মঙ্গলবার

সমীর রায়চৌধুরী সম্পর্কে অলোক গোস্বামী

 


  • লং লিভ আলিবাবা
    অলোক গোস্বামী
    ২০০৩ তে শিলিগুড়ি থেকে শুরু করেছিলাম ‘গল্পবিশ্ব ’পত্রিকা সম্পাদনা করা। নামকরণেই মালুম হওয়াটা স্বাভাবিক যে ওটা ছিল গল্প পত্রিকা। তবে নিছকই গল্প ছাপাছাপিতে সীমাবদ্ধ ছিলনা সেই প্রচেষ্টা, গল্প সংক্রান্ত আলোচনাও প্রাধান্য পেত সেখানে। ‘ডার্করুম’ বিভাগে থাকতো লেখকদের গল্প বিষয়ক চিন্তাভাবনা। কয়েকটি সংখ্যায় প্রকাশ করেছিলাম বর্হিবঙ্গের বাংলা গল্প চর্চার আলোচনাও। অর্থাৎ বাংলা ছোট গল্পের সাম্প্রতিকতম চিত্রটা তুলে ধরার কাজে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল আন্তরিক।
    তো, পরপর পাঁচটি সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার পর ২০০৮ তে ষষ্ঠ সংখ্যার বিষয় বেছে ছিলাম-ব্যতিক্রমী সাহিত্য। কারণ হিসেবে সম্পাদকের কলামে লিখেছিলাম--“ব্যতিক্রমী সাহিত্য-এই অভিধাটির সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের দীর্ঘ দিনের পরিচয়। এই তকমা কবে চালু হয়েছিল কে জানে! তবে এটি আবিষ্কারের মূল কৃতিত্ব যে গবেষক তথা আলোচকদের সে কথা বলা বাহুল্য মাত্র। কিছু লেখকের ক্ষেত্রে উক্ত অভিধাটি প্রয়োগ করে আমাদের চিনিয়ে দিয়েছেন উনি/ওঁরা ব্যতিক্রমী সাহিত্যিক। সাহিত্যের মূলস্রোতের বিপরীতে তাদের অবস্থান।
    এই বিভক্তিকরণ আমরা অর্থাৎ পাঠকেরা নির্বিচারে মেনেও নিয়েছি। এই বিভক্তিকরণের পদ্ধতি তথা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কখনই প্রশ্ন তুলিনি। পাঠকদের কথা বাদ দিয়েও বলা যায়, উক্ত লেখকদেরও যে এহেন বিভক্তিকরণে যে আপত্তি রয়েছে তেমন কোন প্রমাণ চোখে পড়েনি। অথচ প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক ছিল, কোনটা ব্যতিক্রমী সাহিত্য? কোন নিরিখে ব্যতিক্রমী--বিষয়,নাকি ভাষা,নাকি বাণিজ্যিক মাপকাঠিতে? নাকি ওই বিশেষণ চালু করার পেছনে থোড়-বড়ি-খাড়া সমৃদ্ধ বাজার চালু ফর্মুলাটিকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো গূঢ় অভিসন্ধি রয়েছে!
    এমন প্রশ্ন ওঠাটাও অস্বাভাবিক ছিলনা যে কোনটা তবে মূলস্রোতের সাহিত্য? যে নদীটির তীরে সাহিত্য সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছিল সেই সরস্বতীই যখন লুপ্ত হয়ে গিয়েছে,যখন আদি গঙ্গার অপর নাম টালি নালা তখন ‘মূলস্রোত’ বিশেষণটিও কি নিছক শব্দ জঞ্জাল নয়?”
    আমার মতো আরও অনেক পাঠকের সংশয় দূর করার জন্য ওই সংখ্যায় প্রকাশ করেছিলাম বেশ কিছু প্রবন্ধ এবং গল্প। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা ওরকম একটা আখাম্বা বিশেষণের জন্য শুধু এটুকুই যে যথেষ্ট নয় সেটা বিবেচনা করে প্রয়োজন অনুভব করেছিলাম এমন এক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করার যার চিন্তা ভাবনা বাজার নির্দিষ্ট নয়। যিনি সাহিত্যের বিভিন্ন প্রবণতা বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখেন। যিনি যতটা ভাবতে পারেন,ভাবিয়ে তুলতে পারেন তারচে’ও বেশী। আলোচনা প্রসঙ্গে যিনি কোনো ব্যক্তিগত অসূয়ার ধার ধারেন না। যার কাছে কোনো রচনাই অপ্রাসঙ্গিক নয়।
    বন্ধুরা যথারীতি আমার ওই আকাঙ্খাকে মহতি আহ্লাদ হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। সেটাই স্বাভাবিক, কেননা তাদের খোঁজে তেমন কোনো উপযুক্ত ব্যক্তিত্ব ছিল না যা কিনা আমার ছিল। সমীর রায়চৌধুরী। আমি জানতাম গল্পবিশ্বের ওই সংখ্যায় সমীর রায়চৌধুরীকে নিয়ে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা কতটা অনিবার্য।
    আমার এহেন প্রস্তাবনায় সেদিন অনেকেই ভ্রু কুঁচকে ছিলেন, হঠাৎ সমীর রায়চৌধুরীকে নিয়ে কেন! কী লিখেছেন ভদ্রলোক? কী দাম আছে ওঁর কথাবার্তার? থান ইঁট মার্কা উপন্যাস আছে? ঝুলিতে মেডেল,আকাদেমী চেয়ার, পার্টি মেম্বরশিপ, এনি থিং?
    যাদের হাংরি সংক্রান্ত কেচ্ছাতিহাস জানা ছিল তারা মুচকি হেসে বলেছিলেন,“উনি তো জাস্ট মলয় রায়চৌধুরীর দাদা! আর কী আছে ওঁর? কখনো সুনীল শিবিরে কখনও শৈলেশ্বর শিবিরে ব্যালেন্স করে চলেছেন.।”
    না, তাদের বিস্ময় কিংবা ধ্যানধারণা আমাকে অবাক করেনি। এমন কী মন্তব্যগুলোও আহত করেনি। বরং স্বাভাবিকই মনে হয়েছিল। কেননা বছর বারো আগে আমি নিজেও তো ছিলাম ওই বিস্মিতের তালিকায়। ‘সমীর রায়চৌধুরী’--নামটার সঙ্গে আমার পরিচয়ও তো শুধু মাত্র হাংরি সাহিত্যের ইতিহাস মারফতই হয়েছিল এবং যে পদ্ধতিতে হয়েছিল সেটাকে আদৌ পরিচয় বলা যায় কিনা সন্দেহ।
    পরিচয়ের সুযোগটা ঘটলো নয়ের দশকের মাঝামাঝি। একটা পোস্টকার্ডে আচমকাই মলয় রায়চৌধুরী জানিয়ে ছিলেন,“ আমার দাদা কোলকাতার বাঁশদ্রোণীতে থাকেন। হাওয়া ৪৯ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। যোগাযোগ কোরো।”
    বিশদ ঠিকানা থাকা সত্বেও তক্ষুনি যোগাযোগ করিনি। কিংবা বলা ভালো প্রয়োজন বোধ করিনি। কারণ তিনি মলয় রায়চৌধুরীর দাদা। প্রথম আলাপেই মলয়ের অহঙের সুউচ্চ রেলিং পেরুতে পারিনি। নেহাৎ ওঁর কলম দক্ষতা এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বকে খর্ব করতে পারিনি তাই সম্পর্কটুকু বজায় রেখেছিলাম। তাবলে মলয়ের দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে কেন! যিনি কিনা আবার উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মি ছিলেন তাঁর অহঙ্কারও কি কম কিছু হবে? তাছাড়া কি এমন লিখেছেন ভদ্রলোক যে গাল বাড়িয়ে চড় খেয়ে আসতে হবে!
    কিন্তু সময়ের দাবীকে কে-ই পেরেছে অগ্রাহ্য করতে? মাস কয়েক পর কোলকাতা যাবার সুবাদে ঢুঁ মেরেই বসলাম সমীর রায়চৌধুরীর বাড়িতে। তাবলে আচমকা নয়। টেলিফোনে আগাম কথা বলে ওপারের কন্ঠস্বরকে রীতিমত স্ক্যান করে বুঝে নিতে চেয়েছিলাম, যাওয়াটা কতদূর সম্মানজনক হবে।
    সপরিবারে এসেছি শুনে আমন্ত্রণটাও পেয়েছিলাম সপরিবারেই কিন্তু ঝুঁকি নিতে পারিনি কেননা বিভিন্ন লেখক দাদাদের সৌজন্যে জোটা পূর্ব অভিজ্ঞতা খুবেকটা সম্মানজনক ছিল না। সুতরাং নিশ্চিন্ত হতে পারিনি টেলিফোন এবং আমার কানের বিশ্বস্ততা বিষয়ে। একা একা গিয়ে ঢুঁ মেওে আসাটাই শ্রেয় বোধ করেছিলাম।
    তখনও শহীদ ক্ষুদিরাম স্টেশান চালু হয়নি, মেট্রোর দৌড় টালিগঞ্জ অবধি। কোলকাতার অন্ধিসন্ধিও তেমন চেনা না থাকায় লাট খেতে খেতে হাজির হয়েছিলাম শ্রী রায়চৌধুরীর ব্রহ্মপুরের বাড়িতে। অনেক জমি এবং কিছু গাছপালাসহ দোতলা বাড়িটা দেখে মনে হয়েছিল ভদ্রলোক যথার্থই সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের উত্তর পুরুষ। গেট পেরিয়ে বেশ কিছুটা ভেতরে ঢুকে কলিং বেলে বাজানোর পর যিনি বেরিয়ে এসে ছিলেন তাঁকে দেখে আমার পূর্ব ধারণাটাই পাকাপোক্ত হয়েছিল। প্রায় ছ’ফুট,নির্মেদ,টকটকে চেহারা। গোঁফদাড়ি নিখুঁত কামানো। মাথা ভর্তি কালো চুলে এক চিলতে সাদার নিখুঁত আভিজাত্য।
    স্বপরিচয় পেশ করতেই যে প্রশ্নটার সম্মুখীন হলাম সেটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।
    --ওরা কোথায়?
    --কে! কারা?
    --তোমার স্ত্রী,কন্যা? ওঁদেরও তো আসার কথা ছিল!
    --না, মানে ইসে, মানে হঠাৎ আমার পিসী......।
    প্রস্তুতি বিহীন মিথ্যে যে কতটা অপ্রস্তুত করার ক্ষমতা রাখে সেটা সেদিন প্রতি পদে টের পেয়েছিলাম কেননা এরপরই মে হাজির হয়েছিলেন শ্রীমতি বেলা রায়চৌধুরী এবং একই প্রশ্ন সহ।
    এবারও একই রকম ভঙ্গীতে মিথ্যে সংবাদ পেশ করেছিলাম, তবে ততক্ষণে যেটুকু সপ্রতিভতা জোগার করতে পেরেছিলাম তার ওপর নির্ভর করে বলে ফেলেছিলাম,“আছি তো কয়েক দিন, আসা যাবে না হয় ফের একদিন।”
    খোঁড়া অজুহাতটাকে ল্যংড়াতে দিলেন না রায়চৌধুরী দম্পতি, নিমিষে লুফে নিলেন,“ ঠিক আছে, কবে আসবে বলো?
    এরপর আর কথার খেলাপ করিনি। দিন দুয়েক পরই কপাল ঠুকে হাজির হয়েছিলাম স্ত্রী এবং চার বছরের কন্যা সহ। এবার ওঁদের দুজনের ঠোঁটেই চওড়া হাসি। শুরু হলো জম্পেশ গল্প গুজব। বিদায় নিয়েছিলাম নৈশাহারান্তে।
    সেই শুরু। আমার সেই চার বছরের কন্যা চব্বিশ বছুরে হওয়ার পরও সেই ধারা বহমান ছিল। এই সেদিনও শোবার ঘরের বিছানার পাশে আমরা চারজন,মশারীর ভেতর বালিশ নির্ভর সমীরদা। আলোচনা যথারীতি গড়াচ্ছে বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে। সাহিত্য-সিনেমা-প্রেম-রাজনীতি, কী নয়! এবং যথারীতি সেদিনের আড্ডারও সমাপ্তি অধিবেশন বসেছিল ডাইনিং টেবিলে। শুধু দুটো বিষয়ে খানিকটা ভিন্নতা ছিল।
    (১) সেদিন সমীরদা এসে বসতে পারেননি ডাইনিং টেবলে, দেখাতে পারেননি গৃহিনীপণার নমুনা।
    (২) বিদায় কালে এসে দাঁড়াতে পারেননি বারান্দায়। ঘাড় উঁচু করে দেখতে পারেননি আমাদের বিদায় পর্ব।
    কারণ সমীরদা তখন শয্যাশায়ী।
    থাক সেসব ব্যক্তিগত কথা। আপাতত ফিরে যাওয়া যাক সেদিনের কথায়। তো, সেদিন সমীরদা জানতে চেয়েছিলেন আমার লেখালিখি সংক্রান্ত চিন্তা ভাবনা বিষয়ে। নিজস্ব চিন্তার খানিকটা অংশ শেয়ারও করেছিলেন। বলাবাহুল্য সেসবের অনেকটাই আমার মাথার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল। তবে এটুকু বুঝেছিলাম, মানুষটি ভিন্ন গোত্রের। মাথায় পোকা পোষেন এবং সেগুলো যাতে ঝিমিয়ে না পড়ে তাই নিয়মিত খাদ্য জোগানও দিয়ে থাকেন। নিজস্ব ভাঁড়াড়ে টান পড়লে অন্য মাথা থেকে খাদ্য সংগ্রহ করেন। সেই সুযোগে কয়েকটি পোকা চালানও করে দিয়ে থাকেন সেই মাথায়। সেই মাথাওয়ালা মানুষটি যদি চালাক হয়ে থাকেন তবে রায়চৌধুরী বাড়ির চৌহদ্দি পেরুনো মাত্র সেই পোকাগুলোকে ঝেড়ে ফেলে দিতে কসুর করেন না।
    তবে সবাই পারে না। আমিও পারিনি। হয়তো পারতাম যদি না প্রথম আলাপেই তখনও অবধি সমীরদার একমাত্র প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ, “সিগারেটের তিরোভাব” সংগ্রহ করে না আনতাম।
    যে কোনো গল্প কিংবা কবিতা সংকলনের পাতা উল্টে প্রথমেই নাম গল্প/কবিতাটি পড়ে নেয়ার অভ্যেস আমার চিরকালের। সেই রীতি অনুসারে প্রথম পড়েছিলাম ‘সিগারেটের তিরোভাব’ গল্পটি। গল্প নাকি ধাঁধা! এর নাম গল্প! কিসের গল্প এটি, সিগারেট ছাড়ার? নাকি শিশু মনস্তত্বের? নাকি মৃত্যুর!!!
    গল্পটি যেহেতু সদ্য লেখা তাই এরপর পড়তে চেয়েছিলাম পুরোন গল্পগুলো। বুঝতে চেয়েছিলাম সমীর রায়চৌধুরীর গল্পের বাঁক বদলের ধরণ।
    সবচে পুরোন গল্প ছিল,‘স্মৃতির হুলিয়া প্রতুলের মা অমলেট অবধি।’ আমার ধারণা ছিল লম্বা টাইটেলের স্রষ্টা শুধুই সুবিমল মিশ্র কিন্তু এই গল্পটি প্রমাণ করে দিলো সেই ১৯৫৭ তেই নিয়ম ভেঙেছিলেন সমীরদা। সেই নিয়মভঙ্গ শুধু নামকরণে নয়, বিষয়েও। এখানেও সেই একই ধাঁধা, কিসের গল্প এটা? আসন্ন মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মায়ের ছবি খোঁজা দিয়ে গল্পটি শুরু হলেও অন্তিমে সেই প্রসঙ্গ বেমালুম উধাও। মাঝখানের পর্বে পাঠককে সঙ্গী করে দৌড়ে বেরিয়েছেন এ গলি-সে গলি,এই সময়-সেই সময়। অথচ পাঠান্তে আদৌ গল্পটিকে অবান্তর ভাবা অসম্ভব। বরং নামকরণের সার্থকতা বিষয়ে নিঃসন্দেহ হতে হয়। মেনে নিতে হয়,সত্যিই তো, যে কোনো স্মৃতির যাত্রা এক সময় অমলেট পর্বে এসেই থেমে যায়। বাকি পর্বটির দখল নেয় বর্তমান তথা জীবন। যদিও এই ভাবনার জন্ম দিতে আমাকে আরও দীর্ঘ দিন সমীর সঙ্গ করতে হয়েছিল। সেদিন বরং ধাঁধিয়েই গিয়েছিলাম।
    সপ্রতিভ মানুষ যেহেতু ধাঁধাঁ পছন্দ করে না তাই নিজেকে মুক্ত করতে পরপর পড়েছিলাম,‘টিনিদির হাত,’‘দ্বিতীয় সংখ্যা,’‘অতিক্রম’,‘সমরেশ কিভাবে অপেক্ষা করে,’‘মাথার ওপরে দাদা আছেন’। সব ক’টা গল্পেরই রচনাকাল পঞ্চাশ এবং ষাটের দশক এবং সব ক’টা গল্পই আমাকে বাধ্য করেছিল ভাবতে, জন্মসূত্রে এবং জীবিকা সূত্রে বরাবর পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য জগত থেকে দূরে থাকা মানুষটি কিভাবে খুঁজে পেল সাহিত্যের এই নতুন ভাষা যা কিনা নির্দিষ্ট ভূগোলে আবদ্ধ থাকার বদলে আন্তর্জাতিকায় পৌঁছে গিয়েছে!
    ‘আন্তর্জাতিকতা’,এই অভিধাটি মাথায় এসেছিল,‘জলছবি’ গল্পটি পড়ে। কেননা সেই ১৯৬৩ তে যে ম্যাজিক রিয়ালিটির ব্যবহার করেছিলেন সমীরদা তার সঙ্গে ভারতবর্ষের পরিচয় ঘটেছে আশির দশকে, প্রায় কুড়ি বছর পর, মার্কেজের হাত ধরে। অত দিন আগে সমীরদা কিভাবে পেয়েছিলেন ওই কৃৎকৌশলের সুলুক সন্ধান!!
    গল্পটি জন্ম দিয়েছিল অনেক ক’টি বিস্ময়ের।
    প্রথম বিস্ময় জেগেছিল এই তথ্য জেনে যে,আপাদ মস্তক কবিতা পত্রিকা,‘কৃত্তিবাস’ নিয়ম ভেঙে সেই প্রথমবার গল্প প্রকাশ করেছিল এবং সেই নিয়মভঙ্গ ঘটেছিল,‘জলছবি’-র হাত ধরেই?
    দ্বিতীয় বিস্ময়ের কারণ ছিল গল্পটির নির্বাচন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পড়েছিলেন গল্পটি! সত্যিই ভালো লেগেছিল! মনে হয়েছিল,ওই গল্পটি নিয়মভঙ্গের দাবী রাখে!
    তৃতীয় বিস্ময় জেগেছিল এই ভেবে যে, সুনীলবাবু যদি সত্যিই গল্পটিতে আগাম বাঁক পরিবর্তনের ইঙ্গিত লক্ষ্য করে থেকে থাকেন তাহলে নিজে,অন্ততঃ একটি গল্প, ওই ধারায় লিখলেন না কেন? সমস্ত প্লেটে ছোঁ মারা তো ওঁর প্রাচীন অভ্যেস! তবে কি বুঝতে পেরেছিলেন যে ওটা তাঁর চায়ের কাপ নয়!
    কিন্তু কে ঘোচাবে আমার ওইসব বিস্ময়! সমীর রায়চৌধুরীর মতো লেখকদের জন্য যেহেতু এ.টি.দেব কিংবা অসিত বাঁড়ুজ্জেরা থাকেন না তাই সব বিস্ময় ঘোচাতে খোদ ওঁরই শরণাপন্ন হয়েছিলাম।
    না, প্রথমে নিজের লেখার স্বপক্ষে একটি কথাও বলেননি সমীরদা। বরং অন্য প্রসঙ্গে চলে গিয়েছিলেন। শুনতে চেয়েছিলেন আমার কথা। সাহিত্য নয়, জীবনের নানান প্রসঙ্গে। খোস গল্প প্রিয় আমি সুযোগ পেয়ে ঝাঁপি খুলে বসেছিলাম। বাপের বয়সী মানুষটির মুখে প্রশ্রয়ের হাসি দেখতে পেয়ে কোনো রকম সেন্সরশীপের ধার ধারিনি। অনেক গল্পের শেষে সমীরদা বলেছিলেন,“ছোট গল্প এরকমই হবে।”
    এহেন আলটপকা মন্তব্যে অবাক হয়েছিলাম।
    --কি রকম!
    --যেভাবে এতক্ষণ গল্প করলে। যেভাবে এতক্ষণ প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে তুমি নিজেকে আমার কাছে পেশ করলে, ঠিক সেই ভাবে।
    --তা কি করে হয়! উপন্যাস হ’লে তবু নাহয় কথা ছিল, ছোট গল্পে আবার তেমনটা হয় নাকি! গল্পের আদি-মধ্য-অন্ত থাকবে না?
    --না থাকবে না। জীবন তো ওভাবে পর্বে পর্বে ভাগ হয়ে আসে না, তাহলে সাহিত্য কেন হবে? সাহিত্য আর জীবন আলাদা নাকি! তাই সাহিত্যেও থাকবে মুক্ত সূচনা আর মুক্ত সমাপ্তি। তোমার গল্প দিয়ে তোমাকে কিছু বোঝানোর প্রয়োজন নেই বরং পাঠকৃতি দিয়েই পাঠক বুঝে নিক তার মতো করে। তুমি শুধু ভাবনার সংঘাতগুলো মেলে ধরো।
    আরো অনেক অনেক কথা বলেছিলেন সমীরদা। অনেক কিছ্রুই অর্থ বুঝতে পারিনি। শুধু কানে বেজেছে, ‘পোস্ট মর্ডান,’পোস্ট কলোনিয়ালিজম,‘অরৈখিক’, ‘রাইজোমাটিক,’‘কোয়ান্টাম বিজ্ঞান ভাবনা,’‘ক্যায়স,’ ইত্যাদি প্রভৃতি শব্দগুলো। শব্দগুলো আমার কাঁধে এতটাই বোঝা হয়ে চেপে বসেছিল যে ভার মুক্ত হ’তে ফোনে কথা বলেছি, ছুটে এসেছি কোলকাতায়। প্রকৃত শিক্ষকের মতো তিলে তিলে বুঝিয়েছেন সমীরদা। বোঝার সুবিধের জন্য বিভিন্ন লেখা থেকে উদাহরণ পেশ করেছেন। না, একবারের জন্যও নিজের লেখা তুলে ধরার চেষ্টা করেননি। বরং এমন লেখকদের কোট করেছেন যারা কি না সমীরদার ভিন্ন শিবিরের লোক। যদিও সমীরদার কোনো নিজস্ব শিবির ছিল না কিন্তু ওই লেখকরা তেমনই মনে করতেন। অথচ জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সমীরদার মুখে কোনো লেখক সম্পর্কে তাচ্ছিল্য সূচক কোনো মন্তব্য শুনিনি, তা তিনি বা তাঁরা যতই হাটুরে কিংবা বাজারে লেখক হোন কিংবা সরাসরি সমীর রায়চৌধুরী বিরোধী।
    সমীরদার কথা শুনতে শুনতে ভেবেছিলাম, ধুর,আমি একা কেন ভেবে মরবো? আমার মতো তো আরও অনেকে আছেন যারা সাহিত্য নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেন। ঐকিক নিয়মের সূত্র মেনে আমার কাঁধের বোঝাটাকে আরও দশজনের কাঁধে চালান করে দিলে কেমন হয়?
    বলা ভালো, গল্পবিশ্ব পত্রিকা আমাকে সুযোগ দিলো সেই পরিকল্পনাটাকে বাস্তবায়িত করার। কিন্তু শুধু পরিকল্পনাটাকে বাস্তবায়িত করলেই তো হবে না, সেটাকে সার্থকও করতে হবে। কিভাবে সম্ভব হবে সেটা? সর্বার্থে দীর্ঘ মানুষটিকে ক্রোড়পত্রের সামান্য কয়েকটি পৃষ্ঠায় আঁটানো কি চাট্টিখানি কথা!
    প্রথম সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম--ক্রোড়পত্রে সমীর রায়চৌধুরীর কোনো গল্প মুদ্রিত হবেনা। কারণ ওঁর রচনা বিষয়ে যারা ওয়াকিবহাল নন তারা একটি কিংবা দুটি লেখা মারফৎ ওঁকে শনাক্ত করুক, তেমনটা আমার অভিপ্রেত ছিলনা। বরং পড়াতে চেয়েছিলাম সমীর রায়চৌধুরীর কথাবার্তা, সাক্ষাতকার এবং সমীর সাহিত্য বিষয়ে অন্যান্যদের চিন্তা ভাবনা। যদি কোনো পাঠক আকর্ষণ বোধ করেন তাহলে তিনি নিজ গরজেই খুঁজে নিয়ে পড়বেন সমীর রায়চৌধুরীর গল্প--চেয়েছিলাম এমনটাই। অর্থাৎ ভাবনা চালান।
    বলাবাহুল্য আমার পরিকল্পনাটাকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করেছিলেন সমীর রায়চৌধুরী। কারণ সমীর ঘনিষ্ঠরা প্রত্যেকেই জানেন, রাশি রাশি লিখে সম্পাদকের হাতে গুঁজে দেয়ার চে তাদের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা সাহিত্য সংক্রান্ত কথাবার্তায় কতটা আন্তরিক ছিলেন সমীরদা। কতটা আগ্রহ ছিল মত বিনিময়ে এবং বিতর্কে।
    দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সমীর সাহিত্য বিষয়ক লেখক তালিকায় মলয় রায়চৌধুরী থাকবেন না। কেননা আমি চেয়েছিলাম সেই সমীর রায়চৌধুরীকে যিনি স্ববলে বলীয়ান। উনি মলয় রায়চৌধুরীর দাদা, এটা নিছকই ব্যক্তিগত তথ্য হিসেবে পরিগণিত হোক।
    আমার দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটাকে মেনে নিতে অসুবিধে হয়েছিল সমীরদার। কেননা ‘আমি’ বিরোধী ‘আমরা’ প্রিয় সমীরদার নিজের ‘হয়ে ওঠা’ নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই ছিল না। তাছাড়াও যে সমস্যাটা প্রধান হয়ে উঠেছিল সেটা হলো ততদিনে উনি মলয় রায়চৌধুরীকে লেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেলেছিলেন। মলয়ের মতো এক প্রধাণ লেখককে আমন্ত্রণ জানানোর পর সেই আমন্ত্রণ ফিরিয়ে নেয়া যে কতটা অসম্মানজনক সেটা আমিও জানতাম। তবু নিজের সিদ্ধান্তে এতটাই অটল ছিলাম যে সমীরদা বাধ্য হয়েছিলেন আমার জেদটা মেনে নিতে। এই প্রসঙ্গে মলয় রায়চৌধুরীর ভুমিকাও যথেষ্ট ধন্যবাদ যোগ্য কেননা ব্যাপারটাকে তিনিও প্রেস্টিজ ইস্যু করেননি। আমার সিদ্ধান্তটাকে মেনে নিয়ে অন্য একটা গদ্য দিয়েছিলেন।
    সমীরদার সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত মুষ্টিমেয় অথচ বিশিষ্ট লেখকদের আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি অনুরোধ জানিয়ে ছিলাম বেলা রায়চৌধুরীকেও। কেননা বৌদিকে না দেখলে হয়তো ‘সহধর্মিণী’ শব্দটার ওপর ততটা আস্থাবান হোতে পারতাম না। এ প্রসঙ্গে একটা ছোট্ট নমুনা পেশ করাটা সঙ্গত বোধ করছি। এই সেদিনও, যখন ঘোর অসুস্থ সমীরদা, তখনও আমাদের গল্পগুজবে কোনো আপত্তি তোলেননি বৌদি। বরং বলেছেন,“তোমাদের সাথে কথাবার্তা বলতে পারলেই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে সমীর। আমি জানি এটাই ওর আসল ওষুধ।”
    সেই ক্রোড়পত্রে অন্য লেখাগুলোর পাশাপাশি প্রকাশ করেছিলাম সমীর রায়চৌধুরীর সাক্ষাতকার। অবশ্য সেটাকে সাক্ষাতকার বলাটা কতদূর সঙ্গত, সে বিষয়ে আমি আজও নিশ্চিত নই। বরং বলা ভালো সেসব ছিল একগাদা উৎপটাং প্রশ্ন, যা কিনা আম পাঠকের মনে আকছার জেগে ওঠে।
    যথারীতি বিরক্ত হননি সমীরদা। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সেসব উত্তরের সাপেক্ষে কোনো মাতব্বরকে কোট করেননি, নিজস্ব জারণ-বিজারণ মারফত পাওয়া অভিজ্ঞতা সমূহকেই পেশ করেছিলেন।
    দীর্ঘ সাক্ষাতকারটি উদ্ধৃত করা অসম্ভব এবং অহেতুক। তবু খানিকটা নমুনা পেশ করার লোভ সামলাতে পারছি না।
    --“আধুনিক গল্পবিশ্বে লেখকেরা কল্পনা করতেন স্বপ্নদেশের। সমস্ত কিছুই সেখানে ইউটোপিয়াকে কেন্দ্র কেের আবর্তিত হত। রচনার গঠনতন্ত্র, বক্তব্য,ভাষা সব ছিল ললিত,নান্দনিকতত্ত¡ দ্বারা পীড়িত। পোস্টমডার্ন কালখন্ডে প্রথমেই যা ঘটল, তাহল এই ইউটোপিয়ান কনসেপ্টের দেয়াল ভেঙে পড়া। নান্দনিকতার অপর প্রান্ত, সৌন্দর্যের অপর প্রান্ত, শান্তিপ্রিয়তার অপর প্রান্ত --সব জায়গায় অধুনান্তিক লেখকেরা পৌঁছে যেতে লাগলেন। মডার্ন পরিসরে মানুষ কেবল বুঝত হ্যাঁ অথবা না। পোস্টমডার্ন পরিসরে পাঠক এর মধ্যিখানে থাকা অনির্ণীত বিশ্বটিকে আবিস্কার করলেন....দ্যাখো, সাহিত্যে আর শিল্পে আমি মনে করি কেউ কাউকে অতিক্রম করেনা বা বিপ্রতীপ অবস্থান হয়না...বরং উত্তোরত্তর...কন্টিনিউটির ভিন্ন জায়গা খুঁজে বের করে বা আবিস্কার করে...একটা উত্তরাধিকার নিয়ে সে জন্মায় এবং তারপর সে নিজের অর্জনকে যোগ করে,তারপর প্রকাশ করে...ইমলিতলা আমার একটা উত্তরাধিকার..তেমনই মহাভারত...উপনিষদ উত্তরাধিকার...সাহিত্যে কাউকে কাউকে বাদ দিয়ে কাউকে কাউকে বেছে নেব কেন? কে আমার পূর্বপুরুষ নয়? আমি তো অভেদের কথা বলি....এরকম কেউ কেউ ভাবে-হাংরিতে থাকলে কৃত্তিবাসকে আক্রমণ করতে হয়,বা হাংরিকে আক্রমণ করতে হয় বা পোস্টমডার্নকে আক্রমণ করতে হয়,ব্যাপারটা ঠিক নয়,ব্যাপারটা হচ্ছে অতিক্রম করার তত্ত¡...একটাকে বড় করে অন্যটাকে হেয় করে দেখার চেষ্টা করাটা ঔপনিবেশিক ধরতাই। প্রগতিবাদীর যে তত্ত¡,রৈখিকতার যে তত্ত¡--সেটাতে বিশ্বাস করলে এই আক্রমণ বা অসন্তুষ্টির কথা ওঠে....এখন আমি মোটেই লেখা নিয়ে আন্দোলনের কথা ভাববোনা ... সেই কন্ডিশনগুলো এখনও আছে কিন্তু অন্যভাবে হ্যান্ডেল করতে আমরা সবাই শিখে গেছি...শিখেয়েছে আন্দোলনগুলো...অতএব আন্দোলনগুলোকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করা যায়না...আজ একজন রাজনৈতিক নেতা যখন লগ্নীকারীকে স্বাগতম জানান আমার সেটা বুঝতে কোনও অসুবিধে হয়না...আমি এইজন্য বুঝি যে ঐ জায়গাটাতে যেখানে তিনি আগে ছিলেন সেই জায়গাটাতে আজ পারফর্ম করা যেতে পারেনা...আধুনিকতা ফুরিয়ে যায়নি....আমরা আছি ভেরী মাচ আধুনিকতার মধ্যে...কিন্তু আধুনিকতার মধ্য থেকে বেরিয়ে যে জায়গায় আমরা যেতে চাইছি....যে পরিসরে পৌঁছতে চাইব...সেই অবস্থাপন্নতাকে আবিস্কার করছি।”
    গল্পবিশ্বও সেই সংখ্যাটা কতটা সার্থক হয়েছিল সে সম্পর্কে মতামত দেয়া আমার ক্ষেত্রে শোভন নয়। তবে সম্পাদক হিসেবে এটুকু দাবী করতেই পারি, সমীর রায়চৌধুরীর সাহিত্য নিয়ে সেটাই ছিল প্রথম কাজ। তারপর আরও কেউ কেউ। ভবিষ্যতে অবধারিত ভাবেই আরও অনেকেই করবেন। করতে বাধ্য থাকবেন।
    আমার এই দাবীকে কারুর যদি বাহুল্য মনে হয় সেক্ষেত্রে আমি তাকে অনুরোধ করবো সমীর রায়চৌধুরীর প্রকাশিত শেষ গল্প সংকলনটা পড়ে দেখতে। জীবনভর যে সত্যের অনুসন্ধান করেছেন সমীরদা, খুঁজেছেন যেসব জটিল প্রশ্নের উত্তর, সেসব কিছুই এই বইয়ের দু মলাটের ভেতর বন্দী করে গিয়েছেন। জ্ঞানের ব্যক্তিগত মালিকানাকে প্রকৃত মৌলবাদ হিসেবে বিবেচনা করা বইটার নামকরণও যথার্থ --খুল যা সিমসিম। অর্থাৎ সেই রত্নগুহায় প্রবেশ মন্ত্রটা জনসমক্ষে ফাঁস করে দিয়ে সমীরদা বলতে চেয়েছেন--হে জ্ঞানতাপস, স্বাগতম।
    অনেক দিন আগে নিজের একটা গল্প সংকলনের ব্যাক কভারে শ্রী সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় আকাঙ্খা প্রকাশ করেছিলেন, বাংলা সাহিত্য কোনদিন সৎ হলে তাঁর ওই সংকলনটি পাঠক খুঁজবেন। কিন্তু সৎ-অসৎ,ভালো-মন্দ,সাদা-কালো ইত্যাদি প্রভৃতি বাইনারিতে অবিশ্বাসী সমীরদার প্রয়োজন পড়েনি,‘রেখো মা দাসেরে মনে,’ মার্কা আবেদন পেশ করার। বরং তিনি নিশ্চিত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অনুসন্ধিৎসু পাঠক তাঁর বইটি পড়বেনই। সেই বিশ্বাস থেকেই কোনো ধারাগোল মার্কা হেঁয়ালির পরোয়া না করে প্রচ্ছদে ঝুলিয়ে রেখেছেন একজোড়া চাবি। সেই চাবি সংগ্রাহকদের ভিড় যে দিনকে দিন বাড়বেই সে ব্যাপারে আমিও নিশ্চিত।