঝি বিষণ্ণ মনোভাব উপভোগে
পূর্ণতার সারাংশে বিধিলিপি নিচুমুখী
এরপর তারপর আগুয়ান যাযাবর
মরুভূমে সান্নিধ্য নিরাপদ বহুভোগে
আশালতা অশালীন বহমান সমুদয়
পাহাড়ের পাদদেশে উপত্যকা সবুজাভ
হৃদয়ের ঢেউগুলো নিরুপায় জলাধারে
পাশাপাশি যাযাবর সাবলীল কতিপয়
সবকিছু গণ্যমান্য অপমান অশালীন
বলিহারি অপরাধ মূল্যায়ন অন্তরীণ।
স্বাধীনতা স্বাধীন স্বাধীনতায়
দুঃখগুলো হেসে ওঠে
আনন্দরা অশ্রুসজল হলে
বেদনারা পুলকিত বোধ করে
বিখ্যাত ব্যক্তিগণ আরো খ্যাতি পান
যাবতীয় খ্যাতি লোপ করে
কুখ্যাতরা যাবতীয় কুকর্ম করে
আরো কুখ্যাত হন এবং এভাবে
অতিখ্যাতি লাভ করেন
সম্মানীয়রা আরো সম্মানিত হন
নিজেদের সম্মান হারিয়ে
অসম্মানীয়রা আরো অসম্মানিত হন
সমাজে সম্মান অর্জন করে
কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি অন্যদের
অপমানিত করে থাকেন হীনমন্যতায়
নিজেদের তথাকথিত ব্যক্তিত্ব বাড়াতে
আর বেচারা অন্যজনেরা তাদের দ্বারা
ব্যক্তিত্ব হারিয়ে নিজেদের
শুধু শুধু বিশিষ্ট ভাবেন
নিঃস্বতা নিঃশূন্য খুব সবকিছু পেয়ে
পূর্ণতা পরিপূর্ণতা পায় সর্বস্ব হারিয়ে
বিজয়ী জয়ী হয় অপরাজয়ে
পরাজয়ী হেরে যায় বিজয়ী হয়ে
পরাধীনতা পরাধীন পরাধীনতায়
স্বাধীনতা স্বাধীন স্বাধীনতায়
একান্তই ব্যক্তিগত
যেখানে অনিশ্চয়তার এত আয়োজন
বরং এই বিপদসঙ্কুলতায় দুলে দুলে
ভেসে ভেসে উৎপাটিত হই সমূলে
কোথাও স্থিরতা নেই নেই কোনো নিজস্বতা
নদীতে নৌকো ভাসে জলের কী স্বাধীনতা
কুলুকুলু বয়ে চলে যেদিকে ঢালুভূমি
দুই দিকে সারি সারি বিবর্তনের উষর জমি
পূর্ণ সতেজ সর্বংসহা দুঃখ-কষ্ট বহমান
মাঝে মাঝে কিছু আনন্দ-সুখ ম্রিয়মাণ
এটাই অনেক পাওয়া সমসূত্রে সময়বান্ধব
অপমান দুর্ব্যবহার ব্যক্তিস্বাধীনতার তা-ব
এভাবেই নাকি ব্যক্তিত্বের হাস্যকর সূচনা
দৃশ্যমান অর্থসম্পত্তি রক্ষায় এরূপ অবমাননা
ক্ষমতাবানদের আগ্নেয়াস্ত্রের মতোই শব্দাস্ত্র
যুগে যুগে ব্যবহৃত হতে হতে এখন ব্রহ্মাস্ত্র
সুখ-দুঃখও এখন শ্রেণিবিন্যাসে বহুবিভক্ত
যদিও হর্ষ বিষণ্ণতা যার যেমন একান্তই ব্যক্তিগত
সেই যে পথের শুরু
সেই যে পথের শুরু তারপর আর বিরতি নেই অন্যজাত নদীরা দূরের সমুদ্রে
যায় না মাঝে মাঝে জলাশয়গুলো গভীরতার ভেতর ডুব দিয়ে জলের যোনি খুঁজে
মরে আর আকাশ বুক চিতিয়ে নক্ষত্র-শহর দেখে সূর্যের রেলগাড়িতে চড়ে বাড়ি
ফেরার কথা ভাবে ওই তো নগরের বিশাল গ্রামগঞ্জে সাইকেল আর সন্দেশের ভিড়
ট্রাফিক-দ্বীপ সরে যায় রাজপথে এবার চোখ বুজে সোজা তারপর ডাইনে মোড়
নৈর্ঋতে জলহীন এক রাজা সন্ধ্যার সরোবরে বাড়ি-ঘর নেই ডান চোখে লাল এবং
বাঁয়ে সবুজ নিয়ে ওই সাদা-রং পুলিশ দাঁড়িয়ে খেলনা-গাড়ি-ঘোড়া বটতলায়
গো-পালে রাখাল বাঁশি বাজালেই দুর্ঘটনা দুর্ঘটনায় পড়ে পথসব পথের ধারে
পথিকের কোথায় ঘর-বাড়ি বাতাস ছিঁড়ে গেছে চোখের ভেতর পুকুর উল্টোরথে
মেঘের ছাদ ফুটো হয়ে গেলে আঁধার বৃষ্টির দড়ি বেয়ে নিচে নামে উড্ডীন
পাখিরা সিঁড়ি ছাড়াও ওপরে উঠতে পারে, সেই ঘাসহীন সবুজ জমি শিশির
জমিয়ে কংক্রিট পাথরের কোনো চোখ নেই চারদিকে শুধু মনমণ্ডলীর নীল
শূন্যতা দৃশ্যহীন চলে যাওয়া নিরুদ্দেশের সাঁকো পেরিয়ে নারকেল পাড়ার
ওপারে সাপ কীটপতঙ্গ জীবজন্তু নিয়ে এক ট্যুরিস্ট গাইড এটা হলো দুঃখ
ওটা হতাশা নিরাশার ওপারেই ভাঙাবুক তার পাশেই বিষণ্নতা নিঃসঙ্গতা আর
আনন্দের প্রতœতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ ছাইদানি পরিপূর্ণ জ্যোৎস্নার প্রতীকায়িত
স্নানঘর অমানিশার কার্যকারণ পূর্ণিমার যাবতীয় কর্মকাণ্ড সিংহদ্বারের
অংশত নির্মাণ-কৌশল মৌমাছির বিস্তীর্ণ রহস্য হীরক ও প্লাটিনামের
শ্রেষ্ঠতম কয়লাখনি পাতালের অগণন পর্বতরাজি গভীরতম আঁধারের প্রজাপতি
আকাশগঙ্গায় আগুন নিয়ে অন্ধকার আলোর সঙ্গে খেলা করে এবং তারপর
সেই যে পথের শুরু পথের দায় পৌঁছে দেওয়া পথ পাড়ি দেয় পথে পথে
কারা যেন সঙ্গে ভিড়তে চায় তারা আর কিছুই চায় না শুধু পথ চলাতেই –
জনৌষধি
সে কোন বিষয়ে আমাদের ভিতরদেশে বেদনাউদ্রেকী
কে এই অন্যায় অবিচারে নিরতিশয় নিঠুরপাতকী
তা নয় তেমন অনুভূতি অনাদরের নাতিসুখভোগী
যা ছিল বলার কথাসব পরিষ্কার যোগাযোগযোগী
সে দেয় জানিয়ে সরাসরি অনুধাবনে ধারাবর্ণনীয়া
এ নিয়ে এমন আহবান নিশ্চয়ই আশাজাগানিয়া
কী সেই নির্মল নিসর্গের বাতাবরণে অতিগরিষ্ঠ
ওই রেশ বিশেষ কাহিনির বর্ণনাসূত্রে নিয়মনিষ্ঠ
যা হয় এমন দাবিমতে বিরোধীদের পাতিসভাপতি
তা দেখে বিব্রত অসময়ে নিরপেক্ষতা অগতিরগতি
কী সেই আমূল অমূলক পরিবর্তন প্রতিপ্রান্তরে
হা করে তাকানো বিষয়টি অনভিপ্রেত প্রকারান্তরে
ওই রীতি সকল সংসারে পরিবারের মনুষ্যধারণা
হ্যাঁ সব দেখেছি আজীবন জীবিতদের অসম্মাননা
কী সেই কর্তব্য মানুষের দুঃসময়ে প্রাকৃতিকতায়
অ কথ্য কাহিনি চিরকাল হন্যমানের অরূপকথায়
যে নদী জলৌকা জলৌষধি জলবাহিত জলকুহেলিতে
হে হৃদি জনৈকা জনৌষধি জনপালিত জনকাকলিতে
জীবন এরকমই
চারিদিকে হইচই নিঃশব্দতা দরকার
প্রচন্ড শব্দ করে চুপ্ বলতেই পলকে
হুড়মুড় করে সুনসান অলক্ষে
নির্জনতা এসে দেখা দেয় যদিও
সবাই উপস্থিত ছিল তখনো
অদূরে দূরত্ব দাঁড়িয়ে ছিল
নৈকট্য বহু দূরে ঝাপসা চোখে
কাছে ডাকে দূরত্ব কাছে আসে
নিকট নিকটে আসে না কখনো
দূরই কাছে নিকট ধরা দেয় না
দুটি চোখ পাশাপাশি
মিলেমিশে একটি হয় না তারা
কোনোদিন কেউ নিজেকে দেখে না
আয়নায় সে তো উলটো করে দেখা
ও দেখা তো ঠিক দেখা নয়
জীবন এরকমই
ধান্যসংস্কৃতির এই মৃত্তিকা
যুদ্ধ প্রেম শিল্প আর রাজনীতির কোনো স্থায়িত্ব নেই
সর্বদাই পরিবর্তনবান্ধব
জীবিত না থাকলে মানুষ বা প্রাণীর মৃত্যু হয় না
যার কিছু নেই, সে কীভাবে নিঃশেষ হবে
যে ঘর থেকে বেরই হয় না, সে কী করে পথ হারাবে
জলে পড়লে অতলে ডুবতে হয়, তা না হলে সাঁতার
নিহত হতে হলে আগে আহত হতে হয়
মাটিতে যে-শায়িত তার আর উঁচু থেকে পড়া
হয়ে ওঠে না, ওড়াউড়ি তো দূরের কথা
গড়ে ওঠা কিছু কিছুকেই ভাঙাভাঙি করা যায়
চুক্তি সম্পর্ক সেতু মন ভালোবাসা আয়না
জলের গ্লাস জানালার কাচ সড়ক সবই ভঙ্গুর
সুখ শান্তি শ্রেয়তা বন্ধুতা কল্যাণীয়তা সহমর্মিতা
সবই অবশেষে ভেঙে ভেঙে খ–বিখ-
হীরক নীলকান্তমণি মুক্তো হয়ে চারিদিক
উদ্ভাসিত উজ্জ্বলিত বর্ণালি আলোর ঝর্ণায়
যে সুখী তার দুঃখ হয় না, সুখ বিশ্বস্ত শত্রু
যে দুঃখী তার সুখ নেই, দুঃখ নির্মম বন্ধু
একমাত্র সম্মানিতজনকেই অসম্মানিত হতে হয়
ভেতরে কিছু না থাকলে কেউ তার প্রতি
আকৃষ্ট বা কাছে আসে না, এদেশের মাটি মানুষ
কোনোদিন পরাজিত হয়নি, তারা অধিকৃত
বহির্শত্রু দ্বারা যুগে যুগে, এরা স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বয়ম্ভু
যুদ্ধের প্রয়োজন কখনো হয়নি, পরধনের লোভহীন
এই দেশ তাহলে কীভাবে পরাজিত হয়
ধান্যসংস্কৃতির এই মৃত্তিকা ছিল অধীনে, কোনোদিন পরাজিত নয়
নিঃসঙ্গ মানুষের কোনো বন্ধু হয় না
নিঃসঙ্গ মানুষের কোনো বন্ধু হয় না
মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়
মানুষ সব সময় খুব একা
নিঃসঙ্গতা ছাড়া মানুষের কোনো বন্ধু নেই
একজন একাকী মানুষের কোনো বান্ধব জোটে না
কেউ তার সঙ্গী হতে চায় না
ওই যে-বিকেল সে খুব একা
সকালও তাই মধ্যাহ্নও
তেমনি অপরাহ্ণ সন্ধ্যা এবং গভীর রাত
নিজেরা ছাড়া ওদের আর কেউ নেই
সবাই একাকিত্বের নির্মোহ বিষণ্ণ প্রহরে
সবই নিঃসঙ্গ আলোর অন্ধকারে আলোময়
দুটি চোখ মেলে মানুষটি অপলক চেয়ে থাকে
কিছুই দেখে না কেবল দেখে –
অাঁধার-আলোর সেঁজুতি
ঘন অাঁধার আর আলোর ক্রমান্তর রূপান্তর
আলোহীনতায় উজ্জ্বলতার উচ্ছলতা
অাঁধারহীনতায় অন্ধকারের প্রতীতি
চোখে চোখ মেলালেই দেখা হয়ে ওঠে না
মানুষের সঙ্গে সময় কাটালেও একাকিত্ব যায় না
মানুষের একা থাকা শেষ হয় না
মানুষের বন্ধুহীনতার কাল শূন্য হয় না
চারিদিকে মানুষের ভিড় কত শত মানুষ অচেনা
মানুষটি সব দেখে আর চুপচাপ ভাবে –
এদের মধ্যে তার কোনো বন্ধু নেই
মানুষটির নিঃসঙ্গতা ফুরোয় না
মানুষটির সঙ্গে কারো সখ্য গড়ে ওঠে না
মানুষটির নির্জনতা শেষ হয় না
একা একা একজন মানুষ দূরে চলে যায়
মানুষটির কেউ খোঁজ করে না
মানুষটির কথা কেউ মনে রাখে না
মানুষটির স্মৃতি কারো মনে পড়ে না
মানুষটির অস্তিত্ব ছিল কী ছিল না
বুকে হাত দিয়ে তা-ও কেউ বলতে পারে না
মানুষটি কেন ছিল কেমন ছিল আছে কী নেই
মানুষটি কোথায় ছিল কতদূর ছিল কত কাছে ছিল
এ-কথাটিও কেউ জোর দিয়ে স্পষ্ট করে বলতে পারে না
শুধু বলে গভীর নৈঃশব্দ্যে –
মানুষটি ভীষণ একাকী নিঃসঙ্গ নিঃস্ব
একজন দোষী দন্ডিত অপরাধী ছিল
নির্বান্ধব হলে যে-ভালোবাসার অসম্মান হয়
একা থাকা যে-এক গভীর গর্হিত অপরাধ
এতে মানুষের যে-অবমূল্যায়ন অবমাননা হয়
নিঃসঙ্গ হলে যে-মানুষের চরম অপমান হয়
মানুষটি তা জানত না অসহায় নিরুপায়
মানুষটি যখন জানল তখন তার আর কিছুই করার ছিল না
রবিউল হুসাইন এর ছড়া-কবিতা
এমন একটি ঘটনা আজ
বলবো আমি তোমাদের
যেটা জানলে বুঝবে তোমরা
বিষয়টা কি সাহসের!
তখন সেদিন স্কুলের মাঠে
মন্ত্রী আসবেন বার্ষিক সভার
পুরস্কার দিতে টুঙ্গিপাড়ায়
ছাত্র-শিক্ষক আমজনতার
মুখোমুখি হয়ে যখন
বক্তৃতা দিতে শুরু করেন
তখন তাঁকে থামিয়ে দিয়ে
খোকা বলে একটু শোনেন
আগে বলেন কেমন করে
ছাদের পানি বন্ধ হবে
তা না হলে ক্লাসে সবার
বই-খাতা যে ভিজে যাবে
এমন ছিলেন শেখ মুজিব
খোকা তার আদুরে নাম
আজ তাঁর জন্মদিনে
বঙ্গবন্ধু হাজার সালাম।
স্বাধীনতা
স্বাধীনতা স্বাধীনতা
মানে না অধীনতা
বাঙালি যে মুক্ত
স্বপ্ন নয় সুপ্ত
বাস্তবে তার রূপ
ফুটেছে কি অপরূপ
চারিদিকে অনাবিল
সবুজ টিয়া ঘুঘু চিল
চড়ুই শালিক উড়ে উড়ে
গান গায় গলা ছেড়ে
ছেলে মেয়ে হাতে ধরে
ঘুরে ঘুরে খেলা করে
পিছে পিছে প্রজাপতির
রঙিন পাখা ধরিত্রীর
এমনি করে সারাদিন
নেচে নেচে তাধিন ধিন
বারে বারে আসুক ফিরে
বাঙালিদের জীবন ঘিরে
সুখ শান্তি জয় জয়
স্বাধীনতা সব সময়
বাংলাদেশের সত্তায়
মিশে আছে আত্মায়।
প্রকাশিত : ১৮ মার্চ ২০১৭
New
0
0
Google +0
0
১৮/০৩/২০১৭ তারিখের খবরের জন্য এখানে ক্লিক করুন