বৃহস্পতিবার

হাংরি আন্দোলনের কবি প্রদীপ চৌধুরী সম্পর্কে প্রদীপ চক্রবর্তী

 হাংরি আন্দোলনের কবি প্রদীপ চৌধুরী সম্পর্কে প্রদীপ চক্রবর্তী

 এই গদ্য’র আজকের আলোচ্য মানুষটা হলেন , সদ্য প্রয়াত বিশিষ্ট কবি প্রদীপ চৌধুরী | হাংরি জেনারেশনের অন্যতম স্রষ্টা ও বিকল্প  সাহিত্যের প্রবক্তা হলেন কবি প্রদীপ চৌধুরী | আমি কোনও পন্ডিত নই | এই  লেখাগুলো আসলে , একজন রক্তমাংসের মানুষের ভেতরে প্রবেশ করে তাকে অনুভবের প্রয়াস | তার নৈঃশব্দ , আর্তি , যুগযন্ত্রণা , আকুল ব্যথিত সত্তার প্রেম ও মুক্তির পিপাসা যারা অন্বেষণ করেন , হয়তো তাদের জন্যই এই লেখা | বাংলার এলিট কবিতা জগতে ব্রাত্য , অথচ আবহমান বাংলা কবিতা ধারায় যে দাপুটে সম্রাটের আবির্ভাব ঘটেছিলো তিনিই প্রদীপ চৌধুরী | সম্রাট না হলে , মৃত্যুও তাকে পৃথক করতো না অন্য কবিদের চেয়ে | করোনা তাকে কেড়ে নিয়ে ধাপার মাঠে যে গণ চিতার আয়োজনে পুড়িয়ে দিয়েছিলো নিঃশব্দে , সেখানে কোনও কবি , কোনও প্রিয়জন ছিলো না | ছিলো মাথার ওপর উদার অনন্ত আকাশ , হয়তো নাগরিক সভ্যতার দূষণে সে আকাশ ঘোলাটে ছিল , কিন্তু আকাশ তো মহাশূন্য | তাকে কাঁটাতারে বাঁধবে কোন দেশ , কোন একবিংশ শতকের সভ্যতা !

লেখাটির নাম দিয়েছি ,

"প্রদীপ দা -- ওরফে Nemo --- or  Mr No one বা কবি প্রদীপ চৌধুরী "

...................................................................................................

এক .

" এই জীবন লইয়া কী করিবো ? " বঙ্কিমচন্দ্রের এই প্রশ্ন চেতনাসম্পন্ন যেকোনো মানুষের | এই চেতনা ব্যাপারটা গোলমেলে | জীবনের যে যে ডিগ্রির মধ্যে দিয়ে মানুষ জীবিকার সন্ধান পান , সেই শিক্ষার সঙ্গে জীবিকাজনিত সফলতা থাকতে পারে নাও পারে , কিন্তু চেতনার কোনও আদৌ সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়ে দৃঢ় সংশয় ছিল কবি প্রদীপ চৌধুরীর  | যাপনে কবিকে খুঁজে দেখো না , এই আপ্ত বাক্যে ঘোর অবিশ্বাস ছিল তাঁর | কারণ প্রদীপ চৌধুরী কোনোদিনও কোনও জেনারেশন বা দলীয় অভিধায় বিশ্বাসী ছিলেন না | তিরিশ দশকের পরে অনেক সমালোচক , কবিদের দশক দিয়ে বা গোষ্ঠী দিয়ে চেনার চেষ্টা করে গেছেন | প্রদীপ চৌধুরী এর ঘোর বিরোধী ছিলেন | পাঠকের আশ্চর্য লাগতে পারে এজন্যই যে প্রদীপ চৌধুরীকে আমরা হাংরি আন্দোলনের একজন নেতৃ স্থানীয় হিসেবে চিহ্নিত করি | কিন্তু বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত " হাংরির " বুলেটিনগুলো অনেকেই নিজের মতো করে লিখতেন | শৈলেশ্বর ঘোষ , সুভাষ ঘোষ ,অরুণ বণিক , রত্নময় দে , দেবী রায়চৌধুরী , সাধন সাহা ,সুবো  আচার্য ,   অবনী ধর ,  মলয় রায়চৌধুরী বা প্রদীপ চৌধুরী তাঁদের স্বকীয় ভাবনা ও দৃষ্টিকোন থেকে এসব লিখেছেন | এমনকি " হাংরি আন্দোলন , সামার ম্যানিফেস্টো - ১৯৭০ " এই শিরোনামে প্রদীপ চৌধুরী যে দীর্ঘ গদ্যটি লিখেছিলেন তা পড়ে এবং পরবর্তীকালে এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিষদ আলোচনা করে যেটুকু বুঝেছি , তা হলো , তিনি বিশ্বাস করতেন না গোষ্ঠীগত বা দলগত ভাবে কবিতা লেখা যায় | কবির প্রতিমুহূর্তে বদলে যাওয়া অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের সমস্ত ধ্বংস পাপ পুনর্নির্মাণ সাদা কালো বহুরৈখিক দিক যা তাঁর আত্মার ক্রম ও বিকাশ , সেই স্ফূর্ত সমগ্রতা থেকে যাবতীয় শিক্ষা ও সংস্কারমুক্ত ভাবনার লিখিত নির্মাণ হলো ভাষা | কবি টু কবি তাঁর সেই ভাবনার ভাষা সৃষ্টি করতে পারে | তাঁর সেই তীব্র ধ্বনিসংকেত ও ভাষার কোনও শব্দ আরোপিত নয় | যা কবির হাতে আন্তর্জাতিক কোড ল্যাঙ্গুয়েজের মতো | যে ভাষা ব্যাকরণবিদ বা ভাষাতাত্বিকের নয় | যা অচলায়তনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা থেকে আলাদা | একমাত্র কবি' ই তাঁর কবিতার জন্য যে ভাষার আশ্রয় নেন তা কোনও সাহিত্যের ইতিহাসের ভাষা নয় | প্রতিমুহূর্তের ভগ্নাংশে যেহেতু বদলে বদলে যায় মানুষের অভিজ্ঞতা | তাই পূর্বে নির্মিত কবিতা থেকেও নতুন লেখা কবিতায় কবির পরিবর্তন অবসম্ভাবী | এর জন্য জেমস জয়েসের শব্দ তাঁর লেখা আস্বাদনের অন্তরায় বলে মনে করতেন | অনেক পরিশ্রম করে ulysses উপভোগ্য হয়ে উঠলেও তিনি মনে করতেন , জয়েস নয় , ডি ۔ এইচ ۔লরেন্স তাঁর লেখকসত্তার অনেক কাছের | এরফলে সাহিত্য হিসেবে তাঁর সমকালীন বন্ধুদের লেখাকে শ্রদ্ধা করতেন কিন্তু তা কেবল হাংরি আন্দোলনের ফলশ্রুতি বলে মনে করতেন না |

দুই .

আসলে ব্যক্তি প্রদীপ চৌধুরী ও কবি প্রদীপ চৌধুরী কোনও আলাদা ব্যক্তি ছিলেন না | তাঁর যাপন ও কবিতা সমার্থক | আমার সঙ্গে কবি প্রদীপ চৌধুরীর আলাপ নয় - দশ বছরের | তাঁর জীবনের শেষের দিকে তিনি আমার ও কবি সব্যসাচী হাজরার খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন | বলিষ্ঠ , মৃদুভাষী , রসিক ও বন্ধুবৎসল এই মানুষটির সঙ্গে বেশ কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত কাটাতে গিয়ে বুঝেছি , দুঃসাহসিক এক অভিযাত্রীর মতো তিনি ছিলেন বাহ্য পাওয়া না পাওয়ার অনেক উপরে | জীবনকে প্রতি মুহূর্তে নিজের শর্তে উপভোগ করাই ছিল তাঁর জীবনদর্শন | আন্তর্জাতিক এক মনন ও মেধা নিয়ে বিশ্বের অনেক জায়গায় ভ্রমণ , তাঁকে বহুস্তরীয় দৃষ্টিকোণ তৈরী করতে সাহায্য করেছিল | প্রিয় দেশ ছিল ফ্রান্স | ফরাসিদের নিজের ভাষায় রবীন্দ্রনাথ পড়াতে তিনি বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন | অনেক কটা ভাষার মধ্যে ফরাসি ভাষাও তিনি অনর্গল বলতে ও লিখতে পারতেন | নিজের ও অন্য প্রিয় কবিদের লেখা তিনি যেমন ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেছেন , ঠিক তেমনি , ফরাসি ভাষা থেকে বহু মূল্যবান লেখা অনুবাদ করেছিলেন বাংলায় ও ইংরেজিতে |  সভ্য ও প্রাতিষ্ঠানিক মানুষের ভয় যে তাঁদের কাজের প্রধান অন্তরায় , মনে করতেন তিনি | কবিতা অমোঘ একথা জানার পরও তার প্রতি মানুষের যে ভীতি , আসলে তা এক বহু - ব্যবহৃত , অনেকাংশে ব্যর্থ জীবন পদ্ধতি ছেড়ে আরেক জীবনে যাবার ভয় বলে মনে করতেন তিনি | একজন  খুনী পরিশুদ্ধ হবার আগে জীবনকে যতটা ভয় করে , আজন্ম লোভী , আচ্ছন্ন মানুষও নিজের কাছে নিজের স্বরূপ পরিষ্কার না হওয়া অব্দি কবিতাকে ততটা ভয় করে |  খুনীর পরিশুদ্ধি ও মানুষের আত্মস্বরূপ ফুটে ওঠে দীর্ঘ যন্ত্রণাভোগ ও অনুতাপের সাদা আগুনে -- আধুনিক ও পৃথিবীতে সাধারণত অবসাদ , অপারগতা , ম্যালএডজাস্টমেন্ট , যৌন - অবসেশন , দারিদ্র - ভোগ ও দুঃখের আকারে আমাদের আত্মাকে পরিষ্কার করে দিয়ে যায় |

সব পেয়েও যাঁদের প্রকৃতপক্ষে নিজের কিছুই নয় , ' সর্বহারা ' মানুষের চূড়ান্ত আশ্রয়স্থল কবিতা | কবিতাই আদিম ও আধুনিক মানুষের যাবতীয় জিজ্ঞাসা এবং অন্তর্ঘাতের , শিক্ষিত ও ভুল শিক্ষিত মানুষের চেতনা ও অবচেতনার যাবতীয় সংঘাতলুপ্তির একমাত্র উপায় | কবিতা ' আল্টিমেট সিন্থেসিস ' |

এই প্রত্যয় ও বিশ্বাসের নাম কবি প্রদীপ চৌধুরী | তাঁর লেখা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে থাকলেও তিনি মাছি ওড়ানোর ভঙ্গিমায় তাকে উপেক্ষা করতেন | কোনও সদন , মঞ্চ , পুরস্কার কমিটি বা একাডেমির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের নজরে আসার জন্য তাঁর কোনও প্রয়াস ছিল না | কোনও কবিতা পাঠের আসরে তিনি প্রায় যেতেন না | কোনও বুধচক্র বা প্রথিতযশা কবির রবিবারের আড্ডায় তাকে দেখা যেত না | এক পরাক্রমী বালকের কৌতুক ও ক্রীড়া নিয়ে তিনি খেলে যেতেন জীবনের সঙ্গে | বিশ্বাস করতেন , জীবনই জীবনের একমাত্র আদর্শ -- স্বাধীনতাই কবিতা | প্রথম কবিতার বই " অন্যান্য তৎপরতা ও আমি " থেকে শুরু করে , চর্মরোগ , কবিতা ধর্ম , ৬৪ ভূতের  খেয়া , বা শেষ স্বপ্রকাশিত কবিতা সংগ্রহ " মত্ততা ও তারপর " ۔۔۔ পর্যন্ত সমস্ত গ্রন্থে এই অটুট এক পরাক্রমী জীবনপর্যটককে আমরা পাই | যিনি সুস্পষ্ট ভাবে কলার উঁচিয়ে বলতে পারতেন , তাঁর ত্রিভাষায় প্রকাশিত ও সম্পাদিত পত্রিকা ' ফু: ' নামটির সার্থকতা যা তাঁর জীবনধর্ম , সেই ফু: দিয়ে ۔۔۔۔" পৃথিবীতে দেবার মতো কোন বাণী বা ম্যাসেজ , কোন লেখকেরই নেই -- যীশু - বুদ্ধ - রামকৃষ্ণ , কোন মহাপুরুষই পৃথিবীর  ত্রাণকর্তা নন | ' ত্রাণ ' জিনিসটাই অসম্ভব | ত্রাণ সৃষ্টিবিরোধী | পৃথিবীর কনসেপ্টের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ -- এবং মৃতদেহ ছাড়া এর স্বরূপ কারুর কাছেই পরিষ্কার নয় |

.... আমাদের সমগ্র বর্তমান বদলে গেছে , আমাদের ভবিষ্যৎ ওই একই রকম রয়ে গেছে , এক শূন্য গোঙানির দিকে আমাদের সৃষ্টি কল্পনা ঝুঁকে আছে | এই মুহূর্তের যাবতীয় ঘটনা আমাদের চোখের সামনে একই সঙ্গে জেগে উঠে এবং মুছে যায় -- এই অপ্রমাণিত ভালোবাসার সূত্রেই আমরা সারা জীবন সবকিছুর সঙ্গে ঝুলে থাকি | আমাদের অস্থিরতা , আমাদের ধ্বংস , আমাদের বিশ্বাস , আমাদের উদাসীনতা -- এ সবকিছুর ভেতর দিয়েই আমরা পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি | কোন বিচার বা বিশ্লেষণ নেই অথবা কোন স্থূল আশাবাদ -- কোন নৈরাশ্য নেই -- এই মুহূর্তের যাবতীয় মুখ ও মুখোশ , আমাদের ঘিরে রেখেছে যা -- মনে হয় যেন এই তরল ঘটনাপ্রবাহকে অনুসরণ করাই একজন শিল্পীর কাজ , তাদের নিহিত অবয়ব , তাদের আগমন ও মুছে যাবার আলোছায়া -- সময়ের এই নামহীন যাত্রাকে লক্ষ্য করে যাওয়া শুধু ..."

" কিছুক্ষণ ভৌতিক নেশার মধ্যে শরীরের

জল জমে যাচ্ছে , দেখ তোর চুরমার পৃথিবী

কিভাবে সেঁধিয়ে যাচ্ছে ,

সাতটা পাইপের মুখ একসঙ্গে ফাটে , তার  ধোঁয়ার ঘ্রাণ

সর্বশেষ বোমারুকে

'  টিট  ' দিচ্ছে , ঠোঁট ও পাঁপড়িগুলো ধারালো দাঁত বের করে

হেসে খুন হয় ডা: সুজুকি , বুদ্ধ , মলয় ও শৈলেশের কবরের পাশে

আমার

এই কবিতা পড়া হলে মৃত গণিকার পাশে পড়া হলে আমার এই

নেশা ---- ZEN

( ডা: সুজুকি , বুদ্ধ , মলয় ও শৈলেশের কবরের পাশে / ৬৪ ভূতের খেয়া )

তিন .

বসে ছিলাম কলকাতা শহরের বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় একটি রেস্তোরাঁয় |

Oak smith gold নামক প্রিয় পানীয় কয়েক পেগ আত্মস্থ করার পর হঠাৎ দেখি প্রদীপ দা এসে উপস্থিত |

" আরে প্রদীপ দা , মাঝখানে অনেকদিন আপনার সঙ্গে দেখা হয় নি | এই গড়িয়াহাটের ব্রিজের নীচে কতদিন আমি সব্যসাচী আর প্রদীপ দা মন খুলে আড্ডা দিয়েছি | গোলপার্ক , বেঙ্গল ল্যাম্প , রবীন্দ্র সদন , দুর্গাপুরে টেগর হাউসের রুমে কত কত বার আমরা আড্ডা দিয়েছি | মনে পরে প্রথমবার রবীন্দ্রসদনে একটি স্পার্ক লাইটার হাতে তুলে দিয়েছিলেন আমার | সেই বিদ্যুত্স্পৃশ্য হয়ে চমকে ওঠার মুহূর্তে তাঁর কী ছেলেমানুষের মতো হাসি | বলেছিলেন , দীক্ষিত হলে তুমি | একবার গড়িয়াহাটের কাছাকাছি " ইন্ডথ্যালিয়াতে " গিয়ে জুস আর কফির অর্ডার দিতে গিয়ে রেস্তোরাঁর কাউন্টারে সিগ্রেট ধরানো নিয়ে সেখানকার এক কর্মচারীর সঙ্গে সে কী বচসা ! মনে পড়লে হাসি পেয়ে যায় | একবার তো টেগোর হাউসে , আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম | ঘরে ছিলেন কবি রঞ্জিত সিংহ , সুধীর দত্ত , অনিন্দ্য রায় , সব্যসাচী হাজরা ও আমি | হঠাৎ প্রদীপ দা , তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বন্ধ দরজা খুলে ঢুকে বলে উঠলেন একটা নতুন কবিতা লিখেছি শোনো | বুকের বোতাম খোলা শার্ট | অন্যমনস্ক প্রদীপ চৌধুরী কে কী করছে বলছে , সেসব পরোয়া না করে , দরাজ কণ্ঠে তাঁর কবিতা গড়গড় করে পড়ে সটান উঠে চলে গেলেন , যেভাবে ঝোড়ো হাওয়ার মতো ঢুকে এসেছিলেন , সেভাবেই | কার কী প্রতিক্রিয়া সে নিয়ে কোনোদিনও মাথা ঘামানো তাঁর স্বভাব বিরুদ্ধ | অতএব এই রাজকীয় দাপট আমাদের , বিশেষ করে আমার খুবই জানা | তাই আজ এই  রেস্তোরাঁতে হঠাৎ দেখে আমার নতুন কোনও ভাবান্তর হলো না |

" আরে প্রদীপ তুমি ! এসে বুকে জড়িয়ে ধরে একটি দীর্ঘ চুমু গালে দিয়ে বলে উঠলেন , তুমি নাকি আমার লেখালেখি নিয়ে কিছু লিখছো "?

হ্যাঁ প্রদীপ দা ... | বলে আমি এই গদ্যটা পড়তে শুরু করলাম আমার স্মার্ট ফোন থেকে | ওপরের অংশগুলো শোনার পর , মৃদু হেসে বললেন , " শুরু করেছো ঠিকঠাক , কিন্তু এভাবে প্রবন্ধে আমার সম্পর্কে কিছু বলা যায় ? আমি কী কেতাসর্বস্ব টুলো পন্ডিতের বিষয় ? "

সে ঠিক | আমি বললাম | তাহলে চলুন আপনার সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে লেখাটা চলুক |

আচ্ছা প্রদীপ দা , Lawrence Ferlinghetti আপনার কবিতা পড়ে লিখেছিলেন , " Pradip choudhuri' s poetry proves that poetry is the desiring machine of all our dreams , the hungry beast that still devours us all "

আমি জানতে চাই , আজ যদি পেছনদিকে তাকান তাহলে আপনার লেখালিখি নিয়ে কী বলবেন ?

প্রদীপ চৌধুরী --  ' নতুন করে কী বলার আছে | আমার চিন্তন প্রথম থেকেই  আমার কাছে স্পষ্ট , স্বচ্ছ |  আমার লেখালিখিতে , আমার কবিতায় , প্রচুর আত্মজৈবনিক উপাদান রয়েছে |  কিন্তু কী এই আত্মজীবনী যার একমাত্র কেন্দ্রীয় চরিত্র আমি নিজে , আমি বহু বছর ধরে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করেছি | ফলশ্রুতি ' কবিতাধর্ম ' -- আমি 'র একটি অসম্ভব সংজ্ঞা দিয়ে যার শুরু : ' আমি কোনও জেনারেশন নই - আধুনিক পৃথিবী এবং পৃথিবীর যাবতীয় জেনারেশন - প্রকৃতপক্ষে অধঃপতিত নষ্ট সর্বহারা ভীরু উন্মাদ নির্বাক চোর অন্ধ সন্ন্যাসী কমরেড অভিযাত্রী নষ্টদেহ গলিত অন্তঃকরণহীন যক্ষ্মাক্রান্ত শুধুই - লাশ , স্থাবর অস্থাবর প্রাণিজগতের সকলের শিরা - উপশিরার চেতন - অচেতন অবসেসড আত্মার এক অলৌকিক সামগ্রিকতার আমি এক খুবই ছোট অথবা অতিশয় বিশাল প্রতিবিম্ব মাত্র |'

দেনিস এমোরিণকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি যা বলেছিলেন হুবহু তাই আমাকে বললেন দেখলাম |

যাই হোক ততক্ষণ প্রদীপ দা oak smith gold নামক উৎকৃষ্ট পানীয় শেষ করেছেন এক পাত্র |

আমি -- আরেকটা অর্ডার দিই ?

প্রদীপ - দাও |

আবার নতুন করে পানীয় এসে যায় এবং আমার পরের

প্রশ্নগুলো ....

আমি ---  আচ্ছা শান্তিনিকেতন পর্বে আপনাকে কবিতা লেখার জন্য রাস্টিকেট করা হয়

প্রদীপ ----  মৃদু হেসে , হ্যাঁ হ্যাঁ | আসলে কিছু ট্যাবু তো থেকেই যায় | কিছু নিয়মসর্বস্ব প্রথা | আমি তার মূলে আঘাত দিতে চেয়েছিলাম | আসলে কোনও ব্যাপারেই কোনও শান্তি পাচ্ছিলাম না | একমাত্র ওই লেখালিখি | নারকীয় সব ভোগ্যপণ্য হাজার এক বাসনা তাড়িত কায়েমী মধ্যবিত্ত সমাজের " সফল " নট নটীদের এই ছেদহীন আগমন , নির্গমন , এই লালা জড়িত স্রোতে , এই স্টুপিড মানুষী কামনা - প্রবাহে জীবনের মৌলিক গুণ গুলি হারিয়ে যায় , অর্থলিপ্সা , খাদ্যলিপ্সা , ক্ষমতালিপ্সা প্রায়শই গিলে খায় বন্ধুতা , যৌনতার বেদীমূলে অপ্রতিরোধ্যভাবে ভালোবাসার আহুতি ঘটে - এমনকি রোমোদ্গমের আগেই | কবিদের জাগ্রত চেতনার কাছে পৃথিবীর এই অদ্ভুত পদ্ধতি , এটা কি সত্যি এক চূড়ান্ত হতাশা নয় ?

( প্রদীপ দা যেন প্রশ্নটা আমাকেই ছুঁড়ে দিলেন এমন তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে | আজ অন্যদিনের চেয়ে প্রদীপ দা র চোখদুটো আরও বেশি জ্বলজ্বল করছে | যেন রয়েল বেঙ্গল টাইগার ! )

কিছুক্ষণ থেমে ....

সেই সত্যের চাবুক নিয়ে চলতে গিয়েই শেষে ওখান থেকে ۔۔۔۔

আমি --- প্রশ্নগুলো গুছিয়ে করতে পারবো না , নানারকম ভাবে কিছু কৌতূহল | আচ্ছা প্রদীপ দা , মলয় রায়চৌধুরী সম্পর্কে আপনার মতামত ...

প্রদীপ দা -- আমাদের হাংরি জেনারেশনের উত্তম কুমার | ( প্রদীপ দা র মুখে কৌতুকের হাসি ) আমাদের শৈলেশ্বর ঘোষ তো একটা সাক্ষাৎকারে  বলেইছে , আমি নাকি মলয়কে " ড্রইংরুমের বিপ্লবী " বলেছিলাম | হা হা হা হা হা ....

আমি --- বলেন নি ?

প্রদীপ -- ছেড়ে দাও ওসবকথা | কতজন মলয়ের ইংরেজি ইস্তেহার নিয়ে কত কী ই তো বলেছে | ' পিজিন ' ইংরেজি | জ্যোতির্ময় দত্ত বলেছিলো বাংরিজী সাহিত্যে ক্ষুধিত বংশ | কবি জর্জ ডাউডেন , আমি যাকে kaviraj George Dowden বলি , বলেছে মলয়ের ইংরেজী Gibberish অর্থাৎ meaningless full high sound words | আমি তো ১৯৬৮ র ফু: পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলেছিলাম , ১৯৬৪ সালের  পুলিশী আক্রমণের ফলে দুটি জিনিস খুবই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো , এক . শিল্পের নখ বড়ো হলে তা সভ্যতা এবং মানুষের নির্মিত আইন - আদালতকেও ছেড়ে দেয় না | দুই . প্রকৃত লেখালিখি ও এস্টাব্লিশমেন্ট সামলানো একসঙ্গে সম্ভব নয় | ... হাংরি জেনারেশনের তকমা আঁটা সেই সব নিরীহ ভদ্রলোকের ছেলেরা বিপদের ঝুঁকি দেখে কেটে পড়েছে একে একে - ভীড় কমে গেছে - এমনকি মলয় রায়চৌধুরী অব্দি টিকতে পারলো না -- তার গোটা এস্টাব্লিশমেন্ট হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো ( তা না হলে আমাদের সকলের নাম  ভাঙ্গিয়ে অতিরিক্ত সহনাভূতি ও বিদেশী মুদ্রা আদায়ের প্রাণপণ চেষ্টা সে কেন করেছে ? এ দুটোই এস্টাব্লিশমেন্টের টোপ একথা জানাজানি হবার পরেও )

যাই হোক প্রদীপ , ওসব নিয়ে আর কথা বলতে ভালো লাগে না | ওসব থেকে অনেক অনেক দূরে চলে গেছি আমি ...|

আমি -- -- তাহলে বলতে চান ( আমাকে থামিয়ে দিয়ে প্রদীপ দা )

প্রদীপ ---শোনো শোনো আসলে শেষ পর্যন্ত নিজের লেখার কাছে সৎ দায়বদ্ধ থাকাই শেষ কথা | আমি লিখে চলেছি আমার কবিতা , যা ভালোবাসার কবিতা | কিন্তু সে কবিতা বিকল্প পথের সন্ধানী | আমি  যেমন প্রকাশকদের কাছে অপ্রিয়  তারাও আমার কাছে

তাই !

আমি -- সারাজীবন দুটো পত্রিকা একটি স্বকাল , অন্যটি ফু: | দ্বিতীয়টি আবার তিনটে ভাষার | বাংলা , ইংরেজী , ফরাসি | এরম ত্রিভাষার কোনও পত্রিকা ভূভারতে বেরিয়েছে কিনা ,_আমি জানি না | সঙ্গে এতো গুলো বই এবং আপনার ( ১৯৬৪ থেকে ২০০৮, পর্যন্ত ) প্রকাশিত নির্বাচিত কবিতার বই " মত্ততা ও তারপর " | আমি যতদূর জানি এই  ব্যায়ভার সম্পূর্ণ আপনার | অথচ কত কত প্রকাশনী এখন | বিকল্প , প্রথাময় , আবহমান , সবদিকের লেখালিখি নিয়ে কত প্রকাশক কত বই করছে অথচ আপনি ۔۔۔

প্রদীপ -- ( মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে ) ধুর ধুর ওসব নিয়ে আমি ভাবি না | শোনো তাহলে , ফ্রান্সের সবচে বড়ো প্রকাশনী ওদের দেশের ডলারের মূল্যে আমার সমস্ত বই নিয়ে সমগ্র করার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল | এবং যে অর্থমূল্য দেবে বলেছে তা চক্ষু চড়কগাছ করে দেবে এখানকার অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকের | ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় লাখ চল্লিশ - পঞ্চাশের মতো | কিন্তু আমিও সেরকম দেড়েল | ওদের বলেছি , ওদের যদি প্রয়োজন হয় , আমার যাদবপুরের ফ্ল্যাটে এসে কন্টাক্ট ফর্ম সই করিয়ে যাক , যদি চুক্তি আমার মনের মতো হয় | হ্যাঁ , ফ্রান্সে আমার অনেক শুভানুধ্যায়ী | সারা পৃথিবীতে নানান ভাষায় আমার লেখা অনূদিত | ফরাসি দেশে আমার লেখালিখি নিয়ে ওদের প্রচন্ড উৎসাহ | আমার লেখালিখি নিয়ে ওরা আলাদা ওয়েবসাইড করেছে | কিন্তু যে ভাষায় আমি লিখি তারও একটা গভীর আত্মবিশ্বাস আর আত্মসম্মান আছে | তাহলে ? আমি কেন যাবো ?

( আমি বারংবার অবাক হয়েছি প্রাণিত হয়েছি এই মানুষটার কাছে | যেখানে সামান্য লেখা ছাপানোর জন্য নিজের আত্মসম্মান খুইয়ে বাণিজ্যিক পত্রিকার স্বনামধন্য কবির পায়ে  দাসখৎ লিখে দিয়েছে আমার সময়ের কত কবি | কত তরুণী শয্যা সঙ্গিনী হতে চেয়েছে , যেখানে নিজের বিপুল টাকায় নিজেকে নিয়ে সংখ্যা করেন প্রথিতযশা | যেখানে কাটি করে থামিয়ে দেওয়া হয় , কত জনকে | সামান্য পুরস্কার পাবার জন্য কত কবি কত হ্যাংলামি করে , সেখানে সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত কবি ' র মুখের দিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে আমি তাকিয়ে

থাকি )

প্রদীপ -- শোনো প্রদীপ , লিখবে কেবল নিজের জন্য | লেখা বাজারের পণ্য নয় | আর ভুলেও নিজের বই কোনও তথাকথিত বিখ্যাত লোকজনদের দিতে যেও না | ওরা কারোর লেখাই পড়েন না | যে ভালোবাসা নিয়ে একজন প্রকৃত নির্লোভ তরুণ কবিতার বই পড়ে , সে ভালোবাসা বিকিয়ে যাওয়া লেখকদের থাকে না !

আমি -- মনে পড়ে প্রদীপ দা , অনিকেত কে ? যেদিন দুর্গাপুরে ত্রিষ্টুপ পত্রিকার সম্পাদক কবি ব্রজ কুমার সরকার আপনাকে আমন্ত্রণ করেছিল একটি অনুষ্ঠানে সেখানেই প্রথম আপনার সঙ্গে আলাপ | সেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবার পর আমি , আপনি এবং অনিকেত পাত্র তিনজন অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়েছিলাম | আপনি অনুষ্ঠানে যতটা নিষ্ক্রিয় ছিলেন ততটাই আনন্দে আবেগে সক্রিয় ছিলেন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দেবার সময়

প্রদীপ -- তা আর মনে পড়বে না | কিন্তু কীভাবে একটা প্রাণ একটা সম্ভাবনা চলে গেলো ভাবো | আমি এখনো মানতে পারি না , অনিকেত ওভাবে চলে যাবে | আমি যদি একটু আগে জানতাম , তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলে ঠিক বোঝাতে পারতাম যে জীবনের দুঃখগুলো , শূন্যতাগুলো যত তীব্রই হোক , জীবনের চে বড়ো হতে পারে না কখনোই !

চার.

নীল ক্যাফেটেরিয়ার মায়াবী অঞ্জন লেগেছে চোখে | নেশার একটা নিজস্ব শরীরী ভালোলাগা আছে | বাইরে মৃদু হাওয়ার ঢোকে বৃষ্টি ছড়িয়ে পড়ছে এ শহরের কোণে কোণে | আর রেস্তোরাঁর আলো আঁধারি মৃদু গুঞ্জনে আমি দেখছি প্রদীপ দা র চোখে এক অসম্ভব আলোর রাজকীয় দ্যুতি | আমার প্রশ্ন থামে না চলতে থাকে ---

আমি -- আচ্ছা প্রদীপ দা আপনি তো রাত জেগে গান শোনেন , বই পড়েন | রাতের প্রগাঢ় নৈঃশব্দে আপনি ফিরে পান নিজেকে

তাই না ?

প্রদীপ -- হ্যাঁ | রাতে মানুষ কেন যে ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করে | আমি তো কালকেই শুনছিলাম হ্যারি বেলাফনটির গান | ওহ , কী গান ۔۔۔!

আমি --  আচ্ছা প্রদীপ দা , আপনার ' কবিতাধর্ম ' বইটার দ্বিতীয় সংস্করণ বের করলেন  মানবেন্দু রায় | এই বই আপনার সামগ্রিক ভাবনার এবং কবিতার ভাবনা হিসেবে একটা ল্যান্ড মার্ক বলা যায় | এ বই প্রকাশের আগে পরে আপনার ভাবনা আর লেখালিখির একটা আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে | এ নিয়ে যদি কিছু বলেন ?

প্রদীপ -- আসলে যে সময়ে আমি লেখালিখি শুরু করি , সেই সময়ের দিকে যদি তাকানো যায় তাহলে দেখবো অসহ্য , ভয়াবহ এক শূন্যতার বোধ ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র | এই সময় আমরা কয়েকজন হাতে তুলে নিয়েছিলাম লেখালিখির আয়ূধ অর্থাৎ খুব আক্রমণাত্মক লেখালিখি | কবিতাধর্ম লেখার আগে পর্যন্ত  অত্যন্ত সক্রিয় ভাবে লেখালিখি , ইস্তেহার , কাগজ বের করা ইত্যাদি চলছিল | এবং প্রায় সাড়ে তিনদশক ধরে হাংরি জেনারেশনের সঙ্গে যুক্ত ও এই আন্দোলনের অন্যতম স্রষ্টা হবার পরেও আমি উপলব্ধি করি , আসলে আমি একটি মানবিক প্রোগ্রামের অংশ ছাড়া আর কিছুই নয় | তার আগে আমার প্রস্তুতির কালে ১৯৬২ র গোড়ার দিকে যে বইটি আমাকে নাড়িয়ে দেয় সে বইটি হলো আর্তুর র্র্যাবো ' র ' নরকে এক ঋতু '|  আমার চিরকালই মনে হয়েছে পাশ্চাত্যের প্রথম শ্রেষ্ট কবি হলেন ইনি | পাশাপাশি কামু , কাফকা , বোদলেয়ার , ডি এইচ লরেন্স , হেনরি মিলার , হুইটম্যান , দস্তয়েভস্কি , জঁঁ জনে , অন্যদিকে জীবনানন্দ , মানিক এবং রবীন্দ্রনাথ আমি পুরো আত্মস্থ করে ফেলেছি | এরফলে আমার মধ্যে হাংরি জেনারেশনের কাজকর্ম করতে করতে নিজস্ব বিকল্প ভাবনা ও সাহিত্য আমাকে আমার স্থির  লক্ষ্যে  , আমার নিজের পথ তৈরী করে দেয় | হাংরি জেনারেশনের সঙ্গে সংযুক্তি আমাকে দিয়েছে সেই অদম্য সাহস যা আমাকে সবসময় জীবনের সারাৎসার আর জীবন্ত শিল্পকর্মকে মোকাবেলায় সাহায্য করে | আমি যা যা বুঝতে পারি , সেগুলো হলো , প্রথমত , কবিতা হলো সর্বগ্রাসী | এই সর্বগ্রাসী ক্ষমতাই আধুনিক মানুষের কাছে কবিতাকে এবং পরোক্ষ ভাবে কবিকে এতটা ভীতিকর করে তুলেছে | ভীতিকর , কেননা কবিতাকে জীবনের প্রতিপক্ষ ভেবে যারা ব্যবহারিক জীবন ও জীবিকা জগতের বিশাল প্রাচীরের আড়ালে খেলা শুরু করেছিল এবং স্বীকারোক্তির আগেই শহর সমুদ্র সাইরেন শুনতে পেয়েছে , দেখা গেছে আসলে ওরা কেউ মানুষ ছিল না -- চূড়ান্ত সংকটের সময় মুখোশ আলগা হয়ে বেরিয়ে পড়ে প্রকৃত চেহারা , Most men die like animal ( Ernest Hamingway ) -- বিশুদ্ধ কবিতার বাইরে মানুষের কোন আদর্শ কিংবা কোন ঈশ্বরচেতনা  তাকে বাঁচাতে পারে না , হয়তো কবিতাও পারে না , কিন্তু কবিতা জীবনকে ' জাস্টিফাই ' করে ব্যক্তিকে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়াবার জন্য নির্দেশ দেয় , জীবনকে দুর্দান্ত করে তোলে | যে কোন আদর্শের পাশাপাশি রয়ে গেছে সেগুলোর বিপরীত আদর্শ | তাই দস্তয়েভস্কি'র ' ইপ্পোলিট' জীবনে যে কোনোদিনই ধূমপান করে নি ,  এটমের অস্তিত্বের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই সে বারুদের চেয়ে বিশাল শব্দে জীবনের প্রথম সিগারেট জ্বালিয়ে ফেলে | এটমের ধ্বংস ক্ষমতার কাছে একটা সিগারেটের ক্ষতি করার শক্তি কি হাস্যকর |

পাশাপাশি আমি আরও দেখি , প্রকৃতির ' ভয়াবহতার ' সঙ্গে আধুনিক কবিতার এক বক্র ,  অবলিক যোগাযোগ রয়েছে | সভ্যতা আমাদের কাছে কতটা গ্রহণীয় , কিভাবে গ্রহণ করতে হবে তাকে , কতটা বর্জনীয় , কিভাবে বর্জন করতে হবে -- সভ্যতার যারা কেবলই সভ্য তাদের কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার নয় বলেই , হায় ! আজো তো রাস্তা ঘাটে এখানে ওখানে চোখে পড়ে মেদমাংসে তালগোল পাকানো পিন্ড এবং আজন্ম হাড়ের অসুখ নিয়ে দুজনকেই এক রাস্তায় !

এ না হলে সভ্যতা !

( অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে প্রদীপ দা আমাকেই শুনিয়ে অস্ফুটে বলতে থাকলেন , যা তিনি আগে অনেকবার বলেছেন লিখিত ভাবে )

প্রদীপ -- ওয়ার্ডসওয়ার্থ বোঝেন নি | বুঝেছিলেন জীবনানন্দ এই আধুনিক সভ্যতার অসুখ কত মর্মান্তিক ! জাঁঁ পল সাত্র | আমি লিখেছিলাম , ' নিসর্গ আমার শরীরে পক্ষাঘাতের মতো

লেগে আছে '|  এ পৃথিবীতে আজো আদর্শের চেয়ে দলের স্বার্থরক্ষার জন্য ধর্মঘট | গুলি | বিবাহ বাসরের পাশাপাশি মৃত্যুর কার্ফুধ্বনি | পেশাগত বুদ্ধিজীবী এবং বুর্জোয়ারা সভ্যতার অমরত্বে এতটাই বিশ্বাসী যে এর বাইরে অন্য কোনো ক্ষমতাকে তারা স্বীকার করতে ভয় পায় | কিন্তু মানুষের অমরত্বের গ্যারান্টি কে দেবে ? শিশুর চিৎকার , মুমূর্ষুর প্রলাপ , মানসিক রোগী হয়ে যাওয়া আধুনিক মানুষের খাপছাড়া কথাবার্তা , অবসাদ , অপারগতা , ম্যালএডজাস্টমেন্ট , যৌন - অবসেশন , ডিগ্রী ও থিওরীগুলোকে জীবিকা অর্জনের জন্য  নিকৃষ্ট ভাবে ব্যবহার ... এই ভয়াবহ সভ্যতার দাম কে দেবে !

মহাযুদ্ধের পর আধুনিক সভ্যতা মেফিস্টোফিলিসের মতো আমাদের ভ্রুণ থেকে আলাদা করে দিয়েছে ۔۔۔۔!

( আমি হতচকিত বিস্ময়ে মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছি |  কী দৃপ্ত ভঙ্গিমা | মুখ থেকে হঠাৎ আমার একটা শব্দ বেরিয়ে এলো | Nemo - or , Mr No one | )

প্রদীপ দা -- কী ?

আমি -- আপনার কথা শুনতে শুনতে আমার সত্যজিৎ রায়ের শেষ ফিল্ম " আগন্তুক ( The stranger ) " এর কথা মনে হলো প্রদীপ দা !  মনমোহন মিত্রের কথা মনে পড়ে গেলো | ওই সিনেমাটি ফ্রান্স এবং ভারতের যৌথ প্রযোজনায় | সেই ফ্রান্স , যা আপনার দ্বিতীয় স্বদেশ | কী অসম্ভব চিত্রনাট্য আর উৎপল দত্তের অভিনয় | সত্যজিৎ এবং উৎপল দুজনেই এই ফিল্মের পর মারা যান | আপনিও তো পৃথিবীর বহু দেশে ঘুরেছেন এবং মনমোহনের মতো এই ভন্ড চাপিয়ে দেওয়া সভ্যতার বিরোধী | মনমোহন শেষে আইডেন্টিটি প্রুফ করতে করতে ঈষৎ বিদ্রুপের সুরে বলেছিলেন আমি , Nemo - or , ' Mr No one ' ...

প্রদীপ দা -- (সশব্দে হেসে উঠলেন | )

হ্যাঁ সেদিক থেকে আমি তাইই | বাংলা সাহিত্যের ভন্ড দালালরা তাইই মনে করে | যদিও আমি বিশেষ কিছুকেই পাত্তা দিই না | দিই নি | কবিতার যাপনকে আমি পণ্য করি নি কখনো !

আমি -- সেটাই |

প্রদীপ দা ' র ঘোর তখনো কাটে নি | তিনি Antonin Artaud - এর কিছু পংক্তি অস্ফুটে বলতে থাকেন ۔۔۔۔

" Whoever suffers bonepains like me

has only to think of me

he will not join me in spirit by the spaceway

for what use to reunite a being in spirit

and not in flesh ? "

-- To have done with the judgement of god :

( আমার নেশা চড়েছে বুঝতে পারছি | এতক্ষণ রেস্তোরাঁয় মৃদু সুরে সেতার বেজে যাচ্ছিলো এখন দেখছি সেখানে একই সঙ্গে Macbeth নাটকের নানারকম সংলাপ আর প্রদীপ চৌধুরীর কবিতা একই সঙ্গে যোজনহারা কণ্ঠে ভৌতিক দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত রেস্তোরাঁ জুড়ে ....

Macbeth -- " Methough i heard a voice cry , ' sleep no more !  Macbeth does murder sleep : the innocent sleep , sleep that knits up the ravelled sleeve of care, The death of each day's life , sore labor's bath , Balm of hurt minds , Great nature's second course , chief nourisher in lif's feast"

প্রদীপ চৌধুরীর কবিতা -- ( অন্যান্য তৎপরতা ও আমি ( ১৯৬৪ ))

"  মা বলেন স্বয়ং ঈশ্বর আমাকে নষ্ট করেছে / দগদগে  ঘৃণায় বাবা চিৎকার করে উঠেন " শয়তান তোকে ধর্ষণ করেছে " / লীনা , মানুষের ভাগ্য এবং ক্ষমতা আমি জেনে গেছি / হায় ! আদিম শরীরটাকে ভাড়া খাটতে রেখে আসি তোমাদের অকথ্য অঞ্চলে "

( বিধ্বস্ত উপজাতি )

Macbeth -- " is this a daggar which i see before me, The handle towards my hand ? Come , let me clutch thee : I have thee not , and yet I see thee still "

প্রদীপ চৌধুরীর কবিতা - ( চর্মরোগ ( ১৯৬৫ )) " আমার শরীরের চেয়ে বিশগুণ লম্বা আমার দুর্দান্ত নখ , তার বর্বর ফলায় লটকে আছে টালিগঞ্জ , শ্যামবাজার ও আমার রক্ষিতা "

Macbeth -- " To- morrow , and to- morrow , and to-morrow , creeps in this petty pace from day to day . To the last syllable of recorded time , And all our yestedays have lighted fools . The way to dusty death . Out , out , brief candle ! . Life's but a walking shadow , a poor player that struts and frets his hour upon the stage . And then is heard no more : it is a tale Told by an idiot , full of sound and fury , signifying nothing ".

প্রদীপ চৌধুরীর কবিতা -- ৬৪ ভূতের  খেয়া  ( ১৯৭১)  " চূড়ান্ত বিস্ফারিত তোমার ভ্রুণ বেআইনি ভাবেই আমার হাতের মধ্যে / নেশায় আবার ফাটে | আমিই আমার শিকড় এবং খাদ্য / আমিই মাটি / পৃথিবীর নোনাজল , আমিই  গাঁজা , আমাকেই খাই | দেখ , আমার / সবুজ শরীরের মেরুন হাত - পা , মেরুন চোখ , মেরুন তলপেট এবং  ফ্যাকাশে - / হলুদ রক্তস্রোতে কিরকম পতপত শব্দে ভালোবাসার খিস্তি দিচ্ছে / নতুন বারুদের গন্ধে ঝিমিয়ে আসছে শরীর , হয়ত জীবন " ( সিদ্ধার্থ )

*****

কালো গর্ত ( ১৯৮৩ ) --  " বাবা - মা প্রতিবেশী ঈশ্বর একদিন / হুড়মুড় করে সকলে আমার দরজায় / এসে ভীড় করে - মজা বেশী / হবে ভেবে সকলের চোখের সামনে / ঘৃণা থেকে আমাদের  ভালবাসাবাসি শুরু হয় এইভাবে : / একদিন আমি বাথরুম থেকে ভেজা / নেংটো শরীরে সোজাসুজি মা বাবা / ঈশ্বর প্রতিবেশী প্রেমিকা সকলের / সামনে এসে পা ফাঁক করে দাঁড়াই / এবং ১সেকেন্ড দেরী না করে তলপেটে / বসিয়ে দিই ওদেরই শান দেয়া ছোরা /  নাড়িভুঁড়ি খাবলে এনে শূন্যে তুলে ধরি ,/ দেখি তীব্র উত্তেজনায় প্রত্যেকের ঊরুর / ফাঁকে আলাদা সূর্য জ্বলে উঠছে |"

( হারাকিরি )

*****

রাত্রি ( ২০০০ ) -- " এই সেই অনাগত নদীর স্রোতধারা -- / আন্দোলন | / তাকে একজীবন থেকে আরেক জীবনে / বয়ে নেবার অপরাধে আমরা নামহীন কুশীলব গোপনে মিলিত হই | / কফিহাউস , খালাসীটোলা বারদৌরির কোণের টেবিলে বসে লক্ষ্য করি / সিল্কমিশ্রিত , নারীদের কোষ্ঠজাত শব্দহীন বায়ুস্তরের নীচে আলোকিত উপগ্রহ -- / মুখে হাসির ফোয়ারা , ভরা গলায় সুগমসঙ্গীত , / গল্পের আকারে টিভির পর্দাতেও একশ্রেণীর নাগরিক দেখি : / ' আশ্চর্য প্রদীপ ' হাতে গণিকাতন্ত্রের দিকে ধাবমান শ্রেণী "

( আন্দোলন )

*****

কলকাতা বিষাদ গীতি ( ২০০২ -- ২০০৮ )  " জন্মান্তরের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা সহচরী / হারিয়ে যাওয়া  সখাগণ -- জাগো জাগো জাগো / ম্লান সৌরতাপে / আজ এই মাঝরাতের অরোরা আলোয় / পৃথিবীর প্রান্তরেখায় দাঁড়িয়ে আমার /  যাবতীয় শোধবোধ , আজই - / আমি তৈরী , / উৎক্ষিপ্ত বস্তু -- বরফ নিশ্বারিত মহাপ্লাবন / আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলো চেনা ও অচেনা / মহাকাশের নিরুদ্ধ নিয়ম / গতিপথ পাল্টাও পৃথিবী / নিয়ম অনিয়মের শর্ত ভুলে / একে অপরকে জড়িয়ে ধর , হাত রাখ প্রেমে / উত্তর সাগর থেকে বঙ্গোপসাগরে আজও / আরো বেগবতী আমার অকথিত বাণী --/  শিরা , শরীর -- আমার ভগ্ন হৃদ - সংস্থাপন "

( ওসলো ফিলহারমোনিক )

পাঁচ .

এতো দেখছি পিংপং বলের মতো আমার বোধ আমার আচ্ছন্ন চেতনা নিয়ে খেলতে খেলতে আমাকে ক্রীড়নক করে , হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে এক অতিকায় লৌহ দানব |  নেশার তীক্ষ্ণ ছুরি কুঁদে কুঁদে আরো অমসৃণ করেছে ,

আমার ভাবনার গতিপথকে | একদিকে ম্যাকবেথ অন্যদিকে প্রদীপ চৌধুরীর কবিতা | রেস্তোরাঁর গোপনীয় ব্লু টুথ স্পিকার থেকে অনর্গল ধারাবিবরণীর মতো , ঝরোকার মতো বর্ষিত হচ্ছে যুগ্ম কণ্ঠের স্রোতধারা | আমি অভিভূত ! বাকরুদ্ধ ! মনে হচ্ছে কলকাতার মূল কেন্দ্রে এই রেস্তোরাঁ নয় | গোটা কলকাতা শহরটাই যেন শিখরশহর |

সম্পূর্ণ অবলম্বনহীনতার নৈঃশব্দে আমি বায়বীয় ভূতের মতো বসে আছি যেন | বাইরে তখনো বৃষ্টি থামে নি | আমি ডোমকানা বাঁশবনে একা বসে আছি | রেস্তোরাঁয় নরনারীর চাপা হাসি , মৃদু গুঞ্জন , প্লেট ও চামচের শব্দ হচ্ছে না আর |  কেন কেনই বা এরকম অবস্থা ?

পকেট হাঁতড়ে দেখি চুরানব্বই সালে লেখা মনীষী অম্লান দত্তের একটি চিঠি | আমার পকেটে এই চিঠিটা কে দিয়ে গেলো ? এতো প্রদীপ দা , কবি প্রদীপ চৌধুরীকে লেখা অম্লান দত্তের চিঠি ...

প্রীতিভাজনেষু ,

       তীক্ষ্ণ নগ্ন আবেগময় আপনার ভাষা , তলায় পৌঁছোবার চেষ্টা |

এই তীক্ষ্ণতা মানুষকে -- ব্যক্তিকে -- নিয়ে যেতে পারে একদিকে শুদ্ধ সত্যে , অন্যদিকে এক আদিম অন্ধ তেজের আবর্তে | সেই অন্ধ তেজকে আত্মস্থ করে শুদ্ধ সত্যে উত্তরণই যদি হয় কবিতা , তবে সেটা মুক্তির পথ | বিজ্ঞান ও ধর্মের উচ্চতর স্তরেও এটাই ঘটে | কবিতা আপনার ধর্ম |

প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানবেন |

                                       অম্লান দত্ত , ২৫ / ১২ / ৯৪

যে মানুষটা শুদ্ধ ভালোবাসা এবং চূড়ান্ত সততার সঙ্গে নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত , নিজের রক্ত মাংস হাড় মজ্জা অনুভব দিয়ে প্রতিটি মুহূর্তে নিজের জীবনকেই কবিতার দাবানলে উৎসর্গ করেছিলেন , যে মানুষটার বেঁচে থাকার ধর্মই হলো ' কবিতার ধর্ম ' ,

আপোষহীন একা অস্থির এবং দুঃসাহসী | যে মানুষটা কবিতার উর্ধে কখনো পাঠক , নারী , খ্যাতি , অর্থ , প্রচার , প্রতিষ্ঠা , প্রতিপত্তি , পরিচিতি এমন কী মিথ্যে অমরত্ববোধের বিলাসিতাকেও " ফু :" বলে উড়িয়ে দিতেন এবং সারাজীবন নেশাগ্রস্তের মতো কাপালিক সন্ন্যাসী হয়ে মোহহীন  নৃমুন্ডচূড়ায় বসে নিজের রক্তে পান করে গেছেন মুক্তি ও কবিতার কারণসুধা | যিনি লিখেছিলেন নিজের সমগ্র জন্ম জীবন প্রতিমুহূর্তে বেঁচে থাকা ও মুক্তি নিয়ে " রাত্রি " নামক কবিতার বইয়ে ....

" আমি যে দরজা দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছিলাম

আর তারপর সেই বিশাল ঘটনা , ভূমিকম্প ,

পাহাড়ের বুক চিরে তীব্র জলস্রোত , বীর্য ও লাভার

নারী , আদিম শব্দহীনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়া বিদ্যুৎ ,

রাশি রাশি বকুল - বিছানো যোনিপথে ক্রুদ্ধ সূর্যোদয় --

আমার শরীরে হাড় নেই , মাংস নেই আমার

কোন চোখ নেই , আমার ভ্রমণ সেই উৎসমুখ

যেখানে ভালবাসার , কল্পনার আণবিক উৎক্ষেপণ --

দেখি , হাজার হাজার অন্ধকার আকাশভর্তি

মৃত গ্রহের গর্ভ থেকে লাফিয়ে পড়ছে ,

কোমরের কাছে তাদের দ্বিখণ্ডিত দীর্ঘ শরীর ,

ভেঙে যাচ্ছে , গলগলিয়ে রক্ত

গড়িয়ে পড়ছে কালো গর্তের ভেতর , আমার

প্রস্থানের প্রতিটি দরজার সামনে কালো গর্ত

অতল অতল থেকে এগিয়ে যাচ্ছি

                                         সূর্যোদয়ের দেশে

আমার বুকে আবছা প্রতিটি পায়ের ছাপ

থেকে থেকে একে ডানা মেলছে আলোকিত ফুল "

( আলোকিত ফুল )

অথচ ভাবি , রায়চৌধুরী , গোস্বামী , গাঙ্গুলি , সরকারদের এতো ক্ষুধা , এতো এতো খিদে  ...... .  আমি রাখি কোথায় ?

' জীবনে এতো খিদে কেনে তোদের ?'  তারাশঙ্করের কবি' র ভাষ্য কী ঈশ্বরের সিলমোহর পেয়েছিলো ?

যখন সবকিছু একে একে বেসরকারিকরণের দিকে ...!

হা ঈশ্বর !  ( হা হা হা হা হা হা হা ....)

হঠাৎ দেখি আবার কিচিমিচি শুরু করে দিয়েছে সেই " ম্যাকবেথ " নাটকের তিন ডাইনি ...

witches -- " By the pricking of my thumbs, / something wicked this way comes ".

ওরে তোরা থাম ۔۔۔ কিন্তু কে শোনে কার কথা ۔۔۔

Witches -- " when our actions donot , our fears domake us traitors ".

এবার দেখছি একসঙ্গে কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে , Banquo , king Duncan |

Banque -- " present fears are less than horrible

imaginings"

কোথা থেকে king Duncan হঠাৎ বলে উঠলেন ۔۔۔۔

King Duncan -- " There's daggers in men's smiles".

এসব অসংলগ্ন মাথামুন্ডুহীন আগে পিছে , Macbeth , Witches, Banque , king Duncan ۔۔۔ যা পাচ্ছে এদিক ওদিক থেকে বলে যাচ্ছে | এতো ক্যাওস কেনো ?  ক্যেওটিক ডিসঅর্ডার নামক একটি সূক্ষ্ম দড়ির ওপর  যিনি হেঁটে গেছেন সারাজীবন খেলা দেখাতে দেখাতে , তার সঙ্গে কথা বলার বিরতিতে এরা এসব আবোলতাবোল বলছেই বা কেন ?

কিন্তু আমাকে রেখে কোথায় প্রস্থান করলেন প্রদীপ দা | দেখছি ওয়েটার এগিয়ে এসে আমাকে  ভ্যান্ট্রিলোকুইস্টের মতো ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলছে , সময় হয়ে গেছে অনেকক্ষণ হলো | আপনি বাথরুমে যাবার নাম করে কোথায় নিরুদ্দেশ হয়ে

গেছিলেন ? আপনার বন্ধুরা দাম মিটিয়ে অনেকক্ষণ বসে চলে গেছেন | আপনি এবার উঠুন ....

এ যেন আদেশের মতো | আমি কোনক্রমে হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে একটু এগিয়ে আবার পেছনে ফিরে এসে ওয়েটারকে জিজ্ঞাসা করলাম , " আচ্ছা একজন ভদ্রলোক , হলুদ পাঞ্জাবি এবং পাজামা পরে , ছোট ছোট  চুল , বলিষ্ঠ চেহারা , সিগ্রেট মুখে আমার সামনে বসে  ছিলেন ,  তিনি কোথায় গেলেন বলুন তো ?"

ওয়েটার এবারে মৃদু অথচ ঈষৎ কর্কশকণ্ঠে বলে উঠলো ,

" কোথায় ? এরকম তো কেউ আপনার সঙ্গে আসেনই  নি | আপনার তিনজন বন্ধু ছিলেন  | চারটে চেয়ার বুক করলেন আপনারা ۔۔۔!"

ও ۔۔۔ আচ্ছা আচ্ছা ۔۔۔۔

আমি ঘোরে অঘোরে নিজেকে প্রশ্ন করতে করতে টলটলিয়ে এগোতে থাকলাম ۔۔۔ প্রদীপ দা তাহলে গেলেন কোথায় আমাকে বসিয়ে ?

আচ্ছা বেভুলো লোক তো !۔۔۔

( এর ফাঁকে অজ্ঞাত কারণেই পকেটে হাত দিতে গিয়ে দেখলাম একটি চিরকুট | কিন্তু সেখানে তো প্রদীপ দাকে লেখা অম্লান দত্তের চিঠি ছিল ! তার বদলে চিরকুট ! )

বের করে দেখি তাতে স্পষ্ট লেখা , ( প্রদীপ এখন আমার নতুন

সরকারি  দায়িত্ব |  ধাপার মাঠে | আমার কবিতার মতো এটাও ইন্টারেস্টিং ۔۔۔۔চিরকুটে এর বেশী কিছু লেখা নেই )

আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম রাত দশটার গড়িয়াহাটের রাস্তায় , একা | মনে পড়ে গেলো , ভোটের ডিউটি করতে যাবার পথেই , সব্যসাচী আমাকে খবরটা দিয়েছিলো | যে , করোনায় গত রাতে প্রদীপ দা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে | প্রদীপ দা র ছেলে দিমিত্রি , পুত্রবধূ , অতিপ্রিয় নাতনি  মিরান্দা সবাই একসঙ্গে করোনা নিয়ে গৃহবন্দী |  প্রদীপ দা'কে  শেষ দেখাও তারা দেখতে পান নি | ধাপার মাঠে গণচিতায় পুড়ে গেছেন , এই কলকাতার শহর কাঁপানো হাংরি জেনারেশনের অন্যতম স্রষ্টা কবি প্রদীপ চৌধুরী !

কোনও কবি বা মিডিয়া এমনকি কাকপক্ষীতেও ঘুণাক্ষরে টের  পায় নি , বাংলা কবিতার শেষ সম্রাট কী রাজকীয় ভাবে চলে গেছে ...! 



মঙ্গলবার

হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়

 হাংরি আন্দোলন : শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ধীমান চক্রবর্তী এবং মুর্শিদ এ এম

প্র: আপনার কাছে কোনো চিঠি আছে মলয়ের বা সমীরের ?

উ: না, না, আমি তো লিখিনি। যখন এসেছে, দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে। কিন্তু চিঠি লিখিনি । তবে হাংরি জেনারেশন করে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় । আইওয়া থেকে ফিরে এসে সুনীল হাংরি জেনারেশনের সপক্ষে সাক্ষী দেয়। সেই সাক্ষীর জোরে, বুদ্ধদেব বসুর জোরেই ওরা মুক্তি পায় । পি.কে.সেন পুলিশ কমিশনার, আমাদের যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। উৎপলকুমার বসুকে ডেকে পাঠান । বলেন, তোমরা এ সমস্ত অন্যায় কাজ করছ । এ সমস্ত কাজ করতে দেয়া হবে না । ওকে বলে যে, তুমি লেখো, আমি আর এ সমস্ত কাজ করব না । যদ্দুর মনে হয় শক্তি চট্টোপাধ্যায় আর উৎপল দুজনেই লিখে দিয়েছিল আমরা এসব করব না । 

প্র: শক্তি তো বিপক্ষে সাক্ষ্যও দিয়েছিলেন—

উ: হ্যাঁ–

প্র: আরও একটা ব্যাপার আছে। সুনীলবাবু যে আইওয়া থেকে চিঠি লিখেছিলেন মলয়কে যে —তোমরা এই আন্দোলন-টান্দোলন করো, কাছে থাকলে একটা থাপ্পড় দিতাম । আবার সেই সুনীলই মলয়ের পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছেন — এটা কীরকম ব্যাপার ?

উ: সুনীলের এটা দ্বিচারিতা….

প্র: হাংরি আন্দোলন ১৯৬৫ সালে শেষ হয়ে যাবার পর সমীরদা পোস্টমডার্ন, অধুনান্তিকতা ইত্যাদি নিয়ে কাজকর্ম শুরু করেছেন । সেই নিয়ে আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই।

উ: মানে সিরিয়াস সাহিত্যের কাজ, হাংরি আন্দোলন ছেড়ে দিয়ে…? সেই সময় সমীর আর শান্তি লাহিড়ী মেঘমল্লারে এসে, মদ্যপ অবস্হায়, ট্যাকজসি করে এসে এক কপি হাওয়া৪৯ দিয়ে বললেন, এটাতে আপনি লিখুন। আমি লেখা দিয়েছিলাম কিনা মনে নেই । সম্ভবত কখনো দিইনি। একদিনই এসেছিল, তারপর যোগাযোগ করেনি । তখনই জানতে পারলাম যে সমীর সিরিয়াস সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । হাংরি আন্দোলন তখন শেষ, বন্ধ হয়ে গেছে । তারপরই তো নকশাল এসে গেল, ব্যাপারটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল । সমীর যখন সিরিয়াস কাজকর্মে যুক্ত হল, তখন ওর সঙ্গে আমার সাহিত্য সভা-টভায় দেখা হতো । ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল একটা ব্যাপারে, সেটা হচ্ছে — সুনীলের যখন আইওয়া যাবার কথা হচ্ছে, তখন একটা বই বেরিয়েছিল Blue Hand, ডেবোরা বেকার বলে এক মহিলার লেখা, তিনি হলেন অমিতাভ ঘোষের মেম স্ত্রী – বইটি অ্যালেন গিন্সবার্গের জীবনী। বইটি লেখার জন্য লেখিকা আমার কাছে এসেছিলেন তথ্য যোগাড় জরতে। আমি সাহায্য করেছিলাম বলে বইটি যেদিন বের হয় সেদিন আমাকে নেমন্তন্ন করা হয়েছিল—টাউন হলে অনুষ্ঠান হয়েছিল । বইটার এক কপি দিয়েছিল। সেই লেখায় আমি পড়লাম যে হাংরি জেনারেশনের ব্যাপারে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লাভবান হয়েছে, আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উৎপল । কারণ উৎপলের চাকরিটা চলে যায় । 

প্র: সমীরদারও তো চাকরি চলে যায় । মানে সাসপেণ্ডেড হন ।

উ: হ্যাঁ, তারপর ফিরে পায় । কিন্তু উৎপল এইসব করাতে চাকরি চলে যায় । ওই Blue Hand বইতে লেখা আছে যে, উৎপল আমেরিকাতে অ্যালেন গিন্সবার্গের সঙ্গে যোগাযোগ করে — যে আমার এখন চাকরি নেই, আমি খুব খারাপ অবস্হার মধ্যে আছি, আমায় কিছু একটা ব্যবস্হা করে দাও। তখন গিন্সবার্গ তাকে বলে, তুমি লণ্ডন চলে যাও, ওখানে স্কুলে পড়াবে, আমি ব্যবস্হা করে দিচ্ছি । এবং Blue Hand বইতে লেখা আছে with the help of Allen Ginsberg, Utpalkumar Basu has got a job in London. আমি সেই ঘটনার উল্লেখ করে, শক্তির জন্মদিনে একটা উৎসব হয়েছিল, সেখানে, ওই যে অনুষ্ঠান-টান করে, কী যেন নাম, সে আমাকে নেমন্তন্ন করল যে, আমাকে একটা লেখা দিন —। সেখানে শক্তি সম্পর্কে লিখতে গিয়ে একটা কথা লিখেছিলাম যে, আইওয়া যাবার প্রস্তাব নিয়ে আসে কলকাতায় প্রথম পল অ্যাঙ্গেল, এবং উদ্দেশ্য ছিল যে, বোহেমিয়ান একজন কবিকে আমন্ত্রণ করবেন, যেমন উনি নানা দেশ থেকে নিয়ে যান —এবং তার জন্য টাকাও এনেছিলেন। ওঁর লক্ষ্য ছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায় । শক্তি চট্টোপাধ্যায়কেই উনি নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন । কিন্তু বুদ্ধদেব বসু ও সম্প্রদায় বলেছিল, এবং তাতে সুনীলেরও সায় ছিল নিশ্চয়ই, যে, শক্তি যেমন মদ খায় আর মাতলামি করে – সুতরাং ওকে না পাঠিয়ে অন্য কাউকে পাঠানো হোক । সুনীল খুব ভদ্র সুতরাং পত্রপাঠ আইওয়া চলে যায় এবং পরের বছর শঙ্খ ঘোষকে পাঠানো হয় । পরপর দুবছর ওরা যায় এবং শক্তি বাদ পড়ে যায় । সেটা আমি লিখেছিলাম শক্তির জন্মদিনে, ওই লেখাটার মধ্যে । সেটা পড়ে সুনীল আমায় চিঠি লেখে যে, আপনি ওই বইটা পড়ে লিখেছেন যে, There was a rumour, that Shakti Chattopadhyay was the nominated person, but Sunil Gangopadhyay availed the chance. এটা পড়েছেন বোধহয়। সেটা ভালো করে পড়িনি — আসলে রিউমার ছিল বোধহয়–। তারপর লেখে, এ প্রসঙ্গে জানাই এ বছরের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার আপনি পাচ্ছেন — আমাকে পুরস্কারটা পাইয়ে দিয়ে আমার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করে। সেই চিঠিটাই আমি কয়েক দিন আগে ‘নতুন কৃত্তিবাস-এ দিয়ে দিই, বীজেশ সাহা সেটা ছেপে দিয়েছে । সুনীলের চিঠিটা। ঘটনা হচ্ছে ওরা চেয়েছিল একজন বোহেমিয়ান, এবং সেই অর্থে শক্তি যথেষ্ট বোহেমিয়ান ছিল। কিন্তু সুনীল ছিল ভদ্র, কিন্তু বুদ্ধদেব বসুর টান ছিল ওর প্রতি, তাতে করে সুনীল নমিনেটেড হয়ে যায়। সুনীল তার অর্ধেক জীবন  বইতে লেখে– ‘অ্যালেন কলকাতা থেকে চলে যাবার পরে সুনীলকে চিঠি লেখে যে, আমাকে নমিনেট করেছে, আমাকে আইওয়া যেতে হবে। আমি প্রস্তুত হলাম এবং চাকরি বাকরি ছেড়ে চলে গেলাম।’ একবছর পর যখন ফিরে আসে তখন চাকরি নেই কিন্তু চাকরি পেয়ে গেল । আনন্দবাজারে আর সবাই যেমন লেখালিখি করে, ওকে একটা পৃষ্ঠা দেওয়া হল, পঞ্চাশ টাকা করে দিত, এক পৃষ্ঠা লেখা— আনন্দবাজারের চাকরি !

প্র: সুনীলের সঙ্গে সমীরের যেমন বন্ধুত্ব ছিল, তেমনি শেষের দিকে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি বা বিরোধও ঘটেছিল। এ সম্পর্কে কিছু শুনেছেন ?

উ: না। একদম জানি না । কী ধরনের বিরোধ ?

প্র: বিরোধ বলতে দীর্ঘ দিন তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল না ।

উ: বোধ হয় দূরত্বের জন্য ।

প্র: না । উনি ব্রহ্মপুর আর ইনি এই গড়িয়াহাট । স্হানিক দূরত্ব তো বেশি নয়, লেখালিখি নিয়ে বা আলাপচারিতায় বা একে অপরের খোঁজ নিতেন না—

উ: সমীরের যে ধরনের সাহিত্যচর্চা, তার সঙ্গে সুনীলের সাহিত্যচর্চায় কোনো মিল নেই। সুনীলের হচ্ছে সামাজিকতা এবং জনপ্রিয় সাহিত্যের দিকে নজর। সমীরের ছিল সিরিয়াস সাহিত্য নিয়ে কথাবার্তা — এবং সাহিত্যের মধ্যে দিয়ে গবেষণার দিক বিকশিত করা। ওদের মধ্যে মিল থাকার কথা নয়। সমীরের সঙ্গে বহু মানুষের বন্ধুত্ব ছিল, সমীরের সঙ্গে কেন ছিল জানি না। এটা খুব দুঃখের কথা। সুনীলের সঙ্গে শঙ্খবাবুর বন্ধুত্ব হয়েছিল, সমীরের সঙ্গে হয়নি ! যারা যারা নিরপেক্ষ ছিল তাদের সঙ্গে হয়নি ।

প্র: হাওয়া৪৯-এর কোনো লেখা পড়েছেন ? ইদানিং যা যা লেখালিখি তা কি আপনার গোচরে এসেছে ?

উ: বিশেষ কিছু পড়িনি । কয়েকটা সংখ্যা হাওয়া৪৯ পড়েছি, তারপর আমার সঙ্গে কারও যোগাযোগ হয়নি, এবং আমারও তেমন উৎকন্ঠা হয়নি এসব বিষয়ে । আমি আমার নিজের লেখা নিয়ে থাকতাম ।

প্র: একদিন যে সাহিত্যসভায় দেখা হল বললেন ? সেখানে কী কী কথাবার্তা হল ?

উ: ওখানে হাংরি আন্দোলন নিয়ে কথাবার্তা হল । মলয়কে ও নাকি সংযত হবার পরামর্শ দিয়েছিল, কিন্তু মলয় সেটা শোনেনি । এরকম বলল, সেটা সত্যি কিনা জানি না, হয়তো হয়ে থাকতে পারে। আসলে হাংরি জেনারেশন আন্দোলনের হিরো হচ্ছে মলয় রায়চৌধুরী। যদি কারও আমেরিকা যাবার কথা হয়ে থাকে তো যাওয়া উচিত ছিল মলয়ের । হাংরি জেনারেশন নিয়ে আমেরিকায় যদি উৎসাহ হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য মলয় যেহেতু নেতৃত্ব দিয়েছিল – মলয়েরই যাওয়া উচিত ছিল। মলয় বড়ো ব্যাঙ্কে চাকরি করত বলে, চাকরি ছেড়ে যেতে চায়নি কিনা জানি না । ওর যাওয়ার কথা উঠেছিল কিনা তাও জানি না । ওরই যাওয়ার কথা, ও-ই ছিল লিডার অব হাংরি জেনারেশন । প্রথম থেকেই। সমীর রায়চৌধুরী নেতৃত্ব দিয়েছিল কিনা জানি না, বড়ো দাদা হিসেবে সঙ্গে থাকা, টাকা-পয়সা দেওয়া — এসব করেছিল। কিন্তু আসল নেতৃত্ব দিয়েছিল মলয়, এ আমি এখনও বলব ।