হাংরি সাহিত্যের সংগ্রহশালা

মঙ্গলবার

অলোক গোস্বামী : উত্তরবঙ্গে হাংরি আন্দোলন ( ১৩ )

বহুবছর পর বাইকের চাকা ফেঁসে যাওয়ায় সারাতে গিয়ে আচমকা দেখা পেয়েছিলাম আমার ফেলে আসা পাড়ার হারিয়ে যাওয়া এক বন্ধুর, কালু। বলাবাহুল্য ভালো নাম মনে নেই কারণ আমাদের পাড়ায় ভালো নাম খারাপ নাম ইত্যাদি প্রভৃতি ভেদাভেদ ছিল না। সবার একটাই নাম। অবশ্য কালুর একটা গোপন নাম ছিল। সত্যিকারের গোপন, বাড়ির লোকেরা জানলেও বন্ধুরা জানত না। শুধু আমি জেনেছিলাম।
কালুর বাবা গোপাল ঘোষের ছিল দইয়ের ব্যবসা। সেই দইয়ের কোয়ালিটি কেমন ছিল সেটা পাড়ার কেউ জানত না কারণ শহরের দোকানে পাওয়া যেত না সেই দই। গোপাল ঘোষ রিক্সো্য় হাঁড়িগুলো চাপিয়ে হাটে হাটে বিক্রি করতেন। কেমন হোত বিক্রিবাট্টা, সেটাও জানতাম না। তবে কালু এবং তার দিদির বেশভূষা দেখে অনুমান করতে অসুবিধে হোত না।
গোপাল ঘোষ খুব কম কথার মানুষ ছিলেন। পাড়ার কারোর সঙ্গে দহরম মহরম তো দূরের কথা, সৌজন্য বিনিময় করতেও দেখিনি। যেটুকু দেখেছি তাহলো মস্ত কড়াইয়ে দুধ জ্বাল চলছে আর বহুক্ষণ আগে নিভে যাওয়া একটা বিড়িকে মুঠোয় ধরে মুহুর্মুহু টান দিতে দিতে গোপাল ঘোষ দেখে চলেছেন দুধের উথাল পাথাল।
অবশ্য এটুকুই দেখেছিলাম বললে সত্যের অপলাপ হয়। দেখতাম কোনো কোনো দিন রিক্সোর চাপপাশে অজস্র হাঁড়ি চাপিয়ে গোপাল ঘোষের হাট অভিযান এবং অনেক রাতে একই ভাবে প্রত্যাগমন। যদিও ফিরে আসা পর্ব খানিকটা বৈচিত্র্য ছিল। দেখতাম চারপাশে বাঁধা হাঁড়ির আড়ালে এলিয়ে পড়ে আছেন গোপাল ঘোষ, হাতের মুঠোয় যথারীতি নিভে যাওয়া একটা বিড়ি তবে ফারাক এটুকুই যে সেই নিভন্ত বিড়িতে টান পড়ছে না। সময় কোথায় টান দেয়ার? আকাশের দিকে মুখ করে কালুর বাবা গলা ছেড়ে গাইছেন, শো যা, রাজকুমারী, শো যা আ আ।
মাত্র একটাই লাইন। এবং সেটা রাজকুমারীর প্রতি অনুরোধ নাকি আদেশ ছিল, সেটা সুর শুনে বোঝার উপায় ছিল না।
একরাতে কিভাবে যেন রিক্সো থেকে ছিটকে পাশের কাঁচা নর্দমায় পড়ে গিয়েছিলেন গোপাল ঘোষ। হুড়মুড় শব্দে প্রতিবেশীরা নিমিষে ঘর ছেড়ে পথে। আমিও। কেউ হাত বাড়াতে সাহস পাচ্ছে না পাছে অপমানিত হোতে হয়। কারো সাহায্য ছাড়াই গোপাল ঘোষ একা একাই নর্দমা থেকে উঠে হাঁড়ির ফাঁকফোকর দিয়ে ফের চেপে বসেছিলেন রিক্সোয়। না, কাউকে কৃতজ্ঞতাটুকুও জানান নি শুধু আমাকে হাতের ইশারায় কাছে ডেকে বলেছিলেন, ছারপোকার কামড়েও বিষ আছে, তেলাপোকার কামড়েও বিষ আছে।
উপদেশের মর্মার্থ না বুঝে পরদিন কালুকে বলেছিলাম ঘটনাটা। কালু বলেছিল, ওই নামগুলা আমার মায়ের আর দিদির।
--যাঃ, মানুষের আবার ওরকম নাম হয় নাকি!
--বাবা ন্যাশা খাইলে ওইসব নামে আমাদের ডাকে।
--তোর নাম কি?
আমার এই প্রশ্নের উত্তর চট করে দিতে চায়নি কালু পাছে ফাঁস করে ফেলি। অনেক কিরা, কসমের পর বলেছিল, টিকটিকি।
সেই টিকটিকি এতদিন পর আমার সামনে! যথারীতি আবেগে থরথরিয়ে কেঁপে উঠেছিলাম। কিন্তু কালু ছিল নির্লিপ্ত। আমার বিভিন্ন কৌতুহলের উত্তরে কখনও ‘হুঁ’ কখনও ‘হ্যাঁ’ টুকু বলেছে। বেশীর ভাগ সময়েই ছিল নিশ্চুপ। এমন কী অনেকক্ষণ অবধি ‘ আপনি’ সম্বোধনটা চালিয়েছিল। অনেক অনুরোধের পর ‘তুমি’ তে নামলেও তারচে নামাতে পারিনি। চলে আসার সময় ইচ্ছে হয়েছিল ডেকে ওঠার, এ্যাই টিকটিকি। সাহস পাইনি।


এর দ্বারা পোস্ট করা আমরা পঞ্চপাণ্ডব এই সময়ে ৭:০৯ AM
এটি ইমেল করুনএটি ব্লগ করুন!X-এ শেয়ার করুনFacebook-এ শেয়ার করুনPinterest এ শেয়ার করুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পোস্ট পুরাতন পোস্ট হোম
এতে সদস্যতা: মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)

এতে সদস্যতা

পোস্টগুলি
Atom
পোস্টগুলি
মন্তব্যসমূহ
Atom
মন্তব্যসমূহ

মোট পৃষ্ঠাদর্শন

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • ►  2023 (34)
    • ►  অক্টোবর (1)
    • ►  সেপ্টেম্বর (3)
    • ►  আগস্ট (2)
    • ►  জুলাই (5)
    • ►  জুন (2)
    • ►  মে (1)
    • ►  এপ্রিল (1)
    • ►  মার্চ (8)
    • ►  ফেব্রুয়ারী (4)
    • ►  জানুয়ারী (7)
  • ►  2022 (62)
    • ►  ডিসেম্বর (5)
    • ►  নভেম্বর (4)
    • ►  অক্টোবর (21)
    • ►  সেপ্টেম্বর (5)
    • ►  আগস্ট (12)
    • ►  জুন (5)
    • ►  মে (5)
    • ►  এপ্রিল (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী (1)
    • ►  জানুয়ারী (3)
  • ►  2021 (101)
    • ►  ডিসেম্বর (7)
    • ►  নভেম্বর (14)
    • ►  অক্টোবর (32)
    • ►  সেপ্টেম্বর (4)
    • ►  আগস্ট (14)
    • ►  জুলাই (16)
    • ►  মে (6)
    • ►  এপ্রিল (2)
    • ►  ফেব্রুয়ারী (2)
    • ►  জানুয়ারী (4)
  • ▼  2020 (97)
    • ►  ডিসেম্বর (6)
    • ►  নভেম্বর (3)
    • ►  অক্টোবর (3)
    • ►  সেপ্টেম্বর (9)
    • ►  আগস্ট (5)
    • ►  জুলাই (12)
    • ▼  জুন (13)
      • হাংরি আন্দোলনের কবি দেবী রায়-এর কবিতা
      • মীজানুর রহমান : "হাংরি কিংবদন্তি" বইয়ের প্রথম প্রকাশক
      • হাংরি আন্দোলনের কবি অরুণ বণিক-এর কবিতা
      • অরুণেশ ঘোষ নিয়েছেন মলয় রায়চৌধুরীর সাক্ষাৎকার
      • মলয় রায়চৌধুরীর প্রেমের কবিতা : তুষ্টি ভট্টাচার্য
      • খালাসিটোলায় অবনী ধরের নাচ
      • অলোক গোস্বামী : উত্তরবঙ্গে হাংরি আন্দোলনে ভেঙে দেব...
      • অলোক গোস্বামী : উত্তরবঙ্গে হাংরি আন্দোলন ( ১৩ )
      • অলোক গোস্বামী : উত্তরবঙ্গে হাংরি আন্দোলন ( ১২ )
      • অলোক গোস্বামী : উত্তরবঙ্গে হাংরি আন্দোলন ( ১১ )
      • অলোক গোস্বামী : উত্তরবঙ্গে হাংরি আন্দোলন ( ১০ )
      • অলোক গোস্বামী : উত্তরবঙ্গে হাংরি আন্দোলন ( ৯ )
      • অলোক গোস্বামী : উত্তরবঙ্গে হাংরি আন্দোলন ( ৮ )
    • ►  মে (10)
    • ►  এপ্রিল (4)
    • ►  ফেব্রুয়ারী (4)
    • ►  জানুয়ারী (28)
  • ►  2019 (46)
    • ►  ডিসেম্বর (4)
    • ►  নভেম্বর (7)
    • ►  অক্টোবর (3)
    • ►  আগস্ট (3)
    • ►  জুলাই (2)
    • ►  জুন (2)
    • ►  মে (1)
    • ►  এপ্রিল (1)
    • ►  মার্চ (9)
    • ►  ফেব্রুয়ারী (10)
    • ►  জানুয়ারী (4)
  • ►  2018 (279)
    • ►  ডিসেম্বর (10)
    • ►  নভেম্বর (8)
    • ►  অক্টোবর (28)
    • ►  সেপ্টেম্বর (17)
    • ►  আগস্ট (64)
    • ►  জুলাই (24)
    • ►  জুন (13)
    • ►  মে (13)
    • ►  এপ্রিল (64)
    • ►  মার্চ (24)
    • ►  জানুয়ারী (14)
  • ►  2016 (5)
    • ►  অক্টোবর (5)
  • ►  2014 (1)
    • ►  মে (1)
  • ►  2012 (1)
    • ►  নভেম্বর (1)
  • ►  2011 (3)
    • ►  অক্টোবর (2)
    • ►  ফেব্রুয়ারী (1)
ওয়াটারমার্ক থিম. Blogger দ্বারা পরিচালিত.